Skip to content
KP Imon
KP Imon

Words Crafted

  • গুহামুখ
  • সূচিপত্র
  • গল্প
    • রম্য
    • জীবনধর্মী থৃলার
    • সাইকোলজিক্যাল
    • রোমান্টিক
    • ক্রাইম
    • সাসপেন্স
    • জীবনধর্মী
  • নন-ফিকশন
    • থট প্রসেস
    • উচ্চশিক্ষা
    • আমেরিকা-নামা
    • জীবনোন্নয়ন
    • তাত্ত্বিক আলোচনা
    • ডায়েরি
  • প্রকাশিত বইসমূহ
    • প্রকাশিত বইসমূহ
    • যেসব গল্প সংকলনে আছে আমার গল্প
KP Imon
KP Imon

Words Crafted

আলকেমি

Posted on July 2, 2014July 3, 2022

এক

‘লিওনার্ডো দ্য ভিঞ্চি আর আইজ্যাক নিউটনও চর্চা করেছেন আলকেমির।’ স্পষ্ট স্বরে বলে উজ্জ্বল।

চিন্তিত মুখে তার দিকে তাকিয়ে থাকে স্নিগ্ধ।

‘তাঁরাও বিশ্বাস করতেন এসব গাঁজাখুরীতে?’ না বলে পারে না ও।

একমত হয় না উজ্জ্বল, ’গাঁজাখুরী বলা তো ঠিক না। এই আলকেমি না থাকলে আজকের দিনে রসায়ন শাস্ত্র বলেই কিছু থাকত না। ’

এটা অবশ্য মানতেই হয় স্নিগ্ধকে, ’তা ঠিক। জাবির বিন হাইয়্যানকে আগে রাখতেই হবে। তিনি ছিলেন প্রসিদ্ধ আলকেমিস্ট – তবুও রসায়নশাস্ত্রের জন্ম দিয়েছেন ওসব থেকেই। ফিনিক্স পাখির ছাই যেন। ’

সরু চোখে তাকায় উজ্জ্বল এবার বন্ধুর দিকে, ’তবুও কিভাবে আলকেমিদের ব্যাপারে অবিশ্বাস তোর? এটা তো প্রতিষ্ঠিত সত্য। ’

বড় করে নিঃশ্বাস নেয় এবার স্নিগ্ধ।

‘দ্যাখ – আলকেমিস্টদের ব্যাপারে কম বেশি আমিও জানি। ঠিক আছে? জ্ঞান দেওয়ার দরকার নেই। আলকেমির শুরুটা জানিস তো? সক্রেটিসের যুগ বলা চলে ওটাকে। জ্ঞান বিজ্ঞান ছিল মাত্রাতিরিক্ত পিছিয়ে। পৃথিবীর সবচেয়ে জ্ঞানী ব্যক্তি কারা ছিল তখন জানিস? দার্শনিকরা। তাহলে বোঝ – প্রাকৃতিক দর্শন যখন জ্ঞান-বিজ্ঞানকে নেতৃত্ব দিচ্ছে – তখন প্রকৃত বিজ্ঞানের শাখাগুলো – যেমন পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন – এদের অবস্থানটা কোন পর্যায়ে ছিল?’

উঠে দাঁড়ায় উজ্জ্বল, জানালার কাছে গিয়ে বাইরে তাকায়, ’তোর কথা ঠিক আছে। এই যুগে দাঁড়িয়ে সেটাকে নিতান্তই গাধামী বলে মনে হবে। এটাই স্বাভাবিক। তবে তাদের ওই পাগলামীগুলো না থাকলে আজকের বিজ্ঞান তো পেতি না। এটাও সত্য। জ্ঞানেরও বিবর্তন ঘটে। ’

ক্ষেপে ওঠে স্নিগ্ধ, ’তুই নিজেই খেয়াল করে দেখ – আলকেমিতে বিশ্বাস করার কিছু নেই। রসায়নে আছে। আলকেমির বিবর্তিত রূপ এটা – অলরাইট। মানলাম। এটাতে আমি বিশ্বাস করি। আলকেমিতে না। শব্দটার উৎপত্তি আর সংজ্ঞাতেই তো আছে ভুল। এসেছে আরবী’আলকিমিয়া’ থেকে – অর্থ হল কালোমাটি। ব্ল্যাক ম্যাজিকের গন্ধ নামেই। তারপরে আছে সংজ্ঞা! ’

পকেটে হাত রেখেই ঘুরে দাঁড়ায় উজ্জ্বল, ’ভালোই ঘেঁটেছিস দেখা যায় আলকেমি নিয়ে। সংজ্ঞাটা আমারও জানা আছে। আলকেমি হল সেই শাস্ত্র – যার শেখার উদ্দেশ্য হল পরিপূর্ণতা লাভ করা। আধ্যাত্মিক – ভৌতিক। এই শাস্ত্র ধাতু থেকে সোনা প্রস্তুত করতে শেখায়, মানুষের অমরত্ব লাভের কৌশল আছে এই শাস্ত্রেই। কেন? এতে অবিশ্বাসের কি আছে? লোহা থেকে সোনা নির্মানের কাহিনী তোর কাছে আজগুবী লাগছে? অথবা, অমরত্ব?’

‘অফকোর্স!’ হাতে কিল দিয়ে বলে স্নিগ্ধ।

হেসে ফেলে উজ্জ্বল, ’ধর্মপ্রাণ হিসেবে তোর খাতি আছে। তোকে এক ওয়াক্ত নামাজও কেউ মিস দিতে দেখেনি মসজিদে। রোজাও মিস করিস না কোনদিন। প্রেম করিস যদিও – তাছাড়া তোর মত ধর্মের পথে আমরা কেউই থাকতে পারি না এতটা। আর সেই তুই কি না অবিশ্বাস করবি অমরত্বকে?’

‘বিশ্বাস করার কারণ কি আছে?’ কটমট করে তাকায় স্নিগ্ধ।

‘অবশ্যই। আলকেমিদের নিয়ে ঘাঁটতে গেছিলি – ইসলাম ধর্ম যে একে সম্পূর্ণ সাপোর্ট দেয় – তা তো জানিস। ’

‘জানি, ’ মাথা ঝাঁকায় স্নিগ্ধ, ’আলকেমির জন্য শুধু জ্ঞানই যথেষ্ট না। এমনকী পরীক্ষাতে আলকেমি বিশ্বাসী না। তারা যাদুবিদ্যা আর অলৌকিক শক্তিতে বিশ্বাসী। এখানেই কেমিস্ট্রি আর আলকেমির মাঝে পার্থক্য। জাবির ইবনে হাইয়ান ছিলেন খাঁটি মুসলমান। তিনি নিজেই ছিলেন আলকেমিস্ট। শিখেছিলেন হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর বংশধর জাফর সাদিকের কাছ থেকে। এবং পজিটিভ-নেগেটিভ শক্তির কোন একটা ব্যবহার করা ছাড়া আলকেমির কাজ হবে না – এটা তাঁরও বিশ্বাস ছিল। নেগেটিভ শক্তি যে নিচ্ছে – যে চালাচ্ছে ব্ল্যাক ম্যাজিক। আর পজেটিভ শক্তি নিয়ে আল্লাহর অনুগ্রহে রসায়নের গবেষণা হল আলকেমি। ’

‘এক্স্যক্টলি।’ সাপোর্ট দেয় উজ্জ্বল, ’আর আলকেমির উদ্দেশ্যই হল ফিলোসফার স্টোন আর এলিক্সির অফ লাইফ প্রস্তুত করা। হ্যারি পটার লেখার সময় লেখিকা জে. কে. রোলিং কিন্তু এগুলোই বেছে নিয়েছিলেন বিষয় হিসেবে। নিকোলাস ফ্লামেলকে তিনি উপন্যাসে একটা চরিত্র দিয়েছিলেন। তবে মানুষটা কিন্তু আসলেই ছিলেন। ’

‘ছিলেন নাকি?’ এই তথ্যটা ধাক্কা দেয় স্নিগ্ধকে।

‘অবশ্যই। প্যারিসে ছিলেন তিনি। বইয়ের দোকান ছিল তাঁর। শুরুটা ওভাবেই। পরে এই স্কলার আলকেমি নিয়ে গবেষণা চালিয়ে গেছেন। সোনা তৈরী করার জন্য তাঁর প্রচেষ্টার সীমা ছিল না। সোনা প্রস্তুত করাটা কিন্তু সব না। আসল চ্যালেঞ্জ হল একটা মৌল থেকে অন্য মৌলে পরিবর্তন করাটা। অতটুকু করতে পারলে সাধনা দিলেই হয়ে যাবে সোনার প্রস্তুতি। ’

‘তাহলে, সোনা তিনি বানিয়েছিলেন?’ ভ্রু কুঁচকে আছে স্নিগ্ধ। আলকেমিদের নিয়ে বেশ পড়াশোনা করলেও এই দিকটা সে জানত না।

মাথা ঝাঁকায় উজ্জ্বল, ’প্রথমে সাফল্য পেয়েছিলেন – ইতিহাস যদি ঠিক থাকে – ১৩৭৯ সালে প্রথমবারের মত দুইশ ত্রিশ গ্রাম পারদকে রূপাতে রূপান্তর করেছিলেন নিকোলাস ফ্লামেল। তিন বছর পর ওই পরিমাণ পারদকে তিনি সোনাতে পরিণত করতে সম্পূর্ণ সক্ষম হন। আর প্রসেসটা ছিল যতদূর বোঝা যায় – বার বার পারদের হীটিং আর কুলিং দিয়ে। তবে যাই হোক – পৃথিবীতে প্রথম মানুষ সম্ভবতঃ তিনিই – যিনি আলকেমিতে সাফল্য পেয়েছিলেন। কাজেই অবিশ্বাসের কিছু নেই। ’

থতমত খেয়ে গেছে এবার স্নিগ্ধ। দেখে মায়া হল উজ্জ্বলের।

এবার ছেলেটাকে আরেকটু ডোজ দিতে হবে। আলকেমিতে অবিশ্বাসীদের একেবারেই সহ্য হয় না তার।

‘ইসলাম কি বলে? আলকেমি আছে – নাকি নেই?’, আবারও নিজের টপিকে ফিরে আসে উজ্জ্বল।

‘আলকেমি ইসলামের সমর্থন না পেলে জাবির ইবনে হাইয়ান ওই পথে যেতেন না। তবে আরও কিছু প্রমাণ দরকার আমার।’ ঘুরিয়ে জবাব দেয় স্নিগ্ধ, ’রসায়নবিদ্যা তো ঠিক আছে। আমি সেটা বিশ্বাস করি – আলকেমিতে বিশ্বাস রেখে অনেক কিছু আবিষ্কার করেছেন জাবির। যেমন হাইড্রোক্লোরিক এসিড। আরও কত যৌগ যে তিনি উৎপন্ন করেছেন – যেগুলো ছাড়া আজকের রসায়নের মুখ দেখতে হত না আর। তবে কিভাবে বিশ্বাস করতে পারি আমরা লোহাকে সোনা বানাতে পারব কি না? অথবা অমরত্ব? এগুলো কি বিশ্বাস করার মত?’

‘কেন নয়?’, এবার হেসে ফেলে উজ্জ্বল, ’খিজির (আঃ) এর কথা তুমি ভুলে যাচ্ছ? উনি কিন্তু মুসা(আঃ) এর সাথে সাক্ষাত করেছেন। আবার পড়েছেন হযরত মুহম্মদ (সাঃ) এর জানাজা। তিনি কিন্তু মারা যাননি। এখনও পৃথিবীর কোথাও আছেন। কিভাবে সম্ভব?’

চমকে ওঠে স্নিগ্ধ, ’ওহ – তাই তো। উনি’আবে হায়াত’ ঝর্ণার পানি খেয়েছিলেন। পেয়েছিলেন অমরত্ব। ’

‘কাজেই – মাই ডিয়ার স্নিগ্ধ, অমরত্বের অবিশ্বাসের কোন মানে আমি দেখি না। অন্তত তোমার মত ছেলের জন্য। আর অবিশ্বাসের কারণ দেখি না আলকেমিস্টদের নিয়েও। জাবির ইবনে হাইয়ান তো আছেনই। আরও আছে বয়েল আর নিউটন। কেমিস্ট্রি পড়তে গিয়ে বয়েলের সূত্র পড়েনি কে? দুইজনই ছিলেন আলকেমিস্ট। নিউটন তাঁর জীবনের একুশ থেকে সাতাশের মাঝেই যা বিজ্ঞান নিয়ে নাড়াচাড়া করে গেছেন। আজও আমরা তাই পড়ি। তারপর বাকি জীবন তিনি লাগিয়েছিলেন আলকেমি নিয়ে। বয়েলের সাথে তিনি শেয়ারও করতেন এসব ব্যাপার। তারপর আছেন জাবির ইবনে হাইয়ান – ইনি তো সঞ্জীবনী সুধা বা এলিক্সির অফ লাইফের ব্যাপারে নামকরণই করেছেন। আল-ইকসির। যেটা খেলে অমরত্ব পাবে মানুষ। যেটাকে এখন পশ্চিমারা বলে এলিক্সির। ’

অবশেষে পরাজয় মেনে নেয় স্নিগ্ধ, ’আমি এসব জানি। তর্কের খাতিরে যদি ধরেও নেই আলকেমির সত্যতা – এখানে একটা প্রশ্ন চলেই আসে। জাবির ইবনে হাইয়ান বা নিউটনের মত বড় ধরণের মগজ আমাদের নেই। জ্ঞান তো ধরিনা তেমন। তাঁদের তৈরী করা পান্ডুলিপিও আমাদের হাতে নেই। এখানে আমাদের সোনা বানানোর প্রসংগ উঠালেই বা কি? সফলতা তো পাবো না। ’

এই প্রশ্নের অপেক্ষাতেই এত নাটক করেছে উজ্জ্বল। চমৎকার একটা হাসি ফোটে ওর মুখে, পকেট থেকে বের করেছে একফালি কাগজ।

‘পান্ডুলিপি নেই – তবে ফিলোসফার স্টোন তৈরীর জন্য একটা ফর্মুলা পেয়েছি। এর ওপর ভিত্তি করেই এগিয়ে যাবে আমাদের কাজ। ’

 

দুই

‘ধ্যাত!’ হাতের ট্রেটা ছুঁড়ে মারে স্নিগ্ধ ঘরের এক কোণে।

ঘর না বলে এটাকে একটা ল্যাবরেটরি বলা যায়। পার্সোনাল ল্যাব। গত কয়েকদিন ধরে দুই বন্ধুর দিন রাত এখানেই অতিবাহিত হচ্ছে। কয়েকদিন বলাটা বোধহয় ভুল হবে। গত ছয় মাস ধরে দিনে অন্তত বারো ঘন্টা দিচ্ছে ওরা এখানে। ভার্সিটির হলে থাকার এই এক সুবিধে। বাসাতে গুতোগুতি করবে এমন কেউ আশেপাশে নেই।

মুক্ত একটা জীবন। একেবারে যথার্থ ব্যবহার করছে ওরা। একটা আলাদা বাসাতে ওরা কাজ করে ল্যাব হিসেবে। যন্ত্রপাতি সেই কবেই কিনেছে। স্পন্সরশীপ করে উজ্জ্বল। টাকার অভাব নেই ওর। শেয়ারমার্কেটে ভালো কিছু কোম্পানির শেয়ার কেনা আছে তার নামে। আর বাসাটাও নির্ঝঞ্ঝাট। স্নিগ্ধর গার্লফ্রেন্ড মহুয়ার মামার বাসা। মামা-মামী একেবারে আমেরিকা চলে গেছেন চিরতরে।

একই শহরে ভার্সিটি মহুয়ার – ওদের সাথেই একই ডিপার্টমেন্টে পড়ে মেয়েটা। কাজেই মামাটি তাকে দিয়ে গেছেন বাসা সামলানোর ভার। এই বিশাল বাসায় মেয়ে হয়ে একা তো আর থাকতে পারে না মহুয়া। তাই ও হলে উঠে আছে। আর চাবি দিয়েছে আপাতত উজ্জ্বল আর স্নিগ্ধকে।

বিজ্ঞানের একটা বিরল ধারাতে কাজ করছে ছেলে দুটো – এতটুকুই জানে মেয়েটি। সব জানিয়ে নিজেদের পাগল প্রমাণের চেষ্টা করতে চায় নি ওরা কেউ। এই মুহূর্তে ট্রে রাগের চোটে ছুঁড়ে মারার কারণ আছে। প্রায় একমাস ধরে ওরা আটকে আছে এখানে। গবেষণার অগ্রগতিই নেই। প্রথম পাঁচমাসে তর তর করে এগিয়ে যাচ্ছিল।

ধাপে ধাপে।

উজ্জ্বলের জোগাড় করা প্রসেসটার ব্যাপারে আগে থেকেই জানত স্নিগ্ধ। শুধু ও-ই নয় – আলকেমি নিয়ে ঘাঁটে এমন প্রতিটা মানুষই জানে সে ব্যপারে। কিন্তু উজ্জ্বলের কাছে আরও কিছু ছিলো। এই প্রসেসকে বলা হয় ম্যাগনাম ওপাস। জীবনের সর্বশ্রেষ্ঠ কাজ নয়, আলকেমিস্ট যে পদ্ধতি অনুসরণ করেন তাকে ম্যাগনাম ওপাস বলা হয় টেকনিকাল টার্ম ধরে। এতটা ডিটেইলস পাবে সেটা আগে ভাবেনি স্নিগ্ধ , আর দেরী না করে গার্লফ্রেন্ডকে পটিয়ে বাসাটা ধার চেয়েছে।

ওদের দরকার নীরবতা। উটকো লোকের যন্ত্রণাতে কাজ করতে না পারলে কারোই লাভ হত না।  মহুয়ার মামা-মামীকে একেবারে সময়মত আমেরিকা ভেগে যাওয়ার জন্য ভাগ্যকে তখন ধন্যবাদ দিয়েছিল স্নিগ্ধ। এখন অবশ্য ভাগ্যের প্রতি ততটা সন্তুষ্ট না ও।

‘মাথা ঠান্ডা রাখ। মাথা গরম করলে ভাবতে পারবি না তো।’ পাশ থেকে বিড় বিড় করে বলে উজ্জ্বল।

‘মাথা ঠান্ডা! একটা মাস ধরে আটকে আছি এখানে। এই বালের ধাপে। তারপরও কি মনে হয়? ঠান্ডা থাকার কথা মাথা?’

স্বান্তনা দেয় উজ্জ্বল, ’নিকোলাস ফ্লামেল একুশ বছর ধরে শুধু কয়েকটা পৃষ্ঠার মর্ম উদ্ধারের চেষ্টা করেছিলেন। আমাদের মাত্র একমাস একটা ধাপে আটকে থাকাটা হতাশার কিছুই না। ’

চোখ গরম করে তাকায় স্নিগ্ধ, ’১৩৫০ সালের প্যাচাল আমার সামনে পাইড়ো না। তখন ইন্টারনেট ছিল না। রসায়নের কোন অগ্রগতি ছিল না। এখন আমাদের হাতে সব আছে। আমরা প্রাচীন আলকেমিস্ট না, উজ্জ্বল। আমরা এই শতকের আলকেমিস্ট। আমরা সব দিক থেকে সাহায্য নেব। নিচ্ছিও। রসায়ন আমাদের সাহায্য করছে দুই হাত ভরে। নাহলে কি তোর মনে হয় পাঁচ মাসে আটটা ধাপ পা হতে পারতাম আমরা?’

কিছু বলে না উজ্জ্বল। স্নিগ্ধের কথাতে যুক্তি আছে।

‘শোন, তোর আসলে নরটনের পদ্ধতি অনুসরণ করাই উচিত হয়নি। ধাপ এখানে ১৪টা। এর চেয়ে রিপলির পদ্ধতি ভালো ছিল। মাত্র বারো ধাপ। ’

বিরক্ত হয় উজ্জ্বল, ’আরে, ওর ধাপ কম দেখে তো ঝামেলা বেশি। জটিলতা বেশি। এরচেয়ে নরটনেরটাই ভালো। দেখ তুই – এখানে আমাদের আটটা ধাপ পার হতে সমস্যা হয়নি। আটকেছি আমরা পিউট্রেফ্যাকশন স্টেজে। রাইট?’

‘তো? বালের ধাপ আমার। এখানে কি পচাচ্ছি আমরা? সালফারের সাথে? আমার মাথাতে আসছে না কিছু। এর পর বডিলি সালফারের সলিউশন পাওয়ার কথা। তারপর হোয়াইট লাইটের। আমরা পাচ্ছি কিছু?’

‘এটা নরটনের প্রসেস বলেই তবুও নবম ধাপে আমরা এসেছি, স্নিগ্ধ। রিপলির প্রসেস দেখতে পারিস – ওখানে পিউট্রেফ্যাকশন পঞ্চম ধাপ। ক্যালসিনেশন, ডিসলিউশন, সেপারেশন আর কনজাংকশনের পরেই এই পিউট্রেফ্যাকশন। তারপরে আছে আরও ঝামেলা। আমাদের করতে হত কনজেলেশন। মানে, ঘনভবন আর কি। আমাদের সাবস্ট্যান্সটাকে গাঢ় করতে হবে, ভিসকোসিটি বাড়াতে হবে – তাও এই পরিমাণে যাতে ক্রিস্টালাইজ বা সলিডিফিকেশন করা যায়। এখানে আমাদের পরশপাথর বা ফিলোসফার স্টোনের কঠিন অবস্থা পাওয়া যাবে। আরও আছে… এটা হল তোর রিপলির প্রসেস। এর চেয়ে ধাপ বেশি হলেও কম ঝামেলার না এই নরটনের প্রসেসটা?’

স্বীকার করতে যাচ্ছে স্নিগ্ধ – এই সময় পকেটে ফোন বেজে ওঠে ওর। বিরক্ত মুখে বের করে ওটা স্নিগ্ধ।

মহুয়ার ফোন পেলে ওকে এতটা বিরক্ত হতে আগে কোনদিনই দেখেনি উজ্জ্বল।

‘হ্যাঁ, মহুয়া, বল।’ গরম কন্ঠে বলে স্নিগ্ধ।

ওপাশ থেকে মহুয়ার গলাও শোনা যায়, ’তোমার না বিকেলে আসার কথা ছিল চিলিজ-এ? আমি বসে আছি কতক্ষণ ধরে!’

প্রায় চেঁচিয়ে ওঠে স্নিগ্ধ, ’ক্যানসেল ইট! আমার এখন বের হওয়ার মুড নাই। ’

‘স্নিগ্ধ! প্রমিজ করেছিলে তুমি! আমরা দুইমাস কোথাও বের হই না!’ আর্দ্র হয়ে আসে মহুয়ার গলা।

‘দরকার হলে আরও দুইমাস বের হব না। আমি চিন্তাতে আছি, মহুয়া। ট্রাই টু আন্ডারস্ট্যান্ড। তোমার মত শুধু মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্স করি না আমি। সাথে এদিকে আমাদের গবেষণা নিয়ে বাড়তি সময় দিতে হয়। তোমার মত অবসর পাই না আমি দিনে। দুই দিক সামলাতে গিয়ে ঘুমানোর জন্য পর্যাপ্ত সময় পাই না। পরে কোনদিন বের হব, আজ না। ’

মহুয়াকে আর একটা কথা বলারও সুযোগ দেয় না স্নিগ্ধ। ছুঁড়ে ফেলে মোবাইলটা একদিকে।

ট্রে-টার পথেই গেল জিনিসটা। বাড়ি লেগে ভেতরের কলকব্জা সব বের হয়ে যায় ফোনটা থেকে।

এতে দুঃখ পায় না স্নিগ্ধ মোটেও। যদিও আটষট্টি হাজার টাকা ছিল ওটার দাম – অনেক সখ করে দেড় বছর ধরে টাকা জমিয়ে কিনেছিল।

‘মোবাইলটা ভেঙ্গে ফেললি? তুই যেতে পারতি মহুয়ার সাথে দেখা করতে। আমি তো এখানে আছি। ল্যাব নিয়ে আমি ভাবতাম। ’

‘শাট আপ!’ হুংকার দেয় স্নিগ্ধ, ’এই স্টোন বানানোর আগে একচুল ডিস্ট্র্যাকশন যেন না আসে। মোবাইল ভেঙ্গে ঠিক কাজ করেছি। চাইলেও কেউ পাবে না আমাকে। অযথা সময় নষ্ট। মেয়েদের প্যানপ্যানানি শোনার চেয়ে অনেক জরুরী কাজ পড়ে আছে এই পৃথিবীতে। ’

একটু হাসে উজ্জ্বল, ’নিউটন কেন বিয়ে করেন নি বোঝাই যায় এখন তোকে দেখে। ’

‘শুধু আমার কথা বলিস না। নিজেকে জিজ্ঞাসা কর তোর কি এখন প্রেম, মেয়ে – এসব নিয়ে ভাবার মুড আছে?’

গম্ভীর হয়ে যায় উজ্জ্বল, ’না, নাই। ক্লোরিনের সাপ্লাই আছে আমাদের? বের কর তো?’

‘সালফিউরিক এসিড দে ওই তিন নম্বর বিকারে।’ এগিয়ে দেয় স্নিগ্ধ।

‘কতটুকু?’

‘আড়াইশ মিলি। সামান্য বেশিও যেন না পড়ে। সাবধান। এবার আমার দিকে পার করে দে বিকারটা। ’

‘দাড়া – যায়মান ক্লোরিন বানিয়ে রেখেছিলাম। ওটা কই? এদিকে পাঠা। ’

‘রেডিমেড কেনা লাগবে। বানিয়ে নিলে ঘনত্ব ঠিক থাকে না। ’

দূরের মসজিদে আজান দিচ্ছে। মাগরিবের আজান।

আড়চোখে একবার স্নিগ্ধকে দেখে উজ্জ্বল। ছেলেটা এক ওয়াক্ত নামাজও মিস দিত না একসময়।

এখন সে আলকেমি ছাড়া কিছু বোঝে না।

কিচ্ছু না।

 

তিন

সিগারেট ধরিয়ে আকাশের দিকে তাকায় স্নিগ্ধ। বসে আছে লেডিস হোস্টেলের সামনের পুকুরের পাড়ে। এই জায়গাটা নির্জন থাকে। ভাবতে সুবিধে।

পেছনে আরেকটা লাইটার জ্বালানোর শব্দ শোনা যায়, তাকিয়ে উজ্জ্বলকে দেখতে পায় ও।

‘কি রে? এখানে এসে কি করিস? আর দশ মিনিট পর আমাদের মেশিন শপ।’ উজ্জ্বলের প্রশ্নটা হাসি ফোটায় স্নিগ্ধের মুখে।

‘দশ মিনিট পর তোরও মেশিন ওয়র্কশপ। এখানে কি করছিস? একই পথের তো পথিক আমরা। ’

ফোঁস করে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে উজ্জ্বল, ’চলে যেতে ইচ্ছে করছে আমাদের আলকেমি ল্যাবে রে। এখানে কি আর মন টেকে? মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং থেকে কেমিস্ট্রি অনেক আগ্রহের একটা সাবজেক্ট। ’

‘একেবারে মনের কথা বলেছিস। আরেকবার যদি অ্যাডমিশন টেস্ট দিতে পারতাম, ভার্সিটিগুলোতে কেমিস্ট্রির জন্য টার্গেট করতাম। বালের ইঞ্জিনিয়ারিং!’

‘ওই শব্দটা সব জায়গায় ব্যবহার করা বন্ধ কর।’ স্নিগ্ধের প্রতি বিরক্ত হয় উজ্জ্বল, ’তোর মেজাজ দিনকে দিন গরম হচ্ছে। হতেই আছে। সমস্যা কি তোর? ঠান্ডা মাথাতে ভাবতে না পারলে আমাদের সফল হওয়া লাগবে না। এটা তোর কল অফ ডিউটি না। মাথা গরমের কাজও এটা না। ’

উজ্জ্বলের ধমকে কিছুটা ঠান্ডা হয় স্নিগ্ধ।

‘পিউট্রেফ্যাকশন তো বা…’ বলতে যেয়ে থেমে যায় স্নিগ্ধ, ’পিউট্রেফ্যাকশন তো আমার চুল! এখানেই আটকে আছি আজও। আমার মনে হয় না এই জীবনে এখান থেকে বের হতে পারব আর। দেড় মাস হয়ে গেল। কতভাবে ট্রাই করেছি আমরা – তুই নিজেই বল?’

মাথা চুলকায় উজ্জ্বল, ’আমার মনে হয় আমাদের থামতে হবে। ’

উত্তেজনাতে লাফিয়ে ওঠে এবার স্নিগ্ধ, ’প্রশ্নই আসে না! সাতটা মাস! প্রায় সাত মাস ধরে কাজ করছি আমরা। দিন রাত এক করে দিয়ে। শেষ কবে শান্তিতে ঘুমিয়েছি – জানি না। এখানে এসে কাজ থামিয়ে দেব? মাথা নষ্ট আমার?’

ওর কাঁধে হাত রাখে উজ্জ্বল, ’বোঝার চেষ্টা কর, স্নিগ্ধ। আমার হাতে থাকা টাকা শেষ হয়ে এসেছে প্রায়। ফান্ড না থাকলে ল্যাবের ইকুয়েপমেন্ট আর সাবস্ট্যানস  কিনব কিভাবে?’

স্নিগ্ধের মুখটা ধীরে ধীরে হতাশাতে ঢেকে যায়।

‘আর কয় মাস চলতে পারবি এই রেটে খরচ হলে?’ জানতে চায় ও।

‘এক মাস। তারপর আমি ফুরুৎ।’ মন খারাপ করেই বলে উজ্জ্বল।

‘সরি দোস্ত – রেজাল্ট দিতে না পারলে তোর টাকাগুলো স্রেফ পানিতে যাবে। আর রেজাল্ট দিতে পারিনি আমি। ’

‘তোর একার কোন কিছু না। ব্যর্থতা আমারও। আমরা একসাথে কাজ করছি। মনে আছে তোর সেটা?’

কিছু না বলে মাথা নীচু করে স্নিগ্ধ।

তারপর দূরে একবার তাকায়।

‘ফাক দিস নরটন’স প্রসেস। আমরা অন্য কোন ভাবে চেষ্টা করব। এভাবে কাজ হচ্ছে না। ’

‘আয়, বসি।’ পুকুরপাড়ের সিমেন্টের বেঞ্চটা দেখিয়ে বলে উজ্জ্বল।

সিমেন্ট খোদাই করে ১৯৯৩ সালে কেউ একজন ডেট লিখে রেখেছে। ২৭ জুন। কে লিখেছে – কেনই বা লিখেছে – সেটা নিয়ে মোটেও মাথা ঘামায় না ওরা। এটা দেখে দেখে অভ্যাস হয়ে গেছে। বরং নিতম্ব চাপা দিয়ে লেখাটা ঢেকে ফেলল ওরা।

স্নিগ্ধের কাঁধে হাত রাখে উজ্জ্বল, গলা নামিয়ে বলে, ’শোন, তোকে এখন যা যা বলব, সেগুলো প্রাচীনতম আলকেমির ধাপ। এগুলোর সাথে রিপনি বা নরটনের থিওরির মিল তুই পাবি না। কারণ সম্পূর্ণ অন্য লেভেলের আলকেমির কথা বলতে যাচ্ছি তোকে আমি। ’

‘আমি প্রবল আগ্রহ বোধ করছি।’ সংক্ষেপে জানায় স্নিগ্ধ।

‘খ্রিস্টপূর্ব ২০০০ – সেই সময়ে আলকেমিস্টদের ভালো প্রভাব ছিল, জানিস সেটা। জনগণ এদের শ্রদ্ধা করত যতটা তারচেয়ে বেশি পেত ভয়। কাঁপাকাঁপি লেগে গেলে তাদের দোষ দেওয়া যায় না। যাদুবিদ্যার সাথে সম্পূর্ণভাবে সংযুক্ত ছিল সেই আমলের আলকেমি। অন্তত সাধারণ জনতা সেটাই ভাবত। আর সেজন্যই ভয়টা একেবারে অমূলক না। ’

অধৈর্য্যের মত মাথা দোলায় স্নিগ্ধ, ’তা তো বুঝলাম। তবে  তখনকার আলকেমিস্টদের ব্যাপারে আমাদের জানাশোনা কম। তাদের মাঝে কেউ কেউ ছিলেন – যারা পরশপাথর বানাতে পেরেছিলেন। সন্ধান পেয়েছিলেন এলিক্সির অফ লাইফের। তবে সেসব তাদের আয়ু বাড়িয়েছিল। অমর করতে পারেনি। দীর্ঘজীবন পার করেছেন এমন একটা গোত্রই ছিল তখন। বাকিরা তাদের করত সম্মান, ভয়ও পেত। মানে, আমরা ধরেই নিতে পারি – আলকেমিস্ট ছিলেন তাঁরা। আর কোন ব্যাখ্যা নেই। তবে তাদের প্রসেস তো জানা সম্ভব না। প্রসেস না জানলে আমাদের কল্পকাহিনী শুনে উপকার হবে না কিছু। ’

স্নিগ্ধ এখন বলতে গেলে উজ্জ্বলের চেয়েও বেশি জানে বিষয়টা লক্ষ্য করে খুশি হয় স্নিগ্ধ। ছেলেটা যত জানবে ততই সুবিধে হবে লক্ষ্যে পৌঁছাতে। আর এখানে বকতে হবে কম। এখানে ইন্ট্রো না দিলেও চলছে। ওদিকে মেশিন শপ শুরু হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা ছিল নাহলে।

‘যদি তাদের মেথড জানা যায়?’ প্রশ্ন করে উজ্জ্বল।

অর্থবহ প্রশ্নটা গুরুত্বের সাথে নেয় স্নিগ্ধ, ’সেটা কিভাবে জানা সম্ভব? নিউটন আর বয়েলকে নিয়ে ঘাটতে গিয়েই আমাদের দম বের হয়ে যাচ্ছে। এরা ঈসা(আঃ) এর জন্মের পরের মানুষজন। উনার জন্মের আগের মানুষের জীবন ঘাটতে গেলে আমার যৌবন পেরিয়ে যাবে – নিশ্চিত থাক!’

হাসে উজ্জ্বল, ’তাহলে বলি তোকে, আলকেমিস্টদের একাধিক গ্রুপ হয়ে গেছিল পরবর্তীতে। একদল মূল বিষয়, আধ্যাত্মিক দিকে থাকলেন। আরেকদল চলে গেলেন ভৌত দিকে। আধ্যাত্মিক আলকেমিস্টরা গবেষণা করতেন কিভাবে আত্মাকে… সামান্য আত্মাকে বানানো যায় সোনার মত মূল্যবান – সততা আর ন্যায়ের পথে দৃঢ়। আর ওদিকে ভৌতবিদরা সোজা নিমগ্ন হলেন ধাতু থেকে সোনা বানাতে। কিভাবে ফিলোসফার স্টোন বানাবে সেটা তাদের চিন্তা ছিল না, খেয়াল কর্‌। ’

বোকা বোকা দৃষ্টি দেয় স্নিগ্ধ, ’আচ্ছা, তারা ছিল সোনা বানানোর চিন্তাতে। পরশপাথর তাদের টার্গেট ছিল না। তাদের টার্গেট ছিল ট্রান্সমিউটেশন। এক পদার্থ থেকে অন্য পদার্থের রূপান্তর। সেটার জন্য পরশপাথর লাগবে – তা কে বলেছে?’

‘রাইট!’ জ্বল জ্বলে চোখে বলে উজ্জ্বল।

‘তাহলে আমাদের জানার কথা কিভাবে সেই আদিযুগের ব্যাপারে? এটা ঠিক – তোর কথা থেকে বুঝতে পারছি আমাদের পদ্ধতিতে ভুল আছে। আমাদের চিন্তা করা উচিত ট্রান্সমিউটশন নিয়ে। ’

উজ্জ্বল হাল ছাড়ে না, পানির দিকে তাকিয়ে শান্ত কন্ঠে বলে, ’তখন আমাদের আধ্যাত্মিক আলকেমিরা একটা সময় বুঝলেন – এলিক্সির অফ লাইফ ছাড়া আত্মার উন্নয়ন সম্ভব না। তাঁরা মনোযোগ দিলেন ওদিকে। কিন্তু ভৌতবিদ্যাতে আগ্রহীরা বার বার ব্যর্থ তখন স্টোন তৈরীতে। ব্যর্থ এলিক্সির অফ লাইফ পেতেও। তখনই জনশ্রুতি ছড়ালো – আধ্যাত্মিক বিদ্যাতে মগ্ন আলকেমিস্টরা চিরযৌবনে যাওয়ার সুধা পেয়েছেন, একই সাথে পেয়ে গেছেন পরশ পাথর। ’

‘ভৌতবিদেরা মেনে নিলেন সেটা?’ আগ্রহের সাথে জানতে চায় স্নিগ্ধ।

‘জানতে পারলেন। তারপর একে একে ধরে আনলেন আধ্যাত্মিক বিদ্যাতে পারদর্শীদের। চালিয়েছিলেন অবর্ণনীয় অত্যাচার। সহজে সোনা তৌরীর পদ্ধতিটা শেখার জন্য। প্রাণ গেলেও মুখ খোলেননি অনেকে। খুলেছিলেন একজন। আলকেমিস্ট ব্যাবেল। তিনি একটা পদ্ধতি দিয়েছিলেন বটে। ’

স্নিগ্ধ হা করে তাকিয়ে থাকে উজ্জ্বলের হাতে থাকা পুরোনো একটা কাগজের দিকে।

‘ব্যাবেল’স মেথড?’

একটু হাসে উজ্জ্বল, ’ব্যাবেল’স মেথড। অলৌকিকত্ব ছিল আলকেমি আর কেমিস্ট্রির মাঝে পার্থক্য। মনে আছে? আমাদের ঝামেলা হল – এই অলৌকিক পথে হাঁটতে গেলে আমাদের নিতে হবে ঝুঁকি। ফলাফল আমি জানি না। ’

হাতের সিগারেটটা পানিতে ছুঁড়ে মারে স্নিগ্ধ।

ছোঁ মেরে কাগজটা নেয় ও তারপর, ’বিশ্বাস করবি না আমি কতটা মরিয়া। আমি নেব এই ঝুঁকি। চল, মেশিন শপের দেরী হয়ে যাচ্ছে। ’

 

চার

অন্ধকার ঘরে বসে আছে উজ্জ্বল আর স্নিগ্ধ।

স্নিগ্ধের হাতে সিগারেট। উজ্জ্বলও একটা ধরায়। উত্তেজনাতে ওদের নিঃশ্বাস ভারী হয়ে আসছে আজ।

বার বার!

এখন ওরা আছে মহুয়ার মামার পরিত্যাক্ত বাসাতেই। বাড়িটার চমৎকার একটা বেজমেন্ট ওদের জন্য একেবারে মানানসই পরিবেশ এনে দিয়েছে। এখানে বড় একটা চৌবাচ্চা সেট করেছে ওরা গত পনের দিন ধরে। সেটাতে রোজ ফুটিয়েছে সালফিউরিক এসিডের দ্রবণ। সব মিলিয়ে উজ্জ্বলের ফান্ড শেষ হয়ে গেছে এর মাঝেই। ত্রিশ দিন হয়ত এমনিতে চলত – তবে এই পনেরদিনে ম্যাসিভ খরচ হচ্ছে ওদের।

‘অলৌকিক শক্তির সাহায্য আমাদের দরকার। অবশ্যই দরকার। এই পয়েন্টটা আমাদের মাথাতে আগে কেন আসেনি?’, আবার উজ্জ্বলকে বলে স্নিগ্ধ। আসলে আজকের দিনে ব্যর্থ হলে ওদের গবেষণা একেবারে পানিতে যাবে – সেটা ও জানে। সেজন্য নিজেই নিজেকে স্বান্তনা দিচ্ছে বলা যায়।

‘প্রসেস মনে আছে?’ জানতে চায় উজ্জ্বল।

‘আছে, ইনগ্রিডিয়েন্ট সব জোগাড় হয়েছে।’ টেবিলের দিকে ইঙ্গিত দেয় স্নিগ্ধ, ’আজ রাতেই আমরা অনেক অনেক সোনা নিয়ে ফিরতে পারব ঘরে। আমাদের গবেষণা সফল হলে আরও লার্জ স্কেলে চালাবো আমরা এটা। ’

‘প্রথমে কি করবি? আমাকে শোনা। সব পেঁচিয়ে ফেলিস না। সুযোগ একটাই। আর স্যাক্রিফাইসটাও বিশাল। ভুল করা যাবে না।’ গম্ভীর কন্ঠেই বলে উজ্জ্বল।

‘চার বার আউড়াতে হবে হিব্রু শ্লোক। যেটা তোর পার্চমেন্টে লেখা ছিল। পরিষ্কারভাবে লেখা ছিল – আমিও মুখস্থ করেছি ঠোঁটের আগাতে এনে একেবারে। তারপর আছে মটরের দানা ছিটিয়ে দেওয়া। আড়াইশ গ্রাম মটর দানা এনেছি। লাশের শরীরের বাম হাতের কানি আঙুল জোগাড় করেছি – গোরখুঁড়েদের টাকা দিতে হইয়েছে যদিও। কালো মুরগীটা প্রস্তুত। আছে বাদুরের পা। আর তারপর আবারও হিব্রু শ্লোক আছে ছয়টা। ঠিকমত উচ্চারণ করতে হবে ওগুলোকেও। তারপর স্যাক্রিফাইস। ’

সন্তুষ্ট হয় উজ্জ্বল, ’সব  ঠিক আছে। শ্লোকগুলো মনে আছে তো?’

বড় করে নিঃশ্বাস নেয় স্নিগ্ধ, ’আছে। সব ঠিক আছে। ’

‘হুম। অপেক্ষা করছি আমরা ওর জন্য?’ ইঙ্গিত দেয় উজ্জ্বল।

ধরতে পারে স্নিগ্ধ, ’হুম, আর লাগবে হয়ত কয়েক মিনিট। চলে আসবে যেকোন সময়। আমি ভেবেছিলাম তুই বাঁধা দিবি আমাকে এই সিদ্ধান্তে। মহুয়া তোর স্কুল জীবনের বান্ধবী ছিল। আমার সাথে তো এই ইউনিভার্সিটিতে এসে পরিচয়। ’

একটু হাসে উজ্জ্বল, ’তারপর প্রেম। ’

‘হুঁ, প্রেম।’ উদাস হয়ে যায় স্নিগ্ধ, মনে পড়ছে মহুয়ার সাথে অন্তরঙ্গ মুহূর্তগুলো, ’অর্থহীন সব। একেবারেই অর্থহীন। এর চেয়ে ওই সময়গুলো আলকেমিতে লাগালে ভালো কাজে দিত। একটা রেজাল্ট পেতাম হয়ত নরটনের প্রসেস ধরেই!’

‘অলৌকিক শক্তির প্রভাব যদি আমাদের স্পর্শ না করে? সোনা যদি না পাই?’ বিড় বিড় করে বলে উজ্জ্বল।

রাম ঝাড়ি মারে ওকে স্নিগ্ধ, ’এখানে এসে পিছিয়ে যাবি? মোটেও না। আমরা এখানে আজ রাতেই সোনা বের করব। প্রথমে সোনা বানাব আমার আইফোনটাকে। ভাঙ্গা আইফোন। ’

চৌবাচ্চাটাতে তরলের মিশ্রণ টগবগ করে ফুটছে। সেদিকে তাকায় ওরা। প্রসেসের ধাপ গুলো ঠিকমত কাজে লাগাতে পারলে এখানে যা দেবে ওরা – তাই সোনা হয়ে ভেসে উঠবে। ওদের শুধু তুলে নিতে হবে।

আলকেমি। দারুণ একটা বিদ্যা।

ওপরে কোথাও একটা বেল বাজার শব্দ শুনতে পায় ওরা।

‘মহুয়া এসে গেছে। ’, ফিস ফিস করে বলে উজ্জ্বল।

‘আনছি ওকে আমি। ’, একবার ওর দিকে তাকিয়ে ছুটে যায় স্নিগ্ধ।

দরজা খুলতেই মহুয়াকে দেখতে পায় স্নিগ্ধ। চমৎকার লাগছে ওকে নীল রঙের ফতুয়া আর জিন্সে।

চুলগুলো ছেড়ে দিয়েছে। বড় বড় চোখ দুটোতে শুধুই ভালোবাসা। চোখ দুটো দেখছে স্নিগ্ধকে।

পরমুহূর্তেই জড়িয়ে ধরে মেয়েটা ওকে, ’ওহ! কতদিন পর তোমার সাথে ক্যাম্পাসের বাইরে দেখা। বল তো? কি না তুমি! গবেষণা শুধু!’

স্নিগ্ধের বুকে মুখ ডুবিয়ে ওর ঘ্রাণ নেয় মহুয়া। ওকে টেনে তোলে স্নিগ্ধ পরমুহূর্তেই।

‘চলো – দেখবে। ’

বাধ্য মেয়ের মত পিছু নেয় ওর মহুয়া, ’আজ যদি রেজাল্ট না পেয়েছ – পিট্টি দেব তোমাকে। বুঝেছ? গত কয়েক মাস ধরে আমার সাথে দেখা করার সময় পাও না এই গবেষণার জন্য। আজ দেখব কি এমন কাজ তোমরা কর। ’

ঠোঁট বাঁকা করে হাসে স্নিগ্ধ।

দেখবেই তো। মহুয়াই তো দেখবে। আর কে?

একেবারেই হঠাৎ মহুয়াকে ধরে নিজের দিকে ফেরায় স্নিগ্ধ। তারপর প্রচন্ড জোরে নিজের দুই আঙ্গুল ভরে দেয় মেয়েটার সুন্দর চোখ দুটোতে।

এর জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিল না মেয়েটা। সুন্দর বড় বড় চোখ দুটো থেকে পিচকিরির মত ছুটে বের হয়ে আসা সাদা আর লালচে তরলে মাখামাখি হয়ে যায় স্নিগ্ধের মুখ। ওই অবস্থাতেই টান দিয়ে আঙ্গুল দুটো বের করে ও মেয়েটার চোখে  থেকে। আর…

গলা ফাটিয়ে চিৎকার করতে শুরু করে মহুয়া প্রচন্ড যন্ত্রণাতে। কিছুই দেখতে পাচ্ছে না ও! গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়ছে তরল – সেটা টের পাচ্ছে। তবে চোখের পানি নয় সেগুলো।

অ্যাকুয়াস হিউমার বলে কিছু অবশিষ্ট নেই তো আর ওর। সব গেলে দিয়েছে নিষ্ঠুর স্নিগ্ধ।

দুই হাত চোখে চলে যাচ্ছে – এক হাতে হাত দুটো চেপে ধরে স্নিগ্ধ। অন্য হাতে আটকে ধরে মেয়েটার মুখ। একে চেঁচিয়ে পাড়া মাথায় তুলতে দেওয়া যাবে না।

শক্ত হাতে ওকে ধরে বেজমেন্টের দিকে নিয়ে যেতে থাকে স্নিগ্ধ। আজ রাতের মাঝেই ওর সোনা চাই। হাতের মাঝে ছটফট করতে থাকা মেয়েটার আর কি দাম ওর গবেষণা সফল না হলে?

রেজাল্ট চাই স্নিগ্ধের।

ল্যাবে ঢুকে ভারী দরজাটা বন্ধ করে দিয়ে এক পাশ থেকে লোহার দন্ডটা তুলে নেয় স্নিগ্ধ। কিছুই দেখতে পাচ্ছে না মহুয়া – তাই কোন প্রতিরক্ষা করতেই পারে না। কড়াৎ করে মেয়েটার বাম পায়ের ওপর আঘাত হানে স্নিগ্ধ লোহাটা দিয়ে।

পৈশাচিক একটা ক্রোধ অনুভব করে ও তারপর। এই মেয়েটা বার বার কাজের সময় ফোন দিয়েছে ওকে। সময় করেছে নষ্ট।

মহুয়ার যন্ত্রণাতে কাঁপতে থাকা মাথার ওপর সজোরে চালিয়ে দেয় ও লোহার দন্ডটা। মাথা রক্তে ভেসে যাচ্ছে – মেঝেতে পড়ে যায় মেয়েটা।

হাতের রডটা তুলে রাখে স্নিগ্ধ। এটাকে ও কাজে লাগাবে। পরে। এটাকে চৌবাচ্চাতে রেখে দিলেই লোহা থেকে এটাও হবে সোনা।

উজ্জ্বল শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। অজ্ঞান মেয়েটার দিকে তাকিয়ে আছে এক দৃষ্টে। তাকে পাশ কাটিয়ে চৌবাচ্চার সামনে আসে স্নিগ্ধ।

মুখ থেকে অনবরত বের হচ্ছে হিব্রু শ্লোকের গুরুগম্ভীর ধ্বনী। ছোট্ট ঘরটা গম গম করে ওঠে ওর গলার শব্দে।

চারবার উচ্চারণ করে মটরের দানাগুলো ছুঁড়ে দেয় ও চৌবাচ্চাতে। ফুঁসে ওঠে ওগুলো ওখানে পড়েই।

তারপর দ্বিধা ছাড়াই মানুষের কাটা একটা আঙ্গুল তুলে ছুঁড়ে দেয় ও চৌবাচ্চাতে। শ্লোকের আবৃত্তি চলছেই।

আরেকবার ফুঁসে ওঠে চৌবাচ্চাটা।

ওখানে মুরগীটাকে ধরে এনে নির্বিকার হয়ে জবাই করে দেয় ও পাশ থেকে ছুরিটা এনে। তারপর মুরগীর দেহটা ছুড়ে ফেলে।

ছয়বার আবারও শ্লোক উচ্চারণ করে তুলে নেয় বাদুরের পা। তারপর সেটাকেও চৌবাচ্চার গভীরে পৌঁছে দেয় ও।

চৌবাচ্চাটা যেন ফুলে ফেঁপে উঠছে। মেয়েটের কাঁধের নিচে হাত আটকে শরীরটাকে তুলে আনে চৌবাচ্চার কিনারে। গুঙিয়ে ওঠে মহুয়া। বেঁচে আছে এখনও।

চেহারাতে সেই লাবণ্য আর নেই। এক হাত বাড়িয়ে আবার ছুড়িটা তুলে নেয় স্নিগ্ধ। মহুয়ার গলাটা ঠেসে রেখেছে চৌবাচ্চার একপাশের বেড়ায়।

মুখে হিব্রু শ্লোকের আবৃত্তির বিরাম নেই।

আস্তে করে মেয়েটার গলার নিচে ছুরিটা ধরে চালিয়ে দেয় ও – ছড় ছড় করে রক্ত ছুটে পড়ে চৌবাচ্চাতে। সেই সাথে প্রাণপণে হাত পা ছুড়ছে মহুয়া। চেষ্টা করছে আরেকবার নিঃশ্বাস নেওয়ার।

পারে না।

কন্ঠনালী নেই তো।

কেটে দিয়েছে স্নিগ্ধ।

এবার এক ধাক্কা দিয়ে মহুয়ার শরীরটাকে ফেলে দেয় ও এসিডের দ্রবণে। জ্বলে যেতে থাকে মেয়েটার শরীর। সেই সাথে অবিরাম হাত পা ছুড়ছে এখনও মেয়েটা।

যন্ত্রণা!

তবে অনেকটাই নিস্তেজ হয়ে এসেছে ও।

কপালের ঘাম মুছে স্নিগ্ধ।

হাসিমুখে ফিরে তাকায় উজ্জ্বলের দিকে, ’এবার একটা কিছু ফেল চৌবাচ্চাতে। সোনা হবেই। আলকেমি ভুল নয়। ভুল হতে পারে না। ’

এক পা এগিয়ে আসে উজ্জ্বল। একটা কিছু তো ফেলতেই হবে।

টেস্ট করা তো দরকার।

বুকের ঠিক মাঝখানে উজ্জলের প্রচন্ড ধাক্কাটা খেয়ে ছিটকে ফুটন্ত চৌবাচ্চার মাঝে পড়ার পরও তিন সেকেন্ড পেরিয়ে যায় স্নিগ্ধের বুঝতে –  চারপাশে আসলে কি হচ্ছে!

চিৎকার দেওয়ার চেষ্টা করতে চায় ও – কিন্তু কঙ্কালসার একটা হাত চেপে বসেছে ওর মুখের ওপর ততক্ষণে।

কে ওটা?

মহুয়া না?

 

পরিশিষ্ট

তালাটা আবার ঠিকমত লাগিয়ে বের হয়ে আসে উজ্জ্বল।

মহুয়াকে স্নিগ্ধ আগেই বলেছিল ওদের গবেষণাটা গোপনীয়। মহুয়া, উজ্জ্বল আর স্নিগ্ধ ছাড়া কেউ জানত না এটার কথা। কাজেই খুনের অপরাধে কেউ উজ্জ্বলকে খুঁজবে বলে মনে হয় না। চাবিটা ড্রেনে ফেলে দেয় ও আস্তে করে।

মহুয়াকে স্কুলজীবন থেকে ভালোবেসেও বন্ধুত্ব ছাড়া আর কিছু পায় নি ও। সেই মহুয়া  কি না গবেষণা-পাগল বলে খ্যাত স্নিগ্ধের প্রেমে পড়ে গেল? স্নিগ্ধও যদি মেয়েটাকে গুরুত্ব দিত – একটা কথা ছিল। কাজ-ই সব তার কাছে।

কোন অধিকার রাখে সে এরপরও মেয়েটাকে নিজের করে রাখার? বা ভাবার? ওদের একসাথে দেখতে বুকে কাঁটা বেঁধার মত যন্ত্রণা হত উজ্জ্বলের – তবুও কোনদিন কিছু বলেনি। প্রায় একবছর ধরে প্ল্যান করতে হয়েছে ওকে – চোখের সামনে থেকে দুই আপদকে সরিয়ে দিতে। একবছরের প্ল্যানিং সফল হয়েছে আজকে।

স্নিগ্ধকে সোনা বানানোর জন্য ক্ষেপিয়ে তোলার পর বাকি কাজ ছিল সহজ!

তবে পরাজয়ের গ্লানি মুছে যায় নি উজ্জ্বলের। ধীরে ধীরে সেটা বাড়ছে আরও।

গাল চুলকে নিজের মেসের দিকে হাঁটা দেয় ছেলেটা। আগামীকাল পরীক্ষা আছে।

*

সার্চ পার্টি যখন মহুয়ার দেহটা খুঁজে পেল – চৌবাচ্চার দিকে এগিয়ে আসার সাহস তাদের কারই হচ্ছিল না।

ঘরের মাঝে পাঁচজোড়া চোখ সেঁটে থাকে একটা প্রমাণ সাইজের পুরুষ মূর্তির দিকে।

চেঁচানোর ভঙ্গীতে চৌবাচ্চার মাঝে শুয়ে থাকা মূর্তিটি সোনার।

খাঁটি সোনার।

— ০ —

রচনাকাল – জুলাই ০২, ২০১৪ 

চতুরঙ্গ

আমার অফিশিয়াল ওয়েবসাইটে স্বাগতম!

সাপ্তাহিক চতুরঙ্গ ইনবক্সে পাওয়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন! এতে আপনি প্রতি সপ্তাহে পাচ্ছেন আমার বাছাইকৃত চার লেখা!

আপনার কাছে কোন স্প্যাম ইমেইল যাবে না। নিউজলেটার ইমেইল ইনবক্সে খুঁজে না পেলে স্প্যাম কিংবা প্রমোশনাল ফোল্ডার চেক করুন!

Check your inbox or spam folder to confirm your subscription.

ক্রাইম গল্প রহস্য সাসপেন্স

Post navigation

Previous post
Next post

কিশোর পাশা ইমন

১২টি ক্রাইম থৃলারের লেখক কিশোর পাশা ইমন রুয়েটের মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ছাত্র ছিলেন, এখন টেক্সাস ষ্টেট ইউনিভার্সিটি থেকে মাস্টার্স করেছেন মেকানিক্যাল অ্যান্ড ম্যানুফ্যাকচারিং ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে। বর্তমানে টেক্সাসের স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয় ইউটি ডালাসে মেকানিকাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পিএইচডির ছাত্র। ছোটগল্প, চিত্রনাট্য, ও উপন্যাস লিখে পাঠকপ্রিয়তা পেয়েছেন। তার লেখা প্রকাশিত হয় বাংলাদেশ ও ভারতের স্বনামধন্য প্রকাশনা সংস্থা থেকে। তার বইগুলো নিয়ে জানতে "প্রকাশিত বইসমূহ" মেনু ভিজিট করুন।

Related Posts

দ্য ফিফথ হেডফাইভ

Posted on October 24, 2023

আমার মত জীবন যাদের তাদের জন্য কোন কাকতালীয় ঘটনা নেই। কোন দুর্ঘটনা নেই।
যা হয় তার পেছনে সুনির্দিষ্ট কারণ থাকতে বাধ্য।

Read More

ক্যাথি

Posted on February 13, 2023

ফোনের অন্যপাশ থেকে টেলিফোন কাঁপানো হাসি দেন ফারুক চৌধুরী, ‘ছেলে জানে না – তবে এবার আমি নিজের আগ্রহেই ওকে দেশে টেনে আনছি কেন সেটা তোমাকে বলা যায়।’
ফোনের এপাশে চোখ টিপ দেন রাফিদ সাহেব, ’নির্ঘাত লাল টুকটুকে একটা বাঙালি বউ চাই তোমার?’ ওপাশে কাশির শব্দ শুনতেই দ্রুত কারেকশন দেন তিনি আবার, ’ছেলের জন্য আর কি!’
ফারুকের গলা থেকে আবারও টেলিফোন কাঁপানো হাসির শব্দ বের হয়, ’হাহাহাহা – একেবারে ঠিক ধরেছ। নাহলে দেখা যাবে বেলে মাছের মত চামড়ার কোন খ্রিস্টান মেয়ের সাথে ঝুলে গেছে। এই সমস্যা শুরু হওয়ার আগেই ঝেড়ে ফেলতে হবে। কি বল?’

Read More

সে ছিল

Posted on February 5, 2023

ডানাকাটা পরীটা এদিক ওদিক তাকায় বাসার ভেতর, ‘আন্টি নেই?’
‘ওহ -’ সম্বিত ফিরে পাই আমি, ‘ভেতরে আসুন। আম্মুকে ডেকে নিয়ে আসছি আমি।’
ওকে ড্রইং রুমে বসাচ্ছি, মিষ্টি করে হাসে ও, ‘আমাকে আপনি করে বলছেন কেন? আপনার চেয়ে দুই বছরের ছোট আমি।’
আমিও একটু হাসলাম, ‘আচ্ছা, আর বলব না।’

Read More

Leave a Reply Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

সর্বশেষ লেখাগুলো

  • ওয়ান ফর মাই সৌল
  • আমার যত প্রকাশক
  • কেপির সেরা লেখা কোনটি – জরিপ ২০২২
  • আন্ডারএইজের বই পড়া
  • অমুক পড়ে আসেন… সমস্যাবলী

Analytics

009435
Total Users : 9435
Total views : 23711
Who's Online : 1
Powered By WPS Visitor Counter
©2025 KP Imon | WordPress Theme by SuperbThemes