Skip to content
KP Imon
KP Imon

Words Crafted

  • গুহামুখ
  • সূচিপত্র
  • গল্প
    • রম্য
    • জীবনধর্মী থৃলার
    • সাইকোলজিক্যাল
    • রোমান্টিক
    • ক্রাইম
    • সাসপেন্স
    • জীবনধর্মী
  • নন-ফিকশন
    • থট প্রসেস
    • উচ্চশিক্ষা
    • আমেরিকা-নামা
    • জীবনোন্নয়ন
    • তাত্ত্বিক আলোচনা
    • ডায়েরি
  • প্রকাশিত বইসমূহ
    • প্রকাশিত বইসমূহ
    • যেসব গল্প সংকলনে আছে আমার গল্প
KP Imon
KP Imon

Words Crafted

সিক্ততা

Posted on November 29, 2013June 15, 2022

আন্টির বাসা থেকে বের হয়ে ছাতা ফুটিয়ে মাথায় দিতেই ফারিহা দেখল – ছেলেটা ভিজছে।

বর্ষাকাল।
যখন তখন ঝুম বৃষ্টি নেমে যায়। গবেট-শ্রেণির লোক দেখেও শেখে না – ঠেকেও শেখে না। ছাতা ছাড়াই বের হয়। এবং ভেজে। এই ছেলেটাকে তার গবেট শ্রেণির মনে হচ্ছে না।
রাস্তার পাশে ফারিহা একটু দাঁড়াল। ঢাকার রাস্তায় বৃষ্টির দিনে রিকশা পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার। রিকশাওয়ালারাও এই সুযোগে ভাড়া চারগুণের নিচে হাঁকে না।
ফুটপাতের কিনারায় কাকভেজা ছেলেটার দিকে চোখ পড়তে বাধ্য। পোশাক-পরিচ্ছদ দেখে মনে হচ্ছে স্বচ্ছল ঘরের সন্তান। হাতে একটি ফাইল। ইউনিভার্সিটির ছাত্র হবে হয়ত। চেহারা আকর্ষনীয়।
হঠাৎ বৃষ্টিতে বিভ্রান্ত মানুষগুলোর মত এ আশ্রয় নেওয়ার চেষ্টা করছে না। মূর্তির মত স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
ফারিহার ইচ্ছে করল ওকে ধাক্কা দিয়ে রাস্তায় ফেলে দেয়! রাস্তায় একটা রিকশা নেই – আর এদিকে ন্যাকামো হচ্ছে!
এমনিতেই আজ ওর মনটা বিক্ষিপ্ত। আন্টির সাথে দেখা করার পর মেজাজ আরও চড়ে আছে।
খালুর মামাতো ভাইয়ের ছেলে আমেরিকা থেকে বহুদিন পর বাংলাদেশে ফিরে এসেছে। ঢাকায় এত লাখো বাড়ি থাকতে আপদটা কিনা এসে জুটেছে আন্টির বাসাতেই। আর আন্টির যেমন কান্ডজ্ঞান – মাথায় উনার ঘটকালি ঢুকেছে। ফারিহার গুণের সাতকাহন তিনি সেই ছেলের সামনে গেয়ে গেলেন। অপমানে পুরোটা সময় ফারিহার কান ঝাঁ ঝাঁ করেছে। তাকে খালা কী মনে করে? নিলামে তুলে বিক্রি করে দেবার মতো একটা দেহ কেবল? এই নাটক থেকে বেরিয়ে পথে নামতে না নামতেই দেখতে হচ্ছে এই ছেলের ন্যাকামি। রাগে ও দাঁতে দাঁত পিষল।
‘আপা, কই যাবেন?’ সম্বিত ফিরে পেল ও রিকশাওয়ালার ডাকে।
রিকশাওয়ালার মুখ আনন্দে ঝলমল করছে। মেয়ে প্যাসেঞ্জার সাধারণতঃ বৃষ্টির দিন ভাড়া নিয়ে গ্যাঞ্জাম করে না। আড়চোখে ফারিহা দেখতে পেল – ছেলেটা হাঁটতে শুরু করেছে।
রিকশাওয়ালাকে কোন জবাব না দিয়ে ফুটপাথ ধরল ও। ন্যাকাটার রহস্য ভেদ করতে হবে।
তবে এ সিদ্ধান্ত জটিলতা বাড়াল বই কমালো না।
ওভারব্রীজের নিচ দিয়ে যাওয়ার সময় সিঁড়িতে বসে থাকা বৃদ্ধা মহিলাটির হাতে নিজের মানিব্যাগটা ধরিয়ে দেয় ছেলেটা। কেবল একটা দশ বা বিশ টাকার নোট নয়। এমনকী পাঁচশ টাকার নোট পর্যন্ত না। পুরো মানিব্যাগটাই!
তারপর বিকারগ্রস্থের মত হেঁটে চলে সামনে।
হাতে ধরা ফাইলটি ছুঁড়ে ফেলে দিল রাস্তার পাশের ড্রেইনে।
আবারও রাগে দাঁত কিড়মিড় করে ফারিহা। ঢাকার সুয়্যারেজ লাইনের এমনিতেই যে অবস্থা! এর মাঝে আবার ফাইল ফেলা হচ্ছে। টাকা আছে – মানিব্যাগ দান করে দিচ্ছ বলে শহর তোমার বাবার?
আর সহ্য হল না ওর। লম্বা লম্বা পায়ে হেঁটে ছেলেটাকে ধরে ফেলে ফারিহা।
‘এক্সকিউজ মি?’
অবাক হয়ে ঘুরে দাঁড়ায় ছেলেটা, ‘আমাকে বলছেন?’
‘না! আমি বৃষ্টিকণার সাথে কথা বলছি!’ ঝাঁঝের সাথে বলে ফারিহা, ‘ড্রেইনের মধ্যে ফাইলটি ছুঁড়ে ফেললেন – মানে?’
ছেলেটার চোখ জ্বলে ওঠে, ‘যতদূর মনে পড়ে – আপনার কিছু ছুঁড়ে ফেলিনি।’
‘শহরটা আপনার বাবার সম্পত্তি? ড্রেইনে আজেবাজে জিনিস ছুঁড়ে ফেলবেন – আবার যুক্তি দেখাচ্ছেন?’
‘আমার ইচ্ছা। তোমার ভালো না লাগলে তুমি মুড়ি খাও।’ আবার সামনে হাঁটে ছেলেটা।
ফারিহা স্তম্ভিত হয়ে দাঁড়িয়ে পড়ে। এরকম ভাষায় প্রথম সাক্ষাতেই কোন ছেলে তাকে এভাবে বলবে এ তার কল্পনাতেও ছিল না।
*
প্রায় এক মাস পরের কথা।
লাইনে দাঁড়িয়ে ফারিহা। ফার্মগেট যেতে নিউ ভিশন ধরবে। পার্টটাইম জবের ব্যাপার আছে। লোকাল একটা ম্যাগাজিনে প্রুফ রিডিংয়ের কাজ। ভার্সিটির সিনিয়র ভাই তূর্য চেয়েছিল কাজটা ওকে দিতে। তূর্য ভাইয়ের সাথে দেখা করতেই যাচ্ছে এখন।
পর পর দুটো বাস চলে যাওয়ার পর লাইনের একেবারে সামনে চলে এলো ও। পরের বাসে উঠে প্রথম যে সীটটি ফাঁকা পায় বসে পড়ে। বাস আসাদগেট পৌঁছতেই ওর মনে হয় পাশের সারিতে বসা ছেলেটা ওকে দেখছে।
ফারিহার চেহারা যথেষ্ট সুন্দর – এবং সে বিষয়ে ও নিজেও ওয়াকিবহাল, তবে না তাকিয়েও ছেলেটির দৃষ্টিতে কৌতুহল অনুভব করে ও। মুগ্ধতা নয়! কাজেই আড়চোখে তাকাতেই হল। এক ঝলক দেখেই ও চিনতে পারে – বৃষ্টিতে ভেজা রহস্যময় ছেলেটিকে।
কোনরকম আগাম সঙ্কেত না দিয়ে মেজাজটা আবার টং হয়ে যায় ওর আবারও।
‘সেদিন বাজে কথা বলার সময় খেয়াল ছিল না! এখন তাকাচ্ছে।’ মনে মনে ভাবে ফারিহা।
দ্বিতীয় সাক্ষাতের কোন ইচ্ছেই ওর মধ্যে নেই। বাস থেকে লাফিয়ে নেমে সামনে হাঁটে ও।
এবং যা ভাবছিল – পেছন থেকে শুনতে পায়, ‘এক্সকিউজ মি-’
ঘুরে যতটা সম্ভব সেদিনের উচ্চারণ নকল করে ফারিহা, ‘আমাকে বলছেন?’
‘দেখুন, গতবারের ব্যবহারের জন্য আমি খুবই লজ্জিত। বিশেষ একটা কারণে সেদিন আমার মন এবং মেজাজ – কোনটাই নিয়ন্ত্রণে ছিল না।’
ছেলে লাইনে এসেছে এবং নিজে থেকে ক্ষমা চাইছে, তার ওপর মায়াকাড়া একটা চেহারা – ঝগড়াঝাটির এখানেই ইস্তফা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিল ফারিহা।
‘সত্যি বলতে কি – সেদিন আমারও মন ভালো ছিল না। স্বীকার করতেই হচ্ছে – বাড়াবাড়ি আমিও কিছুটা করে ফেলেছি, মানে পায়ে পা বাঁধিয়ে ঝগড়া যাবে বলে …’
হেসে ফেলল ছেলেটা, বাড়িয়ে দিল হাত, ‘আমি তন্ময়।’
‘ফারিহা।’ হাত মেলায় ফারিহা।
*
এক মাস কেটে গেছে আরও।
তন্ময় আর ফারিহার নাম না জানা দশা পালটে গেছে গভীর বন্ধুত্বে।
ফার্মগেটেই নম্বর আদান-প্রদান করেছিল ওরা এবং সবিস্ময়ে ফারিহা লক্ষ্য করেছিল তার নিজের উৎসাহই বেশি ছিল। তন্ময়ের সেদিনের ব্যাবহারের তাৎপর্য জানার জন্যই হয়তো, তবে সে নিশ্চিতও হতে পারেনি।
ধীরে ধীরে তন্ময়কে আরও ভালো করে চিনেছে ফারিহা – যে তন্ময়ের সাথে প্রথমদিনের সেই তন্ময়ের কোন মিলই নেই।
‘১৫ই মার্চ – আমি ভুলিনি।’ মনে মনে ভাবে ফারিহা। ‘কয়দিন লুকাবা তুমি। ঠিকই জেনে নিব, হুঁ হুঁ।’
তার কাছে সরাসরি সেই বৃষ্টির দিনের ব্যাপারটা সে জানতে চায় নি – এমনটা নয়। কিন্তু প্রতিবারই এড়িয়ে গেছে তন্ময়।
এই যেমন আজ – জিয়া উদ্যানে হেঁটে বেড়াচ্ছে ওরা। কোন দিন কাজের অতিরিক্ত চাপ পড়লে খানিকটা সময় বের করে একসাথে কোথাও ঘুরতে বের হয় ওরা এখন। চাপটাকে তখন আর অসহনীয় লাগে না। এদিকে ফারিহার জীবনে বন্ধুদের সংখ্যা এমনিতেও কম, যে ক’জন আছে তাদের মধ্যেও তন্ময়ের মত খোলা মনের কেউ নেই। তন্ময়ের ক্ষেত্রেও ব্যাপারটা এমন – ফারিহার সাথে শেয়ার করে স্বস্তি পায় ও। দুইজনই একে অপরের মোবাইল নম্বর সেইভ করে রেখেছে বিএফএফ নামে। আজ ফারিহাই তোলে প্রসঙ্গটা। আবারও।
‘তুই আজ পর্যন্ত একটাবারও আমাকে বললি না আমাদের প্রথম পরিচয়ের দিন তোর কি হয়েছিল। ’
‘তোকে আমি আগেও কয়েকবার বলেছি – আমাকে এ নিয়ে প্রশ্ন করবি না। আমি উত্তর দিতে পারব না। ’
‘ওকে!’ হাসে ফারিহা, ‘লেট মি গেস – তুই ছ্যাঁকা খেয়েছিলি।’
‘একরকম।’ অন্যদিকে তাকায় তন্ময়।
‘মেয়েটা নিশ্চয় অনেক বোকা। নাহলে তোর মত ছেলেকে ছেড়ে যাবে কেন?’
‘আমাকে খুঁচিয়ে তথ্য বের করতে চাইছিস তো?’ চোখ পাকালো তন্ময়, ‘ফাইজলামি বন্ধ! চল বাসায় ব্যাক করি। আমার ভালো লাগছে না।’
মাঝে মাঝে ভাবে ফারিহা বোকাটার কথা। মানুষ মনে হয় আর প্রেম করে ছ্যাঁকা খায় না?
এত রাখাঢাকির কি আছে? তবে একটা কথা ঠিক। তন্ময়ের কোনকিছুতেই পরাজয় পছন্দ না। ছেলেটা খুব ভালো ছবি আঁকতে পারে। প্রথম প্রথম কিভাবে ‘উন্মাদ’ নামক ম্যাগাজিনটি ওর কার্টুনকে রিফিউজ করে দিয়েছিল আর তা ওর জন্য কত বড় একটা চ্যালেঞ্জ হয়ে গেছিল সেই গল্প ফারিহার জানা।
হয়ত এ কারণেই ওর পরাজয়ের কথা ও লুকিয়ে রাখতে চায় নিজের কাছেই। ফারিহাকে বললে কি হত? সবই বলে ওকে তন্ময়।
‘গাধা একটা!’ বিড়বিড় করে তাকে গাল দেয় সে। তবে বিষয়টা তাকে এভাবে খোঁচাচ্ছে তা টের পেতে দেয় না বন্ধুকে।
একদিন তূর্য ওর কাছে জানতে চায়, ‘কিরে, তন্ময়ের সাথে জুটলি কিভাবে?’
অবাক হয় ফারিহা, ‘আপনি ওকে চেনেন কিভাবে? লং স্টোরি ভাইয়া।’
তূর্য অবাক হয়, ‘চিনব না! আমার কলেজের ছাত্র ছিল। আমার এলাকায় থাকে। আমার ক্লোজ ছোটভাই। আমাদের ম্যাগাজিনে ও আর্ট নিয়ে মাঝে মাঝে সাহায্যও করে।’
প্রশ্নটা করা ঠিক হবে কি হবে না – না বুঝেই করে ফেলে ও, ‘ভাইয়া ওকে কিছু একটা নিয়ে ডিস্টার্বড দেখি। ওর কি ইদানিং এর ভেতর ব্রেক আপ হয়েছে কারো সাথে? ’
ঘরের ছাদ কাঁপিয়ে হাসে তূর্য, ‘তন্ময় করবে প্রেম? ব্রেক আপ তো পরের কথা। আমার জানামতে ওর কোন বান্ধবীও ছিল না। তাই তো তোর কথা ওর মুখে শুনে অবাক হলাম। আরে শিল্পী মানুষের মাঝে মাঝে উদাস হতে হয়। ও নিয়ে ভাবিস না।’
লজ্জা পেয়ে সরে আসে ফারিহা। তূর্য ভাই নিশ্চয় ভেবেছে তন্ময়ের প্রেমে ও হাবুডুবু! আর ও-ও একটা যাচ্ছেতাই! এভাবে কেউ জানতে চায়? কিন্তু – নিজেই বিভ্রান্ত হয়ে যায় ফারিহা। তন্ময়কে কি ও বন্ধুর থেকেও বেশি কিছু করে পেতে চায় না? নাকি চায় না? নিজেকে বোঝা এত সহজ হলে তো আর গ্রিক দার্শনিক এই কাজটি করার জন্য উপদেশ দিয়ে যেতেন না মানবজাতিকে।
এত ভাবার জন্য নিজেকেও চোখ রাঙ্গায় ফারিহা। তন্ময় মনে হচ্ছে ওর মাথার ভেতর ঢুকে বসে আছে। কেন? কারণ ওই একটা অজানা প্রশ্ন। হয়তো ওরা শুধুই বন্ধু। ওই কৌতূহলটাই হয়েছে কাল। কিন্তু ভাবাভাবির ব্যাপারটা কি আর ওর হাতে তখন আছে?
পরের কয়েকটা দিন যতবার তন্ময়ের সাথে দেখা হয় ফারিহার – প্রতিবারই হৃদস্পন্দন বেড়ে যায় ওর। তন্ময়টাকে ছাড়তেই ইচ্ছে করে না। কোন কারণ ছাড়াই ওকে ফোন দিয়ে ডাক দেয় ও, ‘হ্যালো তন্ময় – মন ভালো না। চল কোথাও ঘুরে আসি।’
আসলে ছাই – তন্ময়কে দেখার ছুতো। আর পাগলটাও যা, ইদানিং সারাদিনই ছবি আঁকে। যতক্ষণ থাকে ততক্ষণ ছবি নিয়েই বকবক করে। ওর আবার ইদানিং বিশ্বকে চমকে দেওয়া একটা ছবি আঁকার ইচ্ছে হয়েছে। ফারিহার কি আর অতসব মাথায় ঢোকে? ও শুধু তন্ময়কে দেখে। ছেলেটার চোখ দুইটা এত্ত পরিষ্কার – ফারিহার ইচ্ছে করে ওখানে ডুবে মরতে। আর ও হাসলে তো ফারিহার মাথা হ্যাং করে যায় – এত সুন্দর করে একটা মানুষ হাসে কি করে?
প্রায় প্রতিদিনই দেখা করলেও ফারিহার সাহস হয় না ওর অনুভূতির কথা বলার।
না – তন্ময় ‘না’ করে দেবে সেই ভয়ে যতটা – তার থেকেও বড় ভয় তন্ময়ের প্রথম দিনের ব্যাখ্যার।
ও যে পাগল – হয়ত সেই মেয়েকে জেতার একটা জেদ নিয়ে বসে আছে আজও।
মাঝখান থেকে ফ্রেন্ডশিপে একটা দূরত্ব আসবে।
প্রতিদিন তন্ময়কে কিভাবে দেখবে ও তখন?
*
আরেকটি মাস প্রায় গড়িয়ে যায় এভাবে। এর মাঝে একদিন বহুদিন পর তন্ময়ের মুখে হাসি দেখে ফারিহা।
‘তোকে বলেছিলাম আমার একটা – মাত্র একটা ছবি আঁকার সখ ছিল। পৃথিবীকে চমকে দেওয়ার জন্য।’
‘তুই একটা পাগল। সব কিছুতেই তোর তাড়াহুড়ো।’ ওকে আলতো ঘুষি মারে ফারিহা।
‘ছবিটার কাজ শেষ,ফারিহা। আজ আমরা সেলিব্রেট করব।’ ঘুষি ফেরত দেয় তন্ময়।
‘কী খারাপ। কী খারাপ! আমাকে দেখাবি না?’ অনুযোগ করে ফারিহা।
‘অফকোর্স! আর মাত্র কয়েকটা দিন দোস্ত।’
কিন্তু কয়েকটা দিনের কথা বললেও আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে ছবিটা দেখা হল না ফারিহার। কিংবা বলা যায় – একটা সপ্তাহ তন্ময়ের সাথে ভালোমত যোগাযোগও হল না ফারিহার।
মনে মনে গালি দিয়ে ওর ভূত ভাগায় ফারিহা – পাগলটার হয়ত ছবির কাজ বাকি ছিল – এখন আমাকে দেখাতে হবে তাই ডুব মেরে কাজ শেষ করছে – নিজেকে বোঝায় ও।
মোবাইলের রিংটোন বাজতেই ঝাঁপিয়ে পড়ে ও – কিন্তু তন্ময় না – তূর্য ভাইয়ার কল। বিরক্ত হয়েই ফোন রিসিভ করে ফারিহা।
‘তোকে কিভাবে ব্যাপারটা বলব বুঝতে পারছি না।’
‘ভাইয়া কি তন্ময়ের শেষ ছবিটার কথা বলছেন? অবাক হয়েছেন তো? আমি জানতাম ও এবার অসাধারণ কিছু একটার জন্ম দেবে। আমি অবশ্য এখনও দেখি নি -’
‘তন্ময় মারা গেছে ফারিহা। গত পরশু রাতে।’ কন্ঠ সিক্ত হয়ে আসে তূর্যের। ‘তার আগে আমাকে মেসেজ দিয়েছিল যেন তোকে বলি তোর ই-মেইল চেক করতে। আমি ভেবেছিলাম তোদের ঝগড়া – তাই। তখন যদি বুঝতাম রে …’
আরও কি কি বলে যায় অপরাধী কন্ঠ নিয়ে তূর্য ভাই – কানে কিচ্ছু শুনতে পায় না ফারিহা। হাত থেকে মোবাইলটা পড়ে যায় আলতো করে। একটা যন্ত্রের মতই কম্পিউটারের সামনে বসে পড়ে ও।
ফেসবুক এবং মোবাইল চেক করলেও ই-মেইল রোজ চেক করা হয় না।
একটি অ্যাটাচমেন্ট সহ একটী মাত্র আনরেড ই-মেইল।
প্রথমে ওর চোখ পড়ে ছবিটির ওপর।
ফারিহার একটা পোট্রেট। সম্পূর্ণ ডিটেইলস তন্ময় নিজের মাথা থেকে এঁকেছে। ফারিহার মুখে একটা অপার্থিব হাসি – যে হাসিতে একই সাথে ভালোবাসা – কান্না – সুখ এবং দুঃখের প্রতিচ্ছবি। একটি সাধারণ ছবি কিভাবে অসাধারণ হয়ে ওঠে চোখের সামনে তা ফারিহা বুঝতে পারল না – তখন ওর চোখ বার বার ঝাপসা হয়ে আসছে।
মেইলটা ওপেন করল ও ঝাপসা চোখেই।

‘ফারিহা,
তুই অনেক ভালো একটা মেয়ে। এবং অসাধারণ। পৃথিবীতে যদি এখনও একটা নিখুঁত মেয়ে থাকে – তবে নিঃসন্দেহে সেটা তুই।
আমি চিঠি লিখতে পারি না – লিখিনি কখনও। কিন্তু তোর কিছু কথা জানার অধিকার আছে – যে কথাগুলো আমি সামনে দাঁড়িয়ে তোকে কখনোই বলতে পারব না।
তুই সবসময় বলতি আমি বোকা। তোর কথা এতটা সত্য আমি নিজেও জানতাম না। তোর বন্ধুত্বের আড়ালে নিজেকে অনেক সুখী মনে হত – জীবনকে অনেক শান্ত। কখন যে বোকার মত তোর প্রেমে পড়ে গেলাম!
তুই আমাকে ভালোবাসতি সেটা আমি জানি – তুই আমাকে ফিরিয়ে দিতি না – সেটাও আমি জানি।
এখন হয়ত ভাবছিস – কেন তোকে বলিনি? আর কেনই বা তোকে আমার জীবনের সবকিছু শেয়ার করেছি শুধু আমাদের প্রথম দেখার দিনটি বাদ দিয়ে?
তারিখটি তোর মনে আছে কি না জানি না। তবে আমার আছে।
১৫ই মার্চ। যেদিন আমি হাতে পেলাম আমার ক্যাট স্ক্যানের রিপোর্ট।
মাথা আরও কয়েক মাস ধরেই হঠাৎ হঠাৎ প্রচন্ড রকম ব্যাথা করত। পাত্তা দেইনি। অনেক সময় নিয়ে ছবি আঁকতাম বলে ভাবতাম – চোখের ওপর বেশি প্রেশার দেওয়ার ফল। অবশেষে ডাক্তার দেখালাম। স্ক্যান করতে বলল আমাকে। স্ক্যান রিপোর্ট নিয়ে কন্সাল্টেশন সেন্টার থেকে মাত্র দুঃসংবাদটা নিয়ে বের হয়েছি – বড়জোর দুই থেকে আড়াই মাস বাঁচব আমি – ঠিক তখনই দেখিস তুই আমাকে।
টিউমারটা এতটাই গ্রো করেছিল আমার দশমিকের কোঠায়ও সুযোগ ছিল না।
আমাকে মাফ করে দিস ফারিহা। তোকে পেয়ে হারানোর বেদনা দিতে চাইনি।
আর – বেশি কাঁদিস না।
কথা দিচ্ছি – এই জন্মে হতে না পারলেও ওই জন্মে ঠিকই তোর হব।
– ফারিহার তন্ময়’

*
ফারিহার ফোনে রেসপন্স না পেয়ে তূর্য ওর বাসার সামনে গাড়ি থেকে নেমে দেখল –
মেয়েটা ভিজছে।

রচনাকাল : ২৯শে নভেম্বর, ২০১৩

রোমান্টিক

Post navigation

Previous post
Next post

কিশোর পাশা ইমন

১২টি ক্রাইম থৃলারের লেখক কিশোর পাশা ইমন রুয়েটের মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ছাত্র ছিলেন, এখন টেক্সাস ষ্টেট ইউনিভার্সিটি থেকে মাস্টার্স করেছেন মেকানিক্যাল অ্যান্ড ম্যানুফ্যাকচারিং ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে। বর্তমানে টেক্সাসের স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয় ইউটি ডালাসে মেকানিকাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পিএইচডির ছাত্র। ছোটগল্প, চিত্রনাট্য, ও উপন্যাস লিখে পাঠকপ্রিয়তা পেয়েছেন। তার লেখা প্রকাশিত হয় বাংলাদেশ ও ভারতের স্বনামধন্য প্রকাশনা সংস্থা থেকে। তার বইগুলো নিয়ে জানতে "প্রকাশিত বইসমূহ" মেনু ভিজিট করুন।

Related Posts

আমি জুনিয়র

Posted on December 9, 2013June 20, 2022

‘সিনিয়র ভাই জানার পরও সামনে সিগারেট খাচ্ছ – সরাসরি তাকিয়ে আছ – নিজেকে ওভারস্মার্ট মনে কর?’

Read More

চুইংগাম

Posted on December 7, 2013June 15, 2022

ছেলেটা বুঝে গেলেই তো শেষ। ছেলে জাতিটাকে চেনা আছে। বুঝিয়ে দাও তুমি দুর্বল – তোমার প্রতি আগ্রহ হাওয়া হয়ে যাবে সাথে সাথে। ভাব ধরে থাকতে হয়।

Read More

ভালো বাসা

Posted on December 27, 2013June 24, 2022

মা অবশ্য আপত্তি করছেন না। হুজুর বাড়ি বন্ধ করলে ক্ষতিই বা কোথায়? আর বাড়িওয়ালা আংকেল তো রীতিমত উৎসাহিত এই সমাধানে। আমিও শত্রুপক্ষের সাথে তাল মেলালাম।

Read More

Leave a Reply Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

সর্বশেষ লেখাগুলো

  • ওয়ান ফর মাই সৌল
  • আমার যত প্রকাশক
  • কেপির সেরা লেখা কোনটি – জরিপ ২০২২
  • আন্ডারএইজের বই পড়া
  • অমুক পড়ে আসেন… সমস্যাবলী

Analytics

009435
Total Users : 9435
Total views : 23711
Who's Online : 1
Powered By WPS Visitor Counter
©2025 KP Imon | WordPress Theme by SuperbThemes