গরু Posted on November 25, 2013June 20, 2022 গরু ম্যানেজ হয়নি। খবর পেতেই আর বিন্দু মাত্র দেরী না করে আনন্দস্পটে চলে আসলাম। সেখানে যুবরাজ সিং-এর মত করে নাকটা আকাশের দিকে তুলে দাঁড়িয়ে ছিল ফারহান। মনটা চাইল নাকের ওপর একটা বিরাশি ছক্কার ঘুষি বসিয়ে ফারহানটাকে চ্যাপ্টা করে ফেলতে। কিন্তু আজকের এই বিশেষ আনন্দের দিনটা নষ্ট করতে চাইলাম না। ‘ফান্ডের টাকা দিয়ে গ্যালাক্সি এস-ফোর কে কিনেছিল চাঁদ?’ মনে মনেই হুঙ্কার ছাড়লাম। তবে এখন আত্মকলহের সময় নয়। সামনে ঘোরতর সমস্যা। একেবারে ইজ্জাত কি সাওয়াল! দেখলাম কসাইও প্রস্তুত। আট দশেক রকমের ছুড়ির মাথা ধারালো করছে কসাই মামা আর তার অ্যাসিস্ট্যান্টদ্বয়। আস্ত গরু জবাই করে প্রেমসে খাওয়া-দাওয়ার আমেজটা নষ্ট হয়ে গেল দিনের শুরুতেই! আজ আমাদের ক্লাবের বর্ষপূর্তি। জিনিসটা শুরু হয়েছিল ঠিক এক বছর আগে। ⚝ রাজশাহী জুড়ে রাস্তার পাশে আড্ডা দিতে দিতে ক্লান্ত তখন আমরা সবাই। ‘দেশ রসাতলে গেল!’ বিজ্ঞের মত বলে উঠেছিল কাফি। ‘বলে যা… বলে যা… ’ টিটকিরির সুরে তাল মিলিয়েছিল ফারহান। ‘সবার অভিযোগ দেশ রসাতলে গেল। কিন্তু এক পা আগানোর বেলায় সব অকর্মার ঢেঁকি।’ ‘ছেড়ে দে।’ মধ্যস্থতায় আসতেই হল আমাকে, ‘ছেলেমানুষ। কি বলতে গিয়ে কি বলে ফেলেছে!’ ‘ছেলেমানুষ!’ হুংকার দিয়ে উঠল কাফি, ‘এই বছরেই সবাই তো রীতিমত আঠারোয় পা দিয়েছিস! তবুও ছেলেমানুষ?’ ‘তো কি হয়েছে?’ পাশ থেকে মিনমিন করে বলল রাইয়ান, ‘মেয়েমানুষ তো বলেনি।’ ‘তোদের জন্যই দেশের আজ এই দশা।’ দেশমাতৃকার প্রেমে বিগলিত তখন কাফি, ‘আজ এই টগবগে তরুণদের রক্ত যদি শীতল না হত – বয়লারের মুরগি খেতে খেতে যদি এরা মুরগি না হত – তবেই বুঝত এরা – এই দেশের জন্য তাদেরও দায়িত্ব আছে বৈকি! যুবসমাজ – এই মুহূর্ত থেকে দেশসেবায় নিয়োজিত হও। আহ্বান জানালাম উদারচিত্তে।’ ‘উদরপূর্তির পরে এ নিয়ে আলোচনা করলে আমাদের মাথা খুলবে ভালো।’ একমত হয়ে গেলাম নিমেষেই। ‘ওই যে একটা চটপটির দোকান।’ ‘হ্যাঁ, ওইটা একটা চটপটির দোকান।’ সায় জানাল কাফি। ‘সে তো আমিও দেখতে পাচ্ছি। কিন্তু খাওয়াচ্ছেটা কে, শুনি?’ ‘নির্ঘাত তুই।’ সমঝোতা করে দিল ফারহান, ‘উদারচিত্তে এবার চটপটির দোকানের দিকে হাঁটা দাও বাছা।’ দোকান থেকে আধ ঘন্টা পর যখন আমরা চলে যাচ্ছি কাফির পকেটের দীর্ঘশ্বাস এতদূরে থেকেও স্পষ্ট শুনতে পেলাম বলে মনে হল। ওর উদার মন রাতারাতি সংকীর্ণ হয়ে গিয়ে দেশসেবার ভূত বেড়িয়ে যাবে বলেই ভেবেছিলাম। ⚝ কিন্তু না। দমে যাওয়ার ছেলেই সে নয়। রীতিমত একটা ঘর ভাড়া নিয়ে খুলে ফেলল মিরবাগ সমাজসেবী যুবসংঘ। আর আমাদের সেখানে চাঁদা দিয়ে মেম্বার হতেই হল। ভেবেছিলেম পাড়ায় রীতিমত টিটকিরি পরে যাবে এই নিয়ে। কে বলেছে ‘মানুষ ভাবে এক – আর হয় আর এক?’ সেদিন স্বঘোষিত ইতিহাসবেত্তা জহির চাচাকে দেখে বেশ লম্বা একটা সালাম ঠুকে দিতেই একগাল হাসলেন তিনি। ‘আরে ইমন যে!’ একপাশে পানের পিক ফেলে আবারও তরমুজের বিচির প্রদর্শনী মেলে দিলেন তিনি। ‘সমাজসেবা কেমন হচ্ছে?’ ‘ভালই চলছে চাচা।’ মুখ রক্ষার খাতিরে বলতেই হল। হচ্ছে তো ঘোড়ার ডিম। কাফি রোজ এক থেকে দেড় ডজন করে আইডিয়া বের করে কি করলে আজ জাতির মুক্তি হবে। কিন্তু কাজের বেলায় ঠনঠন। হবেই বা না কেন? কর্মসূচীর বেশির ভাগই অনন্ত জলীলের কাজ। যেমন : একটি কর্মসূচি হল পার্লামেন্টের সামনে আমরণ অনশনে নামা। যতদিন গার্মেন্টস শ্রমিকদের মর্যাদাপূর্ণ বেতন দেওয়ার অঙ্গীকার না করা হবে ততদিনের জন্য আহার-পানীয় নিষিদ্ধ। এদিকে বাহিনীতে আমরা পাঁচ জন। বলিহারী যেতেই হল। ‘সে তো বুঝতেই পারছি বাছা।’ আনন্দে মাথা দোলালেন জহির চাচা। ‘যতই দিন যাচ্ছে তোমার চেহারাগুলো চেঙ্গিস খানের মত হচ্ছে। চেন তো? ইতিহাস বিখ্যাত সমাজসেবক। ইতিহাস পড়বে, বুঝেছ? অনেক কিছু জানার আছে। শেখার আছে।’ চেঙ্গিস খান আর সমাজসেবা! আমাদের ক্লাবের প্রতি সমাজের ধারণায় কোনদিক থেকেই উৎফুল্ল হতে পারলাম না। তবে কাফির একটা প্ল্যান অন্তত হিট! ‘সুস্বাস্থ্য এবং সুন্দর মনের জন্য চাই খেলাধুলো এবং ব্যায়াম।’ একদিন এই অভিনব সমীকরণ আসে ওর মাথায়। ক্লাবে ক্যারাম বোর্ড, কার্ড জোন আর জিম সংযোজন করতেই হুড়হুড় করে পাড়ার ছেলেপিলের আগমন ঘটতে থাকল এবং তাদের পকেট থেকে চাঁদার টাকাও বের হতে থাকল বৈকি! মেম্বারশিপ ছাড়া কাওকেই ক্লাবের অন্তর্ভুক্ত করা সম্ভব নয় এবং মেম্বারশিপ মানেই মাসিক চাঁদার অব্যাহত ধারা – সুস্পষ্ট কথা কাফির। তরুণ সমাজের মাঝে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেল আমাদের ক্লাব। সমাজসেবা বলে কথা! তবে সমাজে নিন্দুক থাকবেই। ‘পাড়ার ছেলেপুলেগুলো নষ্ট হয়ে যাচ্ছে’ আমাকে শুনিয়েই চায়ের দোকানে দোকানদারের সাথে আলাপ জুড়ে দিলেন জহির চাচা, ‘তায় আবার নেপোলিয়ন আর চেঙ্গিস এক হয়েছে! সারাদিন আমার পল্টুটা ক্লাবে গিয়ে পড়ে থাকে। দিন দিন ব্যায়াম করে করে গুন্ডা হচ্ছে!’ এরপর আর বসা চলে না। দাঁত কিড়মিড় করতে করতে উঠে পড়লাম। ‘চেঙ্গিস আর নেপোলিয়ন? গুন্ডা হচ্ছে? নাহয় পাড়ার ছেলেগুলো এখন চিত্তাকর্ষতা ধাপে আছে – তাতেই নিন্দুক এতবড় অপবাদ রটালো?’ চোখমুখ লাল করে বলল কাফি, ‘দ্বিতীয় আনন্দমেলা ধাপের পরই তো আমরা সমাজসেবার জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুত হয়ে যাব সে কি তারা বোঝে না!’ ফারহান একটা করে সবাইকে আইসক্রীম কিনে খাইয়ে পরিবেশ ঠান্ডা করল – অবশ্যই মেম্বারের চাঁদার টাকায়। সমাজসেবীদের মাথা ঠান্ডা রাখতে হয় বৈকি! ⚝ বন্যার বেগে মেম্বারদের সংখ্যা বাড়তে থাকল। ততদিনে মেম্বারদের জন্য অন্য যেকোন জায়গা থেকে হাফ-চার্জে একটা সাইবার ক্যাফেও খোলা হয়েছে কি না! পাড়ার সীমা লংঘন করে আশেপাশের এলাকার ছেলেছোকড়ারাও দিব্যি জুটে গেল মিরবাগ সমাজসেবী যুবসংঘে। আমাদের বিস্মিত করে দিয়ে আট মাসেই একশ ছাড়িয়ে গেল মেম্বারদের সংখ্যা! ততদিনে এক বছরও হয়ে গেছে প্রায়। এক বছর পূর্তির জন্য একটা ছোটখাট ভোজের ব্যবস্থা করা আমাদের নীতিগত দায়িত্ব মনে করলাম। রীতিমত হই-হুল্লোড় কারবার করতেই হবে। গরু থেকে মুরগি সবই স্পট ডেড বানিয়ে রান্না হবে। মানে ঘটনাস্থলেই জবেহ। সবই ঠিক ছিল। ফান্ডের টাকা কোথায় যায়? এই নিয়ে মেম্বারদের মনের চাপা অসন্তোষও ঘুঁচিয়ে দেওয়া যেত এই সুযোগে। ফান্ড উলটে পালটে দেখা গেল ভালোই আছে। অনুষ্ঠানটা করা যাবে। তাক লেগে যাবে এবার এলাকার মুরুব্বিদের। দাওয়াত সবাইকেই করা হবে বৈকি। ফারহান ছিল তখন ঢাকায়। প্ল্যান সামলে আমরা সবাই দুইদিনের ছুটি নিলাম। সামনে বড় প্ল্যান-প্রোগ্রামের ব্যাপার-স্যাপার আছে। ব্যস্ততম এক বছর শেষে অবশ্যই আমাদের দেহ ছুটির দাবীদার। ফারহানকে ফোনে জানানো হল, ‘সারপ্রাইজিং খবর আছে।’ ওপাশ থেকে সেও গর্বের সাথেই জানাল ‘আমার কাছেও একই জিনিস আছে।’ প্রত্যেকেই নতুন কিছু করার আনন্দে তখন উৎফুল্ল। ⚝ পরবর্তী কার্যদিবসে উপস্থিত হয়েই রাইয়ান জানাল, টাকা গন। আমরা সবাই বর্জ্রাহত হতেই ফারহান হাস্যোজ্জ্বল মুখে জানাল , ‘নট গন। ইনভেস্টেড। ’ টেবিলের ওপর একটা গ্যালাক্সি এস-ফোর রেখে বলল, ‘আমাদের ক্লাবের জন্য একটা মোবাইলফোন দরকার ছিল। বার বার সিম খুলে চিমটিয়ে আর কতদিন?’ সবসময় মাথা গরম কাফির হাত চলে গেল হোলস্টারে। পিস্তলটা বের করেই ম্যাগাজিন খালি করে দিল ও ফারহানের বুকে। অবশ্য কল্পনাতেই। মেজাজ খারাপ হলেই হোলস্টারে হাত দেয়ার মত একটা মুভ দিলেও সেখানে তার কোনকালেই হোলস্টার ছিল না। ‘ওহে শ্যালক!’ মধুর সম্বোধন করল রাইয়ান। ‘আমাদের প্ল্যান ছিল আরেকটা।’ পুরো প্ল্যান খুলে বলা হল ওকে। রীতিমত ঠোঁট বাঁকিয়ে আমির খান মার্কা গলায় ফারহান তার মূল্যবান মন্তব্য জানাল, ‘ইগনার কার। ইগনার কার!’ ‘সম্ভব না শ্যালিকার স্বামিপ্রবর!’ পুনরায় মধুর ভাষা প্রয়োগ করল রাইয়ান। ‘সবাইকে গত অধিবেশনেই নিমন্ত্রণ করে দেওয়া হয়েছে।’ ‘হেহ – ফোনের পেছনে মাত্র ষাট হাজার তো গেছে! ফান্ডে আরও আছে না? সমস্যা কী? বল দেখিনি কী বাদ যাচ্ছে খাবারের আইটেম থেকে তাহলে?’ ‘গরু!’ একযোগে হাঁক ছাড়লাম আমরা ক্ষোভে। ‘চিল, ম্যান।’ আকাশে ইদানিং চিল না থাকলেও আমাদের ম্যানদের এই কথা বলেই থাকে ফারহান। ‘গরু আমি ম্যানেজ করব।’ তবে গরু বেশ ভালোভাবেই ম্যানেজ হয়েছে দেখলাম। গরুর বাজেটের সাথে সাথে আমাদের ইজ্জতও ‘গন’। যুবরাজ সিং-এর মতই, যার ভাব দেখলে নাক-মুখ সমান করার অভিপ্রায় জেগেই থাকে – সানগ্লাস চোখে নাক আকাশের দিকে দিয়ে এখন সামনেই ফারহান। ‘কাফি জানে?’ ভয়ে ভয়ে জানতে চাইলাম। ‘হুঁ!’ এক কথায় জবাব দিল ফারহান। ‘তোর ভূত ছুটায়নি গালি দিয়ে?’ ‘না’ আবারও এককথায়। যেন ল্যাবের কুইজ দিচ্ছে। না-বাচক উত্তর দিলেও কুইজ কুইজ ভাব দেখেই যা বোঝার বুঝে ফেললাম। চারপাশে তাকালাম। মেম্বারদের ছড়াছড়ি সবখানেই। পরিস্থিতি মাথা কাটার মত হওয়ার আগেই কেটে পড়তে হবে এখান থেকে। সোজা নানার বাড়ি। কসাই মামা এখনও ছুরি ধার দিচ্ছে। গরুর লোভে অনেকেই এসেছে আজ এখানে। মেম্বারশিপের চাঁদার একটা গতি হল ভেবেই তারা খুশি। আর আজ যদি গরু না পায় তবে ওই ছুরির ব্যবহার কোথায় হতে পারে অনুমান করে হনুমান হয়ে গেলাম। আফটার অল, জিম করে করে এদের গুন্ডাসদৃশ বডি-বিল্ডিং-এর পথ আমরাই দেখিয়েছি বৈকি। এই প্রথমবারের মত জহির চাচার কথা সত্য বলে মনে হচ্ছিল একটু একটু। ভাবনার ছেদ কেটে গেল কারও হুংকারে– ‘আরে ধর! ধর! কাট! কেটে ফেল!’ এবং সেই সাথে ঘোড়ার খুরের টগবগানি। তাজ্জব কান্ড! এখানে ঘোড়া আসবে কোত্থেকে! আমাদের চিটিং বাজি তাহলে মেম্বাররা টের পেয়ে গেলই শেষ পর্যন্ত? একেবারে ঘোড়সওয়ার হয়ে আমাদের কাটতে এসেছে নিশ্চয়? ⚝ লেজ উড়িয়ে – শিং নাড়িয়ে ছুটে আসা গরুটাকে দেখেই আমার ভুল ভেঙ্গে চুরমার হয়ে গেল। মুহুর্তের জন্য জনতা থমকে গেলেও একযোগে সবাই ঝাঁপিয়ে পড়ল গরুর ‘পোলার’ ওপর। গরু নিমেষেই ধরাশায়ী। কসাই আর তার অ্যাসিস্টেন্টদ্বয় এতক্ষণে হাত চালানোর সুযোগ পেয়ে আর দেরী করল না। কেবল আমারই একটু খটকা লাগল, কাফির পাশে দিয়ে বিড় বিড় করে বললাম, ‘গরুটা অনেকটা জহির চাচার কালো গাইটার মত না?’ আগুন চোখ নিয়ে কাফির হুংকার, ‘আরে কাটলে সব এক! কাট! কাট! থমকে গেলি ক্যান তোরা? আল্লাহু আকবর!’ সেটাই! ভাবলাম। চেঙ্গিস খান আর নেপোলিয়ন? দাঁড়াও তোমাকে ইতিহাসের প্রায়োগিক শিক্ষা দিচ্ছি। চেঙ্গিসের স্বভাব কেমন ছিল জেনে নাও … হুঁ হুঁ! ⚝ সেদিনই সন্ধ্যা। মেম্বাররা সব তৃপ্ত ও সন্তুষ্ট হয়ে ফিরে গেছে বাসায়। আমরা পাঁচজনই কেবল অফিসে। ‘গরু ম্যানেজ করলি কি করে?’ চোখ আকাশে তুলে জানতে চাইল রাইয়ান। ‘রাস্তার পাশে হেঁটে বেড়াচ্ছিল। দেখেই প্ল্যানটা মাথায় আসে। বাইরের পাড়ার দুই চারজন মেম্বারের কাছে ছড়িয়ে দিলাম গরু গেছে ছুটে। ত্রিমুখী ধাওয়া দিয়ে বাকিটুকু করা তো সহজ। ’ ‘বাবারা ব্যস্ত? ’ ভূত দেখার মত চমকে দেখলাম স্বয়ং জহির চাচা উপস্থিত! নির্ঘাত বুঝে নিয়েছে! পকেট থেকে ফোন বের করে অযথায় রিসিভ করার ভান করে চেঁচিয়ে উঠল রাইয়ান, ‘কি বললা? ভাইয়া অ্যাকসিডেন্ট করেছে? আমি এক্ষুণি আসছি। ’ অতঃপর ঝড়ের বেগে প্রস্থান। ‘আমি একটু বাথরুমে…’ বাক্য শেষ না করেই হাওয়া ফারহানও। দুই গোবেচারা বান্দা আমি আর কাফি তখন। ‘বসুন। বসুন!’ হঠাতই ব্যগ্র হয়ে উঠলাম আমরা। ‘ইয়ে…’ করুণ কন্ঠে শুরু করলেন জহির চাচা। ‘সমাজসেবার নামে খাওয়া দাওয়া ফূর্তি করে তোমাদের হাড়ে মরচে পড়ে গেছে বুঝতে পারছি। তাই আমার গরুর…’ ‘আমরা দাম দিয়ে দেব!’ হড়বড় করে বললাম আমরা। ‘কি হল তোমাদের?’ ভুরু কুঁচকালেন চাচা, ‘বলছিলেম আমার গরু আজ রাতে বাসায় ফেরেনি। তোমরা কি একটু কষ্ট করে খুঁজে দেখবে? কিসের দাম দিতে চাচ্ছিলে তোমরা?’ ‘না চাচা , মানে সমাজসেবা -’ আমতা আমতা করলাম আমি। ‘- সমাজসেবার নামে খাওয়া দাওয়ার মূল্য আমরা শোধ দেব আপনার উপকারে এসে।’ বাক্য সম্পূর্ণ করে দিল কাফি। ‘চল বেরোই…’ আমাকে টান দিল ও। ‘আপনি চিন্তা করবেন না চাচা। গরু আশেপাশেই আছে হয়ত।’ অমায়িক হাসি দিলেন জহির চাচা। আর আমার পেট রীতিমত গুড়গুড় করে উঠল। আশে পাশেই বৈকি! আমার আর কাফির পেটেই আছে বেশ একটা অংশ। আর ছড়িয়ে ছিটিয়ে এই দুই কিলোমিটারের মধ্যেই বাসায় বাসায় তরুণসমাজের পেটে আছে বাকি গরু। ‘ইয়ে চাচা?’ ডাক না দিয়ে পারলাম না , ‘আপনার তথ্যে একটা ভুল ছিল।’ ‘কি ভুল বাবা?’ ‘চেঙ্গিস খান ইতিহাসের পাতায় অমর বটে। তবে নৃশংসতার জন্য। সমাজসেবার জন্য নয়।’ জহির চাচার মুখটা কেমন জানি ফ্যাকাসে হয়ে গেল। এর দুই মাসের মধ্যেই রীতিমত ব্যস্ততার সাথেই তুলে ফেলা হল গর্বিত মিরবাগ সমাজসেবী যুবসংঘকে। শানে নুযূল : রাজশাহীতে আনন্দের সাথে ঘুরে বেড়ায় বেশ কিছু গরু। রাস্তায় রাস্তায় হাঁটে এরা দুলকি চালে। মামার সাথে অটোয় যেতে যেতে মনে হল – এদের সেফটি বলতে কিছু কি আছে? উত্তরটা সহজ – না। চাইলেই খেয়ে ফেলা যায়। শুধু ধরো আর জবাই করো। কাটার পর সব এক। সেখান থেকেই কল্পনাপ্রসূত এই কাহিনীর জন্ম। রচনাকাল : ২৫শে নভেম্বর, ২০১৩। এই গল্পটা অনলাইনে পাবলিশড প্রথম কোনও ছোটগল্প। বলা যায় এই লেখাটার মাধ্যমেই নিজেকে প্রকাশ করা শুরু আমার। নভেম্বরে টেনিদা রিভাইজ দিয়েছিলাম। রচনায় নারায়ণদার প্রভাব সুস্পষ্ট। এটা স্বীকার করতে কোনও কার্পণ্য নেই আমার। তাই ফুটনোট যোগ করা হলো। – লেখক গল্প রম্য
ধাওয়া Posted on April 4, 2014June 20, 2022 “কই, ডাক?” মনে করিয়ে দিলো তারেক। এখনও ফিসফিস করে কথা বলছে। “কিডন্যাপাররা যদি এখানেই থাকে?” হাঁসের মতো গলায় পাল্টা জবাব দিলো মাসুদ। “নাই মনে হচ্ছে। ডেকে ফেল।” “আউজু শরীফটা পড়ে নেই আগে?” ঢোক গিলে জানতে চাইলো মাসুদ। Read More
মানুষ জিতবেই Posted on July 15, 2018July 21, 2022 ভারতের আদালত থেকে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে, জানেন তো? প্রকাশ্যে একটা ছেলে একটা মেয়েকে জড়িয়ে ধরতে পারবে – সেই ঘোষণা। এটা কোনও অপরাধ নয়। রাষ্ট্র এখানে হস্তক্ষেপ করতে পারবে না। অন্য নাগরিকরাও নয়। আমরা যদি আগামিকাল ঠিকমতো আন্দোলনটা করতে পারি, এমন একটা ঘোষণা বাংলাদেশেও হবে। Read More
আর কিছু বলবে? Posted on February 19, 2023 ‘আর কিছু বলবে?’ হাতঘড়ি দেখে জানতে চায় ইভা। মাথা নাড়লাম আমি। মেয়েটার একটা ডায়েরী আমার কাছে ছিল। ওটা দিতে এসেছি। আর কিছু বলার থাকে কিভাবে? ভাষা জিনিসটাকেই কেউ কেড়ে দিয়েছে আমার। কই? ইভা তো আজ আমার চোখ দেখেই সব বুঝে ফেলল না! কয়েক বছর আগের কথা মনে পড়ে যায়। Read More