KP Imon

Words Crafted

সন্তানগ্রহণের চরম বিরোধী আমি

বাংলাদেশের মাটিতে সন্তানগ্রহণের চরম বিরোধী আমি।

এই সমাজ, এই দেশ নতুন প্রাণের জন্য সেফ নয়। আপনি সাকিব আল হাসান হলেও নয়। আপনার ব্যাংকে দুশো কোটি টাকা থাকলেও নয়। দেখা যাক আমার একটি কন্যা সন্তান হলে তার সাথে ভবিষ্যতে কী ঘটবে।

তাকে আমি অবশ্যই দারুণ সিকিউরিটির বলয়ে দশ-বারো বছর পর্যন্ত বড় করতে পারবো। তবে তারপর তাকে আর স্বাভাবিক জীবন আমি দিতে পারবো না। স্বাভাবিক জীবনে একজন মানুষ মুক্ত জীবন যাপন করতে পারে। মনের খুশিতে হাঁটতে পারে। আমার মেয়ে মনের খুশিতে হাঁটতে পারবে না এদেশে। মানুষ তার পাছা দেখার চেষ্টা করবে মাথাটা বাড়িয়ে। রাস্তায় নামলে ৮০% পুরুষ তার দিকে হা করে তাকিয়ে থাকবে। অপলক। যোম্বিদের মতো। রিকশাওয়ালা মুখ ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে তার দিকে তাকাবে পাশ দিয়ে যাওয়ার সময়। ওটা কোনও সুস্থ পরিবেশ নয় হাঁটার জন্য।

গাড়িতে বন্দী জীবন আমার মেয়ে কেন যাপন করতে বাধ্য হবে?

চমৎকার কিছু ছেলের সাথে আমার মেয়ের প্রেম হবে। তারা হয়তো তাকে দুঃখ দেবে, কিংবা সে দেবে তাদের দুঃখ। তার বন্ধুচক্র তাকে ডাকবে “মাগি” কিংবা “বারোভাতারি।” টক্সিক এই পরিবেশটি তাকে পেতেই হবে। বন্ধুরা ইংলিশ মিডিয়ামের ছাত্র হলেও, বাংলা ভার্সনের ছেলে হলেও। এই টক্সিসিটি থেকে মেয়েকে কীভাবে রক্ষা করবেন? “মেনে নাও? লোকে তো বাজে বলবেই-” বলে? না, আমার মেয়েকে আমি মেনে নেয়ার শিক্ষা দিয়ে তো বড় করিনি, সে পালটা গর্জে উঠবে নিজের অধিকার বুঝে নিতে। লোকে আরও আক্রমণ করবে। এই যে একটা টক্সিক পরিবেশ, বাড়তি প্রেশার, তার মধ্য দিয়ে কেন যেতে হবে আমার মেয়েকে?

আমার মেয়ে নতুন একটা ড্রেস পরেছে, সেই আনন্দে নিজের একটা সেলফি তুলে পোস্ট করবে। রাজ্যের পর-অধিকার চর্চায় ব্যস্ত মানুষ এসে কমেন্ট করবে, “বুক দেখিয়ে কী প্রমাণ করতে চান?” “হেদায়াত হোক।” “নারীর জন্য পর্দা করার আয়াত ও হাদীস এই, রেফারেন্সসহ।” “এমন উলঙ্গ থাকার কারণেই ধর্ষণ বেড়েছে” ইত্যাদি।

কেন? আমার মেয়েকে কেন এই বিচ্ছিরি দুঃখগুলো, অপমানগুলো ফেস করতে হবে? কেন তাকে ড্রেসটা কতটা মানিয়েছে তা নিয়ে ভদ্রগোছের আলোচনা তার টাইমলাইনে হবে না?

আমার মেয়ে রাস্তায় হাঁটতে পারবে না। আমার মেয়ে বন্ধু বা ক্লাসমেটদের কাছে সম্মান পাবে না। আমার মেয়ে নিজের একটা ছবি পোস্ট করেও শান্তিতে থাকতে পারবে না।

এই হিংস্র সমাজে কোন দুঃখে আমি তাকে জন্ম দেব? দুশো কোটি টাকা থাকুক, পাঁচটা ল্যান্ড রোভার থাকুক, আপনার মেয়েকে, আপনার সন্তানকে আপনি এই টক্সিসিটি থেকে বাঁচাতে পারবেন না।

বাংলাদেশের মাটিতে সন্তানগ্রহণের চরম বিরোধী আমি। আমি চাই আমার সন্তান একটি সুস্থ পরিবেশে বড় হবে। মানুষের মর্যাদা নিয়ে বাঁচবে। সেক্স ডল হয়ে নয়, আল্লাহর দাস হিসেবে নয়। দাসত্ব আমার সন্তানদের জন্য না। তেমন পরিবেশ বাংলাদেশে নেই।

কাজেই আমি লড়ি। আমি লড়ি তাবৎ পর-অধিকার চর্চার বিরুদ্ধে। নিজের জন্য নয়।
আমাদের অনাগত সন্তানদের জন্য।
এবং আমি মনে করি যে মতবাদ ও বিশ্বাসের লোকই আপনি হয়ে থাকুন না কেন, অনাগত বা আগত সন্তানদের জন্য এই লড়াইটি আপনারও।

এই সমাজটা আমাদের পরিষ্কার করতে হবে। Cool হিসেবে স্বীকৃতি আদায় করতে হবে বাউন্ডারির ভেতরে থাকা, তা চর্চা করাকে। কেউ নিজের বাউন্ডারি ক্রস করা কথা বললেই তাকে যেন “খ্যাত” হিসেবে দেখা হয় সেটি প্রতিষ্ঠিত করতে হবে আমাদেরই। সমাজ-সংস্কার করে তবেই না সন্তানগ্রহণ। মাথায় মাল উঠে গেল আর পয়দা করে ফেললাম তা তো কোনও বিবেকবান নাগরিকের কাজ হতে পারে না।

নইলে আমাদের জেনারেশনের মতো, আপনার সন্তান যখন তার বন্ধুদের খেদ নিয়ে জিজ্ঞাসা করবে, “এই বালের পরিবেশে জন্ম দিলে কেন?”
কী জবাব দেবেন?

কিশোর পাশা ইমন

Website: http://kpwrites.link

১২টি ক্রাইম থৃলারের লেখক কিশোর পাশা ইমন রুয়েটের মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ছাত্র ছিলেন, এখন টেক্সাস ষ্টেট ইউনিভার্সিটি থেকে মাস্টার্স করেছেন মেকানিক্যাল অ্যান্ড ম্যানুফ্যাকচারিং ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে। বর্তমানে টেক্সাসের স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয় ইউটি ডালাসে মেকানিকাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পিএইচডির ছাত্র। ছোটগল্প, চিত্রনাট্য, ও উপন্যাস লিখে পাঠকপ্রিয়তা পেয়েছেন। তার লেখা প্রকাশিত হয় বাংলাদেশ ও ভারতের স্বনামধন্য প্রকাশনা সংস্থা থেকে। তার বইগুলো নিয়ে জানতে "প্রকাশিত বইসমূহ" মেনু ভিজিট করুন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *