KP Imon

Words Crafted

শামান

এক

‘শামান পেলি কোথায় এই বাংলাদেশে?’ ফিস ফিস করে জানতে চায় বৃষ্টি।

ক্লাস চলছে। কলেজের সেকেন্ড ইয়ারের একটা মেয়ে ক্লাসের মাঝে এই কথাটা চিৎকার করে পাশের বন্ধুকে জিজ্ঞাসা করতে পারে না। তাই ফিস ফিস করাটা এখন বাধ্যতামুলক।

চোখের ওপর এসে পড়া চুলগুলোর ফাঁক দিয়ে তাকায় ইমরান, ‘লম্বা কাহিনী আছে। তবে ভাগ্য ভালো লোকটাকে পাওয়া গেছে।’

বৃষ্টির সুন্দর ভ্রু দুটো কুঁচকে যায়, ‘এই লোক কি বাংলাদেশী?’

ইমরানের চোখে রাগ দেখা যায় এবার, আজগুবী প্রশ্ন বান্ধবীর কাছ থেকে পাওয়ার আশা সে করেনি।

‘এই পোড়া দেশে দেশী শামান পাওয়াই কঠিন আর তুই এনেছিস বিদেশী শামানের ডিমান্ড? খোঁজগে যা! বের করে আন একটা শামান।’

আফজাল স্যার বোর্ড থেকে মুখ তুললেন এসময়। পুরো ক্লাসের দিকে একবার কড়া নজর বুলিয়ে দেন। কুঁকড়ে যায় ইমরান আর বৃষ্টি।

নির্ঘাত ওদের কথাবার্তার গুন গুন শব্দ চলে গেছে স্যারের কানে?

স্যার আবার বোর্ডের দিকে ঝুঁকতেই মুখ ঝামটা দেয় বৃষ্টি,’আমি বলি নি বিদেশী শামান লাগবে। কিন্তু এই বাংলাদেশে শামান পেয়েছিস নাকি ভন্ড? সে খেয়াল আগে রাখিস। শামানরা ছিল তুর্কি আর মঙ্গল আবিষ্কার। তা থেকে আমেরিকা আফ্রিকাতে ছড়িয়েছে জানি – তাই বলে বাংলাদেশে?’

শেষ শব্দটা দাঁতে দাঁত চেপে উচ্চারণ করে বৃষ্টি। এই দেশে শামান পাওয়া যাবে না এটাই জানে ও।

কাঁধ ঝাঁকায় ইমরান,’আগামীকাল কলেজ বাংক দিবি তাহলে তুই। আমার সাথে নরসিংদী যাবি। শামানকে দেখবি। তারপর বিশ্বাস না হলে আর কাওকে খুঁজব।’

সামনের খাতাতে দ্রুত তুলতে থাকে বৃষ্টি বোর্ডে করা ইন্ট্রিগেশন। তার মাঝেই বলে,’নরসিংদীর কোথায়?’

‘শিবপুর উপজেলাতে। বাঘাবা।’

‘বাঘাবা?’ চোখ কুঁচকে যায় বৃষ্টির নাম শুনেই।

অন্য দিকে তাকায় ইমরান,’জায়গার নাম। ওভাবে তাকাচ্ছিস কেন?’

‘চুপ করে থাক। তোর কথা বার্তাতে আমার মেজাজ গরম হচ্ছে। ক্লাস শেষে কথা বলব। দাঁড়াস। একসাথে যাবো।’

কাজেই ইমরান চুপ করে থাকে। তারপর আনমনে তাকায় একটু দূরের বেঞ্চটার দিকে।

জায়গাটা এখন খালি। ওখানে বসত রুদ্র। এখন কেউ বসে না।

রুদ্র কার অ্যাকসিডেন্টে মারা গেছে নয় দিন আগে।

দীর্ঘশ্বাস ফেলে আবার বোর্ডের দিকে তাকায় ইমরান। শালার ম্যাথ সাবজেক্টটা আবিষ্কার করেছিল কোন হতচ্ছাড়া?

*

এক কাঁধে ব্যাগটা ঝুলিয়ে ইমরানকে দৌড়ে ধরে বৃষ্টি।

‘বলেছিলাম না একসাথে যাবো? একা একা হাঁটা দিয়েছিস কেন? খুব লায়েক হয়েছিস?’

মাথা চুলকায় ইমরান,’না-লায়েক হয়েছি।’

‘ফালতু কথা রাখ। এবার বল শামানের উৎপত্তি কোথায়? বাঘাবার মত অজ পাড়াগাঁয়ে শামান আসবে কোথা থেকে? বাংলাদেশের ঐতিহ্য কিছু ওঝা আছে না – ওদের কাওকে ধরে এনে শামান বলে চালানোর ইচ্ছে বলে মনে হচ্ছে তোর।’

ওর দিকে সরাসরি তাকায় ইমরান,’বাঘাবা অজ পাড়াগাঁ – সেটাই বা কে বলল তোকে? চল না আগামীকাল। দেখতেই তো পাবি।’

কিছুক্ষণ চুপচাপ হাঁটে ওরা। তারপর চিন্তিত মুখে তাকায় বৃষ্টি,’আচ্ছা, আমাদের শামান কেন লাগবে? প্ল্যানচেট নিয়ে পড়াশোনা করতে বলেছিলাম। তুই সেসব বাদ দিয়ে শামানের দিকে ঝুঁকছি কেন? যদি পরে সব ভেস্তে ফেলে ওই ব্যাটা শামান? অথবা – যদি ব্যাটা ভন্ড হয়?’

দাঁড়িয়েই যায় এবার ইমরান,’শোন – আমার ওপর ভরসা রাখ – প্রতি পদে পদে বাঁধা দিচ্ছিস কেন? শামান পেয়েছি – এই খুশিতে তোর আমাকে চুমু খাওয়া উচিত! সেখানে উল্টাপাল্টা ধমকাচ্ছিস। আমার কিন্তু মেজাজ খারাপ হচ্ছে!’

বিড় বিড় করে বৃষ্টি,’বয়েই গেছে তোকে আমার চুমু খেতে!’

দূরের ইলেক্ট্রিক পোলের দিকে তাকায় ইমরান,’শামান আমাদের দরকার ছিল। ঠিক এটাই দরকার ছিল রে। ভাগ্যিস আমার কাজিনকে বলতে ও খুঁজে বের করে দিয়েছে। নরসিংদীতে থাকে ও নিজেও – জানত এদিকে একজন শামান থাকে। তবুও ঝাড়া তিনদিন খুঁজে তবেই পেয়েছে ও লোকটাকে। থাকে দুর্গম এক জায়গাতে।’

স্বভাবসুলভ প্রতিবাদ করে বৃষ্টি আবারও,’শামানের সুবিধাটা কি? থার্ড পার্টি ঢুকছে না? প্ল্যানচেটে আমাদের সাথে আর কারও নাক গলানোর দরকার হত না। তাছাড়া নিজেরা করলে বুঝতে পারতাম বিষয়টা।’

হাত উল্টে দেখে ইমরান, মেজাজ খারাপ হচ্ছে ওর আবারও,’আগেই বলেছিলাম বার বার একপ্যাচাল না পাড়তে! শামানরা হল আত্মাদের সাথে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপনকারী মানুষ। আমাদের আর আত্মিক জগতের মাঝে ওরা হল ব্রীজ। একজন শামান দুই জগতেই বিচরণ করতে পারেন – সেই সাথে বিভিন্ন ডাইমেনশনের জগতে চলে যেতে পারে তাঁর আত্মা। সরাসরি যোগাযোগ করতে পারে ওসব স্থানের অধিবাসীদের সাথে। ওরা রোগীকে সুস্থ করতে পারে, অন্য জগতের আত্মার সাথে যোগাযোগ করতে পারে, দুষ্ট আত্মাকে ধরে জোর করে কাজ করিয়ে নিতে পারে, ধ্বংস করে দিতে পারে অসুস্থ আত্মাদের। প্রচন্ড ক্ষমতাধর হয় একজন শামান। আর আমাদের কাজের জন্য একজন শামান-ই দরকার। প্ল্যানচেটে আর কতটুকু করা যাবে? এই দুই চারটা কথা বলা তো? শামান একটি আত্মাকে নিজের চোখে দেখে আসতে পারেন।’

ইমরানের বিশাল লেকচার শুনে মনে হয় কিছুটা হলেও প্রভাবিত হয় বৃষ্টি। এবার আর তর্ক করছে না।

পরের যে বাক্যটা ওর মুখ থেকে বের হয় – তাতে ইমরান সন্তুষ্ট না হয়ে পারে না।

‘একটা কাজ করব ভাবছি। আগামীকাল একেবারেই ভাগব ঢাকা থেকে। তিনদিনের জন্য নরসিংদী চলে যাবো। সাথে থাকবি তুই। তোর শামানকে ওখানে আমরা দেখব। তারপর যদি ব্যাটাকে কাজের বলে মনে হয় – তাহলে আমরা তাকে ভাড়া করব। ওখানেই আমাদের রিচুয়াল বা যাই বল এটাকে – শেষ করতে হবে। তারপর ফিরে আসব আমরা। একবারে সব কাজ শেষ করে।’

খুশিতে ইমরান এবার বৃষ্টির হাতে একটা ঘুষি বসিয়ে দেয়,’যাক – কাজের কথা বলেছিস এবং ভেবেছিস।’

বৃষ্টি অবশ্য চিন্তিত মুখে তাকিয়ে থাকে ইমরানের দিকে,’তোর কি মনে হয়? রুদ্রকে আবার পাবো আমরা? কথা বলা সম্ভব ওর সাথে?’

হাসিটা মুছে যায় ইমরানের মুখ থেকেও,’আমাদের চেষ্টা করে যেতেই হবে। ছেলেটাকে জানাতে হবে তো। নাহলে শান্তি পাবে না ও যেখানেই থাকুক। তাছাড়া – রুদ্রের হেল্প আমাদের লাগবে। শুধু নিজেদের জন্য তো আর না। মানবজাতির জন্য। ওকে ছাড়া হবে না।’

বিষন্ন কন্ঠে একমত হয় বৃষ্টি,’সেটা তো জানি। ভয় করছে আসলেই ইন্টারস্পিরিচুয়াল কানেকশন ঘটানো সম্ভব কি না সেটা ভেবে।’

বড় করে একবার নিঃশ্বাস নেয় ইমরান। কানেকশন ঘটাতে না পারলে যে সমূহ বিপদ সেটা ও জানে। একটা জায়গাতেই আটকে থাকতে হবে ওদের।

‘আমরা পারবো। শামান ব্যাটা ফেল মারলে আর কোন উপায় বের করে নেব।’ স্বান্তনা দেয় ও বৃষ্টিকে।

ওদিকে চমৎকার সাদা গাড়িটা চলে এসেছে। সেদিকে তাকায় বৃষ্টি,’আমার গাড়ি চলে এসেছে। বাসায় যাই রে। কাল পালাচ্ছি তোর সাথে।’

একটু হাসে ইমরান,’বাসায় চলে আসিস। সেখান থেকে সোজা নরসিংদী।’

মাথা ঝাঁকায় বৃষ্টি,’শামানের কাছে।’

বৃষ্টি গাড়িতে উঠে যেতে ঘুরে দাঁড়ায় ইমরান, কলেজ থেকে ওর বাসাটা বেশি দূরে না। বিড় বিড় করে বলে,’হুঁ – শামানের কাছে!’

দুই

ট্রেনের নির্ধারিত সীটে বসে বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে হাসে ইমরান।

রাগত চোখে ওর দিকে তাকায় বৃষ্টি।

‘হাসছিস যে?’

‘জীবনে সেকেন্ড ক্লাসে চড়েছিস কি না – ভেবে দেখলাম। সম্ভাব্যতা বলল, চড়িসনি। তাই হাসলাম। বেচারী তুই।’

জানালা পুরোপুরি খুলে দেয় বৃষ্টি,’উপপাদ্যটা প্রমাণ করার জন্য থার্ড ক্লাসে বা ফোর্থ ক্লাসে চড়তেও আমার আপত্তি নেই।’

‘হয়ে যাবে। একবার রুদ্রকে পেলেই আমাদের কাজ অর্ধেক শেষ। নাহলে নিজেদের ঘাঁটতে হবে আর কি।’

সুন্দর মুখটা ইমরানের দিকে ফেরায় বৃষ্টি এবার,’আমাদের গত ছয়মাসের খাটুনীর কথা মনে করে দেখ। ভালো জায়গাতে আটকেছি আমরা। এখান থেকে রুদ্র কিভাবে বের হল সেটা আমি জানি না। কিন্তু ওটা জানা দরকার।’

চিন্তাতে ডুবে যায় ইমরান।

নতুন একটা গাণিতিক উপপাদ্য নিয়ে কাজ করছিল ওরা। সেটা প্রমাণের চেষ্টা করছিল।

বিষয়টা টেনসর অ্যানালাইসিস সম্পর্কিত। টেনসর অ্যানালাইসিস দারুণ একটা জিনিস – আপেক্ষিকতা তত্ত্ব, ডিফারেন্সিয়াল জিওমেট্রি, বলবিদ্যা, স্থিতিস্থাপকতা, তড়িৎচৌম্বক থিওরিতে এর প্রয়োগ সম্ভব।

তিন মাত্রার জন্য বিষয়টা কাজ করে।

রুদ্র, ইমরান আর বৃষ্টি যা করছিল – সেটা চতুর্মাত্রিক জগতের জন্য। মাত্রা যদি চারটি হয়ে তাহলে টেনসর অ্যানালাইসিস কি ধরণের হতে পারে – সেটা। কো-অর্ডিনেট বের করার জন্য চতুর্থ মাত্রাটাকে সর্বজনীন ধরেই এগিয়ে যাচ্ছিল ওরা।

মাঝে ফেঁসে গেল।

এখানে ছয় মাস ধরে আটকে থাকাটা স্বাভাবিক। কলেজের পড়াশোনাই কম না – তারওপর তারা গবেষণা করছে হায়ার লেভেলের ম্যাথ নিয়ে। সময় তেমন পেত না – তবে যতটুকু পেয়েছে – পুরোপুরি কাজে লাগিয়েছে ওদিকে।

রুদ্র যেদিন হঠাৎ করে জানালো আটকে থাকা সমীকরনটা ভেদ করতে পারবে ও – সেদিন রাতেই ফিরে আসতে গিয়ে কার অ্যাকসিডেন্ট করে।

প্রিয় বন্ধুর মৃত্যুতে কষ্ট পেয়েছিল ওরা। তবে আরও বেশি হতাশ হয়েছিল হাতের কাছে এসেও উপপাদ্য প্রমাণের উপায়টা ফস্কে যাওয়াতে।

রুদ্র ওদের মাঝে সবচেয়ে ব্রাইট ছিল। ওরকম ভাবে চিন্তা করতে হয়ত বা আরও দুই-তিন বছর লেগে যাবে বৃষ্টি বা ইমরানের। কাজেই এখন শর্টকাট খুঁজছে ওরা।

ওদের তিনজনের মাঝে একটা মিল আছে – পুরো জীবনটাকেই হিসেবের আওতাতে ফেলে নিয়ে এসেছে ওরা।

এজন্যই কলেজে একত্র হয়ে গণিতের দিকে উৎসাহের সাথে ঝাঁপিয়ে পড়তে পেরেছে অনায়াসে।

আর চিন্তাধারার এই দিকটাই ওদের সাহায্য করছে প্রিয় বন্ধুর মৃত্যুতে শোকাতুর না হয়ে আরেকটা পদ্ধতি বের করে নিতে।

প্ল্যানচেটের চিন্তাই তারা করেছিল প্রথমে। পরে ও একজন শামান পেয়ে যাওয়াতে কাজটা হতে যাচ্ছে সহজ।

ভাবতে ভাবতে কখন চোখে ঘুম নেমে এসেছে ওর – খেয়ালও করেনি।

*

‘অ্যাই! ওঠ! ইমরান?’

কেউ ওর সিল্কি চুলগুলো ধরে টানছে – টের পেয়ে মেজাজ খাপ্পা হয়ে যায় ইমরানের। উঠে পড়ে ধরমর করে।

‘চলে এসেছি আমরা। পোটলা নিয়ে নেমে পড়! বদ পোলা। ঘুমাচ্ছিস একেবারে মরার মত!’

লাফিয়ে উঠে ব্যাগ নামিয়ে বৃষ্টির সাথে নেমে আসে ও প্লাটফর্মে।

একপাশ থেকে গলাটা শুনতে পায় ওরা,’ইমরান! চলে আসতে পেরেছ তাহলে?’

হাসিমুখে এগিয়ে আসে ওদের বয়েসী একটা ছেলে, তারপর বাড়িয়ে দেয় হাত,’তুমি নিশ্চয় বৃষ্টি? আমি ইমরানের কাজিন, তুর্য।’

একটু হেসে হাত মেলায় বৃষ্টি,’হোটেল আছে এখানে? থাকার ভালো জায়গা দরকার একটা।’

ওদিকে দুই কাজিন তখন একে অন্যকে জড়িয়ে ধরেছে।

‘বহুদিন পর তোর সাথে দেখা, তুর্য!’

‘তা তো হবেই। ভূতের গন্ধ না পেলে কি তুই আসবি আমাদের এই পোড়া শহরে?’

হাসে দুইজনই। হঠাৎ মনে পড়ে তুর্যের,’হোটেলে ওঠার কথা ভুলেও চিন্তা করবে না। আমাদের বাসাতে অনেকগুলো রুম আছে।’

বাঁধা দেয় ইমরান,’আমরা বাঘাবা যাবো। ওখানে তো আর হোটেলও থাকবে না – তোদের বাসাও থাকবে না। মনে কর তোদের বাসাতে আধঘণ্টা থেকেই বাঘাবার দিকে রওনা হতে হবে আমাদের।’

‘নো প্রবলেম! যাওয়ার সময় তোদের সাথে আমিও ঢাকাতে যাব। কাজ আছে।’ কাঁধ ঝাঁকায় তুর্য,’ভালো কথা – বৃষ্টির বাবা-মা আপত্তি করেনি এই অভিযানে?’

ঠোঁট উল্টে ফেলে মেয়েটা,’বলে এসেছি নাকি? ফিরে গিয়ে জানিয়ে দেব ছিলাম বয়ফ্রেন্ডের সাথে। মাম্মি আর কিছু বলবে না। দিন কি আর সে পার করেনি?’

হেসে ফেলে ওরা।

‘আংকেল আন্টি কেমন আছে?’ জানতে চায় ইমরান।

বাসার খবর দিতে থাকে তুর্য। একটা সিএনজি ঠিক করে ফেলে ওদের নিয়ে উঠে যায় ভেতরে।

*

বাঘাবা পৌঁছতে পৌঁছতে রাত হয়ে গেল।

ঘুটঘুটে কালো অন্ধকারে যখন ভুটভুটি নামক আজব বাহনটা ওদের নামিয়ে দিয়ে গেল – তখন রাস্তাগুলোতে নেমে এসেছে অদ্ভুত এক ছায়া।

একটা ল্যাম্পপোস্টেও লাইট নেই। তবে ল্যাম্পপোস্ট আর তাতে ঝুলে থাকা কারেন্টের তার দেখে কিছুটা স্বস্তি ওরা পায়।

অন্তত বিদ্যুতের সাপ্লাই আছে এখানে।

দোকানঘরগুলোতে টিমটিমে আলো জ্বলছে। তাছাড়া পুরো এলাকাটাই অন্ধকার।

এই প্রথমবারের মত বৃষ্টির মনে হতে থাকে – শামানের উপস্থিতি যদি বাংলাদেশে কোথাও থেকে থাকে – তাহলে এই বাঘাবাই হতে পারে সেই জায়গা।

কেমন যেন অদ্ভুত রকমের এক অশুভ ছায়া বিছিয়ে রাখা হয়েছে পুরো বাঘাবাতে। আধুনিক এই যুগেও এখানে দাঁড়িয়ে ওদের মনে হয় – মধ্যযুগের কোন এক চলচিত্রের দৃশ্যে ঢুকে গেছে ওরা।

ঘাড়ের পেছনে মৃদু টিংটং শব্দ শুনে ওরা ফিরে তাকায়, টানা-রিকশা নিয়ে একজন মানুষ দাঁড়িয়ে আছে।

ওদের জন্য আরও অবাক হওয়ার পালা। এই আমলে এরকম রিকশার প্রচলন কি এখনও আছে?

‘শহর থেকে এসেছেন?’ যথেষ্ট ভদ্রভাষাতে শব্দগুলো উচ্চারণ করে রিকশাওয়ালা।

মানুষটাকে অন্ধকারে দেখে মুখ বাঁকায় বৃষ্টি। রীতিমত ভয়ানক একটা চেহারা। চোখগুলো বড় বড়। কিন্তু কোন পাপড়ি নেই ওগুলোর ওপরে।

নাকটা বেকায়দা রকম ভেঙ্গে বাঁকিয়ে আছে একদিকে। কপালে ভালো রকম ভাঁজ পড়েছে। যেন তীব্র বিরক্তি নিয়ে লোকটা তাকিয়ে আছে ওদের দিকে।

সেই সাথে মাথার চুল – একগোছা চুল ছাড়া আর কিছু নেই মাথাতে।

একজন মানুষ কিছু জানতে চাইছে – তাকে তো উত্তর দেওয়া লাগে।

তুর্য মুখ খোলে,’জ্বি চাচা। ঢাকা থেকে এসেছে আমার বন্ধুরা।’

তুর্যের মাথাতে ঘুরছে অন্য চিন্তা। শামান মানুষটার ডেরা কোথায় জানতে পারলে ভালো হত।

এই লোক যেহেতু স্থানীয় – একেই প্রশ্নটা করা যেতে পারে।

কিন্তু কষ্ট করে প্রশ্নটা তুলতে হয় না আর তুর্যকে, রিকশাওয়ালাই জানতে চায়,’শব বাবাকে খুঁজছেন তো?’

‘প্রখ্যাত শামান যিনি?’ চট করে জানতে চায় বিস্মিত ইমরান।

‘যাক – আপনারা তাঁর আসল পরিচয় জানেন। এখানে বেশিরভাগ অশিক্ষিত লোক, মশাই। শামান কি তা জানে না। তবে শব বাবা বললে নিমেষে চিনে ফেলে। অদ্ভুত রকমের পাবলিক, ব্রাদার!’

টানা-রিকশাওয়ালার বাচনভঙ্গীও ওদের আশ্চর্য করে। কিছু একটার হিসেব মিলছে না মোটেও।

‘আমরা ওখানে যাবো – তা আপনি বুঝলেন কি করে?’ সন্দেহবাতিক বৃষ্টি প্রশ্নটা না করে পারে না।

হাসে রিকশাওয়ালা,’কারন – শহর থেকে এখানে যে কয়জন আসে – তারা ওখানেই যেতে চায়। গেলে চলুন, রিকশাতে করে পৌঁছে দোব।’

রিকশাওয়ালার কথাতে কেমন জানি কলকাতা এবং বাংলাদেশী – মিশ্র টান – অদ্ভুত রকমের মিষ্টি লাগে ওদের শুনতে।

একে অন্যের দিকে তাকায় ওরা। অচেনা মানুষ – রিকশা চালাচ্ছে আবার টানা। প্রস্তর যুগে ফিরে গেলেও একটা কথা ছিল – কথা বলছে আবার আধুনিক বাংলাতে!

‘এসেছি অ্যাডভেঞ্চারে। এত দেখলে হয়? চল উঠি।’ বৃষ্টিই লাফিয়ে উঠে বসে ওপরে।

রিকশাটা অনেকটা চওড়া। পেছনের দিকে লম্বা কিছু একটা র‍্যাপিং করা – মাল পত্র কিছু হবে হয়ত।

ওটার ওপর বসে পড়ে তুর্য আরাম করে। ইমরানও বসে তুর্যের পাশে।

রিকশা চলতে শুরু করে। টেনে নিয়ে যাচ্ছে টানা-রিকশাওয়ালা।

একবার ফিরে তাকায়,’লাশের মুখের ওপর বসবেন না, দাদাবাবুরা। ভচকে যাবে। বুকেই বসুন।’

‘ল-লাশ?’ চমকে নিজেদের পশ্চাদ্দেশ যেখানে ঠেকেছে – সেই র‍্যাপিং করা বস্তুটার দিকে তাকায় ওরা।

‘আজ্ঞে হ্যাঁ। শব বাবার জন্য যাচ্ছে। শক্ত হয়ে বসুন, দাদা – রাস্তা ভালো না।’

মুখ টিপে হাসে বৃষ্টি। আর শুকনো মুখে বৃষ্টির পাশে চলে আসে ওরা দুইজন। লাশ থেকে নেমে গেছে।

বিরক্ত হয় বৃষ্টি,’কোলে এসে বসছিস কেন? দেব এক থাপ্পড়! তিনজনের জায়গা হয় এখানে? যা একজন লাশের কাছে!’

নড়ে না  ইমরান।

বৃষ্টির কোলে বসতে রাজি – কিন্তু লাশের কোলে ফিরে যাওয়ার ইচ্ছে ওর নেই।

কিছুক্ষণ পর প্রায় ভাঙ্গা একটা কুটির চোখে পড়ে ওর।

সামনে অপেক্ষা করছে এক দঙ্গল লোক।

শব-বাবার আস্তানা।

শামান!

তিন

ধীরে ধীরে জনতাকে পাশ কাটায় টানা-রিকশাওয়ালা। তাকে দেখে অনেকে দাঁড়িয়ে যায়।

যারা দাঁড়ায় নি তখনও – লাফিয়ে উঠে খেয়াল করতেই।

সবাই অধোমুখে দাঁড়িয়ে আছে দেখে মাথা নাড়ে রিকশাওয়ালা মানুষটা।

‘নির্বোধ সব শালারা। দাঁড়িয়ে সম্মান দেখানোর কিছু নেই। দেখাতে চাইলে সেটা আমাদের চারপাশে বিচরণ করতে থাকা জ্ঞানী আত্মাদের দেখানো উচিত!’

অবাক হয়ে ওর দিকে তাকায় ইমরান।

বেশিক্ষণ পারে না – বৃষ্টি ওকে কোল থেকে সরানোর জন্য ঠেলাঠেলি লাগিয়েছে এরই মাঝে।

‘আপনারা দূর থেকে কষ্ট করে এসেছেন – লাইনে দাঁড়াবার দরকার নেইকো। আমার সাথে সাথে চলে আসুন।’

আস্তে করে ওর পাশে নেমে আসে ইমরান। হাঁফ ছাড়ার মত শব্দ করে বৃষ্টি।

‘আপনিই শামান?’ হাত বাড়িয়ে দেয় ইমরান,’আমি ইমরান। আপনার খোঁজ দিয়েছে কাজিন তুর্য। আর ও আমার বান্ধবী বৃষ্টি।’

হাত মেলায় শামান ইমরানের সাথে। ইমরানের অদ্ভুত একটা অনুভূতি হল। কেউ যেন ওকে টেনে তুলে নিয়ে যাচ্ছে শুন্যে – ওপরে নিয়ে যাচ্ছে ওকে। ঠান্ডা – সব ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে!

দ্রুত হাত ছেড়ে দেয় শামান, নিজের পরিচয় দেয় নি হাত মেলালেও। সম্ভবতঃ নামটি নিজেই বিস্মৃত হয়েছে।

“শব-বাবা” বা “শামান. পরিচয়টাতেই হয়ত এখন মানুষটা অভ্যস্ত।

‘ভেতরে চলুন।’, হাসিমুখে বলে শামান,’রুদ্র!’

ভীষণভাবে চমকে ওঠে ইমরান আর বৃষ্টি। রুদ্রকে ডাকছেন কেন শামান?

বৃষ্টি তার অবিশ্বাসী চেতনা খুঁজে পাচ্ছে না অনেকক্ষণ ধরেই। প্রথমতঃ শামান মানুষটার জানার কথা না ওরা এখানে এসেছে তারই কাছে। অথচ এখানে নামার তিন মিনিটের মাথায় শামান তাদের কাছে টানা রিকশা নিয়ে পৌঁছে গেছে।

আগে থেকে না জানলে সম্ভব ছিল না সেটা কোনভাবেই।

ব্যাখ্যা খুঁজতে এখানে অবশ্য আসে নি ওরা। এসেছে ব্যাখ্যাতীত কিছু অভিজ্ঞতা অর্জন করতে। সেই সাথে টেনসর অ্যানালাইসিস সলভ করতে।

তবে ওদের নিরাশ হতে হয়। কুটিরের ভেতর থেকে ওদের মৃত বন্ধু রুদ্র বের হয়ে আসে না। বরং বের হয়ে আসে অতিকায় স্বাস্থ্যের একজন লোক।

ওদের দিকে তাকিয়ে মৃদু হাসে শামান,’ঘাবড়াবেন না। আপনাদের মৃত বন্ধুর সাথে আমার শিষ্যের নাম মিলে গেছে। আমার ফুট-ফরমাস খাটে এই রুদ্রই। চলুন ভেতরে। রুদ্র লাশটা নামিয়ে নেবে।’

আগে থেকে শামান কিভাবে সব জেনে ফেলে তা নিয়ে আর চমকায় না ওরা। গায়ে সয়ে গেছে!

শামানের সাথে ওদের আগে আগে ঢুকে যেতে দেখে এতক্ষণ লাইনে অপেক্ষা করতে থাকা লোকগুলোর নাক-মুখ হিংসাতে কুঁচকে উঠে।

সেদিকে মোটেও ইন্দ্রীয়ের মনোযোগ না দিয়ে ভেতরে ঢুকে যায় ওরা।

ওরা ঢুকতেই চমকে ওঠে – কুটিরের মাঝখানটা খুবই সাধারণ। মেঝেতে খড় বেছানো। আর কিছুই নেই – চারধারে চারটা মোমবাতিকে বাদ দিলে।

একজন অতিক্ষমতাধর শামান একেবারেই ফকিরের মত আছেন এটা ওদের আশ্চর্যান্বিত করে না। বরং এটাই স্বাভাবিক।

তবে চমকে ওঠার কারণ হল মেঝেতে শুয়ে থাকা লাশটা।

অন্তত তিনদিনের পুরোনো একটা লাশ। হাল্কা হাল্কা পচা গন্ধ বের হয়ে আসছে ওটা থেকে।

ঘরের অন্য কোণে দাঁড়িয়ে পড়ে ওরা।

ভৃত্য রুদ্র ঢুকে পড়ে পরের মুহূর্তেই, চ্যাংদোলা করে পুরোনো পচা লাশটা বের করে নিতে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে ওরা।

তবে স্বস্তি টেকে না বেশিক্ষণ। নতুন একটা লাশ নিয়ে ফিরে আসে লোকটা। নির্ঘাত এই লাশটাই এসেছে ওদের সাথে রিকশাতে!

দড়াম করে ফেলে দেয় ওটাকে আগের লাশের জায়গাতে।

শামান এবার দুই পা তুলে আরাম করে পদ্মাসনে বসে পড়লেন লাশটার ওপর।

তারপর কোমরের কাছ থেকে একটা সিগারেট বের করলেন। ঘরের এক পাশ থেকে একটা মোমবাতি নিয়ে এগিয়ে আসে রুদ্র। লোকটা প্রকান্ড। তার শরীরের ছায়াতেই সব অন্ধকার হয়ে আসে।

শামান আলতো করে সিগারেটে আগুন ধরিয়ে তাকালেন ওদের দিকে।

‘লাশের ওপর বসতেই হয় আমাকে। যার লাশ তার আত্মা আমাকে সব সময় রাখে আপডেটেড। অনেকটা ইন্টারনেট কানেকশনের মত।’ ব্যাখ্যা দেন তিনি।

সরু চোখে তাকায় ইমরান,’লাশ তো পচে যাওয়ার আগেই পাল্টে ফেলেন দেখলাম। এত লাশ পান কোথায়?’

জবাবে উত্তর না দিয়ে রহস্যময় একটা হাসি দেন শামান। চুপ হয়ে যায় ইমরান তা দেখে।

‘রুদ্র – আপনাদের সহপাঠি। তার সাথে আমাকে যোগাযোগ করতে হবে। তাই তো? জানতে চাইতে হবে তার শেষ চিন্তা কি ছিল?’

গড় গড় করে সব বলে দিচ্ছেন শামান – চোখ কপালে উঠে যায় ওদের। কপালে চোখ থাকা অবস্থাতেই এক হাত তোলে ইমরান।

‘শেষ চিন্তা না ঠিক। আমাদের উপপাদ্য নিয়ে তার চিন্তা।’

‘বেশ তো। দক্ষিণার ব্যাপারে তাহলে আপনাদের জানাই আমি?’ ভারিক্কি চালে বলেন শামান।

‘বলেন, প্লিজ।’ মানিব্যাগ হাতে নিয়ে প্রশ্ন করে ইমরান।

‘আত্মার সাথে যোগাযোগ – দশ হাজার টাকা প্রতি আত্মা।’ পাশ থেকে গমগমে স্বরে বলে রুদ্র।

মানিব্যাগ পকেটে ঢুকে যায় ইমরানের। ছয়হাজার ক্রস করলে টাকাটা দেবে বৃষ্টি – কথা হয়েই আছে।

বৃষ্টি ভ্যানিটিব্যাগ খালি করে দশ হাজার দেয় তখনই।

টাকা পেয়ে শামানের মুখের হাসিখুশি ভাব আরও বেড়ে যায়।

চট করে একটা ছুরি বের করে ফেলে লোকটা। আৎকে ওঠে বৃষ্টি।

তবে ওদের দিকে না – ছুরিটা সজোরে গাঁথিয়ে দেন তিনি বসে থাকা লাশটার শরীরেই।

তারপর আঙুলের ডগা থেকে রক্ত নিয়ে নিজের কপালে ঠেকান। চোখ বন্ধ হয়ে আছে।

নিঃশ্বাস নিতেও ভুলে যায় ওরা।

শামান দুলছেন। সেই সাথে দুলছে তাঁর চার কোণের মোমবাতিতে উৎপন্ন চারটি ছায়া। ঘরের প্রতিটি দেওয়ালে শুধু দুলন্ত শামান!

ইমরানের মনে হয় গোটা ঘরটাই দুলতে শুরু করেছে। শামানের ঠোঁটদুটো চেপে বসেছে একে অন্যের সাথে।

তবুও কোথা থেকে জানি মৃদু একটা গুঞ্জন শুনতে পায় ও – কেউ মন্ত্র পড়ছে?

বৃষ্টি খপ করে ওর হাত চেপে ধরলে ও বুঝতে পার – একই অনুভূতি হচ্ছে মেয়েটারও।

তুর্যের দিকেও আড়চোখে তাকায় ইমরান, ছেলেটার চোখ মুখ ফ্যাকাসে হয়ে গেছে একেবারে।

শামান দুলতে দুলতে কেঁপে গেলেন একেবারে। তারপর আস্তে করে শুয়ে পড়লেন মাটিতে।

থর থর করে কাঁপছে শামানের শরীর। সেই সাথে গ্যাজলা বের হতে শুরু করে মানুষটার মুখ থেকে।

হতভম্ব হয়ে একে অন্যের দিকে তাকায় ওরা। শামানের কি সাহায্যের প্রয়োজন?

শামান-ভৃত্য রুদ্র ঘরের এক কোণেই বসে আছে। ওদের দিকে তাকিয়ে মাথা নাড়ে হাল্কা।

অর্থ সম্ভবতঃ “কিছু করার প্রয়োজন নেই। অপেক্ষা করুন।”

শামান মানুষটা তড়পে উঠছেন। চার হাত-পা ছুটছে তাঁর মেঝের দিকে – যন্ত্রণাতে মুচড়ে মুচড়ে উঠছে শামানের শরীর।

তারপর একেবারেই হঠাৎ চিত হয়ে থাকা শরীরটা উল্টে গেল। তড়পানির পরিমাণ বাড়ছে।

ঘরের মাঝে গুঞ্জনের শব্দ বেড়ে গেল অনেক। কেঁপে কেঁপে উঠছে ঘরটা।

অশুভ একটা শক্তি যেন দুই হাতে  ধরে ঝাঁকি দিচ্ছে ছোট্ট ঘরটাকে!

‘ঠাস’ জাতীয় শব্দের সাথে কড়িকাঠের একটা বর্গাতে ফাটল ধরে ছাতে।

লাফিয়ে উঠে দাঁড়ায় ওরা। ঘরটা ভেঙ্গে পড়বে না তো?

সাথে সাথে সব কিছু স্বাভাবিক হয়ে যায়। ঘামে ভেজা শরীর নিয়ে উঠে বসেন শামান।

‘প্রতিশোধপরায়ণ আত্মা। খুন করা হয়েছে রুদ্রকে। নিজের খুনীর মৃত্যু দেখতে চায় ও। দুঃখিত, ইমরান, তবে উপপাদ্য নিয়ে তার আগে কথা বলানো যাবে বলে মনে হয় না একে দিয়ে।’

চার

‘খুন?’ চমকে ওঠে ওরা।

প্রতিবাদও করে ইমরান,’না, গাড়ি অ্যাকসিডেন্টে মারা গেছে রুদ্র। ব্রেক ফেল। নিজে ড্রাইভ করছিল। অ্যাকসিডেন্ট। ওর সাথে আর কেউ ছিল না।’

চোখ বন্ধ করে দম নেন শামান।

কৈফিয়ত দেন,’আত্মাদের জগতে বিচরণ করাটা বেশ পরিশ্রমের কাজ। তবে আমি ভুল শুনিনি। আত্মারা আমাদের থেকে বেশি জানে, ইমরান। খুন হয়েছিল রুদ্র।’

‘খুনীর নাম কি সে বলেছে?’ জানতে চায় বৃষ্টি।

হাসে শামান,’নিশ্চয়। তার চাচাতো ভাই জামিল। আর বৃষ্টি, তোমার ওপরও রুদ্র রেগে আছে। কোন কারণে।’

ফ্যাকাসে হয়ে যায় বৃষ্টির মুখটা,’অ্যাকসিডেন্টের আগে আমাদের ঝগড়া হয়েছিল, শামান। রুদ্র ছিল আমার বয়ফ্রেন্ড।’

*

ফোন দিয়ে নিশ্চিত হয়েছে ইমরান, আসলেই জামিল বলে একজন চাচাতো ভাই আছে রুদ্রের।

মানে, ছিল।

ছেলেটা তাকে দেখতে পারত না কেন সেটা এখন বুঝে উঠতে পারছে না। কোন কারণে তাদের মনোমালিন্য ছিল – এতটুকু বলতে পারে রুদ্রের বড় ভাই তিয়াস।

মানুষটা এমনিতেই ভাই হারানোর বেদনাতে মুষড়ে আছে – ইমরান ফোনে আর বেশি কথা বলে না। পকেটে নিয়ে ফিরে আসে আবার কুটিরে।

‘কথা সত্য। জামিলের সাথে  ঝামেলা ছিল ওর। প্রতিশোধ না নিলে রুদ্র মুখ খুলবে না বলেছেন তো?’ জানতে চায় ইমরান আবারও।

মাথা ঝাঁকান শামান,’ছেলেটা বলেছে, খুনের বদলে খুন।’

বৃষ্টির গলাটা এবার কেঁপে ওঠে,’কিন্তু কিভাবে? আমরা এখানে কেউ-ই খুনী নই।’

তুর্য ঠান্ডা আছে এখনও, শামানের দিকে ঝুঁকে যায় ও,’আপনি ওদের সাহায্য করতে পারবেন?’

‘খুন? ও তো খুবই সহজ কাজ। এখানে বসেই করতে পারব। তবে দক্ষিণা লাগবে।’ শর্ত জুড়ে দেন শামান।

একে অন্যের দিকে তাকায় ওরা। খুন করতে শামানের শক্তি কি তারা ব্যবহার করতে চায়?

আসলেই কি তাতে পৃথিবীর বুকে ওদের থেকে অনেক দূরে থাকা একটা মানুষ খুন হয়ে যাবে?

এতে কি পরে ওদের অনুশোচনা হবে?

রুদ্র কি আসলেই খুন হয়েছিল?

খুন না হলে কিভাবে শামান রুদ্রের একজন কাজিনের নাম ঠিক ঠিক ভাবে বলতে পারলেন – যার সাথে তার আগে থেকেই ঝামেলা ছিল?

এসব প্রশ্ন ওদের মাথাতে ঘুর ঘুর করছে।

মৃদু হাসেন শামান,’দ্বিধা থাকলে থাকুক। আর দক্ষিণাটা এবার অর্থের না। শামানদের ব্যাপারে কতটুকু জানেন আপনারা? আমাদের কাজের ধারার ব্যাপারে? বসুন, বসে পড়ুন।’

বসে পড়ে ওরা।

‘আমরা, শামানরা যখন একটা ডেস্ট্রাকশন চালাই – তখন আমাদের অন্য কোন জীবন্ত বস্তু থেকে ধার নিতে হয় জীবনীশক্তি।’

‘আরেকটু স্পষ্ট করে বলবেন কি?’ ইমরান বিড় বিড় করে বলে।

‘মানে, আপনাদের দক্ষিণা দিতে হবে আপনাদের আয়ু থেকে কিছু অংশ। যদি একটা হত্যাকান্ড চালাতে চান – আমাকে অবশ্যই আরেকটি জীবিত বস্তু থেকে আয়ু নিতে হবে। শক্তির নিত্যতা সূত্র তো পড়েছেন?’

‘আপনিও দেখছি রীতিমত লেখা পড়া জানা মানুষ। এখানে পড়ে আছেন কেন?’ প্রশ্নটা না করে পারে না এবার ইমরান।

‘সভ্য জগত আমাকে দূরে ঠেলে দেবে। শামানিজম আমার প্যাশন, ফ্রেন্ড।’ হাল্কা হাসেন শামান।

অধৈর্য্য হয়ে ওঠে বৃষ্টি,’এখন কাজের কথায় আশা যাক। আমাদের আয়ু নেবেন মানে?’

গম্ভীর মুখে তাকায় শামান,’মানে তো সহজ। আপনারা যখন মারা যাওয়ার কথা – তার আগে মারা যাবেন।’

‘কয় বছর? কয় বছর আয়ু চান আপনি?’ শুকিয়ে যাওয়া গলা নিয়ে বলে ইমরান।

‘কয়েক দিন। এত চমকে ওঠার মত কিছু না। হাল্কা আর কি। আর আপনারা তিনজন আয়ু দিলে সেটা ভাগ হয়ে যাবে তিনভাগে। আরও কম করে যাবে একেকজনের আয়ু।’

‘তুর্য এখানে আয়ু দেবে না। শুধু আমাদের দুইজনের।’

রেগে ওঠে তুর্য,’আমিও দেব। এসেছি না একসাথে? তুই চুপ করে থাক।’

দীর্ঘশ্বাস ফেলেন শামান,’সেক্ষেত্রে আপনাদের হয়ত এক বা দুইদিন আয়ু কমবে। সবার জন্যই তেমন ব্যাপার না। তাই না?’

একটু ভেবে একমত হয় সবাই।

‘শুধু রুদ্রের খুনী যেন প্রাণ নিয়ে না যায়, শামান। ওটা দেখবেন।’ গড় গড় করে ওঠে ইমরান।

ওর ইচ্ছে করছে নিজ হাতেই জামিল ব্যাটাকে খুন করে আসতে। ব্রেক নিশ্চয় কেটে রেখেছিল। রাস্তায় বের হওয়ার পর পুরোটা গেছে। আর তাতেই মৃত্যু হয়েছে বেচারা রুদ্রের।

আর ওরা আটকে আছে টেনসর অ্যানালাইসিসস নিয়ে!

শালার ব্যাটা!

‘তা যাবে না। তবে কিছু যোগাড় যন্ত্র আছে। একটা লাশ দরকার।’ ঠান্ডা গলাতে বলেন শামান।

‘স্বাভাবিক।’ মাথা দোলায় ইমরান,’তবে লাশটা তো হতে হবে বদ আত্মার। সেটা পাবো কোথায়?’

‘কবরস্থান আছে এদিকে একটা। নুরু মুচি মারা গেছে দিন দুয়েক হল। ব্যাটা অন্যের জমি কেড়ে নিয়ে দশ বছর থেকেছে। আত্মা পংকিল। ওর লাশেই কাজ হবে।’

‘মুচির হাতে জামিলের মৃত্যু – খারাপ না।’ বিড় বিড় করে বলে ইমরান,’আয় তোরা। লাশ চুরি করতে হবে।’

পাঁচ

‘স্বাভাবিক?’ রাগে গড় গড় করে বলে বৃষ্টি,’শামান বলে দিল লাশ লাগবে আর তুই বলে দিলি স্বাভাবিক? বারগেইন করা যেত না? লাশ ছাড়া পারবে না সে কাজটা করতে?’

অন্ধকারে হেঁটে যাচ্ছে ওরা। কবরস্থানের লোকেশন শামান জানিয়ে দিয়েছেন। জানিয়েছেন কবরের লোকেশনও।

নির্দ্বিধায় সেদিকে রওনা দিয়েছে ওরা।

বৃষ্টির কথা শুনে একটু হাসে ইমরান।

‘শামানিজম নিয়ে তোর আরও পড়াশুনা করা উচিত ছিল। তাহলেই এসব আজগুবী কথা বলতি না। শামানরা মৃতকে তার আত্মা ফেরত দিতে পারেন কিছু সময়ের জন্য। মৃতকে করতে পারেন জীবিত। আমাদের এই শামানের সত্যতা সম্পর্কে আমাদের কারই এখন সন্দেহ নেই। কাজেই ইনিও সেটা করতে পারবেন। তবে প্রতিশোধ যদি নিতেই হয়ে তাঁকে – তাহলে অবশ্যই একটা দুষ্ট আত্মা আর তার শরীর লাগবে। শুধু প্রতিশোধের জন্য না। যেকোন কাজ করিয়ে নেওয়া যায় এই বদ আত্মা দিয়ে।’

তুর্য এখানে প্রশ্ন করে,’কেন, দুষ্ট আত্মা কেন?’

‘শামান আর ভুডুদের মাঝে পার্থক্য এখানেই, বস।’ জানায় ইমরান,’ভুডুরা আত্মা নিয়ে অনেক কিছু করতে পারে – তবে তারা আত্মার বিচারে ভালো আত্মা – খারাপ আত্মা দেখে না। যেটা দিয়ে ইচ্ছে কার্যউদ্ধার করে। শামানরা যথেষ্ট ভালো। তারা ঘাঁটে শুধু মন্দ আত্মাদের। ব্যবহার করে মন্দ আত্মাগুলোকেই। তাদের দিয়েই ওরা বিভিন্ন কাজ করিয়ে নেয়। ভুলেও ভালো আত্মাদের নিয়ে ঘাঁটাঘাটি করে না তারা।’

‘হুম, লোক ভালো।’ মাথা ঝাঁকায় তুর্য,’ভালো কথা – রুদ্রের আত্মা বৃষ্টির ওপর ক্ষেপে আছে কেন?’

হাত নাড়ে বৃষ্টি,’ওটা আমিও বুঝলাম না। আমার ভালো লাগত রুদ্রকে। ভালো লাগে ইমরানকেও। সেটা রুদ্র নিজেও জানত। রাগ করে থাকার মত তো না।’

‘বাদ দে।’ বলে ইমরান।

যদিও ছেলে হিসেবে রুদ্রের রাগের কারণটা বুঝতে পারছে। ওর সাথে রিলেশন থাকা অবস্থাতে কয়েকবার বিছানাতে গেছে ইমরান বৃষ্টির সাথে। তবে ইমরান এতে খারাপ কিছু দেখেনি।

আফটার অল – অন্যের গার্লফ্রেন্ডকে ফ্রিতে পাওয়া গেলে কোন ছেলে আপত্তি করতে পারে?

তবে বিষয়টা রুদ্রের গায়ে লাগার কথা।

ভাবনাকে থামায় ও ওখানেই,’কবরস্থানে এসে গেছি।’

মাথা ঝাঁকিয়ে ভেতরে ঢুকে পড়ে বাকি দুইজন।  শামানের কাছ থেকে ধার করে আনা শাবল আর বেলচা গুলো ওদের হাতে দুলছে ঘন ঘন।

নিজের শাবলটা শক্ত করে চেপে ধরে সামনে চলে যায় ও নিজেও।

টর্চের আলোতেই এতক্ষণ পথ চলেছে – তবে এই মুহূর্তে মনে হচ্ছে ওই আলো মোটেও অন্ধকার কাটতে পারছে না এখানে। কবরের সারি চলে গেছে দুইপাশে। গ্রামে মানুষজন তেমন দেখেনি ওরা।

তবে মরার বেলাতে এরা আছে!

একেবারে সাফ হয়ে গেছে নাকি? নাহলে এত কবর আসল কোথা থেকে?

বেশিক্ষণ গবেষণা করে না অবশ্য ওরা। মুচির কবরটা পেয়ে যেতেই খোঁড়া শুরু করে দেয়।

বৃষ্টিকে দাঁড় করিয়ে রেখে ওরা দুইজন খুঁড়ছে। সোৎসাহে একবার বৃষ্টি এগিয়ে এলেও আরেকটু হলেই ইমরানের পা কেটে ফেলেছিল ও শাবল মেরে! তারপর তাকে আবার দূরে দাঁড় করানো হয়েছে।

শান্তিতে দাঁড়াতে পেরেই হয়ত প্রশ্নটা আসে ওর মাথাতে।

‘আচ্ছা, তাহলে এই লাশটাকে তার আত্মার সাথে যোগাযোগ ঘটিয়ে শামান আত্মাটাকে বশে আনবে? তারপর তাকে লেলিয়ে দেবে জামিলের ওপর?’

কপাল থেকে ঘাম মুছে ইমরান,’ঠিক তাই। এভাবেই কাজ করে শামান। আর শুধু এসবই করে তাও না, ভালো কাজও – যেমন রোগীকে সুস্থ করতে পারে। আত্মা দিয়ে অনেক কিছুই করা যায়। তবে এই প্রতিশোধের মত ব্যাপার আসলে আমাদের আয়ু নিতে হবেই তাকে। কারণ, সে যদি না জানে কার আয়ু যাচ্ছে – তাহলে ফাঁক থেকে যাওয়ার সম্ভাবনা। কিছু করতে হলে অবশ্যই লিভিং পার্টস নিতে হবে। এটা অনেকটা রিসোর্সের মত। সব বুঝেই মেনে নিয়েছি আমি।’

‘এহ হে! আমি মনে হয় শালার পায়ে বেলচা লাগিয়েছি। থলথলে হয়ে আছে লাশটা মরে ফুলে!’  বিরক্তির সাথে বলে তুর্য।

‘দুইদিনের মরা। থলথলে তো হয়ে থাকার কথা না।’ মাথা নাড়ে ইমরান। দ্রুত সরাচ্ছে মাটি।

আরেকটু সরাতেই মরদেহটাকে পাওয়া গেল। শক্ত হয়ে আছে চামড়া আর মাংস। মোটেও থলথলে না।

‘পা ধর। আমি কাঁধ ধরছি। টেনে তোল।’ তুর্যকে বলে ইমরান।

বৃষ্টি চকচকে চোখে তাকিয়ে দেখে লাশটাকে। টেনে তুলছে ইমরান আর তুর্য।

একেবারেই হঠাৎ চেঁচিয়ে ওঠে মেয়েটা।

থমকে গেছে ইমরান আর তুর্যও। কোন রকম আগাম সংকেত না দিয়ে চোখ মেলেছে মুচি। তারপর ওদের হাত থেকে নিজেকে মুক্ত করে উঠে দাঁড়ায়।

চোখের সামনে মরদেহটা উঠে দাঁড়াতে দেখে তীব্র আতঙ্কে থমকে যায় ওরা।

নুরু মুচি হাঁটছে। থপ থপ শব্দ হচ্ছে কবরস্থানের মাঝে। কোনদিকে না তাকিয়ে সরলরেখা ধরে হেঁটে যাচ্ছে লাশটা।

লক্ষ্য ওরা সবাই বোঝে।

শামানের কুটির!

কাঁধ ঝাঁকিয়ে ফলো করে ওরাও। লাশ যেখানে যাবে ওদের গন্তব্যও তো সেখানে!

*

নতুন পাওয়া লাশটার ওপর আয়েশ করে বসেছেন শামান। কুটিরে ঢুকেই দড়াম করে পড়ে গেছে মরদেহটা।

আর তাতে চড়ে বসতে বেশ আরামই লাগার কথা শামানের।

‘কাজ শুরু হয়ে গেছে। কিছুক্ষণের মাঝেই মারা পড়বে জামিল ছেলেটা।’ গম্ভীর মুখে জানান শামান।

হা করে তাকিয়ে থাকে ইমরান,’এত দ্রুত?’

‘অবশ্যই। আর কত সময় লাগার কথা? আত্মাদের গতি আলোর থেকেও বেশি হয়। শুধু নিজের করে নেওয়া। এই মুচি -’ আঙুল দিয়ে খোঁচা দেন শামান লাশের গায়ে,’এখন আমার।’

মৃদু কেঁপে ওঠে ঘরটা।

‘আপনাদের কাজ আমি করে দিয়েছি। আয়ু কমার জন্য দুঃখ পাবেন না। স্বার্থ তো উদ্ধার হচ্ছে। তাই না?’ চকচকে হাসি দেন শামান।

‘তারপর আপনাকে আরেকবার যোগাযোগ করতে হবে রুদ্রের সাথে। উপপাদ্যের প্রমাণটুকু জেনে ফিরতে হবে।’ অসহিষ্ণু কন্ঠে বলে ইমরান,’আরও দশ হাজার পাবেন।’

মধুর হাসি দেন শামান ছেলেটার ব্যগ্রতা দেখে।

‘আগে আরেকটা কাজ করে আসুন। আমার শিষ্য রুদ্রের সাথে যাবেন গিয়ে দেখুন পেছনের ঘরে একটা আলমারী আছে। ওতে থাকা কলসীতে তিনজনই হাত ধুয়ে আসুন। পরে কাজে দেবে।’

বিশালদেহী রুদ্রের পেছন পেছন হেঁটে যায় ওরা।

কুটিরের পেছন দিকে যে আরেকটা ঘর আছে – এই প্রথম টের পায় ওরা।

ঘরের এক প্রান্তে আছে একটা সিঁড়ি। মাটির নীচে নেমে গেছে ওটা।

ধীরে ধীরে রুদ্রের সাথে নেমে আসে ওরাও।

অন্ধকার ঘরটাতে দাঁড়িয়ে চারপাশে তাকায় বৃষ্টি, এখানে কলসি কোথায়?

শামানের কোন ধরণের চাল?

মৃদু কন্ঠ ভেসে আসে শামানের আচমকাই,’প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী আপনাদের আয়ু নিতে হল আমাকে। নাহলে জামিলের হত্যাকান্ড সম্ভব না। দুঃখিত।’

ঘুরে ঘুরে কোথাও দেখে না ওরা শামানকে। নিশ্চয় লাশের ওপর বসেই এই কথা বলেছে লোকটা!

ওদিকে শামান-ভৃত্য রুদ্রের হাতে বেড়িয়ে এসেছে চকচকে ছুরিটা। ওদিকে তাকিয়ে ঢোক গেলে ইমরান।

এই বিশাল লোকটার সাথে পারবে কেন ওরা?

মরিয়া হয়ে চেঁচিয়ে ওঠে বৃষ্টি,’আপনি বলেছিলেন – দুই-একদিন কমবে আমাদের আয়ু। আমরা তিনজন দিয়েছি আপনাকে আমাদের আয়ু। খুবই সামান্য কমার কথা না?’

জবাব আসে না।

ছুরি চালিয়েছে রুদ্র দুই হাতে। কিছুক্ষণের মাঝেই ঘরটা ঘরঘরে একটা শব্দে ভরে যায়।

তিনজন পূর্ণবয়স্ক মানুষ জবাই হয়ে পড়ে থাকলেই শুধু তাদের কেটে যাওয়া শ্বাসনালী থেকে এরকম শব্দ হতে পারে।

শেষ মুহূর্তে বুঝতে পেরেছিল ইমরান, শামান এত লাশ পান কোথা থেকে!

পরিশিষ্ট

দুইদিন পর।

স্টেশনের মাত্র তিন মাইল দূরে দাঁড়িয়ে আছেন শামান।

ট্রেনটা উল্টে পড়ে আছে ওখানে। চারপাশে ধোঁয়া। আগুন লেগে গেছে বগিগুলোতে।

খালি চোখে দেখে শামান যা বুঝলেন – ঢাকাগামী এই ট্রেনটাতে অন্তত শ’দুয়েক মানুষ মারা গেছে। আহতদের আর্তনাদ শোনা যাচ্ছে এখনও।

কাঁধ ঝাঁকিয়ে ফিরে তাকান তিনি।

প্রকৃতি কেন ঠিক মুহূর্তেই চেয়েছিল ওদের মৃত্যু সেটা এখন বুঝেছেন।

প্রকৃতির হিসেব ভুল হয় না।

এই ট্রেনে করেই ফেরার কথা ছিল ওদের। আয়ু দুই দিন কমে যাওয়াতে বাঘাবাতেই মরতে হবে তাদের – এতে আর আশ্চর্যের কি?

প্রতারক ছিল মানুষগুলো। মেয়েটি ঠকিয়েছিল বয়ফ্রেন্ডকে। ছেলেটি বেস্ট ফ্রেন্ডকে।

আত্মাগুলো ভালো নয়। মন্দ।

বেশ কাজে দেবে ওরা।

আলতো একটা হাসি ফোটে শামানের মুখে।

— ০ —

চতুরঙ্গ

আমার অফিশিয়াল ওয়েবসাইটে স্বাগতম!

সাপ্তাহিক চতুরঙ্গ ইনবক্সে পাওয়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন! এতে আপনি প্রতি সপ্তাহে পাচ্ছেন আমার বাছাইকৃত চার লেখা!

আপনার কাছে কোন স্প্যাম ইমেইল যাবে না। নিউজলেটার ইমেইল ইনবক্সে খুঁজে না পেলে স্প্যাম কিংবা প্রমোশনাল ফোল্ডার চেক করুন!

কিশোর পাশা ইমন

Website: http://kpwrites.link

১২টি ক্রাইম থৃলারের লেখক কিশোর পাশা ইমন রুয়েটের মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ছাত্র ছিলেন, এখন টেক্সাস ষ্টেট ইউনিভার্সিটি থেকে মাস্টার্স করেছেন মেকানিক্যাল অ্যান্ড ম্যানুফ্যাকচারিং ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে। বর্তমানে টেক্সাসের স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয় ইউটি ডালাসে মেকানিকাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পিএইচডির ছাত্র। ছোটগল্প, চিত্রনাট্য, ও উপন্যাস লিখে পাঠকপ্রিয়তা পেয়েছেন। তার লেখা প্রকাশিত হয় বাংলাদেশ ও ভারতের স্বনামধন্য প্রকাশনা সংস্থা থেকে। তার বইগুলো নিয়ে জানতে "প্রকাশিত বইসমূহ" মেনু ভিজিট করুন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *