KP Imon

Words Crafted

ইরানী বালিকা

ইরানী বালিকার জন্য ডেরিক হলের বাইরে অপেক্ষা করছিলাম। ল্যাবের কাজ আজ বাদ দিয়েছি তার সাথে দেখা করার জন্য। মেয়েটার সাথে আমার পরিচয় ও বন্ধুত্ব ডিজাইন অফ এক্সপেরিমেন্টস কোর্সটা নেবার পর থেকে। বন্ধু, বড়ভাই ও ছোটভাই পই পই করে মানা করেছিলো ম্যাথ ডিপার্টমেন্টের কোর্সটা নিতে। ম্যাথের মাস্টার্স লেভেলের কোর্স একটু কঠিন হয়ে থাকে একই কোর্স ইন্ডাস্ট্রিয়াল এঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ থেকেও করা সম্ভব ছিলো। তবে ওদের ক্লাস শুরু হতো সন্ধ্যা ৬টায়। এত ঢঙ করার উপায় আমার ছিলো না। কঠিনেরেই ভালোবাসিলাম। কয়েকটা ক্লাস করার পর বুঝলাম দাঁত ফোটানো অনেক সময় অসম্ভব হয়ে উঠছে। কেন সবাই পই পই করে মানা করতো তা হাড়ে হাড়ে টের পেলাম। এলিয়েনদের মতো রঙ করা চুলের মেয়েটা আমাকে বাঁচালো। স্ট্যাটিস্টিকসের ছাত্রী।

যে কোর্সখানায় ভেবেছিলাম পাশ করাই দুষ্কর হয়ে উঠবে তাতে ওর কল্যাণে এ পেয়ে গেলাম। প্রফেসর সান রীতিমতো মাদার ফিগার, ম্যাথ ডিপার্টমেন্টের মানুষদের মধ্যে এটা আমি দেখেছি। আমাদের এঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্টে সবাই দাঁত বের করে থাকে। যেন সুযোগ পেলেই কামড়ে দেবে। ম্যাথ ডিপার্টমেন্টে একটা স্নিগ্ধ-শান্ত পরিবেশ। প্রফেসর সানকে তার ছাত্রছাত্রীরা প্রফেসর না ডেকে পারলে আম্মু ডাকে। তিনি বিজ্ঞের মতো মাথা দোলাতে দোলাতে বললেন, “এই তো, এঞ্জিনিয়ারিংয়ের ব্যাকগ্রাউন্ডের ছেলেরাও কতো সুন্দর পারছে। গণিতের সৌন্দর্য এটাই।”
আমি মনে মনে বললাম, “বলেছে আপনাকে। মনি না থাকলে তো গেছিলাম।”

ওর অফিসে একদিন ধরে নিয়ে গেল। বললো, “চা খাও?”
বললাম, “আবার জিগায়।”
ব্যাপারটা হলো আকস্মিকভাবেই। আমেরিকায় আসার পর কফিখোরের সংখ্যাধিক্যই দেখেছি, মনি বোধহয় আমার দেখা একমাত্র অবাঙালি যে চায়ের জন্য কিছু আবেগ শেয়ার করে। আমাকে পেয়ে ও শুরু করলো এক্সপেরিমেন্ট। এইচ-ই-বির চিপাচুপিতে পাওয়া যায় খোলা স্পাইস, তাদের কীভাবে সে চায়ে রূপান্তরিত করে তা এক শিল্প। কোথাও ভেষজ কিছুর গন্ধ পেলেই সে সবার আগে গিয়ে তা সংগ্রহ করে ফেলবে। তারপর বানাবে ‘আর্বাল টি’। মনির সাথে আমার দেখা হতো মূলতঃ চায়ের দাওয়াত রক্ষা করতেই।

তবে আজ সে উদ্দেশ্যে আমি আসিনি।
আমি ঠিক করেছি, একটা ছোট্ট ভিডিয়ো বানাবো। আমার পরিচিত র‍্যান্ডম ইরানিয়ানদের মুখে শুনতে চাইবো কীভাবে তারা এই ভয়াবহ জঘন্য একটা পরিস্থিতিতে ঢুকে পড়েছে। তারা ক্যামেরায় তা বলবে। প্রয়োজনে মুখ না দেখিয়ে বলবে।

আমার উদ্দেশ্যে গতকালই পানি ঢেলে দিয়েছে এঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেণ্টের অন্য এক ইরানিয়ান ছাত্রী মারিয়াম, অর্ধেক ডিপার্টমেন্টের ক্রাশ। পয়লা সেমিস্টারেই শয়তানটা আমাকে ভিডিয়ো করেছিলো, কাজেই আমি যাদের ভিডিয়োতে রাখবো তার টপ থ্রিতে মারিয়ামের নামটাও এলো। অথচ সোজাসাপ্টা সে জানিয়েছে এমন কিছু হলে খারাপ হয় এমন নয়, তবে সে এটা করতে পারবে না। আমি তাকে মনে করিয়ে দিতে ভুললাম না যে তার চাঁদবদনখানা দেখাতেই হবে তা না। জবাবে মেয়েটা যা বলেছিল তা আমার বাকি জীবন মনে থাকবে।

“মানসিক অবস্থা খুব ভালো নয়। আমার মনে হয় না ভিডিয়ো বানাবার মতো শক্তি আমার আছে।”

কাজেই ল্যাবের কাজ ফেলে আমি এসেছি মনির সাথে দেখা করতে। আজকে স্রেফ চা খেতে নয়, আমাকে জানতে হবে ইরানে কী হচ্ছে। কেন মারিয়াম আমাকে একটা ত্রিশ সেকেন্ডের ভিডিয়ো দিতেও রাজি হলো না, এমনকি স্রেফ কণ্ঠ হলেও!

ডেরিক হলের বাইরে বেঞ্চে বসে আমাদের অনার সোসাইটির ডিসকাশন থ্রেডে STEM ফিল্ডে লিবারেল আর্টের ভূমিকা নিয়ে নানা আলাপ করে সময় পারছি, এ সময় একটা ঘটনা ঘটলো।

(টেক্সাস স্টেট ইউনিভার্সিটিতে আসার পর যে তিনটি ঘটনা আমার কাছে সেরা তিনে থাকবে তাদের মধ্যে এটি একটি। তবে এটা আমি হয়তো আত্মজীবনীমূলক আলাপে লিখবো। আজকের প্রসঙ্গ সেই ঘটনা নয়।)

২.
আমার জন্য ঘটনার শুরুটা হয়েছিলো বন্ধু আলীরেজার আইফোন থেকে। সে একজন ইরানি যুবক। সব সময় চিল। আমরা তাকে প্রায় মনে করিয়ে দেবার চেষ্টা করি সব সময় চিল হবার জন্য গ্র্যাজুয়েট স্টুডেন্টদের বেশি একটা সুযোগ রাখা হয়নি। তার উচিত ঘন ঘন দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হওয়া ও পানি খাওয়া। আমাদের নিষেধাজ্ঞাবাণীর থোড়াই কেয়ার করে আলি। কোথায় সুন্দর মেয়ে আছে এবং কোথাইয় ন্যাস্টি মদ আছে তার সবটা তার নখদর্পণে।

ওর সাথে পরিচয়ের খানিক বাদে নতুন কেউ অবশ্যই প্রশ্ন করবে, “কী ব্যাপার, আমরা তো ভাবতাম ইরানে মদ খাওয়া নিষিদ্ধ। তুমি তো কুমিরের মতো গেলো। শিখলে কোথায়?”
আলি চোখ টিপে বলতো, “প্রয়োজনীয়তাই উদ্ভাবনের জনক। এটা সত্য যে আমাদের দেশে মদ বিক্রি করা আইনসম্মত নয়। আর একই কারণে এটাও সত্য যে আমাদের প্রায় সবাই নিজেরাই মদ বানাতে পারি। একদিন হোম ডিপোয় চলো, মদ বানানোর সব সরঞ্জাম পাওয়া যাবে। তারপর এমন ঘরে বানানো মদ দেবো তোমাদের যে তাগ লেগে যাবে।”
অতিউৎসাহী কেউ যদি প্রশ্ন করে, “কিন্তু তোমাদের ধর্মে যে বলা হয়েছে ওটা হারাম? তোমরা কী করে -”
আলি হাসে, “স্ট্যাটিসটিকসে দেখবে নব্বইভাগ মুসলমান, তবে আমাদের জেনারেশনে অন্তত এমন না। সবাই কাগজে কলমে মুসলমান। কারণ ইসলামের বাইরে গেছে বললে সে মুরতাদ হয়ে যাবে। আর মুরতাদের শাস্তি মৃত্যুদণ্ড। আসলে আমাদের নব্বই পার্সেন্ট মুরতাদ।”

আলির কথা আমি অতোটা বিশ্বাস করিনি আমি। বাংলাদেশের ছেলে হয়ে জানতাম আমারও তাই মনে হয়। আমারও মনে হয় নব্বই পার্সেন্ট মুসললাম পরিসংখ্যানে থাকলেও আসলে আরবান অঞ্চলের মেজরিটিই ধর্মহীন। ইসলামী পরিবারে জন্ম নিলেও ধর্মটির নানা কদর্য দিক দেখে তা ছেড়ে দিয়েছে আমাদের বেশিরভাগ মানুষ। সহজ করে বললে, প্রতি বছর নতুন দশ হাজার মানুষের গায়ে টুপি আর বোরখা উঠে যদি, ত্রিশ হাজার মানুষ নাস্তিক হয়ে যায়, কিংবা আরও বেশি। ইরানের সাধারণ মানুষও নিশ্চয় বাংলাদেশের মতোই হবে, ধর্ম-টর্ম নিয়ে মাথা ঘামানোর যুগ ২০২২ সাল নয়। সরকার যা-ই হোক না কেন, ইরান কিংবা বাংলাদেশ পৃথিবীর বাইরে অবস্থান করে না। তাই বলে তরুণদের নব্বই ভাগ মানুষ নিশ্চয় নাস্তিক নয় ইরানের, ওটা আলির একটু বাড়িয়ে বলাই হবে – ভেবেছিলাম।

সেদিন আলি এসে বললো, “এই, ইরানের একটা মেয়েকে মেরে ফেলেছে বোরখা না পরার জন্য, শুনেছো?”
আমি মুখ ভার করে বললাম, “হ্যাঁ।”
ও অবাক হয়ে গেল, “আরে, আজ সকাল থেকে যাকেই প্রশ্ন করি বলে জানে না। তুমি কীভাবে জানো?”
বললাম, “আমাদের দেশেও এমন মাদারচোদ অনেক তো, মেয়ে কী পোষাক পরলো না পরলো তা নিয়ে অনেক বানচোতেরই মাথায় অনেক ব্যথা। কাজেই আমরা এইসব খবরে খুব সজাগ দৃষ্টি রাখি যেন আমাদের দেশটায় এসব কখনো মাথাচাড়া না দিয়ে ওঠে।”
একটা ভিডিয়ো দেখালো আলি, “দ্যাখো তারপর ইরানের প্রত্যেকটা শহরের প্রত্যেকটা রাস্তায় কীভাবে মানুষ নেমে এসেছে। আমাদের মোরাল পুলিশকে কীভাবে চুদলো জনগণ দেখাই দাঁড়াও।”

অসংখ্য ভিডিয়ো দেখলাম তারপর আমরা, পুলিশকে পিটিয়ে তক্তা বানিয়ে দিচ্ছে জনগণ।
আলি বলে যাচ্ছে, “এরা গত কয়েক দশক ধরে আমাদের ছাড়খার করে দিয়েছে। ইরানের ভেতর কোন বালই করতে পারবা না। আমাদের দেশটা কিন্তু এমন ছিলো না। এত দারুণ ইতিহাস আমাদের অথচ ইসলাম ঢুকে সব শেষ করে দিয়েছে।”

ইসলাম ঢুকে ইরানকে শেষ করে দেয়ার কথা আলি সুযোগ পেলেই বলে। প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ হয়ে বলে। এমনকি পাবলিক স্পিচেও বলে। গত সেমিস্টারে ইরানি প্রফেসর ডক্টর আসিয়াবানপুর ছিলেন আমাদের একটি কোর্সের ইনস্ট্রাক্টর। অ্যাডিটিভ ম্যানুফ্যাকচারিং। ওতে একটা প্রেজেন্টেশন ছিলো – কালচারাল প্রেজেন্টেশন। জনতার ভোটে একজন তা জিতবে। সেই প্রেজেন্টেশনে আমি নিজের বইপত্র লেখা, স্ক্রিনপ্লে রচনা, অনুবাদসহ যাবতীয় ক্রিয়েটিভ কাজ প্রেজেন্ট করেছিলাম। নিরঙ্কুশভাবে জিতেছিলাম এবং পেয়েছিলাম কেয়া কসমেটিকসের সৌজন্যে একটি মগ, যা দিয়ে আমি আজও চা খেয়ে থাকি। তবে সেই প্রেজেন্টেশনে আলিও ছিলো। ও প্রেজেন্ট করেছিল ইরানকে। এবং ঘরভর্তি লোকজনের সামনে সে সরাসরি বলেছিল, “ইসলামের হানাদার অনুপ্রবেশের পর থেকে সব বদলে গেছে। তবে আমাদের দেশটা এমনভাবে সাংস্কৃতিকভাবে সমৃদ্ধ ছিলো।”

প্রেজেন্টেশন শেষ হওয়ার পর ওকে রিজুল প্রশ্ন করেছিল, “কী রে ভাই, সরাসরি ইসলামরে যেমনে সাইজ করতেছিলা, এমনে না করলেও পারতা।”
আলি বলেছিল, “শুয়োরের বাচ্চারা আমাদের দেশটাকে আসলেই শেষ করে দিয়েছে।”

দুই দিন আগে আলি আমাকে হোয়াটসঅ্যাপে কিছু নতুন ইন্সটা রিল শেয়ার করলো। যেখানে মেয়েদের সাথে মোরাল পুলিশ কী করে তার নানা ভিডিয়ো দেখা যাচ্ছে। আলির মেসেজটা ছিল সংক্ষিপ্ত, তবে স্পষ্ট, “তোমাদের দেশটাকে আমাদের মতো হতে দিয়ো না। যে কোন মূল্যে ইসলামি উত্থান ঠেকিয়ো।”

আলির সাথে নানা লিকড টেলিগ্রাম ভিডিয়ো দেখছিলাম আমি ল্যাবে বসে। ইরানের তরুণরা পুলিশকে – আমাদের ভাষায় – ‘চুদে খাল’ করে দিচ্ছে, যেমনটা আগে কখনো দেখা যায়নি। ইরানের মেয়েরা ইরানের রাস্তায় হিজাব টেনে ছিঁড়ে আগুনে ফেলে দিচ্ছে, যেমনটা চিন্তা করার সাহসও আগে করা যেত না। ইরানের শাহবাগ নেই, তবে ইরানের তরুণরা আসলে ইসলামকে অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে ঘৃণা করে, এবং আলি ৯ টা মাস আগে আমাদের যেভাবে বলেছিল তরুণদের ৯০ ভাগই আসলে নাস্তিক প্রকৃতির – ইসলামকে ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছে একটা নোংরা ময়লার মতো – তা একেবারে মিথ্যা বলে আর মনে হচ্ছিল না আমাদের।

৩.
মনির সাথে দেখা করতে করতে প্রায় দুটো ঘণ্টা দেরি হয়ে গেল। ডেরিক হলে তার অফিস প্রফেসর ইমামির সাথে। দিলখোলা এক ভদ্রমহিলা, স্বামীপ্রবর ইলেকট্রিকাল এঞ্জিনিয়ার, কিছুদিন আগে উনি একটি বিশ্ববিখ্যাত কোম্পানিতে আরও একটা প্রমোশন পেয়েছেন। এখন তাঁর ওপর আছে কেবল সিইও। এখানে চায়ের জন্য এসেছি অনেকবার, প্রফেসরের সাথে আলাপ হয়েছে অনেক। উনার আইফোনটা নিউজিল্যান্ড থেকে কীভাবে কিনেছিলেন তার গল্প শুনতে হয়েছিল তাদের ওয়ার্ক-লাইফ ব্যালেন্সের হিসেব নিতে গিয়ে। চমৎকার একজন শিক্ষক। আজ মনির অফিসে গিয়ে উনাকে অবশ্য দেখলাম না। অফিসের দরজাটা হা করে খোলা।

ভেতরে দুষ্ট প্রকৃতির এক আফ্রিকান আমেরিকান বাচ্চাকে তখন অঙ্ক কষাচ্ছে মনি। বেচারার গাণিতিক ধারণার অবস্থা খুবই করুণ মনে হলো। এক থেকে দুই বিয়োগ করলে যে তিন নয়, নেগেটিভ ওয়ান হবে তা তাকে বোঝাতে গিয়েই বেচারির খবর হয়ে যায়। কাজেই আমি আমার বাচ্চাকাচ্চাদের গ্রেডিংয়ের দায়িত্ব তুলে নিলাম নিজের কাঁধে। বাচ্চাকাচ্চা বিদায় করতে আরও সময় লাগলো।

তারপর ও জানতে চাইলো, “তোমার খবর-টবর কি? ঘুমাও টুমাও না মনে হচ্ছে।”
হেহে করলাম। বললাম, “সখ করে তো আর জেগে থাকি না। ঘুমাতে পারি না আরকি। ডাক্তাররা একে বলে রেস্টলেস থটস।”
মনি বললো, “কীভাবে পারো জানি না, ভাই। না ঘুমালে আমার মাথা কাজ করে না।”
আমি বললাম, “আমার করে। তোমার কী খবর? ক্যাম্পাসে আসছো কখন আজ?”
ও জানালো, “সকাল আটটায়। তারপর জিমে গেলাম। ভালো কথা, আমার সাথে জিমে আসো। তোমার ঘুম আসবে না মানে! তোমার বাবারও ঘুম চলে আসবে।”
আমি হাসলাম, “সেজন্যই তো যাবো না। জিমে গেলে আমার এই কম ঘুমানো, কম খাওয়া লাইফস্টাইল আর সাপোর্ট করতে পারবো না।”
“ও হ্যাঁ। তুমি তো আবার খাও না। আমার এইটা দরকার। দিন দিন হাতি হচ্ছি।”
এবার সত্যিই হেসে ফেললাম, “দুনিয়াতে একটা মেয়েও দেখি নাই যে এইটা দাবী করে না। মোটেও হাতি হচ্ছো না তুমি। তবে আমার মনে হয় মেয়েরা এমনটা দাবী করে যেন সামনে যে আছে সে বলতে পারে সে হাতি হচ্ছে না।”
মনি বললো, “আরে নাহ, দুই বছর আগে আমাকে দেখোনি তাই এমন বলছো। তোমার পেছনের দেয়ালটা দেখো।”

তাকালাম। অনেকগুলো ছবি সাঁটানো। পারিবারিক ছবি। অনিন্দ্যসুন্দর কিছু মেয়ে আর সিনিয়র দুই প্যারেন্টস।
“দ্যাখো কত্তো স্লিম ছিলাম। ওই জায়গায় ফেরার চেষ্টা করছি এখন আবার।” সবগুলো ছবি দেখালো আমাকে ও, “আমার দুই বোন। এটা আব্বু। এটা আম্মু। আর এই যে আমাদের বেড়ালটিকে আমরা ছেড়ে দিয়েছি গ্রামের প্রকৃতিতে। তবে এটা তার আগের ছবি।”
অবাক হয়ে গেলাম, “তোমরা ছেড়ে দিলে আর চলেও গেল? অকৃতজ্ঞ বেড়াল তো!”
ও আরেকটা ছবি দেখালো। কয়েকটা পিচ্চি। বললো, “বদের আখড়া। আমার কাজিন আর নিফিউয়ের দল। এদের মধ্যে কে যেন বেড়ালটাকে প্যারা দিয়েছিলো। তাই চলে গেছে।” তারপর মনি আসল কথায় চলে এলো, “একটা নয়া ফ্লেভার পেয়েছি। ওটাকে চা করার ইচ্ছে আজ। কোনটা খাবে? ল্যাভেন্ডার না *&& -”

শেষ ফ্লেভারটার নাম উচ্চারণও করতে পারলাম না। কোত্থেকে কোত্থেকে এই মেয়ে যে নানা ভেষজ জিনিস আবিষ্কার করে জানি না। হাজারো শোকর যে সে তাদের চা বানিয়ে খায় এবং খাওয়ায়। যেদিন আগুন ধরিয়ে ধোঁয়া বানিয়ে খাবে ও খাওয়াবে সেদিন বাঁধবে বিপত্তি।

আমি কেবল মিনমিন করে বললাম, “চা খেতে তো আসিনি, এসেছিলাম তোমাদের গ্যাঞ্জাম নিয়ে আলোচনা করতে।”

সাথে সাথে মনি খেয়াল করলো, দরজা এখনো হা করে খোলা, বাইরের করিডোরের যে কেউ আমাদের আলাপ শুনতে পারবে। চটজলদি দরজা লাগিয়ে লক করে দিলো ও। বাইরে থেকে যে কেউ এই দৃশ্য দেখলে নানা গল্প ফাঁদবে সন্দেহ নেই, ওদের মোটা মাথায় ঢুকবে না আমরা এখানে বিপ্লবের আলাপ করছি। ওকে এমন আতঙ্কিত হয়ে উঠতে অবশ্য আমি আগে দেখিনি। কেবল পরিবেশ হাল্কা করতে হেহে করে বললাম, “ও হ্যাঁ, আমরা তো এখন সিআইএ।”

মনি বললো, “তোমার কি মাথা খারাপ হয়েছে? আমি এখানে একটা ভিডিয়ো বানালে আমার পুরো পরিবারকে ওরা শেষ করে দেবে না? ওরা তো সবাই ইরানে!”
আমি বললাম, “তোমার তো চেহারা যাবে না।”
ও বললো, “তাতে কী? তোমার সব সোশাল মিডিয়া আমি দেখেছি। সবগুলোতে তোমার আসল তথ্য দেয়া। আমরা যে সব এক শেয়াল তা যে কেউ জানবে। তোমার ভিডিয়ো যদি ইন্টারন্যাশনালি ভাইরাল হয় বুঝেই তো যাবে টেক্সাস স্টেটের কোন মেয়ে তা করেছে। যদি কোন কারণে আমাকে বের করতে চায় অবশ্যই বের করতে পারবে। আর সে ক্ষেত্রে আমার ফ্যামিলির জন্য তা মৃত্যু।”

অজান্তেই আমার চোখ চলে গেল পেছনের দেয়ালে। অনেকগুলো ছবি সাঁটানো। পারিবারিক ছবি। অনিন্দ্যসুন্দর কিছু মেয়ে আর সিনিয়র দুই প্যারেন্টস।

আমি বললাম, “কমফোর্টেবল না হলে অবশ্যই করবে না। আমি কেবল ভেবেছিলাম আমার জনগণকে দেখাই আমি র‍্যান্ডমলি যে কয়জন ইরানিকে চিনি তাদের মধ্যে চিন্তাধারা কেমন। অ্যাক্টিভিস্টদের বা সাধারণ মানুষদের যারা এখন কথা বলছে তাদের চিন্তাধারা আর আমাদের দৈনন্দিন জীবনে যারা আমাদের চারপাশেই আছে তাদের চিন্তাধারায় যে একটা মিল আমরা দেখতে পাই এটা আমার দেশের মানুষ বিশ্বাস করে না। তারা মনে করে এসবই ইসলামের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র।”

“আমি ভিডিয়োতে এলেও ওরা বলবে, আমরাও ইসলামের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছি।”
“তা হয়তো বলবে, তবে প্রেজেন্স, ওয়ার্ডস আসলে চেঞ্জে হেল্প করে। সত্যি বললে এই ভিডিয়োটা আমি করতে চাইছিলাম আমাদের দেশের মানুষের জন্য, মূলতঃ – কারণ তোমাদের মতো না হলেও আমাদের দেশে ইসলামী একটা শক্তি থাবা পাতার চেষ্টা করছে অনেকদিন ধরেই। ওটার পরিণতি কী ঘটে তা আমার দেশের লোকের জানা দরকার।”

ওকে ব্লগার হত্যার আলাপ শোনালাম। নরসিংদীতে কিছুদিন আগে পোষাক নিয়ে কী ঘটেছিল বললাম। জানালাম তারপর আমাদের নির্লজ্জ আদালত কী বলেছে। যোগ করলাম, “এমনটা আদালতের বা রাষ্ট্রের বলার কথা নয়। বলেছে কেন জানো? ওই ইসলামি অপশক্তি সাধারণ মানুষকে খুব ইসলামের জন্য গর্বিত করার চেষ্টা করে যাচ্ছে। তারই প্রভাবে আমাদের এমন জাজ আছে যারা ওদের ঘেঁষা। এমন আর্মি অফিসার আছে যারা ওদের ঘেঁষা। গভর্নমেন্ট অফিশিয়াল থেকে শুরু করে রাস্তার টোকাই – সবখানে কিছু লোক আছে যারা মনে করে ইসলামের শরিয়ত ভালো। ধর্মটা সবাইকে চাপাতে হবে। আমরা এখন লাস্ট লাইন অফ ডিফেন্স। সমস্যা হলো আমাদের সরকারও করাপ্ট।”
ও বললো, “তোমাদের সরকারের থেকে বিপদটা কেমন?”
বললাম, “আজকে যদি ফেসবুকে লেখো এই সরকার অবৈধ ও ভোটহীন নির্বাচনে ক্ষমতায় এসেছে, তোমার কপাল খারাপ হলে কালই এর জন্য গ্রেফতার হয়ে যাবে ও সাজা হবে ৭ বছরের জেল।”
মনি একমত হলো, “এই সমস্যাতে আছে বাকিরা। তবে আমার মতে, এরা ইসলাম বা ধর্মীয় শাসন থেকে অন্তত ভালো।”

হা হয়ে গেলাম।
টেক্সাসের মাটিতে বসে একজন ইরানি বালিকার মুখ থেকে আওয়ামীলীগের নিরঙ্কুশ সমর্থন আশা করিনি।
ওকে শুধু বললাম, “চমৎকার। তোমাকে এই মুহূর্তে টেক্সাস স্টেট ইউনিভার্সিটির ছাত্রলীগের সভাপতি পদে মনোনয়ন দেয়া গেল।”
বিভ্রান্ত দেখায় ওকে। এত বড় সম্মান আশা করেনি।

আমি বললাম, “জানি না কী করা উচিত। আসলে জানি। আমি জানি এই ভিডিয়ো বানিয়ে আসলে লাভ নেই কোন। একমাত্র কাজের কাজ করছে যারা এই মুহূর্তে ইরানের রাস্তায় আছে। আমরা স্রেফ সার্ভাইভারস গিল্টে ভুগছি। ভালো কথা, তোমাদের এই আন্দোলনের ভেতরের খবরটা বলো তো। কোন লিডারশিপ কি গ্রো করছে? এমন গণমানুষের আন্দোলনে সব সময় লিডারশিপ গড়ে ওঠে, যারা বদলে দেয় একটা দেশকে।”

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কথা বললাম। মুক্তিযুদ্ধের কথা বললাম। ইসলামের চোদন থেকে আমরা কীভাবে মুক্তি পেয়েছিলাম জানালাম। ঠিক তখনই আমার চেনা একজন খুব সাধারণ স্ট্যাটিস্টিশিয়ানটি আমাকে একটা অসাধারণ প্রশ্ন করলো।
জানতে চাইলো, “পেয়েছো নাকি?”
বোকা বনে গেলাম, “কী?”
“মুক্তি?”
থতমত খেয়ে গেলাম আমি। খুব সত্য কথা। খুবই সত্য কথা।
বললাম, “খুব অল্প সময়ের জন্য পেয়েছিলাম। দেশ এখন তোমাদের পথে হাঁটছে।”

মনি এখন আর আমার দিকে তাকাচ্ছে না। সামনের দেয়ালের দিকে তাকালো ও। সব সময় হাসিখুশি মেয়েটাকে এত দুঃখী দেখালো যে আমি ওর দিকে আর তাকাতে পারলাম না।

মনি এখন যেন নিজের সাথে কথা বলছে।

“আমার মনে হয় ওই রাস্তার আন্দোলনেও কাজ হবে না। আমার মনে হয় ওই মাটি নষ্ট হয়ে গেছে। যত যাই করো কিছু বানচোতই ওটা শাসন করবে। ধর্মের পতাকা নাড়বে। কিছুতেই আসলে কিছু লাভ নেই। ছোট যখন ছিলাম তখন হায়ার স্টাডির ব্যাপারে যা জানতাম সবই আমাদের ইসলামী আগ্রাসনের আগের যুগের গল্প। লাখ লাখ ইরানি ছেলেমেয়ে তখন আমেরিকায় পড়তে আসতো। ইংল্যান্ডে যেত। আবিষ্কারের আনন্দেই যেত। আর এখন?”

মনির গলাটা ভেঙে গেল, ওর দিকে আবার তাকালাম, ওর চোখে পানি টলমল করছে। বলে যাচ্ছে এখনো, “আমি এখানে এসেছি পালিয়ে। তুমি হয়তো কথা বলতে পারো, তুমি গায়েব হয়ে গেলে কথা হবে – তুমি তোমার দেশে, ইন্ডিয়ায় কিছু পরিচিতি পেয়েছ। আমি হলে? আমি হলে কেউ জানবেও না। আমি কত্ত কিছু করতে চেয়েছিলাম। এই প্রটেস্ট শুরুর পরও কত কী বলতে চেয়েছিলাম। পারিনি। আমার ফ্যামিলির সবাই আমাকে বলেছে দেশের জন্য যদি কিছু করতে চাই তাহলে আমার উচিত হবে এখানে ডিগ্রি নেয়া, চাকরিতে ঢোকা, গ্রিন কার্ড পাওয়া এবং সিটিজেনশিপের জন্য আবেদন করা। তার আগে আমি কিছু বললেই আমার বিপদ। একদিন হয়তো আমেরিকা আমাকে দেশে পাঠিয়ে দেবে, তখন আমাকে মেরে ফেলবে। দেশে পাঠাবার আগে আমার পরিবারের সবাইকে বেঁধে নিয়ে যাবে। আমাদের দেশে এত ট্যালেন্টেড মানুষ ছিলো, আছে, অথচ এই সময়ে এসে আমরা কীসের জন্য আন্দোলন করছি? চুল দেখানো বা না দেখানোর স্বাধীনতা নিয়ে। এই যে আন্দোলনটা হচ্ছে, অনেকে মারা গেছে এরই মধ্যে। আরও মারা যাবে। অনেক মানুষ মরবে এই আন্দোলনে। আমার সরকারকে আমি চিনি। যে কয়জন মারা গেছে তাও আমরা টেলিগ্রামের সিক্রেট গ্রুপগুলোর কারণে, ইরানিদের যারা আমেরিকার সিটিজেনশিপ পেয়েছে তাদের সাহসী কণ্ঠের জন্য জানতে পারছি। কত কিছু জানতেও পারছি না। এতসব হচ্ছে কীসের জন্য? কিছু শুয়োরের বাচ্চা তাদের ক্ষমতা আর বিত্ত ধরে রাখতে এটা করছে। ধর্ম নিয়ে তাদের কোন মাথাব্যথা আছে বলে মনে করো? পৃথিবীতে যে কোন জায়গায় যে কেউ যখন ধর্ম পালন করার বদলে বা পাশাপাশি অন্যকে ধর্ম পালনে বাধ্য করে – তখনই বুঝে নেবে এ থেকে তারা আখিরাতের নয়, দুনিয়ার লাভই খুঁজছে। আমরা যখন রাস্তায় লড়ছি, ওরা ওদিকে আখের গোছাচ্ছে।”

আমাকে একটা ইমেইল বের করে দেখালো মনি, “দ্যাখো। টেক্সাস স্টেট আমাদের ইমেইল করে বলেছে যে কোন মানসিক সমর্থন দেবে। কিন্তু কোন দেশের সরকার কোন অফিশিয়াল স্টেটমেন্ট এখনো দেয়নি। মানসিক সমর্থন! কী লাভ? কাউন্সেল করে কিছু হবে? ওরা কী আমাদের যন্ত্রণাটা বুঝবে? যদি বুঝেও, তাতে কী হবে? রাতারাতি সব ঠিক হয়ে যাবে?”

ওকে এই প্রশ্নের উত্তরটা দিতে পারলাম না।
ইরানি নাগরিকটির প্রতিটা কথাই আমি বুঝতে পেরেছি।
মনি তখন দেয়াল দেখছে। তার গলা ভাঙা। চোখে পানি।

আমি পাষাণহৃদয় মানুষ, জড়িয়ে সান্ত্বনা দেবার মানুষ নই। কাজেই কেবল বললাম, “আমাদের আসলে দরকার ছিলো আয়রন ম্যানের স্যুট। গিয়ে এক রাতে সরকার ফেলে দিলে আর কোন সাধারণ মানুষকে মরতে হতো না। ডেমোক্রেটিক ইরান পেয়ে যেতাম। আর লিখে রাখতে পারো, ইরানের পথে যারা আছে তারা সরকার ফেলে দিতে পারলে আগামিকালই আমেরিকা ওই সরকারকে স্বীকৃতি দেবে।”

মনি আমার দিকে ঘুরে তাকালো, লক্ষ্য করলাম চোখজোড়ায় শোকের থেকে শক্তির পরিমাণ অনেক, অনেক বেশি।
ও কেবল ছোট্ট করে বললো, “আমাদের জনগণ রাস্তা সহজে ছাড়বে না। এই সরকার বিদায় হবার আগে নয়।”

আমার যদিও অনেক সন্দেহ আছে এ ব্যাপারে – কারণ ওদের লিডারশিপের জায়গাটি নেই। ভালো লিডারশিপ ছাড়া লম্বা সময় ধরে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। তবে লক্ষ্য করলাম, আমার মন এতশত যুক্তির আলাপ বুঝতে পারছে না। সে চাইছে ইরান বদলে যাক। মুক্তি পাক।

তবে মনে পড়ে গেল আজকের শোনা সবচেয়ে গভীর প্রশ্নটা।
অতি সাধারণ, রাজনীতি থেকে সব সময় দূরে থাকা এক পরিসংখ্যানের ছাত্রী আমাকে যে প্রশ্নটা করেছিল।
মুক্তি পেলেও, কতক্ষণের জন্য?

বিকালের দিকে মনি বাস ধরতে চলে গেল। আমি রওনা দিলাম আমার অ্যাপার্টমেন্টের দিকে। ফেসবুক স্ক্রল করতে গিয়ে লক্ষ্য করলাম এক আপু ছবিটা পোস্ট করেছেন। এক ইরানি মেয়ে তার জামা খুলে প্রতীকি প্রতিবাদ জানিয়েছেন পোষাকের স্বাধীনতার। শ্রদ্ধায় আমার মাথা নিচু হয়ে গেল। মনে পড়ে গেল, অনেক অনেক আগে কবি নজরুল লিখেছিলেন –

ইরানী বালিকা যেন মরু-চারিণী
পল্লীর-প্রান্তর-বনমনোহারিণী
ছুটে আসে সহসা গৈরিক-বরণী
বালুকার উড়নী গায় –

(আমি অনেকবার বলেছি, বাংলাদেশের পরবর্তী সফল আন্দোলন ছাত্রলীগ করবে না, ছাত্রদল করবে না, মুসলমানের পাল করবে না, তা করবে বাংলাদেশের মেয়েরা। কেন বলেছিলাম তা ইরানিরা দেখিয়ে দিচ্ছে। তাদের সফলতা কামনা করি।)

আত্মকথা – ২৩শে সেপ্টেম্বর, ২০২২

#MahsaAmini

কিশোর পাশা ইমন

Website: http://kpwrites.link

১২টি ক্রাইম থৃলারের লেখক কিশোর পাশা ইমন রুয়েটের মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ছাত্র ছিলেন, এখন টেক্সাস ষ্টেট ইউনিভার্সিটি থেকে মাস্টার্স করেছেন মেকানিক্যাল অ্যান্ড ম্যানুফ্যাকচারিং ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে। বর্তমানে টেক্সাসের স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয় ইউটি ডালাসে মেকানিকাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পিএইচডির ছাত্র। ছোটগল্প, চিত্রনাট্য, ও উপন্যাস লিখে পাঠকপ্রিয়তা পেয়েছেন। তার লেখা প্রকাশিত হয় বাংলাদেশ ও ভারতের স্বনামধন্য প্রকাশনা সংস্থা থেকে। তার বইগুলো নিয়ে জানতে "প্রকাশিত বইসমূহ" মেনু ভিজিট করুন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *