Skip to content
KP Imon
KP Imon

Words Crafted

  • গুহামুখ
  • সূচিপত্র
  • গল্প
    • রম্য
    • জীবনধর্মী থৃলার
    • সাইকোলজিক্যাল
    • রোমান্টিক
    • ক্রাইম
    • সাসপেন্স
    • জীবনধর্মী
  • নন-ফিকশন
    • থট প্রসেস
    • উচ্চশিক্ষা
    • আমেরিকা-নামা
    • জীবনোন্নয়ন
    • তাত্ত্বিক আলোচনা
    • ডায়েরি
  • প্রকাশিত বইসমূহ
    • প্রকাশিত বইসমূহ
    • যেসব গল্প সংকলনে আছে আমার গল্প
KP Imon
KP Imon

Words Crafted

ক্যানিয়ন লেকে এক সন্ধ্যাবেলা

Posted on February 12, 2023

দুটো চকচকে তরুণী ঝকঝকে হাসি হেসে আমাদের সাথে বেশ গায়ে পড়ে আলাপ করতে এলো। ঝলমলে চুল নাড়িয়ে একজন জানতে চাইলো, “তোমাদের তো আগে কখনো দেখিনি। নয়া মাল নাকি?”

মান্দেশ আর আমি হেহে করলাম, “ওই আরকি। টেক্সাস স্টেটের গর্বিত সন্তান আমরা।”
“ছবি তোলা কেমন হচ্ছে?” আগ্রহের সাথে আরেকজন জানতে চাইলো। উঁকিঝুঁকি মেরে আমাদের ভিউ ফাইন্ডার দেখার চেষ্টাও করলো একটুখানি। আমরা একে অন্যের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলাম। ভাবনাখানা, ক্যামেরা দেখলে তরুণীরা বেশ উৎসুক হয়ে ওঠে – এই কথাটা মনে হচ্ছে মার্কিন মুলুকেও খুব একটা অমূলক নয়। পীথাগোরাসের সূত্রের মতোই সবখানে খাটার মতো জিনিস। তবে ঘটনা তখনও আরও বাকি ছিলো খানিক।

আমরা দুই বাউন্ডুলে এখানে এসেছিলাম নেহায়েতই ভালো উদ্দেশ্যে। ছবি-টবি তুলবো। বিদায় হবো। মেয়ে আমাদের সিলেবাসে ছিলো না। কিন্তু দেখা গেল সিলেবাসের বাইরের প্রশ্ন এসে পড়েছে।

ঝলমলে চুলের অধিকারিণী আরেকটু কাছে এসে দাঁড়ালো। জানতে চাইলো, “কিন্তু স্যান মার্কোসেই কী তোমরা থাকো?”

আমরা এই প্রশ্নের মানে বুঝতে পারলাম না এমন নয়। সেদিন বাস স্টেশনের বাইরে একজন সমকামী কৃষাঙ্গের পাল্লায় পড়েছিলাম। সেখান থেকে বিষয়টা একটু শিখতে হয়েছে। সখে নয়, দেখেও নয়, ঠেকে।

সেদিন আমি যাচ্ছিলাম ভাইয়ার বাসায়। অস্টিনে বাস থেকে নেমেছি। ভাই আমার পরিষ্কার ভদ্রলোক। হারাম খায় না, ত্রিশ মাইল ড্রাইভ করে হলেও সে হালাল শপ খুঁজে বের করবে, সিগারেট কিংবা মদ থেকে তাকে সর্বদা তিনশ’ মাইল দূরে পাওয়া যাবে। একেবারে সাচ্চা ঈমানদার লোক। অথচ আমার আবার ওই – সিগারেটটা না হলে চলে না। কাজেই এক ঘণ্টার বাস জার্নির পর নেমেই ভাইয়ার গাড়িতে উঠে যাবো এমন বান্দা আমি নই। সামনের দরজা দিয়ে বের না হয়ে বেরিয়েছিলাম পেছনের দরজা দিয়ে। উদ্দেশ্য, এখানে একটা ফুঁকে সামনে চলে গেলেই হবে। কেউ জানবে না।

ভারতীয় সাধুর মতো বেশ লম্বা চুল আমার তখন। কাকের বাসা হয়ে গেছে এরই মধ্যে। দরজা খুলে বাইরে থামতেই আমেরিকার পতাকার মতো পত পত করে উড়তে শুরু করলো তারা। প্রবল বাতাসে লুঙ্গি পরা কেউ থাকলে তাদের লুঙ্গি নির্ঘাত উড়ে যেত আকাশে। সৌভাগ্যক্রমে পান্তুলুন না পরা কাউকে এলাকায় দেখা গেল না। কায়দা করে একটা সিগারেট ওই ঝড়ো বাতাসেও ধরিয়ে ফেললাম। রুয়েটে যখন পড়তাম এমনটা প্রায়ই করতে হতো। আমার ঘরে কোনও ভেন্টিলেটর ছিলো না। ছয় ফিট বাই সাত ফিটের একটা কুঠুরিমতো ঘর। রাজশাহীর গ্রীষ্মকালে তা হয়ে উঠতো সাক্ষাত জাহান্নাম। বাইরে তাপমাত্রা যখন উঠতো পয়তাল্লিশ, আমার ঘরের ভেতরে তা থাকতো পঞ্চাশ।

কাজেই প্রাণে বাঁচার তাগিদে আমাকে দুটো ফ্যান চালিয়ে রাখতে হতো। একটা মাথার ওপর, আরেকটা টেবিল ফ্যান, আমার নাক বরারবর তাক করা। যেহেতু ভেতরে জায়গা তেমন ছিলো না, ফিল্টারটাকে মাটিতে রেখে তার স্ট্যান্ডের ওপর তুলে দিতে হতো ফ্যানের গোড়া। প্রবল বাতাসে আমার কানে কোনও শব্দ ঢুকতো না। তবে শোব্দ না ঢোকার পেছনে আরো কারণ ছিলো। বাস্তবতা থেকে পালিয়ে থাকার জন্য আমি সহায়তা নিতাম হেডফোনের। সারাটাদিন ও সারাটা রাত আমার কানে চলতো উঁচু তালে ও লয়ে বাজতে থাকা কোনও না কোনও পপ কিংবা রক মিউজিক। আইসোলেশন ও দুনিয়ার জাহান্নামে মানিয়ে নেয়ার পাশাপাশি আমাকে আরো একটা বিষয়ে ট্রেনিং নিয়ে ফেলতে হলো অচিরেই। তা হলো, প্রবল বাতাসেও ম্যাচে একটা কাঠি খরচ করে সিগারেট জ্বালিয়ে ফেলার প্রশিক্ষণ। আমার ঘরে অন্যান্য বন্ধুবান্ধবরা আসতো। তারা এটা নিয়ে বেশ অবাক হয়ে যেত অবশ্যই। কারণ তাদের সৌভাগ্য হোক কিংবা দুর্ভাগ্য – তাদের কখনোই আমার মতো যুদ্ধের ট্রেনিং নিতে হয়নি। একবারব বন্ধু কাফি এসে বললো, “আমিও ধরাবো।”
তাকে বললাম, “ধরা না, কে মানা করছে তোকে।”
কাফি চেষ্টা করলো। পারলো না। তারপর ঐ দিন যতগুলো সিগারেট আমরা কজেয়েছি, ততগুলোই সে ধরাবার চেষ্টা করেছে। প্রথম কিছুবার তেমনটা না পারলেও দু’ঘণ্টার মধ্যে শিখে ফেললো। এই অল্প সময়ে আমরা কতগুলো সিগারেট খেয়েছিলাম তা জিজ্ঞাসা করে লজ্জা দেবেন না।

কাজেই, অস্টিনে বাস স্টেশন থেকে বের হয়ে নিদারুণ দক্ষতায় লুঙ্গি-ওড়া-বাতাসে আমাকে সিগারেট ধরাতেই হতো এবং তা ধরাতে হতো বেশ কায়দাকেতা করে। নিজের সুনাম তো ধরে রাখতে হবে। এমন নয় যে কেউ সে ট্র্যাকের রেকর্ড রাখছে, তবুও আত্মসম্মান বলেও তো একটা ঘটনা আছে। বিড়িটা ধরাতে না ধরাতেই দেখলাম ধরা পড়ে গেছি।

পার্কিং লটের শেষ প্রান্তে এক দীর্ঘকায় কৃষাঙ্গ ব্যক্তি, আমার দিকে ঝকঝকে হাসি হেসে তাকিয়ে আছে। তারপর… তারপরই – হ্যাঁ, হাত নাড়া শুরু করলো। আমিও ভদ্রতা করে একবার হাত নাড়লাম। এমনটা এখানে সবাই সবাইকে করে। চোখে চোখ পড়ে গেলে একটা হাই কিংবা ওয়েভ – এমনটা না করাই অভদ্রতা। এমন নয় যে মাঝে মাঝে আমরা অভদ্রতা করি না। সব সময় এতো রাজা রামমোহন রায় মার্কা সামাজিকতা রক্ষা করার মুড অবশ্যই থাকে না। এমন নয় যে এমনটা কেবল আমার সাথেই হয়ে থাকে, এখানে যারা আছে এবং পুরোদস্তুর সাদা চামড়ার, তারাও মন মেজাজ খারাপ থাকলে আপনার দিকে তাকিয়েও একটা হাত না নাড়িয়ে চলে যেতে পারে। তবে প্রচলিত প্রথা হিসেবে এমনটা কেউ করছে মানে এই নয় যে আপনার সাথে শোয়ার জন্য সে মারা যাচ্ছে। কাজেই আমিও স্বাভাবিকভাবেই হাত নাড়াবো এমনটাই ঘটার কথা।

কিন্তু ওকি, সে এগিয়ে আসছে দেখা যায়। একেবারে আমার তিন ফিটের মধ্যে এসে দাঁড়িয়ে গেল ভদ্রলোক। তারপর বললো, “আমি তোমার ব্যাপারে জানতে চাই।”
আমি খাঁটি বাংলায় বললাম, “আকাশ ভরা তারা, আমার হোগামারা সারা।”
সে জানতে চাইলো, “তোমার প্রিয় রঙ কি, যুবক?”

হাত নাড়ার বাতিক ওদের থাকতে পারে, তবে আপনাকে দেখলেই যে প্রিয় রঙ জানতে চাইবে এবং গলাভর্তি মধু নিয়ে “আমি তোমার ব্যাপারে আরো জানতে চাই” বলে বসবে এমন নয়। এমনটা তারা করে থাকলে বুঝবেন, ইঙ্গিত দেয়া হয়ে গেছে, এরপর আরো শরবৃষ্টি আসার সম্ভাবনা আছে।

এলোও। কৃষাঙ্গ ভদ্রলোক একেবারে গায়ে পড়ে আমার ব্যাপারে নানা প্রশ্ন করা শুরু করলেন। পাছাটা না মেরে যেতে দেবেন এমন লক্ষণই নেই। কাজেই আমাকেও ডিফেন্সিভ শট খেলে যেতে থাকতে হলো। এমনও নয় যে সরাসরি আমাকে কিছু প্রস্তাব তিনি করছেন। এক পর্যায়ে জানতে চাইলেন, “হোয়ার আর ইউ ফ্রম, ম্যান?”

ইঙ্গিতটা পরিষ্কার। ঠিক তেমনটা ইঙ্গিত পাওয়ারই কথা আমি ক্যানিয়ন লেকের ব্যাপারে বলছিলাম। আমার এই খাঁটি ইন্ডিয়ান চেহারাখানা দেখে তারা জানতে চায় আমরা বিদেশী কি না, বাইরে থেকে এলাম কি না, এলেও বা কোত্থেকে এসেছি, ইত্যাদি।

রহস্যময় সমকামী যুবককে ঠিক তাই উত্তর দিলাম, ঢাকার যে কোনও মেয়ে অচেনা গায়ে পড়া লোকের পকপকানির পর অতিষ্ঠ হয়ে যেটা উত্তর দেয়। “মিরপুরেই থাকি, আমার দাদার বাড়ি এখানে।”

আজ্ঞে না, আমার উত্তর ওটা ছিলো না। ওটা হয় ঢাকায় অতিউৎসাহী জনতার হাত থেকে নিষ্কৃতি পাওয়ার জন্য দেয়া মেয়ের উত্তর। আমার উত্তর হলো, “আম ফ্রম স্যান মার্কোস, ব্রো।”

ভুলেও বলা যাবে না যে আমরা এসেছি বাংলাদেশ থেকে। এমন নয় যে আমাদের অ্যাকসেন্টে আমরা ধরা পড়ে যাচ্ছি না। তবে তারপরও কথা থাকে। আপনি যখন বলবেন আপনি স্যান মার্কোস থেকে এসেছেন তখন ওরা অন্তত ধরে নেবে এখানে গত ৫ বছর ধরে হয়তো আছেন। অথচ আমি তখন এখানে এসেচি দেড় মাসও হয়নি, মানে গোটা মার্কিন মুলুকেই। সেটা তো আর আমার পাছার দিকে অনুসন্ধানী দৃষ্টি দেয়া সমকামী ভদ্রলোককে বলা যায় না। কাজেই এভাবে চাপ মারতে হলো।

তবে ক্যানিয়ন লেকের বাঁধের ওপর দু’দুটো ক্যামেরা বাগিয়ে থাকা আমি আর মান্দেশ মেয়েদের সামনে অবশ্যই মিথ্যে চাপাবাজির চেষ্টা না করে স্বীকার করে নিলাম, “আমি এসেছি বাংলাদেশ থেকে। মান্দেশের টেক্সাস স্টেটেই আন্ডারগ্র্যাড।”

সোনালিচুলো আরো দ্বিগুণ উৎসাহে বললো, “আহ, দুনিয়াজুড়ে দৌড়াদৌড়ি – কী এক অ্যাডভেঞ্চার তোমাদের জীবনে। আমরাও অবশ্য কিছুটা এমন। এখানকার কেউ নই। ঐ যে ওদিকে একটা চার্চ দেখতে পাচ্ছো না? ওটার কাছেই আমরা থাকি। আছি মিশনারিদের সাথে। লর্ড জেসাসের বাণী প্রচার করি। ভালোবাসা ছড়াই।”

মান্দেশকে দেখা গেল একটা পা পিছিয়ে গেল, তবে শারীরিকভাবে না, অভিব্যক্তিতে। ঘটনা তার বোঝা হয়ে গেছে। এখানে এই দারুণ বেশভূষার তরুণী দ্বয় আমাদের ক্যামেরা ও ছবি তোলার সখ দেখে পাগলিনী হয়ে চলে এসেছে এমন নয়। তারা আমাদের কাছে এসেছে যীশুর বাণী প্রচার করতে। কে জানে, হয়তো ওরা এভাবেই তরুণীদের ছেড়ে দেয় যেন তারা আলোর পথে কিছু পথভ্রষ্ট তরুণকে নিয়ে আসতে পারে। এমনটাই তো দেখা যায় দ্য ম্ন্যাট্রিক্স মুভিতে, ট্রিনিটি এভাবে চেষ্টা করেছিলো নিও নামের এক অকাজের ধাড়িকে আলোর পথে নিয়ে আসার। (আমার সেই লেখাটি পড়তে চাইলে এখানে ক্লিক করুন।)

ক্যানিয়ন লেকে পা রাখার পর এমনটাই ঘটলো। বিনা প্রতিরোধে পড়ে গেলাম যীশুর মেয়েদের সামনে। আমি যতখানি সম্ভব কেলিয়ে বললাম, “দ্য ওয়ার্ল্ড নিডস দ্যাট, ইউ আর ডুইং আ গ্রেট জব।”

ভালোবাসা ছড়ানোর কথা যতক্ষণ কেউ বলবে ততক্ষণ আমি এইটা অবশ্যই বলবো। তবে দেশি মোল্লাদের মতো আল্লাহর বাণী ছড়াই, মুহাম্মাদের কথা ছড়াই বললে মেয়ের খবর ছিলো। সে বলেছে, তারা ছড়ায় ভালোবাসা। এদের দেখেও যদি দেশি মোল্লারা একটু শিখতে পারতো। তারা এসেই দ্ব্যার্থহীন কণ্ঠে ঘোষণা করতে চায়, “আল্লাহ যা বলে সব ঠিক কি না? ঠিক। আল্লাহ যেটা হুকুম করসে সেটা না করলে ঈমান থাকবে? না। হিন্দুর সাথে পূজো দেখতে গেলে, হিন্দুর হাতের মাংস খাইলে সেটা হারাম না হালাল? শিরক কি না? অস্বীকার করলে ঈমান থাকবে?”

এসব শুনলে আপনার ইচ্ছে করবে হুজুরের দাঁড়ি ধরে টেনে একটা বিশাল চড় বসিয়ে দিতে। তারা চাইলেই বলতে পারতো, “আমরা এখানে সম্প্রীতি ও ভালোবাসার আলাপ করতে এসেছি। এর বাইরে আর কোনও উদ্দেশ্য আমাদের নাই। আমরা চাই হিন্দু আর মুসলমান একসাথে থাকবো। পাশাপাশি থাকবো। তবে কিছু বিষয়ে আমাদের একটু সতর্ক থাকতে হবে, ধর্মে কিছু হারাম হালালের ব্যাপার আছে, শিরক-বিদআতের ব্যাপার আছে। সেটা এমন গুরুত্বপূর্ণতাও নয়, কারণ, যেসব কাজে হিন্দু ও মুসলমানের সম্পর্কসুসংহত হচ্ছে তার মূল্য অবশ্যই সব কিছুর উর্ধ্বে। শিরক ঠেকাতে গিয়ে হিন্দুর সাথে দূরত্ব আসার বদলে যদি শিরক করেও ঐক্য আসে, তাতে সমস্যা নাই। প্রথম দিনেই আপনি সাহাবাদের সমান ঈমান আনতে পারবেন এমন না। বহুদিনের চর্চাতে তা আসবে। এই মুহূর্তে আপনার প্রথম কাজ হচ্ছে মাখলুককে ভালোবাসা। হারাম-হালাল, শিরক-বিদআত হিসাব করবেন ক্লাস টেনে উঠে। ক্লাস ওয়ানের পাঠ সকল মানুষে ঐক্য সৃষ্টি করা। সেটা যখন রপ্ত হবে, ক্লাস টু-তে উঠবেন। আজকে যারা মন্ডপে যান ও পূজোয় অংশ নেন, আজকেই আপনাকে শিরক নিয়ে মাথা ঘামাতে হবে না। আগে মানবপ্রেম জারি করুন।”

ঐ মিশনারির মেয়ে দুটোও দারুণভাবে তাই করলো। আমাদের এসে বলার চেষ্টা করলো না যে ছবি তোলা হারাম। বলার চেষ্টা করলো না কিছুই। বললো, তারা ভালোবাসা ছড়ায়, যীশুর আলাপ মানুষের কাছে পৌঁছে দেয়ার কারণ ওটাই। আমিও তাকে পালটা প্রশ্ন না ছুঁড়ে দিয়ে বলতে বাধ্য হলাম, “দুনিয়াতে এমন কাজ আরো দরকার আছে।”

ওরা আমাদের দারুণ ক্যান্ডিডেট হিসেবেই পেয়েছিলো সন্দেহ নেই। আঠার মতো লেগে ছিলো, যাবে না। একটু বাধ্য হয়েই আমাদের বলতে হলো, “দ্যাখো, সূর্যাস্তের আলো তো চলে যাচ্ছে, যদি কিছু মনে না করো তো…”

সবগুলো দাঁত বের করে ও একই সাথে জিভে একটা কামড় দিতে দিতে সুন্দরীদ্বয় জানালো, তারা বড্ড ভুল করে ফেলেছে, আমাদের ছবি তোলার মাঝে কোনও ধরণের সমস্যা সৃষ্টি করতে তারা চায়নি। আমরাও ফোঁকলা দাঁতে হেসে বললাম, “ও কিছু নয়। চমৎকার একটি সন্ধ্যা তোমরা কাটাবে এই কামনা করি।”

যীশুর সৈনিকদ্বয় ওদিকে কোথায় যেন চলে গেল। আমরাও মহা ব্যস্ত হয়ে শাটার দাবাতে থাকলাম। ক্যানিয়ন লেকের মাঝে একটা লাইটহাউজ। তার সামনে প্রচুর বোট রাইডার দেখা যায়, তবে অন্ধকার নেমে আসতে শুরু করার পর একটা একটা করে বোট কমে আসতে দেখবেন অবশ্যই।

একেকজনের আছে একেক ফূর্তি। পঞ্চাশোর্ধ্ব এক শ্বেতাঙ্গ আংকেল আমাদের পাশে দাঁড়িয়ে জানতে চাইলেন, “ভালো কিছু পারলে ধরতে?”

আমরাও উষ্ণ হেসে বললাম, “কী যে ধরছি তা তো বাড়ি গিয়ে বোঝা যাবে। এখানে এই ছোট্ট স্ক্রিনে সব ছবিকেই দ্য ভিঞ্চির আর্ট মনে হয়। বাস্তবতা অবশ্য এর থেকে অনেক বেশি দূরের কিছু হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।”

ভদ্রলোক হেসে চলে গেলেন। পেছনে তার স্ত্রী বোধহয়, একটা কুকুর নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। আমিও রাস্তায় প্রায় শুয়ে পড়ে একটা ফ্রেম ধরার চেষ্টা করতে থাকলাম। একটু পর দেখলাম ভদ্রলোক ফিরে আসছেন, আমার সামনে আরেকবার থেমে বললেন, “তোমার চেহারার সাথে এক ভারতীয় নায়কের মিল আছে। কিন্তু তার নাম আমি মনে করতে পারছি না। ঠিক এই রকম চুল, এই রকম হাসি।”

চোদনা হয়ে গেলাম, ভদ্রলোক চোখের মাথা খেয়েছেন সন্দেহ নেই। তবে হে-হে করে তাকে ধন্যবাদ জানাতে ভুললাম না। ওদিকে ঝিলিক দিচ্ছে কী যেন। ভদ্রলোকের আর তার কুকুরসঙ্গিনীর ফিরে আসার কারনটাও স্পষ্ট হয়ে গেল।

পাহাড়ি এলাকার একটা ছোটখাটো সমস্যা হচ্ছে ঝপ করে সন্ধ্যা নামে। এই সূর্য আছে, এই নেই – এমন একটা ঘটনা ঘটবে তা আমাকে মান্দেশ আগেই বলেছিলো। ও জানে। ক্যানিয়ন লেকে এই প্রথমবারের মতো ছবি তুলতে সে আসেনি। তার কথার সত্যতা হাড়ে হাড়ে টের পেলাম। বোধহয় ত্রিশ সেকেন্ড আগেও সূর্যটা ছিলো, দুম করে নেই হয়ে গেল। এর মধ্যে ঝড়োগতিতে আমাদের ছবি তুলে যেতে হলো তো বটেই। ইচ্ছেমতো থাকা যাবে এমনটাও নয়। রাতের বেলা ক্যানিয়ন লেক প্রাণঘাতী হয়ে উঠতে জানে। ২০২১ সালে এই লেক মানুষ ডুবে মরাতে রেকর্ড পর্যন্ত করেছে। (পড়তে পারেন এখানে – Record high drowning deaths at Canyon Lake this year)

কাজেই, সন্ধ্যা হলেই পুলিশের একটি গাড়ি চলে আসে। খেদিয়ে সবাইকে উঠিয়ে আনে মেইন রোডে। অবশ্যই লাঠিসোঁটা নিয়ে নয়। নীরবে মাথার ওপর ঝলমলানি আলো জ্বালিয়ে এগিয়ে যায় ওরা। ওটাই সঙ্কেত, “কেটে পড়ো, বাপু।”

কেউ যদি গ্যাঁট মেরে থাকে তাহলে তার পাশে গাড়িটা থামিয়ে তারা জানায়, “জায়গাটা অন্ধকারে নিরাপদ নয়। ধড়ের ওপর যদি মাথা একটার বেশি না থাকে তো…”

কাজেই আমরা সুবোধবালকের মতো সুরসুর করে ফেরত এলাম মেইন রোডে। মান্দেশের ঝরঝরে গাড়ির দরজাটা খুলে ভেতরে নিজেকে কসরত করে গলিয়ে দিয়েছি, ছেলেটা বলে উঠলো, “এই যাহ!”

জানতে চাইলাম, “কী হলো?”
কিছু না বলে একদৃষ্টে ফোনের দিকে তাকিয়ে ছিলো বন্ধুবর। এখানে আসার পথে আমাদের সামনেই একটা পিকআপ উলটে গেছিলো। তারপর রাস্তা বন্ধ করে একাকার অবস্থা। তেমন কিছু হলো নাকি আবার? বুকটা আমার ধ্বক করে উঠলো।

ক্যানিয়ন লেকে তখন নেমে এসেছে জমাটবাঁধা অন্ধকার।

আমেরিকা-নামা নন-ফিকশন

Post navigation

Previous post
Next post

কিশোর পাশা ইমন

১২টি ক্রাইম থৃলারের লেখক কিশোর পাশা ইমন রুয়েটের মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ছাত্র ছিলেন, এখন টেক্সাস ষ্টেট ইউনিভার্সিটি থেকে মাস্টার্স করেছেন মেকানিক্যাল অ্যান্ড ম্যানুফ্যাকচারিং ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে। বর্তমানে টেক্সাসের স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয় ইউটি ডালাসে মেকানিকাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পিএইচডির ছাত্র। ছোটগল্প, চিত্রনাট্য, ও উপন্যাস লিখে পাঠকপ্রিয়তা পেয়েছেন। তার লেখা প্রকাশিত হয় বাংলাদেশ ও ভারতের স্বনামধন্য প্রকাশনা সংস্থা থেকে। তার বইগুলো নিয়ে জানতে "প্রকাশিত বইসমূহ" মেনু ভিজিট করুন।

Related Posts

আমেরিকায় উচ্চশিক্ষা | অধ্যায় ০৪ – পথটা

Posted on August 3, 2021February 6, 2023

ভদ্রলোককে সবগুলো দাঁত বের করে বললাম, “শুভ সকাল, স্যার।”
তিনি আমাকে চুদলেনও না।

Read More

কেপির সেরা লেখা কোনটি – জরিপ ২০২২

Posted on February 5, 2024February 5, 2024

জনগণ যখন জানতে চান, কোন বইটা থেকে পড়া শুরু করবো? সেটার উত্তর জনগণের কাছ থেকেই আনা গেল। ৪৬৪ জনের ভোট থেকে জানা গেল আমার লেখা পাঠকের চোখে সেরা লেখা হচ্ছে (১) জাদুঘর পাতা আছে এই এখানে (২০২০) (২) যে হীরকখণ্ডে ঘুমিয়ে কুকুরদল (২০১৮) (৩) ছারপোকা – দ্য ব্যাটল অফ মাহেন্দ্রপুর…

Read More

যীশুর মেয়ে

Posted on February 12, 2023

হয়তো আমি ভুল ভাবছি।
হয়তো আমি ভাবছি উলটো।
হয়তো যারা এমপ্যাথিলেস, থটলেস, ডাম্ব, তারাই প্রবল বিশ্বাসী!

Read More

Leave a Reply Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

সর্বশেষ লেখাগুলো

  • ওয়ান ফর মাই সৌল
  • আমার যত প্রকাশক
  • কেপির সেরা লেখা কোনটি – জরিপ ২০২২
  • আন্ডারএইজের বই পড়া
  • অমুক পড়ে আসেন… সমস্যাবলী

Analytics

009516
Total Users : 9516
Total views : 23950
Who's Online : 0
Powered By WPS Visitor Counter
©2025 KP Imon | WordPress Theme by SuperbThemes