Skip to content
KP Imon
KP Imon

Words Crafted

  • গুহামুখ
  • সূচিপত্র
  • গল্প
    • রম্য
    • জীবনধর্মী থৃলার
    • সাইকোলজিক্যাল
    • রোমান্টিক
    • ক্রাইম
    • সাসপেন্স
    • জীবনধর্মী
  • নন-ফিকশন
    • থট প্রসেস
    • উচ্চশিক্ষা
    • আমেরিকা-নামা
    • জীবনোন্নয়ন
    • তাত্ত্বিক আলোচনা
    • ডায়েরি
  • প্রকাশিত বইসমূহ
    • প্রকাশিত বইসমূহ
    • যেসব গল্প সংকলনে আছে আমার গল্প
KP Imon
KP Imon

Words Crafted

আমেরিকানামা – খুচরো লেখা (১)

Posted on October 14, 2022February 12, 2023
শহরপ্রেম
“তুমি তো ভাই ভেতরে ঢুকতেছো, ঢুকতেছো কি না বলো?”
আধমাতাল আমেরিকানের এই প্রশ্নের জবাবে কি বলবো বুঝে পেলাম না। দাঁড়িয়ে আছি জেলিকসের সামনে। টেক্সাস স্টেটের পোলাপান ফাঁক পেলেই এখানে এসে হাজির হয়ে যায়। মেরে দেয় এক পেগ। কিংবা পটিয়ে সঙ্গিনি নিয়ে যায় বাড়িতে। তার সামনে দাঁড়িয়ে পাঁচ ফুট ছয় এই দরাজদিল তরুণের হুঙ্কার। সেই সাথে বাড়িয়ে দিয়েছে ফিস্ট। আগে ফিস্ট বাম্প করলাম। তারপর বললাম, “ঢুকবো তো অবশ্যই। আমাদের গন্তব্যটাও, হেহে…”
পেছনে দাঁড়িয়ে আছে আমেরিকান ও ইরানি বন্ধু। ইরানি বন্ধু আমেরিকায় ভেগেছে বাধ্যতামূলক মিলিটারি এনলিস্টেড হওয়া থেকে বাঁচতে। কয়দিন আগেও শালাকে বলেছি, “তুমি নাকি ইদানিং গে বারে ঘুরতেছো, ইরানে নাকি যাবা সামারে। তোমাকে ইরানি ইন্টেলিজেন্স তুলে নিয়ে পুটকি মারবে। যতসব নাজায়েজ কাজকারবার।”
ব্যাটা নির্লজ্জের মতো হেসে বলেছিল, “আরে বারটেন্ডারের পাছা বেরিয়েছিলো, মিয়া।”
নাক কুঁচকে বলেছিলাম, “সামারে দেশে যাবা যাও, ফিরতেছো না আর তা নিয়ে সন্দেহ নাই। তোমার হোগা মারা সারা।”
আমাদের তৃতীয় সঙ্গি, আমেরিকান বন্ধু আমেরিকান আর্মিতে এনলিস্ট হয়েছিলো, সার্ভিসে ছিলো। দু’শালা এমন বুক ডন লাগিয়েছিলো মাতাল অবস্থায়, ৭ মাস আগে, তার কথা আর মনে করতে চাইলাম না। লেগে গেছিলো দুটোর মধ্যে, তারা নাকি ৭০ এর বেশি পুশ-আপ পারে। মিলিটারি ইগো বলে কথা। তারপর পার্কিং লটে এক স্যান মার্কোসের ছোকরা এসে তাদের সাথে কম্পিটশন। শেষটায় আমার বন্ধুদ্বয় পারলে তার নাক ফাটায় আরকি। অনেক কষ্টে দুই মাতালকে ডি-এস্কেলেট করতে হয়েছিল সেদিন। তবে সেসব কথা ভুলে থাকতে হলো।
আধমাতাল দিলখোলা লোকটা জানতে চাইছে, “লেট মি বাই ইউ আ ড্রিংক, এহ! মদ তো খাও? ও, খাও তো। বলেছিলে আগের আলাপে -”
আমি কেবল চারপাশে তাকালাম অসহায়ের মতো, ভালোবাসার আহ্বান – প্রত্যাখ্যান করার মতো নয়। কেবল বললাম, “একটা সেকেন্ড একটু ভাবতে দাও। প্রফেসর যে পাছাটা মেরেছে একটু আগে আমার দলের-”
আমুদে হয়ে গেল বেচারার চেহারা, এক পা এগিয়ে বললো, “আরে ভাবাভাবির কি আছে। আইপিএ বিয়ার তো খাও, নাকি? নাকি পছন্দ না অমন?”
মক্কায় গিয়ে কাবাকে বাজে বলবেন না। আমার বিখ্যাত শিশুতোষ হাসিটা ছুঁড়ে দিয়ে যুবককে বললাম, “আরে কি কও মিয়া, আইপিএ তো সেরা!”
একটুও গলে গেল না ছোকরা। গলা একটু নামিয়ে প্রাসাদ ষড়যন্ত্রের মতো বললো, “আরে বাড়া, বিয়ারে কি হয়, আরও কিছু বলো। এই এক হাল্কা ড্রিংক অর্ডার করে পাপী করো না আমায়। আমি খাওয়াচ্ছি তো, বাপ!”
ভুবনভোলানো হাসিটা উপহার দিতে দিতে আবার বললাম, “রাত তো শুরুই হয় নাই। কি কও! অর্ডার করো যাহা চায় পরাণে।”
পেছনে ফিরে দোস্তদের বললাম, “বন্ধুরা, এ হলো লোগান। মনে আছে, ডিসেম্বরে তোমাদের হোগা মেরে যে শুটিংটা করতে চাইছিলাম – ”
বন্ধুবরদের মুখ হিংসেয় এতখানি হয়ে গেল। লোগানের দিকে ফিরে বললাম, “আরে তোমার সাথে শুটিংয়ের আলাপ যে ছিলো। এর পর এই দুই বাইনচোদকে ঝুলিয়ে রেখেছিলাম। একটা আউটিংয়ের ডাকেও সাড়া দেই নাই। আর তুমি কি না বোকাচোদা চলে গেলা শহরের বাইরে।”
বিষয়টা বুঝে কৃতজ্ঞতায় ছেয়ে গেল যুবকের মন, আমার বুকে একটা ঘুষি ছুঁড়তে ছুঁড়তে বললো, “ইউ বাস্টার্ড! এইভাবে বন্ধুদের গোয়া মেরেছো জানলে শহর ছাড়তাম না…”
হোয়াইট সুপ্রেমিস্ট টেক্সাসে কম নয়। এদের চোদনে টেকার উপায় নেই। বর্ণবিদ্বেষী আচরনের শিকার হয়েছিলাম এখানে আসার ৩ মাসের মাথায়। আমাকে ট্রেসপাসিংয়ের হুমকি দিয়েছিলো এক সাদা বারটেন্ডার, কারণ আমি তাদের দোকান খোলার ১৩ মিনিট আগে এসে পৌঁছেছি। হজম করে নিয়েছিলাম। কারণ ব্যাটা যা বলেছে আইন অনুসারে তা সঠিক। তবে আমাকে এটা বলেছে কারণ আমি সাদা নই। নইলে ভদ্রভাবে বলতো ১৩টি মিনিট পর বার খুলবে ওরা। আমি যেন একটু পরে আসি। ট্রেসপাসিং এবং গুলি ছোঁড়ার হুমকি সে দিত না। তারপর এ নিয়ে একটা ভেজাল লাগিয়েছিলাম বটে, তবে সে আরও পরের কাহিনী, লম্বা কাহিনী।
লোগানের ঘুষিটা বুকে আছড়ে পড়ার সাথে সাথে স্যান মার্কোসবাসীর যাবতীয় দোষত্রুটি ক্ষমা করে দিলাম। বন্দুকের মতো তাক করলাম একটা আঙুল, সরাসরি লোগানের কপাল বরাবর, “তুমি ভাই কম না, শহরের টপ খানকি। ডিসেম্বরে শুট করার কথা বলে নিজেই ভাইগা ছিলা। বালামার।”
হয়ে গেল। আমাকে প্রায় বগলদাবা করে কাউন্টারে নিয়ে গেল সে। এই লোগান উলভারিন নয়। কাজেই মনে কিছু নিলাম না। বন্ধুবরের দিকে ফিরে বললাম, “ও হচ্ছে “হালাল ক্লাবে”র ঔনার। নট দ্যাট ইউ কেয়ার, হেহে। তবে লোগান সুপার কুল একটা লোক। মনে আছে না ওর কথা? তোমাদের বলেছিলাম তো।”
ওদের চোখ হিংসেয় আরও ছোট ছোট হয়ে এলো। লোগান গলাটা যত সম্ভব নামিয়ে বললো, “আরে ঔনার না, ম্যানেজার বলো। ম্যানেজার বলো।”
আমি চোখ টিপলাম, “ম্যানেজার। কোট-আনকোট। বুঝোই তো।”
লোগান ওদের সাথে পরিচিত হতে হতে বললো, “আই রেসপেক্ট দিস গাই, ম্যান। ম্যাসিভ রেস্পেক্ট। যে একটা জীবন ওর, ভাইরে ভাই। সেরা।”
কোনও কারণ নেই, তবুও আমার গলার কাছটায় দলা পাকিয়ে উঠলো। আমাকে কেউ চেনে না এ শহরের লোক। বাংলা তারা পারে না। পড়েনি আমার একটাও বই। একটা ফেসবুক পোস্টও। আমার ইউনিভার্সিটিতেও পড়ে না ও। কিংবা ক্লোয়ি। কিংবা এক্স-ইউস-এয়ারফোর্স হেইডেন। কিংবা চুল কাটে যে ছেলেটা, ডালাস। কেবল মিশেছে আমার সাথে একটু। আলাপ করেছে। আর কিছুই নয়।
কিন্তু ভালোবেসেছে ওরা আমাকে। খোঁজ নিয়েছে আমার ব্যাপারে। সম্মান করেছে তারপর।
কোনও কারণ নেই। হোয়াইট সুপ্রেমিস্ট ভরা এই শহর। আমার মতো বিদেশিকে সহ্য করে বড়জোর , কিন্তু আপন করে নিতে নারাজ বেশিরভাগ মানুষ। কোনও কারণ নেই আমার।
তারপরও চট করে ভালোবেসে ফেললাম কাউন্টারে আমার পাশে দাঁড়িয়ে উত্তেজিত হয়ে আমাকে এই ‘শট’টার উপাদানের ব্যবচ্ছেদ করতে থাকা লোগানের শহর স্যান মার্কোসকে। লোগান তখন আমার হাতে থাকা থ্রিডি প্রিন্টেড যন্ত্রাংশের দিকে আঙুল তুলে জানতে চাইছচে, “এই ধোনটা আবার কি?”
একটু হাসি আমি। বোঝাতে শুরু করি আমি ওকে যন্ত্রকৌশলের নানা কলাকৌশল। কীভাবে একটা আলো ফেলেই আমরা বানিয়ে ফেলবো গায়েবী যন্ত্রাংশ। শেষ করি ছোট্ট এক শব্দ দিয়ে, “ম্যাজিক!”
শুধু বলি না, “আই লাভ ইউ, স্যান মার্কোস। আই লাভ ইউ।”
– এপ্রিল ০৪, ২০২২
আমেরিকার হাইস্কুল, বা এক হতাশার গল্প…
গতকাল রাতে রুমমেটদের সাথে বহুদিন পর আড্ডা দেবার সময় হলো। রাত ১১টায় উঠেছিলাম এক কাপ চা খাবো বলে। চায়ের ভূত আমার মধ্যে প্রকট। কিচেনে গিয়ে দেখি ইস্টন আর উইল এক সাইফাই মুভির পিন্ডি চটকাচ্ছে। সামনে তাদের খোলা ইউটিউবের স্ক্রিন। দু’জনেই আন্ডারগ্র্যাডের ছাত্র। একজন ইলেকট্রিকাল, অপরজন ফিল্ম মেজর। চায়ের আলাপ উঠতেই সবটা দায় ব্রিটিশদের ঘাড়ে চাপিয়ে দিলাম। অম্লান বদনে বললাম, “আমার এই নেশা এসেছে ১৭৫৭ থেকে ১৯৪৭ এর আফটার ম্যাথ থেকে।”
ওরা কিছুই বুঝলো না। কাজেই একটু খোলাসা করলাম, “ব্রিটিশদের থেকে। ব্যাটারা ঘাড়মোড় ভেঙে শাসন করেছে আমাদের। তোমাদের পূর্বপুরুষদের মধ্যে ব্রিটিশ কেউ আছে নাকি হে?”
ইস্টন বললো, “আমার একসাইড আইরিশ। জাতিগোষ্ঠী হিসাব করলে ব্রিটিশ আমারও দেখতে পারার কথা না।”
হেসে ফেললাম, “আইআরএ নিয়ে টিভি সিরিজ আর মুভিগুলোতে যা দেখানো হয়, তেমনটাই তো মনে হয়। তবে আমাকে ভুল বুঝো না। ব্রিটিশদের আমি অপছন্দ করি এমন না। সব জাতিরই কলঙ্কিত ইতিহাস আছে, তা থেকে কোনও জাতির সবাই খারাপ হয়ে যায় না।”
আলোচনা চা থেকে দারুণ দিকে মোড় নিলো সেই সাথে। আমেরিকার ও শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে আলাপ উঠে এলো এভাবেই। ইস্টন বললো, “বর্ণবাদ নিয়ে কাজ হচ্ছে বলে ভেবো না খুব বেশি জাতিকে কাভার করা হচ্ছে। আমেরিকার প্রাচীন অধিবাসীদের নিয়ে তেমন কিছুই টেক্সটবুকে লেখা নেই, দুটো লাইন লিখেই অহেতুক বগল বাজানো, যেন কত না কী করে ফেলেছি আমরা, অধিকার ফিরিয়ে দিয়েছি! আর এশিয়ানদের ওপর যে অত্যাচার আমরা করেছি, জাপানিদের ওপর – তা নিয়ে তো একটা বর্ণ নেই। ভয়াবহ অবস্থা।”
ইস্টন জানালো তার বাবা রেড ইন্ডিয়ানদের একটি সংস্থার অনারারী পদধারী। ডিএনএ থেকে তাদের সাথে মিল পাওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ, যেহেতু ভদ্রলোক আইরিশ। তবে ইস্টন যখন ছোট ছিলো, তাকে মাঝে মাঝে তিনি ডেকে পাশে বসাতেন। তারপর শুরুটা করতেন এভাবে, “এখন আমরা একটু অস্বস্তিকর টপিকে কথা বলবো-”
তিনি ছোট্ট ইস্টনকে ভালোভাবে বুঝিয়ে দিয়েছিলেন ঠিক কেমনটা অনাচার তাদের সাথে করা হয়েছে এবং হচ্ছে। মানুষ হয়ে মানুষের ওপর অত্যাচার থেকে কথা দ্রুত ঘুরে গেল এনিমল ফার্মিং ও ভিগানদের নিয়ে। উইল র‍্যাঞ্চে বড় হয়েছে। টেক্সাসের খাঁটি সন্তান। ল্যাসো বানিয়ে গোরু আটকাতে পারে সে। বন্দুক চালাতে পারে এইটুকু বয়স থেকে। ঘোড়া দাবড়ানোও ছেলেখেলা। ফার্মিং তার রক্তে। সে ভিগানদের নিয়ে খুবই বিরক্ত। তার কথা হচ্ছে, এত লিভিংস্টক যে আছে এদের তাহলে কী করবো আমরা? তার ক্ষোভের কারণ আমরা বুঝি। নো শেভ নভেম্বরের মুভমেন্টে নাপিত যেমন বেজার হন, প্রাণি খাওয়া ছেড়ে দেয়ার কারণে উইল অবশ্যই বিরক্ত হবে। কিল অর টু বি কিলডে সে নিদারুণ বিশ্বাসী। কোনও কুকুর তাকে মারতে এলে সে যে কুকুরটিকে মারতে কসুর করবে না এবং এ নিয়ে তার বিবেক আটকাবে না তা বলতে গিয়ে র‍্যাটল স্নেক মারার গল্প উঠে এলো।
সাপ মারার অভিজ্ঞতা নেই এমন টেক্সাসের পুরোনো বাসিন্দা মনে হয় একজনও খুঁজে পাওয়া যাবে না। সাপ মারার জন্য ইস্টনের বাবার একটা আলাদা বেলচাই ছিলো। ইস্টনের ভাষায় ওটা হলো ওদের পারিবারিক “কিলিং শোভেল”। ঘাসের মধ্যে নড়াচড়া দেখে সিনিয়র কেবল চাপা গলায় বলবেন, “এই আমার বেলচাটা বের করো তো।”
ওই সাপের দফারফা ওখানেই সারা। সেন্টিপিড নিয়ে কথা উঠলো সেই প্রসঙ্গে। উইল বললো, “সাপ আমি মেনে নিতে পারি। কিন্তু সেন্টিপিড আমি দুই চোখে দেখতে পারি না।”
বিটকেলে এক সেন্টিপিডকে শাবল গাঁথিয়ে দেবার পরও বাকি অংশটা কীভাবে তাদের কাঁচকলা দেখিয়ে ভেগে গেছিল সে আলাপ করতেই হলো তাকে। উইলরা অবশ্য সাপ বেলচা দিয়ে মারে না। তারা র‍্যাঞ্চের লোক। কথায় কথায় গুলি চলে। র‍্যাটলস্নেক সে প্রচুর মেরেছে বন্দুক দিয়ে। তার মতে, “সাপের বাচ্চা তো আর বুঝে না আমার হাতে ও কি জিনিস। তারা বন্দুক দেখে তো আর মানুষের মতো আঁতকে উঠতে শেখেনি। নইলে অনেক সাপই বেঁচে যেত। বন্দুক আমার হাতে, আর সাপ বোকাচোদা মনে করছে সে তখনও আপারহ্যান্ডে আছে…”
সাপ মারার আলাপ দ্রুতই মোড় নিলো আইন ও বিধানসভা নিয়ে। এর সাথে শিকারের সম্পর্ক আছে। প্রাচীন কিছু আইন অনুসারে আপনি আপনার বাড়ির দোতলা থেকে কোনও হরিণের দিকে গুলি ছুঁড়তে পারবেন না। জানতে চাইলাম, “তেতলা থেকে গুলি ছোড়ার ব্যাপারে আইনটা কি জানতে চায় আমার অবুঝ মন।”
ব্যাপক সমালোচনা আমরা করলাম পুরাতন আইন না সরানোর। ও সময় টেক্সাসে দোতলার ওপর বাড়িই ছিলো না বলতে গেলে। গেম ওয়ার্ডেনকে নির্ঘাত গুরুগম্ভীর গলায় বলা যাবে এখন, “দেখুন স্যার, গুলি কিন্তু দোতলা থেকে করিনি। তিন তলা থেকে করেছি। সাক্ষীসাবুদও প্রস্তুত। আইনের ওপর তো আর কথা চলে না স্যার…”
টেক্সাসের যে সংবিধান তা আমেরিকার সংবিধান থেকেও বড় এবং বিস্তৃত। তারা প্রায়ই দাবী করে থাকে স্বাধীন ও সার্বভৌম হবার সামর্থ্য তাদের আছে।
জানতে চাইলাম, “ব্রেক্সিটের মতো বেকুবি তো আর টেক্সাসের লোকজন করবে না?”
ইস্টন হাসলো, “পাগল নাকি। এগুলো স্রেফ ইগো স্যটিসফাই করতে বলা। কারণ আমরা চাইলে আসলেই পারি। কিন্তু কেন করবো?”
এ সেই চিরায়ত বাংলা কবিতা। যেতে পারি, কিন্তু কেন যাবো? তাই তো। টেক্সাসের সংবিধানের আলাপ থেকে দ্রুতই উঠে এলো কিছুদিন আগে ধর্ষককে কীভাবে এয়ারপোর্টে হত্যা করে ভিক্টিমের বাবা প্রতিশোধ নিয়েছেন সে গল্প। মেয়েটিকে ধর্ষণ খুন করেছিলো, তবে না খাইয়ে মেরেছে তাকে। ধর্ষণের পর বেচারিকে পিটিয়ে ট্রাংকে ভরে রেখেছিলো। গলায় আগুন নিয়ে ব্যাখা করলো ইস্টন, “কোনও হত্যাই ভালো নয়, তবে তুমি যখন জানো কাউকে তোমার মারতেই হবে, অন্তত আহত অবস্থায় না খাইয়ে তুমি তাকে মারতে পারো না।”
উইল বললো, “বাবাটি একজন বীর, কোনও সন্দেহ নেই এই ব্যাপারে।”
আমি তাদের বাংলাদেশের হারকিউলিসের ব্যাপারে বলি। ভিজিলান্তে কেন ভালো নয় তা বুঝাই। ওরা একমত হয় এ বিষয়ে। আইন আদালত থেকে কথা ঘুরে যায় টেক্সাস ছাড়িয়ে আমেরিকার জাতীয় নির্বাচনে। কীভাবে লিবারেল আর কনজারভেটিভরা মনস্তাত্ত্বিক মুশকিলে পড়ে, কিন্তু কীভাবে আসলে আমেরিকার রাজনীতি ঠিক রাজনীতি নয়, এটি একটি “পলিটিক্স ইন্ডাস্ট্রি” তা নিয়ে কথা হয়। এবং তা থেকে চলে আসে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশের কথা, ইস্টন ও উইল দু’জনই এই প্রেসিডেন্ট সাহেবের ওপর বিশাল ক্ষ্যাপা বলেই মনে হলো। তুমুল গালি খেলো ছোট বুশ। তবে বড় বুশকে নিয়ে তাদের শ্রদ্ধা আছে।
ইস্টনের এক চাচা একবার ছোট বুশকে মাছ ধরতে দেখেছিলো। সিক্রেট সার্ভিসের কিছু লোক ছিলো আশেপাশে। বুশ তখন প্রেসিডেন্ট। এমনকি মাছ নিয়ে তিনি নাকি তখন একটা কৌতুকও করেছিলেন, খুব-ই স্থূল সে কৌতুক, “মাছ কই মারছি? ছিপ ফেলে তো ধরছি ডেমোক্র্যাট। হা হা হা।” টেক্সাসের গভর্নর ছিলো লোকটা, দুই দফায় দশ বছর মনে হয় (স্মৃতি থেকে বলছি, ক্যাপিটলের দেয়ালে জেনেছিলাম। এই মুহূর্তে গুগল করতে ইচ্ছে করছে না) – কাজেই টেক্সাসের প্রেসিডেন্ট হিসেবে বুশের আলাপ আসবেই। সে থেকে কেনেডির অ্যাসাসিনেশন নিয়ে আলাপ শুরু হলো। ইস্টন একজন প্রকৌশলবিদ্যার ছাত্র, যথেষ্ট স্মার্টও বটে, তবুও ও না বলে থাকতে পারে না, “কন্সপিরেসি থিওরিস্টদের দেখলেই আমার থাপড়াতে মন চায়, কিন্তু কেনেডির ব্যাপারটায় আমার ধারণা সিআইএ জড়িত ছিলো। তারা না হলেও কর্মটি যে আমাদের অজানা কোনও পক্ষ করেনি তা আমি নিশ্চিত।”
সে থেকে মার্টিন লুথার কিংয়ের অ্যাসাসিনেশন চলে আসে। এ নিয়ে বিশদ ঘেঁটেছে সে। একেবারে ডায়াগ্রাম এঁকে, নিজে জায়গামতো দাঁড়িয়ে দেখালো শুটারের যে বাথরুম পজিশনের কথা অফিশিয়ালে বলা হয়েছে, তা কতোখানি অযৌক্তিক। কিন্তু কথা ঘুরে ফিরে কেন যেন বার বার চলে আসে শিক্ষাব্যবস্থার দিকেই।
ইন্টারনেট আসার পর এর সাথে তাল মেলাতে কীভাবে ব্যর্থ হয়েছে এলিমেন্টারি ও হাই-স্কুলগুলো তাই উপজীব্য। বক্সারের যুদ্ধ কবে হয়েছিলো তা মুখস্থ রাখার দরকার ফুরিয়েছে। আমাদের আছে ক্লাউড এবং হাই স্পিড ইন্টারনেট। কিন্তু আমেরিকার পাঠদানপ্রক্রিয়ার অবস্থা অত্যন্ত জঘন্য। সেই মান্ধাতা আমলের। ইংরেজি শিক্ষা নিয়ে অবস্থা নাকি আরও করুন।
ইস্টন বললো, “আমার স্কুলে কোনও শালা আমাদের পার্টস অফ স্পিচ পড়ায় নাই। একটু বড় হওয়ার পর আমি বই পড়তে গিয়ে নিজে নিজেই বুঝেছি যে নানা শব্দ নানাভাবে ব্যবহৃত হয়। তারপর আমি জানি পার্টস অফ স্পিচ বলে কিছু আছে। ডায়াগ্রামের কথা মনে আছে, উইল-”
উইল মাথা দোলালো।
আমি এদের স্কুলে পড়িনি। কাজেই জানতে চাইলাম, “ডায়াগ্রামটা আবার কী হে!”
ওরা আমাকে বোঝায়, একেকটা বাক্য দেয়া হতো পরীক্ষায়। সেখানে শব্দগুলোকে আলাদা করে পয়েন্ট আউট করতে হয় কোনটা কোন পার্টস অফ স্পিচ। কিন্তু কখনো ক্লাসে এসব তাদের পড়ানো হয়নি। আর আমেরিকায় ক্লাসে পড়াবে না কিন্তু বাসায় এসে সবাই বই খুলে বসে নিজে নিজে শিখবে – অন্তত স্কুলে এটা কল্পনাও করা যায় না।
ইস্টন বললো, “তুমি বিশ্বাস করতে পারবে না, আমাদের রিডিং স্কিল কী বাজে। আমেরিকার বেশিরভাগ হাইস্কুলের ছেলে রিডিং পড়তে পারে না। তোমাকে একটা পাতা দেয়া হলে তো গড় গড় করে পড়তে পারবে। আর ওরা পড়ে কুঁতে-পেদে।”
এই তথ্যটা আমার কাছে একেবারেই নতুন। আশ্চর্য হয়ে গেলাম। আমেরিকানদের যাদের আমরা চিনি তারা আসলে ভীষণ স্মার্ট। যারা গ্র্যাড স্কুলে আছে, পিএইচডি বা মাস্টার্স করছে – এরা অন্য লেভেলের। তবে এরাই তো গোটা আমেরিকা নয়। সাধারণ মানুষের আমেরিকায় রিডিং পড়তে পারে না হাইস্কুলের ছেলেমেয়েরা! ধরে নিন ক্লাস টেনে একটা ছেলে পড়ে, কিন্তু রিডিং পড়তে পারে না মাতৃভাষায়। কী করুণ হাল।
আমি জানতে চাই, “কারণটা কী? স্কুলে ৬-৭ বছর পড়েও মানুষ রিডিং কেন পড়তে পারবে না? বানান করে পড়তে হবে কেন?”
উইল তার চিরায়ত উত্তর দেয়, “এই শিক্ষাব্যবস্থার গোয়া মারা দরকার।”
ফিল্মমেকার হওয়ার জন্য কম্পিউটার সায়েন্স মেজর ফেলে দিয়ে ফিল্মে ঢুকেছে যে ছেলে সে প্রতিষ্ঠানকে গোয়া মারবে এটাই স্বাভাবিক। তবে তার কথার যুক্তিও আমি ফেলে দিতে পারি না। আমারও একই মত। বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থাও আমি পাল্টাতে চাই। তবে নিজ দেশের কারিকুলাম নিয়ে প্রশংসা করতে হলো কিছুটা, বললাম, “ব্রিটিশদের কারিকুলাম ফলো করি, কাজেই ব্রিটিশদের অবদান হয়তো অনেকটা, তবে আমাদের ইংরেজি পাঠের স্ট্রাকচার অন্তত তোমাদের থেকে ভালো, যা বুঝলাম। আর ফরচুনেটলি বাংলা ভাষার জন্য আমাদের ছেলেরা পুলিশের গুলিতে মারা গেছে বলেই আমরা স্বাধীন দেশ হয়েছি বিশ বছর পর, সেজন্য আমাদের দেশে বাংলা নিয়ে প্রচুর আবেগ। প্রতি তিন জনের মধ্যে একজন বাংলা নিয়ে এতটাই প্যাশনেট যে গল্প বা কবিতা পর্যন্ত লিখতে পারে। ভাগ্য ভালো, আমাদের জাতির ইতিহাসে ভাষাটা ছিলো। নইলে তোমাদের মতো অবস্থা যে হতো না তা বলা যায় না।”
এইসব ইতিহাস বেচারাদের আমি অন্তত ৩ বারের মতো শুনিয়ে ফেলেছি। বাংলাদেশিদের এই এক বদস্বভাব। যেখানেই যাবে সেখানেই গলা ফুলিয়ে মুক্তিযুদ্ধের আলাপ জুড়ে দেবে, প্রথম সুযোগেই। আর এমন সু্যোগ আমি পাইও বিস্তর।
ওরা জানালো, আসল সমস্যা হচ্ছে দক্ষ শিক্ষকের অভাব। আমি একমত হই। বলি, এ হচ্ছে ইউনিভার্সাল সমস্যা। সবখানেই একই বিপদ। আমার দেশে আমি যদি প্রধানমন্ত্রী হতাম তাহলে বিশ্ববিদ্যালয়ের থেকেও বেশি বেতন ও সুবিধা দিতাম এলিমেন্টারি আর হাইস্কুলের শিক্ষকদের। তবেই না পিএইচডি হোল্ডাররা ওখানে পড়াতে যাবে। আর যতদিন মোটিভেশন দিচ্ছো না, টাকা দিচ্ছো না সার্কুলারে, তো পাবেও ওই লেভেলের শিক্ষক। এটা সঠিক আমাদের কলেজে মাস্টার্স পিএইচডি করা শিক্ষকরা থাকেন, তবে কত শতাংশ? আর কাদের প্রথম পছন্দ হাইস্কুলের ছেলেমেয়ে পড়ানো? বুয়েটের ছেলেমেয়েরা হায়ার স্টাডি করে এসে স্কুলে পড়াক অনেকে – এটা আমি চাই। এটা আপনাদের চোখে ওয়েস্ট অফ রিসোর্স মনে হতে পারে – কিন্তু আসলে নয়। তাদের ইন্ডাস্ট্রিতে কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ে এককভাবে না ঢুকিয়ে স্কুলশিক্ষকের লোভনীয় অফার দিন, মাসে ৪ লাখ টাকা, আবাসন, পরিবহণ খরচ স্কুলের। তারপর দেখুন কতজন বিদেশফেরত ব্রিলিয়ান্ট ছাত্ররা হাইস্কুলে পড়াতে যাচ্ছেন। আর বুয়েটের শিক্ষক হিসেবে গবেষণা করতে পারতেন যেহেতু, হাইস্কুল শিক্ষক হয়ে কেন পারবেন না? গবেষকদের বড় একটি অংশ ক্লাসে পাঠ দেয়ায় বিরক্ত থাকেন। করতে হয়, শর্তে আছে বলে করেন। তবে সেন্ট্রালি সিদ্ধান্ত নেয়া গেলে তাদের হাইস্কুলের শিক্ষকতার চাকরির পাশাপাশি গবেষণা চালিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করে দেয়া কঠিন কিছু নয়। গবেষক গবেষণা করবেন ঠিকই, তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের যদি টপ থ্রি পড়ান, ব্যাচের পরের ২০ জন হাই স্কুলের শিক্ষক কেন হতে পারবেন না?
ইস্টনদের আমেরিকা আর আমার বাংলাদেশ – দু’জায়গাতেই এক সমস্যা। প্রতিটি হাইস্কুলে অন্তত ২-৩ জন করে এই লেভেলের লোক শিক্ষক হয়ে আসেন না। কারণ আমার দেশে কেউ তাদের ৪ লাখ টাকা মাসিক বেতন দেবে না। ওদের দেবে না টু হান্ড্রেড থাউজ্যান্ড বছরে। কেন আসবে?
কে আসবে?
গোড়ার শিক্ষাতে যে সমস্যাটা, তাতে হাত না দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের এফিশিয়েন্সি বাড়াবার যে চেষ্টা তা অনেকোটা নিচের সূত্রমতো চলে।
স্কুলছাত্রদের মোট সম্ভাবনা x ২০% = কলেজে আসা অলরেডি ২০% এ থাকা জনগণ
কলেজের আধমরাদের (যা অলরেডি ৮০% হারিয়েছে স্কুলে) সম্ভাবনা x ২০% = বিশ্ববিদ্যালয়ে আসা পুরা মরা।
এবার এই পূর্ণমৃতদের থেকে আমরা বাই লাক যে কয়জন উদ্যমী, পরিশ্রমী লোক পাচ্ছি তাদের দেখিয়ে বলছি বিশ্ববিদ্যালয় খুব ভালো চলছে। একে আমরা আরও উন্নত করবো। তা করবেন কীভাবে, স্যার? গোড়া তো উইতে কেটেছে…
এক কাপ চা খেতে গিয়ে বেশ কিছু কাপ খেয়ে ফেললাম। অবশেষে আমাদের আড্ডা যখন ভাঙলো ঘড়িতে তখন রাত ৩ টা… ৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২২

আমেরিকা-নামা নন-ফিকশন

Post navigation

Previous post
Next post

কিশোর পাশা ইমন

১২টি ক্রাইম থৃলারের লেখক কিশোর পাশা ইমন রুয়েটের মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ছাত্র ছিলেন, এখন টেক্সাস ষ্টেট ইউনিভার্সিটি থেকে মাস্টার্স করেছেন মেকানিক্যাল অ্যান্ড ম্যানুফ্যাকচারিং ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে। বর্তমানে টেক্সাসের স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয় ইউটি ডালাসে মেকানিকাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পিএইচডির ছাত্র। ছোটগল্প, চিত্রনাট্য, ও উপন্যাস লিখে পাঠকপ্রিয়তা পেয়েছেন। তার লেখা প্রকাশিত হয় বাংলাদেশ ও ভারতের স্বনামধন্য প্রকাশনা সংস্থা থেকে। তার বইগুলো নিয়ে জানতে "প্রকাশিত বইসমূহ" মেনু ভিজিট করুন।

Related Posts

আমেরিকায় উচ্চশিক্ষা | অধ্যায় ০৭ – উচ্চশিক্ষা কাদের দরকার

Posted on August 5, 2021February 6, 2023

পিপিং টম কিংবা এক প্রোফেশনাল পার্ভার্টের মতো পর্দার ফাঁকে ফোকড়ে উঁকি দেয়। একদিন খঞ্জনা বিষয়টা দেখে ডাকলো, “অ্যাই কাক! ওখানে কী? ইদিক আয়! এক্ষুণি আয় বলচি!”
বেচারা কাক মাথা নিচু করে হেঁটে এলো। স্বীকার করলো, “যা নাচো দিদি। একটু যদি শেখাতে।”

Read More

আমেরিকায় উচ্চশিক্ষা | অধ্যায় ০৬ – এই পথ যদি না শেষ হয়

Posted on August 4, 2021February 6, 2023

এবার অবভিয়াসদের মধ্যে আলোচনা করার চেষ্টা করবো আরেকটা জিনিস নিয়ে। অনেক সিনিয়র, বুড়ো লোকজনই এই অংশটি এড়িয়ে যেতে পারেন, কারণ তাদের কাছে এটা এটি অবভিয়াস যে মেনশন করার দরকার অনুভব করবেন না, তাই আমি একি ভুল করার আগেই গোড়া থেকে শুরু করার চেষ্টা করবো।

Read More

টেসলায় আমন্ত্রণ

Posted on February 12, 2023

সেসব আলাপের টুঁ শব্দটাও বাইরে বলা যাচ্ছে না, এনডিএ।

Read More

Leave a Reply Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

সর্বশেষ লেখাগুলো

  • ওয়ান ফর মাই সৌল
  • আমার যত প্রকাশক
  • কেপির সেরা লেখা কোনটি – জরিপ ২০২২
  • আন্ডারএইজের বই পড়া
  • অমুক পড়ে আসেন… সমস্যাবলী

Analytics

009514
Total Users : 9514
Total views : 23948
Who's Online : 1
Powered By WPS Visitor Counter
©2025 KP Imon | WordPress Theme by SuperbThemes