KP Imon

Words Crafted

যোগ্যতা-তত্ত্ব

একটা তসবি কিনুন। তারপর প্রতিদিন নিচের প্যারাটি একশ’বার জপুন।
আপনি যার যোগ্য তা পাবেন না। দুনিয়া এভাবে চলে না। আপনি যা পাইছেন তাই পাইছেন। এ নিয়ে আমি আগেও আলাপ করেছি, ইউ গেট হোয়াট ইউ গেট। ইউ ডোন্ট গেট হোয়াট ইউ ডিজার্ভ।
হোমপেজ স্ক্রল করতে গিয়ে দেখলাম হাহাকার। প্রায় দেখি। অমুক দেখতেছেন তমুক তার থেকে কম যোগ্যতা নিয়ে ভালো কোথাও চলে গেল। চমুক দেখতেছেন জমুক ডিজঅনেস্টি দিয়ে ভালো করে ফেলতেছে। তারপর তারা ভাবতেছেন, তাহলে আমার সততার মূল্য কই থাকলো? বা, আমার যোগ্যতার মূল্যায়ন কী হলো!
সারাটা জীবন আপনি এমনই দেখবেন। এবং এটা ডিল করার উপায় হচ্ছে একটা তসবি কেনা। এবং জপতে থাকা – ইউ গেট হোয়াট ইউ গেট।
তাহলে আপনি সৎ থাকবেন কেন, বা স্কিল আর্ন করবেন কেন?
কারণ আপনার ভালো লাগে তাই। সততা বা স্কিল আর্নিং যে আপনার ক্যারিয়ার বানাতে বা টাকার পাহাড় বানাতে করতে হবে এমন না। ইট ইজ হু ইউ আর। আপনার চেয়ে অসৎ কেউ সফল হলেই কি আর না হলেই কি? আপনার চেয়ে কম স্কিলড কেউ বেশি অর্জন করলেই বা আপনার কি?
দুনিয়া কোন ফেয়ার জায়গা নয়।
তসবি টিপে একশ’বার যখন “ইউ গেট হোয়াট ইউ গেট” পড়া হয়ে যাবে, তখন পরের একশ’বার জিকির করবেন এই লাইনটা – “দুনিয়া কোন ফেয়ার জায়গা নয়।”
ছোট্ট উদাহরণ দেই, আমার ৮ বছরের পরিশ্রম ও সততা আমাকে যা এনে নিতে পারে নাই, র‍্যান্ডম রাস্তার মোড়ে র‍্যান্ডম মানুষের সাথে পরিচয় থেকে ইনফরমেশন শেয়ারিং হলো – আমি একটা জব পেয়ে গেলাম এবং তা ২ বছর করলাম রাজকীয়ভাবে – আমার সবচেয়ে সুখী ক্যারিয়ার মোমেন্ট। এই জব পাওয়ার পেছনে আমার গত ৮ বছরের স্কিল ছিলো, তবে জবের খবরটা পাওয়ার জন্য ছিলো একটা দৈবঘটনা, ওই র‍্যান্ডম রাস্তায় ওই র‍্যান্ডম মানুষের সাথে ওই র‍্যান্ডম দিনে দেখা না হলে আমি জীবনেও জানতাম না ওই জব আছে।
লাইফ এরকম আনপ্রেডিক্টেবল।
আমার স্কিল আর্নিং অ্যালোন কিচ্ছু মীন করে না, যদি না ওরকম একটা লাক থাকে।

** লাক মানে তকদীর নয় **
লাকের আলাপ করলে কুসংস্কারাচ্ছন্ন মানুষ ভাবে তকদীরের আলাপ করছি। লাক বা ভাগ্য বলতে কী বোঝাচ্ছি? পৃথিবীতে ট্রিলিয়ন ট্রিলিয়ন র‍্যান্ডম ক্যাওটিক ঘটনা ঘটে যাচ্ছে। এই ক্যাওসের সঠিক সময়ে সঠিক জায়গায় উপস্থিত হয়ে যাওয়ার ঘটনাও একটা প্রোবাবিলিটি যেহেতু কয়েক লাখ ভুল সময় ও ভুল জায়গার পাশাপাশি ওসবও ঘটনা, আর আপনারা সবাই জানেন সম্ভাব্যতা = সমস্ত সম্ভাব্য অনুকূল ঘটনার সংখ্যা ÷ সমস্ত নমুনাবিন্দুর সংখ্যা।
ভাগ্য উন্নয়নে আপনি কেবল চেষ্টা করতে পারেন অনুকূল ঘটনা বৃদ্ধি করতে। মানে আপনি খাটের চিপায় পড়ে না থেকে বাইরে যত বের হবেন, সঠিক সময়ে সঠিক জায়গায় থাকার সম্ভাব্যতা বাড়বে। তবে তাও আপনার জীবনে ভাগ্যবান হবার মত কিছু না আসতে পারে। কারণ সম্ভাব্য অনুকূল ঘটনার সংখ্যা হয়তো ৩,৫০০ এবং অনুকূল ও প্রতিকূল ঘটনার সংখ্যা হয়তো ৩,০০,০০০! আপনি দেড় বছরে র‍্যান্ডম লোকের সাথে আলাপ করে, র‍্যান্ডম সিচুয়েশনে নিজেকে ফেলে হয়তো ১৮,০০০ ঘটনা ঘটাইছেন কিন্তু সেই আঠারো হাজারের কোনটাই অনুকূল সাড়ে তিন হাজারের অংশ নয়!
এজন্য পৃথিবী আপনার যোগ্যতা অনুসারে কাজ করবে না।
আমাদের নিজেদের আইডেন্টি ধরে রাখতে হবে। আপনি যদি সৎ হতে ভালোবাসেন, হবেন। আপনি যদি কাজ করতে ভালোবাসেন, করবেন। কিন্তু সততা ∝ সফলতা বা, পরিশ্রম ∝ সফলতা – এমন ভাবার মতো ভুল করবেন না।
আবার অনেক সৎ ও পরিশ্রমী লোক জীবনে অনেক উন্নতি করেন, কারণ তার ক্ষেত্রে সবকিছু ব্যাটে বলে হইছে। একই সমান সৎ, একই সমান পরিশ্রমী, একই সমান যোগ্য লোক আবার ওই পরিমাণ উন্নতি করতে পারে নাই দেখবেন। কারণ ক্যাওটিক ওয়ার্ল্ডে তার অ্যালাইনমেন্ট অতোটা ফেভারেবল হয় নাই।
তাইলে করবেন কি?
এসব নিয়ে মাথাটারে বেশি চাপ না দিয়ে স্কিল শিখতে থাকেন। এটাই ইম্পর্ট্যান্ট। কারণ আপনার র‍্যান্ডম রাস্তার র‍্যান্ডম মানুষ হয়তো কোথাও আছে। তার লগে আপনি ধাক্কা খাবেন একদিন। ওইদিন ধাক্কাটা খেয়ে আপনার কোন লাভ হবে না যদি না আপনি আগে থেকে স্কিল ডেভেলপ করে রাখেন।

কিশোর পাশা ইমন

Website: http://kpwrites.link

১২টি ক্রাইম থৃলারের লেখক কিশোর পাশা ইমন রুয়েটের মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ছাত্র ছিলেন, এখন টেক্সাস ষ্টেট ইউনিভার্সিটি থেকে মাস্টার্স করেছেন মেকানিক্যাল অ্যান্ড ম্যানুফ্যাকচারিং ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে। বর্তমানে টেক্সাসের স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয় ইউটি ডালাসে মেকানিকাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পিএইচডির ছাত্র। ছোটগল্প, চিত্রনাট্য, ও উপন্যাস লিখে পাঠকপ্রিয়তা পেয়েছেন। তার লেখা প্রকাশিত হয় বাংলাদেশ ও ভারতের স্বনামধন্য প্রকাশনা সংস্থা থেকে। তার বইগুলো নিয়ে জানতে "প্রকাশিত বইসমূহ" মেনু ভিজিট করুন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *