আমেরিকায় উচ্চশিক্ষা | অধ্যায় ০৮ – আমার প্রোফাইল Posted on August 6, 2021February 6, 2023 আগের এক অধ্যায়ে আমি বলেছিলাম ছাত্র ভালো নই বলে চারতলা থেকে এককালে ঝাঁপ দিতে চেয়েছিলাম। তা দেখে অনেকে ভাবতে পারেন বানিয়ে বা বাড়িয়ে বলা হচ্ছে। এমন অনেকেই থাকেন, যারা আসলে ছোটবেলা থেকে সবখানে প্রথম শ্রেণীতে প্রথম হয়ে থাকেন এবং তারপর পত্রপত্রিকায়, বইয়ের পাতায় এমনভাবে নিজেদের শিক্ষাজীবনের কথা বলেন যে তারা ছিলেন ফেলটু, ব্যাকবেঞ্চার। কিন্তু আসলে তা নয়। এতে করে অনেক ব্যাকবেঞ্চার মিথ্যে আশা পেয়ে থাকেন। তবে আমার ক্ষেত্রে আপনারা মিথ্যে আশা পাবেন না। ছাত্র হিসেবে আমার থেকে ‘ওঁচা’ মানুষরাই সাধারণতঃ পড়াশোনা করতে আমেরিকায় আসেন, ফুল ফান্ডিং জনগোষ্ঠী আরকি। আমার সিজিপিএ ছিলো মাত্র ৩.১০। পড়াশোনা ছিলো রুয়েটের মেকানিকাল ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্টে। ৪র্থ ও ৫ম সেমিস্টারে এমন ধ্বস নেমেছিলো সিজিতে, তা বলার মতো নয়। ৩য় সেমিস্টারের পরও আমার বাস্তব লক্ষ্য ছিলো একে তুলে ৩.৫০ এ নিয়ে যাওয়া। সেখান থেকে আমার সিজি নামতে নামতে প্রায় তিনের নিচে চলে যাচ্ছিলো। ওদিকে বইপত্র লিখে যাচ্ছি। সেই সাথে এই ঐ ভেজালে ঢুকে যাচ্ছি – যেটা আমার নিয়মিত কাজ। ভেজাল করতে থাকা। সব মিলিয়ে আমার সিজিপিএ ৩.১০ নিয়ে আমি একরকম সন্তুষ্ট ছিলাম। কারণ, ১০টা বই বেরিয়ে গেছে গ্র্যাজুয়েশনের সাথে সাথে। আমি এতখানি জানতাম এই দুটো ক্যারিয়ার টানতে হলে লগলেস ৩.১০ ধরে রাখাও অনেক তৎকালীন ৩.৮০ এর পক্ষে সম্ভব হতো কি না তা প্রশ্নাধীন। আমি জীবনে সবই চেয়েছিলাম আবার কিছুতেই পরাজিত হতে চাইনি। অর্থাৎ মেকানিকাল ইঞ্জিনিয়ারিং ক্যারিয়ারের জন্য আমি চাইনি আমার ভালো লাগার জায়গা থেকে লেখালেখি করাটুকু স্রেফ “সখ” হয়ে থাকুক। কাজেই কিছু পেতে হলে কিছু ছাড়তে যেমন হয়, তেমন আমিও ছেড়েছিলাম কিছুটা সিজিপিএ। যখন জিআরই দিচ্ছি, টোফেল দিচ্ছি, তখনও একই অবস্থা। কেবলই নতুন চাকরি শুরু করেছি। ট্রেইনিং ফেজও পার হয়নি। কাজেই হয় আমাকে জিআরই দেয়াটা পিছিয়ে দিতে হতো নইলে চাকরির ট্রেইনিংয়ে কিছুটা খারাপ করতে হতো। একইভাবে আমি কিছুই ছাড়তে চাইনি। প্রায় রেকর্ড পরিমাণ কন্টেন্ট ক্যাপচার করেছিলাম সে ট্রেনিংয়ের ফাইনালে, ৯২%, আমেরিকা বাংলাদেশ মিলিয়ে তখনকার রেকর্ড ছিলো ৯৩%। সেই সাথে জিআরই এবং টোফেল দিয়েছিলাম, কিছুটা স্কোর ত্যাগ করতে করতে। আমার জিআরই স্কোর ছিলো ৩০৭। কোয়ান্টে ১৫৭, ভার্বালে ১৫০। অ্যানালিটিকাল রাইটিংয়ে ৩.৫। টোফেলে ছিলো ১০০, মোট নম্বর থাকে ১২০। রাইটিংয়ে পেয়েছিলাম ২৭, রিডিংয়ে ২৬, লিসেনিংয়ে ২৪, স্পিকিংয়ে ২৩। উল্লেখ্য, অগমেডিক্স ট্রেনিং থাকার কারণে টোফেল নিয়ে মাত্রাতিরিক্ত কনফিডেন্স গজিয়েছিলো। সারাদিন কানের মধ্যে থাকে আমেরিকান ডাক্তার ও রোগিদের কনভার্সেশন। টাইপিং স্পিড আমার ১২০ ওয়ার্ড পার মিনিট। কাজেই টোফেলের জন্য আলাদা প্রস্তুতি তো নেই-ইনি, এমনকি জানতামও না টোফেলের পরীক্ষাপদ্ধতি কেমন। কেবল জানতাম এই রিডিং রাইটিং, স্পিকিং লিসেনিং থাকে। কীভাবে থাকে, কয়টি থাকে, কতক্ষণের জন্য থাকে? আমার কোনও ধারণা ছিলো না। পাবলিকেশন? শুন্য। জব এক্সপেরিয়েন্স? পৌনে তিন বছরের মতো ছিলো, তবে এর মধ্যে মাত্র চারটি মাস প্রকৌশলী হিসেবে। তিন মাস মার্কেটিং এক্সিকিউটিভ হিসেবে এগিয়ে চলো ম্যাগাজিনের হয়ে। আর দুটো বছর অগমেডিক্সের হয়ে মেডিকেল স্ক্রাইব। সব মিলিয়ে, আমার প্রোফাইল দেখে কোনও মার্কিন প্রফেসর মূর্ছা যাবেন এই সম্ভাবনা ছিলো না। একই কারণে আমাকে আপনারা আইভি লীগের কোনও বিশ্ববিদ্যালয়ে দেখছেন না। বিশ্বের টপ ফিফটি বিশ্ববিদ্যালয়ও এড়িয়ে চলেছি। সেসব জায়গাতে অ্যাপ্লাইও করিনি, কারণ অ্যাপ্লিকেশন ডেডলাইনগুলো যখন হুড়হুড় করে চলে আসছিলো তখনও আমার ফুল-টাইম জব চলছে। এবং তখন আমি কাজ করছিলাম ক্যালিফোর্নিয়ার একটি ইমার্জেন্সি ডিপার্টমেন্টের হয়ে। আমার কাজ সে কারণে শিফটে ভাগ হয়ে গেছিলো। কোনদিন অফিস শুরু হচ্ছে সকাল এগারোটায়। কোনদিন শুরু হচ্ছে রাত সাতটায়। কোনদিন রাত বারোটায়। কোনদিন ভোর পাঁচটায়। ঠিক নেই। আমাকে বেদম খাটিয়ে নিচ্ছে, এমন নয় বিষয়টা। আমি যে ডক্টরের (জেফরি ডেভিস, এমডি, ডিও, এমএস) সাথে কাজ করছি, তিনিও ওসব সময়ে এসে কাজ শুরু করছেন বলেই আমাকে অমনটা করতে হচ্ছে। অভিযোগের কিছু নেই। তবে এমন ভয়ানক জীবনযাপনের কারণে রীতিমতো সাইজ হয়ে যেতে হবে তা বলাই বাহুল্য। এর মধ্যে খুব হিসাব নিকাশ করে যে অ্যাপ্লাই করা যাবে এমন নয়। আমিও পারিনি। নইলে টপ ফিফটি এক-দুটো ইউনিভার্সিটিতে অ্যাপ্লাই করতাম অবশ্যই। যারা এই লেখাটি পড়ছেন, তাদের অনুরোধ জানাবো আপনাদের প্রোফাইল যা-ই হোক, দারুণ কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে অ্যাপ্লাই করতে ভুলবেন না। অন্তত দুটো। এতে করে আপনার দুশো ডলার মতো খরচ যদি হয়, হতে দিন। তবে অবশ্যই, খুব সময় দিয়ে যাচাই করে নেবেন। অর্থাৎ বিশ্ববিদ্যালয়ের সেই প্রোগ্রামটি যেন আপনার একাডেমিক রেজাল্টের জন্য না হলেও জেনুইন আগ্রহের জায়গার সাথে সমন্বয় করে। তাদের জন্য SoP তথা স্টেটমেন্ট অফ পারপাজটিও লিখবেন বুঝেশুনে। ওখানে চান্স পেলে আপনার স্টেটমেন্ট অফ পারপাজের জন্যই পাবেন, যদি আমার মতো ব্যাকগ্রাউন্ডের লোক হয়ে থাকেন। এর বাইরে আমার নন-একাডেমিক পারফর্ম্যান্স যা ছিলো তাকেও ঠিক প্রোফাইলে বড় করে উল্লেখ করিনি কোথাও। কারণ তারা খুঁজছে একজন সম্ভাবনাময় মেকানিকাল এঞ্জিনিয়ার। থৃলার লেখক নয়। কাজেই এক লাইনে, দু’লাইনে তাদের সেরে ফেলতে হয়েছিলো। আমার প্রোফাইল ব্যাখ্যার ফাঁকে আমি এখানে আমার রেজুমে শেয়ার করবো। এতে করে আপনারা একটি ডেমো রেজুমে দেখে নিতে পারবেন। একই সাথে শেয়ার করবো আমার স্টেটমেন্ট অফ পারপাজ। বিশ্ববিদ্যালয় অনুসারে কিছু পরিবর্তন তাতে ছিলো অবশ্যই। তবে আমি এখানে কেবল রাখছি টেক্সাস স্টেট ইউনিভার্সিটির জন্য লেখা রেজুমে আর স্টেটমেন্ট অফ পারপাজ। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত এই ডকুমেন্টসগুলো সম্পাদনা করেছে আমার ভাই ইব্রাহীম আহমেদ। তার প্রতি সেজন্য গভীর কৃতজ্ঞতা। সঙ্গতকারণে, রেজুমে থেকে ঠিকানা ইত্যাদি মুছে দিচ্ছি। স্টেটমেন্ট পারপাজের ক্ষেত্রে অবশ্যই মনে রাখতে হবে যেন ডিপার্টমেন্টের নাম, কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোযোগের জায়গাটি এডিট করতে ভুল না হয়। অর্থাৎ যে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেকানিকাল ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্ট অ্যারোস্পেস নিয়ে কাজ করছে তাদের গিয়ে আপনি যদি বলেন, “আপনারা গাড়ি নিয়ে ফাটাফাটি কাজ করছেন বলে অ্যাপ্লাই করছি” – ওরা বুঝে যাবে আপনি কোনও অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য লেখা পত্রটিকে এডিট করে চালিয়ে দেবার চেষ্টা করছেন। তারপর কী হবে তা তো বুঝতেই পারছেন। Statement of Purpose Resume পরের অধ্যায় পড়তে এখানে ক্লিক করুন – অধ্যায় ০৯ – ভর্তি প্রক্রিয়া কীভাবে কাজ করে উচ্চশিক্ষা নন-ফিকশন
অমুক পড়ে আসেন… সমস্যাবলী Posted on February 5, 2024 বুদ্ধিজীবি সময় বদলে দেয় না কখনো। সঠিক সময় বুদ্ধিজীবিদের একটা স্থান দেয়। একাত্তরে বর্তমানের বুদ্ধিজীবিরা থাকলে তারা নতুন একটি দেশ সৃষ্টিতে অবদান রাখতেন। ২০২৩ সালে তারা হয়তো রপ্তানিযোগ্য ছাত্র তৈরিতে ভূমিকা রাখছেন। এতে করে তাদের মেরিট নেই হয়ে যাচ্ছে না। Read More
ধৈর্য Posted on May 8, 2023 মনে রাখবেন, ধৈর্যধারণ আমাদের নানা সময় করতে হয়। সামাজিক পরিবেশে মারামারি না করার জন্য বা ক্রোধ সামলাতে ধৈর্যধারণ করতে হয়, প্রেমিকার সাথে ঝগড়া না করার জন্য তথা বিরক্তি ঠেকাতে ধৈর্যধারণ করতে হয়, পড়াশোনা করার জন্য তথা বিবমিষা আসার মতো বিষয় পড়তে গিয়ে ধৈর্যধারণ করতে হয়, ব্যর্থতার পর হতাশা ঠেকাতে ধৈর্যধারণ করতে হয় – Read More
অধ্যায় ০২. ০১ ⌛ বি আ রিজনেবল ম্যান Posted on July 7, 2021July 7, 2022 রিজনেবল ম্যান, আল্লাহর অবাধ্য নয়। বরং সবকিছু ঠিক থাকলে সে সৃষ্টিকর্তার বেস্ট অফ ইন্টারেস্টই চিন্তা করে দেখতে পায়, অনুভব করতে পারে, তার হয়ে কাজ করে। Read More