জেলিকস
এক বেচারি মেয়েকে লাগানোর জন্য ব্যস্ত হয়ে ছিল এক লোক। মেয়েটা ত্রিশ মিনিট আগে আমার কাছে এসে একটা সিগারেট চেয়েছে, ওকে বললাম, “যদি পাঁচটা মিনিট অপেক্ষা করতে পারো, তোমাকে সিগারেট এনে দিচ্ছি।”
সিগারেট আমারও লাগতো। কাজেই আমাকে ওটা আনতে হতোই। এনে দেখি ঐ লোক বেচারির পিছে লেগে আছে। লাগানোর ধান্ধা।
ওকে সিগারেটটা দিয়ে বললাম, “খাও ভাই যতো ইচ্ছে।”
একটা হাত বাড়িয়ে দিয়ে বললো, “আমার নাম জেনিফার।”
হ্যান্ডশেক করে বললাম, “বন্ধুরা আমাকে কেপি বলে ডাকে। সমস্যা হচ্ছে তোমার নামটা বিপদজনক। আমার এক্সের নামও ছিল জেনিফার।”
ওদিকে লোক তো লেগে আছেই। মেয়ে না লাগিয়ে যাবে না। আমাকে এড়িয়ে ফিসুরফাসুর করে ফেললো। তারপর গেল ড্রিংকস আনতে। আমি বললাম, “আমি খুবই দুঃখিত যদি আমি তোমাদের কাউকে অফেন্ড করে থাকি। আসলে ও কী বললো তা শুনতে পাইনি।”
জেনিফার ফিকফিক করে হেসে বললো, “আরে, ওই ব্যাটা লাগানর ধান্ধায় আছে। আমি ওকে না করলাম। তবে ছাগলটা বুঝলো কি না বুঝলাম না।”
পরের ত্রিশটা মিনিট আমরা থিওলজি আর অরিজিনাল থিংকিং নিয়ে আলাপ করলাম। বিদায় হবার আগে জেনিফার আমার ফোন নাম্বারটা নিলো। স্টকারের মুখটা কালো হয়ে গেল, কারণ মেয়েটা চালাক। জীবনেও নিজের নাম্বার আমাকে বলবে না। বরং আই-ফোনটা বাড়িয়ে দিলো যেন আমি আমার নাম্বার তাকে সেভ করে দিতে পারি আর নিজেকে পাঠাতে পারি একটা মেসেজ।
তারপর বেচারি উঠলো, “অস্টিনে থাকি। ড্রাইভ করতে হবে। যাইগা।”
রাত তখন বাজে দেড়টা। আমি আমার পাছার একটা মাসলও নড়াতাম না ওর এই কথায়। কিন্তু স্টকার লোকটা ঘ্যা ঘ্যা করে বললো, “চলো চলো, তোমাকে বাড়ি পৌঁছে দেই। কী বলো?”
সব আমেরিকান সিটিজেন। আমি এক খানকির ছেলে। বহিরাগত। কাঁধ থেকে ব্যাকপ্যাকটা খসে পড়লো আমার।
আমার সামনে মেয়ে স্টক করা হচ্ছে? বাঙালি চেননি, অ্যাঁ?
মেঘের মতো গলায় বললাম, “জেনি, তোমাকে গাড়িতে পৌঁছে দেব?”
ভীত সন্ত্রস্ত একটা মুখ একবার, তারপর কয়েকবার মাথা নাড়লো। শয়তানটা আমাকে বললো, “তোমার কষ্ট করতে হবে না। আমি ওকে পৌঁছে দিচ্ছি।”
ঘাউড়াটাকে পাত্তা না দিয়ে বললাম, “চলো।”
গাড়ির কাছে এসে ওকে বললাম, “কিছু মনে করো না। আমি এসেছি স্রেফ যেন তোমাকে কোন ক্রিপ গাড়ির সামনে এসে চাপাচাপি করতে না পারে, তাই।”
জেনিফার বললো, “থ্যাংকস।”
আমি হাসলাম। বললাম, “আই উইশ, আমাকে কোন মেয়ে এভাবে অন্য মেয়েদের থেকে বাঁচাতো। বহু গোয়ামারা খেয়েছি ভাই। তোমাদের প্যারাখানা বুঝি।”
ফিরে এসেছি। গেটকিপার আমাকে পেয়েই থামালো। বললো, “আরে ভাই, তোমারেই তো খুঁজি। লিগ অফ লেজেন্ডস খেলো না? তুমি তো ক্যাপ্টেন টিমো নিয়ে খেলো? টপ গাই?”
আমি জোরদার মাথা দোলালাম, “আমি-ই সেই মাদারচত। ঘটনা কী?”
সে বললো, “এই ক্যারেকটারটা দ্যাখো। টপের জন্য পারফেক্ট।”
তারপর একটা ইউটিউব ভিডিয়ো ধরিয়ে দিলো। আমি চোদনা হয়ে গেলাম। লেভেল-ই আলাদা।
গেটকিপার জানতে চাইলো, “ফিরে আসলে যে?”
আমি বললাম, “জেনিকে এক ক্রিপ তাড়া করেছিল। মেক শিওর করলাম নটির ছেলে ওকে আর জ্বালাবে না। চিন্তার কিছু নেই, শি ইজ সেইফ নাও।”
এর মধ্যে এক মেয়ে এসে আমার ছয় ইঞ্চির মধ্যে থেমেছে। বললো, “তোমার কী অবস্থা? কেমন আছো?”
আমি হাসলাম। বললাম, “বেঁচে আছি। নিঃশ্বাস নিচ্ছি। এর বেশি আর কী দরকার, বলো?”
ও হেসে ফেললো। একটা হাত বাড়িয়ে বললো, “আমি স্যাম। তোমার নামটা তো জানা হলো না।”
বললাম, “বন্ধুরা আমাকে কেপি বলে ডাকে। এই নামে উপন্যাস লিখে থাকি তো। ইনিশিয়ালস।”
এর মধ্যে দুই চুদির ভাই লাইনটা দখল করে ফেলার পাঁয়তারা কষছে। স্যামের হাতটা ছেড়ে বললাম, “ইয়ে, কিছু যদি মনে না করো – ইনকামিং। চুদিরভাই।”
স্যাম আর গেট কিপার হেহে করলো। দৌড়ে গিয়ে নিজের স্পট ধরলাম। ফিরে এসে অনেকক্ষণ পর ফোনটা বের করেছি। দেখছি কে কীভাবে আমার গোয়া মারছে। দুই একটা কমেন্টের রিপ্লাই দিচ্ছি। লোকজন আমাকে বোকাচোদা বলে গালাগাল করছে কারণ আমার গার্লফ্রেন্ড বা বউ অন্য কাউকে চুদে দিলে আমার দিক থেকে কোন রাগ বা ঝগড়া তারা দেখবে না। আমি মুচকি হাসছি আর রিপ্লাই দিচ্ছি। এর মধ্যে সামনে বেশ সুন্দর একটা মেয়ে এসে ধপ করে বসে পড়লো। আজকে মনে হয় আমার সুন্দরী ভাগ্য ভালো। এক রাতে তিন সুন্দরী আমাকে খুঁজে বের করছে এটা বিরল। খুব সম্ভবতঃ আমার চুলের বর্তমান স্টাইলের কারণে।
আমি জিজ্ঞাসু চোখে তাকালাম। মেয়ে বললো, “শুনলাম, তুমি নাকি স্যান মার্কোস থেকে যাবাগা?”
আমি বললাম, “একটা সম্ভাবনা আছে। আমার ইউনি অবশ্য বেটার অফার দিচ্ছে অন্য শহর থেকে। লাথিগুঁতো খেলে থেকে যেতেও পারি। কিন্তু তোমাকে তো চিনলাম না।”
হাত বাড়িয়ে দিয়ে বললো, “আমি এরিকা। তোমার নামটা ভুলে গেছি।”
বললাম, “বন্ধুরা আমাকে কেপি বলে ডাকে। এই নামে লেখালেখি করি তো টিনেজ বয়েস থেকে।”
মেয়েটা হাসলো, তারপর বললো, “তাহলে তুমি আমাকে তোমার বন্ধুরা যে নামে ডাকে সে নামে ডাকতে অনুমতি দিচ্ছো? এটা এত সুন্দর!”
আমি হেহে করলাম। বললাম, “যতক্ষণ পিঠে ছুরি মেরে না দিচ্ছো ততক্ষণ বন্ধু তো বটেই। এর বেশি কিছু এক্সপেক্ট করি না। তবে তোমার নামটা আমাকে ট্রিগার করছে।”
মেয়েটার চোখেমুখে অপার বিস্ময়, “কীভাবে?”
আমি বললাম, “ডিট্যাচমেন্ট মুভিটা দেখেছ?”
ও বললো, “না। ঘটনাটা কী?”
আমি কথা হারিয়ে ফেললাম। আমি, কিশোর পাশা ইমন, যে খোদা কেয়ামত ঘটিয়ে দিলেও দমটা নাকে তুলে বসে থাকবো যেন শেষ কথাটি আমিই বলতে পারি। সেই আমি কথা হারিয়ে ফেলেছি!
বললাম, “ইয়ে, মুভিটা নিয়ে কথা বলা কঠিন। আমার সাথে এতো রিলেটেবল। তো, ওখানে একটা মেয়ে থাকে এরিকা নামে। মাথায় যদি তোমার বিয়ারের বোতলটা না ছুঁড়ে মারো, তো বলি-”
এরিকা আমাকে আশ্বস্ত করলো ও আমার মাথায় বিয়ারের বোতলটা ছুঁড়ে মারবে না।
বললাম, “মেয়েটা একজন যৌনকর্মী। টিনেজার। রানঅ্যাওয়ে। কিন্তু প্রোটাগনিস্ট ওকে নিজের বাসায় ডেকে আনে। কিন্তু অন্য কোন উদ্দেশ্যে না। ও চায় সবাইকে রক্ষা করতে। সেজন্য যে কোন কিছু করতে সে প্রস্তুত। তবে-”
এরিকা আমাকে থামিয়ে দেয়, “মুভিটার নাম কী বললে?”
বললাম, “ডিট্যাচমেন্ট।”
ওর চোখেমুখে কেমন এক পরিবর্তন এলো। খুব খারাপ একটা প্রশ্ন করে ফেললো সে, “তুমি বললে মূল চরিত্রের সাথে তোমার মিল পেয়েছো। তুমি কী সবার থেকে ডিট্যাচড থাকো?”
এমন বেকায়দায় শেষ পড়েছিলাম যখন আনসার আল ইসলাম আমার মাথাটা কেটে ফেলার চেষ্টা করেছিল। আমতা আমতা করে বললাম, “আমি এখানে ইম্পর্ট্যান্ট না। কথা হচ্ছিল তো ডিট্যাচমেন্ট মুভি নিয়ে-”
এরিকা আমার হাতে একটা বাড়ি দিয়ে বললো, “না। এখানে তুমিই ইম্পর্ট্যান্ট। বলো।”
বড় করে শ্বাস নিলাম, “আমি যদি কারো সাথে কথা বলি তাহলে আমি কথা বলি এআই-এর মতো। এআই বোঝ?”
ও বললো, “আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স।”
আমি বললাম, “হ্যাঁ। আমি কথা বলি ওভাবেই। ছেলে-মেয়ে কিংবা আত্মীয়-স্বজন নিয়ে ফারাক করি না। আমি দূরত্ব রাখি।”
এরিকা জানতে চাইলো, “কেন?”
ভাষা হারিয়ে ফেললাম। এত বড় প্রশ্ন আমাকে কেউ করেনি। এই টেক্সাসে জন্মানো, বড় হওয়া, ফার্স্ট ইয়ারের নাই-ইভ একটা মেয়ে কীভাবে আমাকে এমন একটা প্রশ্ন করে ফেললো!
এরিকা বললো, “তোমার অরিজিনাল থিংকিং নিয়ে লেকচার শুনে ফেলেছি। ওটার জন্য তোমাকে ডিটাচড থাকতে হবে? কারো কাছে যেতে পারবে না?”
আমি কিছুই বলতে পারলাম না।
মেয়েটা আবারও জানতে চাইলো, “কী হবে কারো কাছে গেলে?”
সবটুকু শক্তি একত্র করে ফিসফিস করে বললাম, “বিকজ আই কেয়ার টু মাচ। আই ক্যান্ট অ্যাফোর্ড ইট। আই ক্যান্ট।”
এরিকার চোখেমুখে যে পরিবর্তনটা দেখলাম, তা কোন ভালো লক্ষণ নয়। কুকুরের মতো হেসে বললাম, “কথা সেটা না। তুমি ডিট্যাচমেন্ট মুভিটা দেখবে। এটা তোমাকে দেখতেই হবে।”
ও বললো, “দেখবো। অবশ্যই দেখবো। এরা আমাদের এখন বের করে দেবে। কিন্তু তুমি আমাকে সব সময় এখানে পাবে। আমি এখানেই পড়ে থাকি। দয়া করে এরপর যখন আমাকে দেখতে পাবে ডিট্যাচমেন্ট প্র্যাকটিস না করে একটু ডেকো।”
সুন্দরীর কাছ থেকে এমন একটা অফার পেয়েও আমার মুখে কোন শব্দ এলো না। ভুতের মতো ফ্যাকাসে হয়ে গেছি। এই অচেনা অজানা মেয়েটা আমার সবটুকু ভালনারেবিলিটি কীভাবে ধরে ফেললো!
লম্বা করে আমার বিয়ারে একটা চুমুক দিলাম।
চেষ্টা করলাম চকচকে চোখে তাকিয়ে থাকা এক অনিন্দ্যসুন্দরী মেয়ের দৃষ্টি এড়িয়ে যেতে।
এভাবে ধরা কেন পড়ে গেলাম!
Leave a Reply