Skip to content
KP Imon
KP Imon

Words Crafted

  • গুহামুখ
  • সূচিপত্র
  • গল্প
    • রম্য
    • জীবনধর্মী থৃলার
    • সাইকোলজিক্যাল
    • রোমান্টিক
    • ক্রাইম
    • সাসপেন্স
    • জীবনধর্মী
  • নন-ফিকশন
    • থট প্রসেস
    • উচ্চশিক্ষা
    • আমেরিকা-নামা
    • জীবনোন্নয়ন
    • তাত্ত্বিক আলোচনা
    • ডায়েরি
  • প্রকাশিত বইসমূহ
    • প্রকাশিত বইসমূহ
    • যেসব গল্প সংকলনে আছে আমার গল্প
KP Imon
KP Imon

Words Crafted

ধাওয়া

Posted on April 4, 2014June 20, 2022

“কস কী!” একেবারে আঁতকে উঠলো মাসুদ, “এগারো ঘণ্টা পরেই জমা দিতে হবে, আর তুই বলতেসস এখনও রিপোর্টের কাজ ধরাই হয় নাই?”
যার উদ্দেশ্যে কথাটা বলা হলো তার মধ্যে কোন অনুভূতি দেখা গেল না। তারেক সরাসরি তাকিয়ে আছে রাস্তার অন্যপাশে। হাতের সিগারেট পুড়ে যাচ্ছে অবিরাম।
“হাওয়ার নাতি, তোমাকে একটা কিছু বলা হয়েছে।” মনে করিয়ে দেওয়ার ভঙ্গিতে বললো জাবেদ। হাতও বাড়িয়ে দিয়েছে সেই সাথে। “বিড়িটা না টানলে, টানার মতো আরও অনেক লোক আছে।”
মাথা নাড়লো তারেক, “রিপোর্টের কাজ করার দায়িত্ব আমার একার ছিলো এমন তো না। হুদাহুদি আমার সাথে ক্যাচাল করার মানে দেখি না।”
মুখ বাঁকালো মাসুদ, “বুঝতে পেরেছি। এখান থেকে গিয়ে সারারাত ধরে কাজ করা লাগবে।”
নাকের ভেতরে ভর ভর জাতীয় একটা শব্দ করলো জাবেদ।
আগামিকাল বর্তমান সেমিস্টারের রিপোর্ট জমা দেওয়ার কথা। মোতালেব স্যারের মতো কড়া কোর্স টিচার গত দুই বছরের বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে তারা দেখেনি। তার রিপোর্ট আগামীকাল জমা না দেওয়া হলে সেমিস্টারের রেজাল্টে ভাল রকম প্রভাব পড়বে সেটা জানা কথা। তাই বলে দলবদ্ধভাবে তারেককে দোষারোপ করার মতো অবস্থা মাসুদ না জাবেদের নেই। তারাও তারেকের গ্রুপমেট। অথচ গত সপ্তাহ ‘অত্যন্ত ব্যস্ত’ থাকার অজুহাতে তাদের কেউই রিপোর্টে হাত দেয়নি।
“পুরা সপ্তাহ রিফার সাথে ঘোরাঘুরি না করলে আজকে রাতেও আরামের ঘুম দিতে পারতি।” তারেক মনে করিয়ে দিলো। তারপর জাবেদের হতাশ চোখের সামনেই টেনে নিলো সিগারেটের ধোঁয়া।
“তা অবশ্য ঠিক।” অগত্যা একমত হতে হলো জাবেদকেও।
“তুমি বেশি কথা কম বলো।” খেঁকিয়ে উঠলো মাসুদ, “তোমারে যে ড্রইংগুলা করতে বলা হইছিলো তাও তো করো নাই। মারতেছিলা টাংকি।”
ধীরে সুস্থে উঠে দাঁড়ালো তারেক, “একে অন্যেরটা চুষে দিতে চাইলে মেসে ফিরে দিস। এখানে হাউকাউ না করে কাজ ভাগাভাগি করে নে। ড্রইংটা জাবেদই করবি। একটা ভুল থাকলে তোর কান-টান একটাও জায়গামতো থাকবে না বলে দিলাম।”
“অকা।” মন খারাপ করে উত্তর দিলো জাবেদ। তারপর শফিক মামার দিকে তাকিয়ে হাঁক ছাড়লো, “মামা, একটা বেনসন।”
“আর আমি স্ট্যাটিসটিকসগুলো সাজিয়ে ফেলবো। তুই লেখার কাজটা করে রাখিস।” চায়ের কাপে শেষ চুমুক দিতে দিতে বললো মাসুদ।
“তা করবো। আসলে লেখার কাজ আমার ফিফটি পার্সেন্ট শেষ। কুত্তার মতো খাটনি দিলে কালকে সকালের আগেই সবকিছু কমপ্লিট হয়ে যাবে।”
শফিক মামার দোকানটা ধোঁয়াচ্ছন্ন করে দিতে দিতে তারেকের চায়ের কাপটা ডাকাতি করে নিলো জাবেদ, “আজ রাতে ‘সাডেন হাইক’ সিরিয়ালটা দেখার ইচ্ছে ছিলো…”
দ্রুত হাত চালিয়ে তার সিগারেট নিয়ে নিলো মাসুদ, “এই কথাটা বলার অপরাধেই তোর সিগারেট বাজেয়াপ্ত করা হল। সিরিয়াল দেখবেন! এহ্! মেয়েমানুষের মতো স্বভাব হয়েছে এটার!”
আবারও অন্যমনস্ক হয়ে গেছে তারেক। রাস্তার অন্যপাশে তাকিয়ে আছে সে। অস্পষ্ট কোন এক শব্দ পেয়েছে বলে মনে হয়েছে তার। একটু আগে একবার পেয়েছিলো এমন। জাবেদের হাহাকারের অবশ্য ছুটে গেল সে ভাবনা।
“শালার শীতের রাতে একটা বিড়িও শান্তিমতো খাইতে দিলি না আমারে। বালামার।” গাঁক গাঁক করে বললো সে।
“চুপ থাক। কুকুরের মতো চিৎকার পাড়িস না।” এক হাত তুলে বললো তারেক।
মাসুদ কোন মন্তব্য করলো না। ফাঁকা মাঠে গোল দিয়ে যাচ্ছে সে। ফক ফক করে টেনে মি. বেনসনের কোম্পানি প্রোডাক্টের দফা রফা করে ফেলেছে।
সিগারেটে আরেকটা টান দিয়ে উঠে পড়লো তারেক। ধীরস্থির পায়ে এগিয়ে গেল রাস্তার অন্যপাশে পার্ক করে রাখা গাড়িটার দিকে। পেছনে পেছনে হাল্কা পায়ে এগিয়ে আসে জাবেদও। তারেক যে কিছু একটা সমস্যা টের পেয়েছে তা বুঝতে তার সমস্যা হয়নি।
“কিছু শুনেছিস?” ফিসফিস করে বললো সে, “ট্রাংকের ভেতরে কাওকে আটকে রাখেনি তো?”
“শসস…” আরেকবার তাকে থামিয়ে দিলো তারেক, “শুনতে দে।”
গাড়ির কাছে কান পেতে আছে ওরা, মাসুদকে দেখা গেল বেনসনের অবশিষ্টাংশ আঙুলে দুমড়ে ফেলতে ফেলতে তাদের দিকেই এগিয়ে আসছে।
“কি রে? ভূতে পাইলো নাকি তোদের দুটোকে?” হাঁক ছাড়তে ছাড়তে এগিয়ে এলো সে।
ঠোঁটের কাছে আঙুল তুলে তাকে সাবধান করে দিলো জাবেদ। তবে তার কোন দরকার ছিলো না।
ওদের ঠিক সামনের একতলা বাড়ির ভেতর থেকে অস্ফূট গোঙ্গানির শব্দটা এবার তাদের তিনজনের কারও কানই এড়ায়নি।
“হোয়াট দ্য ফাক!” সরলভঙ্গিতে নিজের বিস্ময় প্রকাশ করে ফেললো মাসুদ।
গোঙ্গানির কণ্ঠটা একজন নারীর।
১.
রাত এখন দশটা। আধঘণ্টা ধরে আলোচনা করেছে ওরা তিনজন। রিপোর্ট আর ভয়াবহ মোতালেব স্যারকে শিকেয় তুলে রেখেছে এখন। গোঙ্গানির শব্দ নিয়ে ওদের মনে এখন কোন সন্দেহ নেই। ওই সময় পাঁচ মিনিট মতো গোঙ্গানি অবিরত ছিলো। তারপর মৃদু খটাখট শব্দ শুনেছে। এরপর দশ মিনিট নীরবতা, তারপর আরও মিনিট পাঁচেকের মতো চাপা গোঙ্গানি।
“কিডন্যাপ কেস।” সরাসরি জানিয়ে দিয়েছিলো মাসুদ।
“খুব সম্ভব।” তারেক বলেছিলো, “তবে নিশ্চিত হওয়ার উপায় কি?”
একটু রেগে যায় অবশ্য জাবেদ, “নারীকণ্ঠের গোঙ্গানির শব্দ। আধঘণ্টাতে দুইবার। কিডন্যাপ কেস ছাড়া আর কি হবে?”
ঠোঁট উল্টালো তারেক, “নববিবাহিত দম্পতিও তো হতে পারে, তাই না?”
অকাট্য যুক্তি। এর ওপর আর কোন কথা হতে পারে না। কাজেই জাবেদকে পাহারা দেওয়ার জন্য পেছনের রাস্তাতে দাঁড় করিয়ে দেওয়া হয়েছে। একা একা শীতে কাঁপার জন্য সে দাঁড়াতে রাজি হতো না হয়তো। তবে গোটা ছয়েক বেনসন তার হাতে ধরিয়ে দেওয়ার পর রাজি হয়েছে।
প্রথমে সামনের দরজায় কয়েকবার নক করেছিলো ওরা। তবে খুলতে কেউ আসেনি। একটা টিনশেড বাড়ির ভেতরে নারীকণ্ঠের আর্তনাদ ভেসে আসা, আর তারপর ভেতরে কারও সাড়াশব্দ না পাওয়ার অর্থ আর যাই হোক, ভাল কিছু নয়। পেছনের দেওয়াল বেয়ে টিনশেডের ভেতরে ঢুকে পড়াই ওদের লক্ষ্য ছিলো তারপর। পুলিশে ফোন করার কথা জাবেদ বার কয়েক মিন মিন করে বলেছিলো। নাকচ করে দেওয়া হয়েছে সেটা। চাপা গলার গোঙ্গানির সাথে নববিবাহিত দম্পতির সমীকরণ মেলানোর পর পুলিশে ফোন করা যায় না।
এই মুহূর্তে টিনশেডের এক ইটের দেওয়ালে ব্যাঙের মতো বসে আছে ওরা দুইজন। তারেক আর মাসুদ। একে অন্যের দিকে তাকিয়ে নামার ইশারা করছে তারা। ইঙ্গিতটা সবারই চেনা। “আগে তুই-ই নাম?” প্রজাতির মধ্যে এটাকে ফেলা যেতে পারে।
মিনিট দুয়েক নীরব যুদ্ধের পর কাঁধ ঝাঁকিয়ে ভেতরে লাফ দিলো তারেক। পেছনে পেছনে দিব্যি নেমে এসেছে মাসুদ। সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে দুইপাশের দরজাগুলো দেখলো ওরা। চার দু’গুণে আটটা দরজা। অর্থাৎ এই টিনশেড একসময় আট পরিবারকে ভাড়া দেওয়া হতো।
এখন অবশ্য তাদের কেউ নেই এখানে। একেবারেই পরিত্যক্ত এক টিনশেড বাড়ি। এমনটা ওরা কখনও দেখেনি। তারেককে গুঁতো দিলো মাসুদ, “ডাক দিবো নাকি একটা?”
থুতনি চুলকালো তারেক, “ডাকা তো যায়। বিসমিল্লাহ পড়ে নে আগে।”
দুই সেকেন্ড নীরবতা।
“কই, ডাক?” মনে করিয়ে দিলো তারেক। এখনও ফিসফিস করে কথা বলছে।
“কিডন্যাপাররা যদি এখানেই থাকে?” হাঁসের মতো গলায় পাল্টা জবাব দিলো মাসুদ।
“নাই মনে হচ্ছে। ডেকে ফেল।”
“আউজু শরীফটা পড়ে নেই আগে?” ঢোক গিলে জানতে চাইলো মাসুদ।
পেছনে তাকিয়ে প্রাচীরটাকে অতিরিক্ত উঁচু মনে হতে থাকে ওদের। গলা খাকারি দেয় তারেক। ভেতরে অবৈধ অনুপ্রবেশ করে ফেলার পর ঘটনা না দেখে ফিরে যাওয়া উচিত হবে না।
এই সময় আরেকবার শব্দটা শোনা গেল। মাত্র তিন দরজা সামনে। হাতের ডানদিকে। রাস্তাতে দাঁড়িয়ে যেমনটা শুনেছিলো তেমন না। বেশ জোরেই চিৎকার করার চেষ্টা করছে কেউ। তবে পারছে না। মুখ বাঁধা আছে ভেতরের মানুষটার।
“কিডন্যাপারের মায়েরে বাপ।” বিড়বিড় করে বললো তারেক। তারপর গোটা ব্লকের মানুষের ঘুম হারাম করার মতো বর্জ্র্য নিনাদে বললো, “জয় বাংলা! লুঙ্গি সামলা।”
পরক্ষণেই এক লাথিতে ছুটে গেল দরজার কব্জা। হুড়মুড় করে ঢুকে পড়লো ওরা দুইজন।
গোঙ্গানির শব্দ বেড়েছে।
দরজার ভেতরে ঢুকেই হাতড়ে লাইটের সুইচ খুঁজছে মাসুদ। পেয়েও গেল।
চেপে দিতেই নরম আলোতে ভরে গেল ঘর।
মেঝের দিকে নজর পড়তেই আঁতকে উঠলো ওরা।
হাত-পা বেঁধে ঠাণ্ডা মেঝেতে ফেলে রাখা হয়েছে একজন মানুষকে।
“সো লং ফর মোতালেব স্যার’স ল্যাব!” হতাশ সুরে বললো মাসুদ।
২.
তরুণীর চুলগুলো আধ-কোঁকড়া। পাতলা ভ্রু। পটলচেরা চোখ। গোলাপি গাল কেঁদে কেটে ভিজিয়ে ফেলেছে একেবারে। এখন ফোঁত ফোঁত করে ফোঁপাচ্ছে মেঝেতে বসে। দুই হাঁটু এক করে বসে আছে। পিঠ ঠেকে গেছে দেওয়ালে। কতোটা আক্ষরিক হতে যাচ্ছে কথাটা, তা বোঝার জন্য আরও তথ্য দরকার ওদের।
“থ্যাংকস।” ফোঁতফোঁতানির মধ্যেই বললো সে।
“আপনি এখানে এলেন কি করে?” জানতে চাইলো মাসুদ।
তবে তারেক অন্য কিছু দেখতে পাচ্ছে। মেয়েটির শরীরের শীতকালের উপযোগী কোন পোশাক নেই। পাতলা একটা ফতুয়ার সঙ্গে নীল রঙের জিন্স। কাঁপাকাঁপি স্বাভাবিক। নিজের জ্যাকেটটা খুলে এগিয়ে দিলো সে, “আমরা বের হয়ে কথা বলতে পারি। এটা পরে ফেলুন।”
ভ্রু সামান্য কুঁচকে তার দিকে তাকালো বন্দিনী। তারপর হাত বাড়িয়ে জ্যাকেটটা নিলো। চোখের তারায় কৃতজ্ঞতা। ধীরে ধীরে উঠে দাঁড়ালো সে, তারপর তারেককে অনুসরণ করে বের হয়ে এলো ঘরটা থেকে। মাসুদ অবশ্য বের হওয়ার কথা শুনেই সামনের দরজা দেখে এসেছে। ফিরে এলো সে। তার কাছে নতুন খবর।
“ভেতর থেকে তালা মারা।” জানালো সে।
“কিন্তু ভেতরে তো আর কাওকে দেখলাম না…” প্রতিবাদ করতে যাচ্ছিলো তারেক, তাকে থামিয়ে দেয় মাসুদ।
“ফোকড় কাটা আছে। বাইরে থেকে হাত ভরে দিয়ে অনায়াসে তালা খুলে ফেলতে পারবে যে কেউ।”
“প্লিজ, আমাকে এখান থেকে বের হতে হবে।” প্রথমবারের মতো কথা বললো মেয়েটা, খুব সুললিত কোন কণ্ঠ না। ফ্যাঁসফ্যাঁস করছে। সন্ধ্যার পর থেকে ঠাণ্ডা মেঝেতে শুয়ে থাকার ফলাফল খুব সম্ভব। “আমাকে রেখে যাবেন না প্লিজ।”
তার দিকে ঘুরে তাকালো তারেক, “আপনাকে ফেলে যাওয়ার কথা আমরা ভাবছি না।”
দ্রুত একবার চারপাশের অবস্থা দেখে নিলো সে, “দেওয়াল টপকেই বের হতে হবে। ভয় পাবেন না, ওপাশে আমাদের বন্ধু অপেক্ষা করছে।”
সম্মতি দিয়ে মাথা দোলালো মাসুদ।
“আমি যে দেওয়াল বাইতে শিখিনি!” ককিয়ে উঠলো তরুণী। যেন এটা বিশ্ববিদ্যালয়ে ফোর ক্রেডিটের কোর্স করে শেখার বা শেখানোর জিনিস!
“শিখবেন আজ। এতো ব্যস্ততার কি আছে?” মুখ বাঁকিয়ে বললো তারেক। “মাসুদ, বসে পড় তো, তোর পিঠে করে উঠতে দে উনাকে।”
“হুঁ, আমাকে তো ঘোড়া মনে হয় তোর!” গজ গজ করে বললো মাসুদ।
“বসলি তুই?” গর গর করে উঠে তারেক।
“মরে গেলেও না। আমার পিঠ কোন টেবিল না। তুই বস। উনি তোর পিঠে পা দিয়ে দেওয়াল টপকাতে শিখুক। আমাকে হুকুম দিচ্ছিস কেন?”
দুইজনের মুখের দিকে অসহায়ের মতো তাকাতে থাকে বন্দিনী, যে কোন সময় আবারও কেঁদে দেবে হয়তো। গরম চোখে একে অন্যের দিকে তাকিয়ে আছে দুই উদ্ধারকর্তা। যে কোন মুহূর্তে একে অন্যের ওপর ঝাঁপিয়েই হয়তো পড়তো, পেছনে শোনা গেল চাবির ঝংকার।
গেটের ফোকড় দিয়ে একটা হাত ঢুকে গেছে, তালাতে লাগানোর চেষ্টা করছে চাবি, তারেক আর মাসুদ দুইজনই ঝটপট বসে পড়লো দেওয়ালের সামনে। দুটো ঘোড়া।
“উঠে পড়ুন। দেওয়ালে উঠে পড়ুন!” চাপা কণ্ঠে বললো একসাথে।
ওদের দুইজনের পিঠে দুই পা চাপিয়ে তরতর করে দেওয়ালের ওপর উঠে গেল তরুণী।
অন্যপাশ থেকে হাহাকারের শব্দ ভেসে আসলো। তারপর একাধিক মানুষের মাটিতে গড়াগড়ির শব্দ। অচেনা বন্দিনী নির্ঘাত ঝাঁপিয়ে পড়েছে জাবেদের পিঠের ওপর। কান পেতে ওই শব্দ শোনার মত অবস্থায় অবশ্য তারেক অথবা মাসুদ নেই।
পেছনের দরজার কাছে চাবির ঝুনঝুনানি থেমে গেছে একেবারে। তার বদলে ভেসে আসছে হুড়কো সরানোর শব্দ। এক মুহূর্ত পরেই দু’ দুটো ফ্ল্যাশলাইট জ্বলে উঠলো পেছন থেকে। সরাসরি এসে পড়লো তারেক আর মাসুদের ওপর। একে অন্যের দিকে দীর্ঘ এক মুহূর্ত তাকিয়ে থাকলো তারা।
“এরা আবার কারা?” পরিষ্কার বাংলাতে পেছন থেকে শব্দ তিনটা ভেসে আসতেই ওদের চটকা ভেঙ্গে যায়।
“দুই এক্কে দুই!” অস্বাভাবিক চিকণ আরেকটা কণ্ঠ পেছন থেকে আবৃত্তির সুরে বললো। পরমুহূর্তেই কাটা রাইফেলের ঠা-ঠা শব্দ।
ডারউইনের বহুল বিতর্কিত তত্ত্ব প্রমাণের প্রচেষ্টাতেই যেন তড়াক করে লাফ দিলো ওরা দুইজন। মুহূর্তখানেক পরেই দুই দু’গুণে চার পা প্রাচীরের ওপর উঠে গেল।
প্রাচীরের অন্যপাশে একাধিক মানুষের মাটিতে গড়াগড়ির শব্দ পেল হামলাকারীরা।
৩.
প্রাণপনে ছুটছে ওরা চারজন। একে অন্যের দিকে সেকেন্ডের ভগ্নাংশের জন্যও তাকাচ্ছে না। নাক বরাবর নজর তাদের। পায়ের সর্বশক্তি নিংড়ে দিয়ে ছুটছে তারা। পেছনে একাধিক মানুষের মাটিতে গড়াগড়ির শব্দ।
“অস্ত্রধারী ওই আসছে তেড়ে।” মোটা শরীর নিয়ে হাঁসফাঁস করতে করতে বললো জাবেদ।
“আজরাইল আজ নেবে মোরে।” তাল দিলো মাসুদ।
“স্টপ দিস ননসেন্স!” ধমক দিলো তারেক।
“হেল্প! হেল্প! লিফট, রাইড, ফ্রি কিস।”
দুই হাত মাথার ওপর তুলে মেইন রোড দিয়ে ছুটে চলা গাড়ির উদ্দেশ্যে বললো অদ্ভুত তরুণী। প্রথম চারটা শব্দ গাড়ির গতিপথে তেমন কোন ভূমিকা রাখতে না পারলেও শেষ দুটো কাজ উদ্ধার করে দিলো। ঘ্যাঁচ করে ব্রেক কষলো কালো টয়োটা। তারপর ব্যাক গিয়ার দিয়ে পিছিয়ে এলো।
“লিফট লাগবে?” হোৎকা চেহারার একজন মানুষ তার ভোঁতা নাকটা বের করে দিলো।
“গিফটের প্রসঙ্গ যখন আসছে না তখন…” বলতে বলতেই পেছনের দরজা খুলে উঠে পড়লো জাবেদ। তাকে ধাক্কা দিয়ে গাদাগাদি করে উঠে পড়লো মাসুদ আর তারেকও।
ড্রাইভার ততক্ষণে সামনের প্যাসেঞ্জারস ডোর খুলে দিয়েছে। নাকি গলাতে বললো, “গিফটের একটা অফারও শুনেছিলাম বটে।”
হোৎকার দৃষ্টি সরাসরি তরুণীর দিকে নিবদ্ধ।
ঝাঁপিয়ে পড়ে ভেতরে ঢুকে গেল সে, দরজা লাগাতে লাগাতে বললো, “সব হবে, সবই হবে… জাস্ট ড্রাইভ।”
আরাম করে হেলান দিলো ড্রাইভার। ড্রাইভ করার কোন ইচ্ছে তার মধ্যে দেখা যাচ্ছে না। বরং কোটের কাপড় সামান্য সরিয়ে দিয়ে ভেতরের এক চকচকে হোলস্টার দেখিয়ে দিলো।
“আমি একজন প্রাইভেট ডিটেকটিভ। রাত এগারোটার সময় আমি কেন চার অচেনা পাবলিক নিয়ে লিফট দেব বলতে পারো তোমরা? গিফটের প্রসঙ্গটা থাকলে ভেবে দেখার সম্ভাবনা থাকতো একটা।”
“বাংলাদেশ সরকার প্রাইভেট ডিটেকটিভ লাইসেন্স দেয় না।” গাঁ গাঁ করে বললো তারেক, “আপনাকে আমরা বিশ্বাস করলাম না।”
“বাংলাদেশ সরকার গত ফেব্রুয়ারী থেকেই লাইসেন্স দিচ্ছে। তোমরা হয়তো জানো না।” সবগুলো দাঁত বের করে দিয়ে বললো হোৎকা ডিটেকটিভ, “কই? তোমাদের লিফট দেওয়ার মতো কোন কারণ তো দেখছি না।”
কোঁকড়ামতো চুল মুখের ওপর থেকে সরিয়ে তার দিকে তাকালো তরুণী, চোখেমুখে বিরক্তির ছাপ। কিছু একটা বলার জন্য মুখ সামান্য খুলেছিলো, কিন্তু কষ্টটুকু তাকে করা লাগলো না।
পেছন থেকে কাটা রাইফেলের ঠা-ঠা গুলির শব্দ নতু উদ্যমে ভেসে আসলো।
“ওহ মাই ফাক!” হাহাকার করে গাড়ি স্টার্ট দিলো ডিটেকটিভ।
“না না, ব্যস্ত হওয়ার কিছু নেই।” অবশেষে বললো তারেক, “গিফটের আলোচনাটা সেরে নেওয়া যাক আগে, কি বলেন?”
ততক্ষণে অ্যাকসিলারেটরে পা পুরোপুরি দাবিয়ে দিয়েছে লোকটা। কার্বুরেটর তার কাজ যা করার করে ফেলেছে। সাঁই সাঁই করে ছুটে চললো গাড়ি।
“বাই দ্য ওয়ে,” মেয়েটি বললো, “আমার নাম লিনা।”
৪.
“কাম অন ইন!” হুঙ্কার ছাড়তে ছাড়তে গ্যারেজ থেকে বের হয়ে এলো ডিটেকটিভ দবির। পরিচয় পর্বটা সেরে ফেলেছে তারা ততক্ষণে। বুলেটের বেগে গাড়ি ছুটিয়ে লোকটা তাদের যে বিল্ডিংয়ে নিয়ে এসেছে, এতেই নাকি তার অফিস। ফোরথ ফ্লোরে।
“প্লিজ, হারি!” আরেকবার ওদের দিকে তাকিয়ে বললো দবির। মোটাসোটা শরীর নিয়ে হাস্যকর ভঙ্গিতে ছুটে যাচ্ছে লিফটের দিকে। তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে ছুটছে জাবেদও। কিছুক্ষণের মধ্যেই তাদের দুইজনকে ওভারটেক করে লিফটে ঢুকে পড়লো বাকি তিনজন।
“হাঁফ … হাঁফ … এবার বলেন, আপনাদের ঘটনা কি?” লিফটের দরজা লেগে যেতে হাঁফাতে হাঁফাতে বললো দবির, “আপনাদের ওরা কারা মারতে চাইছে? লিনা ম্যাডামকেই বা কিডন্যাপ করেছিলো কেন?”
কিডন্যাপের ঘটনাটা সামান্য বলা হয়েছে তাকে। তার বেশি কিছু নয়। তবে লিনার চোখ কপালে উঠে যাওয়ার পেছনে সেটা নয়, দবির ডিটেকটিভের অতিবিনয়।
দুই সেকেন্ডের মধ্যেই ব্যাপারটা বুঝে নিলো দবির, “গিফটের ব্যাপারে আমার মতামত পাল্টেছে কি না তা জানতে চাইছেন তো? আসলে আপনি আমার সম্ভাব্য ক্লায়েন্ট। আর ক্লায়েন্টের সঙ্গে প্রফেশনাল সম্পর্ক রক্ষা করাই আমাদের নিয়ম। নতুবা লাইসেন্স হারানোর একটা সম্ভাবনা থাকে।”
লিনার চোখ অবশ্য ভ্রুর নিচে নেমে আসে না, “সম্ভাব্য ক্লায়েন্ট?”
“অবশ্যই।” গম্ভীর একটা ভঙ্গি দেখা যাচ্ছে এখন তার মধ্যে। আগের মত সস্ত্রস্ত দেখাচ্ছে না আর। “আপনাকে অপহরণ করা হয়েছিলো। তারপর হত্যার প্রচেষ্টাও করা হয়েছে।”
একটা হাত তুললো তারেক, “এক্সিউজ মি, আমার মনে হয় আপনার ইনিশিয়াল গেসে ভুল হচ্ছে। এভাবে অংক করে গেলে গস-সাইডেল মেথডে ইকুয়েশন সলভ করতে গেলে সারা বছর লেগে যাবে আপনার। আমার মনে হয় হত্যার প্রচেষ্টা মিস লিনাকে করা হয়নি। ওটা আমাদের করা হয়েছে। আমাদের হত্যা করে মিস লিনাকে পুনরায় কিডন্যাপিত অবস্থাতে ফিরিয়ে নেওয়ার ইচ্ছে তাদের ছিলো বলেই মনে হলো আমার।”
“কিডন্যাপিত!” বিড়বিড় করে বললো মাসুদ।
“আপনি বলতে চাইছেন, ওরা আপনাদের হত্যা করার চেষ্টা করেছিলো?” একটা ভ্রু উঁচু করে বললো দবির।
“আমারও তেমনটাই মনে হয়।” জাবেদ বললো।
“দ্যাটস গুড।” একবার গম্ভীর মুখে মাথা দোলালো লোকটা, “থ্রি মোর ক্লায়েন্টস। দ্যাটস গুড ফর মি।”
একে অন্যের দিকে হতভম্ব হয়ে তাকালো ওরা তিনজন। তারপর অগত্যা মাথা দোলালো। রিপোর্ট লেখার প্ল্যান করার জন্য চায়ের দোকানে বসার সময় কে ভাবতে পেরেছিলো এমন একটা ফ্যাচাঙ্গে পড়ে যেতে হবে? এখন এই মুহূর্তে অভিজ্ঞ কারও সাহায্য ওদের দরকার হতেই পারে। পেশাদার কারও। তারেক এগিয়ে এলো সামনে।
“আপনাকে হায়ার করার আগে আমাদের জানতে হবে, এমন একটা পরিস্থিতিতে কেন আপনার ওপর ভরসা করবো আমরা? সরাসরি পুলিশের কাছে গিয়ে সাহায্য চাইতেই তো পারি, তাই না?”
“পুলিশ ফেলবে আপনার বালটা।” চটপটে উত্তর দিলো প্রাইভেট গোয়েন্দা।
“আ লেডি ইজ প্রেজেন্টেড হিয়ার।” কটমটে সতর্কতা জানালো জাবেদ।
“ল্যাঙ্গুয়েজ!” সায় দিলো মাসুদও।
“সরি।” হার মানলো দবির, “আসলে, পুলিশ আপনাদের স্টেটমেন্ট নিয়ে ডায়েরী করাবে। তারপর সেটাকে আন্দামান দ্বীপপুঞ্জে পাঠিয়ে দেবে। আপনাদের নাতিপোতারা হয়তো ওই কেসের উত্থান দেখে যেতে পারবে…” একটু কাশলো লোকটা, “মানে, যদি নাতি-পুতি জন্মানোর মতো ঘটনা ঘটানো পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারেন আপনারা।”
কথায় যুক্তি আছে বলে ওরা তিনজন মাথা দোলালো এমনটা না। ক্লায়েন্টে পরিণত হওয়ার সাথে সাথে ডিটেকটিভ দবির তাদের “তুমি” থেকে “আপনি”তে প্রমোশন দিয়েছে। এটা একটা মাথা দোলানোর মতোই সন্তুষ্টির ব্যাপার।
“আপনার কাজটা কোথা থেকে শুরু করতে চাইছেন তাহলে?” লিনা জানতে চাইলো।
“কাজটা? কাজ দুটো।” শুধরে দিলো গোয়েন্দা, “আপনার কিডন্যাপার আর উনাদের হত্যার প্রচেষ্টাকারীদের পরিচয় বের করার কেস। দুটো কেস।”
“বেশ, বেশ। কেসদুটো সলভ করতে আপনার প্ল্যান কি?”
“সিম্পল।” দেওয়ালের সঙ্গে লাগানো এক দেরাজের দিকে এগিয়ে গেল গোয়েন্দা, “প্রথম প্ল্যান এখান থেকে প্রাণটা নিয়ে বের হয়ে যাওয়া। তারপর দ্বিতীয় স্টেপ। আপনাদের স্টেটমেন্ট নেওয়া। মিস লিনার পারিবারিক পরিচয়টাও জানা দরকার আমার।”
“এক সেকেন্ড।” আমসি হয়ে গেল জাবেদের মুখ, “এখান থেকে প্রাণটা নিয়ে বের হয়ে যাওয়া? মানে আমরা এখনও সেফ না?”
“অবশ্যই না। অর্ধেকের বেশি রাস্তা ওরা আমাদের ফলো করেছে। তারপর তাদের দেখিনি অবশ্য। তার মানে এই না খসাতে পেরেছিলাম।” দেরাজ খুলে ফেলেছে ডিটেকটিভ, “আমার একজন সাইড কিক দরকার। এখানে অস্ত্র চালানোর মতো সাহস আছে কার?”
গোয়েন্দার ছুঁড়ে দেওয়ার এক্সট্রা পিস্তলটার দিকে সম্মোহিতের মতো তাকিয়ে থাকলো ওরা চারজন।
৫.
“এই বাড়াটা চালায় কিভাবে?” সংক্ষেপে জানতে চাইলো তারেক। পিস্তলটা ওর হাতেই। সঙ্গে তিনটা এক্সট্রা ম্যাগাজিন।
“ল্যাঙ্গুয়েজ!” সাবধান করে দিলো জাবেদ।
“ঘোড়া টিপে দেবেন। আর কিছু করার নেই।” বললো ডিটেকটিভ।
“টেপাটেপির প্রসঙ্গ বাদ দিয়ে আপনারা কি ঘর থেকে বের হবেন?” লিনা বললো, “এমনিতে দুই দিন ধরে কিছু খেতে পাইনি। আপনাদের সার্কাস দেখার মতো ধৈর্য্য আমার হচ্ছে না।”
“রাইট!” ওদের জন্য চারকপি কাগজ বের করে ধরিয়ে দিলো দবির, “আমার ইনিশিয়ালস অ্যান্ড চার্জ। আপনারা পড়ে নেবেন পরে। এখন এখান থেকে বের হওয়া যাক।”
সুড়সুড় করে হলওয়েতে বের হয়ে এলো ওরা। লিফটের সামনে মাত্র পৌঁছেছিলো ওরা, গ্যারেজের দিক থেকে চাকার কর্কশ শব্দ ভেসে এলো।
“শিট!” হতাশ হয়ে বললো দবির, “চলে এসেছে ওরা।”
“এবার কি?” ফ্যাকাসে হয়ে গেছে লিনার মুখটা।
“সিঁড়িঘর। কুইক। লিফটে ওঠা যাবে না।” মোটাসোটা মুখটা এখন সংকল্পবদ্ধ।
বিনাবাক্যব্যয়ে সেদিকে রওনা দিলো ওরা। দবির গোয়েন্দাকে গুরু মেনে নিয়েছে দিব্যি। পিস্তল হাতে নিয়েও তারেকের নিজেকে শিকার মনে হচ্ছে এখন। বাকিরা তো এরই মধ্যে খরচের খাতায় নিজেদের ধরে রেখেছে। লিনা মেয়েটাও স্বার্থপর আছে। গোয়েন্দা আর তারেকের মধ্যে ঢুকে হাঁটছে দিব্যি।
পা টিপে টিপে নামছে ওরা। বিল্ডিংটা বেশ বড়। একেক তলার ল্যান্ডিংয়ে পৌঁছালে দেখা যাচ্ছে দুই পাশে যথেষ্ট লম্বা করিডোর চলে গেছে। লিফট থেকে অবশ্য সিঁড়ির দূরত্ব কম না। হুট করে কারও সামনে পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা নেই। দোতলা পর্যন্ত কারও সাড়াশব্দ পেল না ওরা। পাঁচজনের কানই অবশ্য খাড়া হয়ে আছে তখন থেকে।
আচমকা দুটো ধাতব ঠং ঠং শব্দের সাথে সাথে হিসহিসে আওয়াজ। ওদের পাঁচজোড়া চোখের সামনে রীতিমতো ধোঁয়াচ্ছন্ন হতে শুরু করলো করিডোর। তারেকের এক হাত খামচে ধরলো লিনা। আরেকটু হলেই মেয়েটার পিঠে গুলি করে দিচ্ছিলো ও।
“একেবারে ফিল্মি কায়দায় আক্রমণ করছে দেখি শালারা।” ফিসফিস করে বললো মাসুদ।
ভূতের মতো বের হয়ে আসলো ওরা দুইজন, সিঁড়ি দিয়ে উঠে আসা দুইজন আক্রমণকারী। ওরা কিছু বুঝে ওঠার আগেই ঠা-ঠা করে কাটা রাইফেল দিয়ে গুলি করতে শুরু করলো তারা। পাঁচজনের কেউ কোন ধরণের প্রতিক্রিয়া দেখানোর আগেই আ-আ-আ-আ-আ করে চিৎকার করে উঠলো গোয়েন্দা দবির।
আবছা আলোতেও পরিষ্কার দেখতে পেলো ওরা, লোকটার শার্টের সামনের দিক থেকে কয়েক দফায় ধোঁয়া উড়লো। তারপর দড়াম করে সিঁড়িতে পড়ে গেল সে। দেহটা ঠোকর খেতে খেতে নেমে গেল নিচের দিকে।
“ফাক! গেট ডাউন!” শক্ত হাতে পিস্তলটা চেপে ধরে সিঁড়ির রেলিংয়ের আড়ালে বসে পড়লো তারেক।
“ম্যান… হি’জ ডেড!” অবিশ্বাসের ভঙ্গিতে ফিসফিস করে বললো লিনা।
সামনে থেকে ডিটেকটিভ সরে গেছে, হামাগুড়ি দিয়ে তারেকের পেছনে লুকানোর চেষ্টা করলো মেয়েটা। ওর শরীর থেকে মিষ্টি একটা গন্ধ পেল তারেক।
রেলিংয়ের আড়াল থেকে কব্জি বের করে নিচের সিঁড়িমুখ বরাবর ম্যাগাজিন খালি করে দিলো ও। একটা আর্তনাদ, তারপর আরেকটা শরীরের সিঁড়ি বেয়ে গড়িয়ে পড়ার শব্দ শোনা গেল।
“কুইক। নেমে যেতে হবে আমাদের।” ফিসফিস করে বললো তারেক।
“লি…না …”
সিঁড়ির নিচ থেকে দুর্বল গলাতে কেউ বললো।
দ্রুত নেমে এলো ওরা। এখনও মারা যায়নি দবির। তবে রক্তে ভেসে যাচ্ছে মেঝে।
“আমার গাড়ির…” কিছুক্ষণ দম নেওয়ার চেষ্টা করলো সে, “…চাবিটা নিয়ে বের হয়ে যাও। ইউ আর… ”
“আপনাকেও নিয়ে যাচ্ছি আমরা।” দবিরের একটা হাত শক্ত করে ধরে বললো মেয়েটা।
“…টু বিউটিফুল টু ডাই…”
তারেক কথাতে সময় নষ্ট করতে নারাজ। পকেট হাতড়ে চাবিটা বের করে নিলো ও।
“লেট’স গো! দবির ঠিকই বলেছে। ওর এখানে আর কোন চান্স নেই।” লিনার কাঁধ ধরে টানলো মাসুদ। এখনও মৃতপ্রায় লোকটার হাত ধরে বসে আছে সে।
নামতে গিয়ে গরম রক্তে পা পিছলে গেল জাবেদের। ভারসাম্য ফিরে পাওয়ার চেষ্টা করতে করতে থেমে গেল সে। হড়হড় শব্দ হচ্ছে।
বমি করে করিডোরের একাংশ ভাসিয়ে ফেললো জাবেদ।
শত্রুপক্ষ থেমে নেই। নিচ থেকে কাটা রাইফেলের গুলির শব্দ ভেসে এলো। করিডোরে কয়েকটা ছুটন্ত বুলেট ঢুকে এ দেওয়াল ও দেওয়ালে আঘাত হেনে নিস্তেজ হয়ে পড়ে গেল কোথাও। মাথা নিচু করে ফেললো ওরা অজান্তেই। দবিরের হাত ছেড়ে দিয়েছে লিনা। নিচের দিকে ছুটলো আবারও।
থেমে নেই তারেকও। রেলিংয়ের কাভার নিয়ে আছে এখনও।
নতুন ম্যাগাজিন থেকে প্রথম ফায়ার করলো নিচের ওদের লক্ষ্য করে।
৬.
“সরে আসা দরকার। সিঁড়ি দিয়ে নামা যাবে না।” একটু পর পিছিয়ে এসে বললো মাসুদ। “আমরা লিফটের শ্যাফট ব্যবহার করবো। কুইক।”
নিচের গুলির শব্দ কিছুটা থেমে এসেছিলো। আবারও তারস্বরে গোলাগুলি শুরু হয়ে গেল ওদিক থেকে। মাসুদের কথাতে যুক্তি আছে। সবাই আবারও উঠে এলো দোতলায়। লিফটের দরজার দিকে শত্রুপক্ষের কারও মনোযোগ নেই। এই সুযোগটা ওরা ইচ্ছে করলে নিতে পারে।
জাবেদ নড়াচড়া করতে পারছে না। ওকে ধরে ধরে নিয়ে আসছে লিনা।
সেদিকে একবার তাকিয়ে চাপা গলাতে প্রশ্নটা ছুঁড়ে দিলো তারেক, “ঘটনা কি? তোমাকে ধরার জন্য এতো ব্যস্ততা কিসের ওদের? শিল্পপতির মেয়ে কিডন্যাপারের মতো সহজ কিছু তো মনে হচ্ছে না আমার আর।”
বাগড়া দিলো মাসুদ, “আমার আঙুল ঢুকছে না। লিফটের দরজা তো খোলা লাগবে আগে? লিনা, তোমার হাত চিকণ সবার চেয়ে। চেষ্টা করে দেখবে প্লিজ?”
তারেকের দিকে বক্র দৃষ্টি হেনে এগিয়ে গেল লিনা। ত্রিশ সেকেন্ডের মধ্যে সামান্য ফাঁকা করতে পারলো দরজা। তারেক আর মাসুদ টান দিয়ে যথেষ্ট ফাঁকা করে ফেললো। ওপরের দিকে তাকিয়ে লিফটের আবছা অবয়বটা দেখা গেল। পাঁচতলাতে আটকে আছে। মেইনটেনেন্সের জন্য কিছু কেবল ঝুলছে। তা ধরে নিচের দিকে নেমে যেতে হবে ওদের।
কাটা রাইফেলের শব্দ থেমে গেছে নিচ থেকে। ওরা পাল্টা গুলি না পেয়ে অপেক্ষা করছে। সবাই মারা গেছে কি না তা পরীক্ষা করতে কিছুক্ষণের মধ্যেই উঠে আসতে পারে তারা। কালিঝুলি হাতে মাখাতে মাখাতে লিফটের কেবল ধরে ঝুলে পড়লো ওরা।
একের পা অন্যের মাথাতে লাগিয়ে নেমে আসতে শুরু করলো চারজন। অদ্ভুত এক অনুভূতি। ওদের মনে হতে থাকে ওদের চারজনের চাপে লিফটটা যে কোন সময় ওপর থেকে খসে পড়বে। গতি কমালো না ওরা অবশ্য। সাবধানে নেমে চললো। শেষ দিকে এসে হাত ফস্কালো জাবেদ।
লিনার ঘাড়ে এসে পড়তেই হুড়মুড় করে মাসুদ আর তারেকের ওপর এসে পড়লো ওরা। নিজেদের সামলে উঠে বসলো প্রথমে। তারপর আবারও লিনার দিকে সাহায্যের আবেদন মেলে দেওয়া হলো। নিচতলার লিফটের দরজা খুলে দিতে হবে। তাহলেই অনায়াসে গ্যারেজে বের হয়ে আসবে ওরা।
ভোটকা জাবেদ ছিটকে পড়ায় ঘাড়ে ব্যথা পেয়েছে লিনা। আনমনে ডলছিলো, ভঙ্গিটায় তাকে অপরূপা দেখাচ্ছে। তবে এখন ঠিক সৌন্দর্য প্রদর্শনীর সময় না। গলা নামিয়ে ফিসফিস করে বলতেই হলো তারেককে, “লিনা, দরজাটা খুলতে হতো।”
আবারও একই পদ্ধতিতে দরজা খুলে বের হয়ে এলো ওরা। গ্যারেজের শেষ মাথায় সিঁড়িঘর। সেখানে ঘাপটি মেরে দাঁড়িয়ে আছে দুইজন মানুষ। তাদের হাতের কাটা রাইফেল ওপরের দিকে তাক করা আছে। একজন রেডিওতে কাকে যেন রিপোর্টও করছে, “না স্যার! এখনও শালীকে রিট্রিভ করতে পারি নাই … না স্যার… এদিকে একটা ঝামেলা হয়ে গেছে… জ্বি স্যার, কোন এক শালার সঙ্গে গিয়ে জুটেছে মেয়ে, ধুমিয়ে গুলি করতেছে বস…”
চাটুকারিতায় পটে গেল তারেক। ধুমিয়ে আরেকদফা গুলি করলো ওদের উদ্দেশ্যে।
নিমেষে মাটিতে লুটিয়ে পড়লো দেহদুটো। পেছন থেকে ওদের গুলি করে মারার জন্য কোনরকম অপরাধবোধ কাজ করলো না ওর মধ্যে। মনে পড়ে গেছে প্রাইভেট ডিটেকটিভ দবিরের কথা।
ছুটে গিয়ে দবিরের গাড়িতে উঠে পড়লো ওরা। এবার চারজনের জন্য একটা করে সীট বরাদ্দ পাওয়া গেছে। ছড়িয়ে ছিটিয়ে বসলো ওরা। মাসুদ ড্রাইভিং করছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের অটোমোবাইল কম্পিটিশনের কল্যাণে গাড়ি নির্মাণ আর চালনার অভ্যাস তার আছে। ড্রাইভ করাটা সমস্যা হবে না। ভেতরে ভেতরে এখান থেকে বের হয়ে যাওয়ার তাড়া অনুভব করছে তারেক। জাবেদের অবস্থা ভাল না। মনে হচ্ছে যে কোন সময় জ্ঞান হারাবে।
“ওদের আরও লোক বাইরে আছে মনে হয়। মুভ! ফাস্ট!” তাড়া দিলো লিনা।
গ্যারেজ থেকে বের হওয়ার সময় তারেক দেখলো শত্রু দুইজনের বুকের নিচ থেকে রক্ত বেরিয়ে ভিজিয়ে দিয়েছে গ্যারেজের ফ্লোর। লোক দুটোর পরিচয় আর জানা হলো না।
৭.
ছিটকে বের হয়ে এলো ওদের গাড়ি। আশে পাশে কোন গাড়ি ওদের ধাওয়া করে আসছে না। তারপরও ঝুঁকি নিতে রাজি হলো না মাসুদ। পূর্ণগতিতে গাড়ি ছোটাচ্ছে সে। এই ক্ষমতা তার আছে। ছুটিতে বাড়ি যখন যায়, বাবার গাড়ি সে-ই ড্রাইভ করে। অভিজ্ঞতাটা কাজে লেগে যাওয়াতে মনে মনে নিজেদের ভাগ্যকে ধন্যবাদ দিলো তারেক।
“সেফ লোকেশন দরকার আমাদের একটা।” বিড়বিড় করে বললো জাবেদ। অনেকক্ষণ পর কথা বললো ছেলেটা। তার দিকে তাকিয়ে মাথা দোলালো মাসুদ।
পেছনের সীটে বসেছে তারেক আর লিনা। মেয়েটার দিকে চিন্তিত ভঙ্গিতে একবার তাকালো তারেক। একটা কিছু ভাবছে সে। তার উদ্দেশ্যে প্রশ্ন ছুঁড়ে দিলো মাসুদ, “কই যাবো রে? একটা লোকেশন দে।”
“লোকেশন … ” বিড়বিড় করলো তারেক।
“কি?”
“নাথিং। চালিয়ে যা। আশে পাশে কোন পুলিশ স্টেশন দেখলেই দাঁড়িয়ে যাবি।” বললো তারেক।
“পুলিশ এমন ম্যাস মার্ডারারের সঙ্গে লড়াই করেছে বলে শুনিনি। আমার মনে হয় পুলিশের কাছে যাওয়া হলে আমার আর কোন চান্স থাকবে না।” হতাশ কণ্ঠে বললো লিনা।
“তোমার সমস্যা কোথায় আমি ঠিক জানি না।” তিক্ত কণ্ঠে বললো তারেক, “তোমার ব্যাপারে কিছুই জানি না আমরা। ইলিগাল কিছুর সাথে জড়িত নও তো? তোমার কোন কথা আমি শুনতে পারবো না। মাসুদ, সরাসরি পুলিশ স্টেশন।”
অসহায়ের মতো তার দিকে তাকালো লিনা। তারপর কিছু একটা বলতে যাচ্ছিলো, তবে সময় মিললো না। আচমকা চারপাশে নরক ভেঙ্গে পড়লো যেন। রাইফেলের গুলির পরিচিত শব্দ ভেসে আসলো পেছন থেকে।
পেছন থেকে ছুটে আসছে নীল রঙের একটা জিপ। জানালার একপাশ থেকে শরীরের অর্ধেকটা বের কর গুলি করছে একজন মানুষ।
“আই ক্যান্ট বিলিভ দিস!” ক্ষোভে চিৎকার করে উঠলো মাসুদ।
“পুলিশ…” বিড়বিড় করে উঠলো জাবেদ।
“পুলিশ আমার বালটা করবে।” গজ গজ করে উঠলো তারেক, “ফিল্মি স্টাইলেই হামলা চালাচ্ছে দেখছি শালারা।”
নিজের মাথা খামচে ধরে বসে আছে লিনা। শরীরটাকে যথাসম্ভব ছোট করে ফেলেছে সে। চিৎকার করে উঠলো এবার, “ডু সামথিং! তারেক!”
পেছন থেকে আবারও ভেসে এলো কাটা রাইফেলের গুলির শব্দ। গর্জন করছে জিপের ইঞ্জিন। খুব দ্রুত দূরত্ব কমে আসছে ওদের।
“ড্যাম ইট!” শরীরের একাংশ বের করে দিলো তারেকও। শেষ ম্যাগাজিন থেকে সাবধানে ছুঁড়তে থাকলো একটার পর একটা গুলি।
“খসাতে পারবো না মনে হচ্ছে ওদের।” হতাশ কণ্ঠে বললো মাসুদ।
“হোয়াই!” দুটো গুলি আছে চেম্বারে, গাড়ির ভেতর শরীর টেনে আনলো তারেক, “ট্রাই প্লিজ! আমার গুলিও শেষ প্রায়।”
“ট্রাই করার কিছু নাই। হঠাৎ করেই গতি উঠাতে পারছি না। চল্লিশ কিলোমিটার উঠছে সর্বোচ্চ।”
জানালা দিয়ে শরীর বের করে দিয়ে শেষ দুটো গুলিও ছুঁড়ে দিলো তারেক। তারপর ফিরে আসলো ভেতরে। দুই সেকেন্ড লেগে গেল তার কথাটা বুঝতে, “গতি উঠাতে পারছিস না?”
“না… ম্যান, আমি জানি না প্রবলেমটা কোথায়…”
“বা-আ-আ-আ-আল!” হতাশ কণ্ঠে বললো তারেক, “গাড়ি থামা মাসুদ। কুইকলি!”
“হোয়াট! নো!” আঁতকে উঠলো জাবেদ।
“পাগল হয়েছিস? আত্মহত্যা করবো না আমি।” মাথা নাড়লো মাসুদ।
“প্লিজ…” কাতর কণ্ঠে বললো লিনা।
“গাড়ি থামা মাসুদ। ট্রাস্ট মি অন দিস।”
“প্ল্যানটা কি তোর? পিস্তলে গুলি আছে কয়টা?” জাবেদ জানতে চাইলো।
সাবধানে ম্যাগাজিন বের করে চেক করলো তারেক। একটা গুলিও নেই ভেতরে।
“একটাই গুলি আছে।” মিথ্যা বললো ও, “গাড়ি থামা। ক্লিয়ার শট নিতে হবে আমাকে।”
ইতস্তত করলো মাসুদ। পেছনে জিপের দূরত্ব কমে আসছে।
“নাউ! মাসুদ!!” চিৎকার করে উঠলো তারেক।
ঘ্যাঁচ করে ব্রেক কষলো মাসুদ।
সাথে সাথে দরজা খুলে বের হয়ে এলো তারেক। এক হাতে টেনে নামিয়েছে লিনাকেও।
তারপর ওকে জড়িয়ে ধরে মেয়েটার ঠোঁটজোড়া নিজের মুখে পুড়ে নিলো নিমেষে।
৮.
“ফাক!” চিৎকার করে উঠলো পালের গোদা শাহেদ রহমান। “গাড়ি থামাও। বুঝে গেছে ওরা।”
নীল রঙের জিপটা থেমে গেল মাসুদদের গাড়ির দশ হাত দূরে। কাটা রাইফেলধারী তিনজন মানুষ যখন এগিয়ে আসছে ওদের দিকে, তখনও একে অন্যের সঙ্গে চুম্বন প্রতিযোগিতা চালিয়ে যাচ্ছে তারেক আর লিনা।
একটু দূর থেকে গলা খাকারি দিলো মাসুদ, “হোয়াট দ্য ফাক ইজ গোইং অন?”
“এহেম এহেম।” বললো শাহেদ রহমান। তিন কাটা রাইফেলধারী বোকার মতো দাঁড়িয়ে থাকলো তার পেছনে।
লজ্জিত ভঙ্গিতে সরে এলো লিনা, “টেস্টস গুড!” বললো তারেককে।
“কি হচ্ছে রে ভাই!” বের হয়ে এলো মাসুদও।
“শালারা স্রেফ বোকা বানিয়ে ছেড়েছে আমাদের।” হুঙ্কার দিয়ে বললো তারেক, “ফাকিং রিয়েলিটি শো! রিয়েলিটি শো চলছে এখানে, মাসুদ। অথবা তেমন কিছুই… শালারা…”
“আমরা দুঃখিত-” শুরু করতে যাচ্ছিলো শাহেদ রহমান, তবে তার দিকে ফিরেও তাকালো না তারেক।
“দুঃখিত শিকেয় তুলে রাখেন।” গর্জন করে উঠলো এবার মাসুদ, “ঘটনা খুলে বলেন আমাদের।”
একে অন্যের দিকে তাকালো তিন রাইফেলধারী। চুরি করতে গিয়ে ধরা পড়ে গেলে যেমনটা হয় তেমনই হয়েছে তাদের চেহারা।
“ছোটখাটো একটা টেলিভিশন শো আছে আমাদের।” মিনমিন করে বললো শাহেদ, “বাংলাদেশের সর্বাধিক দর্শিত শো। দেশে প্রতিটি শো-র টেলিভিশন ভিউ চার কোটির ওপরে। ভারতেও এই শো দেখে মানুষ। আমাদের স্যাটেলাইট চ্যানেল ও দেশেও অ্যাভেইলেবল। সেখানে এই শোর ভিউয়ার্স তিন কোটির ওপরে।”
“বা-আ-আ-আ-আল!” এবার বললো জাবেদ। গাড়ি থেকে বের হয়ে এসেছে সে, “আমরা এতোক্ষণ ছিলাম ‘সাডেন হাইক’-এ। আমরা এতক্ষণ এই বালের প্রোগ্রামে ছিলাম!”
তার দিকে ঘুরে তাকালো মাসুদ, “ওহ! বালের প্রোগ্রাম? আজ রাতে রিপোর্ট না দেখে এই সিরিয়াল দেখার প্ল্যান তোমার ছিলো। তারমানে তুইও ওদের রেগুলার ভিউয়ার। অথচ গাড়ল এতোক্ষণে ধরতে পারলি ব্যাপারটা? আরেকটু হলে হার্টফেল করতাম আমি।”
“ওরা থ্রিলার অথবা অ্যাকশন রিয়েলিটি শো করেনি এতোদিন। মূলতঃ প্র্যাংক করে থাকে তারা, তবে এত এক্সট্রিম পর্যায়ের না।” শাহেদের দিকে এগিয়ে গেল জাবেদ, “হঠাৎ সাসপেন্স শো করছেন যে?”
“এটা এপিক লেভেলের হবে।” মাথা দুলিয়ে বললো তরুণ ডিরেক্টর, “স্রেফ ফেটে পড়বে বাংলাদেশ এবার, দেখবেন। আপনারা হিট খেয়ে যাবেন অচিরেই। ফাটাফাটি পারফর্ম্যান্স! আমি কখনোই ভাবি নাই ওই বিল্ডিং থেকে বের হতে পারবেন আপনারা। দবিরের মার্ডারের সাথে সাথে শেষ হয়ে যাওয়ার কথা ছিলো ব্যাপারটা। ওখানেই হাল ছেড়ে দেবেন বলে ভেবেছিলাম। আমাদের দর্শকরা এসএমএসে ভোটও দিয়েছিলো ৬৭%, আপনারা ওই পর্যায়েই পর্যুদস্ত হয়ে যাবেন…” দীর্ঘশ্বাস ফেললো শাহেদ, “তবে আপনাদের বিচি আছে বলতেই হবে।”
“কিন্তু কিভাবে!” মাসুদ বুঝতে পারে না, “কিভাবে এটা রিয়েলিটি শো হল? রাস্তাতে এসে গোলাগুলি করছেন আপনারা, পুলিশ ঝামেলা করলে কি করতেন?”
“করতো না। আমাদের সাথে লোকাল থানার ডীল আছে।” হাসিমুখে বললো শাহেদ, “আর কোন প্রশ্ন থাকলে করতে পারেন। জানি অনেক প্রশ্ন জমে থাকার কথা আপনাদের মনে।”
“লাইভ দেখাচ্ছিলেন প্রোগ্রামটা?” রক্তচক্ষু মেলে বললো তারেক।
“ওরা সব প্রোগ্রামই লাইভ দেখায়।” ফস করে বলে বসলো জাবেদ।
“আরে ধ্যাত! ইজ্জত তো ফালুদা রে!” মাথায় হাত দেওয়ার জোগাড় হল তারেকের।
মাসুদ কৌতূহলী হয়ে আছে এখনও, “কিন্তু, ঘটনাগুলোর সাথে শো-র সম্পর্ক কিভাবে হল? আপনাদের কাছে ক্যামেরা ছিলো ধরে নিলাম। কিন্তু আমাদের সঙ্গে তো ছিলো না।”
“ভুল বললে।” মাথা নাড়লো তারেক। “অবশ্যই ক্যামেরা ছিলো সবখানে। শফিক ভাইয়ের দোকান। তারপর আমরা ঢুকেছিলাম অন্ধকারাচ্ছন্ন একটা টিনশেড বাড়িতে। অন্ধকার কোণে শক্তিশালী ক্যামেরা বসালেও আমাদের দেখার উপায় ছিলো না। তারপর তাড়া করে এনে ফেললো ভোটকা ব্যাটার গাড়ির ওপর। সবকিছুই পারফেক্ট টাইমিং। আমরা যখন রাস্তা ধরে এই নকল কিডন্যাপড মেয়েকে নিয়ে পালাচ্ছিলাম, তখন পেছনের ওরা গুলি করছিলো না। কারণ আমাদের চোখ তখন নাকের বরাবর। দমটা নাকের ফুটা দিয়ে বের করে দিয়ে দৌড়াচ্ছিলাম একেকজন। আশে পাশে আমাদের যে ফিল্মিং চলছে সেটা টের পাওয়ার মতো মানসিক অবস্থা কি আমাদের ছিলো?”
মাথা দোলালো ‘সাডেন হাইক’-এর নিদারুণ ভক্ত জাবেদ, “ঠিক। তারপর ওই অ্যাকটর হারামজাদাও আমাদের লিফট দিলো। ক্যামেরা নিশ্চয় ওই গাড়িতেও আছে। এরপর তো সরাসরি তার ‘অফিসে’ ঢুকে পড়লো। তারপর পিস্তল-টিস্তল বের করে একাকার করে দিলো পরিস্থিতি। এরপর বের হওয়ার সময়ই মরার আর গুলি খাওয়ার পারফেক্ট ডেমো দিলো সে।”
“এমন টাইট করে রেখেছিলো পরিস্থিতি যাতে আমরা লিনার অভিনয়ের ব্যাপারটা ধরতেই না পারি। সময় দিলেই আমাদের চোখে অসঙ্গতিগুলো ধরা পড়ে যাওয়ার উপায় ছিলো বলে সময় তারা দিতে চায়নি। ক্যামেরার ব্যাপারটা ওখানেও ছিলো নিশ্চয়। তবে আমরা লিফট ব্যবহার করবো এটা মনে হয় তারা কল্পনা করতে পারেনি।” তারেক বলে যায়, “যে কারণেই প্রথম ভুলটা করে ফেললো ওরা। ফটাফট পাছাতে গুলি খেয়েই মরার ভান করতে হলো সিঁড়িঘরের কাছে দাঁড়িয়ে থাকা দুই সৈনিককে।”
“এটা কিন্তু বাড়াবাড়ি হচ্ছে।” ‘মৃত’ দুই সৈনিকের একজন আপত্তি জানিয়ে বললো।
“অপমান হচ্ছে? হলেও আমার কিছু করার নেই।” সোজাসাপ্টা বলে দিলো তারেক।
“তুমি থামো।” ধমক দিয়ে সৈনিককে থামালো শাহেদ, “মি. তারেক কি বলবেন, ঠিক কিভাবে আপনি শো-র ব্যাপারটা বুঝলেন?”
মুচকি হাসলো তারেক, “প্রথমে বুঝিনি। প্যানিকড মাইন্ড। গাড়িতে করে পালানোর সময় আমার হিসেবে ঠিক মিলছিলো না। একটা কিছু ভুল হচ্ছে আমি বুঝতে পারছিলাম। তবে কিছু একটাতে গড়বড় ছিলো সেটা সবারই মনে হয়েছে। এতো ফিল্মি স্টাইলে আক্রমণ! আমার ফিলিংটা শুধু অতটুকু ছিলো না। সাঙ্ঘাতিকভাবে ফিজিক্সের সূত্র ভায়োলেট করা হয়েছে কোথাও- এমনটা মনে হচ্ছিলো। জীববিজ্ঞানের সূত্রও লঙ্ঘিত হয়েছিলো সেখানে।”
“জিনিসটা কি ছিলো?” অধৈর্য্য হয়ে জানতে চাইলো শাহেদ।
“সিম্পল। লিফট থেকে বের হয়ে যখন ওদের পিঠ বরাবর গুলি চালিয়ে দিলাম, ওরা মরলো ঠিকই।” বললো তারেক।
“এতে সমস্যাটা কি?” বুঝেনি শাহেদ।
“রক্ত বের হলো যে বুক থেকে! পিঠে কোন ছিদ্র নেই, রক্তে ভেসে যাচ্ছিলো গ্যারেজ!”
“শিট!” নিজের ভুল বুঝতে পেরে আফসোস করে উঠলো শাহেদ, “আপনাদের ফেক বুলেট দিয়ে করা গুলির সামনে সবাই বুক চিতিয়ে পড়বে এটাই প্ল্যান ছিলো। পিঠের দিকে মেকানিজম কাওকে দেওয়া হয়নি। তবে, আমাদের পরের প্রোগ্রামগুলো ঠিকমতো করার জন্য একটা ছোটখাটো তথ্য আমাদের দরকার ছিলো। পিঠে ছিদ্র নেই, এটা আপনি কখন টের পান?”
“খটকা লেগেছিলো, প্রথমেই খটকা লেগেছিলো। তবে শিওর হতে দেরি হয়েছে। যখন জিপ নিয়ে ধাওয়ার সাথে সাথে গাড়ির স্পিড ৪০ কিলোর ওপরে গেল না আর, বুঝে গেলাম।” বললো তারেক, “সেফটি ফার্স্ট। তাই না? চাননি শো-র কোন ভলান্টিয়ার মরে-টরে যাক। আপনাদের ভয় পাওয়ার কারণ ছিলো না। বরং জেনে রাখতে পারেন, আমাদের মাসুদ একজন আন্ডারগ্রাউন্ড রেসার। স্পিডোমিটার নিয়ে কাহিনী না করলে আপনার জিপের কপালেই খারাবী ছিলো।”
“আর তারপর…”
“কুত্তাপাগল করা দৌড় দৌড়িয়েছেন আমাদের। ভেবেছেন ফ্রি ফ্রি করিয়ে নেবেন? ফ্রি কিসার লিনার অফারটা আমিই নিলাম। ভাল কথা, তোমার আসল নামটা কি জানা যাবে এখন?” লিনার দিকে ঘুরে তাকালো ও।
“জেনি। তবে একটা তথ্য তোমার জানা উচিত, আমরা পার্টিসিপ্যান্টদের দশ হাজার করে দেই। আমাদের শো-টা বেশ লাভজনক। আজকেরটা গ্রেটেস্ট সাকসেস এখন পর্যন্ত। আজকের শো-র পার্টিসিপ্যান্টদের দেওয়া হবে পঞ্চাশ হাজার করে। কংগ্র্যাচুলেশনস!”
“একটা ব্যাপার, আমাদের কেউ যদি ফেইল করতো? আমরা যদি টিনশেডের মধ্যেই না ঢুকতাম আজ?”
হাসলো শাহেদ, “ব্যাকআপ ভিডিও রেডি ছিলো। আমাদের অভিনেতাদের অভিনয় করা। তবে লোকে ধরেই নিতো সব ঘটছে লাইভ…”
“আপনাদের টাকা-পয়সা রাখেন।” ঘেউ ঘেউ করে উঠলো তারেক, “কাল সকালে রিপোর্ট জমা দিতে হতো আমাদের। সেটার কি হবে অ্যাঁ? নিজেদের আখের তো গুছিয়েছেন। টাকাও নাহয় আমরা পেলাম, তবে আগামীকাল যে মারাটা খাবো তার ফলাফল আপনি জানেন না।”
“কিসের রিপোর্ট?” হা হয়ে গেছে শাহেদ।
“মোতালেব স্যারের রিপোর্ট।” ফস করে বলে ফেললো জাবেদ, “পারবেন তাঁকে বোঝাতে কেন আজ আমরা রিপোর্ট রেডি করিনি?”
শাহেদ এখনও ব্যাপারটা বুঝে উঠতে পারেনি, “লোক কি খুব ভয়ঙ্কর নাকি?”
“ভয়ঙ্কর শব্দটা তার জন্যই বানানো হয়েছিলো।”
“তাহলে আপনারা চাইছেন এই লোকের হাত থেকে নিস্তার পেতে?” ভ্রু কুঁচকে জানতে চাইলো শাহেদ।
“অবশ্যই!” কটমট করে তাকালো তারেক, তারপর ঘুরে দাঁড়ালো জেনির দিকে, “অ্যাই তোমার নাম্বারটা দাও।”
একটু ভেবে হাসলো শাহেদ, “ব্যাটার বাসার ঠিকানা দেন। বাকিটা দেখিচ্ছি।”
_পরিশিষ্ট_
সকাল সাড়ে সাতটায় বাড়ি থেকে বের হওয়াটা প্রফেসর আব্দুল মোতালেব হাসান চৌধুরীর পুরাতন স্বভাব। তাঁর ডেসিগনেশনের অনেক শিক্ষকই ল্যাব-ট্যাব জুনিয়র শিক্ষকদের হাতে ছেড়ে দিয়ে নিজেরা আরও গুরুভার বহন করে থাকেন। অথচ মোতালেব স্যার এদিক থেকে কড়া। প্রতিটা ক্লাস আর ল্যাব তিনিই নেন। শত হাজার ব্যস্ততার মধ্যেও এর ব্যত্যয় ঘটে না।
আজকেও এমন এক ল্যাব নিতে হবে, সকাল আটটায় ল্যাব। ছাত্ররা আজকে তাদের সেমিস্টারের ফাইনাল রিপোর্ট জমা দেবে। ষাটজন ছাত্র-ছাত্রীর রিপোর্ট আজকের মধ্যেই দেখে ফেলতে হবে তাঁকে। কোন সময় কাজটা করবেন তা মনে মনে ছক কেটে নিচ্ছিলেন তিনি।
তিন রাস্তার মোড়ে এসে থমকে গেলেন তিনি।
প্রচুর কুয়াশা চারপাশে।
শীতের সকাল।
মাত্র সাড়ে সাতটা বাজে।
দশটার আগে সূর্য এদিকে ওঠে না কোন শীতে।
শব্দটা আবার শুনলেন কি তিনি?
একটা নারীকণ্ঠের গোঙ্গানি?

— ০ —

শানে নুজুলঃ
মেকানিক্যালের জন্য বরাদ্দ ক্লাসরুমগুলোর সংখ্যা চার। ৩০১, ৩০২, ৩০৩, ৩০৯।
এদের মধ্যে ৩০২ এবং ৩০৯ নম্বরের পেছনে দরজা আর তা দিয়ে ক্লাস চলাকালীন অবস্থায় জান নিয়ে ভেগে যাওয়ার সুব্যবস্থা আছে। থার্ড আর ফোর্থ ইয়ারের স্টুডেন্ট হিসেবে ভাইয়ারা ৩০৯ আর আমরা ৩০২ দখল করে অভ্যস্ত। স্বাভাবিক, জুনিয়রদের ক্লাস পালানো তো মোটেও উচিত নয়। আমাদের ছোট ভাই-বোনেরা নষ্ট হয়ে যাক তা কি আমরা চেয়েছিলাম?
সেদিন সম্ভবতঃ মাসুদ স্যারের ক্লাস। স্যার এলেন না। প্রক্সি টিচার হিসেবে পাঠালেন এক ম্যাডামকে। ম্যাডামের নাম ভুলে গেছি। জন কেনেডির সাথে তাঁর নামের মিল আছে। JFK। ম্যাডাম এসে ক্লাস নিলেন, এমনটা না। সবার অ্যাটেনডেনস নিয়ে চলে গেলেন।
এ ধরণের টিচাররা আমাদের খুব প্রিয়। ৫০ মিনিটের ক্লাসে অ্যাটেনডেন্স নিয়ে ছেড়ে দেওয়া, অনেক সময় পাওয়া যায় ‘মগা’ নেওয়ার জন্য। এসব ক্ষেত্রে ম্যাডাম বের হয়ে যাওয়ার পর আমরা হুড়হুড় করে বের হয়ে যাই। এবং বের হওয়ার আগে উচ্চস্বরে বার কয়েক হাঁক ছাড়া হয়, “বিড়ি খাইতে যাবি না?”
অনেককেই সায় দিতে দেখা যায় ব্যাপারটায়। ক্লাসরুমে দেখা যায় কিছু মানুষ বিক্ষিপ্তভাবে ঘুরে বেড়াচ্ছে। বাকি সবাই গন উইথ দ্য বিড়ি।
সেদিন সম্ভবতঃ ক্লাসরুমের ভেতরে কুস্তি লড়ার আয়োজন করা হয়েছিলো। এ তাকে, এবং সে ওকে পেটানোর পর আমাদের মনে হল, এবার আসলেই “বিড়ি খাইতে” যাওয়া উচিত। যথারীতি আমরা বের হয়ে এলাম মার্চ করে। ৩০১ পার করছি, তখন বন্ধু আসাদ ষড়যন্ত্রকারীর মতো বললো, “দ্যাখ দ্যাখ, সেলফি তুলছে।”
তাকিয়ে দেখা গেল ক্লাসের মেয়েরা সেলফি তুলছে সামনের দরজার বিপরীতে। লিজা, সন্ধি, মোনা আর আরেকটা মেয়ে। যে গাছের সামনে এত ঢঙ করে ছবি তোলা হচ্ছে, সেখান থেকে একবার একটা জ্যান্ত ডেয়োপিঁপড়া ধরেছিলাম। সাইজে দেড় ইঞ্চি। তারপর ওটাকে জ্যামিতিবক্সে ভরে নিয়ে এসেছিলাম ক্লাসে। মনোযোগী ছাত্র তুহিনের মাথাতে ওটা ছেড়ে দেওয়া হয়েছিলো। সেই পিঁপড়াদের নিয়ে সেলফি তোলা হচ্ছে? স্বভাবতঃই সবার পিত্তি জ্বলে গেল।
আসাদ বললো, “সিঁড়ি পর্যন্ত চল। তারপর সবাই ঘুরে আসবি। সিরিয়াস মুখ নিয়ে ক্লাসে ঢুকে যাবি আবার। ভাবটা করবি এমন, যেন ম্যাডাম আসতেছে।”
আমি আপত্তি জানালাম, “একটু আগে ম্যাডাম এসে অ্যাটেনডেন্স নিয়ে গেছে, এতো তাড়াতাড়ি কথাটা ভুলবে না ওরা। বুঝে যাবে যে আমরা ব্লাফ দিতেসি।”
আসাদ বললো, “আরে দ্যাখ না কি হয়!”
আমরা সিঁড়ির দিকে এগিয়ে গেলাম। বিশাল এক দল। এতোই বিশাল যে সবার হাতে একটা করে হকি ব্যাট থাকলে রুয়েট ফাঁকা হয়ে যেত আতঙ্কে। এবং সিঁড়ি পর্যন্ত পৌঁছে ইউ টার্ন মেরে দ্রুত গতিতে ক্লাসের দিকে ফিরে আসতে শুরু করলাম। শেষ কয়েক পা ফেলতে হলো দৌড়ের ভঙ্গিতে।
পেছনের দরজা দিয়ে ঢোকার আগে আড়চোখে দেখলাম। ডেয়োপিঁপড়াদের গাছের সামনে দৃশ্যটা হয়েছে দেখার মতো। চারটা মেয়ে ওদিক থেকে প্রাণপনে দৌড়ে আসছে :v যে কেউ বলবে, ওদিক দিয়ে নির্ঘাত ISIS এর ট্রুপ ঢুকতে শুরু করেছে!
উর্ধ্বশ্বাসে তাদের পালানোর দৃশ্য দেখার পর আমরা সফল যুবসঙ্ঘ আবারও বের হলাম। এবার ফর রিয়েল। অ্যাডবিল্ডিংয়ের তলায় পৌঁছানোর পর যখন আমাদের হাসির ভলিউম মোটামুটি কমে এসেছে, তখন আবারও যুক্তিবাদী সত্তা জেগে উঠলো ভেতরে।
বললাম, “বুঝলাম না, ম্যাডাম তো এসে আমাদের অ্যাটেনডেন্স নিয়ে গেছিলো। তারমানে এই ৫০ মিনিটের মধ্যে আর কারও আসার কথা ছিলো না। কিন্তু ওরা পালালো কেন?”
“ওরা পালালো কেন”র উত্তর দিলো কাফি।
সে বললো, “এটা হল প্যানিক। আমাদের দৌড়াতে দেখে ওরা প্যানিকে পড়ে গেছিলো। প্যানিকে পড়ে গেলে লজিক কাজ করে না আর।”
আমরা একমত হলাম, প্যানিকে পড়ে গেলে লজিক কাজ করে না। তাহলে গার্মেন্টস ইত্যাদিতে আগুন ধরে যাওয়ার পর হতাহতের সংখ্যা অনেকটা কমে আসতো।
তবে, আমার মধ্যে “প্যানিকে পড়ে গেলে লজিক কাজ করে না” লাইনটা ভাল রকম প্রভাব রাখলো। প্র্যাক্টিক্যাল উদাহরণ পেয়েছি, মানব মনস্তত্ব।
মাথা থেকে ওই লাইনটা আজও বের হয়নি। গল্প লিখে তাকে বের করা হল।
ধাওয়া পরিকল্পনাকারী আসাদের প্রতি বিশেষ কৃতজ্ঞতা 3:)

রচনাকাল : ৩১শে ডিসেম্বর, ২০১৫।

(আমার জন্মদিন। নিজের জন্মদিন, ঈদ, কিংবা অন্য কোনও বন্ধে আমি নিজেকে ছুটি দিয়েছি বলে মনে পড়ে না।)

রম্য

Post navigation

Previous post
Next post

কিশোর পাশা ইমন

১২টি ক্রাইম থৃলারের লেখক কিশোর পাশা ইমন রুয়েটের মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ছাত্র ছিলেন, এখন টেক্সাস ষ্টেট ইউনিভার্সিটি থেকে মাস্টার্স করেছেন মেকানিক্যাল অ্যান্ড ম্যানুফ্যাকচারিং ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে। বর্তমানে টেক্সাসের স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয় ইউটি ডালাসে মেকানিকাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পিএইচডির ছাত্র। ছোটগল্প, চিত্রনাট্য, ও উপন্যাস লিখে পাঠকপ্রিয়তা পেয়েছেন। তার লেখা প্রকাশিত হয় বাংলাদেশ ও ভারতের স্বনামধন্য প্রকাশনা সংস্থা থেকে। তার বইগুলো নিয়ে জানতে "প্রকাশিত বইসমূহ" মেনু ভিজিট করুন।

Related Posts

গরু

Posted on November 25, 2013June 20, 2022

কসাই মামা এখনও ছুরি ধার দিচ্ছে। গরুর লোভে অনেকেই এসেছে আজ এখানে। মেম্বারশিপের চাঁদার একটা গতি হল ভেবেই তারা খুশি। আর আজ যদি গরু না পায় তবে ওই ছুরির ব্যবহার কোথায় হতে পারে অনুমান করে হনুমান হয়ে গেলাম।

Read More

ভালো বাসা

Posted on December 27, 2013June 24, 2022

মা অবশ্য আপত্তি করছেন না। হুজুর বাড়ি বন্ধ করলে ক্ষতিই বা কোথায়? আর বাড়িওয়ালা আংকেল তো রীতিমত উৎসাহিত এই সমাধানে। আমিও শত্রুপক্ষের সাথে তাল মেলালাম।

Read More

গোয়েন্দাগিরি

Posted on February 26, 2023

‘সাবাশ!’ গোবদা হাত দিয়ে ওর পিঠ চাপড়ে দেয় জুয়েল।’ প্রায় সবকিছুই ধইরা ফেললি! আরেকটা জিনিস বাকি – লেখাটা একটা মাইয়ার। সম্ভবতঃ – হাতের লেখা পাল্টাইছে যে লেখছে। মানে তোর পরিচিত ওই মাইয়া। আর না পাল্টাইলে অন্য কাওরে দিয়ে লেখাইছে।’
জুয়েল কলেজে গোয়েন্দা হিসেবে সুপ্রতিষ্ঠিত।

Read More

Leave a Reply Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

সর্বশেষ লেখাগুলো

  • ওয়ান ফর মাই সৌল
  • আমার যত প্রকাশক
  • কেপির সেরা লেখা কোনটি – জরিপ ২০২২
  • আন্ডারএইজের বই পড়া
  • অমুক পড়ে আসেন… সমস্যাবলী

Analytics

009435
Total Users : 9435
Total views : 23711
Who's Online : 0
Powered By WPS Visitor Counter
©2025 KP Imon | WordPress Theme by SuperbThemes