ফ্রি-মিক্সিং সমস্যা নয়, ফ্রি-মিক্সিংই সমাধান

২২শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬
মেয়েদের উত্যক্ত করার অভ্যাসটা মূলতঃ গড়েছে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা আর সমাজ সংস্কার। দেশের আশিভাগ কিশোরের নারী সংক্রান্ত আগ্রহটা থাকে বাড়াবাড়ি পর্যায়ের। অন্য কোনোখানে আপনি এমনটা দেখবেন না। কারণটা সবার চোখের সামনে থাকলেও দেখবেন কেউ তা নিয়ে টু শব্দটাও করছে না।
ছেলেদের অনভিজ্ঞতাই এসবকিছুর জন্য দায়ী। ইভ টিজিং, মেয়ে মানেই বিছানায় নেওয়ার বস্তু মনে করা, মেয়ে দেখলেই প্রেম-ট্রেম নিয়ে ভাবা, সাধারণ কোনো মেয়ের ভিডিও বের হলে লিংক চেয়ে একাকার করে ফেলা, সবকিছুর জন্যই।
বাংলাদেশের আশিভাগ ছেলে ১৫-১৬ বছর বয়সে সমবয়সী একটা মেয়ের সঙ্গে মেশার সুযোগও পায় না। বেশিরভাগ স্কুলই ছেলে-মেয়েকে আলাদা শিফটে পড়ায়। এসএসসি পরীক্ষার্থি একটা ছেলে সারাটা জীবন মিশেছে অন্য ছেলেদের সাথে। কোনো মেয়ের সঙ্গে সে প্রতিদিন ক্লাস করতে আসেনি, একসঙ্গে বাড়ি ফিরে যায়নি, পরীক্ষার হলে কোনো মেয়ের খাতা সে দেখাদেখি করেনি, ঝগড়া হলে কোনো মেয়ের হাঁটুর জয়েন্ট ছোটানোর জন্য সে লাথি মারেনি, রাগারাগি করে সে ১৮+ গালিগালাজ কোনো মেয়ের সঙ্গে করেনি, পানি ভর্তি পথে পা পিছলে পড়া কোনো মেয়েকে স্রেফ মানুষ মনে করে হাত ধরে তার পতন ঠেকায়নি, কোনো মেয়ের সঙ্গে হ্যান্ডশেক করেনি, অনেকদিন পর দেখা হওয়া কোনো বান্ধবীকে সে বুকে জড়িয়ে ধরে সম্ভাষণ জানায়নি। (হ্যান্ডশেকই এদেশে “কি সর্বনাশ, ছুয়ে ফেললি যে” পর্যায়ের, আর ফ্রেন্ডলি হাগের কথা বাদই দিলাম)
অথচ এর সবগুলো কাজ সে তার বন্ধুর সঙ্গে করেছে। অথচ সে তখন একটা মেয়েকেও ঠিকমতো চেনে না। মেয়েরা যেনো দূরের গ্রহের অন্য প্রাণি, সে ঠিক মানুষ নয়। মানুষ শুধু ছেলেরা। মেয়ে ইজ ইকুইভ্যালেন্ট টু সেক্স-পার্টনার।
ওয়েল, জাতিগতভাবে ছেলে-মেয়ে আসলে তাই, তবে ইনডিভিজুয়ালি ব্যাপারটা যে আলাদা হতে পারে তা একজনকে আপনি মুখে বলে কিংবা স্ট্যাটাস লিখে শেখাতে পারবেন না। এটা জীবন থেকে শিক্ষা নেওয়ার বিষয়। আর ছেলেদের মতো মেয়েদেরও শুধু “মানুষ” ভাবার শিক্ষাটা আসতে পারতো কেবল ছোটোবেলা থেকে ছেলেদের মেয়েদের সঙ্গে এবং মেয়েদের ছেলেদের সঙ্গে বেড়ে ওঠার সুযোগ দেওয়া হলে।
আপনি একশটা মেয়েকে একশটা ছেলের সঙ্গে ক্লাস ওয়ান থেকে টেন পর্যন্ত পড়তে দিলে তারা দশ বছর পর একশ’টা কাপলে পরিণত হয় না। বরং পুরুষ ও নারীজাতিকে রেসপেক্ট করতে শেখা দুইশ’ জন তরুণে তারা পরিণত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তারা জানে মেয়ে কিংবা ছেলে হিসেবে মানুষকে আলাদা করে ফেলার কিছু নেই। বায়োলজিকাল কিছু ডিফরেন্স বাদে একে অন্যের পার্থক্য নেই। তারা তখন জানে, ছেলেরা খুবই স্বাভাবিক একটি জাতি যেমনটা মেয়েরা। তারা জীবনেও মেয়ে দেখেনি এমন কোনো অদ্ভুত বস্তু না।
এবং হয়তো একই কারণে, তারা তখন মেয়েদের মানুষ ভাবে।
ছোট্টবেলা থেকে ছেলেমেয়েকে একসাথে মিশতে দেওয়া উচিত বলে আমি মনে করি।
মিশতে না দিয়ে কি উদ্ধার করেছেন সমাজের মাথারা? নব্বই শতাংশ ছেলেমেয়ে প্রেম-ট্রেম করছে, মাসে দুইমাসে ব্রেকআপ করছে। মেয়ে দেখলেই প্রেম নিয়ে ভাবছে। সুযোগ পেলে ঝাঁপিয়েও পড়ছে, সুযোগ না পেলে ভিড়ের ফাঁকে অনৈতিক আগ্রাসন।
ছেলে আর মেয়েদের যতো আলাদা করে রাখবেন, ততোই চলবে এসব। একসাথে তাদের বেড়ে উঠতে দিলে কিছু বিশুদ্ধ প্রেম আর সেন্সিবল একটা ইয়াং জেনারেশন হয়তো পাওয়া যেতো। লাখো আজাইরা প্রেম আর লিংক চাওয়া তরুণ সমাজের চেয়ে সেইটা অনেক বেটার।
মাঝে মাঝে মনে হয় কামাল পাশাই ঠিক। 

যখন আমি এইগুলাকে দেখি।
(কমেন্ট বক্স বিশ্লেষণ করে যোগ করতেই হয়, এইখানে রেপ/ইভটিজিং প্রসঙ্গই না। তারও গোড়ার কথা প্রসঙ্গ। একজন মেয়েদের ভোগপণ্য ভাবা শুরু করে যখন, তখনকার প্রসঙ্গ। আর ভাই কোথাও বলা হয়নি কো-এডুকেশনের ফলে সব ছ্যাচড়া ছেলে উধাও হয়ে যাবে। এটুকু আমি নিশ্চিত এখন ১০০জনে ৭০জন মেয়েদের নিয়ে নোংরা দৃষ্টিভঙ্গি রাখলে, তখন ১০০জনে এমন ছেলের সংখ্যা হবে ৫। এইটাই অনেক।)
২৬শে মার্চ, ২০১৮
উন্নত বিশ্বেও ধর্ষক আছে, অ্যাবিউজার আছে।
কিন্তু অবাধ মেলামেশার অভ্যাসের কারণে ছেলেরা মেয়েদের সম্মান করে। মেয়েরাও ছেলেদের শ্রদ্ধা করে। রাস্তা দিয়ে হাঁটলে একটা মেয়ের দিকে সবাই তাকিয়ে থাকে না, (এমনকি রিকশাওয়ালারা পর্যন্ত মাথা ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে মেয়ে দেখে এই দ্যশে!) বাসে উঠলে স্তন চেপে ধরার চেষ্টা করে না কেউ কারও।
কো-এড হলে শুধু ধর্ষক আর মলেস্টার থাকবে। আগে ধর্ষক আর মলেস্টারের পক্ষে কথা বলার জন্য ছয় কোটি গলা শোনা যেতো, ওটা আর শোনা যাবে না। এটাই তো আসল।
ধর্ষক আর মলেস্টার অপরাধী। তাদের অপরাধীর মতো ট্রিট করতে পারবেন। এখন যদি দেখেন দেশের অর্ধেক লোকই অপরাধী তাদের তো আর অপরাধীর মতো ট্রিট করতে পারবেন না। এ ওর পক্ষে পোস্ট দেবে, সে তার বিপক্ষে। এগুলা তো সমাধান হলো না।
যে দেশের অর্ধেক লোক অপরাধী সেই দেশের শিশুদের মানসিকতায় পরিবর্তন আনতে হবে। বুড়োগুলো গেছে। বিয়ন্ড রিপেয়ার।
২৬ শে মার্চ, ২০১৮
ধর্ষণ আর নারীদের হয়রানি প্রতিরোধ কি করে করা যাবে তা নিয়ে ২০১৫ সালে মনে হয় এক লম্বা পোস্ট করেছিলাম। এমন না ওটা করার ক্ষমতা আমার আছে, তবে ক্ষমতা থাকলে অবশ্যই করতাম। ম্যাজিকের মতো ধর্ষণ উধাও হয়ে যেত ২০৩০ সালের বাংলাদেশে। করতো হয়তো কিছু বুড়ো ভাম, তাদের লটকে দিলেই হয়ে যেতো।
কো-এড। এইটাই সমাধান।
ছেলেরা আর মেয়েরা পাঁচ বছর বয়স থেকে একসাথে বড় হবে। একে অন্যের সঙ্গে চিমটাচিমটি করে বেড়ে উঠবে। বয়ঃসন্ধির প্রাক্কালে একসাথে নোংরা নোংরা গালি দিতে শিখবে। প্রেম-ট্রেম করলেও করবে। অপরিকল্পিত গর্ভধারণের মতো ঘটনাও ঘটতে পারে (যেইটা কো-এড ছাড়াও কম ঘটে না, নেগেটিভ দিক আলোচনার স্বার্থে বলছি)। তবে আরেকটা জিনিস নিশ্চিতভাবেই ঘটবে।
ছেলেরা মেয়েদের সমান সমানভাবে সম্মান করতে শিখবে, মেয়েরাও ছেলেদের সম্মান করবে। এই সম্মান করার ব্যাপারটা বড় বড় পোস্ট লিখে শেখানো যাবে না কাওকে। মাথায় বন্দুক ধরেও শেখানো যাবে না। সম্মান করা শেখা যায় কেবল একসাথে সময় কাটিয়ে। এই সময় কাটানোর সুযোগ এই দেশে অনেকেই পায় না।
একসাথে সময় না কাটালে কিভাবে একজন মানুষ আরেকজন মানুষকে চিনবে? সম্মান করবে? আজীবন বয়েজ স্কুলে পড়ে কিংবা বয়েজ শিফটে পড়াশোনা করে নোংরা চুটকির মাধ্যমে তো আর নারী জাতিকে চেনা যায় না। যে কোনো সম্প্রদায়কে চিনতে হলে তার সাথে মেলামেশা করেই চিনতে হবে। এই মেলামেশার সুযোগটা সরকারকে করে দিতে হবে বাধ্যতামূলকভাবে।
প্রতিটা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে বাধ্যতামূলকভাবে কো-এড করতে হবে। দশ বছর পর ধর্ষণের হারটা দেখবেন খালি।
[শরীয়ত, পর্দা, ধর্ম ইত্যাদি নিয়ে লম্বা আলোচনার জন্য একদল চলে আসবেন। তারা নিজেরাও জানেন, মানুষ ধর্ম মানতে আগ্রহী না। যেটা মানুষ মানতে আগ্রহী না সেই রাস্তায় সমাধান আনা সম্ভব না। কিন্তু ছেলেরা মেয়েদের সাথে বড় হতে, বা মেয়েরা ছেলেদের সাথে বড় হতে চরম মাত্রায় আগ্রহী, তা লিখে রাখতে পারেন। অর্থাৎ এটা একটা অ্যাপ্লিকেবল পদ্ধতি। ধর্মীয় আইন মানা অ্যাপ্লিকেবল না। কারণ, মানুষ এতো বিধিনিষেধ মানবে না কখনও ঠেকায় না পড়লে। কিন্তু কো-এড ঠেকা ছাড়াই মানুষ গ্রহণ করবে।]
৯ই জুলাই, ২০২০
আমি সব সময় বলি ধর্ষণ, ইভ টিজিং বন্ধে একমাত্র পথ হচ্ছে কো-এড চালু করা বাধ্যতামূলকভাবে। ছেলে মেয়ে ক্লাস ওয়ান থেকে একসাথে পড়বে। একে অন্যকে স্বাভাবিকভাবে নিতে শিখবে। মিউচুয়াল রেস্পেক্ট হবে। বিশেষ করে বয়ঃসন্ধিকালটা ছেলেদের এবং মেয়েদের উচিত একে অন্যের আশেপাশে বেড়ে ওঠা।
শুনতে হয়েছে ৯০% মুসলমানের দেশে এসব চলবে না। 

৮ই ডিসেম্বর, ২০২২
এই যে বঙ্গবীরেরা আর্জেন্টিনার মেয়েদের দনের ছবি পাঠালো এর পিছে কি তারা দায়ী?
জ্বি না। এর পিছে দায়ী আমাদের ইজলামিক বা ধর্মীয় কালচার। কো এড করা যাবে না, ছেলে মেয়ে ছোট বেলা থেকে আলাদা রাখতে হবে —
এটা একেবারে মূল কারণ এসবের। ছেলে-মেয়ে আলাদা রাখা, প্রেমের বিরুদ্ধে হুঙ্কার দেয়া, চোখ বাঁকা করা — এসবের কারণে বেশিরভাগ ছেলে জিন্দেগিতে মেয়েদের সাথে মিশে নাই। এরা দনের ছবি পাঠায় নয়ত ক্রিপি আলাপ করে।
ছেলে আর মেয়ে মিশতে দেন একসাথে, প্রেম করুক, প্রেগন্যান্ট হোক, মানুষ হোক অন্তত।
এখন এরা একেকটা মাদারচোত।
আপনার ইসলামিক কিংবা কনজারভেটিভ সেন্সের জন্য। আর কিছুই না।
এসব দনের ছবি পাঠানো লোকজনকে দোষ দিবো না তো।
দোষ ধর্মীয় এবং সামাজিক চেতনার।
এসবই শত্রু। জনগণ না।

Friends at the Tre Cime di Lavaredo
Leave a Reply