KP Imon

Words Crafted

ফ্রি-মিক্সিং সমস্যা নয়, ফ্রি-মিক্সিংই সমাধান

২২শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬

মেয়েদের উত্যক্ত করার অভ্যাসটা মূলতঃ গড়েছে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা আর সমাজ সংস্কার। দেশের আশিভাগ কিশোরের নারী সংক্রান্ত আগ্রহটা থাকে বাড়াবাড়ি পর্যায়ের। অন্য কোনোখানে আপনি এমনটা দেখবেন না। কারণটা সবার চোখের সামনে থাকলেও দেখবেন কেউ তা নিয়ে টু শব্দটাও করছে না।
ছেলেদের অনভিজ্ঞতাই এসবকিছুর জন্য দায়ী। ইভ টিজিং, মেয়ে মানেই বিছানায় নেওয়ার বস্তু মনে করা, মেয়ে দেখলেই প্রেম-ট্রেম নিয়ে ভাবা, সাধারণ কোনো মেয়ের ভিডিও বের হলে লিংক চেয়ে একাকার করে ফেলা, সবকিছুর জন্যই।
বাংলাদেশের আশিভাগ ছেলে ১৫-১৬ বছর বয়সে সমবয়সী একটা মেয়ের সঙ্গে মেশার সুযোগও পায় না। বেশিরভাগ স্কুলই ছেলে-মেয়েকে আলাদা শিফটে পড়ায়। এসএসসি পরীক্ষার্থি একটা ছেলে সারাটা জীবন মিশেছে অন্য ছেলেদের সাথে। কোনো মেয়ের সঙ্গে সে প্রতিদিন ক্লাস করতে আসেনি, একসঙ্গে বাড়ি ফিরে যায়নি, পরীক্ষার হলে কোনো মেয়ের খাতা সে দেখাদেখি করেনি, ঝগড়া হলে কোনো মেয়ের হাঁটুর জয়েন্ট ছোটানোর জন্য সে লাথি মারেনি, রাগারাগি করে সে ১৮+ গালিগালাজ কোনো মেয়ের সঙ্গে করেনি, পানি ভর্তি পথে পা পিছলে পড়া কোনো মেয়েকে স্রেফ মানুষ মনে করে হাত ধরে তার পতন ঠেকায়নি, কোনো মেয়ের সঙ্গে হ্যান্ডশেক করেনি, অনেকদিন পর দেখা হওয়া কোনো বান্ধবীকে সে বুকে জড়িয়ে ধরে সম্ভাষণ জানায়নি। (হ্যান্ডশেকই এদেশে “কি সর্বনাশ, ছুয়ে ফেললি যে” পর্যায়ের, আর ফ্রেন্ডলি হাগের কথা বাদই দিলাম)
অথচ এর সবগুলো কাজ সে তার বন্ধুর সঙ্গে করেছে। অথচ সে তখন একটা মেয়েকেও ঠিকমতো চেনে না। মেয়েরা যেনো দূরের গ্রহের অন্য প্রাণি, সে ঠিক মানুষ নয়। মানুষ শুধু ছেলেরা। মেয়ে ইজ ইকুইভ্যালেন্ট টু সেক্স-পার্টনার।
ওয়েল, জাতিগতভাবে ছেলে-মেয়ে আসলে তাই, তবে ইনডিভিজুয়ালি ব্যাপারটা যে আলাদা হতে পারে তা একজনকে আপনি মুখে বলে কিংবা স্ট্যাটাস লিখে শেখাতে পারবেন না। এটা জীবন থেকে শিক্ষা নেওয়ার বিষয়। আর ছেলেদের মতো মেয়েদেরও শুধু “মানুষ” ভাবার শিক্ষাটা আসতে পারতো কেবল ছোটোবেলা থেকে ছেলেদের মেয়েদের সঙ্গে এবং মেয়েদের ছেলেদের সঙ্গে বেড়ে ওঠার সুযোগ দেওয়া হলে।
আপনি একশটা মেয়েকে একশটা ছেলের সঙ্গে ক্লাস ওয়ান থেকে টেন পর্যন্ত পড়তে দিলে তারা দশ বছর পর একশ’টা কাপলে পরিণত হয় না। বরং পুরুষ ও নারীজাতিকে রেসপেক্ট করতে শেখা দুইশ’ জন তরুণে তারা পরিণত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তারা জানে মেয়ে কিংবা ছেলে হিসেবে মানুষকে আলাদা করে ফেলার কিছু নেই। বায়োলজিকাল কিছু ডিফরেন্স বাদে একে অন্যের পার্থক্য নেই। তারা তখন জানে, ছেলেরা খুবই স্বাভাবিক একটি জাতি যেমনটা মেয়েরা। তারা জীবনেও মেয়ে দেখেনি এমন কোনো অদ্ভুত বস্তু না।
এবং হয়তো একই কারণে, তারা তখন মেয়েদের মানুষ ভাবে।
ছোট্টবেলা থেকে ছেলেমেয়েকে একসাথে মিশতে দেওয়া উচিত বলে আমি মনে করি।
মিশতে না দিয়ে কি উদ্ধার করেছেন সমাজের মাথারা? নব্বই শতাংশ ছেলেমেয়ে প্রেম-ট্রেম করছে, মাসে দুইমাসে ব্রেকআপ করছে। মেয়ে দেখলেই প্রেম নিয়ে ভাবছে। সুযোগ পেলে ঝাঁপিয়েও পড়ছে, সুযোগ না পেলে ভিড়ের ফাঁকে অনৈতিক আগ্রাসন।
ছেলে আর মেয়েদের যতো আলাদা করে রাখবেন, ততোই চলবে এসব। একসাথে তাদের বেড়ে উঠতে দিলে কিছু বিশুদ্ধ প্রেম আর সেন্সিবল একটা ইয়াং জেনারেশন হয়তো পাওয়া যেতো। লাখো আজাইরা প্রেম আর লিংক চাওয়া তরুণ সমাজের চেয়ে সেইটা অনেক বেটার।
মাঝে মাঝে মনে হয় কামাল পাশাই ঠিক। 😕
যখন আমি এইগুলাকে দেখি।
(কমেন্ট বক্স বিশ্লেষণ করে যোগ করতেই হয়, এইখানে রেপ/ইভটিজিং প্রসঙ্গই না। তারও গোড়ার কথা প্রসঙ্গ। একজন মেয়েদের ভোগপণ্য ভাবা শুরু করে যখন, তখনকার প্রসঙ্গ। আর ভাই কোথাও বলা হয়নি কো-এডুকেশনের ফলে সব ছ্যাচড়া ছেলে উধাও হয়ে যাবে। এটুকু আমি নিশ্চিত এখন ১০০জনে ৭০জন মেয়েদের নিয়ে নোংরা দৃষ্টিভঙ্গি রাখলে, তখন ১০০জনে এমন ছেলের সংখ্যা হবে ৫। এইটাই অনেক।)

২৬শে মার্চ, ২০১৮

উন্নত বিশ্বেও ধর্ষক আছে, অ্যাবিউজার আছে।
কিন্তু অবাধ মেলামেশার অভ্যাসের কারণে ছেলেরা মেয়েদের সম্মান করে। মেয়েরাও ছেলেদের শ্রদ্ধা করে। রাস্তা দিয়ে হাঁটলে একটা মেয়ের দিকে সবাই তাকিয়ে থাকে না, (এমনকি রিকশাওয়ালারা পর্যন্ত মাথা ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে মেয়ে দেখে এই দ্যশে!) বাসে উঠলে স্তন চেপে ধরার চেষ্টা করে না কেউ কারও।
কো-এড হলে শুধু ধর্ষক আর মলেস্টার থাকবে। আগে ধর্ষক আর মলেস্টারের পক্ষে কথা বলার জন্য ছয় কোটি গলা শোনা যেতো, ওটা আর শোনা যাবে না। এটাই তো আসল।
ধর্ষক আর মলেস্টার অপরাধী। তাদের অপরাধীর মতো ট্রিট করতে পারবেন। এখন যদি দেখেন দেশের অর্ধেক লোকই অপরাধী তাদের তো আর অপরাধীর মতো ট্রিট করতে পারবেন না। এ ওর পক্ষে পোস্ট দেবে, সে তার বিপক্ষে। এগুলা তো সমাধান হলো না।
যে দেশের অর্ধেক লোক অপরাধী সেই দেশের শিশুদের মানসিকতায় পরিবর্তন আনতে হবে। বুড়োগুলো গেছে। বিয়ন্ড রিপেয়ার।

