Skip to content
KP Imon
KP Imon

Words Crafted

  • গুহামুখ
  • সূচিপত্র
  • গল্প
    • রম্য
    • জীবনধর্মী থৃলার
    • সাইকোলজিক্যাল
    • রোমান্টিক
    • ক্রাইম
    • সাসপেন্স
    • জীবনধর্মী
  • নন-ফিকশন
    • থট প্রসেস
    • উচ্চশিক্ষা
    • আমেরিকা-নামা
    • জীবনোন্নয়ন
    • তাত্ত্বিক আলোচনা
    • ডায়েরি
  • প্রকাশিত বইসমূহ
    • প্রকাশিত বইসমূহ
    • যেসব গল্প সংকলনে আছে আমার গল্প
KP Imon
KP Imon

Words Crafted

আমেরিকায় উচ্চশিক্ষা | অধ্যায় ০৭ – উচ্চশিক্ষা কাদের দরকার

Posted on August 5, 2021February 6, 2023

ক্যামেরনকে প্রশ্ন করলাম, “আন্ডারগ্র্যাড শেষ হলে হায়ার স্টাডির দিকে ঝুঁকবে নাকি?”
গত রাতে প্রবল ঝড় আর বৃষ্টি হয়েছে। আকাশে যে দারুণ বিদ্যুতের ঝলক আমি দেখেছি, এমনটা আমি দেশে কখনো দেখিনি। ভয়ানক সেই আকাশ আর তুমুল সেই বর্ষণের সাথে সাথে ফোনে এসেছে ওয়েদার অ্যালার্ট। ফ্ল্যাশ ফ্লাড হতে পারে বলে সতর্ক করা হয়েছে আমাদের। এই ফ্ল্যাশ ফ্লাডগুলোর ছবি দেখিয়েই বাংলাদেশের রাজনীতিবিদেরা ঢাকার জলাবদ্ধতাকে ডিফেন্ড করতে চান। বলতে চান, “আমেরিকাতেই রাস্তায় পানি ওঠে আর আমাদের দেশে উঠলেই দোষ।”
তবে তাদের এমন কথা সত্য নয়। ফ্ল্যাশ ফ্লাডে পানি ওঠে যেমন, পানিদের অপসারণের জন্য ব্যবস্থা থাকে ডিজাইনে, কাজ করতে মাঠে নেমে যায় ইরিগেশন টিম, তাদের সাদা রঙা গাড়ি মিস করার কারণ থাকবে না আপনার। এবং পানি যদি উঠেও থাকে, পরিস্থিতি স্বাভাবিক করে ফেলতে পারে তারা দ্রুত। ওয়েদার অ্যালার্টে যদিও বলেছে ফ্ল্যাশ ফ্লাড নিয়ে সতর্ক থাকতে হবে, বলেছে একমাত্র এক কারণেই বাড়ি থেকে বের হতে পারি আমরা – যদি প্রাণ রক্ষার্থে অন্য কোনও এলাকায় সরে পড়ার দরকার হয়, তবেই।
পরদিন ছিলো অ্যাডভান্সড রোবটিকসের মিডটার্ম। উচ্চশিক্ষা জীবনের প্রথম পরীক্ষা। অঙ্কই করছিলাম, বিদ্যুত চমকাচ্ছিলো ওয়েল্ডিং শপের থেকেও ভয়াবহভাবে। আবহাওয়া দেখে বই-খাতা-ল্যাপটপ সরিয়ে রেখে আস্তে করে বেরিয়ে এলাম কিচেনে। এক মগ গরম চা বানিয়ে সোজা বেলকনিতে থেমে ধরিয়ে ফেললাম সিগারেট। বৃষ্টি নামলো এর ঠিক পয়তাল্লিশ মিনিট পর। চললো প্রায় সারারাত। পরদিন সকাল ৯ টায় সিনিয়র ডিজাইন টিমের সাথে দেখা করতে গিয়ে বুঝলাম, ফাঁকি সবাই মারে। ওদের শিক্ষক এখনো আসেননি। ডালাসের মেয়ে ক্যাথারিন আমাদের ঐ টেবিল থেকে জানালো, “উনি আমাকে ইমেইল করে বলেছেন, দশটার আগে পৌঁছাতে পারবেন না।”
ক্যাথারিনরা এরোজিস্টিকসের হয়ে ড্রোনের উন্নয়নে কাজ করছে ফাইনাল ইয়ারে। আমার কাজ অবশ্য শেলবি-স্টিভেন-ক্যামেরনের সাথে। কাজেই আমি তাদের টেবিল থেকে নড়লাম না। একটা ঘণ্টা বাড়তি পাওয়ার কারণে বরং তুমুল আড্ডা জুড়ে দিলাম আমরা। শুরু হলো অ্যাকসেন্ট দিয়ে, সে থেকে গুহামানব, বাইসন শিকার, শেলবির স্ট্রিপার ফ্রেন্ডের সাপ্তাহিক ইনকাম থেকে সে আলোচনা অবশেষে এলো উচ্চশিক্ষার ব্যাপারে। ঠ্যাঙের ওপর ঠ্যাঙ তুলে নবাবজাদার মতো বসে ক্যামেরনকে জিজ্ঞাসা করলাম, “আন্ডারগ্র্যাড শেষ হলে হায়ার স্টাডির দিকে ঝুঁকবে নাকি?”
তুমুল বেগে মাথা নাড়লো ক্যামেরন। বললো, “পয়সা দরকার।”
ওদিকে মিশিগানে আন্ডারগ্র্যাড করে আসা আমাদের বন্ধু রিজুলকে আমি একই প্রশ্ন করেছিলাম, “চাকরি তো করছো ধুমসে। এখানে উচ্চশিক্ষার দরকার কী ছিলো?”
রিজুল বলেছিলো, “রেজুমেতে দেখাতে ভালো লাগবে। দরকারও আছে ক্যারিয়ার সামনে আনার জন্য। আমি তো তাই পার্ট-টাইম প্রোগ্রামে ঢুকেছি। সময় কিছু লাগলে লাগুক। সমস্যা নেই।”
অন্যদের মধ্যে যারা এসেছে, তাদের থেকে একেকরকমের উত্তর পাওয়া যাবে। এদের মধ্যে অনেক শুনতে পাবেন নিচের উত্তরগুলো –

১। দেশে যোগ্যতার মূল্যায়ন নাই।
রাইট রিজন। আমি দেশের পে-গ্রেড নিয়ে অভিযোগ করবো না। আমেরিকায় ফুলি-ফান্ডেড একটা ছেলে পার্টটাইম একাডেমিয়ার কাজ করেই আড়াই-তিন লাখ টাকা পেয়ে যান মাসে। দেশে ফুলটাইম ইন্ডাস্ট্রি জব করেও ষাট হাজার টাকার স্যালারিতে যেতে কতোদিন লাগে ঠিক নেই। সেজন্য আমি এটাকে সঠিক কারণ বলছি না। আমেরিকায় একটা কোকের ক্যানের দাম ১৮০ টাকা। একটা মোটামুটি মানের এয়ারফোনের দাম ৫,০০০ টাকা, একটা ৫ কিলোমিটার দূরের উবার রাইডের দাম ১০০০ টাকা। মোটামুটি একটা জায়গায় দুজনের একটা ডিনারের পর আপনাকে মূল্য চুকাতে হবে মিনিমাম ৪,৫০০ টাকা, ধইঞ্চা এক টিশার্ট কেনার পর তার জন্য গুণতে হবে ৩,০০০ টাকা। জীবনযাত্রার মান এখানে বেশি। তাই এখানে যিনি বাংলাদেশি হিসেবে দেড় লাখ টাকা পান, তিনি নিতান্তই গরিব এক লোক। অর্থাৎ দেশে আপনার যোগ্যতার মূল্যায়ন নেই বলতে আমি পে-গ্রেডের কথা বলছি না। বলছি আপনার অধিকারের কথা। দেশে আপনার অধিকারের মূল্যায়ন কেউ করছে না, এটা সত্য। ফ্রেশার এক মেকানিকাল ইঞ্জিনিয়ারকে বিশ-পঁচিশ হাজার টাকার স্যালারি অফার করা একধরণের ফাইজলামো। এটি তারা এজন্য করে না যে বাংলাদেশের টাকার দাম কম হলেও জীবনযাত্রার মানের কারণে অল্প টাকায় সুবিধেও বেশি পাওয়া যায়। বরং তারা এটা করে ভিন্নভাবে। কোম্পানি একজন ফ্রেশারকে ৫৫ হাজার টাকা দিয়ে নিয়োগ দিতে পারলেও দেয় না, কারণ এই নয় যে তাদের বাজেটে টাকাটা নেই। বরং কারণটা হচ্ছে, ২০ হাজার টাকায় কেউ না কেউ চলে আসবে। আপনি হয়তো অপমানবোধ থেকে কাজটা না করে ইন্টারভিউ বোর্ড থেকে বেরিয়ে এলেন, আপনার পরের ক্যান্ডিডেটের হয়তো তিন মাস আগে বাবা মারা গেছে, সংসারের অবস্থা কাহিল, সে ঐ ২০ হাজারের চাকরি নেবে। এটা কোম্পানিরা জানে। তাই তারা আপনাকে মূল্যায়িত করছে না। তাদের থেকে কোনো ফ্রেশার দেড় লাখ টাকার বেতন চায়নি, অধিকারটুকু চেয়েছে। সেটি আপনাকে তারা দিতে নারাজ। এমনকি, তারপর তারা আপনাকে সপ্তাহে ৪৫ ঘণ্টার বদলে ৮৪ ঘণ্টা খাটাবে। কারণ ঐ একই। আপনার ওয়ার্ক-লাইফ ব্যালান্স থাকতে দেবে না, এবং সে অনুপাতে টাকাও দেবে না। এখানেও সপ্তাহে ৯০ ঘণ্টা খাটা লাগতে পারে ধরণের জব অফার আছে, বিনিময়ে আপনি মাথা ঘুরিয়ে দেয়া টাকা পাবেন। ওখানে তা নয়। এই যে মূল্যায়নের অভাবের আলাপ, তা আমি এখানেই করতে চাই। আপনি অধিকারবঞ্চিত। কারণ আমাদের ইন্ডাস্ট্রিগুলোর প্রায় সবাই (দুএকটা ব্যাতিক্রম বাদে) খাইঞ্চোদ। মানে তারা কেবল খেতে চায়। আপনাকে ফিরিয়ে দিতে নারাজ।

২। অমুক ফিল্ডে কাজ করার ইচ্ছে, ভাই।
রাইট রিজন, যদিও দিনশেষে দেখা যেতে পারে আপনি ভিন্ন এক ফিল্ডে কাজ করছেন, তবে ইনিশিয়ালি আপনার সিদ্ধান্তের পেছনে কার্যকারণটা যোগ্য। পছন্দের ফিল্ডে কাজ করার সুযোগ সব সময় নাও পেতে পারেন, কারণ আমাদের হৃদয় অনেক কিছুই চায়। তবে হৃদয়ের চাওয়ার সাথে বাস্তবে সে প্রসঙ্গে কাজ হতে হবে, ফান্ড থাকতে হবে, এবং আপনাকে যেখানে যেখানে ফান্ড আছে সেখানেই গিয়ে ঢুকতে হবে। আর কোথাও ঢুকলে হয়তো কাছাকাছি কিছু নিয়ে কাজ করতে পারবেন, তবে ও নিয়ে নয়।

৩। শিক্ষক হতে চেয়েছিলাম, দেশে কেবল ফার্স্ট সেকেন্ড থার্ডকে শিক্ষক হিসেবে নেয়। আর কোনও যোগ্যতা দেখে না।
যথাযথ কারণ! উচ্চশিক্ষা আপনার জন্য, আপনি উচ্চশিক্ষার জন্য। এই প্রেম অমর। হয়তো আন্ডারগ্র্যাডে আপনার ডিপার্টমেন্টে ১৬ তম ছিলেন। একাডেমিয়াতে থাকার ইচ্ছে ছিলো, তবে এই পোড়া দেশে কেবল ১,২,৩ কেই শিক্ষক হিসেবে নেবে। আপনাকে নেবে না। তাই উচ্চশিক্ষা শেষে শিক্ষকতায় ঢোকাই আপনার একমাত্র পথ।

৪। টেকা ভাই। টেকাই জীবনের সবকিছু। দেশের থেকে বিদেশে টেকা বেশি।
এটাও রাইট রিজন, অনেকের চোখে তা না হলেও। কারণ আপনি যদিও বলছেন টাকার কথা, তবে সেটা কেবল মোটিভেশন। টাকার মোটিভেশনেও যদি আরো পড়াশোনা করে নিজেকে জ্ঞানপাহাড়ের শীর্ষে নিতে চান, তাতে ক্ষতির কিছু দেখি না। টাকার জন্য আপনি তো আর আন্ডারওয়ার্ল্ডের নতুন ত্রাস হচ্ছেন না। অর্থাৎ মোটিভেশন টাকা হলেই খারাপ তা নয়, কারণ আপনার উদ্দেশ্য নিজের বিষয়ে আরো জানা-ই। টাকার জন্য হোক আর গ্লোরির জন্য হোক।

৫। মাস্টার্স/পিএইচডিটা নর্থ আমেরিকা থেকে হলে দেশে ও বিদেশে কর্মক্ষেত্রে বেশি মুল্যায়িত হবো।
ভালো কারণ, ক্যারিয়ারের জন্য তথা ইন্ডাস্ট্রিতে উচ্চশিক্ষার, উচ্চশিক্ষিত লোকের দরকার আছে।

৬। অমুকে আমেরিকায়/ইউরোপে মাস্টার্স পিএইচডি করতেছে, আমিও করুম।
ভুল কারণ। এখানে আপনার নিজস্ব মোটিভেশন কোথায়? জেলাসি? যথেষ্ট নয়। লোকের দেখাদেখি কিছু করতে যাবেন না। বরং এতে করে কাক আর খঞ্জনা পাখির মতো কিছু হয়ে যেতে পারে। শোনেননি? শোনাচ্ছি।
খঞ্জনা পাখি দারুণ নাচতে জানতো। তাকে দূর থেকে কাক দেখে। পিপিং টম কিংবা এক প্রোফেশনাল পার্ভার্টের মতো পর্দার ফাঁকে ফোকড়ে উঁকি দেয়। একদিন খঞ্জনা বিষয়টা দেখে ডাকলো, “অ্যাই কাক! ওখানে কী? ইদিক আয়! এক্ষুণি আয় বলচি!”
বেচারা কাক মাথা নিচু করে হেঁটে এলো। স্বীকার করলো, “যা নাচো দিদি। একটু যদি শেখাতে।”
খঞ্জনা বললো, “ভেবে বলছিস? হাঁটিস তো দারুণ। গেল বছর হাঁটার ওপর ‘অল বার্ডস ওয়াক, বাট সাম আর প্রো’স’ অ্যাওয়ার্ড পেয়েছিস। তোর আবার নাচ শেখার দরকার কী?”
কাক জানালো, “তোমাকে নাচতে দেখে আমার মনে হয়, ইশ আমিও যদি পারতাম।”
“হুঁ। আচ্ছা, আয়, তোকে শিখিয়ে দেই। তবে লোকের বেডরুমে আর উঁকি মারিসনে যেন।”
পরবর্তী তিন ঘণ্টায় কাকের ওপর দিয়ে চললো সাঁড়াশি ট্রেনিং। তিন ঘণ্টা পর সে হয়ে গেলো পেশাদার নর্তক। খঞ্জনার সাথে তাল, লয়, ছন্দ, সবই মিলে যাচ্ছে এখন। সে কী নাচ!
মনে আনন্দ নিয়ে কাক নিজের ডেরায় ফিরে এলো সে রাতে। ঘুমটা হলো ফাটাফাটি। কিন্তু পরদিন উঠতেই –
ঘুম থেকে উঠে কাক বুঝতে পারলো কিছু একটা ঠিক নেই। গতকালের নাচটা সে কিছুতেই মনে করতে পারছে না। উঁহু। একটা মুদ্রাও নয়। এবং বিষয়টা বোঝার সাথে সাথেই গড়িয়ে পড়ে গেলো সে।
কাক তার নিজস্বতা, অর্থাৎ হাঁটাও যে ভুলে গেছে! হাঁটতে কীভাবে হয়? সে কিছুতেই মনে করতে পারলো না। কোনমতে লাফাতে লাফাতে চলে এলো খঞ্জনার বাড়িতে।
তাকে দেখেই একগাল হাসলো খঞ্জনা। বললো, “কী? নাচও ভুলেছিস, হাঁটাও ভুলেছিস? আগেই নিষেধ করেছিলাম।”
কাক বললো, “দিদি, হাঁটার ক্ষমতাটা অন্তত ফিরিয়ে দাও। আর কোনদিন তোমার লেজের দিকে তাকাবো না। বোনের মতো দেখবো আজ থেকে।”
খঞ্জনার হাসি আরেকটু চওড়া হলো কেবল, “আমি তো আর ডাইনি নই যে তোর ক্ষমতা কেড়ে নিয়েছি। নিজের সর্বনাশ তুই নিজেই ডেকেছিস। ভালো হাঁটতে পারতি, সেই হাঁটাকে শানিয়ে না নিয়ে আমার দেখাদেখি নাচে এসেছিস। এই সর্বনাশের দায় আমাকে দিস নে। আর হ্যাঁ, কার্মা বলেও তো একটা কিছু আছে। লোকের বেডরুমে তাকিয়ে থাকবি তো…”
সেই থেকে কাক একমাত্র পাখি যে হাঁটতে পারে না। খেয়াল করলে দেখবেন কাক সব সময় লাফিয়ে চলে। সে লাফাতে পারে। দাঁড়াতে পারে। আর পারে উড়তে। তবে হাঁটতে পারে না। শালিক দোয়েল সুন্দর হাঁটে। কাক পারে না।
এটা অনেক প্রচলিত একটা গল্প। অনেকেই হয়তো আগেই জেনেছেন। ঈশপের গল্পের মতো বাংলার এইসব গল্পে আসলে বলার চেষ্টা করা হয়েছে, আপনার স্ট্রং স্যুট খুঁজে বের করুন। অন্যের স্ট্রং স্যুট দেখে তার দিকে দৌড়াবেন না। নিজেকে অ্যানালাইসিস করুন।
আপনি হয়তো অমুকে চ্যাম্পিয়ন, অথচ তমুক করতে দেখলেন কাউকে, আর সেদিকে লেগে পড়লেন, তাহলে কিন্তু হবে না। উচ্চশিক্ষায় আসার জন্য সঠিক মাইন্ডসেট থাকা জরুরী, সঠিক মাইন্ডসেট থাকাই একমাত্র যোগ্যতা। আপনার বিএসসির সার্টিফিকেট কিংবা রেজাল্ট শিট নয়। আপনাকে কে কেমন ছাত্র হিসেবে জানে তাও নয়। সঠিক কারণে যিনি উচ্চশিক্ষায় আগ্রহ রাখেন, তাদের সবারই এই লাইনে আসা উচিত। ভুল কারণে যারা এমনটা চাইছেন, তাদের জন্য এই রাস্তা নয়। তার কারণ উচ্চশিক্ষার কঠিন দিক আছে বেশ কিছু। নিচে তাদের নিয়ে হাল্কা আলাপ করার চেষ্টা আমি করবো।

• যাত্রাটা কিছুটা নিঃসঙ্গ। চারপাশে লাখো লোক থাকার পরও, তাদের অনেকের সাথে বন্ধুত্ব হয়ে যাবার পরও – নিঃসঙ্গ, আন্ডারগ্র্যাড কিংবা দেশের মাস্টার্সের মতো নয়। সঠিক মোটিভেশন না থাকলে আপনার মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য তা ক্ষতির হবে, এবং এর প্রভাব আপনার রেজাল্টে পড়তে পারে।
• অনেকেই জীবনযাত্রার মান নিয়ে অত্যাধিক খুঁতখুতে। সঠিক সময়ে ঘুমানো, ওঠা, খাবারের স্বাদ নিয়ে উনিশ-বিশ হলেই খেতে না পারা, বিশ টাকার রিকশাভাড়া দূরত্বে হাঁটতে না চাওয়া, কাপড় কাচার দায়িত্ব নিজের না নিতে চাওয়া – ধরণের নানা রকম লাক্সারি দেখানোর ইতিহাস আমাদের দেশে বড় হওয়া শিশুদের থাকে। ননীর পুতুলদের জন্য উচ্চশিক্ষাটি ঠিক সঠিক রাস্তা নাও হতে পারে। আপনার লাইফস্টাইল এখানে পুরোপুরি ত্যাগ করতে হবে। সেটি করতে গিয়ে যদি আপনার মনে হয় এই জীবন আপনাকে হতাশ করছে, সেটা আপনার মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য খারাপ এবং তার প্রভাব রেজাল্টে এসে পড়তে পারে। (উল্লেখ্য, আমার পশুবত জীবনযাপন আর তেলাপোকার মতো সর্বভূক স্বভাব আমাকে এখানে বিশাল প্লাস পয়েন্ট দিয়েছিলো। সার্ভাইভ করতে পারলেই আমার কাছে মোর দ্যান এনাফ, অতীত ইতিহাস আমাকে এই পরিণতবোধটা দিয়েছে। অনেককে তা দেয়নি। তারা খাবার, কালচার, পরিশ্রম নিয়ে যাতনায় থাকেন। একে বলা হয় কালচার শক এবং এটি রিয়েল। এ থেকে রক্ষার জন্য নানারকম কাউন্সেলের ব্যবস্থাও আছে। তবে আপনি যদি ভুল কারণে, যেমন কেবল শো-অফের জন্য উচ্চশিক্ষায় আসেন, তাহলে সেসব কাউন্সেলও আপনাকে রক্ষা করতে পারবে কি না আমার সন্দেহ আছে।)
• ইনসিকিউরিটি। হতে পারে আপনি বুয়েটে ৭ম ছিলেন। এখানে ফুল ফান্ড পেয়েছেন। তার অর্থ এই নয় যে এখানে আপনি সিকিউরিটি পাচ্ছেন আজীবনের। অ্যাট সাম পয়েন্ট অফ অ্যানি গ্র্যাজুয়েট স্টুডেন্টস, তাদের মনে হয় যে “গেলুম, এবার বোধহয় যা লক্ষ্য নিয়ে এসেছি তা পূরণ না করেই দেশে ফিরতে হবে” – এটা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সবাই ওভারকাম করেন। এই বিপদের গন্ধ, এই চ্যালেঞ্জ তাদের আরো অনেক শক্ত করে তোলে মানসিকভাবে। তবে আপনি যদি ভুল কারণে আসেন, তাহলে আপনাকে ভেঙে গুঁড়িয়ে দিতে পারে এমন অনুভূতি। প্রতিটি দিন একভাবে যাবে না। প্রচণ্ড পরাজয়ের অনুভূতি, গ্লানি নিয়ে কোন কোন রাতে ঘুমাতে যাবেন আপনি। কেবলমাত্র সঠিক কারণে এখানে আসাই আপনাকে পরদিন সকালে নতুন এক মানুষের মতো উজ্জিবীত করে তুলবে। আপনি নাকের পাটা ফুলিয়ে বলবেন, “আয় শালা, কতো আসবি চ্যালেঞ্জ। আমি রেডি।” ভুল কারণে এলে পালটা ফাইট না করে দিন দিন আরো তলিয়ে যেতে পারেন।
আরো অনেক আলোচনা এই বিষয়ে আছে। তবে তাদের হয়তো ওয়েবসাইটে চূড়ান্ত পোস্ট করার সময় উল্লেখ করবো। মূল কথা হচ্ছে, আমাদের কার্যকারণের পেছনের কারণটাকে right reason এ হওয়া খুবই জরুরী। রাইট রিজনে একজন ডক্টরের ওয়ালটনে মেকানিক হিসেবে যোগ দেয়াও উচিত কাজ। রং রিজনে একজন বিএসসির টেসলার ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে যোগ দেওয়া ভুল কাজ। আধ্যাত্মিক এই আলাপ আসলে আধ্যাত্মিক নয়, বাস্তব। কীভাবে বাস্তব তা হয় আপনি এই লেখা থেকে জানবেন, নয়তো জীবনে মারা খেতে খেতে শিখবেন। তবে আমি শুভাকাঙ্খী হিসেবে এই দিকটি কেবল মনে করিয়ে দিতে চাই।
অধ্যায়ের শুরুতে আমি বলেছি আমার আন্ডারগ্র্যাডের ছাত্র ক্যামেরন জানতো তার কোনও রাইট রিজন নেই উচ্চশিক্ষার, তাই সে তা করবে না। আবার এখানকারই নাগরিক, বন্ধু রিজুল উচ্চশিক্ষা চালিয়ে যাচ্ছে, কারণ তার ক্যারিয়ারের জন্য দরকার (রাইট রিজন)। তাদের মতো সেন্সিবল আপনাদেরও হতে হবে। নিজেকে জানতে হবে। সাফল্য আনতে হবে।
সপ্তম অধ্যায়ে কেন এই বিষয়ে আলাপ করছি? এমন আলাপ তো লেখার শুরুতেই করা উচিত ছিলো, তাই না? আমার তা মনে হয় না। আমি মনে করি সবটা রাস্তা মোটামুটি জেনে আপনি যদি এই কথাগুলো পড়েন, তখন আপনার হাতে pros and cons অ্যানালাইসিসের জায়গাটি থাকবে। নইলে শুরুতেই বিরক্ত হবেন, নয়তো পিছিয়ে যাবেন অবচেতনে (মনে মনে যদিও বলছেন “এইসব কেপি ইমন আর কী বাল জানে, দেখায়া দিবো এইসব আমার কাছে কিছু নয়” তবে অবচেতনের গল্পটা আলাদা।) যা আমি চাইনি।

নির্দেশনা –
উচ্চশিক্ষা করতে দেশের মেধাবীরা আসুক তা আমি চাই। তবে আমি এটা আরো বেশি করে চাই যে তারা আসুক ‘কেন আসতে চাই?’ প্রশ্নটির উত্তর সঠিকভাবে জেনে। সৌল সার্চিংয়ের সময় হয়েছে। নিজেকে প্রশ্ন করুন, আপনি ঠিক কেন আসতে চান? সেই কারণটা কী যথাযোগ্য? নাকি নয়?

পরের অধ্যায় পড়তে এখানে ক্লিক করুন – অধ্যায় ০৮ – আমার প্রোফাইল

উচ্চশিক্ষা নন-ফিকশন

Post navigation

Previous post
Next post

কিশোর পাশা ইমন

১২টি ক্রাইম থৃলারের লেখক কিশোর পাশা ইমন রুয়েটের মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ছাত্র ছিলেন, এখন টেক্সাস ষ্টেট ইউনিভার্সিটি থেকে মাস্টার্স করেছেন মেকানিক্যাল অ্যান্ড ম্যানুফ্যাকচারিং ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে। বর্তমানে টেক্সাসের স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয় ইউটি ডালাসে মেকানিকাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পিএইচডির ছাত্র। ছোটগল্প, চিত্রনাট্য, ও উপন্যাস লিখে পাঠকপ্রিয়তা পেয়েছেন। তার লেখা প্রকাশিত হয় বাংলাদেশ ও ভারতের স্বনামধন্য প্রকাশনা সংস্থা থেকে। তার বইগুলো নিয়ে জানতে "প্রকাশিত বইসমূহ" মেনু ভিজিট করুন।

Related Posts

আমেরিকায় উচ্চশিক্ষা | অধ্যায় ১০ – বিশ্ববিদ্যালয় বাছাইকরণ

Posted on August 11, 2021February 6, 2023

এ তো গেল বিশ্ববিদ্যালয় সিলেকশনের জন্য জেলারালাইজড আলোচনা, এবার আরেকটু পার্সোনালাইজ আলোচনাতে ঢোকা যাক।

Read More

আমার যত প্রকাশক

Posted on February 5, 2024February 5, 2024

অপু ভাই একদিন ফোন দিয়ে বললেন, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একজন অফিসার আমার সাথে কথা বলতে চান, আমার ফোন নাম্বার কি দেবেন। আমি ভাবলাম, “নিশ্চয় কোন আকাম করেছি। এখন আমার পাছা মারবে।”
কিন্তু একবুক সাহস করে বললাম, “দেন।”

Read More

আমেরিকায় উচ্চশিক্ষা | অধ্যায় ০৮ – আমার প্রোফাইল

Posted on August 6, 2021February 6, 2023

আমার সিজিপিএ ছিলো মাত্র ৩.১০। পড়াশোনা ছিলো রুয়েটের মেকানিকাল ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্টে।

Read More

Leave a Reply Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

সর্বশেষ লেখাগুলো

  • ওয়ান ফর মাই সৌল
  • আমার যত প্রকাশক
  • কেপির সেরা লেখা কোনটি – জরিপ ২০২২
  • আন্ডারএইজের বই পড়া
  • অমুক পড়ে আসেন… সমস্যাবলী

Analytics

009434
Total Users : 9434
Total views : 23710
Who's Online : 0
Powered By WPS Visitor Counter
©2025 KP Imon | WordPress Theme by SuperbThemes