অমুক পড়ে আসেন… সমস্যাবলী Posted on February 5, 2024 দুই ধারা আছে। এক হইলো আপনি পড়তে থাকবেন। চিন্তা ফিন্তা করার সুযোগ কমবে। অভ্যাস হয়ে যাবে কিছু মাথায় আসলেই খোঁজ নিতে থাকার যে এই বিষয়ে চিন্তা হইছে কি না। এতে করে মৌলিক চিন্তা আর জন্মায় না এক সময় পর। আরেক হইলো আপনি পড়বেন কিছু, কিন্তু চিন্তা করবেন যা পড়লেন তার ওপর বেশি। সব পড়াভিত্তিক আলাপ করবেন না। এতে করে আপনি যা দরকার সে সব চিন্তা গো থ্রু কইরা কইরা উঠবেন। সহজ উদাহরণ হচ্ছে, কেউ যদি নিজে নিজে রাদারফোর্ড মডেল আবিষ্কার করে, মানে আইডেন্টিকাল ওয়ান, তাইলে সে একজন কেমিস্ট হয়তো। কেমিস্ট্রির একেবারে ব্যাসিক জিনিস সে আবিষ্কার কইরা বসছে। অথচ রাদারফোর্ড মডেল একটা বাচ্চাও জানে। আর তারা জানে সেটা ভুল। আরেকজন রাদারফোর্ড মডেল পড়লো। সে জানলো এইটা ভুল। স্টিল সে অচিন্তক। সে কেমিস্ট না। সে একজন পাঠক। আমি চিন্তক। আমার অনেক কিছু নিয়ে পড়া থাকবেনা। কিছু হবে ইচ্ছাকৃত। মার্কস পইড়া মার্কসবাদ আইডিয়া আসা মানে আমি চিন্তক না। পাঠক। একজন চিন্তক আইডেন্টিকাল মার্কসবাদ দিতে পারবেন, কিন্তু মার্কস না পইড়াই। লম্বা একটা সময় শেষে আপনি দেখবেন এরাই সময়ের বুদ্ধিজীবি। আর বাদ বাকিরা রয়ে গেছেন পাঠক। যাদের বয়স অত্যন্ত কম, তাদের আমি উৎসাহিত করি চিন্তাভাবনা বুদ্ধিজীবিদের মতো করতে। “অমুক পইড়া আসেন” নীতিতে থাকা একাডেমিশিয়ান হবেন না। একাডেমিশিয়ানরা অধিকাংশ সময়েই অকার্যকর এখন। এই প্রসঙ্গে এই পদ্ধতিতে সবটা নিজে নিজে আবিষ্কার করে শেখাকে গত আলোচনাতেই একজন বোকামি ও সময় অপচয় বলেছেন। এখানে আমি একমত না। তবে ঐটাই রাইট কাইন্ড অফ এজুকেশন। যা নাই আমাদের এখন। এজন্য দিন রাত এক করে ইনক্রিমেন্টাল রিসার্চ হচ্ছে। বিলিয়ন ডলারের অপচয়। ইলন মাস্কের সাথে একমত না আমি লাখো জিনিসে। কিন্তু এটা সত্য। কারণটা বলছি। দর্শন পড়া লোকজন হুদাই নানা তত্ত্ব ও আলোচনা পড়ে সময় নষ্ট করেন। একই কথা খাটে ফিজিক্স, কেমিস্ট্রি, এঞ্জিনিয়ারিং পড়া লোকের ক্ষেত্রেও। আমাদের এজুকেশন সিস্টেমের একটা বিশাল বাজে দিক আছে। এটা আমাদের ক্রিয়েটিভিটির হোগা মেরে সারা করে দেয়, এর পেছনে বড় ব্যাপার হচ্ছে অনেক তত্ত্ব এখানে পড়ানো হয় বা লিপিবদ্ধ করা হয় যা সরাসরি আমাদের চিন্তা পদ্ধতিকে নষ্ট করে। প্র্যাক্টিকাল উদাহরণ দেই, অন্তত যে বিষয়ে আমি নিজে মাস্টার করতে পারছি অনেক কিছু সে ফিল্ডে – রাইটিং। সাহিত্যের নানা দিক ও তত্ত্ব পড়া লোক আছেন। একটা ভালো প্যারাগ্রাফ পর্যন্ত লিখতে পারেন না। কারণ তিনি আছেন তত্ত্বে। তত্ত্ব দিয়ে প্র্যাক্টিকাল কাজ করা যায় না। পপুলার আইডিয়া হচ্ছে সায়েন্সে, এঞ্জিনিয়ারিংয়ে তত্ত্ব দিয়ে প্র্যাক্টিকাল কাজ করা যায়। সেটাও সত্য না। এটা ভিজুয়ালাইজেশনের ব্যাপার। একই তত্ত্ব আপনি পইড়া বুঝলেন। আরেকটা বানায়া, নিজে কইরা তত্ত্বটা রি-ইনভেন্ট করলেন। আপনি পইড়া আসলে কিছুই বোঝেন নাই। যখন রি-ইনভেন্ট করছেন তখনই বুঝছেন আসলে। রিসার্চ ফিল্ডে যারা আছেন তারা ডিসকাশন পার্টের আলোচনার কথা ভাবতে পারেন। ওটা যখন লেখেন তখন আপনি ব্যাখ্যাজনিত চিন্তা করেন। এটা আমাদের একাডেমির ফ্ল। একাডেমিক ফ্ল না থাকলে আপনি ডিসকাশনের আলাপটাই রি-ইনভেন্ট করতেন এবং সেইটা লেখার জন্যই এক্সপেরিমেন্ট করতেন আর তারপর দেখতেন ইনিশিয়াল ডিসকাশন আর ফাইনাল ডিসকাশন উনিশ-বিশ হতো। শেষ দুটো প্যারা আমার ধারণা ৯৯% লোক বুঝবেন না। বুঝবেন যে না, সেটাও একটা একাডেমিক ফ্ল। এভাবেই আপনারে ট্রেইন করা হইছে। আপনার দোষ এটা না। ২. পড়ার বিরুদ্ধে আমার যে আলাপ তা আমার সবচেয়ে কাছের বন্ধুদের একজন, নাবিল মুহতাসিমের সাথেও তর্কের অন্যতম কারণ। নাবিলের মতো তুখোর মাথার লোক যদি আমার বক্তব্য ভুল বুঝতে পারে তাহলে যে কেউ তা বুঝতে পারে। কাজেই এখানে সামান্য ধারণা পরিষ্কারের ব্যাপার আছে। পড়ার বিরুদ্ধে আমার কিছু নাই। তবে পড়ার প্রক্রিয়ার ব্যাপারে আছে। প্রথমতঃ পড়ার একমাত্র লক্ষ্য হবে রি-ক্রিয়েট করা। রিক্রিয়েট না করা পড়ার কোন দাম আসলে নাই। ভাল্লাগে তাই পড়ি – এসব বড়লোকি ঢঙ ক্ষতিকর নয়, কেউ চাইলে করবেন, তবে এসব পড়া আমাদের আজকের আলোচনার বিষয় না। স্ট্যাটাসের সমগ্র বক্তব্যই কিন্তু ওই ধরণের পড়া নিয়ে নয় যেখানে আপনার ভালো লাগছে বলে পড়ছেন। যখন ছোটবেলায় একটা বই খুলেছি, আমিও আনন্দের জন্য পড়েছি। তবে অসংখ্য বই আমি একাধিকবার পড়েছি। দ্বিতীয় ও তৃতীয়বার পড়ার সময়ও আনন্দ লাভ একটা ফ্যাক্টর ছিল, তবে সেখানে ছিল রি-ক্রিয়েট করার ধান্ধা। এই দুই পড়ার মধ্যে একটা মৌলিক পার্থক্য আছে। দ্বিতীয়বার পড়ার সময় আমি আসলে খেয়াল করছি কোন সেন্টেন্সে কোন গঠন। কোন সময় কীভাবে একটা বাক্য লেখা হয়েছিল যেটা আমাকে হিট করেছিল। কোন প্রক্রিয়ায় রিভেলেশন হলো। সহজ উপায়ে বলতে গেলে আপনি ফ্যান্টাস্টিক একজন রাইটার হতে পারেন যদি দেড় হাজার বই পড়েন যার মধ্যে ৩০০-৪০০ বই আপনি দশবার পড়েছেন। আবার আপনি ১০,০০০ বই পড়ে থাকতে পারেন বুরবাক। কারণ দ্বিতীয় পাঠে আপনি স্রেফ পড়েছেন। চিন্তা করেননি। পাঠ করা ও চিন্তা করা – সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। অন্যরা যখন ৫,০০০ বই পড়ছে আপনি পড়বেন ২,০০০। তবে আপনার ইনসাইট থাকবে বেশি। এমনকি বাজে বই থেকেও শেখার আছে। আমি জঘন্য বই মনোযোগ দিয়ে পড়ি। জঘন্য বই সাত-আটবার পড়েছি এমনো আছে। আমি পড়ে পড়ে দেখেছি সে কোথায় কোথায় ঘাপলাটা করেছে এবং কোন কোন ডেলিভারি দেয়া যাবে না। কারণ অমুক ধরণের ডেলিভারি আমাকে বিরক্ত করেছে। এখানে বেকুব পাঠক বা অচিন্তক বলবেন, “জীবন ছোট এবং বাজে বই পড়ে আমি সময় নষ্ট করতে চাই না।” এটা বেকুবের মতো কথা এই জন্য যে এতে করে (১) আপনি ভুল চিন্তা থেকে নিজেকে লিমিট করলেন এবং (২) পৃথিবীতে যতগুলো ভালো সাহিত্য লেখা হয়েছে, আপনার হায়াত ৪,০০০ বছর করে দেয়া হলেও সব পড়ে শেষ করতে পারবেন না। সব ভালো বই ও ভালো লেখা পড়ে শেষ করার থট প্রসেসটাই একটা বেকুবি প্রসেস। ৩. দ্বিতীয়তঃ আপনার পড়ার বা জানার কারণ হচ্ছে যেন আপনি আপনার বর্তমান সময়কে ও বর্তমান সেলফকে বর্তমান টাইমের সাথে রেলেভেন্ট করতে পারেন। রোমান্টিসাইজ আর ফ্যান্টাসাইজ করার জন্য না। আমাদের এলিট সোসাইটির মধ্যে রোমান্টিসিজম ঢুকে গেছে। এ সময়ের চিন্তক হিসেবে আমার কাজ একটা পোপ-হ্যামার দিয়ে বাড়ি মেরে মেরে আপনাদের রোমান্টিসিজমের ভূত বের করা। খান খান করে দেয়া আপনাদের মনের ভেতর থাকা সুন্দর ছবিগুলো। এর অংশ হিসেবে গত আলোচনার প্রেক্ষিতে কথা প্রসঙ্গে চলে এসেছিল আমাদের একাত্তরের বুদ্ধিজীবিদের নিয়ে রোমান্টিসাইজ করতে করতে একটা ধারণা পাকাপোক্ত ও বদ্ধমূল করে ফেলা – একাত্তর বা তৎকালীন সময়ের বুদ্ধিজীবির মেরিট ও অনার বর্তমান বুদ্ধিজীবিদের নাই। যাদের ছিল তাদের মেরে ফেলা হয়েছে। কথাটা আংশিক সত্য। একাত্তরে শিক্ষাবিদকে হত্যা করা হয়েছে প্রায় এক হাজার জনকে। এটা কেমন ক্ষতি তা নতুন করে বলার কিছু নেই। এই অংশটা সঠিক যে এক হাজার শিক্ষাবিদকে হত্যা করা একটা বড় ক্ষতি ও কিছুটা লং টার্মের ক্ষতি। ফ্যাক্ট ফ্যাক্টের জায়গায় থাকেই৷ এই ফ্যাক্টও জায়গামতোই আছে। বুদ্ধিজীবি হত্যা বিগ ডিল। স্বাধীন বাংলার অনেক বড় ক্ষতি। তবে কার্যকারণ বোঝায় সমস্যা আছে। একাত্তরের বুদ্ধিজীবী আর আজকের বুদ্ধিজীবীদের মাঝে খুব বেশি ফারাক নাই। আজ তালিকা করে সবাইকে মারা হয় নাই তাই আপনারা জানেন না হয়তো, সমান বা বেটার মেরিটের ১০০০ নয়, এক লাখের বেশি বুদ্ধিজীবি বাংলাদেশ প্রডিউস করেছে। এখানেই রোমান্টিসিজমের সমস্যাটি। আপনি আগের একটি সময়কে মহান করতে গিয়ে ফ্যাক্টস থেকে ঘোলাটে করে ফেলেন দৃষ্টি। ঐ নীতিওয়ালা এবং জাতি চেঞ্জ করার যোগ্য বুদ্ধিজীবি এখনো আছে। মরলে ঠিকই টের পাবেন। তার আগে সোদার সময় নাই আরকি। কেন? কারণ এইটা রাইট টাইম না, আনফরচুনেটলি। সেইম মেরিট নিয়ে কিছু হচ্ছে না। বেটার মেরিট নিয়েও কিছু হচ্ছে না। ১৯৭১ থেকে এখন বুদ্ধিজীবী বেশি দেশে ও বাইরে। সংখ্যায় ও রেশিওতে অনেকগুণ বেশি ইন্টেলেকচুয়াল, বিজ্ঞানী। এমন কোন লিডিং প্রতিষ্ঠান দেখাতে পারবেন না যেখানে বাংলাদেশি বিজ্ঞানী কাজ করছে না, বাংলাদেশি বংশোদ্ভুত লোক কাজ করছেন না। এদের প্রোডাকশন কোথায়? ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বুয়েট, রুয়েট, কুয়েট, জগন্নাথ, জাহাঙ্গীরনগর, সাস্ট, নোয়াখালি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, নর্থ সাউথ, ব্র্যাক – ইত্যাদি তাই তো? তাহলে আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কি এমন ছাত্র তৈরি করতে পারে নাই যারা বিশ্বমানের কাজ পারে? এর অর্থ হচ্ছে আমাদের যে কনক্লুশন – আমাদের জাতি শেষ হয়ে গেল কারণ বুদ্ধিজীবি হত্যা হয়েছে সেটা একটা বাজে স্টেটমেন্ট। উই রিকভারড ইয়নস অ্যাগো। এখন আপনার চোখ থেকে রোমান্টিসিজমের চশমাটা সরানো হলেই সামনে আগানো যায়। আমাদের লেখা নিয়ে বড় বড় কমার্শিয়াল কাজ হচ্ছে ভারতে। ধীরে ধীরে পশ্চিমা জগতে যাচ্ছে। আমার পার্সোনাল একটা লক্ষ্য হচ্ছে আমাদের সাহিত্যকে ওয়েস্টার্ন ওয়ার্ল্ডে পরিচয় করানো। আমাদের নিজেদের জিনিস চলে যাচ্ছে ধীরে ধীরে হলিউডে। রাইট ডিরেকশনে আছে সবকিছু। স্লো বাট স্টেডি। এটা সময়ের ব্যাপার। বুদ্ধিজীবীর ব্যাপার না। রাইট টাইম হলে এদেরই একেক মহিরুহ লাগবে। যেমন রুশ বিপ্লবের সময়কার সবাইরে লাগে। যেমন ধরেন আজকে যদি বালে-তানরা এই দেশটিকে অধিকার করে নেয় এবং আপনাদের নাম না জানা এই আনসাং হিরোদের ধরে ধরে মেরে ফেলে, মুহূর্তেই আপনাদের পরিষ্কার একটি ধারণা হয়ে যাবে কারা এই সময়ের হিরো এবং কাদের জন্য দেশ এখনো বালে-তান অধ্যুষিত এলাকায় পরিণত হয়নি। এই আলোচনার মূল পয়েন্ট ছিল, বুদ্ধিজীবি সময় বদলে দেয় না কখনো। সঠিক সময় বুদ্ধিজীবিদের একটা স্থান দেয়। একাত্তরে বর্তমানের বুদ্ধিজীবিরা থাকলে তারা নতুন একটি দেশ সৃষ্টিতে অবদান রাখতেন। ২০২৩ সালে তারা হয়তো রপ্তানিযোগ্য ছাত্র তৈরিতে ভূমিকা রাখছেন। এতে করে তাদের মেরিট নেই হয়ে যাচ্ছে না। একাত্তর কিংবা রুশ বিপ্লব হওয়ার পেছনে জিওপলেটিকাল আর সোশাল প্রায় তিন-চারহাজার কারণ ছিলো। এর একটা সূতো হচ্ছে তৎকালীন চিন্তক ও বুদ্ধিজীবি। এমন নয় যে বুদ্ধিজীবির চাপে ও ঠাপে বিপ্লব হয়েছে। ফ্যালাসিটা হচ্ছে, বড় বড় একাডেমিশিয়ানও চাইলে চিন্তকদের ভূমিকার অ্যাঙ্গেল থেকে আলাপ শুরু করেন। তখন – ব্যাক টু আওয়ার অরিজিনাল ডিসকাশন – আপনি যেহেতু একজন পাঠক, এবং চিন্তক নন – আপনি কনভিন্সড হয়ে যান আরে এটা তো ওয়ার্ল্ডওয়াইড নৌন যে রুশ বিপ্লবে চিন্তকদের ভূমিকা আছে! এজন্যই পাঠের প্রক্রিয়া নিয়ে আলাপটা গুরুত্বপূর্ণ। যেখানে যা পড়বেন এবং যে নামের তলে পড়বেন – তাতেই গলে যাবেন না তাহলে। নিজের কিছু চিন্তাচেতনা জন্মানো অত্যন্ত প্রয়োজন। তাত্ত্বিক আলোচনা নন-ফিকশন
আমেরিকায় উচ্চশিক্ষা | অধ্যায় ১০ – বিশ্ববিদ্যালয় বাছাইকরণ Posted on August 11, 2021February 6, 2023 এ তো গেল বিশ্ববিদ্যালয় সিলেকশনের জন্য জেলারালাইজড আলোচনা, এবার আরেকটু পার্সোনালাইজ আলোচনাতে ঢোকা যাক। Read More
নন-ফিকশন The Son of Bangladesh: KP’s Voice for the Marginalized Posted on November 9, 2025December 13, 2025 In his latest, most daring creative endeavor, Kishor Pasha Imon (KP Imon) transcends the boundaries of his acclaimed work in crime fiction to deliver a powerful socio-political and musical statement: “The Son of Bangladesh.” Read More