চুইংগাম Posted on December 7, 2013June 15, 2022 ‘হ্যালো?’ নিঃশ্বাসের ফাঁকে বলে ওঠে আনিকা। ‘হুঁ, বল।’ ঘুমজড়িত কন্ঠে জবাব দেয় রিদিত। ‘ও দেখা করতে চেয়েছে।’ ‘আ-আ-আম-’ ‘অ্যাই বেয়াদব! কি বলিস?’ ঝাড়ি দেয় আনিকা। ‘উম… যা দেখা কর। সাথে সার্টিফিকেট নিয়ে যা।’ ‘কিসের সার্টিফিকেট?’ ‘এইচএসসির। আর বার্থ সার্টিফিকেট। হা-আআ-আম।’ হাই তুলেই যায় বেচারা। ‘কেন?’ ‘কনের বয়সের প্রমাণ। যদি পছন্দ হয় বিয়ে করে ফেলিস।’ ‘ফাইজলামি করবি না বেয়াদব। উঠে বস। তারপর কথা বল! আসলেই যেতে বলছিস?’ জবাব দেয় না রিদিত। মোবাইলের এ প্রান্তে কড়মড় শব্দ শোনে শুধু আনিকা। আরেকটা রামঝাড়ি দেয় ও বেয়াদবটাকে। ‘অ্যাই কি করিস?’ ‘বাদাম খাই।’ ‘ঘরের মধ্যে বাদাম পেলি কই?’ ‘বাদামের গাছ লাগিয়েছি। যখন মন চায় পেড়ে পেড়ে খাই।’ ‘ওই!’ ভাষা হারালো আনিকা এক মুহূর্তের জন্য, ‘তোর বলা লাগবে না দেখা করব কি করব না। আগে বল বাদাম কোথায় পেয়েছিস?’ ‘আরে – ছোটভাই এনেছিল। বাদাম খেতে খেতেই ঘুম চলে এসেছিল।’ ‘বাদাম খেয়ে খেয়ে ভোটকা হ আরও! আমি টেনশনে মরি আর উনি বাদাম খাচ্ছে!’ সংযোগ কেটে মোবাইলটাকে একদিকে ছুঁড়ে ফেলল আনিকা। রিদিতটা এরকমই। ওদের বন্ধুত্ব সেই ছোট্টবেলা থেকে। ক্লাস টুতে পড়ত তখন ওরা। আনিকা যে সীটে বসত সে সীটে প্রতিদিন চুইংগাম লাগিয়ে রাখত রিদিত। বসে পড়ার পর বেচারি বুঝতে পারত কিছু একটা ঠিক নেই। উঠতে গেলেই চুইংগাম লম্বা হয়ে লেজ হয়ে যেত। আর সারা ক্লাস হেসে খেত গড়াগড়ি। একদিন আর সহ্য হয়নি আনিকার। রিদিতের সামনে একটা স্টীলের স্কেল উচিয়ে হুংকার দেয়, ‘অ্যাই বেয়াদব, আমার সীটে চুইং গাম লাগাস কেন?’ ‘ওটা গিলতে হয় না। আম্মু না করেছে।’ মিন মিন করে কৈফিয়ত দেয় শিশু রিদিত। ‘প্রতিদিন আমার সীটে লাগাস কেন, হতচ্ছাড়া!’ ‘লাগালে কি করবি?’ ‘পিট্টি দিব। হাত পাত।’ ‘পিট্টি দিলেও লাগাব।’ ‘কান ছিড়ে ফেলব। হাত পাত।’ ‘মারবি? মার। তাও লাগাব। একশ বার লাগাব।’ রিদিতও জোরের সাথেই বলে। পিট্টি খেয়েও রিদিত যখন চুইং গাম লাগানোর কাজ অব্যাহত রাখল তখন বাধ্য হয়েই আনিকা ভিন্ন পথ ধরে। ‘অ্যাই, তুই আমার বন্ধু হবি?’ একদিন রিদিতকে বলে ও। ‘হুঁ।’ ঘাড় শক্ত করে বলে রিদিত। ‘তাহলে কিন্তু আর সীটে চুইং গাম লাগাতে পারবি না।’ ‘হুঁ।’ গলার জোর কম থাকে এবারের ‘হুঁ’তে। ছোটবেলার ছেলেমানুষীর কথা ভেবে একটু হাসে আনিকা। তারপর স্কুল, কলেজ পেরিয়ে ভার্সিটিও যাওয়ার পথে। বন্ধুত্ব আছে সেই ছোটবেলার মতই অটুট। কিন্তু এই মুহূর্তে রিদিতটার পরামর্শ দরকার ছিল। আজ আনিকার সাথে আকাশ দেখা করতে চেয়েছে। আকাশ হল আনিকার সিক্রেট ক্রাশ। আকাশের সাথে আনিকার পরিচয় ফেসবুকের মাধ্যমে। গত দুই বছর ওরা চ্যাট করে গেছে। ফোনেও কথা হয় কয়েকমাস ধরে। কিন্তু দেখা হয়নি। ছেলেটাকে আনিকার ভালোলাগা শুরু হয় ওর লেখা পড়ে পড়ে। কি অদ্ভুত সুন্দর করে ও মানুষের জীবনের অনুভূতিগুলোকে তুলে ধরতে পারে! আকাশের একেকটা নোট আপলোড করার সাথে সাথেই পড়ে ফেলে আনিকা। তবে লাইক দেয়ার বেলায় আকাশের সামনে ও হাড়কেপ্পন। ছেলেটা বুঝে গেলেই তো শেষ। ছেলে জাতিটাকে চেনা আছে। বুঝিয়ে দাও তুমি দুর্বল – তোমার প্রতি আগ্রহ হাওয়া হয়ে যাবে সাথে সাথে। ভাব ধরে থাকতে হয়। তবে চ্যাট যত বেশি হয় দূরত্ব ততই কমে আসে। আকাশের সাথে দেখা করার ইচ্ছা আনিকার অনেকদিনের। কিন্তু ওই যে, সময় হওয়ার আগে মুখে বলা যাবে না! ছেলে জাতি! কাল রাতে যখন কথা বলার এক পর্যায়ে আকাশ নিজে থেকেই দেখা করতে চাইল তখন আনিকা ‘ইনঅডিবল’ কয়েকটা চিৎকার ছাড়লেও দায়সারা ভাবে ওকে জানায় পরের দিন জানাবে। কিন্তু জানানো আর হল কোথায়? পরের দিন পর্যন্ত সময় চেয়েছিল-ই তো রিদিতের সিদ্ধান্ত জানতে। ওদিকে কি না বেয়াদবটা বাদাম চিবাচ্ছে! রিদিত সবই জানে। আকাশের নোট পড়ে যখন ‘পানি-খাব! পানি-খাব!’ ভাবভঙ্গী নিয়ে রিদিতকে কতবার ফোন দিয়েছে আনিকা! তখন ওকে অসংখ্যবার ছেলেটা পরামর্শ দিয়েছে আকাশকে প্রপোজ করার! ‘আর কোন ডাইনি কেড়ে নেয়ার আগেই তুই ঝাঁপিয়ে পড়। আফটার অল, অন্য কোন ডাইনির হাতে পড়ে গেলে ডাইনি-প্রধানের জন্য ওটা একটা ডিসক্রেডিট হয়ে যাবে রে…’ বলত রিদিত, তারপর খেত কিল! কিন্তু আনিকা পারেনি। সব হারানোর ভয়ে আগলে রেখেছিল কিছু পাওয়ার স্বপ্ন। একটা রজনীগন্ধার স্টিক হাতে নিয়ে পার্কে ঢোকে আনিকা। দেখা করার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে। বেয়াদব রিদিতটা ঘুমাচ্ছে। ঘুমাক! বেশি করে ঘুমাক। ওর কাছে আলোচনা করার সময়টুকু পর্যন্ত দিল না। ছেলেটার নাকি রজনীগন্ধা ভালো লাগে। সব কিছু নিয়েই অদ্ভুত রকম সব চিন্তাভাবনা আকাশের মধ্যে। এটাই অবশ্য আনিকার ভালো লাগে। যেখানে দেখা করার কথা ছিল সেখানে কাওকে দেখে না আনিকা। একটা ফোন কি দেবে ও আকাশকে? না, দেবে না। ছেলে জাতি! আগ্রহ দেখানো যাবে না নির্ধারিত মুহূর্তের আগে। কয়েক মিনিট অপেক্ষা করেও যখন আকাশের ফোনকলের কোন পাত্তা নেই – একটা বেঞ্চে বসে পড়ে আনিকা। বসে পড়ার পর আনিকা বুঝতে পারল কিছু একটা ঠিক নেই। লাফ দিয়ে উঠে চুইং গামের লেজের দিকে তাকায় আনিকা, তারপর ঘুরেই দেখতে পায় রিদিতকে। সব বুঝে ফেলল ও তখন। সব! ‘তুই এত্তগুলা বেয়াদব! তোর ফেসবুক আইডি-ই নীল আকাশ! হারামী আমাকে আগে কেন বলিস নাই?’ রাগে নীল হয়ে বলে আনিকা। ‘তার আগেই যে তোর প্রেমে পড়ে গেলাম।’ বিষন্ন গলায় বলে রিদিত, প্রথমবারের মত ওকে সিরিয়াস হতে দেখে আনিকা। ‘চুপ করে থাক!’ রজনীগন্ধার স্টিক নাচায় ও ডানহাতে, ‘আমার সীটে চুইং গাম দিস – হাত পাত!’ ‘মারবি? মার। তাও বলব। একশ বার বলব!’ ঠোঁটের কোণে রহস্যময় হাসি রিদিতের। রজনীগন্ধা পড়ে থাকে একপাশে, রিদিতকে জড়িয়ে ধরে আনিকা, ‘অ্যাই, তুই আমাকে বিয়ে করবি?’ ‘হুঁ।’ ঘাড় শক্ত করে বলে রিদিত। ‘তাহলে কিন্তু আর সীটে চুইং গাম লাগাতে পারবি না।’ ‘হুঁ।’ গলার জোর কম থাকে এবারের ‘হুঁ’তে। রিদিতের কাঁধে আলতো করে থুতনী ঠেকায় আনিকা। ছেলে জাতিটাকে যেমন ভাবত তেমনটা না বলেই তো মনে হচ্ছে… রচনাকাল – ৭ই ডিসেম্বর, ২০১৩ রোমান্টিক
সিক্ততা Posted on November 29, 2013June 15, 2022 তন্ময় মনে হচ্ছে ওর মাথার ভেতর ঢুকে বসে আছে। কেন? কারণ ওই একটা অজানা প্রশ্ন। হয়তো ওরা শুধুই বন্ধু। ওই কৌতূহলটাই হয়েছে কাল। Read More
ভালো বাসা Posted on December 27, 2013June 24, 2022 মা অবশ্য আপত্তি করছেন না। হুজুর বাড়ি বন্ধ করলে ক্ষতিই বা কোথায়? আর বাড়িওয়ালা আংকেল তো রীতিমত উৎসাহিত এই সমাধানে। আমিও শত্রুপক্ষের সাথে তাল মেলালাম। Read More
স্ল্যাং Posted on February 20, 2023 টাকা মানুষকে শ্রেণিতে ভাগ করে। আর ক্ষুধা আনে এক কাতারে। Read More