Skip to content
KP Imon
KP Imon

Words Crafted

  • গুহামুখ
  • সূচিপত্র
  • গল্প
    • রম্য
    • জীবনধর্মী থৃলার
    • সাইকোলজিক্যাল
    • রোমান্টিক
    • ক্রাইম
    • সাসপেন্স
    • জীবনধর্মী
  • নন-ফিকশন
    • থট প্রসেস
    • উচ্চশিক্ষা
    • আমেরিকা-নামা
    • জীবনোন্নয়ন
    • তাত্ত্বিক আলোচনা
    • ডায়েরি
  • প্রকাশিত বইসমূহ
    • প্রকাশিত বইসমূহ
    • যেসব গল্প সংকলনে আছে আমার গল্প
KP Imon
KP Imon

Words Crafted

আলোগুলো দূরে সরে যায়

Posted on October 13, 2022

বুকের ভেতর তীব্র একটা ব্যাথা হচ্ছে। যন্ত্রণাটা শারীরিক নয়।

নিজেকে কিছুক্ষণের জন্য হারিয়ে ফেলতে হবে আমাকে। তিন টান দিতে না দিতেই হাতের সিগারেটটা অর্ধেক হয়ে গেছে।
ধোঁয়া কি আসলেই ভেতরের আগুন নেভাতে পারে? পারে না।
এই মুহূর্তে ধোঁয়াতে কাজ দেবে না। প্রয়োজন হারিয়ে যাওয়া।

মন খারাপ থাকাটা শুধুই একটি স্বাভাবিক মানসিক ব্যাপার হতে পারে – কিন্তু ফেলে দেওয়ার মত নয় তা।
রাস্তায় নেমে আসলাম।
হাত তুলতেই ওপাশ থেকে আসতে থাকা ব্যাটারিচালিত অটোটা থেমে গেল।

‘মামা, সিগারেটে সমস্যা হবে?’ অটোচালককে প্রশ্ন করি হাতের সিগারেটটা দেখিয়ে। কারও অসুবিধে আমার জন্য হবে সেটা চাই না।
‘না, মামা। সামনে বসেন।’ নিজের পাশের একচিলতে জায়গাটা দেখিয়ে দেয় অটোড্রাইভার।
কাজেই চট করে বসে পড়লাম।

এমনটা না যে কোথাও যাচ্ছি আমি। এটা শুধুই ছুটতে থাকা। অটো আমাকে যেখানে নিয়ে যাবে – আমিও সেখানে যাব।
সিগারেটে আরেকটা টান দেই। ভাবছি, ফুসফুসের আয়তন কত হতে পারে আমার?
হিসেবটা একেবারে অ্যাকুরেটলি করা সহজ না। তবুও আয়তন বরাবর ধোঁয়া ভেতরে স্টোর করে রাখতে পারলে হত! বার বার টানাটানির ঝামেলাতেই আর যেতে হতো না তখন। চিরন্তন পিনিক।

‘মামা, এটা কি সিগারেট?’ অটোওয়ালা জানতে চেল কৌতুহলী গলায়।
‘ব্ল্যাক।’ নিরুত্তাপ গলায় জবাব দেই আমি। এখন কথা বলতে ভালো লাগছে না।
‘শেষের দিকে একটু দিয়েন। টেস্ট করতাম।’ সামনের রাস্তায় নজর রেখে বলে অটোড্রাইভার।
‘আচ্ছা।’

রাজি তো হলাম – কিন্তু মনের যে অবস্থা – আমারই হবে না এই এক ব্ল্যাকে। আরও কয়েকটা ব্ল্যাক নিয়ে ওঠা দরকার ছিল।
অটোড্রাইভারের মুখে বিমল একটা হাসি দেখা যাচ্ছে। আবিষ্কারের আনন্দ তার চোখে। নতুন অনুভূতি আবিষ্কার করার সুযোগ পেলে মানুষের আনন্দ হয় – এই একটা কারণেই হয়ত পৃথিবীর বুকে এই প্রাণিটা এত উন্নত!

গতি কমে যেতে থাকে আমাদের। ধীরে ধীরে থেমেই গেল!
সামনের দিকে তাকিয়ে কারণটা বুঝতে পারলাম। একজন হুজুর হাত নাড়াচ্ছিলেন অটোটাকে থামার ইশারা দিয়ে।
অটো থামার সাথে সাথে হুজুর লাফিয়ে উঠে গেলেন ভেতরে।

হুজুরশ্রেণীর মানুষ দেখলেই আমার ভেতর একটা পবিত্র অনুভূতি কাজ করে। অন্য দিন হলে হয়ত সিগারেটটা ফেলেই দিতাম। কিন্তু আজকের কথা আলাদা।
আজ বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট এখানে উপস্থিত হলেও আমি ধোঁয়া ছাড়ব।
গলগল করে।

আরেকটা টান দিয়ে অটোড্রাইভারের দিকে বাড়িয়ে দেই অবশিষ্টাংশ।
‘ধন্যবাদ ভাই।’ একটু হেসে আগ্রহের সাথে তুলে নেয় অটোওয়ালা সিগারেটটা।
একটান দিয়ে আমার দিকে আয়নার ভেতর দিয়ে একটা মৃদু হাসি দিল আমার উদ্দেশ্যে। অর্থাৎ সিগারেটটা ভালো লেগেছে তার।

‘সিগারেটটা ফেলে দাও।’ পেছন থেকে গুরুগম্ভীর গলাতে হুজুর শরীফ বললেন।
‘দেই ভাই।’ আশাভঙ্গের বেদনা চোখে মুখে নিয়ে উত্তর দিল অটোওয়ালা।
দ্রুত আরেকটান দিয়ে সিগারেটটা বাইরের দিকে ফেলে দেয় মানুষটা। চোখমুখ কালো হয়ে আছে।

রাজশাহীর মানুষ এতটা ধূমপানের বিরুদ্ধে সচেতন হল কি করে?
পেছনে অতি মিষ্টি একটা গলা আস্তে করে এসময় বলে, ‘মামা, অটো থামান।’
বাতাসে বেলীফুলের তীব্রগন্ধ পাই আমি সেই সাথে।

অটো থামলো। মাতাল করা গন্ধ বাতাসে ছড়াতে ছড়াতে নেমে পড়লেন আন্টিও। হাত বাড়িয়ে ভাড়াটা এগিয়ে দেন অটোওয়ালার দিকে।
সবার কার্যকলাপই দেখি আমি।
কি সুন্দর জীবনের ব্যস্ততার আড়ালে নিজেদের সব অনুভূতি লুকিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে প্রত্যেকে!
আমার আর এগুতে ভালো লাগে না।

‘আরেকটু রাখেন। আমিও নামব।’ বলে অটো স্টার্ট দেওয়া থেকে বিরত রাখি মামাকে।
ভাড়া চুকিয়ে দিয়ে কাছের সিগারেটের দোকানটা খুঁজে বের করলাম। খেতে দিল কই অটোতে?

ভদ্রার মোড়টা দূরে নয় বেশি।
সেদিকে এগিয়ে যেতে থাকি। আমার তো আজ আর ব্যস্ততা নেই কোন। শুধু হারিয়ে যাওয়া।
বাতাসে বুক ভরে নিঃশ্বাস নেওয়ার পরিবর্তে সিগারেট স্টিক থেকে বুক ভরে ধোঁয়া নেওয়া।

অন্যপাশ থেকে আসতে থাকা রিকশাটার ভেতর চোখ পড়ে। ছেলেমেয়ে দুটো পাগলের মত একে অন্যকে চুমু খাচ্ছে।
পৃথিবীর আর কোন দিকে ওদের নজর নেই।
চোখ সরিয়ে নেই। এসব অনুভূতির আর কোন মূল্য নেই আমার কাছে।

ভদ্রার মোড়ের পরেই রেইলক্রসিং। বাতাসে ধোঁয়া শুধু আমি-ই ছাড়ি না।
ট্রেনেরা এই কাজটা করে। কম আর বেশি।
আস্তে করে লাইনের পাশে এসে দাঁড়ালাম। মোবাইল বের করে সময় দেখে মনটা খুশি হয়ে উঠল।
এরপরের ট্রেনটা বেশিক্ষণ পরে না। কয়েক মিনিট পর যাবে এদিক দিয়েই।

চুপচাপ দাঁড়িয়ে সিগারেট টানছি।
এই সময় মেয়েটাকে চোখে পড়ল। এদিকেই আসছে।
খুব সুন্দর করে সেজেছে। মাথা ভর্তি রেশমী চুলগুলো ঝিলিক দিচ্ছে সূর্যের আলোতে।

ফতুয়াটা এসে শেষ হয়ে গেছে কনুইয়ের দুই ইঞ্চি ওপরেই। জিন্সের প্যান্টের সাথে চমৎকার মানিয়েছে ওকে।
রাস্তার ওপাশে থেমে যায় মেয়েটা। আমার দিকে একবার একটু তাকায়।
আমি আরেকবার মোবাইলটা বের করে ঘড়ি দেখি। ট্রেনটা কেন দেরী করছে কে জানে!

এভাবে এর আগেও কয়েকবার এখানে এসে ব্যর্থ হয়ে ফিরে গেছি আমি। কিন্তু সেসব দিনগুলোতে ট্রেন দেরী করেনি। দেরী করেছি আমি। আজ একেবারে সময়মত করতে হবে সব কিছু।
ট্রেনটাকে দেখা যাচ্ছে। বড় করে দম নেই আমি।
ওপাশের মেয়েটার দিকে চোখ পড়তে অবাক হই। সেও বড় করে নিঃশ্বাস নিচ্ছে! সমস্যা কি এই মেয়ের?
উদ্দেশ্য একই নাকি?
মেয়েটার আঙ্গুলের দিকে তাকালাম। খালি!

এবার আমার দিকেও চোখ পড়ে মেয়েটার। বিস্মিত একটা দৃষ্টি ওর মুখেও ফুটে ওঠে।
ওদিকে চোখ না দিয়ে ট্রেনের দিকে তাকালাম। আর মাত্র কয়েক সেকেন্ড।
চোখের কোণে একটা নড়াচড়া দেখতে পেতেই সামনে তাকিয়ে অবাক হই – মেয়েটা ঝড়ের বেগে রেইললাইন পার হচ্ছে।
ট্রেনের ড্রাইভার পাগলের মত হুইসল বাজাতে শুরু করে। কিন্তু অনেক এগিয়ে আছে মেয়ে। লাইন পার হয়ে যায় নিরাপদেই।

আমার পাশে চলে আসতে আসতে ট্রেনটা এসে গেল। একেবারে নিঁখুত সময় টোকা মেরে সিগারেটটা চাকা বরাবর ছুঁড়ে দেই।
এতদিন না হলেও আজ কাজ হয়েছে। কোন এক চাকার মাঝে ঢুকে যেতেই আগুনের ফুলঝুড়ি চারপাশে ছিটকে যায় চারপাশে। মনে হতে থাকে ট্রেনের একপাশে আগুন ধরে গেছে!
অদ্ভুত সেই সৌন্দর্যের দিকে তাকিয়ে আছি – ট্রেনটা ঝড়ের বেগে পাশ দিয়ে চলে যায়।
পেছন থেকে ওটার দিকে তাকিয়ে থাকি আমি। কি আশ্চর্য! আজ আমাকে সৌন্দর্যটা স্পর্শ করে না!

‘পেয়েছেনটা কি?’ মেয়েকন্ঠের চিৎকারে ঘুরে তাকাতে বাধ্য হই। সেই মেয়েটা।
‘কিছু হয়েছে কি?’ যথাসম্ভব বিনম্র কন্ঠস্বরে পালটা জানতে চাইলাম।
‘লাফ দিলেন না যে?’ দ্বিগুণ বিরক্তির সাথে বলল মেয়েটা।
হতভম্ভ হয়ে তার দিকে তাকিয়ে থাকি শুধু। এই মেয়ে পাগল নাকি?

‘আপনাকে থামাতে নিজের প্ল্যান মাটি করে চলে এসেছি এদিকে আর আপনার … উফফ! এখন যে কি করি! আরও তিন ঘন্টা!’ ঘুরে দাঁড়ায় মেয়েটা।
কিছু কিছু তো বুঝলাম। আমি সিগারেট চাকায় ফেলব তেমনটা ভাবেনি মেয়েটা। ভেবেছিল আত্মহত্যা করতে চেয়েছি।
কিন্তু সেটা না করায় এত রেগে গেল কেন?

মেয়েটা একটু দূরে একটা গাছের নিচে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে।
একটা কুকুর হা করে তাকিয়ে থাকে ওর দিকে। আর আমিও আমার শেষ ক্লুটা পেয়ে যাই।
আর তিন ঘন্টা পর আরেকটা ট্রেন আছে।

তাহলে এই ব্যাপার? চোরের মন পুলিশ পুলিশ?
নিজে ট্রেনের তলাতে ঝাঁপ দিতে এসেছে সেজন্য আমার ব্যাপারেও একই ধারণা?
ভালো তো।

ঘাড়ের কাছ থেকে আবার শুনতে পেলাম, ‘শুনুন?’
ফিরে তাকাই। মেয়েটা ফিরে এসেছে।
‘জ্বী, বলুন?’ শুধু এটুকুই বলি।
মাথা ঝোঁকায় মেয়েটা, ‘একটু আগের ব্যাবহারের জন্য আমি দুঃখিত। আসলে আমার মাথা ঠিক নেই।’

ধীরে সুস্থে আরেকটা সিগারেট ধরালাম আমি। আমার দিকে এবার কটমট করে তাকালো মেয়েটা।
নিশ্চয় সিগারেটের ধোঁয়া সহ্য করতে পারে না?
‘ট্রেনের নিচে লাফানোর জন্য ট্রেন ধরতে এসেও মিস করলে মাথা ঠিক না থাকারই কথা।’ অবশেষে বললাম, ‘ভাববেন না। তিন ঘন্টা পর আরেকটা ট্রেন তো আছে। ওটার নিচে লাফ দেবেন।’
মুখ ঝামটে ওঠে মেয়েটা, ‘এখন আর মরতে ইচ্ছে করছে না! সব আপনার দোষ!’
‘আমি আবার কি করলাম?’ অবাক হয়ে যাই আমি।
‘আত্মহত্যা না করেও সেরকম ভয় দেখালেন কেন? মাঝ থেকে আমার প্ল্যান গড়বড় করে দিলেন!’
‘আহ হা!’ দুঃখ এবং বিরক্তি – একই সাথে প্রকাশ করি আমি, ‘তিনটা ঘন্টার জন্য দাঁপাচ্ছেন কেন?’
‘মরার সাহসটা চলে গেছে।’ আবার মাথা নামায় মেয়েটা।

আমি মেয়েটার ওপর থেকে চোখ সরাতে পারি না। কে জানি বলেছিল, ইরানী মেয়েরা অনেক সুন্দর হয় দেখতে। শোনা কথাতে কান দিয়েছি। আমার অবশ্য এত ক্যাড়া ওঠে নি যে গুগলে সার্চ করে দেখতে হবে আসলেই ইরানী মেয়েদের চেহারা কেমন হয়!
তবে এই মেয়ে ইরানী মেয়েদের ছাড়িয়ে যাবে সন্দেহ নেই।

‘মরার সাহস চলে গেলে বেঁচে থাকুন। অযথা ভাবার তো কিছু নেই।’ স্বান্তনা দিলাম একটু।
‘কাকে নিয়ে বাঁচব?’ হতাশ কন্ঠে বলে মেয়েটা।

এর জরুরী ভিত্তিতে ট্রিটমেন্ট প্রয়োজন। কাজেই বললাম, ‘চলুন, হাঁটি।’
মেয়েটা একবাক্যে রাজি হয়ে গেল। আমাকেও একই পথের পথিক ধরে নিয়েছে। কাজেই হাঁটতে বাঁধা কোথায়?
‘আমি লিয়া।’ হাঁটতে হাঁটতেই বলল ও।
‘শোভন।’ পরিচয় দিলাম এতক্ষণে।

কিছুক্ষণ দুইজনই চুপচাপ।
রেইললাইন ধরে হাঁটছি আমরা। কিন্তু একটু আগে এখানেই কোথাও পড়ে থাকার কথা ছিল লিয়ার শরীরটা। দ্বিখন্ডিত অবস্থায়!

‘গার্লফ্রেন্ড ছেড়ে চলে গেছে?’ চট করে জানতে চায় মেয়েটা।

মেয়েদের স্পর্ধা দেখ! ছেলেরা কেবল যদি ‘কিসে পড়েন?’ জানতে চায় অপরিচিত মেয়েকে – তাহলেই নেমে আসে কেয়ামত। আর আমাকে সরাসরি ব্যক্তিগত প্রশ্ন করছে!
তবে কড়া করে কিছু বলাটা অভদ্রতা হয়ে যায়। একটু হাসলাম শুধু লিয়ার দিকে তাকিয়ে।

‘মেয়েটার কি বিয়ে হয়ে গেছে?’
চুপ করে থাকি আমি লিয়ার এ প্রশ্নে।
‘ও ব্যাপারে কথা বলতে চান না?’ আবার জানতে চায় মেয়েটা। ভারী অসভ্য তো!

‘আচ্ছা। বলতে না চাইলে নেই। আমিও ছ্যাঁকা খাই নি। তবে দিয়েছি।’ আগ বাড়িয়ে নিজের ব্যাপারে বলতে থাকে লিয়া।
‘তাই বুঝি ট্রেন খুঁজছিলেন?’ একটু হাসি এবার আমি।
‘না – আসলে – ছেলেটা ছিল একটা বাস্টার্ড! আমাকে ঠকাচ্ছিল। বুঝে ফেলায় ওকে তাড়িয়ে দিয়েছি। কিন্তু কি যে হয় আমার ওকে ছাড়া! উফফ!’

এই মেয়ের উফফ বলার মুদ্রাদোষ আমার কানটাকে রক্ষা দেবে না আর – পরিষ্কার বুঝতে পারলাম।
‘তাড়িয়ে বেশ করেছেন। এখন নিজেকে তাড়াতে চাইছেন কেন? নয়টা নাকি আপনার জীবন?’ একটু শ্লেষের সাথেই বললাম এবার।
‘একটাই তো!’ অবাক হয়ে আমার দিকে তাকায় লিয়া।
‘তাহলে সেটার কদর তো করতে শিখবেন। অন্তত নিজেকে বেড়াল ভাবতে যাবেন না।’
‘আমি নিজেকে বেড়াল ভাবি?’ কটমটে দৃষ্টিটা ফিরে আসে আবার লিয়ার চোখে। তার মাঝেই টুক করে আরেকটা টান দেই আমি সিগারেটে।
‘বেড়ালদের নয়টা জীবন থাকে।’ জানালাম বিশেষ-অজ্ঞ রাগত তরুণীকে।

মেয়েটার হাতের দিকে চোখ পড়তে অনেক কষ্টে নিজেকে সামলে নেই।
কারও হাত এখন আমার জন্য সবচেয়ে হীলিং থেরাপি হতে পারে। কারণ খুব একা এই মুহূর্তে আমি পৃথিবীতে। তাছাড়া মেয়েটার হাত বেশ আকর্ষণীয়। দেখলেই ধরতে ইচ্ছে করে।
আমার বদ নিয়ত ভাগ্যিস চোখে পড়েনি মেয়েটার। আপনমনে বকে যাচ্ছে ও।

‘আমি বাসা থেকে পালিয়ে যেতে চেয়েছিলাম ওর সাথে – জানেন? মা অনেক কষ্ট পেত – জানি। তবুও।’
এবার ওর দিকে তাকাই, ‘নিজের মার থেকে বয়ফ্রেন্ডকে ওপরে স্থান দিয়েছেন দেখছি!’
‘কষ্টই তো পেত মা একটু। মরে তো আর যেত না। কিন্তু ইমরানকে না পেলে আমি ঠিক মরে যাব।’

ইমরান! ইমরান কি? হাশমী নিশ্চয়?
তাহলে তো কাজ হয়েই গেছে। লিয়াকে ঠকাবে না তো কি? ছেলের যা চরিত্র!
এবারেও আমি একটু হাসলাম শুধু।

রেগে ওঠে লিয়া, ‘দাঁত যে কেলাচ্ছেন বড়? আমার কষ্টের কথা শুনতে খুব ভালো লাগছে – তাই না? নিজে তো আছেন মহাসুখে!’
‘বেশ মানুষ চিনতে শিখেছেন দেখছি!’ আনমনে বলে ম্যাচ বের করলাম। আরেকটা সিগারেট ধরাতে হবে।
‘আমার সামনে একের পর এক সিগারেট টেনে চলেছেন যে? একটা মেয়ের সামনে সিগারেট টানতে আপনার লজ্জা করে না?’ এবার আর কটমট করে তাকানো না – সরাসরি বলেই ফেলে মেয়েটা।
‘আমার সব বান্ধবীই সিগারেট খায়। সিগারেটের দিকে ছেলে-মেয়ে দেখি না আমরা।’ জানালাম লিয়াকে।
‘ছি ছি!’ নাক সিঁটকে বলে ও।
‘সিগারেটের সাথে চা খাব। আপনি আসছেন?’ পাশে হাঁটতে থাকা মেয়েটাকে কেন যে অফারটা দিতে গেলাম আমি নিজেও জানি না।

একমুহূর্ত দ্বিধায় ভোগে মেয়েটা। তারপর বেশ বিরক্তির সাথেই উত্তর দেয়।
‘আসছি। শুধু চা খেতে!’

সামনের টং দোকানটায় টুপ করে বসে পড়লাম আমরা। লিয়ার গেটআপের একটা মেয়েকে এভাবে বসতে দেখে অবাক হয়ে তাকায় অনেকেই।
গায়ে মাখি না আমরা। একটা মেয়ে এইমাত্র মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এসেছে। এই সময় চারপাশটা অতশত দেখলে চলে না।

‘মামা, দুইটা দুধ চা।’ চা দোকানীকে বলি আমি।
‘আর দুইটা সিগারেট।’ ফট করে বলে বসে লিয়া। অবাক হয়ে পাগলাটে স্বভাবের মেয়েটার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকি আমি। তবে এর মাঝেই দোকানদার মামা প্রশ্ন করতে ভোলে না।
‘কি সিগারেট?’
‘শোভন – কি সিগারেট খান?’ প্রশ্নটা আমার দিকে ঘুরিয়ে দেয় লিয়া।
‘বেনসন সুইচ।’ চট করে জানালাম। দেখা যাক মেয়ের দৌড় কতদূর!
‘দুইটা বেনসন সুইচ তাহলে।’ দোকানদারের দিকে তাকিয়ে কনফার্ম করে লিয়া।

চা আর সুইচ এসে গেছে।
মেয়েটা আগুন ধরানোর চেষ্টা করছে সিগারেটে। কিন্তু পারছে না।
মুচকি হাসলাম, ‘না খেলে হয় না?’
‘আমার টাকা, আমার সিগারেট, আমার সিদ্ধান্ত। আপনি বলার কে?’ কড়া গলায় বলে লিয়া।

কথা সত্য!
টিপস দেই এবার আমি। ‘তাহলে বাতাস বুকে ভরে নিতে নিতে আগুন লাগান। জ্বলে যাবে।’
সিগারেটটাকে সার্থক করে দিয়ে আগুন জ্বলায় মেয়েটা।
তারপরই মুখ বিকৃত করে। কাশি আটকে বহুকষ্টে বলে, ‘এত বাজে কেন স্বাদ?’
মুখ থমথমে করে শুধু বলি, ‘কি আশা করেছিলেন?’

চুপচাপ সিগারেটে টান দিয়ে যাই আমরা।
চায়ের কাপেও মাঝে মাঝে চুমুক পড়ে।

‘আপনাকে চমৎকার লাগল। বন্ধুত্বের প্রস্তাব দিতে পারি?’ জানতে চায় মেয়েটা।

তেমন কথা বলি নি। তাতেই চমৎকার লাগলে তো বিপদ!
আমাকে নিরুত্তর দেখে হাতের সিগারেটটা দেখিয়ে আবার বলে মেয়েটা, ‘বান্ধবী হওয়ার গুণ কিন্তু রপ্ত করেছি।’
‘বন্ধুত্বের প্রস্তাব গ্রহন করা হল।’ জানাই ওকে।
‘আপনার নম্বরটা দেওয়া যাবে? বন্ধু হারাতে চাই না।’ সরল মুখে বলে লিয়া।
কাঁধ ঝাঁকিয়ে নম্বরটা বলি, সেই সাথে যোগ করি, ‘আমার ফোনফোবিয়া আছে। মেসেজ দিলে রিপ্লাই পাবেন। কল রিসিভ করার গ্যারান্টি দিতে পারব না।’
এক মুহূর্ত থমকে যায় লিয়া। বোঝার চেষ্টা করে কথাটা সত্য কি না।
তারপর একটু হেসে বলে, ‘নো প্রবলেম।’

উঠে দাঁড়াই আমি।
‘চললাম। কাজ আছে।’
দাঁড়ায় মেয়েটাও, ‘কোথায় যাচ্ছেন?’
‘রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল।’
‘কে আছে ওখানে?’ উদ্বিগ্ন কন্ঠে প্রশ্ন করে লিয়া।
‘আছে না। ছিল। আম্মু মারা গেছে দুই ঘন্টা হল। চলি।’

হতভম্ভ ইরানী বালিকাকে পেছনে রেখে হেঁটে যাই আমি।
পৃথিবীটা বড় শূন্য।
বড়ই নিষ্ঠুর!

রচনাকাল – ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০১৪

গল্প জীবনধর্মী

Post navigation

Previous post
Next post

কিশোর পাশা ইমন

১২টি ক্রাইম থৃলারের লেখক কিশোর পাশা ইমন রুয়েটের মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ছাত্র ছিলেন, এখন টেক্সাস ষ্টেট ইউনিভার্সিটি থেকে মাস্টার্স করেছেন মেকানিক্যাল অ্যান্ড ম্যানুফ্যাকচারিং ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে। বর্তমানে টেক্সাসের স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয় ইউটি ডালাসে মেকানিকাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পিএইচডির ছাত্র। ছোটগল্প, চিত্রনাট্য, ও উপন্যাস লিখে পাঠকপ্রিয়তা পেয়েছেন। তার লেখা প্রকাশিত হয় বাংলাদেশ ও ভারতের স্বনামধন্য প্রকাশনা সংস্থা থেকে। তার বইগুলো নিয়ে জানতে "প্রকাশিত বইসমূহ" মেনু ভিজিট করুন।

Related Posts

আত্মহত্যা

Posted on October 11, 2022

‘অনেক সময়। কয়েক দিন পার হয়ে গেছে। তাও আমরা কেউ আত্মহত্যা করি নি এখনও। কেন, ডক্টর?’

Read More

হেডহান্টারস

Posted on October 24, 2023

হেডফাইভস!
পাঁচজন মানুষ।
এরাই দাঁড় করিয়ে রেখেছে রাবেকের সব কার্যক্রম।

Read More

ভালো বাসা

Posted on December 27, 2013June 24, 2022

মা অবশ্য আপত্তি করছেন না। হুজুর বাড়ি বন্ধ করলে ক্ষতিই বা কোথায়? আর বাড়িওয়ালা আংকেল তো রীতিমত উৎসাহিত এই সমাধানে। আমিও শত্রুপক্ষের সাথে তাল মেলালাম।

Read More

Leave a Reply Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

সর্বশেষ লেখাগুলো

  • The Son of Bangladesh: KP’s Voice for the Marginalized
  • ওয়ান ফর মাই সৌল
  • আমার যত প্রকাশক
  • কেপির সেরা লেখা কোনটি – জরিপ ২০২২
  • আন্ডারএইজের বই পড়া

Analytics

010212
Total Users : 10212
Total views : 25346
Who's Online : 0
Powered By WPS Visitor Counter
©2025 KP Imon | WordPress Theme by SuperbThemes