অবাক হতে ওর চোখে চোখ রাখলো শুভ্র, “তোমাকে না বললাম, বাসার সবাই গ্রামে গেছে?”
দুই হাত বুকের কাছে বাঁধলো তিথি। এবার সত্যিই রাগ হচ্ছে ওর।
“খালি বাসায় আমাকে আনলে কেনো?”
মুচকি হাসলো শুভ্র, “তোমার পর্ন ভিডিও বের করার জন্য। আমি এটাই করি। একা একটা মেয়েকে নিজের বাসায় এনে তার সাথে অনৈতিক কাজ কর্ম করি। আমার ক্ষুদে রোবটেরা তা ভিডিও করে। তারপর সেই সব ভিডিও চড়া দামে বাজারে বিক্রি হয়। আমার উদ্দেশ্য তোমার কাছে স্পষ্ট হয়েছে?”
কোন রকম আগাম সংকেত না দিয়েই হুড়মুড় করে ভেঙ্গে পড়ে হোটেল রুমের দরজাটা।
উজ্জ্বল টর্চের আলো ফেলে ঘরে ঢুকে পড়ল চার-পাঁচজন মানুষ। প্রতিটা আলো ফেলা হয় ওদের চেহারাতে।
‘মাগীর হুক দেখো!’ গর্জন করে ওঠে ওদের একজন, ‘কাস্টোমার ছুইটা গেছে – সেই ফাঁকে ফ্রিতে ক্ষ্যাপ মারতাছে।’
কান চুলকানি পুলিশ উঠে দাঁড়ায় আমার ব্যাগের ওপর থেকে। বলে, ‘বাচ্চা দেখলাম না, স্যার।’
স্যার মাথা দোলালেন, ‘টাকাটা রেখে দাও। শিওর তো?’
দাঁত কেলায় সোহরাব, ‘ওই কাজে আমরা কোনকালে শিওর ছিলাম না, স্যার?’
আড়াল থেকে একজন মানুষের দিকে তার অনুমতি ছাড়া তাকিয়ে থাকার চেয়ে অসভ্য কাজ আর নেই। আর যদি সেটা কোন মেয়ের দিকে তাকানো হয় – মানসিক রোগী হোক আর যাই হোক – সেটি আরও বিতৃষ্ণার। তার ওপর সে তাকাচ্ছে একজন মেয়ে-শিশুর দিকে। এগারো বছর বয়স যার। এর থেকে খারাপ আর কিছু হতে পারে না।
‘সাবাশ!’ গোবদা হাত দিয়ে ওর পিঠ চাপড়ে দেয় জুয়েল।’ প্রায় সবকিছুই ধইরা ফেললি! আরেকটা জিনিস বাকি – লেখাটা একটা মাইয়ার। সম্ভবতঃ – হাতের লেখা পাল্টাইছে যে লেখছে। মানে তোর পরিচিত ওই মাইয়া। আর না পাল্টাইলে অন্য কাওরে দিয়ে লেখাইছে।’
জুয়েল কলেজে গোয়েন্দা হিসেবে সুপ্রতিষ্ঠিত।
টাকা মানুষকে শ্রেণিতে ভাগ করে। আর ক্ষুধা আনে এক কাতারে।
“আরে শোন। পরেরদিন এক হাত কাটা আংকেল বারান্দাতে আবারও বসেছেন। বিকালে ছাদে আবারও উঠলেন দুই হাত কাটা ভদ্রলোক। কি হাসি তাঁর। আর কি আনন্দ, খুশিতে লাফাচ্ছেন রীতিমত!”
“শালা পাগল শিওর!” বললাম আমি, “দুই হাত কাটার পর হাসে যে বাইনসূদ, তার ব্যাপারে আমার আর কোন মন্তব্য নাই।”
‘আর কিছু বলবে?’ হাতঘড়ি দেখে জানতে চায় ইভা।
মাথা নাড়লাম আমি। মেয়েটার একটা ডায়েরী আমার কাছে ছিল। ওটা দিতে এসেছি। আর কিছু বলার থাকে কিভাবে?
ভাষা জিনিসটাকেই কেউ কেড়ে দিয়েছে আমার। কই? ইভা তো আজ আমার চোখ দেখেই সব বুঝে ফেলল না!
কয়েক বছর আগের কথা মনে পড়ে যায়।
দুটো ইঁদুর আমার চোখ খেয়ে ফেলছে।
ইঁদুরগুলো নোংরা দেখতে। গোঁফগুলো কত মাস যে পানির চেহারা দেখেনি কে জানে! শুকিয়ে কাঠির মত খাড়া হয়ে আছে ওদের মুখের কাছে। তবে সময়ের সাথে ওরা হচ্ছে আর্দ্র।
আমার অ্যাকুয়াস হিউমার ইঁদুরগুলোর গোঁফ ভেজাচ্ছে।
খুশিতে ডানদিকের ইঁদুরটা আমার চোখে সদ্য করা গর্তটা থেকে মুখ তুললো। ডাকলোও একবার।
চিঁ চিঁ শব্দ শুনে আরও কয়েকটা ইঁদুর চলে আসে। কামড়ে খাবে ওরা।
ওরা আমার চোখ কামড়ে খাবে।
ফোনের অন্যপাশ থেকে টেলিফোন কাঁপানো হাসি দেন ফারুক চৌধুরী, ‘ছেলে জানে না – তবে এবার আমি নিজের আগ্রহেই ওকে দেশে টেনে আনছি কেন সেটা তোমাকে বলা যায়।’
ফোনের এপাশে চোখ টিপ দেন রাফিদ সাহেব, ’নির্ঘাত লাল টুকটুকে একটা বাঙালি বউ চাই তোমার?’ ওপাশে কাশির শব্দ শুনতেই দ্রুত কারেকশন দেন তিনি আবার, ’ছেলের জন্য আর কি!’
ফারুকের গলা থেকে আবারও টেলিফোন কাঁপানো হাসির শব্দ বের হয়, ’হাহাহাহা – একেবারে ঠিক ধরেছ। নাহলে দেখা যাবে বেলে মাছের মত চামড়ার কোন খ্রিস্টান মেয়ের সাথে ঝুলে গেছে। এই সমস্যা শুরু হওয়ার আগেই ঝেড়ে ফেলতে হবে। কি বল?’