ল্যাবে ঢুকেই থমকে গেল তুষার। ওর গ্রুপমেটদের সাথে ওই নতুন মেয়েটা কে?
কাছে যেতেই হাত বাড়িয়ে দিল নতুন মেয়েটা। ‘হাই, আমি তৃণা। তুমি নিশ্চয় তুষার। তোমার কথা গ্রুপমেটদের কাছে শুনতে শুনতে মুখস্থ হয়ে গেছে একেবারে!’
যান্ত্রিক ভাবে করমর্দন করল তুষার। জানতে পারল অন্য একটা ভার্সিটিতে ছিল তৃণা। মাইগ্রেট করে ওদের ভার্সিটিতে জয়েন করেছে। পুরো ব্যাপারটাই তুষারের পছন্দ হচ্ছে না।
কেন পছন্দ হচ্ছে না – সেটা বুঝতে ল্যাবে মাত্র আধ ঘন্টা কাটানোটাই যথেষ্ট ছিল।
যেকোন বিষয়ে তৃণার সিদ্ধান্ত একবাক্যে মেনে নিচ্ছে প্রত্যেকটা গ্রুপমেট। তানভীর তো বাতাসের আগে আগে ছুটে যাচ্ছে যা কিছু দরকার আনতে। দু-একটা সিদ্ধান্ত পছন্দ না হলে তুষার আপত্তি করে গেলেও লাভ কিছু হল না। মনে হচ্ছে ও অদৃশ্য। অথচ তৃণার সামান্য ইঙ্গিতেই লাফালাফি করে হুকুম তামিল করে যাচ্ছে বিশ্বাসঘাতকগুলো।
গ্রুপের সবার মনযোগ মেয়েটার দিকে। সজীবটা আবার বেহায়ার মত হেসেও যাচ্ছে।
মাত্র দুই সপ্তাহ ভার্সিটির বাইরে ছিল ও। ফুটবল খেলতে গিয়ে পায়ের আঙুলে ধরেছিল ফাটল। তাতেই যেন ওকে বেমালুম ভুলে গেছে সবাই, রাগে দাঁত কিড়মিড় করল তুষার। এতদিন এই গ্রুপটার মধ্যে ওরই ছিল একচ্ছত্র আধিপত্য। এর পেছনে কারণও আছে, সবাইকে কাজ করার সুযোগ করে দিত ও – যাতে সবাই-ই শিখতে পারে। অথচ জটিল কোন সমস্যায় আটকে গেলে তুষারই ছিল সবার উদ্ধারকারী।
কথায় কাজ হবে না বুঝে চুপচাপ ল্যাবের সময়টা পার করে দিল তুষার।
*
‘মামা, একটা বেনসন দেন।’
শরীফ মামার চায়ের দোকানে এসেই সিগারেট ধরালো তুষার। তৃণা চোখের সামনে থেকে দূর হওয়ার পর থেকেই তানভীর, সজীব আর রাশেদ আগের মতই ব্যবহার করছে তুষারের সাথে।
তুষারের মন-মেজাজ ভালো নেই বুঝতে পেরে কয়েকটি অশ্লীল জোকস ছাড়ল সজীব।
‘শালা – তোমাদের সুন্দরী মাইয়া দেখলেই আর মাথার ঠিক থাকে না!’ খেঁকিয়ে উঠল তুষার। ‘দুইটা সপ্তাহ পায়ে ব্যাথা নিয়া পইড়া ছিলাম সে কথা একটা বার ভাবস নাই – চেহারাটা পর্যন্ত দেখা গেল না কোন শালার। আর ফিরে এসে দেখছি রিপ্লেস করে ফেলেছিস আমাকে। মাইয়া মানুষ পাইলে ছেলেরা-’
‘দোস্ত – অহেতুক দোষারোপ করছিস।’ ওকে শান্ত করার চেষ্টা করল রাশেদ, ‘আমরা প্রতিদিনই তোকে দেখতে গেছি প্রথম সপ্তাহ। যাইনি? তারপর তোর পায়ের উন্নতি হয়েছিল ভালই। আর যত সপ্তাহ যায় চাপ তো বাড়ে, তারপর ভার্সিটিতে চাপ বেড়ে যাওয়ায় …’
‘চাপ বেড়ে যাওয়ায়!’ সিগারেটে জোরসে টান দিয়ে বলল তুষার। ‘নাকি বল তারপরই তৃণা শালি চলে আসায় আর আমাকে তোদের মনে নাই?’
‘তোর হবে রে।’ এতক্ষণে কিছু একটা বলল তানভীর।
‘কি হবে?’
‘প্রেম।’
‘মেজাজ ভালো নাই, শালা।’ উঠেই গেল তুষার, ‘আজাইরা কথা বলবি তো বল। আমি গেলাম।’
‘আরে, এর আগে কখনো তোকে এত নেই কথায় রি-অ্যাক্ট করতে দেখেছি বলে মনে করে না-’
‘দোস্ত, তৃণার বিষয় বাদ। বস তো।’ পরিস্থিতি বুঝে তানভীরকে থামিয়ে দিল রাশেদ।
বন্ধুদের অনুরোধ অগ্রাহ্য করে বেড়িয়ে গেল তুষার।
*
ক্লাসে অথবা ল্যাবে – তৃণা হয়ে গেল তুষারের দুই চোখের বিষ।
যেখানে যেভাবে পারে – ওকে এড়িয়ে চলে অথবা খোঁচা দিয়ে কমেন্ট করে তুষার।
তৃণা আবার এদিক থেকে এক ডিগ্রী উপরে। তুষারকে দিগন্তরেখায় দেখলেই চিল চিৎকার, ‘তুউউউউউউউউষার! অ্যাই!! এইদিকে!!…’
ফর্মালিটি রক্ষার্থে দুই-একটা কথা বলতেই হয়। পার হয়ে গেল এভাবেই চারটা মাস। শরীফ মামার দোকানে একদিন ক্ষোভে ফেটে পড়ল তুষার।
‘নিজে এক ভার্সিটি থেকে ভেগে গেছে। শালি কি এখন আমাকে এখান থেকে তাড়াতে চায়!’
‘তৃণার কি দোষ?’ দোষী পক্ষের উকিল দাঁড়িয়ে গেল তানভীর।
‘খুব ভালো করে জানে ওকে সহ্য করতে পারিনা। ইচ্ছে করে সামনে আসে – গায়ে পড়ে কথা বলতে চায়! আইডিয়া কি ওর না তোরা আমার পিছনে লাগিয়ে মজা নিচ্ছিস?’
‘তুই একটু বেশিই ভাবছিস। আমার মনে হয় মেয়েটা তোকে পছন্দ করে।’ স্বভাবসুলভ অল্প কথায় কাজ সাড়ল রাশেদ।
‘তোর মাথা আর মুন্ডু। আমার ডিস্টার্বড মুখ দেখে বেয়াদবটা মজা পায় – আর কিছু না।’ মেনে নিতে রাজি নয় তুষার।
*
‘বেয়াদব’টা যে শুধু তুষারের বিরক্ত মুখ দেখে মজা পায় – এই ধারণা পরের সপ্তাহেই ভুল প্রমাণিত হয়ে গেল।
রাতের বেলায় ফেসবুকে তৃণার মেসেজ পড়ে গরম চায়ে ঠোঁট পুড়িয়ে ফেলল তুষার।
‘এত ইগনোর কর কেন? চোখ দেখনি আমার একবারও? বোঝনা এতটা রুড বিহেভের পরও কেনই বা তোমার সামনে পড়ি? আমার ভবিষ্যত তোমার হাতে বাঁধা। সিদ্ধান্ত তোমার। জানিও আমায়। তোমাকে ছাড়া জীবনটা পার করার কথা ভাবতেও পারি না।’
সকাল সকাল রাশেদ – তানভীর – সজীবের ডাক পড়ল শরীফ মামার দোকানে। ঘটনা শুনে উৎফুল্ল সবাই।
‘মাম্মা!! তোমার তো হইয়াই গেল।’ পিঠ চাপড়ে দেয় সজীব উচ্ছ্বাসে।
‘শরীফ মামা, বিল তুষারের। বেনসন দেন চারটা।’ রাশেদ বলে।
‘বলবি কি ওকে?’ কনক্লুশন চায় তানভীর, ‘মেয়েটা কিন্তু জোস! রাজি হইয়া যা বলদ।’
‘এমন ভাব কেন নিচ্ছিস যে আমার জীবনের গল্প তোরা জানিস না?’
বিষাদের ছায়া নেমে আসে চারজনের ছোট্ট সার্কেলটিতে।
*
তুষারের বাবা এক বছর আগে মারা গেছেন। মৃত্যুশয্যায় তাঁর একটাই কথা – বন্ধুকে দেওয়া কথার যেন খেলাপ না হয়। তাঁকে যেন ওয়াদা খেলাপকারী বানানো না হয়। তুষার নিজে বাবার হাতে হাত রেখে বলেছে – সেদিকটা ও নিশ্চিত করবে। তখনও ও জানত না ঠিক কি বিষয়ে কথা বলছে বাবা।
আগে কখনও ওর সামনে এর আলোচনা হয়নি। বাবার মৃত্যুর পর মা জানায় ওকে পুরো কাহিনী।
তুষারের ছেলেবেলা কেটেছে চট্টগ্রামে। কর্ণফুলি নদীর পাড়ে এক শান্ত, স্নিগ্ধ কলোনি। বাবার কর্মস্থল সেখানে ছিল তের বছর, এর মাঝেই তুষারের জন্ম। বয়স সাত পর্যন্ত ওখানে ছিল ওরা। বাবার ছেলেবেলার বন্ধু কাম কলিগ আরিফুজ্জামানও ছিলেন ওখানে। দুটো পরিবার মিশে গেছিল ওতোপ্রোতভাবে। তুষারের ছয় মাসের ছোট একটা মেয়ে ছিল তাঁদের। অনেক বাঙ্গালী বন্ধুদের মতই ঠিক করেন নিজেদের ছেলে-মেয়েদের সাথে বিয়ে দিয়ে সম্পর্ক চিরস্থায়ী করে ফেলতে।
পরবর্তী এতগুলো বছরের মাঝে কেউই ভুলে যাননি সে কথা। তুষারের বাবা সিগারেট খেতেন প্রচুর, কারখানার বাইরে জীবন কিছু ছিলো না তার। কেমিকেল ফ্যাক্টরি না সিগারেট, ওরা কেউ আর নিশ্চিত হতে পারেনি – তবে লাংসে যখন ক্যান্সার ধরা পড়ল তখন মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ে গোটা ফ্যামিলির। বাবাকে নিয়ে ছোটাছুটি করেনি এমন কোন জায়গা নেই। কিছুতেই কিছু হল না। অবস্থা দিন দিন অবনতির দিকে যেতেই থাকল। মৃত্যুর মাত্র কয়েকদিন আগে ছেলেকে প্রতিজ্ঞা করিয়ে যান তিনি।
‘বাবার দেওয়া কথা আমার কাছে আমার জীবন থেকেও গুরুত্বপূর্ণ। রাজি হওয়ার কোন প্রশ্নই আসে না।’ শেষ কথা তুষারের।
*
রেস্টুরেন্টের নিরিবিলি কোণায় বসে তুষার আর তৃণা। এই জায়গায় ওকে একরকম ধরেই এনেছে তৃণা।
আড়চোখে মেয়েটাকে দেখল তুষার। লজ্জা পাচ্ছে মনে হয়। মাথা নিচু করে বসে আছে একটা উত্তরের আশায়। নারীর লজ্জার সাথে সৌন্দর্য্যের একটা যোগসূত্র আছে মনে হয়। গালের লালচে আভা আর নিচের ঠোঁট আলতো করে কামড়ে ধরায় তৃণাকে আরও সুন্দরী লাগছে। চুলের রেখাগুলো চোখের গরাদ দিয়েছে। বুকের ভেতর খালি খালি লাগল তুষারের। এত সুন্দর একটা মেয়েকে কষ্ট দিতে হবে ভেবে। কান্নাকাটি না লাগালেই হয়। সুন্দরী একটা মেয়ের কান্না দেখার চেয়ে বাজে জিনিস আর কিছু হতে পারে না। তাছাড়া একজন পুরুষের পক্ষে এমন এক মেয়ে উপেক্ষা করাও শক্ত এক কাজ।
ধীরে ধীরে ওকে খুলে বলল তুষার। ওর জীবনের গল্প। ছেলেবেলার অদ্ভুত সেই সিদ্ধান্তের কথা। শুনতে শুনতে পানি জমে ওঠে তৃণার চোখের কোণে। ভূতের মত বেরিয়ে পড়ে দুইজনে।
আজ কি যেন হয় তুষারের। তৃণাকে বাসায় পৌঁছে দেয় ও।
নিজের বাসায় ফিরে আসার সময় অদ্ভুত একটা খারাপ-লাগা অনুভূতি কাজ করে ওর ভেতর।
বাবার কথা ভেবে মাথা থেকে বের করে দেয় সবকিছু।
*
তিনটি দিন পার হয়ে গেছে। ভার্সিটি যেতে আর ইচ্ছে করে না তুষারের। বন্ধুদের ফোন অগ্রাহ্য করে। আর ছয়টা মাস পরই ভার্সিটি-জীবন শেষ ওর। এর পরই মা বিয়ের কথা টানবেন।
আজকাল ঘুরে ফিরে শুধু তৃণার মুখটাই ভেসে ওঠে তুষারের মনে। আসলেই কি ও মেয়েটাকে দেখতে পারতো না?
একটা কথা ঠিক – তিক্ত একটা অনুভূতি প্রথম প্রথম ওর ভেতর কাজ করছিল যখন ওকে প্রথম দেখে। আলফা মেল সিনড্রোম। গ্রুপে তার জায়গা অন্য কেউ কেড়ে নিয়েছে – এটা তার জন্য ঈর্ষার কারণ হয়েছে। ধরে নিয়েছে, বন্ধুদের সাথে দূরত্ব সৃষ্টি হবার জন্য তৃণাই দায়ী। যদিও মেয়েটার দোষ আসলে ছিল না। অথচ – এর ওপর ভিত্তি করেই অসংখ্যবার ওকে অপমান করে তৃতীয় কাওকে কিছু বলেছে তৃণার সম্পর্কে, তৃণার সামনেই। মেয়েটার হাসিখুশি মুখ অনুজ্জ্বল হয়ে যেতে দেখে ভেতরে ভেতরে তৃপ্তি পেয়েছে।
আজ প্রথম যেন উপলব্ধি করল – তৃণাকে ও ঘৃণা করত না – মেয়েটাকে ওর ভালই লাগত। শুধুই ভালো লাগত? গত তিনদিনের প্রতিটি সেকেন্ড কেন তাহলে তৃণা ওর মাথায় ঘুরে বেড়াচ্ছে। বুঝল তুষার – আর লুকিয়ে লাভ নেই – এই কয় মাসে তৃণার প্রতি কখন ওর তীব্র একটা ভালোবাসা জন্ম নিয়েছে – ও জানে না।
জানতেও চায় না ও। আজ মনে হচ্ছে – শুধুই একটা ছেলেমানুষী সিদ্ধান্তের জন্য ওর জীবন পালটে ফেলার কোন ভালো কারণ নেই। কেন ওকে বিয়ে করতে হবে সেই মেয়েকে – যার কথা ওর মনেই নেই ঠিকমত?
সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে তুষার। তৃণার মোবাইল নাম্বার ওর কাছে নেই। চাওয়া হয়নি কখনো। ফেসবুকেই ফোন-টেক্সট করা যায় এ যুগে, ফোন নম্বর সবারটা সংগ্রহ করার প্রয়োজন পড়ে না। অথচ ফেসবুকে ফোন দিয়ে তাকে আজ পাওয়া গেল না।
এখন ভার্সিটিতে ওদের থাকার কথা। পোশাক পরে বাইরে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হয় তুষার। ঠিক এই সময় মা ঘরে ঢোকে।
‘আরিফুজ্জামান ভাই তার মেয়েকে নিয়ে এসেছেন। বিয়ের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে চান উনারা।’
‘খ্যাতা পুড়ি!’ মনে মনে বলে তুষার।
মুখের অবস্থা দেখেই মনের কথা পড়ে ফেলেন মা, ‘ছেলেমানুষী সিদ্ধান্ত নিয়ে উনি সচেতন। তোদের মতামত জানতে চান কেবল। মুখদর্শনের ব্যাপার শুধু – বাবা। এরকম মুখ কালো করিস নে।’
*
ছেলে-মেয়েকে নিজেদের মধ্যে কথা বলার সুযোগ দিয়ে হাওয়া হয়ে গেলেন অভিভাবকদ্বয়।
‘তৃণা!’ আনন্দের সাথেই অবাক হয় তুষার। ‘তুমি আমাকে আগে বলনি কেন?’
‘আজ তোমাকে অন্য কিছু বলতে এসেছি তুষার।’ বিষন্ন গলায় বলে তৃণা, ‘তুমি এখন আমাকে জীবনসঙ্গী করতে রাজি, তাই না?’
‘সানন্দে! তৃণা তুমি জানো না একয়দিন আমার -’
তুষারকে বাক্য শেষ করতে দেয় না তৃণা। ‘আমার জন্য কোন অনুভূতি নেই তোমার তুষার। তোমাকে আমি কিভাবে বিয়ে করি বল? তুমি কেবলই রাজি হচ্ছ তোমার বাবার শেষ ইচ্ছে পূরণের লক্ষ্যে। এমনটা হবে আমি জানতাম। সেজন্যই আমার ভার্সিটি মাইগ্রেট করে তোমার কাছে আসি আমি। ছেলেবেলা থেকেই তোমাকে হাজব্যান্ডের জায়গা দিয়ে এসেছি। আমি জানতাম বাবা-মার ইচ্ছের কথা। সেখান থেকে কখন যে তোমাকে ভালোবেসে ফেলি! অল্পবয়েসী মেয়েদের মাথায় কখনো ঢোকাতে নেই যে ওই যে ও তোর স্বামী! কিন্তু আমি তো জানি তোমার মধ্যে কখনও আমার প্রতি কিছুই ছিল না। তোমার ভার্সিটিতে তোমার কাছে এসে চেয়েছিলাম নিজের স্থানটা করে নিতে। কিন্তু হল কই?’ চোখ মোছে তৃণা। ‘শেষ পর্যন্ত তুমি সেই প্রতিজ্ঞাকেই বিয়ে করতে যাচ্ছ। আমাকে না।’
‘তুমি সব না শুনে এসব ধারণা করতে পার না, তৃণা ’ তৃণার দিকে সরাসরি তাকায় তুষার, ‘গত তিনদিন আমি খুব ভালোভাবেই ভেবছি আমাদের ব্যাপারে। আমার মনে হয়েছে – বিয়ের ব্যাপারটা একটা প্রতিজ্ঞার মাধ্যমে ঠিক করে ফেলার মত বড় ভুল আর কিছুই হতে পারে না। আমি আজই তোমার কাছে যেতাম। আমার সিদ্ধান্ত তোমাকে যেতে। তৃণার কাছে যেতাম। প্রতিজ্ঞার কাছে না।’
‘মিথ্যে বলে আমাকে ভুলিও না, তুষার – প্লিজ।’ রীতিমত কাঁদছে তৃণা।
‘সত্য-মিথ্যা যাচাই-এর আগে – একটি বার কি তোমার ফেইসবুক অ্যাকাউন্টে ঢুকবে, তৃণা?’
মোবাইল বের করে ফেসবুকে ঢোকে তৃণা। একটি নতুন মেসেজ।
‘মাসের পর মাস নিজের সাথে লুকোচুরি খেলে আমি ক্লান্ত। আমার ভবিষ্যতও যে তোমার হাতে বাঁধা। সিদ্ধান্ত আমার – বলেছিলে তুমি। আমি তোমার হতে চাই। উইল ইউ ম্যারি মি?’
তুষারের বুকে ঝাঁপিয়ে পড়ে অঝোরে কাঁদে তৃণা। তবে এ কান্না স্বস্তির – আনন্দের।
রচনাকাল : নভেম্বর ২৭, ২০১৩
আরও পড়ুন –