KP Imon

Words Crafted

অধ্যায় ০২. ০১ ⌛ বি আ রিজনেবল ম্যান

অধ্যায় ০১ অধ্যায় ০২

এতদূর পর্যন্ত আমরা কখনোই বলিনি কেন কোনটা করা যাবে অথবা যাবে না। কেন কোন বিষয়ে আমাদের মনযোগ দিতে হবে সে ব্যাপারেও তেমন কিছু বলা হয়নি। তবে এবার আমরা এদিকে তাকাবো। আগের দুই অধ্যায়ে বলা হয়েছে, আমাদের অবশ্যই জানতে হবে কোন কাজটা আমরা কেন করছি। অন্ধের মত সমাজ কিংবা ধর্মগ্রন্থ অনুসরণ করা যাবে না। নয়তো নিজের পতন হবেই, জাতির পতনও হয়ে উঠবে অবিশ্যম্ভাবী। সামাজিক হিপনোটিজম থেকে বাঁচার জন্য আমরা হয়ে উঠবো রিজনেবল।

কিছু ক্যাচফ্রেজ আপনাদের সামনে উপস্থাপন করে দেখাই। তাহলে বুঝতে পারবেন সামাজিক হিপনোটিজম কেন খারাপ আর তা কেন অন্যায় করানোর পর আমাদের তা দিয়ে গর্ববোধ করিয়ে থাকে।

আপনি কি কখনও নিচের কথাগুলো কাউকে বলতে শুনেছেন? 

  • কুরআনে/হাদীসে আছে, মানতেই তো হবে।
  • ছি ছি, এমন কি হয়? (সামাজিক কোনও ভুল প্রথার ব্যত্যয় ঘটলে। ধরা যাক, বউভাত অনুষ্ঠান না করতে চাইলে)

বাংলাদেশের সমাজে সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো ক্লুরআনে আছে বা হাদীসে আছে, তাই মানতেই হবে – এই অযৌক্তিক বাক্যটা। দেখবেন, মানবতার সাথে একেবারেই যাচ্ছে না এমন কিছু আদেশ ও নিষেধ আপনাকে জোর করে মানানোর চেষ্টা করছে কিছু মানুষ। আপত্তি জানালে তারা প্রথমে বলবে, “কুরআনে আছে। আল্লাহর কথা মানবি না? কাফের নাকি তুই? নাস্তিক হয়েছিস?”

রিজনেবল ম্যান হওয়ার প্রথম সমস্যা হবে যারা হিপনোটাইজড তারা আপনাকে নাস্তিক আখ্যা দিবে, কাফের বলবে, শয়তানের সাথে তুলনা দেবে, নয়তো অসামাজিক খেতাবটুকু অর্জন করে নিতে পারবেন কৃতিত্বের সাথে। হিপনোটাইজড মানুষ কেবল নিজের সম্প্রদায়ের ভেতরে বসে ক্ষীণদর্শনে সামান্যটা দেখতে পায়। তার কথায় বিশেষ পাত্তা দেওয়ার কিছু নেই একজন সম্মোহন-মুক্ত রিজনেবল ম্যানের। কারণ, সম্মোহন-মুক্ত একজন মানুষ অবশ্যই সপ্রদায়ভুক্তদের থেকে বেশি বুঝবে ও দেখতে পাবে। কানার কাছে আপনি নিশ্চয় সময় জানতে চাইবেন না?

যারা মনে করছে কুরআনে আছে মানেই আল্লাহ সেটা করতে বলেছে, হাদীসে আছে বলেই মহানবী (সাঃ) সেটা করতে বলেছে, তারা রিজনেবল ম্যান নয়। তারা চিন্তা করতে চায় না। তারা শুধু আদেশ পেলেই ঝাঁপিয়ে পড়তে চায়। গোত্রভুক্ত এই মানবরূপী জন্তুগুলোই হিউম্যানিটির জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি।

আপনাকে অবশ্যই চিন্তা করতে হবে। স্বয়ং আল্লাহ কিছু বললেও সেটায় “ইয়েস স্যার” বলে ঝাঁপিয়ে পড়া যাবে না। ইউ হ্যাভ টু বি আ রিজনেবল ম্যান। রিজনেবল মুসলিম।

রিজনেবল ম্যান কি নাস্তিক?

চিন্তায় যারা অক্ষম তারা সবকিছু বাইনারি সিস্টেমের মত দেখে। হয় ১ নয় ০। এটাই তাদের দেখার পদ্ধতি। যদি আপনি এখনও চিন্তায় ব্যর্থ হয়ে থাকেন, লেখাটার এই পর্যায়ে এসে আপনার মনে প্রশ্নটা হানা দেবে, “রিজনেবল ম্যান হতে হলে স্বয়ং খোদার আদেশও চিন্তাহীন হয়ে মানা যাবে না? এটা তো নাস্তিকদের মতো কথা শোনাচ্ছে।”

এই প্রবন্ধটি চিন্তার আলোচনার জন্য। ধর্মীয় আলোচনার জন্য নয়। তাই এখানে রেফারেন্স টেনে টেনে কোনও ধর্মীয় আলোচনা হবে না। কেবল চিন্তার দিক থেকেই বিশ্লেষণ করে দেখুন, আপনার সৃষ্টিকর্তা কি চিন্তাহীন অ্যাক্টের জন্য আপনাকে পুরস্কৃত করবেন বলে আপনার ধারণা?

আল্লাহ বলেছে তাই করতে হবে – এমন ধারণা থেকেই যাবতীয় জঙ্গিবাদের উত্থান। পৃথিবীজুড়ে তাবৎ বড় বড় ইসলামিক স্কলাররা বার বার একটা জিনিস নিয়ে চিৎকার করে এসেছেন, তা হলো, মুসলমান কিছু করার আগে ভেবেচিন্তে করবে। কুরআনে যা আছে সবই আক্ষরিক অর্থে ব্যবহার করা যাবে না, আবার সব একই কনটেক্সটে ব্যবহারের জন্য আল্লাহ বলেনওনি। কাজেই, আপনি যদি কুরআনে আছে বা আল্লাহর বাণী দেখেই তা করতে নেমে যান, দুনিয়াটাকে হয়তো ধ্বংস করে ফেলবেন। আল্লাহ বিন্দুমাত্রও সন্তুষ্ট হবেন বলেও মনে হয় না।

খুব হাস্যকর একটা উদাহরণ দেই। 

একজন অজ্ঞ ব্যক্তি কুরআন ঠাঁটিয়ে মুখস্থ করে ফেললো। তারপর পরিচিত একজন ব্যক্তির গলায় পাঁকানো রশি আটকে তাকে হত্যা করলো। তারপর কুরআন খুলে দেখালো সূরা লাহাবে বলা হয়েছে লাহাব ধ্বংস হোক, তার গলায় পাকানো রশি। সে আল্লাহর আদেশই পালন করতে উপযাজক হয়েছে।

আল্লাহ কি আসলেই তাই বলেছেন? তা-ই চেয়েছেন? চাননি। এটা রিজনেবল ম্যানরা বুঝবে। কোন লাহাবের কথা হয়েছে তা সে যদি না-ও জেনে থাকে, তাও সে এটা বুঝবে।

এই পর্যায়ে আপনি আমাকে থামাবেন এবং বলবেন, এটা খুবই বাজে উদাহরণ। পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে আল্লাহ লাহাব নামক সবার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়তে বলেননি। এই পর্যায়ে আমি একটু হেসে বলবো, আপনার জ্ঞানেগম্যিতে এতখানি স্পষ্ট। এটা স্বস্তির কথা নয়। কুরআনে/বাইবেলে/তোরাহে আরও কমপ্লেক্স বিষয় নিয়ে আলাপ আলোচনা আছে। আপনার জ্ঞান কুলাবে না, গম্যিতে কুলাবে না এমন সব আলোচনাকেও আপনি এমনভাবে নেবেন যেমনটা ঐ লাহাবের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়া কল্পিত লোকটা নিয়েছিলো।

আপনার চোখে সে যেমন বোকা, আপনি যখন অন্য কোনও আল্লাহর বাণী যুক্তির বাইরে গিয়ে পালন করেন, আপনিও আমাদের চোখে তেমনই বোকা – যারা মুক্ত হয়েছি।

কাজেই, মুক্ত হয়ে ওঠার জন্য আপনাকে নাস্তিক হতে হবে না, রিজনেবল হতে হবে। যে আদেশ সরাসরি আল্লাহ বা মহানবী (সাঃ) দিয়েছেন, সেটা যদি আপনার জ্ঞানে না কুলোয় তাহলে সেটা মানবেন না। অন্ধ পশু না হলে, সামান্য চিন্তাশক্তি খাটাতে পারলে আপনি বিষয়টা স্পষ্ট দেখতে পারবেন।

রিজনেবল ম্যান আল্লাহর অবাধ্য নয়

রিজনেবল ম্যান যখন বলেন, চিন্তায় না কুলালে সে আল্লাহর আদেশ বা হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর আদেশ মানবে না, স্বভাবতঃই চিন্তা করতে অক্ষম বিশ্বাসীরা তাকে বলবে সে আল্লাহর অবাধ্য। হয়তো শয়তানের সঙ্গে তুলনাও দেওয়া হবে। বিশ্বাসীদের একটা অংশ নিজেদের মহান এক ফ্যান্টাসিতে আবদ্ধ রাখতে ভালোবাসেন, “বিনা প্রশ্নে আদেশ মানাই তো ধর্ম। আপনার মনমতো আদেশ মানবেন, মনমতো না হলে মানবেন না তাহলে ধর্মের দরকার কি ছিলো।”

আপনি যদি স্রেফ একটা পশু হয়ে থাকতে না চান, তাহলে এসব গোঁড়া মতবাদ বর্জন করবেন। কারণ, নিজের অবস্থান আপনার কাছে স্পষ্ট। একটা আদেশ আপনি জেনেছেন, যেটাকে মনে হচ্ছে মানবতার জন্য হুমকিস্বরূপ। 

এখানে দুটো ঘটনা ঘটার অবকাশ আছে

১। এটা বিশেষ কোনও পরিস্থিতিতে ব্যবহারের জন্য বলা হয়েছে। 

২। আপনি এক মানবতাবিরোধী ধর্মের অনুসারী, যেটা আপনাকে ছোটবেলা থেকে পরিবার সঠিক ধর্ম বলে ব্রেনওয়াশ করে ফেলার কারণ এতদিন দেখতে পাননি। 

যেমন সেদিন এক ফেসবুক স্ট্যাটাসে দেখলাম এক ভাই রেফারেন্স দিয়ে লিখেছেন বিধর্মীদের জন্য শুধুই ঘৃণা। তার কথা যদি সত্য হয় আর এটাই যদি ধর্মের আদেশ হয়, তাহলে আমি একটি মানবতাবিরোধী ধর্মের অনুসারী। যে ধর্মের অনুসারী হওয়া থেকে না হওয়া ভালো। অথবা, সেই ভাই বুঝতে এবং বোঝাতে ভুল করেছেন। বিশেষ পরিস্থিতিতে এই আদেশ বা নির্দেশ ব্যবহৃত হচ্ছে। ডেইলি লাইফে না।

এমন একটা ডিলেমা যখন আসবে, তখন রিজনেবল ম্যান ধর্মীয় আদেশ থেকে সরে আসবেন। কারণ, তিনি তো তার পাশের বাড়ির সুহৃদ প্রতিবেশি অ্যান্ডারসনের প্রতি ঘৃণা করতে পারেন না। লোকটা ভালো। তাকে রক্ষা করার জন্য মসজিদের বাইরে গতকাল অস্ত্র হাতে পাহারা দিয়েছে। তাকে কেন রিজনেবল ম্যান ঘৃণা করবেন? তাকে ঘৃণা করা কেন সৃষ্টিকর্তার আদেশ হবে?

অর্থাৎ হয় এই ঘৃণা ছড়াচ্ছে মানুষ, নয়তো ধর্মগ্রন্থটি ভুল।

এমন একটা পর্যায়ে এসে রিজনেবল ম্যান নিউট্রাল হয়ে যাবেন। এটা আল্লাহর অবাধ্য হওয়ার জন্য নয়। বরং এটা যে আল্লাহ করতে বলেছেন সেটা রিজনেবল ম্যান বিশ্বাসই করবেন না। 

“আল্লাহ এটা দিয়ে নিঃসন্দেহে অন্য কিছু বুঝিয়েছেন। গত ১৪০০ বছর ধরে বিভিন্ন জ্ঞানী লোক, স্কলারও যদি বলে থাকেন যে এটাই বোঝানো হয়েছে তা আমি মানবো না। কারণ, আমি কোনও জ্ঞানী লোকের কথায় কাজ করি না। নিজের চিন্তাশক্তি খাটিয়ে কাজ করি।” রিজনেবল ম্যান এটাই বলবেন। 

কারণ, এভরি ম্যান ফর হিমসেলফ।

গত হাজার বছর ধরে বিভিন্ন পন্ডিত এসেছেন, বইপত্র লিখেছেন, তফসীর করেছেন, ধর্মীয় আদেশ নিষেধ দিয়ে গেছেন, হিপনোটিজম থেকে বেরিয়ে আসা মানুষ তাদের কারও কথাকেই ভেরিফাই না করে মেনে নেবেন না। কারণ, লাখ লাখ মানুষ সত্য বলে মনে করলেই তা সত্য এমনটা তিনি বিশ্বাস করেন না।

রিজনেবল ম্যান আল্লাহর অবাধ্য নন। কারন তিনি যে অবস্থানটা নিচ্ছেন তার দুটো অর্থ 

১। মানবতাবিরোধী কাজ আল্লাহ বললেও তিনি করবেন না, কারণ আল্লাহ মানবতাবিরোধী কিছু করতে বলতে পারেন না। তেমনটা বলছে মানুষ। হাজারো ‘সহীহ’ তাফসীরকারী। যে যতই পন্ডিত হোক, কাউকে চোখ বন্ধ করে অনুসরণ করা যাবে না, কারণ প্রত্যেকেই ভুল করতে পারে। দ্বিতীয় অধ্যায়ের শিক্ষা এ-ই। 

২। আল্লাহ যদি মানবতাবিরোধী কাজ করতে বলেন, তো ধর্মটাই মিথ্যা হয়ে যায়। তখন আর আল্লাহ মানা না মানায় কিছু আসে যায় না। 

দুঃখজনক ব্যাপারটা হলো, মেজরিটি মুসলিম চিন্তা করতে অক্ষম এবং তারা এত জোর গলায় মানবতাবিরোধী কাজকে আল্লাহর ইচ্ছে বলে চালানোর চেষ্টা করে (বিধর্মীকে ঘৃণা করা, বিভেদ সৃষ্টি করা, সাধারণ নাগরিকের ওপর অস্ত্র দিয়ে আক্রমণ করা) এবং আশা করে মানুষ মাথা দুলিয়ে বলবে, “আল্লাহর হুকুমের ওপর কথা নাই।”

বরং ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের চোখে ইসলাম একটি মিথ্যে ধর্ম বলে প্রতীয়মান হয় তাদের কর্মকাণ্ডে। কারণ, মানবতাবিরোধী কাজ আল্লাহ বা তার প্রফেট যদি করতে বলেন, তাহলে সেই ধর্ম মিথ্যে। তা মানার দরকারই তো নেই। 

এটা রিজনেবল ম্যান করবেন না। এমন আচরণ করলে আপনি

১। ধর্মের ক্ষতি করলেন, কারণ অন্য ধর্মের মানুষ আপনার ধর্মকে মিথ্যা ভাবলো

২। নিজের ধর্মের মানুষ আপনার ধর্ম ছেড়ে চলে যাবে 

৩। চিন্তা করলেন না। 

তৃতীয় অপশনটা সবচেয়ে ভয়ানক। চিন্তা না করলে আপনার সাথে পশুর পার্থক্য থাকে না। আপনি যদি চিন্তা করতে পারেন, তাহলে জেনে রাখুন, বাংলাদেশি, বাঙালি, মুসলিম – সব পরিচয় আপনার জন্মগত। এখানে আপনার হাত নেই। অর্থাৎ বাংলাদেশি হতে হলে যদি আপনাকে মানবতাবিরোধী বা খারাপ কাজ করতে হয়, বাঙালি হতে হলে যদি আপনাকে খারাপ কাজ করতে হয়, মুসলমান হতে গিয়ে যদি আপনাকে খারাপ কাজ করতে হয়, তাহলে আপনার দরকার কি বাংলাদেশি, বাঙালি বা মুসলমান হওয়ার?

এগুলো আপনার সামাজিক হিপনোটিজমের ফসল। জন্মের পর থেকে আপনাকে বলা হয়েছে এটাই আপনি, আপনিই শ্রেষ্ঠ। অথচ রিজনেবল ম্যান আপনার মতো নিজেকে শ্রেষ্ঠ আর সঠিক বলে বিশ্বাস করবে না। সে জানে, ভুল সবারই হতে পারে। 

কাজেই, যখন কেউ আপনাকে সমাজ বা আল্লাহর আদেশ-নিষেধের ভয় দেখিয়ে কিছু একটা করিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করবে যা আপনার চোখে মানবতাবিরোধী এবং ভুল। করবেন না।

এজন্য আপনাকে নাস্তিক হতে হবে না। স্বয়ং খোদা এসে আপনাকে কাজটা করতে বলেনি। বলেছে কিছু মানুষ। আপনার চারপাশে থাকা মানুষ। মরে বিস্মৃত হওয়া কোনও জ্ঞানী। তবে সে তো আর আপনি নন, সে খোদাও নয়। তার কথা শোনার কোনও দরকার একজন রিজনেবল ম্যানের নেই।

রিজনেবল ম্যান, আল্লাহর অবাধ্য নয়। বরং সবকিছু ঠিক থাকলে সে সৃষ্টিকর্তার বেস্ট অফ ইন্টারেস্টই চিন্তা করে দেখতে পায়, অনুভব করতে পারে, তার হয়ে কাজ করে। চিন্তাহীন বিশ্বাসীরা সৃষ্টিকর্তা যা বলেছে তার উল্টাটা অনেক সময়ই করে বসে। উদাহরণ যোগ করা নিষ্প্রয়োজন। ধর্মের নামে যে কয়টা সংঘাত আর যত রক্তপাত হয়েছে পৃথিবীতে, তারা কি সৃষ্টিকর্তার বেস্ট অফ ইন্টারেস্ট? নাকি চিন্তাহীন একদঙ্গল উজবুকের?

এই অধ্যায়ের পরিসমাপ্তি টানা হবে এই উপসংহারে গিয়ে, চিন্তাশীল ব্যক্তি, রিজনেবল ম্যান আল্লাহর ইচ্ছা ও উদ্দেশ্য নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে অধিক সফল। কারণ, সে আল্লাহ এটা করতে বলেছেন শুনলেই ঝাঁপিয়ে পড়ে না। তার আগে সে 

  • – একজন মুসলমানের চোখ থেকে ‘আদেশ’টা পর্যবেক্ষণ করে 
  • – একজন বিধর্মীর চোখ থেকে ‘আদেশ’টা পর্যবেক্ষণ করে 
  • – একজন ধর্মব্যবসায়ীর চোখ থেকে ‘আদেশ’টা পর্যবেক্ষণ করে 
  • – একজন অস্ত্রব্যবসায়ীর চোখ থেকে ‘আদেশ’টা পর্যবেক্ষণ করে 
  • – মানবতার চোখ থেকে ‘আদেশ’টা পর্যবেক্ষণ করে ইত্যাদি

সম্প্রদায়ের বাইরে গিয়ে নিরপেক্ষ দৃষ্টিতে সবগুলো দিক থেকে পর্যবেক্ষণ শেষে সে সিদ্ধান্তে আসে।

সবশেষে বুঝতে পারে এটা আসলে ‘আল্লাহ’র আদেশ নয়, মানুষের আদেশ। এই আদেশ সে মানে না। এতে করে সে মানুষের অবাধ্য হয়, আল্লাহর অবাধ্য নয়।

ফুটনোট :

উজবুকরা এসব ক্ষেত্রে কিছু কিছু ভীতি ছড়ানো বাক্য বলবে। তাদের উপেক্ষা করা জানতে হবে। যেমন, “তোমার থেকে আল্লাহর বেশি জানেন।” অথচ, আমরা বলার চেষ্টা করছি, উজবুকের থেকে আল্লাহ বেশি জানেন বলেই আমরা উজবুকের আদেশকে আল্লাহর আদেশ বলে গ্রহণ করবো না। অথবা, “চিন্তা করলে ইসলাম হলো না।” চিন্তা করলে যদি ইসলাম না হয়, তাহলে মানবতাবিরোধী একটা ধর্ম হলো ইসলাম, আর ক্ষতিকর, আর খারাপ। উজবুকরা ইসলামকে মহৎ বানাতে গিয়ে খারাপ বানিয়ে ফেলে। এসব আলোচনা তারা করে তাদের হিপনোটাইজড জায়গা থেকে। কাজেই, তাদের মুখে ‘আল্লাহর আদেশ’ শুনে আমরা যেন আবার ধর্মকে মানবতাবিরোধী ভাবার মত উপসংহারে না পৌঁছে যাই। 

 

পরের অধ্যায় | অধ্যায় ০২. ০২. কনফার্মেশন বায়াস

কিশোর পাশা ইমন

Website: http://kpwrites.link

১২টি ক্রাইম থৃলারের লেখক কিশোর পাশা ইমন রুয়েটের মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ছাত্র ছিলেন, এখন টেক্সাস ষ্টেট ইউনিভার্সিটি থেকে মাস্টার্স করেছেন মেকানিক্যাল অ্যান্ড ম্যানুফ্যাকচারিং ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে। বর্তমানে টেক্সাসের স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয় ইউটি ডালাসে মেকানিকাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পিএইচডির ছাত্র। ছোটগল্প, চিত্রনাট্য, ও উপন্যাস লিখে পাঠকপ্রিয়তা পেয়েছেন। তার লেখা প্রকাশিত হয় বাংলাদেশ ও ভারতের স্বনামধন্য প্রকাশনা সংস্থা থেকে। তার বইগুলো নিয়ে জানতে "প্রকাশিত বইসমূহ" মেনু ভিজিট করুন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *