Skip to content
KP Imon
KP Imon

Words Crafted

  • গুহামুখ
  • সূচিপত্র
  • গল্প
    • রম্য
    • জীবনধর্মী থৃলার
    • সাইকোলজিক্যাল
    • রোমান্টিক
    • ক্রাইম
    • সাসপেন্স
    • জীবনধর্মী
  • নন-ফিকশন
    • থট প্রসেস
    • উচ্চশিক্ষা
    • আমেরিকা-নামা
    • জীবনোন্নয়ন
    • তাত্ত্বিক আলোচনা
    • ডায়েরি
  • প্রকাশিত বইসমূহ
    • প্রকাশিত বইসমূহ
    • যেসব গল্প সংকলনে আছে আমার গল্প
KP Imon
KP Imon

Words Crafted

আমার যত প্রকাশক

Posted on February 5, 2024February 5, 2024

আমার একটা বদঅভ্যাস হচ্ছে লেখালেখি যা করার করি। প্রকাশ যে ওটা করা লাগবে ওই চিন্তা আমার একেবারেই থাকে না। এই বদঅভ্যাসের গোড়া শুরু হয়েছে আমার সেই টিনএজ বয়স থেকে। তখন নতুন লেখালেখি করছি। প্রকাশের তাড়না আছে। প্রকাশক পাবো কি না তা নিয়ে ভয় আছে। তারপর আমার কপাল খুলে গেল, একাধিক প্রকাশক আমাকে প্রকাশ করতে আগ্রহ দেখালেন বা পাত্তা দিলেন। এতে করে লেখকের মধ্যে যে প্রকাশনা সম্পর্কিত একটা মনোযোগ দেয়ার ব্যাপার আছে তা আমার কখনোই গজালো না।

(১) সেবা প্রকাশনী
২০১৪ সালে আমার সাথে যোগাযোগ করেছিলেন ইসমাইল আরমান ভাই। তিনি আমার অনলাইনে প্রকাশিত গল্পগুলো দেখেছিলেন, তখন মনে হয় ১৩৫ টার মতো গল্প লিখেছিলাম। বলেছিলেন আমাকে মেরামত করে নিলে সেবার হয়ে লেখার সম্ভাবনা প্রকট। আমার কী মতামত?
সেবা প্রকাশনী তখন আমার ড্রিম। সাথে সাথে নেচে উঠলাম। উনি রহস্যপত্রিকার জন্য আমার থেকে লেখা চাইলেন। একটা গল্প সিলেক্ট করলাম। তিনি একান্ত আত্মীয়ের মতো আমার লেখা সম্পাদনা করে দিলেন। অভিজ্ঞতা থেকে সাজেশন দিলেন। তারপর লেখাটা দাঁড়ালো প্রকাশের মতো। আমি জানতে চাইলাম, “লেখা কী করে দেব?”
উনি বললেন, “ডাকঘরে দাও।”
আমি গায়েব হয়ে গেলাম। কয়েক সপ্তাহ পর উনি জানতে চাইলেন, “লেখা কই?” আমি বললাম, “ডাকঘর খুঁজে পাই না।” উনি হয়তো একটা দীর্ঘশ্বাস চাপতে চাপতে বললেন, “আচ্ছা, এটা আমি পাঠিয়ে দিচ্ছি। কিন্তু এমনটা সামনে করো না।”
তারপর তিনি আমাকে কাজী মায়মুর হোসেনের ব্যক্তিগত ইমেইল দিয়ে বললেন, “এখানে দিয়ো।”
বুঝেছেন যে আমাকে দিয়ে ডাকঘর পর্যন্ত যাওয়া হবে না।
রহস্যপত্রিকার ২০১৪ সালের ডিসেম্বর সংখ্যায় সেই লেখাটি প্রকাশিত হয়।
এই সেবা প্রকাশনীর সাথে আমার প্রথম ও শেষ প্রকাশনা। হট-হেডেড হিসেবে আমার কুখ্যাতি ছিল না তখনো। তবে আমি রিংকুদার ওপর একদিন ক্ষেপে গেলাম। প্যাসিভ-অ্যাগ্রেসিভ একটা ইমেইল পাঠিয়ে ডুব দিলাম। আর ভাসিনি। আর ভাসলেও হয়তো রিংকুদা আমাকে গুলি করে দিতেন। মাথা ফস্কাতো না।
আমার মনে হয় সেবা প্রকাশনীর যারা যারা এই ঘটনা জানেন সবাই আমার ওপর বিরক্ত হয়েছিলেন ব্যাপক। হওয়ার কথাও। কথা বলার আগে গুলি করার বদঅভ্যাসটা আমার সব সময় ছিল। এখনো আছে। খুব যে গর্বিত আমি তা নিয়ে এমন নয়। তবে ইসমাইল আরমান ভাই আমার প্রথমদিকের মেন্টরদের একজন, যিনি আমাকে লেখা উন্নত করার চমৎকার কিছু সাজেশন দিয়েছিলেন। সব সময় তার প্রতি কৃতজ্ঞ আর ভালোবাসাই থাকবে আমার পক্ষ থেকে।

(২) আদী প্রকাশন
সাজিদ রহমানকে আমার সাথে পরিচয় করিয়ে দেন নাজিম-উদ-দৌলা ভাই। তখন বাংলাদেশের অনলাইন জগতের উজ্জ্বল নক্ষত্র নাজিম-উদ-দৌলা ভাই, সালেহ তিয়াস ভাই, এবং আমি। লোকে মনে করতো আমরা তিনজন দশবছর পর বাংলা সাহিত্য উদ্ধার করে ফেলবো। নাজিম-উদ-দৌলা ভাই সাহিত্যটাকে সাইডে চাপিয়ে চলচ্চিত্র উদ্ধার করছেন। লোককে দেখলাম কিছুদিন আগে তার লেখা “সুড়ঙ্গ” নিয়ে মাতামাতি করছেন। সালেহ তিয়াস ভাই তো ধর্মের সুধা পান করে সাহিত্য জগত থেকে গায়েব হয়ে গেছেন। এখানে বোধহয় কেবলই গোমরাহী।
তবে সাজিদ ভাই বললেন, “অনুবাদ ছাপাবো। করতে পারবেন নাকি অমুক এবং তমুক? তারপর বই করা যাবে, আগে পাঠকের কাছে নতুন লেখককে পরিচিত করানো দরকার।”
৬ দিনে একটা বই অনুবাদ করলাম। ৩ তারিখে শুরু, ৯ তারিখে শেষ। বইটার নাম “ভেলোসিটি”। মানুষ পড়ে একটু বিরক্ত হলো। অনুবাদের মান অতো উন্নত নয়। বইটা ছিল ২৫৬ পৃষ্ঠার। আমি মনে মনে ভাবলাম, “৬ দিনে কী মহাভারত পর্যায়ের সাহিত্য লিখবো নাকি? ফাইজলামির জায়গা পান না আরকি।”
কিন্তু পাঠক এমনিতেই মারমুখী। মুখ ফুটে আর বলতে পারলাম না।
এরপর আমাকে আরেকটা বই অনুবাদ করতে পারবো কি না জানতে চাইলে রাজি হলাম। এটা স্টিফেন কিংয়ের ‘জয়ল্যান্ড’। এই বইটা আরেকটু সময় নিয়ে অনুবাদ করলাম। ৮ দিনে নামিয়ে ফেললাম। মানে ২০ তারিখে পয়লা শব্দটা লিখেছি, ২৭-২৮ তারিখ শেষ – এমন। বইটা পড়ে মানুষ খুব একটা খুশি হলো না মনে হলো। মনে মনে বললাম, “করিস ৮ দিনে ২৭২ পৃষ্ঠার বই অনুবাদ। দেখবো কোয়ালিটি কোন দিক দিয়ে বেরুয়। আমার এক পার্সেন্ট করিস কোয়ালিটি।”
কিন্তু মুখে কিছু বললাম না। আমি কেবল টিনএজ পেরিয়েছি। মাথা সূর্যের থেকে বেশি গরম। জনগণের মতামতের সাথে যৌনসংস্রবের সময় নেই আমার – এমন একটা মনোভাব। তবে অনলাইনে কেউ সমালোচনা করলে কীভাবে দাঁত কেলিয়ে, “দারুণ মতামত জানিয়েছেন, দাদা, ধন্যবাদ।” বলা লাগে তা রপ্ত করছি।
আমার যুক্তিটা ছিল, যদি কীবোর্ডে আমি ১০ মিনিট সময় দেই, সেই দশ মিনিট আমার মৌলিক বই লেখা উচিত। অনুবাদে ১০ মিনিট বেশি সময় ব্যয় করা মানে ঐ ১০টি মিনিট আমার জীবন থেকে নষ্ট হলো। কারণ অতগুলো অক্ষর আমি মৌলিকে লিখলে হয়তো আমার মাস্টারপিস আনভেইলের পথে অতগুলো অক্ষর এগুলাম। এজন্যই অতো দ্রুততার সাথে বই অনুবাদ করা।
উল্লেখ্য, গুগল ট্রান্সলেটর বা এজাতীয় কিছু নয়। প্রতিটা লাইন নিজে পড়ে যা বুঝেছি, তাই লিখেছি, কিছু না বুঝলে গুগল করে দেখেছি ওটা দিয়ে কী বোঝানো হয়। তবে ৬ দিনে ২৫৬ পৃষ্ঠা অনুবাদের সময় আপনার চোখ অনেক কিছু এড়িয়ে যাবে। অনুবাদ আরও ভালো করা যেত কি না? যেত।
ভালো অনুবাদ করতে আমি চেয়েছিলাম কি না? কখনোই না।
তবে সাজিদ ভাইয়ের সাথে আমার মাথাফাটাফাটি হয়ে গেল একদিন।
আমি বললাম, “আপনার মাথা আমি ফাটাবো।”
সাজিদ ভাই বললো, “তোমার মাথা আমি ফাটাবো।”
ব্যাস। আদী থেকে সমুদ্রলঙ্ঘন লম্ফ দিলাম।
তবে সাজিদ ভাইকে আমি আজ ধন্যবাদ দিতে চাই। অখ্যাত কাউকে নিজের প্রকাশনীতে তিনি তো ঠিকই জায়গা করে দিয়েছিলেন, পরে মাথা ফাটাফাটি যা-ই হোক না কেন। এজন্য আমি সব সময় সাজিদ ভাইকে মনে রাখবো কৃতজ্ঞতার সাথেই। অল্পবয়েসে কে কার মাথা ফাটিয়েছি তা আমার কাছে খুব মনে রাখার মতো বিষয় নয়। সাজিদ ভাইকে একটা অফিশিয়াল ধন্যবাদ।
(মাথাফাটাফাটির কথা রূপক অর্থে বলা হচ্ছে।)

(৩) বাতিঘর প্রকাশনী
বাতিঘর প্রকাশনীর সাথে আমার যোগাযোগ হয় ইসমাইল আরমান ভাইয়ের ঐ ইনবক্সেরও কিছুদিন আগে। ভাইয়া বইমেলা থেকে একটা বই কিনে এনেছিল একদিন। নাম “নেমেসিস” – ওটা পড়ার পর আমি চমৎকৃত হয়েছি। সারাজীবনের স্বপ্ন ছিল বাংলাদেশী নায়ক ঢাকায় ছোটাছুটি করবে, সেটা লেখার। ইনি দেখি আগেই লিখে ফেলেছেন। (“আগেই” ভাবাটা আমার নিজেকে ছয় বছর বয়স থেকে ‘ইয়ে’ ভাবার কুফল। তখন আমি ক্লাস এইটে না নাইনে পড়ি) উনার নামটা আমরা মুখস্থ করে ফেললাম।
পরে একসময় ফেসবুকে তাকে আমি পেয়ে যাই। তখন রিকুয়েস্ট পাঠাই। আমার জন্মদিনের দিন তিনি সেই রিকুয়েস্ট অ্যাকসেপ্ট করেন এবং ঐ বছর তিনিই ছিলেন আমার প্রথম বার্থডে উইশকারী। একেবারে উড়তে থাকলাম। জানতে চাইলাম, “ভাই, বই প্রকাশের ব্যাপারে আপনার সাথে কথা বলতে চাই।”
বললেন, “মেলায় দেখা হলে কথা হবে।”
আমি ভাবতাম উনি যেহেতু প্রকাশ করেছেন লেখা, প্রকাশক কাউকে না কাউকে চিনবেন। তখনো ইসমাইল আরমান ভাই কিংবা আদী প্রকাশনের সাথে যোগাযোগ নেই।
দেখাটি হলো বইমেলায়। উনাকে বললাম, “বাতিঘর থেকে আপনার অনেক বই প্রকাশিত হয়েছে। আমি প্রকাশের নিয়মটা একটু জানতে চাইছিলা। টিপস বা ট্রিকস যদি দেন।”
উনি বললেন, “আমি-ই তো প্রকাশক!”
এক অঙ্গে কতো রূপ! তখনো আমি উনার ছদ্মনাম ‘ডিলান’ করে প্রচ্ছদশিল্পী বনে যাওয়ার ব্যাপার তো জানি-ই না, লালনের ভাস্কর্য দেখাও হয়নি, তাও অবাক হলাম।
নাজিম ভাইয়ের সাথে আমার একটা ব্যাপার ছিল। ভাইকে হয়তো বলেছি, “সেপ্টেম্বরের ২৫ তারিখ আপনাকে ফাইলটা পাঠাবো।” বলেছি হয়তো মার্চে। এরপর একটা টেক্সট আদানপ্রদানও হয়নি। সেপ্টেম্বরের ২৫ তারিখে ফাইলটা পাঠিয়ে বলতাম, “কথা রেখেছি।” বা এরকম কিছু।
একবার ভাইকে আমি বললাম, “ভাই ঢাকা এলে আপনার সাথে দেখা হতে পারে?”
ভাই বললেন, “হ্যাঁ, ৩০ তারিখে এসো। ঐদিন হয়তো থাকবো।”
বলেছেন হয়তো ৩ তারিখে। আমি আর কোন মেসেজ দিলাম না ভাইকে। ৩০ তারিখ এসে বর্ণমালা মার্কেটের তিনতলায় বসে আছি। বাতিঘরে তালা মারা। তিনতলারই চিপায় বসে বিড়ি খাচ্ছি। ভাইয়ের দেখা নাই। একবার ভাবলাম মেসেজ দিবো কি না। তারপর ভাবলাম, না, অতিরিক্ত মেসেজ দিয়ে মানুষকে বিরক্ত করা উচিত হবে না। ৩ তারিখ বলেছে আজ আসবে। মানে, আসবে। এত বার বার মেসেজ দিয়ে কাজ নেই।
মানুষকে মেসেজ দেয়ার সঙ্কোচ আমার এতখানি-ই। তারপর নাজিম ভাই এসে আমাকে বিড়িসহ বমাল ধরে ফেললেন। বললেন, “আরে আমি তো এসব ভুলেই গেছি। একটা জিনিস মনে পড়ায় এদিকে এলাম। নইলে আজ আমার আসার কথাই না। তুমি একটা মেসেজ দিবা না যে রাজশাহী থেকে এসে গেছো?”
পরে ঢাকার আশেপাশে আসার পর তো নাজিম ভাইয়ের সাথে নিয়মিত আড্ডা দেয়া হলো কিছুদিন, বাংলাবাজারে, ভিক্টোরিয়া পার্কের কোণে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চিপায়-চাপায়। চিপায় ঢোকা জরুরী ছিল। তখন পাপারাজ্জির অত্যাচারও ছিল। তিনটে ভিন্ন দিন আমাদের আড্ডার সময় কেউ না কেউ ছবি তুলে ইনবক্সে পাঠিয়ে বলেছে, “দেখলাম আপনারা আড্ডা দিচ্ছেন। দূর থেকেই ছবি তুললাম।”
যদি বলি, “হাই দিলেন না কেন?”
উত্তর আসে, “ভয়ে যাইনি। নাজিম ভাইও বসে আছে।”
এই হলো অবস্থা।
খুব বেশিদিন এমন আড্ডা দেয়া হয়নি, তবে এটা একদিক থেকে ভালো। অধিক সংস্পর্শে হীরেও বালুকা-কণা বলে ভ্রম হয়। আমার বিশ্বাস নাজিম ভাইয়ের সাথে আমার সম্পর্ক সব সময়ই একই জায়গায় ছিল। ওই রেসপেক্টের জায়গাটা থেকে সরে “একসাথে ঘুরি মিয়া” টাইপের একটা হাল্কা সম্পর্কে এটা কখনো না আসুক এমন একটা অবচেতন প্রচেষ্টাও ছিল মনে হয়।
ভুল বুঝবেন না, কোন অতি-সিরিয়াস সম্পর্ক আমাদের নেই। কিন্তু আমার ঐ গুরু-শিক্ষার্থী ধরনের একটা দূরত্ব রাখাও প্রয়োজন ছিল। নাজিম ভাই আমাকে লেখালেখির ব্যাপারে অনেক উন্নয়নমূলক উপদেশ দিয়েছেন টাইম টু টাইম। ভাইয়ের একটা দিক ভালো ছিল যে উনি আমার লেখার প্রক্রিয়ায় বাঁধা না দিয়ে সেটাকে ফ্রি-ফ্লো করতে দিতেন। হয়তো খুবই সাটল কিছু ধরিয়ে দিলেন আড্ডার ফাঁকে। ডেডিকেটেড লেখকের জন্য ওই ইশারাই কাফি।
নাজিম ভাই সম্ভবতঃ আমার মৃত্যুর দিন পর্যন্ত রেলেভেন্ট আর গুরুত্বপূর্ণ থাকবেন। আজকে প্রকাশক হিসেবে উনাকে একটা অফিশিয়াল অ্যাপ্রিসিয়েশন।

(৪) সোহান রেজা/তাহমিদ রহমান
এই তালিকার ক্রনোলজি প্রকাশের সময় ধরে। আর আমার পয়লা মৌলিক বাতিঘর প্রকাশের সাথে সাথে আমার আরও একটা মৌলিক প্রকাশিত হয়েছিল রাজশাহীর হৃদিপ্রকাশ থেকে। সোহান রেজা এবং মোঃ তাহমিদ রহমান – দু’জনকেই আমি ঐ বই প্রকাশের যৌথ প্রকাশক হিসেবে গণ্য করি। পরবর্তীতে তাহমিদ সতীর্থ প্রকাশনার গোড়াপত্তন করে এবং এখন পর্যন্ত মোটামুটি সামলে নিচ্ছে। তাহমিদ আমার লেখার একজন নিয়মিত পাঠক ছিল। তার ইচ্ছে ছিল ‘আগুনের দিন শেষ হয়নি’কে অনলাইন থেকে তুলে এনে বই করে ফেলার। এই ‘আগুনের দিন শেষ হয়নি’ পড়েই ব্লগে রাতিন ভাই মাশরুফ ভাইকে ট্যাগ দিয়ে বলেছিলেন, “ভাই আপনি দেশে ফিরে আসলে এই ছেলেটাকে বুকে জড়ায়ে ধইরেন।” এবং মাশরুফ ভাই আমার ঐ লেখাটি পড়ে ভূয়সী প্রশংসা করেছিলেন। পরে উনারা দুইজনই খুব সম্ভব বুঝেছিলেন আমি লোক হিসেবে একটা বাল এবং এমন হট-হেডেড তরুণদের থেকে একটু দূরে থাকাই মঙ্গল। কাজেই মাশরুফ ভাইয়ের ভালুক হাগ আমার আর পাওয়া হয়ে ওঠেনি।
যা হোক, সোহান রেজা স্যার আমাকে অত্যাধিক স্নেহ করতেন। রেডিও পদ্মায় ডেকে এনে একাধিক লাইভ শোতে আমাকে কথা বলার সুযোগ দিয়েছেন। ওটাই ছিল আমার প্রথম রেডিয়োয় লাইভ করা। এমনকি রুয়েটের পাবলিক রিলেশনসের মূর্তজা ভাইয়ের ঘরে (রেডিও পদ্মার কর্ণধার) আমাকে নিয়ে পরিচয় করিয়ে বলেছিলেন, “এই ছেলেটার জন্য তো রুয়েটের প্রচারণা করা উচিত। দেখবেন প্লিজ।” পরে মূর্তজা ভাই আমাকে একদিন রুয়েটের অফিসে নিয়েও গেছিলেন, কিন্তু ওসব প্ল্যান আর পরে আলোর মুখ দেখেনি। মূর্তজা ভাইয়ের বদলে এখানে আমি নিজেকে দোষ দেব বেশি। আমি সব সময় গায়েব হয়ে থাকা মানুষ। এমন মানুষদের নিয়ে পিআর করা যায় না।
তবে সোহান রেজা স্যার বিনা স্বার্থে এসব করার পর আমার উনাকে আনুষ্ঠানিকভাবে কখনো ধন্যবাদ জানানো হয়নি। বরং আমরা মাথা ফাটাফাটি করেছি।
একদিন আমি গিয়ে সোহান রেজাকে বললাম, “স্যার, আমি আজ আপনার মাথা ফাটাবো।”
স্যার বললেন, “আসো, আমিও তোমার মাথাটা ফাটাই।”
তারপর মুখ দেখাদেখি বন্ধ আরকি। বয়স আরেকটু বেশি হলে হয়তো মাথা ফাটানো ছাড়াই ঐসব কনফ্লিক্ট এড়ানো যেত। এখন আমার কাছে এসব অনেক দূরের অতীত মনে হয়। হয়তো সোহান রেজা স্যার এখনো ক্ষেপে-টেপে আছেন। তবে আজ আমি সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়েই ছাড়বো। থ্যাংকস, স্যার। থ্যাংকস, তাহমিদ।

(৫) নালন্দা
রুয়েট পাশ করে বেরুইনি তখনো। পরশু ফাইনাল ইয়ার থিসিস ডিফেন্স।
অপু ভাই একদিন ফোন দিয়ে বললেন, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একজন অফিসার আমার সাথে কথা বলতে চান, আমার ফোন নাম্বার কি দেবেন। আমি ভাবলাম, “নিশ্চয় কোন আকাম করেছি। এখন আমার পাছা মারবে।”
কিন্তু একবুক সাহস করে বললাম, “দেন।”
পরে ভদ্রলোক আমাকে বললেন, “আপনাদের শর্টফিল্ম দেখে আমি স্পিচলেস, ভাই। আপনাকে এই মুভির গল্পটা লিখতে হবে।”
আমি জানতে চাইলাম, “কোন মুভি?”
উনি বললেন, একটা মুভি হতে পারে। সাত বীরশ্রেষ্ঠর জীবনের ওপর ভিত্তি করে। সাথে ক্র্যাক প্ল্যাটুন। সেনাবাহিনীর সদস্যদের ওপর একটা আধুনিক মুভি আজও নেই এবং তা লেখা দরকার। নাচতে নাচতে রাজি হলাম। বললাম, “আমার তো থিসিস ডিফেন্স সামনে। রুয়েটের পাট চুকিয়ে নেই, এরপর এটা আমি ধরবো। ফেল করলে আবার আটকে যাবো।”
কাজেই রুয়েটের পাট চুকানো মাত্র আমি নরসিংদীতে শেলটার নিলাম। শুরু করলাম মহাযজ্ঞ। আমার ঘরে ঢোকা যায় না। সবখানে একটা করে পোস্টার। হোয়াইটবোর্ড। সাত বীরশ্রেষ্ঠ কোন সময়ে বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তানের কোথায় আছেন সব আলাদা করে পিন মারা হচ্ছে। তারিখ-টারিখ সব মুখস্থ হয়ে গেল। তাদের শৈশব ঘাঁটলাম। অ্যাডাল্টহুড ঘাটলাম। এসব করতে করতে তিন মাস পার হয়ে গেছে। একটা চাকরির চেষ্টাও করিনি।
হঠাৎ একদিন খেয়াল করলাম আমার কাছে একটা সিগারেট খাওয়ার টাকাও নাই। এখন আর হলে থাকি না যে আম্মুকে গিয়ে বলবো মাসের টাকা দাও। মাসে আমার পকেটে থাকে শুন্য টাকা। এদিকে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ, সাত বীরশ্রেষ্ঠ এবং ক্র্যাক প্ল্যাটুনকে নিয়ে লেখার দায়িত্বটা আমি খুব পবিত্র দায়িত্ব হিসেবেই মনে করতাম। কাজেই আমি চাকরি খোঁজার চেষ্টাও করিনি। এমন গরিবি হালে একদিন একজন টোকা দিলেন। তিনি নালন্দার প্রকাশক জুয়েল ভাই। জানতে চাইলেন, দিনকাল কেমন চলছে। আমি বললাম, “ফকির হয়ে আছি। একটা মুভি লেখার চেষ্টা করছি। মারা খাচ্ছি।”
উনি বললেন আমার তিনটা বই অনুবাদ করা দরকার। করবে নাকি? তাহলে আমি তোমাকে অ্যাডভান্স টাকা দেব অর্ধেক। রাজি হয়ে গেলাম। তাদের মধ্যে একটা খুব ফেমাস অনুবাদ আমার, “দ্য পাওয়ার অফ হ্যাবিট”। স্রেফ টাকার জন্য লেখা লাগলো আমাকে এই প্রথমবার।
তবে আমার মনে হয়েছিল জুয়েল ভাই চাইলে তুড়ি মেরে অনেক অনুবাদক পেয়ে যেতেন। অনুবাদক হিসেবে আমার খ্যাতি ছিল না, কুখ্যাতি ছিল। তবুও তিনি আমাকে ওই অফারটা করেছিলেন আসলে আমাকে কিছু টাকা দেয়ার জন্য উপলক্ষ্য বানাতে। ব্যাস, জুয়েল ভাই আমার একটা ভালোবাসার জায়গায় পরিণত হলেন। মহাবিপদের সময় তিনি আমাকে রক্ষা করেছেন। কাজেই আমি কৃতজ্ঞতায় গদ গদ হয়ে বললাম, “ভাই, এই যে মুভি স্ক্রিপ্টটা লিখছি, এটাকে আমি পরে উপন্যাস বানাবো। আর এটা উপন্যাস হলে আমি আপনাকে দেব।”
২০১৮ সালে বলা সেই কথাটি আমি কিন্তু রেখেছিলাম। ২০২৩ সালে ঐ উপন্যাসটা প্রকাশিত হলো “আমরা তোমার শান্তিপ্রিয় শান্ত ছেলে” নামে। আমি মনে করি যদি এখনতক কোন কাজের জন্য বাংলাদেশ আমাকে মনে রাখে, তবে এটা-ই সেই কাজ।
ধন্যবাদ, জুয়েল ভাই, দুর্দিনে আমার পাশে বার বার দাঁড়ানোর জন্য।

(৬) ভূমিপ্রকাশ
আমার একটা নিয়ম হচ্ছে, প্রকাশকদের সাথে বছরে যত পারা যায় কম কথা বলা। পারলে একেবারেই না বলা। কারণটা সেলফিশ না, এটা আমার ধারণা প্রকাশকের জন্যও ভালো। প্রকাশনা বলে কিছু আছে এটা লেখার সময় মাথায় না রাখাই ভালো। নয়তো প্রকাশকের তাড়ায় বালছাল লেখার উদাহরণ কম লেখক রাখেননি। হুমায়ূন আহমেদ পর্যন্ত এই ঢেঁকি গিলেছেন। আমি কি তা দেখে শিখেছি?
না।
আমি শিখেছি ঠেকে। এমন প্রকাশকের তাড়ায় আমি আগে বই লিখে ফেলেছি এমন ঘটনা ঘটেছে। তারপর একেবারেই বাল হয়েছে সে লেখা। এজন্য আমি প্রকাশকদের থেকে দূরে থাকি, যেন একটা লেখা তার স্বতঃস্ফূর্ততা না হারায়। পরে গালি তো ভাই আমি খাবো, প্রকাশক খাবেন না।
অথচ সেদিন নরসিংদীতে গেছি আমার পাসপোর্ট করাতে। রাতে আবার তৎকালীন গার্লফ্রেন্ডের সাথে থেকে যাওয়ার কথা (‘জাদুঘরে’র তমালিকা সেন), সে আমার জন্য যমুনা ফিউচার পার্কে অপেক্ষা করছে। আমি এলেই আমার সাথে ডুব দেবে। মনে বহু লাড্ডু ফুটছে। নরসিংদীর একটা মানুষ-বোঝাই বিআরটিসি বাসে দাঁড়িয়ে বা ঝুলে আসছি, তাও মুখে বলদের মতো একটা হাসি লেগে আছে। ওটাই ছিল আমাদের প্রথম রাত্রিযাপন, কাজেই একেবারে বাসর মার্কা অবস্থা। আজ রাত নিয়ে আমাদের বহু প্ল্যান, মন খারাপ থাকার কোন কারণ নেই। এই ব্যাকগ্রাউন্ড দেয়ার কারণ হচ্ছে আপনাদের বলতে চাইছি, পুরুষের সবচেয়ে বড় শত্রু হচ্ছে তার নুনু।
কীভাবে?
বলছি।
এসময় আমাকে ভূমিপ্রকাশের জাকির ভাই ফোন দিলেন…
এবং আমি তা ধরে ফেললাম!
শুধু তা-ই নয়, অতো বই তো আর এক বছরে লেখা সম্ভব না, তাই ভাইয়ের বই চাওয়ার অনুরোধ আমি উপেক্ষা করছিলাম বহুদিন ধরে। ঝুলতে ঝুলতে শুনলাম জাকির ভাই বলছেন, “তোমার আগুনের দিন শেষ হয়নি তো আউট অফ প্রিন্ট। ওটা আমি রি-প্রিন্ট করতে চাই।”
আমার মাথায় তমালিকা সেনের সুন্দর মুখটা ছাড়া আর কিছু নাই। কাজেই বড় গলায় বলে ফেললাম,
“অবশ্যই ভাই। আপনাকেই তো দেব। পাকা।”
রাতের কোন একটা সময় মনে হলো (পোস্ট-নাট ক্লারিটি), “বাল, এ কী করলাম। এখন ওটা নিয়ে আবার বসতে হবে। এ সময় কোথায়!”
তবে কথা দিলে কথা রাখি আমি। কাজেই আবার বসলাম। মুক্তিযুদ্ধ সংকলন করলাম এটাকে আমরা। আমার সব মুক্তিযুদ্ধের গল্প এবং একটি “আগুনের দিন শেষ হয়নি” এক বইয়ে আবদ্ধ করা হলো। বইটার নাম আমি দিলাম এর একটা ছোটগল্প “যে রাতে কাক ডাকেনি” অনুসারে। ঐ গল্পে আবার কবি হেলাল হাফিজ একজন চরিত্র। যারা পড়েননি, ব্যাপক মিস করেছেন। মাঝে ৪ বছর পেরিয়ে গেল, মাশরুফ ভাইয়ের ‘ভালুক হাগ’ পাওয়া না হলেও জহির রায়হানের শহীদ হওয়ার কাহিনীটা পূনপ্রকাশিত হলো ভূমিপ্রকাশ থেকে।
জাকির ভাই, আপনাকে ধন্যবাদ, সব সময় আমার সমর্থনে থাকার জন্য, আমার ওপর বিশ্বাস রাখার জন্য।

(৭) অভিযান পাবলিশার্স
কলকাতার অভিযান পাবলিশার্স বাংলা সাহিত্যের জন্য একটা বিগ নেইম। প্রকাশনী বিগ নেইমে পরিণত হয় প্রকাশনা সংস্থার ডেডিকেশনে তো বটেই, এবং সেই সাথে তারা আকৃষ্ট করেন আরো সব বিগ নেইমদের। অভিযানে বাংলা ভাষার সবচেয়ে জনপ্রিয় কবি রুদ্র গোস্বামী যে লেখেন তা জানতাম, নবারুণ ভট্টাচার্য লেখেন, আরও কত কত বড় বড় নাম। তার সাথে যুক্ত হলো নাজিম ভাইয়ের নাম। তারপর সৃজিত তার বই থেকে ওয়েব সিরিজ করে ফেললেন। এসব আমরা দেখছিলাম আর অ্যাপ্রিশিয়েট করছিলাম। বাংলা থৃলারের জয়গান দেখার মতোই একটি ঘটনা।
একদিন খুব অবাক হয়ে দেখলাম একটা পোস্টে আমাকে ট্যাগ। মারুফ ভাই, প্রকাশক, আমার ছারপোকা বইটার ছবি তুলে বলেছেন, “এক একটা ভালো থ্রিলার পড়ার পর কেমন যেন অদ্ভূত একটা ছাড়া ছাড়া ভাব আসে বেশ কিছুক্ষণের জন্য। শক্ত করে ধরে থাকা স্নায়ুগুলোর কাজ হঠাৎ শেষ হয়ে গেলে যেমন ঢিলে ঢালা হয়ে যায় তেমন আর কি। আজ সারাদিন বইটির সঙ্গে ছিলাম বলে অভিযানের অফিসে যাঁরা যাঁরা এসেছিলেন তাঁদের সঙ্গে একটু কম কথা বলেছি। কথার মাঝে মাঝেই ডুবে গেছি বইটার ভেতর। বইটির নাম ‘ছারপোকা : দ্য ব্যটেল অভ মহেন্দ্রপুর’। লেখক কিশোর পাশা ইমন। প্রকাশনা বাতিঘর প্রকাশনী, ঢাকা। আজ সারাদিনে ফেসবুকেও কম সময় ছিলাম এই বইটার জন্য। চারশোর একটু বেশি পাতার বই অফিস করেও একদিনে শেষ করেছি।”
আমি দারুণ অবাক। আমার লেখার ঢঙ বাংলাদেশিদের খুব পছন্দ। কলকাতার বাঙালিদের কাছে তা ভালো লাগে কি না তা নিয়ে আমার সংশয় ছিল। লেখার এবং বলার একটা ভিন্নতা তো আছেই। আনন্দে একটা ‘ইয়েস’ বললাম অফলাইনে, কিন্তু অনলাইনে যথাযথ ভাবগাম্ভীর্যের সাথে কমেন্ট করলাম, “খুবই ভালো লাগছে জেনে। 😊ধন্যবাদ ফিডব্যাকের জন্য 😇।”
এর কিছুদিন পর অভিযান পাবলিশার্সের মারুফ ভাই আমাকে নক দিয়ে বললেন, “তোমার ছারপোকা বইটা তো আমি বের করতে চাই। দেবে?”
অভিযান পাবলিশার্স আমাকে ছাপাতে চাইছে? এ তো মেঘ না চাইতেই বৃষ্টি। মনটা আনন্দে ভরে গেল। মারুফ ভাইকে আমি দেখেছি দুই একবার এক ঝলকের জন্য। আমি আসতাম রাজশাহী থেকে। ঝটিকা সফরে এক-দুইদিন ঢাকা থেকে চলে যেতাম। উনি আসতেন কলকাতা থেকে। ঝটিকা সফরে কিছুদিন থেকে চলে যেতেন। তার মাঝে একে অন্যের পথ মারানো।
সেই থেকে অভিযান পাবলিশার্স আমাকে ছাপিয়ে যাচ্ছেন। ভারতে আমাকে প্রকাশের একমাত্র অধিকার আমি উনাদের চুক্তি করে লিখে দিলাম। মারুফ ভাই আমাকে কলকাতার পাঠকদের কাছে পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন, স্বপ্রণোদিত হয়ে কথা বলেছেন আমার ব্যাপারে, এসব আমি সারা জীবন মনে রাখবো। আপনাকে ধন্যবাদ দিয়ে ছোট না করে কেবল বলা যাক, ভালোবাসা জানবেন।

(৮) অবসর প্রকাশনা সংস্থা
একদিন আমাকে অবসর প্রকাশনা সংস্থার প্রকাশক প্রতীক ভাই নক দিয়ে বললেন, কথা বলা দরকার। অবসর প্রকাশনা সব সময়ই বাংলাদেশের প্রকাশনা জগতের একটা বড় নাম। হুমায়ূন আহমেদের ৫০+ বই এখানে প্রকাশিত হয়েছে। ভাইয়ের নক দেবার সময় ‘দেবী’ বেরুচ্ছে। দেবীর একটা প্রচারণা পোস্ট লিখেছিলাম তা চঞ্চল চৌধুরী ও জয়া আহসান উভয়েই শেয়ার দিয়েছেন। এসব প্রাসঙ্গিক নয়, মনে পড়ে গেল প্রসঙ্গক্রমে।
অবসরের প্রকাশক আমার সাথে কথা বলতে চান শুনে আমি এটা খুবই গুরুত্বের সাথে নিলাম। প্রকাশনা জগতে আমি তখন একেবারে অখ্যাত নই আর, এবং খুব সম্ভব আমার লেখার হাতের প্রশংসা থেকে দ্রুত ছড়িয়েছে আমার হট-হেডেড তারছেঁড়া ব্যবহারের কুৎসা। এরপরও কেউ কথা বলতে চাইছে দেখে অবাক হলাম।
প্রতীক ভাই বললেন, “আমি চাইছি আপনার একটা বই করতে। চলে আসুন ডিনারে। আপনার সাথে আপনার পরিচিত কিছু লেখক বন্ধুও ইনভাইটেড। ভালই লাগবে।”
এ তো বিশাল ব্যাপার। যেখানে ইনভাইটেশন পাচ্ছি তা নিয়ে আপনাদের স্মৃতি থাকতে পারে। ধানমন্ডিতে হুমায়ূন আহমেদের বাড়ি ভাবেন যাকে অনেকে। ঐতিহাসিক স্থান এখন। আসলে ওটা প্রতীক ভাইদেরও বাসা। গেলাম, কথা হলো, দারুণ একটা আড্ডা হলো, মনে রাখার মতো স্মৃতি গজালো। সেই সাথে আমার লেখা “মায়াবনবিহারিণী হরিণী” প্রকাশিত হলো ঐতিহ্যবাহী অবসর থেকে। প্রথমবারের মতো আমার কোন বইয়ের প্রচ্ছদ করলেন লেজেন্ডারি ধ্রুব এষ।
প্রতীক ভাইদের সাথে আমার গল্প একটু শুরু হয়েই থমকে আছে। কথা দিলে আমার কথা রাখার প্রবণতা এবং উর্ধ্ব-নিম্ন-পার্শ্ব চাপের সমন্বয়ে একা একটা মানুষ একসাথে অনেকদিক সামলাতে পারি না। তবে আমি জানি ভাইয়ের সাথে আমার সম্পর্ক থাকবে দীর্ঘসময়। প্রকাশকদের মধ্যে হাতেগোণা যে কয়জনকে গিয়ে এখনো বলিনি, “ভাই, আমি এখন আপনার মাথা ফাটাবো” তাদের মধ্যে তিনি একজন।
ধন্যবাদ, প্রতীক ভাই, আপনাদের প্রকাশনী থেকে আমাকে প্রকাশের জন্য তো বটেই, আমার ওপর আস্থা রাখার জন্য।
ছোট্ট এই অ্যাপ্রিসিয়েশন পোস্টে আরও অনেক কথা লিখতে চেয়েছিলাম, তবে কমই লেখা হলো। এর মধ্যে ৩০০০ শব্দ ছাড়িয়ে গেছে এই লেখা। এমনিতেই লোকে বিরক্ত হয়ে মারতে আসবে। কাজেই সবার ব্যাপারেই কম বলা হলো। যেটা আমি আসলে বলতে চাই, আমাদের মধ্যে আমিত্ব অনেক সময় এমনভাবে মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে যে আমরা ভুলে যাই যে কোন জায়গায় থাকার পেছনে আমাদের নিজেদের পরিশ্রম, আত্মত্যাগ বাদেও আরেকটা জিনিস থাকে।
সেটি হলো, কিছু মানুষ আমাদের ওপর ভরসা করেছিলেন।
কিছু মানুষ আমাকে সুযোগ করে দিয়েছিলেন।
তাদের জন্যই আমি আজ যেখানে আছি, সেখানে।
আমাদের মধ্যে মাথা ফাটাফাটি হতে পারে, কুস্তি হতে পারে, চাই কি ঐতিহ্যবাহী জাপানি সুমো-লড়াই হলেও আপত্তি নেই, তবে আমি সব সময় চাই যারা আমাকে বিভিন্ন সময়ে সুযোগ দিয়েছেন, ভরসা করেছেন, তাদের সেই অবদানের কথা কখনো যেন না ভুলি।
কাজেই আজ একটা প্রকাশক অ্যাপ্রিসিয়েশন পোস্ট এবং ইনারা সবাই তা ডিজার্ভ করেন।
দুঃখজনকভাবে আমাদের মধ্যে প্রকাশ্যে মাথা ফাটাফাটির চল থাকলেও, কৃতজ্ঞতা স্বীকারের চলটি তেমন নেই। কাজেই আমি একটা ব্যর্থ চেষ্টা করলাম।
আপনাদের সবার দীর্ঘায়ু কামনা করি।

কেপিমত নন-ফিকশন

Post navigation

Previous post
Next post

কিশোর পাশা ইমন

১২টি ক্রাইম থৃলারের লেখক কিশোর পাশা ইমন রুয়েটের মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ছাত্র ছিলেন, এখন টেক্সাস ষ্টেট ইউনিভার্সিটি থেকে মাস্টার্স করেছেন মেকানিক্যাল অ্যান্ড ম্যানুফ্যাকচারিং ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে। বর্তমানে টেক্সাসের স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয় ইউটি ডালাসে মেকানিকাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পিএইচডির ছাত্র। ছোটগল্প, চিত্রনাট্য, ও উপন্যাস লিখে পাঠকপ্রিয়তা পেয়েছেন। তার লেখা প্রকাশিত হয় বাংলাদেশ ও ভারতের স্বনামধন্য প্রকাশনা সংস্থা থেকে। তার বইগুলো নিয়ে জানতে "প্রকাশিত বইসমূহ" মেনু ভিজিট করুন।

Related Posts

সন্তানগ্রহণের চরম বিরোধী আমি

Posted on June 28, 2022

কাজেই আমি লড়ি। আমি লড়ি তাবৎ পর-অধিকার চর্চার বিরুদ্ধে। নিজের জন্য নয়।
আমাদের অনাগত সন্তানদের জন্য।

Read More

আমেরিকায় উচ্চশিক্ষা | অধ্যায় ০৫ – হোঁচট খাওয়ার মানেই, হেরে যাওয়া নয়

Posted on August 4, 2021February 6, 2023

বাজে ছাত্র আমি, এই হতাশা থেকে একবার আত্মহত্যা করতে চেয়েছিলাম। চারতলার ছাদ থেকে ঝাঁপিয়ে।

Read More

ক্যানিয়ন লেকে এক সন্ধ্যাবেলা

Posted on February 12, 2023

ক্যানিয়ন লেকে তখন নেমে এসেছে জমাটবাঁধা অন্ধকার।

Read More

Leave a Reply Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

সর্বশেষ লেখাগুলো

  • ওয়ান ফর মাই সৌল
  • আমার যত প্রকাশক
  • কেপির সেরা লেখা কোনটি – জরিপ ২০২২
  • আন্ডারএইজের বই পড়া
  • অমুক পড়ে আসেন… সমস্যাবলী

Analytics

009435
Total Users : 9435
Total views : 23711
Who's Online : 0
Powered By WPS Visitor Counter
©2025 KP Imon | WordPress Theme by SuperbThemes