২৬ শে মার্চ, ২০১৮

ধর্ষণ আর নারীদের হয়রানি প্রতিরোধ কি করে করা যাবে তা নিয়ে ২০১৫ সালে মনে হয় এক লম্বা পোস্ট করেছিলাম। এমন না ওটা করার ক্ষমতা আমার আছে, তবে ক্ষমতা থাকলে অবশ্যই করতাম। ম্যাজিকের মতো ধর্ষণ উধাও হয়ে যেত ২০৩০ সালের বাংলাদেশে। করতো হয়তো কিছু বুড়ো ভাম, তাদের লটকে দিলেই হয়ে যেতো।
কো-এড। এইটাই সমাধান।
ছেলেরা আর মেয়েরা পাঁচ বছর বয়স থেকে একসাথে বড় হবে। একে অন্যের সঙ্গে চিমটাচিমটি করে বেড়ে উঠবে। বয়ঃসন্ধির প্রাক্কালে একসাথে নোংরা নোংরা গালি দিতে শিখবে। প্রেম-ট্রেম করলেও করবে। অপরিকল্পিত গর্ভধারণের মতো ঘটনাও ঘটতে পারে (যেইটা কো-এড ছাড়াও কম ঘটে না, নেগেটিভ দিক আলোচনার স্বার্থে বলছি)। তবে আরেকটা জিনিস নিশ্চিতভাবেই ঘটবে।
ছেলেরা মেয়েদের সমান সমানভাবে সম্মান করতে শিখবে, মেয়েরাও ছেলেদের সম্মান করবে। এই সম্মান করার ব্যাপারটা বড় বড় পোস্ট লিখে শেখানো যাবে না কাওকে। মাথায় বন্দুক ধরেও শেখানো যাবে না। সম্মান করা শেখা যায় কেবল একসাথে সময় কাটিয়ে। এই সময় কাটানোর সুযোগ এই দেশে অনেকেই পায় না।
একসাথে সময় না কাটালে কিভাবে একজন মানুষ আরেকজন মানুষকে চিনবে? সম্মান করবে? আজীবন বয়েজ স্কুলে পড়ে কিংবা বয়েজ শিফটে পড়াশোনা করে নোংরা চুটকির মাধ্যমে তো আর নারী জাতিকে চেনা যায় না। যে কোনো সম্প্রদায়কে চিনতে হলে তার সাথে মেলামেশা করেই চিনতে হবে। এই মেলামেশার সুযোগটা সরকারকে করে দিতে হবে বাধ্যতামূলকভাবে।
প্রতিটা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে বাধ্যতামূলকভাবে কো-এড করতে হবে। দশ বছর পর ধর্ষণের হারটা দেখবেন খালি।
[শরীয়ত, পর্দা, ধর্ম ইত্যাদি নিয়ে লম্বা আলোচনার জন্য একদল চলে আসবেন। তারা নিজেরাও জানেন, মানুষ ধর্ম মানতে আগ্রহী না। যেটা মানুষ মানতে আগ্রহী না সেই রাস্তায় সমাধান আনা সম্ভব না। কিন্তু ছেলেরা মেয়েদের সাথে বড় হতে, বা মেয়েরা ছেলেদের সাথে বড় হতে চরম মাত্রায় আগ্রহী, তা লিখে রাখতে পারেন। অর্থাৎ এটা একটা অ্যাপ্লিকেবল পদ্ধতি। ধর্মীয় আইন মানা অ্যাপ্লিকেবল না। কারণ, মানুষ এতো বিধিনিষেধ মানবে না কখনও ঠেকায় না পড়লে। কিন্তু কো-এড ঠেকা ছাড়াই মানুষ গ্রহণ করবে।]

৯ই জুলাই, ২০২০

আমি সব সময় বলি ধর্ষণ, ইভ টিজিং বন্ধে একমাত্র পথ হচ্ছে কো-এড চালু করা বাধ্যতামূলকভাবে। ছেলে মেয়ে ক্লাস ওয়ান থেকে একসাথে পড়বে। একে অন্যকে স্বাভাবিকভাবে নিতে শিখবে। মিউচুয়াল রেস্পেক্ট হবে। বিশেষ করে বয়ঃসন্ধিকালটা ছেলেদের এবং মেয়েদের উচিত একে অন্যের আশেপাশে বেড়ে ওঠা।
শুনতে হয়েছে ৯০% মুসলমানের দেশে এসব চলবে না। 🙂

৮ই ডিসেম্বর, ২০২২

এই যে বঙ্গবীরেরা আর্জেন্টিনার মেয়েদের দনের ছবি পাঠালো এর পিছে কি তারা দায়ী?
জ্বি না। এর পিছে দায়ী আমাদের ইজলামিক বা ধর্মীয় কালচার। কো এড করা যাবে না, ছেলে মেয়ে ছোট বেলা থেকে আলাদা রাখতে হবে —
এটা একেবারে মূল কারণ এসবের। ছেলে-মেয়ে আলাদা রাখা, প্রেমের বিরুদ্ধে হুঙ্কার দেয়া, চোখ বাঁকা করা — এসবের কারণে বেশিরভাগ ছেলে জিন্দেগিতে মেয়েদের সাথে মিশে নাই। এরা দনের ছবি পাঠায় নয়ত ক্রিপি আলাপ করে।
ছেলে আর মেয়ে মিশতে দেন একসাথে, প্রেম করুক, প্রেগন্যান্ট হোক, মানুষ হোক অন্তত।
এখন এরা একেকটা মাদারচোত।
আপনার ইসলামিক কিংবা কনজারভেটিভ সেন্সের জন্য। আর কিছুই না।
এসব দনের ছবি পাঠানো লোকজনকে দোষ দিবো না তো।
দোষ ধর্মীয় এবং সামাজিক চেতনার।
এসবই শত্রু। জনগণ না।
Friends at the Tre Cime di Lavaredo

Friends at the Tre Cime di Lavaredo

সোশিওপ্যাথ প্রতিদিন আপনার সাথে মিশবে না

সোশিওপ্যাথদের সোশাল/লাভ/ফ্রেন্ডশিপ ল্যাঙুয়েজই হচ্ছে “Leave me alone.”
যে সোশিওপ্যাথকে আপনি ঘাঁটাবেন না, আপনি তার সবচেয়ে বড় বন্ধু। দুই বছর হোক, দশ বছর পর হোক, সে আপনার সাথে দেখা করতে চাইবে। কথা বলতে চাইবে। (এটা সোশিওদের জন্য রেয়ার। তারা কারো সাথে দেখা করতে চায় না সহজে) যখন দেখা হবে তখন আপনার সাথে এমনভাবে মিশবে যেন শেষ দেখা গতকাল হয়েছে।
যে সোশিওপ্যাথকে আপনি ঘাঁটাবেন না, আপনি তার সবচেয়ে প্রিয় বয়ফ্রেন্ড/গার্লফ্রেন্ড। দুই বছর হোক, দশ বছর পর হোক, সে আপনার সাথে দেখা করতে চাইবে। কথা বলতে চাইবে। যখন দেখা হবে তখন আপনার সাথে এমনভাবে মিশবে যেন শেষ দেখা গতকাল হয়েছে।
যে সোশিওপ্যাথকে আপনি ঘাঁটাবেন না, আপনি তার সবচেয়ে ভালো পরিবারের সদস্য। দুই বছর হোক, দশ বছর পর হোক, সে আপনার সাথে দেখা করতে চাইবে। কথা বলতে চাইবে। যখন দেখা হবে তখন আপনার সাথে এমনভাবে মিশবে যেন শেষ দেখা গতকাল হয়েছে।
যে সোশিওপ্যাথকে আপনি রুটিন ধরে অমুক করা লাগবে, তমুক করা লাগবে, প্রতিদিন বিকালে আড্ডা দিতে হবে, সপ্তাহে একবার ভিডিওকল করা লাগবে, তিন মাসে তমুক করা লাগবে, ছয় মাসে চমুক, বছরে অ্যানিভার্সারি, বার্থডে, ইত্যাদি – সে হাতে প্রাণটা নিয়ে আপনার থেকে দূরে দূরে থাকবে। সোশিওপ্যাথের একটাই চাওয়া, “ভাই, আমাকে তুমি সাপোর্ট দাও অথবা না দাও, আমার সাথে কথা বলো অথবা না বলো, ঘুরো অথবা না ঘুরো, আমার আপত্তি নাই। তুমি তোমার মতো থাকো। কিন্তু আমাকে আমার মতো থাকতে দাও।”
যে তাকে যত বেশি তার মতো থাকতে দেবে তার সাথে সে তত বেশি থাকতে চাইবে। সেটা দশ বছরে দুইবার হলেও।
এতে আমি খারাপ কিছু দেখি না। বরং এটাই স্বাভাবিক।
ইদানিং মেন্টাল হেলথের নাম করে এই মানুষগুলোকে নর্মিরা একেবারে বন্দুক তাক করে ধরেছে। এসব আমি পাত্তা দেই না একেবারেই। নর্মিদের থেকে সোশিওপ্যাথদের মেন্টাল হেলথের অবস্থা বেশি খারাপ। অথচ নর্মিদের আবদার হচ্ছে সোশিওপ্যাথ তার সাথে অমুক অমুক করেনি তারমানে তার সাথে “সাইকোলজি টার্ম ০১”, “সাইকোলজি টার্ম ০২”, “সাইকোলজি টার্ম ০৩”, “সাইকোলজি টার্ম ০৪” ইত্যাদি করা হয়েছে।
ট্রুলি স্পিকিং, নর্মিরা সোশিওপ্যাথদের সাথে যা করে জ্বালাতন করে তা তাদের কতগুলো সাইকোলজিকাল সমস্যা জন্ম দেয় তা তালিকা করে শেষ করা যাবে না। অথচ নর্মিদের ভাব দেখে মনে হয় সোশিওপ্যাথ তাদের জীবন শেষ করে দিয়েছে আর তারা একেকজন খুব উপকার করেছে সোশিওপ্যাথের মানসিক অবস্থার।
না ভাই।
আমি প্রায় ১০-১২ টা এক্সপোজ স্টোরি পড়লাম গত এক বছরে।
সোশিওপ্যাথের দল আপনাদের আপনাদের মতো থাকতে দিয়েছে।
আপনি আপনার নর্মি-সংজ্ঞায় ব্যবহার পান নাই বলে সোশিওপ্যাথ ছেলেটার বা মেয়েটার দিকেই উলটা বন্দুক তুলেছেন।
কেন?
সোশিওপ্যাথ প্রতিদিন আপনার সাথে মিশবে না। অ্যাটাচমেন্টে যাবে না। অবশ্যই যাবে না। মরবে নাকি? আপনি একটা মানুষকে গুলি করে মেরে ফেললে আপনার সাইকোলজিতে যতটা চেঞ্জ আসবে, যত পিটিএসডি হবে, একজন সোশিওপ্যাথের জীবনে তার সমপরিমাণ চেঞ্জ আসবে, পিটিএসডি হবে যদি আপনার সাথে তার নর্মিদের মতো মেশা লাগে।
তাই বলে সোশিওপ্যাথ বন্ধু বানাবে না? প্রেম করবে না? পরিবার থাকবে না তাদের?
আপনাদের এক্সপোজ পোস্ট দেখে মনে হয় তাদের বন্ধু, প্রেম, পরিবার থাকাই দোষ। বুঝেন নাই তাদের, বেশ কথা, তাদের পেছনে না লাগাই ভালো হবে। অবশ্য এটা বলে লাভ তেমন নাই, নর্মিরা নিজেদের ভালো পেলেই হলো। ঐ নিজেদের সংজ্ঞায় কেয়ার, কমফোর্ট, সেন্স অফ রেসপন্সিবিলিটি, সোশাল ফিডব্যাক ইত্যাদি পেলেই খুশি।
সোশিওপ্যাথ বোঝার ঠেকা পড়েনি তাদের।
এমনি এমনি তো আর সোশিওরা নর্মি গায়েব করে দেয় না। এইসব জ্বালাতনেই তা করে।

যোগ্যতা-তত্ত্ব

একটা তসবি কিনুন। তারপর প্রতিদিন নিচের প্যারাটি একশ’বার জপুন।
আপনি যার যোগ্য তা পাবেন না। দুনিয়া এভাবে চলে না। আপনি যা পাইছেন তাই পাইছেন। এ নিয়ে আমি আগেও আলাপ করেছি, ইউ গেট হোয়াট ইউ গেট। ইউ ডোন্ট গেট হোয়াট ইউ ডিজার্ভ।
হোমপেজ স্ক্রল করতে গিয়ে দেখলাম হাহাকার। প্রায় দেখি। অমুক দেখতেছেন তমুক তার থেকে কম যোগ্যতা নিয়ে ভালো কোথাও চলে গেল। চমুক দেখতেছেন জমুক ডিজঅনেস্টি দিয়ে ভালো করে ফেলতেছে। তারপর তারা ভাবতেছেন, তাহলে আমার সততার মূল্য কই থাকলো? বা, আমার যোগ্যতার মূল্যায়ন কী হলো!
সারাটা জীবন আপনি এমনই দেখবেন। এবং এটা ডিল করার উপায় হচ্ছে একটা তসবি কেনা। এবং জপতে থাকা – ইউ গেট হোয়াট ইউ গেট।
তাহলে আপনি সৎ থাকবেন কেন, বা স্কিল আর্ন করবেন কেন?
কারণ আপনার ভালো লাগে তাই। সততা বা স্কিল আর্নিং যে আপনার ক্যারিয়ার বানাতে বা টাকার পাহাড় বানাতে করতে হবে এমন না। ইট ইজ হু ইউ আর। আপনার চেয়ে অসৎ কেউ সফল হলেই কি আর না হলেই কি? আপনার চেয়ে কম স্কিলড কেউ বেশি অর্জন করলেই বা আপনার কি?
দুনিয়া কোন ফেয়ার জায়গা নয়।
তসবি টিপে একশ’বার যখন “ইউ গেট হোয়াট ইউ গেট” পড়া হয়ে যাবে, তখন পরের একশ’বার জিকির করবেন এই লাইনটা – “দুনিয়া কোন ফেয়ার জায়গা নয়।”
ছোট্ট উদাহরণ দেই, আমার ৮ বছরের পরিশ্রম ও সততা আমাকে যা এনে নিতে পারে নাই, র‍্যান্ডম রাস্তার মোড়ে র‍্যান্ডম মানুষের সাথে পরিচয় থেকে ইনফরমেশন শেয়ারিং হলো – আমি একটা জব পেয়ে গেলাম এবং তা ২ বছর করলাম রাজকীয়ভাবে – আমার সবচেয়ে সুখী ক্যারিয়ার মোমেন্ট। এই জব পাওয়ার পেছনে আমার গত ৮ বছরের স্কিল ছিলো, তবে জবের খবরটা পাওয়ার জন্য ছিলো একটা দৈবঘটনা, ওই র‍্যান্ডম রাস্তায় ওই র‍্যান্ডম মানুষের সাথে ওই র‍্যান্ডম দিনে দেখা না হলে আমি জীবনেও জানতাম না ওই জব আছে।
লাইফ এরকম আনপ্রেডিক্টেবল।
আমার স্কিল আর্নিং অ্যালোন কিচ্ছু মীন করে না, যদি না ওরকম একটা লাক থাকে।

** লাক মানে তকদীর নয় **
লাকের আলাপ করলে কুসংস্কারাচ্ছন্ন মানুষ ভাবে তকদীরের আলাপ করছি। লাক বা ভাগ্য বলতে কী বোঝাচ্ছি? পৃথিবীতে ট্রিলিয়ন ট্রিলিয়ন র‍্যান্ডম ক্যাওটিক ঘটনা ঘটে যাচ্ছে। এই ক্যাওসের সঠিক সময়ে সঠিক জায়গায় উপস্থিত হয়ে যাওয়ার ঘটনাও একটা প্রোবাবিলিটি যেহেতু কয়েক লাখ ভুল সময় ও ভুল জায়গার পাশাপাশি ওসবও ঘটনা, আর আপনারা সবাই জানেন সম্ভাব্যতা = সমস্ত সম্ভাব্য অনুকূল ঘটনার সংখ্যা ÷ সমস্ত নমুনাবিন্দুর সংখ্যা।
ভাগ্য উন্নয়নে আপনি কেবল চেষ্টা করতে পারেন অনুকূল ঘটনা বৃদ্ধি করতে। মানে আপনি খাটের চিপায় পড়ে না থেকে বাইরে যত বের হবেন, সঠিক সময়ে সঠিক জায়গায় থাকার সম্ভাব্যতা বাড়বে। তবে তাও আপনার জীবনে ভাগ্যবান হবার মত কিছু না আসতে পারে। কারণ সম্ভাব্য অনুকূল ঘটনার সংখ্যা হয়তো ৩,৫০০ এবং অনুকূল ও প্রতিকূল ঘটনার সংখ্যা হয়তো ৩,০০,০০০! আপনি দেড় বছরে র‍্যান্ডম লোকের সাথে আলাপ করে, র‍্যান্ডম সিচুয়েশনে নিজেকে ফেলে হয়তো ১৮,০০০ ঘটনা ঘটাইছেন কিন্তু সেই আঠারো হাজারের কোনটাই অনুকূল সাড়ে তিন হাজারের অংশ নয়!
এজন্য পৃথিবী আপনার যোগ্যতা অনুসারে কাজ করবে না।
আমাদের নিজেদের আইডেন্টি ধরে রাখতে হবে। আপনি যদি সৎ হতে ভালোবাসেন, হবেন। আপনি যদি কাজ করতে ভালোবাসেন, করবেন। কিন্তু সততা ∝ সফলতা বা, পরিশ্রম ∝ সফলতা – এমন ভাবার মতো ভুল করবেন না।
আবার অনেক সৎ ও পরিশ্রমী লোক জীবনে অনেক উন্নতি করেন, কারণ তার ক্ষেত্রে সবকিছু ব্যাটে বলে হইছে। একই সমান সৎ, একই সমান পরিশ্রমী, একই সমান যোগ্য লোক আবার ওই পরিমাণ উন্নতি করতে পারে নাই দেখবেন। কারণ ক্যাওটিক ওয়ার্ল্ডে তার অ্যালাইনমেন্ট অতোটা ফেভারেবল হয় নাই।
তাইলে করবেন কি?
এসব নিয়ে মাথাটারে বেশি চাপ না দিয়ে স্কিল শিখতে থাকেন। এটাই ইম্পর্ট্যান্ট। কারণ আপনার র‍্যান্ডম রাস্তার র‍্যান্ডম মানুষ হয়তো কোথাও আছে। তার লগে আপনি ধাক্কা খাবেন একদিন। ওইদিন ধাক্কাটা খেয়ে আপনার কোন লাভ হবে না যদি না আপনি আগে থেকে স্কিল ডেভেলপ করে রাখেন।

লেখক-কবিকে সমাজ ও রাষ্ট্র একটা সম্মান দেয়

লেখক-কবিকে সমাজ ও রাষ্ট্র একটা সম্মান দেয়। কেন দেয়? লেখক-কবি তো ধানের নতুন প্রজাতি আবিষ্কার করেন না, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে কোন নতুন অবদান রাখেন না*। ভ্যালিউড সিটিজেন হিসেবে তাদের গ্রাহ্য করা হয়। এটা একারণে করা হয় না যে তিনি প্রেমের কবিতা লিখে অষ্টাদশী তরুণীর হৃদয় দখলের নকশাটা আয়ত্ত করেছেন।

লেখক এবং কবিকে মানুষ অবচেতনে যে সম্মানটা দেন তার পেছনের কারণটা হচ্ছে তাদের দায়িত্ব হলো জাতির ভয়েস হিসেবে তিনি কথা বলবেন। যেই কথা চল্লিশজন বলতে পারেনি, তিনি তাদের ভয়েস হবেন। লেখকদের পাত্তা যে মানুষ একারণে দেয় – সেটা তারা নিজেরাও অনেক সময় জানে না। এজন্য লেখকদের ওপর ক্ষেপে যাওয়া, গালি দিতে আসার ঘটনাটি ঘটে। কারণ তারা আশা করেছিল এই লেখকটি তার cause, তার ফাইট নিয়ে আলাপ করবে। করেনি।

লেখক যদি তার জনতার মনের, মুখের কথা না বলে স্রেফ প্রেমের গল্প লিখেন, ফেসবুকে আলাপ করেন শুধুই ফুল-ফল-লতা-পাতা নিয়ে, তাহলে জনগণের কোন দায় নেই লেখক ও কবিদের পাত্তা দেবার।

আমি বলছি না আপনি চাইলেই ফুল-ফল নিয়ে আলাপ করতে পারবেন না। অবশ্যই পারবেন। কিন্তু মানুষের ভয়েস না হয়ে যদি শুধু শক্তিশালী পক্ষের অনুমোদিত আলাপ করে যান, তাহলে সম্মানটা পাবেন না এই আরকি।

লেখকরা গিফটেড। তারা আলাপ করতে পারেন। প্রকাশ করতে পারেন লোকের সামনে নিজেকে। সমালোচিত হবার ট্রেনিং তাদের আছে, তাদের আছে গণ্ডারের চামড়া। এই গণ্ডারের চামড়া সাধারণ লোকের কাছে তো আশা করলে হবে না।

গণ্ডারের চামড়া যদি জনগণকে, যারা কথা বলতে পারছে না তাদের হয়ে কথা বলে তাদের প্রটেক্ট করতে ব্যবহার না করেন, তাহলে আসলে মানবসভ্যতার শুরু থেকে যে কারণে দার্শনিক ও লেখক-কবি-গায়ককে সম্মান দেয়া হয়েছে তার মূল শর্তটিই ভাঙা হয়।

লেখকদের বা কবিদের সম্মান করার আর কোন কারণ থাকে না।
গত ৫৫ টি বছরে নানা কারণে আমাদের প্রায় সব কবিরা প্রেম আর প্রায় সব লেখকরা লুতুপুতু নিয়ে ব্যস্ত হয়েছেন, যে কারণে এই পেশাদুটো নিয়ে সমাজে একটা নাক সিঁটকানোর ব্যাপার দেখা গেছে। কেন এই নাক সিঁটকানো – তাও কেউ সচেতনে জানেন না। তবে জনগণ ফিল করতে পারে আপনি তার হয়ে কথা বলছেন না, মেয়ে পটাচ্ছেন কেবল।

আমি বিশ্বাস করি আমাদের জেনারেশন একটা রেনেসাঁ ঘটাবে, আর লেখক ও কবিরা ফিরে পাবে তাদের সম্মান।
তবে এজন্য, মুখে কুলুপ এঁটে বসে থাকা আর প্রেমের গল্প লিখেই দায়িত্ব খালাস হয়ে গেছে ভাবাটা বন্ধ করতে হবে। বইপত্রে যা ভালো লাগছে তা লিখছেন লিখুন, ওটাই স্বাভাবিক।

তবে আপনার একটি গণ্ডারের চামড়া আছে – তার প্রয়োগ সোশাল মিডিয়ায় দেখাবার দায়িত্বটি আপনি এড়াতে পারবেন না।

একজন পুলিশ অফিসার ডাইনিংয়ে রাতে খাবার খেতে গেলে সেখানে যদি ডাকাত পড়ে – তাহলে পুলিশটির দিকে সমাজ তাকায় যে তিনি ডাকাতটাকে ঠেকাবেন, যদিও তিনি অফ ডিউটিতে।

তেমনই, আপনার জনরা প্রেমের কবিতা হতে পারে, ফেসবুকে যখন সেলফি দিতে আসেন, সেখানে একটা ক্রাইসিস চললে তা এড়িয়ে যাওয়া কবিদের বা লেখকদের সাজে না।

ওই গণ্ডারের চামড়াটি বা পুলিশের ট্রেনিংটি সমাজের স্বার্থেই ডেভেলপ করা হয়েছে। তার মর্যাদা লেখক ও কবিদের রাখতে হবে। টু সার্ভ অ্যান্ড টু প্রটেক্ট।

* হাইব্রিডদের মানে যারা গল্প-উপন্যাস-কবিতা-ননফিকশন লিখেন আবার বিজ্ঞানেও অবদান রাখেন – তাদের হিসাব আলাদা, সবাই হাইব্রিড হবেন এটা আশা করা উচিত নয়

 

আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স গল্প লেখা শুরু করলে…

এই প্রশ্নটা এখন পর্যন্ত কয়েকবার শুনে ফেলেছি। আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স গল্প লেখা শুরু করলে আমার মনোভাব কেমন হবে?

আমি বলেছি, “আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স তার খুশিতে লিখবে, আমি আমার খুশিতে লিখবো। এখানে তো আর প্রতিযোগিতা হচ্ছে না।”

অর্থনৈতিক হিসেবে দেখলে, হয়তো হচ্ছে। যেমন ধরুন মিডজার্নির ছবি চাইলে আপনি আপনার ড্রইংরুমে ঝোলাতে পারেন। তাই না? মানে, আগে যতখানি ইনকাম পৃথিবীর সব আর্টিস্টরা করে থাকতেন – এখন তাদের আয়ের একটা সংকুচিত উৎস – ওয়ালপেপার আঁকা, কমে যেতে পারে। মানুষ নিজের একেবারে পার্সোনালাইজড ছবি মিডজার্নি থেকে বের করে একটু ফটোশপ করে হাই ডেফিনিশন বানিয়ে দেয়ালের এমাথা থেকে ওমাথা ঝুলিয়ে রাখতে পারবে। আর্টিস্টকে টাকা কেন দেবে?

প্রচ্ছদশিল্পীদের ভাতের জায়গায় আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ঢুকে পড়তে পারে। লোক মিডজার্নি বা অনুরূপ সারভিস থেকে ছবি করে নিয়ে ওটা দিয়ে প্রচ্ছদ বানাতে পারবে। আগামি কিছু বইমেলায় আমরা প্রচুর মিডজার্নি প্রচ্ছদ দেখবো।

কিন্তু অপ্রচ্ছদশিল্পী কি রিপ্লেসড হয়ে যাবে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের কারণে?
উঁহু। তারা বিবর্তিত হবে। হতে পারে তারাও আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ব্যবহার করে পার্সোনালাইজেশনের নেক্সট লেভেলে চলে গেলেন। অথবা অন্য কিছু, তবে মানুষের কাজই বিবর্তিত হওয়া। আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বিবর্তিত হয় আর মানুষ নয়, তা কিন্তু না। মানুষের বিবর্তন ধীরগতির হতে পারে, তবে মানুষ একটা হিউম্যান টাচ, নতুন কোন অ্যাপ্লিকেশন সব সময় বের করে ফেলে।

ফালতু একটা উদাহরণ দেই। আগে পাংখাপুলার ছিল। যাদের কাজ ছিল ‘সাহাব’দের পাখা টানা। তারপর ফ্যান এলো। তারপর এলো এয়ার কন্ডিশনার। তারপর এলো এইচভ্যাক সিস্টেম। এখন এইচভ্যাকে কোটি কোটি টাকার ক্যারিয়ার বানানো সম্ভব।

হ্যাঁ, পাঙ্খাপুলারের চাকরি গেছে, কিন্তু মানুষের চাকরি যায়নি। মানুষ এখন হাতে পাখা না টানলেও, কীভাবে বাতাসের কোয়ালিটি ঠিক রেখে কম শক্তি খরচ করে পরিবেশ ও তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করবে তা নিয়ে কাজ করছে। সভ্যতা সামনে গেলে সার্ভাইভাল অফ দ্য ফিটেস্ট আবার চলে আসে, যে শিল্পীরা নতুন টেকনোলজি নিয়ে চিন্তা করবেন, কাজ করবেন ও নিজস্বতা যোগ করবেন, তারা এআই ব্যবহার করে নিজেদের কাজ অনন্য উচ্চতায় নিতে পারবেন সব সময়ই।

গল্পের উদাহরণে আসি। আগামি এক সময় হয়তো গল্পকার-বুদ্ধিমত্তা চলে আসবে (এখনকারগুলোর মতো নলা নয়, সত্যিকারের গল্পকার বুদ্ধিমত্তা) – যারা থিম দিলেই থৃলার গল্প লিখে দেবে ২০০০ পৃষ্ঠার। ৫ মিনিটে সে চার লাখ বই লিখে ফেলবে। তাহলে লেখকের মূল্য আর থাকলো কোথায়, এই তো?

লেখকের মূল্য তারপরও থাকবে। যেমন ধনীর ওয়ালপেপার মার্কেট ভ্যালু চিত্রকরের কমে গেছে তেমন বাসে বসে একটা বই পড়ে নেয়া জনগণের কাছে লেখকের ভ্যালু কমতে পারে, সেটা বড় সমস্যা নয়।

লেখকের বা শিল্পীর জীবন মানুষের কাছে রিলেটেবল – কারণ লেখক বা শিল্পীর মতো মানুষকে এক দিন এক দিন করে বাঁচতে হয়, একটা একটা করে চিন্তা করতে হয়, সীমিত সময়ে কাজ করতে হয়। কাজেই তার চোখে উঠে আসা স্ট্রাগলের কথা এআই যদি হুবহু কপি করতেও পারে, তবুও মানুষের জীবন মূল্যহীন হবে না। এটা পাঙ্খাপুলার জোন নয়, এটা অনুভূতির জায়গা। ধরুন ম্যান্ডেলার জীবন নিয়ে আপনি জানতে চান, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ম্যান্ডেলার মতো ৭ টা জীবনি লিখে দিলেও আপনার চাহিদা থাকবে। ইয়ান ফ্লেমিং নিজে স্পাই ছিলেন, জেমস বন্ড লিখেছেন – এই বন্ড আমরা পড়তে চাই কারণ ফ্লেমিংয়ের অভিজ্ঞতা। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দশগুণ ভালো স্পাই থৃলার লিখলে আমি অবশ্যই সেটা পড়বো থৃল নিতে, তবে ফ্লেমিংয়ের বন্ড পড়বো কারণ ওটা রিয়েল মানুষের রিয়েল স্ট্রাগল থেকে আসা – তাই।

এখানেই বিবর্তনের ব্যাপারটা আসবে। যেটা আমি অনেক আগ থেকেই বলি – শব্দের পর শব্দ লিখে কীভাবে থৃল দিতে হয় বা গল্প বানাতে হয় – এটা লেখক হবার একটা ক্ষুদ্র অংশ। অনেকে এইটুকু করেই মনে করেন লেখক হয়ে গেলেন। ওটা একটা যন্ত্রও পারবে, আগামি কয়েক বছরের মধ্যেই এমন অনেক যন্ত্র দেখবেন।

লেখক হতে হলে আপনার জীবনটাকে লেভারেজ করতে হবে। আপনার জীবনযাপন যদি ইন্টারেস্টিং এনাফ হয়, আপনাকে ঘিরে তৈরি হতে পারে লেজেন্ড – তবে আপনার গল্পের একটা আলাদা মুল্য থাকবে। এমনকি যিনি আপনার ব্যাপারে কিছুই জানেন না তিনিও আপনার লেখা পড়লে বুঝতে পারবে – এটা স্রেফ আর দশজনের কলম থেকে আসেনি।

ক্রিকেটার হতে হলে ভালো ছয় মারতে পারলেই হয়তো আপনি ব্যাটসম্যান। কিন্তু লেখক, চিত্রকর, মিউজিশিয়ান – স্রেফ জায়গামতো সুর তোলা আর কোন শব্দের পর কোন শব্দ বসবে তা জানাই যথেষ্ট নয়। ওতেও আপনাকে মাস্টারি আনতে হবে, তবে জীবনের একেবারে খাদহীন অনুভূতিগুলোর ভেতর দিয়ে না গেলে সেটার মূল্য শুন্য।

সোলায়মান সুখন অবশ্য বোঝেন নাই ব্যাপারটা। তিনি বা অনেকে মনে করেন দারিদ্র্যতা কবিত্ব বা লেখালেখির মূল উপযোগ আনে – আসলে তা নয়। এটা আনে নিরেট ও গভীর অনুভূতি। আর অ্যানাদার ব্রিক ইন দ্য ওয়াল হয়ে নিরেট ও গভীর অনুভূতি পাওয়া দুষ্কর।

আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স লেখালেখির জগতটা টেক ওভার করলে দুই ধরণের বিবর্তন লেখকদের গ্রহণ হবে।

(১) আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সকে ব্যবহার করা। একটা চ্যাপ্টার নিজে লেখার পাশাপাশি এআই দিয়ে ৫০০ টা একই চ্যাপ্টার লেখাবো আমি। তারপর সব পড়বো। তারপর আমার সিদ্ধান্ত নিবো কোনদিকে এই গল্প যাবে – আমার পার্সোনালাইজড ওয়েতে। কাজেই আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স যে শত্রুই হবে এমন না, তাকে ব্যবহার করতে হবে।

(২) স্রেফ শব্দের পর শব্দ সাজানো যে সবটা নয় সেটা লেখকদের মাথায় ঢুকবে। তারা নিজেদের জীবনটাকে ঠিকমতো সাজাবে, যেন তার নির্যাস ভালো হয়। জীবনটাকে একটা পুষ্পশয্যা বানিয়ে রেখে বানোয়াট নির্যাস জনগণকে খাওয়ানোর চেষ্টা আর তারা করবে না। এতে করে আমাদের লেখকরা আরও চৌকস হয়ে উঠবে।

যেমন মিডজার্নির কারণে আর্টিস্টরা আরও চৌকস হবেন তা নিয়ে আমি নিশ্চিত। অনেকে হয়তো বিবর্তন-০১ এর মতো এআই থেকে এখন আইডিয়া নেবেন, যদিও তার নিজস্ব আইডিয়া ছিল। তবুও, যতগুলো সম্ভব হেল্প আমরা নেবো। যেমন বানান আপনি পারেন, তাও গ্রামার ও স্পেলিং চেকার ব্যবহার করেন কারণ যান্ত্রিক হেল্প নেবো না কেন?

দ্বিতীয়তঃ আর্টিস্টরা ইভলভ হবেন, যেন স্রেফ তুলির আচড় নয়, তাদের কাজে আরও কিছু থাকে। সত্যিকার জীবনের সত্যিকারের নির্যাস।

কাজেই, এআই আমার কাছে কখনোই কম্পিটিটর মনে হয় না।
যেমন মনে হয় না আরেকজন লেখককে।
উনি উনার মত লিখবেন, আমি আমার মত লিখবো।
আরেকজন মানুষ ভালো লেখক হলে তার সাথে আমি ফোনে কনসাল্ট করতে পারি লেখালেখি নিয়ে, একটা এআই দিনে দশ লাখ উপন্যাস লিখতে পারলে তার সাথেও আমি যোগাযোগ করতে পারছি, উপন্যাস লিখিয়ে নিয়ে। ক্ষতির কী আছে?

যন্ত্র বা মানুষ – কাউকে ঠেকিয়ে দেয়া যেন আমাদের লেখা বা ছবি বেশি চলে বা বেশি মনোযোগ পায় – এমনটা সত্যিকারের কোন আর্টিস্ট করেন না। এখনো অনেক লেখক লিখেন। মানুষ দশ হাজার লেখকের ওপর ছড়িয়ে ছিটিয়ে হুমড়ি খেয়ে থাকেন। যদি এই ৯,৯৯৯ লেখক না থাকতেন, তাহলে সব মনোযোগ আমি একাই পেতাম। তাই বলে কি আমি এখন এই ৯,৯৯৯ জনকে স্তব্ধ করে দিতে তাদের পরিবারদের অপহরণ করবো?

না।

তেমনই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা যদি সত্যিকারের মানুষকে টপকে ফেলে ভালো কন্টেন্ট দিতে থাকে, তবুও তার বিরুদ্ধে আমি কোন স্ট্যন্ড নেবো না। তাদের আমি আরেকটা মানুষ-লেখক বা মানুষ-শিল্পীর মতোই দেখি। ওরা ওদের মত লিখুক, আমি আমার মত লিখি। মিটে গেল।

এই কারণে অনেকে আমার ইন্টারপ্রিটেশনের ভুল মানে বোঝেন। ভবিষ্যতের বাংলার ছবি মিডজার্নি এআই বানিয়েছে, গ্রাম হয়ে গেছে ৪০২৩ব সালের ঢাকা। আমি বলেছিলাম এই ছবি থেকে আমার ইন্টারপ্রিটেশন হচ্ছে মিডজার্নি জানে আমরা উন্নত হতে হতে নিজেদের ধ্বংস করে ফেলবো, কাজেই ৪০০০ সালে মানুষ স্রেফ কৃষিকাজ করে কোনমতে বেঁচে থাকবে। তাই উঁচু বিল্ডিং নেই।

কেউ কেউ বললেন, “ভাই এভাবে তো এআই চিন্তা করতে পারে না।”
সে আমিও জানি। তবে অন্য এক শিল্পী এটা আঁকলেও আমি নিজের মতই ইন্টারপ্রিট করতাম। হয়তো শিল্পী এত কিছু ভাবেনই নাই। স্রেফ গ্রাম আর ধ্বংসস্তুপ এঁকে ভেবেছেন ৪০২৩ লিখে দেয়া যাক! লাল দরজার ছবি নিয়ে এমন জোকস অনেক আছে।

আমি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা আঁকুক আর মানুষ, আর্টিসটকে একই সম্মান দেই।
গল্প লিখলেও সে আমার থেকে লেখকের সম্মানই পাবে। ওই ৯,৯৯৯ জনের মত।
তার ফোকাস আমি কেড়ে নিতে চাই না। তাকেও আমি লিখতে দিতে চাই।
যন্ত্রকে মানুষের সমান সম্মান দেয়া আমাদের উচিত।
আমি একটা চেয়ারের সাথে পা বেঁধে গেলে চেয়ারটাকে সশব্দে, “সরি, ইচ্ছে করে করিনি। লেগে গেল।” বলে থাকি। চেয়ারের প্রাণ নেই, তবুও। যন্ত্রেরও নেই।

তবে যন্ত্রের প্রতি, চেয়ারের প্রতি আমরা কীরকম আচরণ করি, তা আমাদের চরিত্র প্রকাশ করে। যন্ত্রের বা চেয়ারের নয়।

অধিক নৈতিকতাই বাংলাদেশের সর্বনাশ করেছে

প্রায় শুনি, মানুষের মধ্য থেকে নৈতিকতা উঠে যাচ্ছে। আমার তা মনে হয় না। উঁহু। মানুষ কোড-ভিত্তিক প্রাণি। তার মোরাল কোড থাকে, থাকতে বাধ্য। যে ভয়ঙ্কর খুনি, তারও থাকে কিছু নিজস্ব নীতি, যদিও সভ্য সমাজ তার সে কোডকে ছিঃছিক্কার করে, তবে কোড তো আছে কিছু তারও।
দুটো দশক এ সমাজে বাস করে যা অনুভব করেছি, তাকে নৈতিকতার অভাব বলা যায় না। বরং অধিক নৈতিকতা আমাদের বাংলাদেশকে নোংরা ও কদর্য একটি স্থানে পরিণত করেছে।
মানুষ মোরাল কোড বেছে নিতে ও তা মেনে চলতে ভালোবাসে। আইন ভাঙার থেকে আইন মানার ব্যাপারে এই প্রাণিটির টেনডেন্সি বেশি। এটা মূলতঃ আসে আমাদের প্যাকে (similar to wolf packs ) চলাফেরার অভ্যাসের কারণে, এবং আপনি আমার কথায় দ্বিমত করতে পারেন, কারণ দেশে তো কাউকে আইন মানতে দেখা যায় না। 😉 ব্যাখ্যা করতে দিন।
মোরাল ডিলেমা নিয়ে আগে আলাপ করা যাক। মোরাল ডিলেমা – যেখানে পরস্পর বিপরীত দুটো বিষয়কে আপনার কাছে সঠিক মনে হতে পারে, নৈতিকভাবে। ধরুন, চোর। তিন দিন ধরে খায়নি। ক্ষুধার জ্বালায় চুরি করেছে। ধরা পড়েছে। তাকে দোকানের মালিক নিয়ে এলো। আপনি মোরাল ডিলেমায় পড়ে যাবেন। চোরের শাস্তি আছে। তবে মানুষ অভুক্ত থেকে মারা যাবে কারণ তার টাকা বা খাবার নেই তা-ও নৈতিকতার বিচারে সঠিক নয়। এই চৌর্যবৃত্তিটিকে নৈতিকতার পরিপন্থি বলা হবে কি না! এই হচ্ছে মোরাল ডিলেমা।
আমাদের বাংলাদেশে নৈতিকতার অভাব নেই। বরং প্রাচুর্য আছে। এই প্রাচুর্যের ঠেলায় মোরাল ডিলেমা সৃষ্টি হচ্ছে। মানুষ মুহুর্মুহু মোরাল ডিলেমায় পড়তে পছন্দ করে না। মোরাল ডিলেমা সপ্তাহে দু-একবারের বেশি হওয়ার কথা নয়। অথচ যখন তারা দিনে দশবার এই ডিলেমায় পড়ে তখন তারা মোরালি কনফিউজড হয়ে যায়। যা আমাদের দেশে একটি সাধারণ দৃশ্য।
মোরাল ডিলেমাটি “কাহাদের সৃষ্টি” – সে ডিবেটে যাবো না। আমার কাজ আপনাদের কাছে তার স্বরূপ তুলে ধরা। বাদবাকি বিচার বিবেচনা আপনাদের।
বাংলাদেশি মাত্রই তাকে একটি নয়, দুটি নয়, তিনটি সংবিধান ধরিয়ে দেয়া হয়।
১। বাংলাদেশের সংবিধান – যা সর্বসম্মতিক্রমে ও রাষ্ট্রীয়ভাবে স্বীকৃত আমাদের দেশের আইন ও যা মেনে চলতে নাগরিক বাধ্য। নইলে আইন ও বিচার বিভাগের তরফ থেকে শাস্তির বিধান রয়েছে।
২। বাঙালিয়ানা সংবিধান – যা বাঙালিদের অতি-উৎসাহে আমাদের দেশের সিউডো-আইন ও যা মেনে চলতে নাগরিককে বাধ্য করা হয়। নইলে সামাজিক শাস্তির বিধান রয়েছে। বাংলাদেশের জন্ম বাঙালিয়ানা থেকেই হয়েছে বলে এটি নিয়ে গোঁড়ামি আছে। শহীদ মিনারের সামনে ইংরেজি বা হিন্দী গানের তালে নাচাকুদো করলে বাঙালিয়ানা ভঙ্গ হয় ও সমাজ নাগরিককে শাস্তি দেয়। বিকিনি পরে কক্সবাজারে হাঁটলে বাঙালিয়ানা ভঙ্গের অভিযোগে বাঙালিরা নাগরিককে শাস্তি দেন, ইত্যাদি, যদিও বাংলাদেশের সংবিধানে এরা কোনও অপরাধ নয়।
৩। শরীয়তের সংবিধান – যা মুসলিম জনগোষ্ঠীর অতি-উৎসাহে আমাদের দেশের সিউডো-আইন ও যা মেনে চলতে নাগরিককে বাধ্য করা হয়। পর্দা করেননি বলে নাগরিককে শাস্তি দেয়া হয় (সোশাল শেমিং)। লিগাল বার থেকে মদ খাচ্ছে বলে হট্টগোল করা হয়, কারণ ধর্মে ওটা নিষেধ। অথচ বাঙালিয়ানা ও বাংলাদেশ সংবিধানের দৃষ্টিতে এরা কোনও অপরাধ নয়।
খেয়াল করলে দেখবেন এটি স্রেফ সামাজিক সমস্যা নয়। পুলিশ এসে সুন্দর কিন্তু ব্যতিক্রমী হেয়ারস্টাইলের ছেলেদের ধরে ফেলে। তারপর চুল কেটে দেয়। প্রেমিক-প্রেমিকাকে হেনস্থা করা হয়। হোটেলে-মোটেলে পুলিশ মাঝে মাঝেই “অসামাজিক কার্যক্রমের দায়ে” যুগলদের বন্দী করে ও নিজেরাই বাদী হয়ে মামলা করে দেয়, যদিও তারা পর্নোগ্রাফি ভিডিয়ো বানাচ্ছিলো না কিংবা প্রস্টিটিউশনের সাথে জড়িত ছিলো না। এসব মাত্রাতিরিক্ত নৈতিকতা বাংলাদেশের সংবিধান পরিপন্থী কাজ, অথচ ইসলামিক আইন ও বাঙালিয়ানা আইনে জায়েজ। তাই পুলিশ পর্যন্ত – যারা কিনা আইনের ধারক ও বাহক- এই অলিখিত, অসংবিধানিক আইনের ওপর অ্যাক্ট করে। পাবলিক বে-আইনী এসব কর্মকান্ডে হাততালি দিয়ে থাকেন।
এর প্রভাবটা এবার দেখা যাক। একজন তরুণী মোরাল ডিলেমায় পড়ে যান। তিনি একজন সৎ ও সুনাগরিক। ট্যাক্সপেয়ার। শিক্ষিতও বটে। দেশের অ্যাসেট। তবে ২০২১ সালে পৃথিবীর আর ২০০ কোটি তরুণীর মতো তিনি জীবন যাপন করেন। পর্দাপ্রথা তার পছন্দ নয়। তিনি মুখ খোলা রেখে চলাফেরা করতে পছন্দ করেন। এটি তার ব্যক্তিগত অধিকার ও নিজস্ব পছন্দ। তবে তাকে একশ’জন প্রতিদিন মনে করিয়ে দেয়, “পর্দা করা ফরজ, এটা তোমার করা উচিত”। ফরজ মানে কী? সওয়াবের বালতি নয়। ফরজ অর্থ অবশ্য পালনীয় আইন। বাংলাদেশে পর্দা করা আসলে ফরজ নয়, দেশের সংবিধানে তা নেই। কাজেই তরুণী মোরাল ডিলেমায় পড়ে যাচ্ছেন। “আমি কি আইন ভাঙছি? না। কিন্তু ওরা বলছে ভাঙছি।”
একসময় তিনি হয় মনে করেন তিনি আসলেই আইন ভাঙছেন এবং অন্যদের এই চাপ দেয়া শুরু করেন। অথবা তিনি হয়ে ওঠেন প্রতিবাদ-মুখর নারীবাদী। উভয় ক্ষেরেই (পক্ষ না নিয়ে বলছি) বিষয়টি সোশাল ইমব্যালেন্স ক্রিয়েট করে।
বাঙালি তিনটি আইনের বই মেনে চলার চেষ্টা করেন। এদের মধ্যে অনেক ব্যাপারে তিনটি আইনের বই তিন অবস্থান রাখে। তারা বাংলাদেশের সংবিধান মেনে চলেন। তারা বাঙালিয়ানা মেইনটেইন করার চেষ্টা করেন। তারা ইসলামের হুকুম-আহকাম মেনে চলতে চান।
তাদের চোখে দেশের আইন না মানা শাস্তিযোগ্য অপরাধ, বাঙালিয়ানা ইগনোর করা শাস্তিযোগ্য অপরাধ (একজন বিতর্কিত মন্ত্রী বাংলা সাইনবোর্ড না থাকলে তা গায়ের জোরে “ভেঙে দেওয়ার” জন্য ফেসবুকের ভেরিফাইড পেইজ থেকে তরুণদের আহ্বান জানিয়েছিলেন, বিশ্বাস করতে পারেন?) এবং আল্লাহর আইন মেনে না চলা শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
অর্থাৎ নৈতিকতার অভাব বাংলাদেশিদের নেই। প্রাচুর্য আছে। মানুষের মস্তিষ্ক তিনটি সংবিধান, তিনটি ভিন্ন কোড মেনে চলার জন্য তৈরি নয়। তারা তিন “ALPHA” মানার মতো প্রাণি নয়। মানুষ নেকড়েদের মতো। ALPHA WOLF মেনে চললে নেকড়ের পাল দীর্ঘদিন টিকে থাকে। মানুষ তেমন “একটি” ALPHA মানতে সক্ষম। তিনটি আলফা? মানতে তারা পারবে না। প্রতিবার ব্যর্থ হবে, মোরাল কম্পাসের কাঁটা বিক্ষেপ দেবে গ্যালভানোমিটারের মতো।
দিচ্ছেও। নীলক্ষেতের চুরি করা কপি পড়ে আমরা হয়ে যাচ্ছি ইঞ্জিনিয়ার। ফ্রি ডাউনলোডের বই থেকে শিখেছি ম্যাথমেটিকস। এসব আইনগতভাবে বাংলাদেশে অনৈতিক নয়, কারণ পরিস্থিতির কারণে উপায় নেই। তবে ইসলামের চোখে এই জ্ঞানার্জন পুরোটাই হারাম। এই নীলক্ষেত প্রিন্ট পড়ে বিএসসি ডিগ্রি আর সার্টিফিকেট অর্জন যে করলো আর তা দেখিয়ে চাকরি যে নিলো তার প্রতিটা পায়-পয়সা হারাম। হারাম মানে গুনাহের বালতি কেবল তা নয়, হারাম মানে আইনতঃ নিষিদ্ধ। কার আইন? আল্লাহর আইন। নাগরিক পড়ে গেলেন কোথায়? মোরাল ডিলেমায়। তিনি জানেন তিনি সাক্ষাত শয়তান।
বাংলাদেশের সংবিধানে তিনি জান্নাতী, সাক্ষাত ফেরেশতা, বাঙালি আইনে দেশপ্রেমিক ও ফেরেশতা। আল্লাহর আইনে সাক্ষাত শয়তান। এটি যে তার আত্মার ওপর জুলুম তা তিনি বোঝেন। তিনি ট্রিগারড হন, আরেকজনকে বলতে থাকেন, “নামাজ পড়ো। আল্লাহর আইন মানো। শরীয়ত মানো।”
কারণ তিনি তো শরিয়তের আইনে সাক্ষাত পিশাচ। মানুষ যতই ভালো হন না কেন। এই গিল্ট তার মধ্যে আছে কেন? নৈতিকতার অভাবে? নয়। চরম ও অতিরিক্ত নৈতিকতার কারণে।
এর প্রতিকার কী?
আমার সাথে সাথে উচ্চারণ করতে পারেন, “যাহা সংবিধানে অপরাধ নহে, তাহার সবই হয় সঠিক, নয়তো ধূসর কর্ম। খারাপ কিছু নয়।”
ধূসর অঞ্চল বা গ্রে এরিয়ার সাথে পরিচিত হন। এটি আদতে আমাদের দৈনন্দিন ৯০% কাজকর্ম। বন্ধুর পিঠ চাপড়ে দেয়া। প্রেমিকার হাত আঁকড়ে ধরা। দোকানদারের সাথে মৃদু ঝগড়া করা। ইত্যাদি। এরা কি ন্যায় না অন্যায়? অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এরা ধূসর, তবে অন্যায় নয়। ধূসর, কারণ এক নাগরিক এসে বলবে “ইহা পাপাচার” আবার অপর এক নাগরিক এসে বলবেন, “ইহাই সভ্যতা।”
দেশের আইন কী বলে? তা নাগরিকের ব্যক্তি-অধিকার।
কাজেই সামাজিক, বাঙালিয়ানা, ও শরিয়তের আইন এখানে বিবেচ্য নয়, ধূসর কাতারে চলে যাবে। যতই ধর্মপ্রাণ হয়ে থাকুন না কেন, একই সাথে তিন আইনের বই মানতে যাবেন না। নিজের ধ্বংস ডেকে আনবেন। দেশের ধ্বংস ডেকে আনবেন। পাড়া-প্রতিবেশির ধ্বংস ডেকে আনবেন। পরিবেশটা বানাবেন টক্সিক।
আমরা বাংলাদেশি। আমরা একটি আইন মানবো কেবল।
বাংলাদেশের সংবিধানের আইন।
এর বাইরে কে কোন ট্রেডিশন পালন করছে তা তার ব্যক্তিগত ব্যাপার। কারো মনে চাইলে সুন্নতি জীবন যাপন করবে। মাথায় পাগড়ি দেবে, পাঞ্জাবি পরবে, হাতে রাখবে তসবীহ। কেউ আবার হয়ে যাবে মাইকেল জ্যাকসন। চুল থাকবে লম্বা, ট্যাংড্যাং করে গিটার বাজাবে, উদ্দাম জীবন-যাপন করবে। দুটোর কোনটি-ই অন্যায় নয় ও সমান সম্মানের, ধূসর এলাকার। এই কথাটি বার বার আমাদের বলতে হবে।
প্রতিনিয়ত আউড়াতে হবে, “যাহা সংবিধানে অপরাধ নহে, তাহার সবই হয় সঠিক, নয়তো ধূসর কর্ম। খারাপ কিছু নয়।”
নৈতিকতার প্রাচুর্যে আমরা কনফিউজড ও ইমমোরাল হয়ে উঠেছি।
এত নৈতিকতার দরকার নেই।
একটি নৈতিকতার বই যথেষ্ট।
আর তা হলো বাংলাদেশের সংবিধান।
মে ৩০, ২০২১ 

অটোগ্রাফ সমাচার

৭১০ জনের ভোট থেকে আমরা দেখবো পাঠক অটোগ্রাফ চান কি না!

দেশের প্রখ্যাত ও সক্রিয় একজন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব প্রায়ই টিভির সামনে কিংবা মঞ্চ থেকে বলে উঠেন, “জনগণ এদের চায় না!” প্রতিবারই আমার মুখ চুলকাতে থাকে একটা নিরীহ প্রশ্ন করার জন্য। আমি বর্ষীয়ান সেই রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের কাছে জানতে চাই, “জনগণ কি চায় আর কি চায় না তা কি আর আপনার জানা আছে, ম্যাম? সার্ভে কি করেছেন দু-চারটে?”

তা তিনি করেননি। তাহলে হয়তো বুঝতে পারতেন জনগণ কাকে চায় না।

এই বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদের মতো একটি কাজ আমাদের বইয়ের দোকানগুলো করে থাকেন। তারা ঘোষণা দেন, “প্রি-অর্ডার করলেই পাচ্ছেন লেখকের অটোগ্রাফ কপি!”

তাদের উদ্দেশ্য অত্যন্ত সৎ ও পাঠকহিতকর তা নিয়ে সন্দেহ নেই, তবে একটা প্রোপার সার্ভে ছাড়া উদ্দেশ্যের সাথে বাস্তবায়নের ফারাকটা তো ঠিক উল্লেখ করা যাচ্ছে না। কে জানে, হয়তো পাঠকরা অটোগ্রাফের ঘোষণাতে বিরক্তই হচ্ছেন এবং বইয়ে অটোগ্রাফ ছাড়াই তারা প্রি-অর্ডার করতে চেয়েছিলেন, কিন্তু সেই অপশন দেয়া-ই হয়নি বলে হয়তো পিছিয়ে গেলেন!

কিন্তু জনগণ ‘এদের’ চায় কি না তা তো আর জনগণ মুখ ফুটে বলবে না। বাংলাদেশে লেখক-কবিদের উদ্দেশ্যে সমালোচনা করলে লেখক কিংবা কবিটি নিজেই দা-খুন্তি নিয়ে তাড়া করে গায়ের দিকে ছুটে আসেন বলে অতীত উদাহরণ আছে। জনগণ ওই রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের ‘ভ্যানগার্ড’ নন, তারা হেলমেট পরেও তেমন একটা অভ্যস্ত নন, কাজেই কেন এই ঝুঁকি নেবেন? এই ঝুঁকিটি নিতে হবে আমার মতো কোন এক গদাধারী লেখককেই! কাজেই নিলাম।

ভোটের আয়োজন করলাম। আপনারা একদিনের মাথায় যে সাতশ’র বেশি মানুষ ভোট দেবেন তা আশা করিনি। আমি ভেবেছিলাম আমার স্যাম্পলের আকার হবে বড়জোর ৩০০ জনের। তবে আপনাদের আন্তরিকতার জন্য প্রথমেই ধন্যবাদ দিয়ে কাজের কথায় চলে আসি।

ভোট নেয়া হয়েছে কোথায় –

(১) আমার টাইমলাইন
(২) থ্রিলার পাঠকদের আসর গ্রুপে

আরেকটি গ্রুপে দিয়েছিলাম, তারা পোস্ট ডিক্লাইন করে দিয়েছিল। নইলে আরও কিছু স্যাম্পল কালেক্ট করা যেত। যাকগে।

ফলাফলটা বলি। আমার উপসংহার দিয়ে শুরু করবো।

উপসংহার –

অটোগ্রাফসহ বই দেবার ঘোষণা করা ব্যবসার জন্য বেশ ক্ষতিকর, যদি না তা খুবই রেপুটেবল কারো হয়। খুবই রেপুটেবল বলতে আমি বোঝাচ্ছি মুহাম্মদ জাফর ইকবাল, মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন প্রমুখের কথা। আমার কিংবা আমার থেকে সিনিয়র অনেক লেখকের ক্ষেত্রেও অটোগ্রাফসহ বই বিক্রি করার ঘোষণা করলে বই বিক্রি করা প্রতিষ্ঠানের লাভ থেকে ক্ষতি হবার সম্ভাবনা বেশি।

কার্যকারণ বর্ণনা –

অটোগ্রাফ পছন্দ করেন কি না?
সব ধরণের “হ্যাঁ” মিলিয়ে উত্তর দিয়েছেন ৪৪২ জন।
সব ধরণের “না” মিলিয়ে উত্তর দিয়েছেন ২৬৮ জন।

একজন বাজে স্ট্যাটিস্টিশিয়ান যদি এই জরিপ করতো তবে স্রেফ দুটো অপশন রাখতো, হ্যাঁ এবং না। এতে করে তার কাছে মনে হতো অটোগ্রাফ চান এমন লোক (৪৪২) তো চান না এমন লোকের (২৬৮) অনেক বেশি। অর্থাৎ অটোগ্রাফ দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে বই বিক্রি করা তার অনলাইন শপের জন্য ভালো হবে।

আসলে নয়। কারণ কে কোন পরিস্থিতিতে হ্যাঁ বলেছেন তা আমি আলাদা করেছি এবং এটা বাতাস থেকে করিনি। আমার টাইমলাইনের প্রথম ১২০ ভোটের ওপর ভিত্তি করে সেটা করা। ওখানে সবাই কমেন্ট করে ভোট দিয়েছেন। হ্যাঁ যারা বলেছেন তাদের মধ্যে বেশিরভাগেরই কথা হচ্ছে লেখকের অটোগ্রাফ তারা চান তবে কেবল ও কেবল যদি তারা নোটেবল কেউ হন।

চূড়ান্ত হিসাবে ৪৪২ জনের মধ্যে ৩০৮ জনই বলেছেন আকাশে পৌঁছে যাওয়া লেখক কিংবা ব্যক্তিগতভাবে তারা যাকে আকাশে রাখেন – তাদের বাদে আর কারো অটোগ্রাফ তারা আসলে চান না বইয়ের সাথে।

মাত্র ১০৬ জন মানুষ বলেছেন যে কোন লেখকের অটোগ্রাফ পেতেই তাদের ভালো লাগে, তাদের মোটামুটি পছন্দ হলেই চললো। এটার ব্যাপকতা বোঝাতে আমি ওই এক্সপ্লোডেড পাই চার্টটি করেছি। পাইয়ের যে অংশটি কেটে আলাদা করা সেটুকুই হচ্ছে আপনার ক্রেতা যারা নিঃশর্ত অটোগ্রাফ চান। যেটা মোট জনসংখ্যার তুলনায় খুব উল্লেখযোগ্য কিছু নয়।

যারা বিক্রেতা, তারা কি স্রেফ ওই অংশটুকুকে সন্তুষ্ট করতে প্রি-অর্ডারের সাথে অটোগ্রাফের অফার জুড়ে দেবেন? আমার মনে হয় না আপনারা ওই অংশকে খুশি করতে গিয়ে বিশাল অংশকে নিয়ে কোন রিস্ক নিতে চান। কারণ, ভোটারদের মধ্যে ৩৩ জন বলেছেন তারা উলটো বিরক্ত হন অটোগ্রাফ পেলে। এরা যে কোন লেখকের অটোগ্রাফ পেলেই বিরক্ত হন, কারণ বইটা নিয়ে তাদের একটা পরিকল্পনা থাকে আর তাতে পয়লা পাতায় একটা ধোবড়া স্বাক্ষর তারা চান না।

৩৩ অত্যন্ত ছোট্ট একটি সংখ্যা, তবে ওই যে হ্যাঁ বলা ৩০৮ জনের বিশাল সংখ্যাটি – তারাও কিন্তু যে লেখকের অটোগ্রাফ চাননি তারটা অনলাইন বুকশপ অটোগ্রাফসহ পাঠালে আনন্দে আত্মহারা হয়ে উঠোনে নেমে এক পাক নাচেন না। বরং তাদের ভ্রুজোড়া বিরক্তিতে কুঁচকে যায় কিছুটা। আমার হাতে ডেটা নেই, তবে এই জরিপ থেকে বুঝতে পারছি অনেকগুলো প্রি-অর্ডার আপনারা মিস করেছেন স্রেফ প্রি-অর্ডার করলেই অটোগ্রাফ – এমন একটা আহ্লাদিত ঘোষণা দিয়ে। আপনাদের আহ্লাদ পাঠকদের একটা বড় অংশকে খুশি করতে পারেনি।

প্রতিকার –

এবার প্রতিকারের আলাপ করা যাক। আমাদের ছোট্ট এই স্টাডি থেকে আমরা জানলাম “প্রি-অর্ডার করলেই থাকছে অটোগ্রাফ”-জাতীয় ঘোষণা ব্যাকফায়ার করবে। আপনারা মনে করবেন পাঠককে কিছু দিচ্ছেন, কিন্তু উলটো তাদের অনেকে বিরক্ত হবেন। আবার অটোগ্রাফ একটা ভালো সেলিং পয়েন্ট, আপনার কাছে ৪৪২ জনের ভোট তো আছে। যদিও আপনি এদের মধ্যে ৩০৮ জনের মতিগতি ধরতে পারছেন না, তাদের কাছে এটা প্লাস হতে পারে, মাইনাসও হতে পারে। যে লেখকের বই নিয়ে পোস্ট দিলেন তিনি যদি আপনার পেইজ লাইকারদের আকাশে না থাকেন তবে? সমাধানটি সহজ। যখনই দ্বিধা থাকবে, তখনই সেখানে ক্রেতাকে চয়েজ দিতে হবে। অ্যাডভার্টাইজিংয়ের নতুন শিক্ষা এটাই।

কাজেই প্রতিকার হচ্ছে, লেখকের সাথে যদি অটোগ্রাফের আলাপ করে ফেলেন, তাহলে যে কোন বিক্রয় পোস্টে আপনারা অটোগ্রাফটাকে গলা বাড়িয়ে না বলে ফিসফিস করে বলুন। বইয়ের পোস্টটা পুরো লিখুন, তলে ছোট্ট করে লিখে দিন, “আগ্রহী পাঠকদের জন্য অটোগ্রাফের সু-ব্যবস্থা আছে। যারা অটোগ্রাফ চান তারা কোন নামে অটোগ্রাফ হবে তা উল্লেখ করে দিন।”

এতে করে ১০০% পপুলেশনকে আপনি ধরতে পারলেন।

ঘোষণা –

বাংলাদেশের বই নিয়ে যারা ব্যবসা করেন তাদের মধ্যে পরিসংখ্যানকে গুরুত্ব দেবার প্রবণতা বাড়াতে হবে। আমি বাংলাবাজারকে যতখানি বুঝেছি, প্রকাশক ও দোকানের মালিকরা ‘অভিজ্ঞতা’র ওপর ভিত্তি করে সিদ্ধান্ত নেন। তিনি দেখেছেন গত ৩ বছরে অমুক কর্মটি বেশি বই বিক্রি করেছে, কাজেই তিনি পরের তিন বছর অমুক করে যাবেন। অথচ তিনি কোন ডেটা কালেক্ট করেননি সংখ্যাতাত্ত্বিকভাবে, তা অ্যানালাইসিস করেননি। তার প্রফিট ম্যাক্সিমাইজেশনের সম্ভাবনা তিনি নিজেই গলা টিপে হত্যা করেছেন। আমার এই স্টাডি খুবই সস্তা একটি স্টাডি। এটা স্রেফ আমার অবসরের খোরাক, জাস্ট-ফর-ফান। প্রফেশনালি একই স্টাডি করলে মারদাঙ্গা কাজ করা যেত, তবে আমার তো এই মুহূর্তে তার ঠেকা নেই। তবে বইয়ের প্রকাশক ও বিক্রেতাদের আছে। তাদের প্রতি আহ্বান জানাই মারদাঙ্গা স্ট্যাটিস্টিকস ব্যবহার করুন। দুই একজন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করা স্ট্যাটিস্টিকস মেজরের ছেলে-মেয়েকে চাকরিও দিতে পারেন। আখেরে বই জগতেরই লাভ হবে এতে।