কোয়াড কোড
১
নতুন খুলেছে শপিং মলটা।
দোতলা একটা বিল্ডিং। তার মাঝেই অল ইন ওয়ান করার একটা প্রচেষ্টা।
আমি আর মিনহাজ একে অপরের দিকে একটিবার মাত্র দৃষ্টি বিনিময় করে ভেতরে ঢুকে পড়লাম।
নীচতলার প্রথমভাগ ফ্যাশন অ্যাকসেসরিজে ভরপুর। ভেতরে ঘুর ঘুর করতে থাকা মানুষগুলোর বেশিরভাগই তরুণী। কয়েকজন যুবককেও ছন্নছাড়ার মত ঘুরে বেড়াতে দেখা যায়। এদের চোখ মাঝে মাঝেই চলে যাচ্ছে তরুণীদের ওপর। অবিবাহিতের অভিশাপ!
হাল্কা পায়ে র্যাকগুলোর চারপাশে ঘুরছি আমরা। এটা একটা ছুতো মাত্র। ভালোমত দেখে নিচ্ছি চারপাশটা।
কাছে ঘেঁষে এল মিনহাজ, ‘শিওর হচ্ছিস কি করে? হতে পারে রাবেকের আরেকটা চাল এটা।’
মিনহাজকে এখনও কিছু জানাইনি। হাল্কা একটা হিন্টস দিয়ে চলে এসেছি ভেতরে।
কে জানে সময় কতক্ষণ পাওয়া যায়!
একটা বডি স্প্রে ধরে ঘুরিয়ে আবার নামিয়ে রাখি আমি, ‘শিওর হওয়ার উপায় তো একটাই। তাই না?’
আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসল মিনহাজ। এমন আর কিছু স্মৃতির কথা মনে পড়ে গেছে। তারপরই আবার গম্ভীর ভাবটা ফিরে এল ছেলেটার মুখে।
‘ঈশিতা ফোন দিয়েছিল?’
মাথা নাড়ি আমি, ‘না। তবে আননোন কলারের ওপর ভরসা রাখতে হচ্ছে।’
আমার নির্বুদ্ধিতাতে বেশ বিরক্ত হয় মিনহাজ, ‘কিভাবে ভরসা রাখছিস?’
‘আমার যতদিকে নেটওয়ার্ক ছিল সবাইকে লাগিয়েছি তো। কেউ না কেউ জানাতেও পারে। বুঝতে পারছি না ট্রাস্ট করার মত কি না। তবে একবার ঢুঁ মেরে যেতে তো সমস্যা নেই।’
মাথা দোলায় মিনহাজ।
আর মুখে যত যাই বলি না কেন – আননোন ফোনকলের ওপর ভরসা রেখে এখানে আসিনি।
এটা যে একটা ডেথট্র্যাপ হতে পারে সে ব্যাপারে আমি পূর্ণ সচেতন।
‘মিনহাজ?’ ডাকি আমি।
‘ইয়েপ।’ একটু পিছিয়ে গেছিল – চট করে সামনে এসে জানতে চায় ও।
‘গেট রেডি। আমাদের ঘিরে ফেলা হয়েছে।’
চারপাশে একবার আড়চোখে তাকায় মিনহাজ। পরিবেশ সম্পূর্ণ শান্ত। সাধারণ কাস্টোমাররা ছাড়া আর কেউ নেই।
এক কথায় – মোটেও ঘিরে ফেলার মত নয় সিচুয়েশনটা।
‘সেভেন ও’ক্লক। কাঁধে ব্যাকপ্যাক নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা তরুণ। অ্যাট ইয়োর থ্রি, লালচুলো মেয়েটা। গেটের কাছে থাকা গার্ড। স্টাফ ছেলেটা। কোকড়া চুল।’
অবাক হয় এবার মিনহাজ, ‘বেশি ভাবছিস! কিভাবে জানিস?’
‘চোখ ধাঁধানো সুন্দরী নই আমরা।’
‘তো?’
ব্যস্ত হয়ে সামনের দিকে আগাচ্ছি আমরা এখন। যথেষ্ট লম্বা শপিং মলটা, আগা থেকে গোড়া পার হতে বেশ সময় লাগবে। আরও ভেতরের দিকে ইচ্ছে করেই ঢুকছি। শেষ মাথায় ম্যানেজারের একটা রুম আছে। ওটাই আমার টার্গেট।
‘পুরোটা সময় আমাদের দিকে লক্ষ্য রেখেছিল ওরা। অ্যাকনলেজড। অ্যাট ফাইভ – ফোর – থ্রি -’
বাকিটুকু কাউন্ট করি না। মিনহাজকে এক ধাক্কা দিয়ে একর্যাকের আড়ালে ঠেলে দিয়ে আরেক র্যাকের কাভার নেই আমি।
হাতে ভোজবাজির মত বেরিয়ে এসেছে বিশ্বস্ত গ্লক-২৩ টা। আর আমাদের হঠাৎ নড়াচড়া দেখে একসাথে সামনে বাড়তে দেখলাম আগে থেকে সন্দেহ জেগে ওঠা মানুষগুলোকে।
একই সাথে পার্স হাতড়াচ্ছে লালচে চুলের মেয়েটা।
ব্যাকপ্যাক পড়া তরুণও কোমরের দিকে হাত বাড়িয়েছে।
স্টাফ ছেলেটাকে দেখা যায় র্যাকের দিকে ঝুঁকে পড়তে। কিছু একটা তুলে নিচ্ছে।
আর কাভার নেয়া র্যাকটার গায়ে হেলান দিয়ে দাঁড়াই আমি। আমার দেখা দেখি মিনহাজও।
আর এরই মাঝে পেরিয়ে গেছে দুটো সেকেন্ড।
বিস্ফোরণের প্রচন্ড শব্দটা কানে তালা ধরিয়ে দেয়। একগাদা বডি স্প্রের মাঝে টাইমার সহ একটা বিস্ফোরক রেখে আসার ভয়াবহতা টের পাই এতক্ষণে।
র্যাকটাতে আগুন ধরে গেছে।
আমাদের গায়েও শক ওয়েভের ধাক্কা লেগেছে – তবে কাভার হিসেবে একটা র্যাক পাওয়ার জন্য ধাক্কাটা সেভাবে লাগেনি অবশ্যই।
ঝট করে বেড়িয়ে আসি এবার আমি।
এত বড় বিস্ফোরণটাকে দিব্যি সামলে কোমর থেকে বের করা পিস্তলটা সরাসরি আমার দিকে তাক করছে ব্যাকপ্যাক পিঠে যুবক – দুই বার গুলি করে মাটিছাড়া করি তাকে। পেছন থেকে দেখা যাচ্ছে সিকিউরিটি গার্ডকে, সশব্দে এগুচ্ছে সে এখন শব্দটা আসছে তার হাতে মুহুর্মুহু ঝলসে ওঠা উজি থেকে।
কোনমতে আবার গড়িয়ে চলে এলাম র্যাকের আড়ালে।
ব্যাটা সিকিউরিটি গার্ড না ছাই! স্রেফ অ্যামবুশ করার জন্য এসে ছদ্মবেশে বসে ছিল!
র্যাকের অন্যপাশ দিয়ে বের হতে চাইছিলাম, তখন চকচকে চোখের তরুণীকে চোখে পড়ল। একটু আগে বেড়িয়ে যাওয়া মিনহাজের দিকে গুলি ছুঁড়ছে মেয়েটা।
মিনহাজ একটু সামনে। আমার ডানদিকে। একটা ফ্রিজারের আড়ালে কোনমতে মাথা গুঁজে আছে।
একবার গুলি ছুঁড়ে পিস্তলটাই উড়িয়ে দেই মেয়ের। পরক্ষণেই বুকের কাছে লাল হয়ে যায় মেয়েটার ।
ছিটকে পড়ে মাটিতে।
পেছনে থাকা স্টাফকে চোখে পড়ে এতক্ষণে – চোখের সামনে থেকে বাঁধা দূর করেই আমার দিকে অস্ত্রটা নিমেষে তুলে ফেলেছে মানুষটা! একটা কোল্ট অটোমেটিক।
ঝাঁপিয়ে ডানদিকে সরে যেতে চাইলাম, কিন্তু তার আগেই গর্জে ওঠে অস্ত্র।
এত তাড়াহুড়োতে ঝাঁপাঝাঁপি করতে গিয়ে পাশ থেকে বেড়িয়ে থাকা একটা ট্রলিতে লেগে হাত থেকে পিস্তলটা ছুটে গেল।
শরীরের সম্পূর্ণ ভর নিয়ে বামদিকে আছড়ে পড়লাম, বেশ অসহায় বোধ করছি। মাত্র তিনফিট দূরে পড়ে থাকা পিস্তলটা দেখতে পাচ্ছি আরেকটা র্যাকের কাভার থেকে, কিন্তু তুলে নেওয়ার উপায় নেই। মাথা বের করলেই স্রেফ খুলি উড়িয়ে দেবে স্টাফের ড্রেস পরে থাকা বাইরের ওই পিস্তলধারি।
মিনহাজের কাছ থেকে সাহায্যের জন্য একটু আশা করতে যাব – ঠিক তখনই একটা উজি গর্জে উঠতে শুনলাম। সিকিউরিটির ভেক ধরে থাকা লোকটা জ্বালালো দেখছি! পাল্টা জবাব দিল মিনহাজের অস্ত্রও। ওদিকে কোল্টের চিল্লাফাল্লাও শুরু হয়ে গেছে!
মিনহাজের জন্য শঙ্কিত হলাম। একা দুইজনকে সামলাতে পারবে না ছেলেটা। আর আমার পিনডাউনড অবস্থায় করার কিছু দেখছি না।
চারপাশে তাকাই অসহায়ের মত। তারপর সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলি।
পিঠের প্রবল ধাক্কাতে কাভার নিয়ে থাকা র্যাকটাকে আস্তে করে কাত করে ফেললাম। শুরুতে নড়ছিলই না, তারপর গতি জড়তার কারণে একা একাই পড়তে থাকল ভারী র্যাকটা। সেই সাথে খসে পড়ছে তার ওপর থাকা রাজ্যের জিনিস!
সরাসরি গায়ে পড়তে যাচ্ছে ছাত পর্যন্ত থাকা র্যাক – দেখে প্রাণপণে সরে যাওয়ার চেষ্টা করল কোল্টধারী – এই সুযোগে এক ডিগবাজি খেয়ে গ্লকটা তুলে নিলাম। সিকিউরিটি গার্ড আমার দিকে ঘুরে যাচ্ছে, উজির চকচকে নলটা সরাসরি আমার দিকে তাকিয়ে আছে – দৃশ্যটা ভীতিকর। স্রেফ রিফ্লেক্সের বশে দুটো গুলি বেড়িয়ে যায় আমার হাতের নীচে জ্যান্ত হয়ে ওঠা বিশ্বস্ত অস্ত্রটা থেকে।
গার্ডের মাথা গায়েব হয়ে গেছে। ফিনকি দিয়ে রক্ত বের হচ্ছে ওখান থেকে – তবে এতকিছু না দেখে আরেকবার গুলি করি আমি। উঠে দাঁড়াতে যাচ্ছিল কোল্ট ধারী – এবার আবারও হুড়মুড় করে পড়ে গেল।
বাইরে এসে থেমেছে একটা গাড়ি। যে বেগে এসে যেভাবে শব্দ করে থামে – ওতে করে কারা আসতে পারে সে ব্যাপারে আমার কোন সন্দেহ থাকে না।
ডন রাবেক দেখি একেবারে আর্মি পাঠাচ্ছে!
‘কাভার দে, মিনহাজ।’ একবার চিৎকার ছুঁড়ে ম্যানেজারের রুমের দিকে ছুটে যাই আমি।
ব্লিপটা এখান থেকেই আসছে। ঢোকার আগেই মোবাইলে দেখে ধারণা পেয়েছি।
দরজাটা বাইরে থেকে লাগানো। নব সিস্টেমটা বেশ আধুনিক। দুই লাথিতেও ছুটল না।
যা আছে কপালে – পর পর দুই বার গুলি করি আবারও।
দরজার হাতল উড়ে গেছে। হিসেব সেই শুরু থেকেই মিলছিল না আমার। এখনও মিলছে না।
এই শপিং মলে ঈশিতা কি করছে?
দরজাটা খুলে ফেলতেই একটা ধাক্কা খেলাম।
এটা মানসিক।
রুমটা মোটেও ম্যানেজারের সাজানো গুছানো ঘর নয়।
অত্যাধিক নোংরা এই ঘরের সর্বত্র ধুলো জমে আছে।
সেই ময়লা পরিবেশে হাত পা বেঁধে মেঝেতে ফেলে রাখা হয়েছে একটা মেয়েকে।
সুন্দর চুলগুলো ধুলোয় নোংরা হয়ে আছে। অবিন্যস্ত চুলে ঢাকা পড়েছে ডান চোখ।
মুখ বেঁধে রাখা হয়েছে মেয়েটির – শব্দ করে কাস্টোমারদের দৃষ্টি আকর্ষণের উপায় রাখা হয় নি তার।
বাম চোখটা সরাসরি আমার দিকে তাকিয়ে।
না – ঈশিতা নয়।
হাত থেকে পিস্তলটা পড়ে যায় আমার।
ছুটে যাই আমি ফারিহার দিকে।
২
‘ঠিক আছ তুমি?’ ফারিহার দুই কাঁধ ঝাঁকিয়ে জানতে চাই আমি ব্যস্ত গলায়।
কিছু না বলে চুপচাপ বসে থাকল মেয়েটা।
কিছু বুঝতে পারলাম না আমি।
ঈশিতার জুতোয় যে ট্রান্সমিটারটা লাগিয়েছিলাম তা কিভাবে ফারিহার কাছে আসল? এমনকী ঈশিতারও জানার কথা নয় এ বিষয়ে। রাবেক টের পেয়ে গেছে?
হবে হয়ত!
‘সব শেষ, রবিন।’ ভাঙ্গা গলাতে বলে উঠে দাঁড়াতে গিয়ে পড়ে যায় ফারিহা।
ওকে ধরে উঠতে সাহায্য করছি আমি, তার মাঝেই জানতে চাই আবার, ‘কি হয়েছে?’
‘বাবা …’ – বলতে গিয়ে একবার থমকায় ফারিহা, ‘বাবা বেঁচে নেই। মেরে ফেলেছে ওরা। সব শেষ।’
ওকে শক্ত করে ধরে থাকি আমি। চোয়াল শক্ত হয়ে গেছে আমার।
খবরটা এতটাই আচমকা পেলাম – সামলে উঠতে এমনকি আমারও কয়েক সেকেন্ড লেগে যায়!
ফারিহার বাবা শিল্পপতি রিজভী আকন্দ ছিলেন আমার শ্রদ্ধা কেড়ে নেওয়া একজন মানুষ। নিজে রাবেকের একজন হেডফাইভ হয়েও কথা দিয়ে কথা রেখেছেন। আমাকে আশ্রয় দিয়েছিলেন – ঈশিতাকে আগলে রেখেছিলেন আমার অনুপস্থিতিতে! শুধু আমাকে দেওয়া কথা রাখার জন্য! অথচ তখন রাবেক তাকে হন্যে হয়ে খুঁজছিল।
সেই মহৎপ্রাণ মানুষটি আর নেই? রাবেকের বাহিনীর কবল থেকে রক্ষা পেল না রিজভী আকন্দের মত একজন মানুষও?
খটকা লাগল তখনই।
বাইরে একটা গাড়ি এসে থেমেছিল। এতক্ষণে ওদের ভেতরে চলে আসার কথা। মিনহাজকে বলেছিলাম ব্যাকআপ দিতে।
কিন্তু কই?
একটা গুলির শব্দও শুনতে পাইনি তখন থেকে।
দ্রুত মুখ খুলি আমি, ‘এখান থেকে বের হতে হবে আগে, ফারিহা। আগে বেরিয়ে নেই। আংকেলের মৃত্যুর জন্য দায়ী একজনকেও ছাড়ব না আমি।’
আমার চোখ থেকে আগুনের হল্কার মত দৃষ্টি বেরুচ্ছিল, কিন্তু ফারিহার মুখের ভাবের কোন পরিবর্তন দেখলাম না। মেয়েটা মুষড়ে পড়েছে অনেক। এই অপরাধ জগত, এই খুনোখুনি, এই শঙ্কা, প্রিয়জন হারিয়ে ফেলা – এসবের জন্য ওর জন্ম হয়নি। ভাগ্য তাকে টেনে এনেছে এখানে।
ওর কাঁধে একহাত রেখে ছোট দরজাটার দিকে আগাই। দোরগোড়ায় পড়ে আছে আমার গ্লক। ফারিহার বাঁধন খোলার জন্য নামিয়েছিলাম।
কিন্তু ওটার কাছাকাছি পৌছাতে পারলাম না, আগেই হুড়মুড় করে ঢুকে পড়ল একজন মানুষ।
এক হাতে উদ্যত পিস্তল দেখে বুঝতে বাকি থাকে না পার্ক হওয়া গাড়িটা থেকে কারা নেমেছিল!
একটা হাল্কা ধাক্কা দিয়ে ফারিহাকে একদিকে সরিয়ে দিলাম, লোকটার হাত ধরে মুচড়ে আনলাম নিজের দিকে। তার ভেতর ট্রিগার টেনে ধরেছে নতুন ঝামেলা।
বদ্ধ ঘরের দেওয়ালে কয়েকবার বাড়ি খেয়ে স্রেফ কাকতালীয়ভাবেই পিস্তলধারীর বাম হাতেই গাঁথলো বুলেটটা।
ব্যাটার গলাতে একটা মাপমত কোপ দিয়ে বুক বরাবর প্রাণের সুখ মিটিয়ে লাথি হাঁকালাম। খোলা দরজার ঠিক পাশের দেওয়ালে বাড়ি খেয়ে জ্ঞানহীন দেহটা আস্তে করে বসে পড়ে।
বড় একটা ফাঁড়া কেটেছে – বুলেটটা আমাদের কারও গায়ে লাগতে পারত।
ফারিহাকে এখানে এনে রাখার অর্থ এখন কিছুটা পরিষ্কার আমার কাছে। ঈশিতার খোঁজে ট্রাকিং ডিভাইস ফলো করেও আসতে পারতাম, তবে আমি ঐ লোকেশন নিয়মিত ট্র্যাক করি কি না তা রাবেকের জানার কথা নয়। কাজেই একটা আননোন ফোনকল দিয়ে মনে করিয়ে দেয়া হয়েছে। আর ঈশিতাকে উদ্ধার করা এক ব্যাপার, ফারিহাকে উদ্ধারের পরিস্থিতি সম্পূর্ণ ভিন্ন। এখন আমাকে আক্রমণাত্মক কৌশল এড়িয়ে চলতে হবে মেয়েটার নিরাপত্তার কথা ভেবে। সেই সুবিধের পুরোটা নেবে রাবেক বাহিনী।
একা থাকলে ইরফান স্রেফ ভ্যানিশ হয়ে যেতে পারে – কিন্তু দুইজনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে সেটা করাটা অনেকটা কঠিন। কাজেই রাবেককে গুরু মেনে নিলাম।
‘এখানেই থাকো।’ ফারিহাকে বলে চট করে পিস্তলটা তুলে নিতে না নিতেই দ্বিতীয় মানুষটা ঢুকে যায় ছোট ঘরটাতে।
এর মোটামাথায় বিনা নোটিসে গুলি করলাম। দড়াম করে পড়ে যাওয়ার সাথে সাথে মানুষটার হাত থেকে একটা ছোটখাট সাবমেশিনগান ছিটকে পড়ল।
CZW 9 টা দেখে প্রাণ জুড়িয়ে যায়। তেত্রিশ সেন্টিমিটার দৈর্ঘ্যের সাবমেশিনগানটা ক্ষুদ্র হলেও কাজের।
ছিটকে বের হয়ে এলাম ম্যানেজারের রুম থেকে। পায়ের ধাক্কায় দরজাটা ভেজিয়ে দিতে ভুলিনি। খোলা দরজা দিয়ে বুলেট কিংবা গ্রেনেড ঢুকে ফারিহার দফারফা করে দেক – চাই না।
ঝড়ের বেগে দৌড়াচ্ছি এক র্যাক থেকে আরেক র্যাকের আড়ালে– সেই সাথে পেরিয়ে যাচ্ছি শপিং মলের ভেতর ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা তিনটি অস্ত্র থেকে বেরিয়ে আসা বুলেটগুলো। তিনজনেরই চোখে সানগ্লাস।
পাশাপাশি দুটো র্যাকের মাঝে দিয়ে আমার শরীর বের হয়ে অন্য র্যাকের আড়ালে যাওয়ার মধ্যবর্তী সময়টুকুতে সাবমেশিনগান থেকে বার্স্ট শটে ফায়ার করছি।
কাবা শরীফ তওয়াফের মত করে পুরো মার্কেটটা আড়াইবার চক্কর মারতে না মারতেই এলাকা নিস্তব্ধ হয়ে যায়।
নিথর দেহগুলো দেখে আমার মুখে হাসি ফুটে ওঠার কথা।
কিন্তু তেমন কিছু হল না। একটা মৃতদেহের সামনে এসে থমকে গেছি।
শুয়ে আছে মিনহাজ।
কপালের ঠিক মাঝখান দিয়ে একটা বুলেট চলে গেছে ওর – সম্ভবত টু-ভার্সেস-ওয়ান ফায়ারফাইটের সময়ই।
পাথরের মত দাঁড়িয়ে থাকলাম আমি।
খুট করে খুলে যায় ছোট ঘরটার দরজা। গোলাগুলির শব্দ থেমে যাওয়ায় বেরিয়ে এসেছে ফারিহা।
আমাকে পাথরের মত দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ধীর পায়ে এগিয়ে এল সে। এবার তার হতাশ মুখটায় আমি কান্নার অভিব্যক্তি দেখতে পাই।
এগিয়ে গেলাম তবে ওকে স্বান্তনা দিতে নয়, নির্দয়ের মত ওর এক হাত ধরে টেনে নিয়ে যেতে থাকি শপিং মলের বাইরে। কোমরে লুকিয়ে ফেলেছি গ্লক, ফেলে দিয়েছি CZW-9।
একটা র্যাক থেকে দুটো সানগ্লাস তুলে একটা ধরিয়ে দিলাম ফারিহার হাতে। চেহারা যতদূর সম্ভব ঢেকে রাখা দরকার। ভাবাবেগকে দেওয়ার মত সময় আমাদের নেই।
যেকোন মুহূর্তে আরেকটা ফোর্স পাঠাবে রাবেক বাহিনী। কোনঠাসা আমাকে ফারিহার সাথে আটকে ফেলার কারণে হয়ত অল্প কয়েকজনকে পাঠানো হয়েছে। তবে সামনের বার এই ভুলটা করার কথা না ওদের।
মন থেকে সরাতে পারছি না একটি চিত্র। মিনহাজ আমার সবচেয়ে পুরোনো বন্ধু ছিল। চোখের কোণে কেমন যেন জ্বালা করে উঠলো।
বাইরে ঝলমলে রোদ। চোখে সানগ্লাস গলিয়ে একবার অবস্থা দেখলাম।
এই মুহূর্তে সামনের পথে আততায়ী নেই কোন। খালি গাড়িটা দাঁড়িয়ে আছে। এলাকাবাসী ভয়ার্ত চোখে তাকিয়ে আছে আমাদের দিকে। গুলির শব্দ সবার কানে গেছে।
দূরের কোথাও পুলিশের সাইরেন শোনা যায়। তবে সেটা ছাপিয়ে আরেকটি শব্দ আমার মনোযোগ কেড়ে নিল।
এক সেকেন্ড পরই দেখতে পেলাম ওদের। মোড় ঘুরে তিনটি গাড়ি তীব্র বেগে ছুটে আসছে এদিকে। উপস্থিত প্রতিক্রিয়ার ওপর ভরসা করতে বাধ্য হলাম। ফারিহার হাতে হাত রেখে ছুটলাম শত্রুর ফেলে রাখা গাড়িটার দিকে। প্যাসেঞ্জার সিটে ওকে তুলে দিয়ে অন্যদিক থেকে নিজেও উঠে বসি।
পুরোনো আমলের গাড়ি যেহেতু, ভরসা আছে। এখনকার জিনিস হলে আর দেখতে হত না। সিকিউরিটির দিক থেকে অনেক এগিয়ে গেছে অটোমোবাইলস ইন্ডাস্ট্রি।
ব্যস্ত হাতে ইগনিশন কাভার খুললাম। একগাদা তার এখন সামনে। জবড়জঙ অবস্থা। সামনের তিনজোড়া তারের মাঝেই অপেক্ষা করছে আমাদের মুক্তির টিকেট! সাবধানে তারগুলো দেখলাম। ব্যাটারী আর স্টার্টিং ওয়্যার কোনটা হতে পারে? যেকোন তার ধরে টেনেহিঁচড়ে হেডলাইট জ্বালিয়ে আমাদের কোন উপকার হবে না।
গাড়ি চুরি করতে হয়েছে আমাকে এককালে। তবে বহু আগের কথা সেসব। তখনকার গাড়ি চুরি করা সহজও ছিল। বহুদিনের পুরোনো অভ্যাসের ওপর ভিত্তি করে লাল আর বাদামী তারজোড়া টেনে নেই। তারপর ছুরিটা পা থেকে খুলে সিলিন্ডার থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেই মাঝ বরাবর কেটে।
কাছে চলে এসেছে গাড়িগুলো। পেছনে গুলির শব্দ শুনি দুইবার।
ফারিহাকে কিছু বলতে হয় না – ঝট করে মাথা নামিয়ে ফেলেছে ও।
সাবধানে স্টার্টার ওয়্যার আর পাওয়ার ওয়্যার দুটোকে জোড়া লাগাতেই স্পার্ক করে ওঠে – এবং ইঞ্জিন স্টার্ট নেওয়ার শব্দটা যেন সুধাবর্ষণ করে আমার কানে।
ফারিহার ওড়না ধরে এক কোণা ছিঁড়ে ফেললাম এবং আড়াল করলাম মাত্র কানেকশন দেওয়া অংশটাকে। মাঝরাস্তায় একটা ভেজাল লাগলে গুলি খেয়ে মরতে হবে।
ঝট করে সোজা হয়ে বসলাম, পেছনের জানালা দিয়ে চারবার এলোপাথারী গুলি ছুঁড়লাম। দ্বিগুণ তেজে পাল্টা ফায়ার করে ওরা।
সেই সাথে আগে বাড়ি আমরা, তীরবেগে ছুটিয়ে দিয়েছি গাড়ি – রাস্তা পার হতে থাকা বোকা এক মহিলাকে বহু কষ্টে এড়িয়ে ছুটে যায় আমাদের গাড়ি।
পেছনের আঠার মত লেগে আছে ওরা – পর পর তিনটা বাঁক নিয়ে সোজা মেইনরাস্তায় উঠে আসি আবারও। সামনের ট্রাফিক সিগন্যালের লাল সিগন্যালটা চোখে পড়ে একেবারে আচমকাই।
আমাদের রেড সিগন্যাল – ওদের গ্রীন। বিন্দুমাত্র দ্বিধা না করে লাফ দিয়ে গোলচক্করে উঠে আসি গাড়ি নিয়ে। বাম দিক থেকে তীব্র বেগে আসতে থাকা পাবলিক বাসটাকে এড়াতে চাইলাম, কিন্তু পারলাম না পুরোপুরি। পেছনের বাম্পার ছুটে রাস্তায় ছিটকে পড়লো, কান ফাটানো ধাক্কা খেয়েছি। গাড়ির নাক বাম দিকে ঘুরে যাচ্ছিল – কোনমতে সোজা করে অন্যপাশ থেকে আসা মাইক্রোবাসটিকে এড়িয়ে গোলচক্করটা পেড়িয়ে গেলাম।
ফারিহা শক্ত করে ড্যাসবোর্ড আকড়ে ধরে বসে আছে। বিস্ফোরিত চোখে রাস্তায়!
অন্যপাশের রাস্তা সম্পূর্ণ খালি। পেছনে রেড সিগন্যাল পড়লে খালি থাকবে এটাই স্বাভাবিক।
পেছনে কান ফাটানো বিদঘুটে শব্দের সাথে সাথে ফিরে তাকিয়ে দেখতে পেলাম আমাদের ফলোয়ার দুটো গাড়িকে একসাথে লাগিয়ে দিয়েছে শতাব্দী পরিবহণ।
একটার সামনের দিকে, অপরটার পেছনে।
রেড সিগন্যাল অমান্য করার কুফল।
নিষ্ঠুর একটা হাসি মুখে ফুটিয়ে সামনের দিকে ছুটে যাই আমি।
৩
‘আসবেই ওরা।’ স্ক্রিনের দিকে ব্যস্তভাবে চোখ বুলাই আমি।
‘কি করে শিওর হচ্ছ তুমি?’ বিছানাতে হেলান দিয়ে বসে আছে ফারিহা। ওখান থেকে জানতে চাইল।
‘এর আগে এখানে কয়েকবার আশ্রয় নিয়েছি। রাবেকের অজানা থাকার কথা নয়। কোন না কোন লোক এখানে পাঠাবে।’
‘তারমানে – সরাসরি আমাদের ওপর হামলা চালানোর কথা আমাদের।’
‘উঁহু। ফায়ার এস্কেপ দিয়ে উঠেছি আমরা দোতলা থেকে। ফলো করে নি কেউ।’ মাথা নাড়ি আমি।
একই হোটেলে বসে আছি আমরা।
একই ফ্লোরে।
যেখানে এসে উঠেছিলাম আমি ফারিহার সাথে পরিচয়ের সময়কার ঝামেলাতে। এখানে ঈশিতাকেও কয়েকদিন রেখেছিলাম। রুমটার ঠিক অপোজিট রুম নিয়েছি এবার আমি। ফারিহা জানে না – তবে গত এক সপ্তাহ ধরে আগের ঘরটিরও ভাড়া দিয়ে চলেছি।
রবিনের নামে। নইলে যে কোন হোটেলরুমে যে কোন সময় আপনি আসবেন আর তা খালি পাবেন – এমনটি হবার কথা নয়।
ওই এক রুমে এতবার উঠেছি আমরা – আমার বিশ্বাস রাবেকের চোখ সেখানে পড়তে বাধ্য। এখানে নজর রাখবে সে। সম্ভবত হোটেলে কাওকে এরই মধ্যে এনে রেখেছে। আমরা ঢোকার পর চেহারা দেখানো মাত্র খবর চলে যাওয়ার কথা জায়গামত।
সেজন্যই দোতলাতে উঠে এসে সাবধানে সরে গেছি আমরা ফায়ার এস্কেপের দিকে। সেদিকের সিঁড়ি ব্যবহার করে উঠে এসেছি এই ফ্লোরে। ফ্রন্ট ডেস্কে গিয়ে কেউ খোঁজ নিলে আমার নামে থাকা অন্য ঘরটিকে দেখতে পাবে। হানা দিলে ওখানে দেবে।
আগে থেকেই ল্যাপটপ আর চার্জার কানেকশন দিয়ে ওয়েব ক্যাম চালু করে দিয়ে এসেছি সেই রুমটিতে। হুড় মুড় করে কেউ ঘরে ঢুকে পড়লে আমিও তার পিছু পিছু ঢুকে পড়ব। এবারের আক্রমণকারীদের কাওকে জ্যান্ত ধরতে হবে।
রাবেকের লোকেশন জানার জন্য কিছু ক্লু দরকার আমার।
ফিরে তাকালাম ফারিহার দিকে। নোংরা পোশাক পাল্টে গোসল করে এসেছে ও।
একেবারে রাজকন্যার মত লাগছে দেখতে এখন।
পোশাক কিনে আনতে হয় নি – অর্ডার দিয়েছি। এনে দিয়েছে রুম সার্ভিস।
লোকটা আমার বিশ্বস্ত। কাজেই রাষ্ট্র হবার ভয় নেই।
গোলচক্কর কেলেঙ্কারির পর একবার গাড়ি থামিয়ে ফারিহার জুতো থেকে ঈশিতার সাথে আমারই পাঠানো ট্রান্সমিটারটা বের করে রাস্তায় ফেলে দিয়ে এসেছি। এটার সিগন্যালই আমাকে ধোঁকা দিয়েছিল আজ সকালে।
এখানে আমরা মোটামুটি নিরাপদ।
আপাতত।
ওর পাশে গিয়ে বসলাম আমি, কোমল গলাতে বলি, ‘রিজভী আংকেলের ব্যাপারটা খুলে বল আমাকে। সব শুনলে হয়ত রাবেকের প্ল্যানিংটা বুঝতে পারব।’
ফারিহার দুই চোখে তীব্র বেদনা নেমে এল। মনে পড়ে গেছে সব আবারও।
চুপচাপ বসে রইলাম। ওকে সময় দিচ্ছি।
‘বিকেল তখন। বাসায় মাত্র ফিরে এসেছি। সবকিছু স্তব্ধ মনে হচ্ছিল। একটু বেশিই চুপচাপ যেন। মনে কুডাক ডাকল, দ্রুত ভেতরে ঢুকেই দেখি –‘
থেমে যায় ফারিহা। সুন্দর ঠোঁটজোড়া তির তির করে কাঁপছে।
‘-পড়ে আছে বাবা। রক্ত চারপাশে।’ বলতে কষ্ট হচ্ছে বুঝতে পারলাম, ‘ওপরের তলায় অপেক্ষা করছিল ওরা। আমার চিৎকার শুনে চোখের পলকে নেমে এসে মাথায় পিস্তল দিয়ে বাড়ি মারল কেউ। তারপর আর কিছু মনে নেই। জ্ঞান ফেরার পর দেখলাম ছোট একটা অন্ধকার ঘরে আটকে আছি।’
‘হুম।’ মাথা নামিয়ে ফেলি আমি। রিজভী আকন্দ মানুষটি বেআইনি পথে থাকলেও সম্মান পাওয়ার যোগ্য ছিলেন, ‘আমি দুঃখিত, ফারিহা।’
কিছুক্ষণের জন্য চুপ হয়ে যাই দুইজনেই। সারাজীবন মানুষের ক্ষতি কম করিনি। কাজেই সান্ত্বনা কিভাবে দিতে হয় সেটা জানি না আমি।
আমার দিকে বড় বড় চোখদুটো মেলে দেয় ফারিহা, ‘একটা ব্যাপার – আমার ভুলও হতে পারে।’
‘কোন ব্যাপারে?’ আড়চোখে একবার ল্যাপটপের স্ক্রিণে তাকিয়ে জানতে চাই আমি।
‘বাবার শরীরের পাশে নিজের রক্ত দিয়ে কিছু একটা মেঝেতে লেখে গিয়েছেন বলে মনে হয়েছে আমার।’
আগ্রহী হলাম এবার, সোজা হয়ে বসি আমি, ‘কি লেখা ছিল?’
একটু ভাবার চেষ্টা করে ফারিহা, ‘ঠিক মনে তো পড়ে না। কি সিচুয়েশন তখন আমার তো বোঝই। কোয়াডার টাইপ কিছু।’
‘ইংরেজী না বাংলা?’ ওর দিকে ঝুঁকে আসি আমি।
‘ইংরেজী। QUADR টাইপ কিছু।’
‘কাদের লেখতে চান নি তো? কারও নাম? আততায়ী হয়ত পরিচিত ছিল উনার?’ ভ্রু কুঁচকে জানতে চাই আমি।
‘সেরকম তো মনে হয়নি। QUADR ই দেখেছি আমি।’
চুপ হয়ে একটু ভাবি আমি।
আমার সেলফোনটা বেজে উঠে মনোযোগ সরিয়ে দেয় একটু পরেই ।
একমুহূর্ত ওটার দিকে তাকিয়ে থাকি। তারপর রিসিভ করলাম।
‘হ্যালো?’
‘মাই ডিয়ার সান!’ ওপাশ থেকে খুশিতে বলে ওঠে রাবেক।
‘শাট আপ।’ রাগে নিয়ন্ত্রণ হারাই আমি, ‘কিলিং মি. রিজভী অ্যান্ড মিনহাজ ওয়াজ ইয়োর বিগেস্ট মিস্টেইক, রাবেক! আ’ম টেকিং ইট পার্সোনালি।’
ওপাশ থেকে খন খন করে হাসে রাবেক।
‘তোমার নিয়তিও ওই একই। তবে একটা সুযোগ দেওয়ার ইচ্ছে আছে তোমাকে। মেনে চলতে হবে আমার একটি মাত্র অনুরোধ।’
‘সেটি সম্ভব নয়।’ ফোনের এপাশেই মাথা নাড়ি আমি।
‘আহ! মেনে নাও ইরফান। হেরে গেছ তুমি। ঈশিতা আমার এখানে ভালোই আছে। পড়াশোনা করছে আর পাশাপাশি বিজনেসের কাজ শিখে নিচ্ছে। মাঝখান থেকে তুমি বেঘোরে প্রাণ হারাতে চাও কেন? সহযোগিতা কর, তোমাকে আর ফারিহাকে নিরাপদ একটা জীবন উপহার দেব। নিজের জন্য না করলে- যা পাছাভরা ইগো তোমার! তবে ফারিহার কথা ভাবো? কথা দিয়ে কথা রাখি আমি।’
‘একেবারে মরিয়া হয়ে আছেন দেখছি!’ ব্যঙ্গ ঝড়লো আমার গলা থেকে, ‘হঠাৎ আমাকে নিয়ে মেতে উঠলেন কেন?’
ওপাশটা কিছুক্ষণের জন্য চুপ হয়ে যায় এবার।
‘উঠতে হল। আমার একটা জিনিস তোমার কাছে আছে, ইরফান। জাস্ট গিভ মি ব্যাক হোয়াট ইজ রাইটফুলি মাইন।’
বয়স্ক হেডফাইভ ইয়াসিরের কথা মনে পড়ে যায় আমার। ডুবন্ত অ্যাম্বুলেন্সে শেষবারের মত দেখেছিলাম রাবেকের হেডফাইভ ইয়াসিরের মৃতদেহ।
সেদিনের দিকে ইঙ্গিত দিচ্ছে মনে হয় রাবেক?
জানল কিভাবে ওটা আমার কাছে?
‘আমি জানি তুমি কোথায় আছ।’ আমাকে চুপ করে থাকতে দেখে চাপ প্রয়োগের চেষ্টা করছে রাবেক, ‘চাইলেই ফুটো করে নিয়ে যেতে পারি। তবুও ঈশিতার ভাই বলেই হয়ত একটা সুযোগ দিচ্ছি তোমাকে।
সৎ ছেলের জন্য রাতারাতি এত দরদ জন্মিয়েছে এ কথাও আমাকে বিশ্বাস করতে হবে আজ?
তাছাড়া লোকেশন জানার ব্যাপারটা সত্য হলেও এখানে একটা ফাঁক আছে। রাবেকের তা জানার কথা নয়। হোটেলে ঢুকলে আমার পাশের রুমেই দৌড়াবে ওরা। একেবারে আমার ফাঁদে পা দেবে।
ঠান্ডা গলায় বললাম, ‘মুরোদ থাকলে এসে নিয়ে যান।’
কেটে দিলাম লাইন।
ফিরে তাকাতে গিয়ে ফারিহার নাকে নাক ঠেকে যায় আমার। উঠে এসেছে মেয়েটা। চোখে আতঙ্ক।
‘রাবেক ছিল ওটা – তাই না? এতক্ষণ রাবেকের সাথে কথা বলেছ তুমি?’
‘হুঁ।’
‘কিছু একটা চেয়েছে তোমার কাছে, রাইট?’ ওর গরম নিঃশ্বাস টের পাচ্ছি।
‘যা চেয়েছে সেটা দেওয়া সম্ভব নয়, ফারিহা। ওর উইকপয়েন্ট এটা। ছেড়ে দিলেই আমাদের হাতে আর কিছু থাকছে না।’
‘রবিন -’ ইতস্তত করে ফারিহা, ‘-সব ছেড়ে দিয়ে লো প্রোফাইলে থাকলে তোমাকে খুঁজে পাবে ওরা?’
দীর্ঘশ্বাস ফেলি আমি, ‘আমার মায়ের হত্যাকারী – তোমার বাবার হত্যাকারীকে ছেড়ে দিচ্ছি না আমি। মিনহাজের কথাও ভুলে যেও না। সরি, ফারিহা। রাবেকের শেষ না দেখে নিজে লুকিয়ে থাকতে পারব না আমি।’
আমার চোখে চোখ রাখে মেয়েটা – বড় বড় চোখ দুটোতে ডুবে যেতে ইচ্ছে করে আমার।
আস্তে করে আমার হাত ধরল ও, ‘তোমাকেও হারাতে চাই না।’
হাতটা ধরে হাল্কা একটা চাপ দিলাম। অভয় দেয়ার সুরে বললাম, ‘হারাবে না। কথা দিলাম।’
একটা মুহূর্ত একজন আরেকজনের দিকে তাকিয়ে থাকি আমরা। তারপরই আমার বুকে ঝাঁপিয়ে পড়ে ফারিহা।
পাগলের মত চুমু খায় আমার ঠোঁটে। পাল্টা সাড়া দেই আমিও।
একটা মেয়ের ঠোঁট এত নরম হয় কি করে?
ওকে জড়িয়ে ধরতে গিয়ে ওর নরম রেশমি চুলে হাত ডুবে যায় আমার – আর আমার সারা মুখে চুমুর ঝড় বইয়ে দেয় মেয়েটা।
ধাক্কা দিয়ে আমাকে বিছানাতে ফেলে দিয়েছে– আমার শার্টের কলার ধরে হিংস্র গলাতে বলে, ‘আই লাভ ইউ, রবিন। আই নীড ইউ রাইট নাউ।’
ওর পিঠে হাত রেখে টেনে নিয়ে আসি আমার অনেক কাছে। চকচকে চোখদুটোতে আমার ওপর আস্থা আর নির্ভরতা।
তারপরই ওকে শক্ত করে জড়িয়ে রেখে একবার গড়িয়ে পড়ে গেলাম বিছানা থেকে, এক হাত লম্বা করে বালিশের ভেতর থেকে বের করে নিয়েছি গ্লক২৩, একই সাথে বিস্ফোরণের সাথে উড়ে গেল আমাদের রুমের দরজা।
ভেতরে ঢুকে পড়া শটগানধারীর গলায় প্রথম গুলিটা করতেই রক্তের স্প্রে ছিটে পড়ে সুন্দর মেঝেটা নষ্ট হয়ে গেল।
ঝাঁপিয়ে ভেতরে ঢুকল পরের দুইজন। কোমরে প্রস্তুত একটা করে এমপিফাইভ। শুয়ে থাকা আমাদের চোখে পড়তে ওদের দেরী হয়ে গেল, ফলস্বরূপ ছিটকে পড়ল ওরাও।
উঠে দাঁড়ালাম ফারিহাকে নিয়ে। জরুরী একটি বিষয় ভুলিনি। টুক করে একটা ছোট্ট চুমু খাই ওকে, ‘আই লাভ ইউ টু।’
সামনের খোলা দরজার ওপাশে আরও মানুষ আছে জানি আমি। সন্তর্পনে অস্ত্রটা কানের কাছে তুলে রেখেছি।
এক হাত ধরে টানি ফারিহার, ‘লেটস লীভ দিস গডড্যাম প্লেস।’
৪
ফারিহাকে আরেকটি বারান্দা পার হতে সাহায্য করলাম।
সাবধানে রুমের সাথে থাকা বারান্দায় পৌঁছতে না পৌঁছতেই আরেকজন বীরপুরুষকে ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করতে দেখা গেছিল। গুলিটা লাগেনি ওকে – তবে ভয় পেয়েছে সন্দেহ নেই। ঘর থেকে এক্সট্রা ম্যাগ ছাড়া আর কিছু নেইনি আমরা।
হোটেলটার রুমগুলো পাশাপাশি এক সারিতে এগিয়ে গেছে আর সব হোটেলের মতই। তবে এদের বারান্দাগুলো বিশাল। আর বিশাল বলেই একটা রুমের বারান্দা থেকে আরেকটা রুমের বারান্দার দূরত্ব কম।
যে কারণে এই হোটেলে এসকেপ রুটের অভাব নেই। আর এপাশে কোন স্নাইপিং পজিশনও নেই। বারান্দায় বের হওয়াটা নিরাপদ। একমাত্র কারণ, এই হোটেলটা এতবার সেফ হাউজ হিসেবে ব্যবহার করেছি।
একটার পর একটা রুমের বারান্দায় লাফিয়ে লাফিয়ে পার হচ্ছি আমরা। ফারিহাকে নিয়েই ভয়। মাঝপথে খসে না পড়ে!
একেবারে চল্লিশ ফুট নীচে মাটি। পড়লে আর দেখতে হবে না।
প্রায় পঞ্চাশ ফিট সরে এসেছি আমরা, এসময় আমাদের রুমের বারান্দায় বের হতে দেখা গেল রাবেক বাহিনীর কাওকে। আমাদের দেখে হই হই করে উঠল। সোল্লাসে আমাদের দিকে গুলি ছোঁড়ার পাঁয়তারা করছে বুঝতে একটুও কষ্ট হল না। আন্দাজে দুইবার গুলি করতেই আবার ব্যাঙের মত লাফিয়ে ভেতরের দিকে চলে যায় বেয়াদবটা।
আর যে বারান্দায় এসে নেমেছি তার রুমের দরজায় একটা বিকট লাথি মেরে নব ছুটিয়ে ফেললাম। আর কানামাছি খেলে কাজ নেই।
ভেতরে হতভম্ভের মত বসে আছে একজন সদ্য তরুণী। গুলির শব্দে বিভ্রান্ত তো ছিলই। তার ওপর পিস্তল হাতে আমাদের ঢুকতে দেখে তার চোখ কপালে উঠে যায়।
একটা ছোট লাগেজ। তা থেকে লাল রঙের কাপড় উঁকি দিচ্ছে। সেই সাথে মেয়েটার চোখের নীচে কালি।
দুইয়ে দুইয়ে চার মিলিয়ে ফেললাম। ঘরটা থেকে বের হতে হতে ফ্রেন্ডলি অ্যাডভাইস দিতে ভুলি না, ‘বিয়ে ফেলে পালিয়ে না এসে বিয়ে ঠিক করার আগেই ফ্যামিলির সাথে খোলামেলা কথা বলে বিয়েটা ঠেকাতে পারতে।’
আমার দিকে শাসানির দৃষ্টি দিচ্ছে ফারিহা। তাই আর সময় নষ্ট না করে বেরিয়ে এলাম কড়িডোরে।
একটু আগে আমাদের বাইরে দেখে ফেলেছে ওদের একজন। কাজেই সবাই যে গায়ে এসে পড়বে সে ব্যাপারে সন্দেহ ছিল না। আর ঠিক তাই দেখা যায়।
হা হা করতে করতে দৌড়ে আসছিল ছয়জন। ধাঁই ধাঁই করে সে বরাবর কয়েকটা গুলি পাঠালাম, সেই সাথে ছুটছি। করিডোরের দৈর্ঘ্যের মাত্র ছয় ফিট দূরত্ব অতিক্রম করে আরেক লাথিতে ফায়ার এসকেপের দরজা খুলে ফেলতে বেগ পেলাম না। এক ধাক্কায় ফারিহাকে ঢুকিয়ে দিলাম, সেই সঙ্গে এখনও দাঁড়িয়ে থাকা দুইজনের দিকে ম্যাগাজিন খালি করে দেই।
বিয়ে পালানি মেয়ের রুমের দরজা থেকে ফায়ার এসকেপের দরজা দিয়ে ঢুকে যাওয়ার জন্য ব্যয় হয়েছে মাত্র দেড় সেকেন্ড।
এত অল্প সময়ে হুড়মুড় করে বেড়িয়ে এসে আবার গায়েব হয়ে যাওয়ায় সারপ্রাইজড রাবেক বাহিনীর কেউই ঠিক মত গুলি ছুঁড়তে পারেনি।
এক ছুটে নীচতলাতে নেমে এসেছি আমরা, তবে মেইন গেটের দিকে গেলাম না। ওদিকে আরেকটা দল অপেক্ষা করছে সন্দেহ নেই।
নীচতলার রেস্টুরেন্টের পাশে মেইনটেন্যান্সের জন্য রাখা ঘরটিতে চট করে ঢুকে পড়ি ফারিহাকে নিয়ে।
হোটেলে আমার বিশ্বস্ত একজন আছে। তাকে দিয়ে আগেই আনিয়ে রাখা পোশাক দুটো পড়ে ফেলি আমরা দ্রুত।
এসকেপ প্ল্যান আগে থেকে প্রস্তুত রাখার স্বভাবটাকে মনে মনে আরেকবার ধন্যবাদ দিয়ে একটা ট্রলি নিয়ে বের হয়ে আসি আমরা।
হোটেলের দুই কর্মচারী এখন বাইরে গারবেজ ফেলতে যাচ্ছে।
*
রুমটা অন্ধকার।
শান্ত পায়ে তার ভেতর এসে দাঁড়াই।
একটা লাইট জ্বালিয়ে দেই। কিন্তু তাতে অন্ধকার যায় না। ঘোলাটে আলো বলা যেতে পারে এই অবস্থাকে।
চেয়ারের সাথে পা বাঁধা ঘরের একমাত্র মানুষটার। আর হাত দুটো স্ট্র্যাপ দিয়ে বাঁধা আছে টেবিলের সাথে।
মাথা ঝুলে পড়েছে বুকের কাছে। দূর থেকে দেখেই বুঝতে পারি মানসিক শক্তি ধরে রাখার শেষ পর্যায়ে এসে পড়েছেন ডিফেন্স অ্যাডভাইজার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাহমুদ।
দ্য ফিফথ হেডফাইভ।
রাবেকের সাথে একদম প্রথম থেকে আছে যে মানুষগুলো এ তাদের মাঝে একজন।
এতগুলো বছর ধরে নিষ্ঠার সাথে কাজ করে আর্মির এত ওপরের পদে আসীন হয়েছেন– রাবেকের সাম্রাজ্য কতদূর বিস্তৃত এ থেকে যথেষ্ট টের পাওয়া যায়!
তবে গত কয়েক মাস আগে আমাকে দুনিয়ার বুক থেকে কৌশলে সরানোর চেষ্টা গিয়ে নিজেই পড়ে গেছেন ফাঁদে। এই হেডফাইভকে আমি গত তিনমাস ধরে লুকিয়ে রেখেছি। বন্দী। তাকে মানসিকভাবে ভেঙে ফেলার জন্য বেশ কিছু পদ্ধতির প্রয়োগ করেছি। কিন্তু যেটা করিনি – একটা প্রশ্ন পর্যন্ত করি নি তাঁকে।
মানসিক চাপ আরও বাড়ানোর জন্য এই পদ্ধতিটা বেশ কার্যকরী।
ধীরে ধীরে মাথা তুললেন মাহমুদ। তার চেয়েও ধীর পদক্ষেপে তাঁর দিকে এগিয়ে যাই আমি।
হাত থেকে চকচকে সার্জিক্যাল নাইফটা নামিয়ে রাখলাম সামনের টেবিলে।
একটি চেয়ার বন্দীর মুখোমুখি রাখা আছে। কিন্তু এখানে কোনদিনই বসিনি আমি। আজও বসলাম না।
চেয়ারটি মানসিক চাপ বাড়ানোর জন্যই রাখা। নিত্যদিনের একাকীত্ব থেকে একটা সময় ডিফেন্স অ্যাডভাইজার আশা করতে থাকবে কেউ এই চেয়ারে বসুক। তার সাথে দুটো কথা বলুক। সেই মানুষটা তার নির্যাতনকারী হলেও আপত্তি থাকবে না তার। কিন্তু – তিনমাসে তার সাথে একটি কথাও বলি নি আমি।
অথবা আর কেউ!
কথা বলতে শুরু করার যে কয়টি কারণ দরকার হতে পারে – তার সবগুলোই দেওয়া হয়েছে ব্রিগেডিয়ার জেনারেলকে।
তারপরও যদি আজ চুপ করে থাকতে পারে – এই লোকের প্রশংসা করাই উচিত!
‘মি. মাহমুদ? আপনার সন্তান আছে?’ চমৎকার একটা হাসি দিয়ে জানতে চাই আমি।
মাথা তুলে তাকিয়ে থাকেন মাহমুদ। জবাব দেন না কোন। তবে মাথা দুলিয়ে হ্যাঁ-সূচক উত্তর দেন।
ক্ষুধা আর তৃষ্ণার সাথেও কম যুদ্ধ করতে হয় নি তাঁকে একয়দিনে। কাজেই কথা এত সহজে বেরুবার কথা নয়।
টেনেটুনে শুধু বাঁচিয়ে রাখা হয়েছে মানুষটাকে।
‘বিয়ে করেছেন তাহলে।’ বেশ স্বস্তির খবর শুনেছি এভাবে বলি আমি, মুখ থেকে হাসিটি মলিন হয় নি এতটুকুও, ‘জানেন তো – প্রচলিত কুসংস্কারাচ্ছন্ন বিশ্বাস আছে – মানুষের বাম হাতের কড়ে আঙ্গুলের পাশের আঙুল থেকে একটি শিরা সরাসরি হার্টের সাথে সম্পর্কযুক্ত?’
‘ভুল।’ বিড় বিড় করে বলেন মাহমুদ।
‘ঠিক বলেছেন।’ মাথা ঝাঁকাই আমি, ‘আর্মিতে ছিলেন। হিউম্যান অ্যানাটমি সম্পর্কে আপনারা জানবেন না তো কে জানবে? আসলে – আমাদের দুই হাতেই প্রতিটি আঙুল থেকে পাঁচটি করে শিরা একত্রিত হয়ে এগিয়ে যায় হার্টের দিকে। এর মাঝে আরও অনেক জায়গাতে তারা বিভিন্ন শাখা মিলে এক হয়। সুপিরিয়র আর ইনফেরিয়র ভেনাক্যাভা হয়ে হার্টে ঢোকে অ্যাজ আ রেজাল্ট্যান্ট। সুতরাং ‘রিং ফিংগার’ হল ‘সিম্বল অফ লাভ’ কারণ হার্টের সাথে ভেইন সংযুক্ত আছে – এসব শুধুই ভ্রান্ত ধারণা। ’ স্ক্যালপেলটা হাতে নিয়ে একটু ঝুঁকে দাঁড়াই আমি, ‘তবে – হার্টের সাথে যুক্ত না থাকলেও আঙ্গুলগুলোতে শিরা কিছু আছে, মি. মাহমুদ।’
‘মি. ইরফান।’ দুর্বল মানুষটার গলাতেও বেশ কৌতুক ফুটে ওঠে, ‘বায়োলজী ক্লাস নেওয়ার কোন প্রয়োজন নেই। যা জানতে চান জানাতে রাজি আছি। তারপর আশা করি দয়া করে একটি বুলেট খরচ করবেন আমার ওপর। আ’ম ফেড আপ উইদ দিস লাইফ।’
একমুহূর্ত লোকটার দিকে তাকিয়ে থাকি।
তারপর প্রথমবারের মত সামনের খালি চেয়ারটিতে বসে পড়ি আমি।
৫
‘QUADR?’ জানতে চাইলেন মি. মাহমুদ আবার।
‘হুম।’ বলি আমি।
‘আমাদের ডীলের কথা মনে আছে তো?’ ভ্রু কুঁচকে জানতে চান মানুষটি।
‘কোন ডীল?’ একটু অবাক হয়ে তাকাই আমি।
‘জিজ্ঞাসাবাদ শেষে দয়া করে একটি বুলেট-’
হাত তুলে থামাই তাকে, ‘ইফ ইউ ইনসিস্ট – আই’ল হ্যাভ নো প্রবলেম উইথ দ্যাট। আগে আমার তথ্য দরকার।’
মরার সুসংবাদ পেয়ে খুশি হয়ে গেলেন মি. মাহমুদ।
‘আমাকে আগে জানান কোথা থেকে পেয়েছেন এই শব্দ।’ এলোমেলো চুলের ফাঁক দিয়ে প্রশ্ন ছুঁড়ে দেন মাহমুদ।
সংক্ষেপে রিজভী আকন্দের মৃত্যুর বর্ণনা দেই আমি।
‘QUADRUPLE এর অংশ এটা।’ অবশেষে জানালেন মি. মাহমুদ।
‘কোয়াডরুপল!’ বিড় বিড় করে বলি আমি, ‘চারগুণ।’
‘কোয়াডরুপলের আরেকটি অর্থ আছে মি. ইরফান।’ মাথা নেড়ে বলেন মাহমুদ, ‘কনসিস্টিং অফ ফোর পার্টস অর মেম্বারস।’
স্থির দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে থাকি আমি, ‘অথচ আপনারা ছিলেন পাঁচজনের একটা গ্রুপ। হেডফাইভস।’
একটু হাসলেন মি. মাহমুদ, ‘অবশ্যই। তবে খটকা লাগে নি আপনাদের? পঞ্চম হেডফাইভকে খুঁজে পেতে কি পরিমাণ ঝামেলা করতে হয়েছে আপনাকে?’
‘মানে -’ একটু ভেবে বলি আমি, ‘হেডফাইভদের মাঝেও র্যাংকিং আছে?’
মাথা দোলান মাহমুদ, ‘চারজন কোয়াডরুপল। একজন কোয়াডরুপল কো-অর্ডিনেটর।’
ঠোঁটজোড়া চেপে বসে একে অন্যের সাথে। ভাবছি।
‘ওয়েল, আপনি কোয়াডরুপল কোঅর্ডিনেটর। বাকিরা কোয়াডরুপল। কিন্তু এর তাৎপর্যটা কি? মৃত্যুর সময় কেন সেটা লেখে রাখার চেষ্টা করতে যাবেন মি. রিজভী আকন্দ?’
‘কারণ -’ ফিস ফিস করে বলেন মাহমুদ, ‘কো-অর্ডিনেটর না থাকায় জীবিত কোয়াডরুপলদের হাতে চলে গেছে শহরের বিভিন্ন সেক্টরের সর্বময় ক্ষমতা। ’
‘ব্যাখ্যা করুন।’ চাপ দেই আমি।
হেলান দিয়ে আরাম করে বসার চেষ্টা করেন মি. মাহমুদ।
‘হেডফাইভসদের মাঝে চারজনকে মেরে ফেলার আদেশ একটা সময় ডন রাবেক দিয়েছিলেন। জানেন সেটা আপনি। আপনাকে ঘিরেই সেই আদেশ দেওয়া হয়েছিল। রাবেক বাহিনীর কোন সদস্যরা সেই কাজে এগিয়ে গেছিল বলুন তো?’
‘আপনার।’ হাত উল্টে বলি।
‘হুম। এবার আপনাকে আমাদের অর্গানাইজেশনের কিছুটা ধারণা দেই। আমাদের কোয়াডরুপলদের হাতে সারা শহরের চারটি অংশ আলাদা করে দেওয়া হয়েছে। তারা এই অংশগুলোর সর্বময় ক্ষমতা রাখে। এমনকি সেসব এলাকাতে আমাদের যেসব মাঠপর্যায়ের ‘সোলজার’ আছে – তাদের কন্ট্রোলও থাকে তাদের হাতে।’
একটু ভাবেন তিনি কী যেন। নিজের সোনালী(!) অতীতে ফিরে গেছেন কি?
‘কোয়াডরুপলরা আমার কাছে জবাবদিহি করতে বাধ্য ছিল। কিন্তু কেউ জানত না কে ছিল পঞ্চম হেডফাইভ। কোয়াডরুপলদের কেউ কেউ ধরেই নিয়েছিল রাবেক স্বয়ং পঞ্চম হেডফাইভ। কোয়াডরুপল কো-অর্ডিনেটর।’
‘আসল কথাতে আসুন।’ তাগাদা দেই আমি।
আমার দিকে আহত দৃষ্টিতে তাকান মাহমুদ। বহু দিন পর কথা বলতে পেরেও স্বাধীনতা না পেয়ে বিরক্ত!
‘কোয়াডরুপলরা তাদের অধীনস্ত রিজিওনাল হেডকে আদেশ দেয়। এই রিজিওনাল হেডরা আবার জানে না কারা রিজিওনাল কোঅর্ডিনেটর। নিখুঁত ব্যবস্থা। আপনি একজনকে ধরে চেইন বেয়ে বেয়ে উঠে ডনের কাছে যেতে পারবেন না কোনদিনও।’
চমৎকার একটি হাসি উপহার দেন এবার স্বয়ং মাহমুদ। স্বীকার করতেই হয় আমাকে – আসলেই নিখুঁত পদ্ধতি।
তবে প্রশ্নটা করেই ফেলি, ‘তাহলে কিভাবে কন্ট্যাক্ট করেন এই কোয়াডরুপলরা? রিজিওনাল হেডদের সাথে?’
‘কোয়াড দিয়ে। সেইফ কোড এটা। আমাদের আবিষ্কার।’ দাঁত দেখা যায় ব্রিগেডিয়ার জেনারেলের মুখে, ‘আমার আর রাবেকের আবিষ্কার।’
ছোট একটা ডিভাইস বের করে টেবিলে রাখি আমি এবার।
‘এটাকে কি বলেন আপনারা?’
অবাক হয়ে সেদিকে তাকিয়ে থাকেন মাহমুদ।
‘কোয়াড-রেডিও!’ বিস্ময় কন্ঠে নিয়ে বলেন তিনি, ‘পেলেন কোথায়? ইয়াসিরের মিসিং কোয়াড-রেডিও এটা?’
তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকেন তিনি আমার দিকে।
মনে পড়ে যায় আমার সেই জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে থাকা ডুবন্ত অ্যাম্বুলেন্সে আটকে পড়ার অভিজ্ঞতা।
মেরিটাইম স্প্রিং কাপের কল্যানে আন্ডারওয়াটার শূটিং করে বেরিয়ে যাওয়ার সময় পানিতে ভেসে উঠতে দেখেছিলাম ডিভাইসটাকে। পকেটে পুড়ে পাঁচ সেকেন্ডের মাঝে অ্যাম্বুলেন্স থেকে বেড়িয়ে এসেছিলাম পেছনের দরজা খুলে।
‘যেখানেই পাই – এটাই তাহলে আপনাদের কোয়াড ট্রান্সমিটার অ্যান্ড রিসিভার?’
‘একজন কোয়াডরুপলের কাছে একটাই থাকে।‘ গম্ভীর মুখে বলেন মাহমুদ, ‘যার কাছ থেকে বাগিয়েছেন এটা –এই মুহূর্তে আপনার হাতে তার এলাকার প্রতিটি সোলজার আছে, মি. ইরফান। প্রতিটি ব্যবসা আপনার নিয়ন্ত্রণে। যদি আপনি কোয়াড জানেন।’
‘হুম।’
এবার বুঝে ফেলি আমি তাৎপর্যটা, রিজিওনাল হেডকে আমি যে আদেশ দেই সেটাই মানবে সে চোখ বন্ধ করে। কারণ আদেশ এভাবে পেয়েই অভ্যস্ত সে। এমনকী – রাবেকের আর্মি নিয়েই রাবেককে হামলা করতে পারি আমি এখন চাইলে।
শুধু জানা লাগবে একটি কোড।
কোয়াড!
‘আপনারা জানেন তিনজন হেডফাইভ মারা গেছে। অথচ জানেন না – প্রতিটি মৃতদেহের কাছে ছিল এই জিনিস। আমরা উদ্ধার করেছি সেগুলো। আমার লোকদের নির্দেশ দেওয়াই থাকত – হেডফাইভকে গুলি করে কোয়াড-রেডিও নিয়ে ফিরে আসার। তারা এর তাৎপর্য জানত না – এটা একটা স্বস্তি।’
ফোঁস করে দীর্ঘশ্বাস ফেলেন কোয়াডরুপল কো-অর্ডিনেটর।
‘তাহলে – হেডফাইভ মিলন থেকে আপনারা হত্যার সাথে সাথেই কোয়াড রেডিও নিয়ে নিয়েছিলেন। ইয়াসিরের ব্যাপারে -’
‘অ্যাম্বুলেন্স পানি থেকে তুলে খুঁজেছি আমরা। ডুবুরী নামিয়ে খুঁজেছি নদীর নীচে। পাইনি। ধরে নিয়েছিলাম, নদীগর্ভে হারিয়ে গেছে। তাও স্বস্তি। হেডফাইভ আখতারকে সমাহিত করেছিলেন আপনারা রাষ্ট্রীয় মর্যাদাতে। তার আগেই আখতারের বিলংগিংস যেখানে যত্ন করে রাখা হয়েছিল সেটা লুট করে তার কোয়াড-রেডিও উদ্ধার করি আমি। ইউ হ্যাভ নো আইডিয়া হাউ ইম্পর্ট্যান্ট থিংস দোজ আর – দোজ কোয়াড রেডিওস।’
রিজভী আকন্দকে মেরে ফেলার জন্য ব্যাগ্রতা বুঝতে পারলাম আমি এতক্ষণে।
কোয়াড-রেডিও সহই বিদ্রোহ করেছিলেন তিনি রাবেকের বিরুদ্ধে। কাজেই তিনি হয়ে উঠেছিলেন সাম্রাজ্যের জন্য খুবই বড় এক হুমকি। আমার জন্যও মরিয়া হয়ে ওঠার পেছনে কারণ এখন এটাই।
ঈশিতাকে পেয়ে গেছেন নিজের সাইডে। তারপরও আমার পেছনে কাঁঠালের আঠার মত লেগে থাকার কোন কারণ ছিল না। দুইয়ে দুইয়ে চার মিলিয়ে আমার কাছেই যে ইয়াসিরের শেষ কোয়াড রেডিওটি আছে – সে সম্ভাবনা উড়িয়ে দেয়ার কথা নয়। ফারিহা এখানে শুধুই আমার উইকপয়েন্ট হিসেবে ব্যবহৃত।
সব কিছু খাপে খাপে মিলে যাচ্ছে।
ফোঁস করে একটা নিঃশ্বাস ছাড়ি এবার আমি। হেলান দিলাম চেয়ারে।
বেজমেন্টের সিঁড়িতে তখনই অনেকগুলো পায়ের শব্দ শোনা যায়। চকিতে সোজা হলাম আমি। গ্লকটা ওপরে রেখে এসেছি। ফারিহার কাছে।
কোন ধরণের ফায়ার আর্মস ছাড়া নিজেকে সম্পূর্ণ নগ্ন লাগে আমার।
নেমে আসছে কারা?
পুরো বাসায় আমরা তিনজন ছাড়া আর কেউ ছিলাম না।
বিকট এক ধাক্কায় দরজা খুলে ভেতরে ঢুকে পড়া ছয়জন মানুষের হাতের দিকে তাকিয়ে ঢোক গিললাম।
সবার হাতে একটা করে CZW 9। চেক অস্ত্রের প্রতি রাবেক বাহিনীর এত পিরিতি কেন কে জানে!
সার্জিক্যাল নাইফটা ফেলে দিয়েছি।
চুপচাপ দুই হাত মাথার ওপর তুলে দাঁড়াই আমি।
৬
পাশাপাশি বসে আছি আমি আর ফারিহা।
দুইজনেরই হাতে একটা করে হ্যান্ডকাফ। লাগানো আছে সামনের টেবিলের সাথে আটকানো রডের সাথে।
টেবিলটা আবার মেঝের সাথে বোল্ট দিয়ে আটকে রাখা। কাজেই, ছুটে কিংবা টেবিল উলটে বের হয়ে যাওয়ার কোন উপায় নেই আমাদের।
ডন রাবেক বসে আছে আমাদের সামনে। ধীরস্থির অভিব্যক্তি। টেবিলের অন্যপাশে। তার মুখে সুন্নতি হাসি।
‘একটা সময় প্রশ্ন করেছিলাম – কিভাবে বার বার ঈশিতাকে খুঁজে বের করে ফেল তুমি? মনে আছে?’
‘আত্মার টান – সম্ভবতঃ।’ বিড় বিড় করে বলি আমি।
‘ওর জুতোগুলোতে একটা করে জিপিএস ট্রান্সমিটার প্ল্যান্ট করে রেখেছিলে তুমি – ইরফান। শুধু হাঁটার সময় কাজ করে ওগুলো। অথবা পরে থাকলে – কারণ সোলজোড়ায় নির্দিষ্ট পরিমাণ ভর না থাকলে সুইচড অফ হয়ে থাকে তারা। ক্লেভার – ভেরি ক্লেভার! ইন্টারফেরেন্স চেক করার যন্ত্রপাতি দিয়ে বিষয়টা ধরে ফেলা এজন্য অনেক কঠিন। আমার চোখেও প্রথমে পড়েনি।’
আমার প্রশংসা করার কোন ইচ্ছেই যে তার মাঝে নেই – সেটা চেহারা দেখে যে কেউ বলে দিতে পারবে। এটা স্রেফ রাবেকের নাটুকে স্বভাবের বহিঃপ্রকাশ। লোকটা যাত্রাপালায় ভালো করতো।
তার যাত্রা কেয়ার করি না আমি। আমার দুই চোখ ঘুরে বেড়াচ্ছে একটা মাত্র সুযোগের অপেক্ষাতে। বাম হাতটা মুক্ত আছে – শুধু দরকার একটা সুযোগ!
ডন রাবেকের আত্মবিশ্বাস এতটাই বেশি – আমাদের বেশি কড়াকড়িতে আটকে রাখেনি। চাইলে ডান্ডাবেড়ি পরিয়ে রাখতে পারত, তাকে ঠেকাত কে? অথচ ঘরের ভেতরও কেউ নেই। বাইরে যদিও গিজ গিজ করছে রাবেক বাহিনী।
একরকম হেডকোয়ার্টার বলা চলে এই বাসাটিকে। রাবেক হাউজ।
ঈশিতা কি এখানেই কোথাও আছে? হয়ত!
‘প্রশ্নটা হচ্ছে, মি. রাবেক -’ মুখ খুলি আমি, সৎ বাবাকে নাম ধরেই ডাকি আমি, ‘আমাকে খুঁজে বের করে ফেললেন কি করে? হোটেলে একবার বের করেছেন। যদিও আপনাদের ঢোকার কথা ছিল পাশের রুমে। কিভাবে বুঝলেন আমাদের লোকেশন? একেবারে পিনপয়েন্ট? তারপর আবারও আমার সেইফ হাউজে – একেবারে জায়গা মত চলে আসল কি করে আপনার লোকেরা?’
উত্তরটা আমি জানি না তা নয় – বরং রাবেকের সময় কিছুটা নষ্ট করাই উদ্দেশ্য। আয়ু বাড়বে এতে।
আর যতক্ষণ শ্বাস ততক্ষণ আঁশ।
মুচকি হাসে রাবেক অবশ্য। আমার নির্বুদ্ধিতায় হতাশ!
‘সেইম ট্রিক। আমার ট্রান্সমিটারটি ছিল ফারিহার শরীরে।’
‘ক্লেভার। ভেরি ক্লেভার!’ অনিচ্ছাসত্বেও বলি আমি।
দৌড়াদৌড়ির মাঝে ফারিহার জুতো থেকে ঈশিতার ট্রান্সমিটারটা উদ্ধার করি আমি ঠিকই। কিন্তু আরও ট্রান্সমিটার থাকতে পারে – সেটা আমার আগেই ভাবা উচিত ছিল।
‘কিন্তু জুতোতে ছিল না ওটা। রেখেছিলেন কোথায়? এর মধ্যে আমরা ড্রেস চেঞ্জ করেছি।’
মাথা নাড়ে রাবেক, ‘ফারিহার প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে নাকি এই ছেলে! মেয়েটা যে হাতে একটা রিং পরে তা খেয়াল করনি কখনও?’
বুঝতে পারলাম এবার। বোকামি হয়ে গেছে।
কিন্তু এখন আর সেসব ভেবে লাভ নেই।
‘আমাদের তুলে এনে জামাই আদর করছেন কেন জানতে পারি?’ প্রশ্নটা না করে পারলাম না।
‘সমস্যা?’ একটা ভ্রু উঁচু করে জানতে চায় রাবেক।
‘কি যে বলেন! সমস্যা কোথায়? আপনার মেহমান হওয়ার অনেকদিনের ইচ্ছে আমার।’ হেহে করে বলি আমি, ‘তবে আমার সেইফহাউজে আমাকে ফুটো করে দেওয়ার মাঝে একটা আয়রনিক ব্যাপার হত। আপনার যে নাটুকে ব্যাকগ্রাউন্ড, তা করবেন এমনটাই প্রত্যাশা। তাছাড়া, মিসিং কোয়াড-রেডিওটা উদ্ধার করে ফেলেছিলেন। আমার জীবনে আর কোন মূল্য আছে বলে তো মনে হয় না।’
‘আমি আনি নি এখানে তোমাকে – ইরফান। তুমি নিজেই নিজেকে এনেছ।’ মাথা নাড়ে রাবেক।
‘আমি?’ অবাক হই।
ফারিহা সেই তখন থেকে একদম চুপ। ঘোরের মাঝে আছে যেন।
বাবার মৃত্যুর পর থেকে অনেক বেশি ঘটনাপ্রবাহ এসেছে মেয়েটার জীবনে।
‘অ্যানাদার ডে – বলেছিলে তুমি, ইরফান। বলেছিলে – উই’ল সীল দ্য ডীল অ্যানাদার ডে।’ মুচকি হাসে রাবেক, ‘টুডে ইজ দ্য ডে।’
রাবেকের সাথে প্রথম সাক্ষাতের অভিজ্ঞতা মনে পড়ে যায় আমার এবার। এই লোক দেখি কিছুই ভোলে না!
এই সময় বাইরে ব্যস্ত পদচারণার শব্দ শোনা যায়। দরজা খুলে হুড়মুড় করে ঢুকে পড়ে একজন মানুষ।
এরা সবাই রাবেক বাহিনীর বিশ্বস্ত সদস্য। গোটা বাড়িতে এমন এক ডজন আছে।
এই এক ডজন মানুষই সামনাসামনি চেনে ডন রাবেককে।
‘স্যার, ক্রাইসিস। ইউ নীড টু সী দিস।’ রিপোর্ট করার ভঙ্গীতে বলে সৈনিকটি।
‘আমি ব্যস্ত।’ ইঙ্গিতে আমাদের দেখিয়ে বলে রাবেক।
‘দিস কান্ট ওয়েইট।’ নিঃশ্বাসের ফাঁকে ফাঁকে বলে মানুষটা।
বাধ্য হয়ে উঠে দাঁড়াল রাবেক।
আমাদের দিকে ফিরে তাকাল একবার, ‘এক্সকিউজ মি। আ’ল বি ব্যাক।’
তা আর বলতে – মনে মনে ভাবি আমি। তার ভদ্রতা আর বিনয় এখন দেখার মত।
দরজা দিয়ে উধাও হয়ে গেল রাবেক। শোনা যায় বাইরের গার্ড দুইজনকে বলছে, ‘ভেতরে চলে যাও। চোখের আড়াল হতে দেবে না।’
একই সাথে অবাক বিস্ময়ে দেখি ক্লিক জাতীয় একটা শব্দের সাথে খুলে গেল ফারিহার হাতের হ্যান্ডকাফ। আমার বাম হাতে দ্রুত সেফটি পিনটা গুঁজে দিল ও।
প্রথমবার রাবেকের ওপর সরাসরি হামলা করে আহত অবস্থাতে ফারিহাদের বাসাতে সাতদিনের জন্য আশ্রয় নিয়েছিলাম। তখন ওকে শিখিয়েছি এই ট্রিকটা। আরও কিছু শিখিয়েছি। পিক-লক। টাইং নটস।
মেয়েটার হাত চালু – ছাত্রীর পারফর্ম্যান্স দেখে গর্বে আমার বুক ফুলে গেল।
পেছনে ঢুকে পড়েছে দুই গার্ড। তবে আমাদের পিঠ তাদের দিকে ফেরানো বলে ফারিহার মুক্ত হাত অথবা আমার হাতের মৃদু নড়াচড়া ওদের চোখে পড়ে না।
দুইজন অসহায় বন্দী স্থির হয়ে বসে আছে। এ ছাড়া আর কি-ই বা করার আছে তাদের?
ঝাড়া পয়তাল্লিশটা সেকেন্ড লেগে গেল সঠিক মাপে সেফটিপিনটা বাঁকাতে।
তারপর একটা মৃদু ক্লিক শব্দ – যেটা গার্ডদের কান এড়ানোর কোনই উপায় নেই ছোট এই বদ্ধ ঘরে!
দুই লাফে সামনে বাড়ল গার্ড দুইজনই। এবং প্রথম ভুলটা করে বসল।
একজনকে সব সময় নাগালের বাইরে থেকে কাভার দিতে হয়।
কাজেই গর্ধভ দুটোর মাঝে বাম দিকের জনকে বেছে নিলাম।
চট করে লোকটার মাথা সজোরে ঠুকে দিলাম সামনের টেবিলে। একই সাথে অন্যজনের দিকে এক লাথিতে পাঠিয়ে দিয়েছি ফারিহা উঠে পড়ায় এই মাত্র খালি হয়ে যাওয়া চেয়ারটা!
হাঁটুর নিচে বাড়ি খেয়ে স্রেফ উড়ে যায় লোকটা। পরক্ষণেই টেবিল থেকে মাথা তোলার চেষ্টা করতে থাকা গার্ডের ঘাড় ধরে সজোরে মুচড়ে দিলাম। ঘাড় ভাঙ্গার বিশ্রী শব্দটার সাথে চোখের আলো নিভে গেল শত্রুর।
বাম হাতে CZW 9 টা তুলে নিয়েছি, আর ডান হাতে উঠালাম আমার চেয়ার। ভূমিশয্যায় শায়িত মানুষটার হাত একটু আগের আঘাতে পড়ে যাওয়া সাবমেশিনগানটার দিকে এগুচ্ছে।
চেয়ারটা ওপরে তুলে সজোরে তার মাথায় নামিয়ে আনতেই থেমে যায় ওই খাহেশ।
জ্ঞান হারিয়েছে না মারা গেছে – চেক করার প্রয়োজন মনে করি না। আপাতত এর থেকে জরুরী কাজ বাকি আছে। পড়ে থাকা দেহটা থেকে স্পেয়ার ম্যাগাজিন খুলে নিয়ে নিজের কোমরে আটকালাম। ফারিহার হাতে দ্বিতীয় গার্ডের CZW 9 টি তুলে দিয়ে দ্রুত একটা ব্রিফ দিলাম, যে কোন মুহূর্তে একটা বাড়তি অস্ত্র কাজে লাগতে পারে।
এখন পর্যন্ত সব কাজ নিঃশব্দে করা গেছে। এবার এখান থেকে বের হতে হবে।
‘আমার পেছনে থাকবে।’ আস্তে করে বলি ফারিহাকে।
তবে এগুতে পারি না। আমার হাত ধরে আটকে ফেলে মেয়েটা। দুই চোখে বিরাজ করছে নিখাদ আতংক।
আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে রেখেছে ফারিহা – কাঁধে ওর থুতনি অনুভব করছি।
‘এভরিথিং উইল বি অলরাইট।’ বার দুই আউড়ালাম সেই বাক্য যেটা মানুষ অনিশ্চিতভাবেই আউড়ায়।
নিজের প্রাণের মায়াতে মেয়েটা আবেগাপ্লুত হচ্ছে না জানি।
ফারিহার সবকিছু কেড়ে নিয়েছে রাবেক। আমাকে হারানোর ভয়টা ওর মাঝে এখন কাজ করছে সবচেয়ে বেশি।
‘এখান থেকে ভালোভাবে বের হব আমরা, বোকা মেয়ে।’ ওর কাঁধ ধরে সোজা করে হাসিমুখে বলি আমি, ‘আজ রাতে ডিনার করব জিং ওয়াং-এ। বিল আমার।’
আমার নির্মল হাসির দিকে তাকিয়ে বিশ্বাস খুঁজে নিতে পারে অবশেষে ও। চোখ মুছে শুধু বলে, ‘লেটস গো।’
সাবধানে মাথা বের করি। বাড়িটা চমৎকার।
ডুপ্লেক্স এটাও।
রাবেকের কয়টা ডুপ্লেক্স আছে কে জানে! সিঁড়ি ঘরের নিচের একটা ঘরে আমাদের রাখা হয়েছিল।
দরজা দিয়ে বের হলেও আর আগাই না আমরা , সিঁড়ির আড়ালে থাকায় বেশি কিছু দেখা যাচ্ছে না। বাইরে কয়জন আছে বোঝার উপায় নেই।
দূরে রাবেকের আতংকিত চিৎকার শোনা যাচ্ছে। স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলি আমি।
বেঁচে থাকাটা এখন জরুরী নয় আমার জন্য। প্ল্যান অনুযায়ী ধ্বংস হয়ে গেছে রাবেক। তবে যেতে যদি হয়ই সাথে করে রাবেককে নিয়ে যেতে হবে।
নাহলে একটা সাম্রাজ্য ভেঙ্গে ঠেকানো যাবে না এই লোককে। আরেকটা গড়ে নেবে। এদের আমি হাড়ে হাড়ে চিনি। ফিনিক্স পাখির মতো জীয়নক্ষমতা!
আমাদের দিকে হা হয়ে এক মুহূর্ত তাকিয়ে থাকল এই মাত্র টহল ডিউটিতে থাকা চলে আসা লোকটা। তারপরই হাত বাড়ায় পিস্তলের দিকে।
কড় কড় করে গর্জে উঠল আমার সাবমেশিনগান। নাভি থেকে বুক পর্যন্ত সেলাই হয়ে গেছে লোকটার। গুলির শব্দে পুরো বাসাটা একেবারে নিস্তব্ধ হয়ে যায়!
দীর্ঘশ্বাস ফেলি একটা। আর কোন উপায় ছিল না।
ফারিহাকে ইশারা করলাম ওখানেই থাকতে। তারপর আস্তে করে উঁকি দিলাম সিঁড়ির কোণা থেকে। দূরে মাত্র পজিশন নেয়া মানুষ তিনজন একই সাথে গুলি ছোঁড়ে – তবে এগিয়ে আছি আমি।
একপশলা গুলিতে একজনকে শুইয়ে দিয়েই আড়ালে সরে গেছি।
ম্যাগাজিন পাল্টাচ্ছি দ্রুত হাতে – অন্যপাশ থেকে নতুন দুই ঝামেলাকে দেখা গেল দরজা খুলে বের হচ্ছে। হাঁটু গেড়ে বসে মনের সুখে বুলেটবৃষ্টি চালালাম ওদের ওপর।
সাথে সাথে উদয় হয় তৃতীয়জন।
এর হাতে একটা গ্রেনেড।
মেশিনগানের শেষ বুলেটগুলো একেও কেঁচে ফেলে – তারপর ঠং করে একটা শব্দ বোঝায় ফাকা চেম্বারে আছড়ে পড়েছে হ্যামার। কিন্তু গ্রেনেডটা তখন বাতাসে উড়ন্ত – গতিপথ – সোজাসুজি আমাদের দিকে।
আর একই সাথে ফারিহার হাত ধরে এক ছুটে রাবেকের ইন্টোরেগেশন চেম্বারে ফিরে আসি আমরা।
দরজা থেকে সরে বসে পড়লাম মেঝেতে।
ঠিক বাইরে বিকট শব্দে ফাটে গ্রেনেডটা – পুরো বাড়ি কেঁপে উঠলো এ বিস্ফোরণে। একটা সেকেন্ড অপেক্ষা করে আবারও বেরিয়ে আসি আমি। গ্রেনেডে উড়ছে ধুলো আর সেটিকেই স্মোক স্ক্রীণ হিসেবে কাজে লাগিয়ে এগুলাম। আচমকা গুলি করে পজিশন নিয়ে থাকা অন্য দুইজনকে শুইয়ে দিয়ে আরও সামনে চলে এলাম আমরা।
শটগানের বিকট শব্দ কানে তালা ধরিয়ে দেয়। ছুটতে ছুটতেই দোতলাতে দাঁড়ানো মসবার্গ শটগান ধরে থাকা লোকটাকে চোখে পড়ে আমার। সেই সাথে দ্বিতীয়বার গর্জে ওঠে প্রতিপক্ষের হাতের শটগান এবং একই সাথে কোমরের কাছ থেকেই গুলি করি আমিও।
শটগানধারীকে পেছনে পড়ে যেতে দেখলাম – লক্ষ্য করলাম লেগেছে আমারও। বাম কাঁধ থেকে একটা লাল ধারা বুক বেয়ে নেমে যাচ্ছে।
শটগান শেলকে পাত্তা না দিয়ে দোতলায় এই মাত্র উদয় হওয়া পিচ্চি সাবমেশিনগানধারীর দিকে তিনবার ট্রিগার টানলাম। সিঙ্গেল শট মোডে নিয়েছি হাতের CZW9।
সর্বশেষ ম্যাগাজিনটা ভরে ফেলে নতুন আপদের জন্য চোখ ফেরাতেই থমকে গেলাম।
ওপরের আরেকটি দরজা খুলে যাচ্ছে।
তারপরই চোখে পড়ল ঈশিতার মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে লম্বা পায়ে বেড়িয়ে আসা মানুষটাকে।
রাবেক।
নীচ থেকে ছুটে আসছে ফারিহা।
ওকে একবার চিৎকার করে মানা করলাম, আড়াল থেকে যেন কোনভাবেই বের না হয়।
ঘরটা ভরে গেল ড্রামা-কিং রাবেকের গমগমে গলাতে, ‘ কনগ্রাচুলেশনস! ইউ ওন দিস গেইম ইরফান। নাউ, লেটস সীল দ্য ডীল।’
এক ধাক্কায় শরীরের বাম অংশ পিছিয়ে গেল আমার। রাবেকের পিস্তলটা আমার দিকে তাক করা।
নলের চারপাশে হাল্কা ধোঁয়া উঠছে।
সেই ধোঁয়া ভেদ করে ছুটলো আমার ছোঁড়া বুলেট। ধার করা সাবমেশিনগানের পুরো ম্যাগাজিনটা খালি করে দিলাম। রাবেকের বুক থেকে গলা সেলাই হয়ে গেল স্রেফ।
‘ফর মাই মাদার -’ নিজের গলা নিজেই চিনতে পারি না আমি!
পরমুহুর্তেই হুড়মুড় করে পড়ে যাই মাটিতে। মেঝেতে হাত পড়তেই বুঝতে পারলাম পিচ্ছিল রক্তে ভরে গেছে জায়গাটুকু।
ফারিহা চলে এসেছে আমার খুব কাছে। দুই চোখ থেকে অনবরত পানি পড়ছে মেয়েটার। তার মাঝেই কি সুন্দরই না লাগছে ওকে!
ঈশিতাকে দেখতে পেলাম সিঁড়ি বেয়ে নেমে আসতে।
বুকের মাঝখানে তীব্র একটা ব্যথা। এবার সেদিকে আস্তে করে চোখ ফেরালাম।
কল কল করে রক্ত বের হচ্ছে বুকের বাম দিক থেকে। সেই রক্তে ভিজে যাচ্ছে মেঝে।
ঝুঁকে পড়ে আমার হাত তুলে নেয় ফারিহা নিজের হাতে। কি গরম ওর হাত!
ঈশিতা আমার মাথা তুলে নিয়েছে নিজের কোলে।
কিছু একটা বলছে – আমি আর শুনতে পাই না।
ফারিহা পরম মমতায় আমার ঠোঁটে মুখ রাখে – নিজের ভেতর থেকে বাতাস দিয়ে দেয় আমাকে –
আমি কিছুই অনুভব করি না।
অন্ধকার – গাঢ় একটা অন্ধকার টেনে নিয়ে যাচ্ছে আমাকে কোন পাতালে।
আর – পড়ে যাচ্ছি আমি।
পরিশিষ্ট
‘মর্চুয়ারী থেকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছি আমরা ওকে?’ ঈশিতার গলার সুরটা বুঝতে পারে ফারিহা।
মেয়েটা ইরফানকে এখনও জীবিত বিবেচনা করেই কথা বলছে।
ডেথ সার্টিফিকেটের জন্য অপেক্ষা করছে ওরা শুধু। একজন ডাক্তারের সিগনেচার। তারপরই রিলিজ দেওয়া হবে দেহ।
‘জানি না, ঈশিতা। ওর কোন ইচ্ছে কি ছিল?’ স্বাভাবিক থাকার আপ্রাণ চেষ্টা করেও এক ফোঁটা পানি অনুভব করে ফারিহা নিজের গালে।
‘মায়ের যেখানে মৃত্যু হয় সেখানেই শুতে চেয়েছিল ও।’ এবার আর পারে না – দুই হাতে মুখ ঢেকে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে ঈশিতা, ‘আমার সব শেষ হতে গেল, আপু।’
ওকে জড়িয়ে ধরে ফারিহা। গভীর মমতার আলিঙ্গনে একই সাথে সমবেদনা আর হতাশা।
ঈশিতাকে স্বান্তনা দিচ্ছে ও – কিন্তু ওকে স্বান্তনা দেবে কে?
‘ভাইয়া আমাকে যেদিন রাবেকের কাছে চলে যেতে বলল, সেদিনই বলেছিল আর হয়ত দেখা হবে না। ওহ আমি কি বোকা! কি বোকা আমি! তবুও মেনে চলেছিলাম ভাইয়ার প্ল্যান!’
‘সবার জন্য-’ নিজেকে একটু সামলে শুধু বলে ফারিহা, ‘-সবার জন্য সিদ্ধান্ত নিয়েছিল ইরফান। রাবেকের মাফিয়া সাম্রাজ্য একেবারে নিশ্চিহ্ন করার লক্ষ্যে।’
রাবেকের ডিজিটাল কোডিং সিস্টেমকে ব্যাক ফায়ার করার সিদ্ধান্ত ইরফান নিয়েছিল বহু আগে। যেদিন অ্যাম্বুলেন্সের ভেতর পাওয়া ডিভাইসটার মর্ম ও উদ্ধার করেছিল, তখন। এরপর ঈশিতাকে পাঠিয়ে দেয় রাবেকের কাছে। আর নিজে ব্যস্ত থাকে পঞ্চম হেডফাইভের সন্ধানে। অভিনয় চালিয়ে যায় সবার সাথে, যেন এসবই ঘটছে তার পরিকল্পনার বাইরে!
প্ল্যানের একটা অংশ ছিল যেদিন রাবেক ইরফানকে সশরীরে ধরে ফেলতে পারবে – সেদিনই হিট নেবে ওরা। ঈশিতা কন্ট্রোল রুমের ব্যাপারে যথেষ্ট জেনেছে এ কয়দিনে। মেয়েটাকে কোয়াড কোডিংয়ে সর্বাত্মক সাহায্য কম করেননি রিজভী আকন্দ। তবে ঈশিতা পরবর্তীতে ইরফানের সাথে যোগাযোগ করতে পারেনি। ওরা একসাথে কাজ করছে এমন কোন প্রমাণ থাকলে রাবেক সবটাই গড়বড় করে দিত। কোয়াডকোডিংয়ের কল্যাণে ইন্টারনালি রিজভী আকন্দই যোগাযোগ রাখতেন মেয়েটার সাথে। ইরফান একটি ভূতুড়ে কোয়াড-রিসিভার রাডারে আনলে সবটা কেঁচে যেত।
ইরফানের প্ল্যানটি ছিল সহজ – চারটি গ্রুপকে নিজেদের মাঝে তুমুল লড়াইয়ে নামিয়ে দেওয়া।
রিজিওনাল হেড চোখ বন্ধ করে কোড মেনে চলবে। তার জানার কথা নয় কোয়াডরুপল কারা! নিরাপত্তা এতে যেমন ছিল নিখুঁত, তেমনই এ ছিল তাদের সবচেয়ে বড় দুর্বলতা।
শুধু খোঁজ পাওয়া যায়নি একজন মানুষের। স্রেফ উধাও হয়ে গেছেন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাহমুদ।
একা একজন গডফাদারকে ঠেকিয়ে দিয়েছিল ছেলেটা, ঘায়েল করেছিল তাদের নিজস্ব অস্ত্র দিয়ে! ইরফানের জন্য অনেকখানি গর্ব অনুভব করে ফারিহা। আর বেদনা।
সাদা অ্যাপ্রন পরা ডাক্তারকে এগিয়ে আসতে দেখা যায়। নিজেই চলে এসেছেন দুই তরুণীর কাছে। মিনহাজের সাথে অনেকদিন কাজ করেছেন তিনি। চেনেন সবাইকে। জানেন তাৎপর্য।
হাতের ফাইলে একটি ডেথ সার্টিফিকেট।
চোখভরা বেদনা নিয়ে কঠিনতম সত্যটির দিকে তাকিয়ে থাকে মেয়ে দুটো।
— ০ —