টেসলায় আমন্ত্রণ
টেসলায় আমন্ত্রণ পাওয়া আর ওদের হেডকোয়ার্টারে ঠ্যাঙ রাখার সৌভাগ্য হলো। মনে রাখার মতো একটা অভিজ্ঞতা, অথচ এটা কোনও “কনগ্র্যাচুলেশনস” মার্কা খবর না। ঘটনা হলো, টেসলা এমন একটা গুপ্ত ইভেন্ট চালু করেছিল, যেখানে কেবলমাত্র টেক্সাসের ছাত্রছাত্রীদের আবেদন করার অনুমতি দেয়া হয়েছিল (সিক্রেট ইন্টারনাল লিংক, গুগলে এসব আসে নাই)। সেই আবেদনকারীদের মধ্যে একাংশকে তারা এই ঘরোয়া পরিবেশের বিয়ে(!)তে দাওয়াত দিয়েছে।
অ্যাটেন্ডি হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার পর প্রথমেই সাইন করেছি আমরা NDA তথা নন-ডিসক্লোজার অ্যাগ্রিমেন্টে। কাজেই ভেতরে গিয়ে কী দেখেছি, কী আলাপ হয়েছে, বা কী করেছি তা বলাটা নীতিগতভাবে ঠিক হবে না (যদিও ফেসবুকে আমি নিশ্চয় তাদের টেকনিকাল আর অর্গানাইজেশনাল ফাইন্ডিং নিয়ে আলাপ করতাম না। তাও।)
এখানে সাফল্য বা ব্যর্থতার বিষয় নেই। তবুও দিনটা আমার জীবনের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটা দিন হয়ে থাকবে, কারণ ইলন মাস্কের জার্নিটা আমার অনেক দারুণ পছন্দের একটা জার্নি। এই ঘাড়ত্যাড়া এবং একরোখা ভদ্রলোকই আজকের দিনটা এত দারুণ লাগার কিংবা উপভোগের মূল কারণ। টেসলার যে জিনিসটা আমার ভালো লাগে, প্রত্যেকটা কর্মী প্যাশনেট – কিছু না কিছু নিয়ে, সেটা তার নিজের কাজ করার জায়গা হোক বা না হোক, অনেকে একটু আউট অফ দ্য বক্স। এলন মাস্ক আউট অফ দ্য বক্স পছন্দ করেন, অ্যাজ আ কোম্পানি টেসলাও।* পাগলাচোদাদের আড্ডাখানা। এদের আমি বুঝি। এদের চারপাশে কিছুটা ‘অ্যাট হোম’ ফিল পাওয়া যায়।
ভেতরের খবর বলা যাচ্ছে না ঠিক, তবে আজকের দিনে টেসলা-কর্মী এবং বাকিদের সাথে যে কৌতুকটা প্রায়ই করতে হয়েছে –
“আমরা ভেবেছিলাম এসে দেখবো ইলন মাস্ক হচ্ছে এলিয়েন। সৌরজগতের বাইরে থেকে তিনি এসেছেন, আর NDA সাইন এজন্যই করতে হয়েছে আমাদের। ভদ্রলোকের শুঁড় দেখতে পারবো কিন্তু বাইরে এসে আর বলতে পারবো না।”
(কাল যদি আমাকে ৪৩ বিলিয়ন ডলারের মামলা খেতে দেখেন, বুঝবেন তিনি আসলেই এলিয়েন, আর ব্যাপারটা ফাঁস করায় আমার মুন্ডুটা গেছে।)
এই কৌতুকটা যে ভদ্রলোকের দিকে ছুঁড়লাম, তিনি ৮ বছর ধরে টেসলার সাথে আছেন। জাতীয়তায় ইরানী ছিলেন এককালে। ছাত কাঁপিয়ে হাসলেন বটে, তারপর যোগ করলেন, “আসলে টেসলায় যারা কাজ করে, সবাই-ই ভাই এলিয়েন। আমরা সবাই। যে টাইট স্কেজিউল সামলিয়ে যাচ্ছি আমরা বছরের পর বছর, ও ছাড়া সম্ভব ছিল না।”

টেসলা থেকে দেয়া স্যুভনির মডেল কার
টেসলা যাদের ড্রিম কোম্পানি তাদের জন্য টেক্সাসে পড়তে আসা একটা ভালো সিদ্ধান্ত হতে পারে। টেসলা গিগাফ্যাক্টরি, টেক্সাস হচ্ছে বিশ্বব্যাপী টেসলার হেডকোয়ার্টার। কিছুদিন আগে পালো অ্যাল্টো, ক্যালিফোর্নিয়া (মজার ব্যাপার হচ্ছে পালো অ্যাল্টো আমার আগের অফিস অগমেডিক্সের অপারেশন রিজিয়ন ছিলো, আমি যে গ্যাস্ট্রোএন্টেরোলজিস্টের সাথে ৪ মাস কাজ করেছি, ভদ্রলোক ওখানেই প্র্যাকটিস করতেন) থেকে সরিয়ে টেক্সাসের অস্টিনে নিয়ে এসেছেন মাস্ক। এখন টেক্সাসের অস্টিনে দুটো গ্রেট কোম্পানির হেডকোয়ার্টার – ডেল এবং টেসলা। সামনে আরও আসবে। আমি টেক্সাসের মোটামুটি ভক্ত নানা কারণে, তাদের মধ্যে এটা একটা কারণ নয় যে কোম্পানিদের হেডকোয়ার্টার এখানে, আমি ভক্ত কারণ এখানকার আবহাওয়া আমার বেশ পছন্দের। সেই সাথে ক্যালিফোর্নিয়ায় রূপান্তরিত হবার পথে হাঁটছে টেক্সাস এই সময়টায়, উত্থানটা দেখতে ভালো লাগছে। ভালো লাগার কারণ, এখনো ক্যালিফোর্নিয়া হতে পারেনি এই স্টেট, অন্তত ২০-৩০ বছর তো লাগবেই, এবং সেই সুবাদে আমরা একটু কম খরচে বেঁচে থাকতে পারছি এখানে। 😛
যাই হোক, নন-ডিসক্লোজার না ভেঙে কিছু আলাপ করা অন্তত যায়। প্রথমতঃ গিগাফ্যাক্টরি তো এমনি এমনি বলা হচ্ছে না। এটি তো আর কিলো-ফ্যাক্টরি নয়। মেগা-ফ্যাক্টরিও নয়। গিগা। এতো বড়, যেটা চোখের সামনে না দেখলে কল্পনাতে কুলায় না, যতই ভিডিয়ো দেখুন না কেন ইউটিউবে কিংবা এরিয়াল শট থেকে।
দ্বিতীয়তঃ ওটা গিগাফ্যাক্টরি তো বটেই, দুর্গও বটে। এমপ্লয়ী ছাড়া আর কেউ ওখানে মাথাটা গলাতে পারবেন না। আমাদের ওরিয়েন্টেশনের জন্য ওরা একটু পাশে কিছু ট্রেইলার জড়ো করেছিল, নইলে ইন্ডাস্ট্রিয়াল এসপিওনাজে ছেয়ে যেত হয়তো দুনিয়া। যাতায়াতের খরচ টেসলা বহন করেছিল আমাদের, উবার-ভাউচার, দুটো রাইডের জন্য, টু-অ্যান্ড-ফ্রম গিগাফ্যাক্টরি।
গিগাফ্যাক্টরির বিশালত্ব প্রকাশে একটা কথোপকথনই মনে হয় যথেষ্ট। আমাদের ওই মাগনা (টেসলার পয়সায়) উবার রাইডে সাথে ছিলো ঋভু ভাই (চুয়েট ’১০) আর জাবেদ ভাই (রুয়েট ’০৮) – আমি উনাদের দিকে ঘুরে কেবল বললাম, “ভাই, যদি ওয়েলকাম সেন্টারে পৌঁছাবার পর যদি দেখি টেসলার পোলাপান বলতেছে আমাদের ফ্যাক্টরির অন্যপ্রান্তে হেঁটে যেতে হবে, আমি ভাই সোজা দুসরা ভাউচার বের করে বাড়ি ফিরে যাবো। লাগবে না ডেমো দেখা।”
ম্যাসিভ!
দারুণ উপভোগ্য দিনটা আসলে উপভোগ্য হয়েছে মূলতঃ কথোপকথনের জন্য। প্রচুর আলাপ করেছি প্রচুর মানুষের সাথে। কিন্তু সেসব আলাপের টুঁ শব্দটাও বাইরে বলা যাচ্ছে না, এনডিএ। সঙ্গে পেলাম টেসলার মডেল কার, দারুণ একটা স্যুভনির। জীবন ভবিষ্যতে আমাকে যেখানেই নিয়ে যাক, দারুণ একটা দিন হিসেবে স্মৃতির পাতায় এই ২১শে এপ্রিল থাকবে বহুদিন।
টেসলাকে ধন্যবাদ।
* তবে সমস্যা হচ্ছে, কোনটা রাইট কাইন্ড অফ আউট অফ দ্য বক্স, আর কোনটা রং – তা জানা কঠিন। আউট অফ দ্য বক্স জিনিসটা অনেকটা হিট অ্যান্ড মিস।
** টেসলার ভেতরে হুদাই গুঁতাগুঁতি করার সুযোগ আমরা সবাই পেয়েছিলাম, সেই মুহূর্তের ছবি স্মৃতিতে ধরে রেখেছেন ঋভু ভাই।
Leave a Reply