Skip to content
KP Imon
KP Imon

Words Crafted

  • গুহামুখ
  • সূচিপত্র
  • গল্প
    • রম্য
    • জীবনধর্মী থৃলার
    • সাইকোলজিক্যাল
    • রোমান্টিক
    • ক্রাইম
    • সাসপেন্স
    • জীবনধর্মী
  • নন-ফিকশন
    • থট প্রসেস
    • উচ্চশিক্ষা
    • আমেরিকা-নামা
    • জীবনোন্নয়ন
    • তাত্ত্বিক আলোচনা
    • ডায়েরি
  • প্রকাশিত বইসমূহ
    • প্রকাশিত বইসমূহ
    • যেসব গল্প সংকলনে আছে আমার গল্প
KP Imon
KP Imon

Words Crafted

আত্মহত্যা

Posted on October 11, 2022

‘আত্মহত্যা করার জন্য ভালো দেখে একটা তারিখ তো ঠিক করা উচিত।’

রায়হানের কথা শুনে দ্বিমত দেখতে পায় না শাওন। আত্মহত্যা একটা মানুষ রোজ রোজ করতে পারবে না। কাজেই ভালো দিনক্ষণ দেখেই ঝুলে পড়া উচিত। অবশ্য ঝুলে পড়বে কি না তা এখনও ওরা জানে না।

এতটুকু অন্তত জানে, মরাটা দরকার। যত দ্রুত মরতে পারবে ততই ভালো – এমনটাও না। কিছু কাজ বাকি আছে। কর্মই জীবন – কথাটার সত্যটা এখন ওরা বোঝে, এবং বেশ ভালোই বোঝে।

রায়হান এখন হাতের ছুরিটা নাচাচ্ছে। ওটা দিয়েই ভবলীলা সাঙ্গ করার খায়েশ ছেলেটার। তাকে এজন্য কোনরকম দোষ দেয় নি শাওন। বরং একারণে তাকে কিছুটা শ্রদ্ধা করে শাওন। নিজের নার্ভ অতটা শক্ত না তো!

শাওন বেছে নিয়েছে আরও সহজ পদ্ধতি। বারোতলা বিল্ডিংটাতে ওরা থাকে, ওটার ছাদ থেকে লাফ দেবে।

দুই বন্ধুর বন্ধুত্বটা আজকের না। সেই ক্লাস ওয়ান থেকে একসাথে আছে তারা। কাজেই একে অন্যের সাথে বেঈমানী না করে একই দিনে মরতে চাওয়াটা নিশ্চয় দোষের না? সেজন্যই এখন আসছে দিন তারিখ ঠিক করার কথা।

‘খুনটা কালকে করে ফেলা যাক, নাকি?’ ঠাণ্ডা গলাতে বলে রায়হান।

স্থির দৃষ্টিতে তার দিকে তাকায় শাওন। নিজেকে কাটতে খারাপ লাগলেও মানুষ কাটতে তার কোনদিনও খারাপ লাগেনি। সায় দেয় একবার হাল্কা মাথা নাড়িয়ে।

‘শিওর।’

১.

স্মৃতিদের বাড়িটা বিশাল। ও বাড়িতে পা রেখে আমজাদ সাহেবের সাথে কথা বলার সাহস বা ইচ্ছে – কোনটাই তেমনভাবে অনুভব করে নি শাওন আগে। এমনকি, এখন বেশ একটা গ্যাড়াকলে পড়ে আছে, তাও খুব একটা তাড়না তো টের পাওয়া যাচ্ছে না! সেটাই হয়তো স্বাভাবিক। মেয়ের বাবা এবং তার সাথে আলোচনার আগ্রহ সব সময়ই ছিলো বর্গের ব্যস্তানুপাতিক অবস্থানে।

মেয়েটার সাথে শাওনের প্রেম চলছে আজকে থেকে ছয় বছর আগ থেকেই। শুরু থেকেই জানতো ফকিরের মত হালচাল থাকা নিজের সাথে স্মৃতির বিয়েতে ঝামেলা আসবে। কিন্তু দুইজনই, ‘পরে দেখা যাবে’ নীতিতে বিশ্বাস করে চালিয়ে গেছে ওদের সম্পর্কটা।

‘পরে’ অবশ্য ‘দেখা যায়’নি। আমজাদ সাহেবের লাইসেন্স করা একটা দোনলা বন্দুক ছিল। আর ছিল ট্রেসপাসিং করতে থাকা যে কাওকে গুলি করার অধিকার।

ওটা আইনী অধিকার যতটুকু – তার থেকেও বেশি অর্থনৈতিক অধিকার।

আমজাদ সাহেবদের মত মানুষ দুই চারটা লাশ পুঁতে রাখতেই পারেন। কেউ কিছু মনে করে না সাধারণতঃ।

কাজেই শাওন নিজের ব্যাপারে কথা বলার সাহস অর্জন করতে পারেনি। কথা যা বলার বলেছিল স্মৃতি।

তবে এতে করে মেয়েটার বিয়ের ব্যাপারে হাল্কা প্রভাবও ফেলা যায়নি।

সেদিনই প্রথম বোঝা গেছে, ভদ্রলোক দুটো অ্যালশেসিয়ানকে এমনি এমনি পোষ মানাতে পারেননি। বরং কুকুরদুটো তাঁর একরোখামির কাছে হার মেনেই পোষ মেনেছিল। স্মৃতিকে পোষ মানানোটা সেখানে একরকম ছেলেখেলাই।

কাজেই খেলাটিতে জিতেছেন আমজাদ সাহেব। এরপর থেকে স্মৃতি একেবারেই হঠাৎ অচেনা মানুষের মত ব্যবহার শুরু করল শাওনের সাথে। কী এক ভানুমতি! কাজেই এবার আমজাদ সাহেবকে নিজেই ফোন দেয় ছেলেটা।

আলোচনাটা দীর্ঘ হয়নি। পয়তাল্লিশ সেকেন্ড যাবার আগেই তিনটি পরিচিত ইংরেজী গালি এবং ছয়টি না শোনা ফ্রেঞ্চ গালি শুনে ফোন রেখে দিয়েছিল বেচারা। এমন মানুষের সাথে কথা বলা চলে না। মেয়েটার বিয়ের দিন দূর থেকে একবার দেখে বাসাতে ফিরে যায় ও। তারপর বন্ধু রায়হানকে ফোন দেয়।

রায়হান খুশিতে একেবারে বাকবাকুম করে উঠেছিল, ‘তুইও মরবি নাকি? সাবাশ! আমি তো ভেবেছিলাম আজ রাতেই নিজেকে একেবারে শেষ করে দেব। তাহলে ডেট কিছুটা পেছানোই যাক, নাকি?’

শাওন আস্তে করে শুধু বলেছিল, ‘এক ভোটকা ধনীকে খুন করে তারপর মরবো। তোর ততদিন ধৈর্য্য হবে তো? একসাথে মরতাম।’

রায়হান এক বাক্যে রাজি হয়ে যায় তখনই।

রায়হানের কেসটা আলাদা। তার মরার ‘পিনিক’ আজকের না। এক সপ্তাহ ধরে টানাপোড়নের মাঝ দিয়ে যাচ্ছে বেচারা। বয়েস মাত্র একুশ – এর মাঝেই বিশ লক্ষ টাকার দেনাতে আছে। চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট পড়তে গিয়েই এই ঝামেলার শুরু।

একটা বিশ লক্ষ টাকার বন্ড হারিয়ে ফেলার সাথে সাথে সব দায় তার ওপর এসেই পড়েছে। বন্ডটা গেছে কার পকেটে সে ব্যাপারে রায়হানের যদিও বিন্দুমাত্র ধারণাও নেই। একই সাথে তার ধারণা নেই পনেরদিনের ডেডলাইনের মাঝে কিভাবে বিশ লক্ষ টাকা ম্যানেজ করা যেতে পারে। ছাপোষা পরিবার থেকে এসেছে, আগামি তিন বছর খুঁজলেও তাকে বিশ লাখ টাকা ম্যানেজ করে দেবার মত লোক খুঁজে পাবে না। জেলে তাকে যেতেই হবে এবং যেতে হবে লম্বা সময়ের জন্য।

ছেলেটার জন্য আসলে আত্মহত্যা ছাড়া আর কোন অপশন খোলাও ছিল না।

এই মুহূর্তে দুইজনই শপিং মলটার কাছেই ঘাপটি মেরে পড়ে আছে তার কারণটা সহজ। আমজাদ সাহেবকে ফলো করে এখানে আসতে দেখা গেছে। বুড়ো ভাম বের হয়ে এলেই গাড়ি থেকে চট করে নামবে রায়হান। তারপর ছুরি মেরে ব্যাটার ভুড়ি দেবে ফাঁসিয়ে। স্টার্ট দিয়ে অপেক্ষাতে থাকবে শাওন। বন্ধু লাফিয়ে গাড়িতে গিরে এলে পাগলা ঘোড়ার মত ছোটাবে সেটা। ছুরি রায়হানকেই মারতে হবে, কারণ শাওনকে এলাকার ত্রিসীমানাতে দেখামাত্র জলহস্তিটা একটা সিন-ক্রিয়েট করে ফেলবে।

এই গাড়িও ওদের না। বন্ধু রাশেদ দিয়েছে দুই ঘন্টার জন্য। লাইসেন্স প্লেটটা পাল্টে নকল একটা ঝুলিয়ে দিতে সে ভোলেনি।

‘হারামজাদা বের হচ্ছে।’ ফিস ফিস করে বলে শাওন। ‘থরহরিকম্প!’

মোটাসোটা আমজাদ সাহেব আসলেই একজন চলন্ত ভূমিকম্পের মত দুলছেন। এই মোটকার মত বিদঘুটে লোকের ভেতর থেকে এত সুন্দর মেয়ে কিভাবে জন্মালো? শাওন ভেবে পায় না।

রায়হান ভাবছে না। দরজা খুলে শান্তভাবে হেঁটে যাচ্ছে মিস্টার অ্যান্ড মিসেসের দিকে। মহিলাও আছেন সাথে। বিষয়টা নিয়ে ওদের নিজেদের মধ্যে আগেই কথা হয়ে গেছে। মহিলার ওপর বিশেষ কোন রাগ নেই শাওনের।

শাওন আস্তে করে গাড়ি স্টার্ট দেয়। রায়হানকে পুরোটা সময় নজরের মধ্যে রেখেছে।

আমজাদ সাহেব দেখলেন অদ্ভুত রকম একটা ছেলে হেঁটে এসে কোন কথা না বলে তাঁর পায়ের ফাঁকে লাথি মেরে দেয়। ব্যথাতে তিন চোখে অন্ধকার দেখছেন – ঠিক পেছনে লিমার চিৎকার শোনা যাচ্ছে – এর মাঝেই ছেলেটা লম্বা একটা ছুরি বের করে।

রায়হান মোটা লোকটার মাথা গাড়ির দরজার সাথে চেপে ধরে কচ কচ করে গলাটা কেটে দেয়। পিচকিরির মত ছিটকে আসতে থাকা রক্তগুলোকে অগ্রাহ্য করে ছিন্নভিন্ন গলা দিয়ে ছুরি চালাতে থাকে বার বার।

কিছুক্ষণের মাঝেই মাথাটা কেটে দুই টুকরো হয়ে গেল।

মহিলা হিস্ট্রিয়াগ্রস্থদের মত চেঁচাচ্ছে। তার দিকে বিরক্তির সাথে তাকায় রায়হান। তারপর আস্তে করে মাঝবয়েসী মহিলাটিকে জড়িয়ে ধরে বার দুয়েক ছুরি বসায় তার পেটে।

চিৎকার থেমে গেছে। শপিং মল থেকে একজন গার্ডও বের হয়ে আসছে প্রাণপনে।

তীরের মত গাড়ির দিকে ছোটে রায়হান। শাওন তার উঠে পড়া নিশ্চিত হতেই ছুটিয়ে দেয় গাড়ি।

‘এবার নিজেদের জবাই করাটা বাকি থাকলো ।’ বিড় বিড় করে বলে রায়হান।

২.

কর্মটি সে রাতে করতে চাইলেও সম্ভব হল না।

রাশেদের গাড়ির লাইসেন্স প্লেট নম্বর পাল্টে ঝামেলা এড়ানো যায়নি। বরং কয়েক ডিগ্রী বেড়েছে। এখন প্রতিটি রেজিস্ট্রি করা এক মডেলের গাড়ির পেছনে লেগে গেছে পুলিশ। অ্যাড্রেস ধরে ধরে খুঁজছে। ঘটনা ওদের আগে বোঝা উচিত ছিল।

আমজাদ সাহেব ফালতু কোন নাগরিক নন।

ঘটনাচক্রে রাশেদের লিংকের অভাব ছিল না। পুলিশের তৎপরতার কথা সে আগেই জেনে ফেলেছে। এই মুহূর্তে রায়হান আর শাওনের দায়িত্বটি সহজ। গাড়িটা ডাম্প করার সুযোগ পাওয়া যাবে না, কাঁচকি মাছ ধরার মতো সুক্ষ্ম জাল পেতেছে পুলিশ। অন্য কোন বাসাতে এই গাড়ি কিংবা এভিডেন্স ভরে ফেলতে হবে। পুলিশ পুরো ঢাকা শহরের সব গ্যারেজ খুঁজতে পারবে না। পারলেও, আজকে রাতে নয়।

‘গাড়ি নিয়ে এত মাথাব্যথার দরকার ছিল না।’ বিড় বিড় করে বলে রায়হান।

মাথা নাড়ে শাওন, ‘দরকার তো আছে। পুলিশের ক্যাচালে পড়ে যাওয়া লাগতে পারে।’

‘আমাদের জন্য সেটা সমস্যা না। এক কোণে মরে পড়ে থাকবো। ক্ষতি কি?’

‘রাশেদ তো আর মরছে না। শালাকে একেবারে চ্যাপ্টা করে দেবে পুলিশ।’ ব্যাখ্যা দেয় শাওন।

চুপচাপ ড্রাইভ করে ও কিছুক্ষণ। রায়হানের বাড়িয়ে দেওয়া সিগারেটটা নেয় না। অলিগলি ধরে বের হয়ে যেতে হবে যতদূর সম্ভব। তারপর বড় রাস্তায় দশ মিনিট থেকে আবার নেমে যাবে গলিতে। কাফরুলে একটা বাসা আছে রাশেদের খালাতো ভাইয়ের। সেখানে গাড়ি ফেলে আসলেই আপাতত কাজ শেষ।

চিপাগলি দিয়ে পরের মোড়টা নেওয়ার সাথে সাথে কেঁপে ওঠে গাড়ি। পা একেবারে গাড়ির মেঝের সাথে দাবিয়ে দিয়ে ব্রেক কষে শাওন।

কয়েক মুহূর্ত নীরবতা।

‘মাল খাইয়া চালাইতেছস গাড়ি?’ হুংকার দিয়ে ওঠে রায়হান।

‘কাকে পিষলাম আবার বাল!’ দরজা খুলতে খুলতে এতটুকুই বলে শাওন।

গাড়ির সামনে পড়ে থাকা মানুষটাকে দেখে আঁতকে ওঠে ওরা।

তরুণীর বয়স খুব বেশি হলে বিশ হবে। না খেয়ে না খেয়ে জিরো ফিগার বানিয়েছে নিজের। সেই ফিগার নিয়েই পড়ে আছে এখন মাটিতে। উঠে পড়বে খুব শীঘ্রই সে সম্ভাবনা দেখে না ওরা।

এদিক ওদিক তাকায় ওরা। এলাকা বড়ই নির্জন। কাওকে দেখা যাচ্ছে না কোথাও।

‘শালীকে ট্রাংকে তুলে ফেল। চিপা দেখে ফেলে দেওয়া যাবে।’ দ্রুত পরামর্শ দেয় রায়হান।

গাড়ির দিকে এগিয়ে যায় শাওন, ‘হু কেয়ারস? এখানেই থাকুক।’

‘পুলিশ ধারণা করতে পারে একই গাড়ির কাজ এটা। পরে কাফরুলও সেফ হবে না। আমরা খুব কাছে এখন। সন্দেহজনক গাড়ির কথা কেউ তুললে আমাদের ঝামেলা হয়ে যাবে।’ বন্ধুকে বোঝানোর চেষ্টা করে রায়হান।

চ্যাংদোলা করে রক্ত মাখা তরুণীকে ট্রাংকে ভরে ফেলতে এর পর বেশি সময় লাগে না। একে অন্যের দিকে তাকিয়ে বড় নিঃশ্বাস ফেলে ওরা। আত্মহত্যার আগে আর কয়টাকে সাথে করে নিয়ে যেতে হবে – তাই ভাবছে হয়ত।

দীর্ঘশ্বাস ফেলে মাথা নাড়ে রায়হান, ‘চল, যাওয়া যাক।’

ধীরে ধীরে গাড়ি চালায় এবার শাওন। সাবধানে থাকার জন্য যেটুকু সতর্কতা না নিলেও হয়, তাও নিচ্ছে এখন। আর কোন ঝামেলাতে জড়াতে চায় না। বড় রাস্তায় ওঠার সাথে সাথে চারপাশ আলোকিত হয়ে ওঠে। সামনের দিক থেকে অনেক গাড়ি ছুটে ওদের পাশ কাটিয়ে চলে যাচ্ছে। ডিভাইডারের ওপাশের গাড়িগুলোর আলো ওদের চোখে আজ একটু বেশি পরিমাণেই লাগে।

‘লাইটস … আর দেখতে হবে না এসব যন্ত্রণা কিছুক্ষণ পর।’ মন্তব্য করে শাওন।

কিছু বলে না রায়হান। সামনে ঝামেলা দেখতে পাচ্ছে। অনেকগুলো গাড়ি স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ঢাকার চিরায়ত জ্যাম।

‘ড্যাম!’ স্টিয়ারিংয়ে থাপ্পর দিয়ে বলে শাওন।

কিছু করার নেই। ধীরে ধীরে গাড়ি থামিয়ে ফেলে ও। শেষ গাড়িটার এক ফুট দূরে এসে থেমে যায় এই গাড়ির বাম্পার। জানালার কাচ পুরোপুরি নামিয়ে মাথা বের করে সামনে তাকায় শাওন। বোঝার চেষ্টা করছে কতদূরে গেছে সামনের লাইনটা। খুব লম্বা হওয়ার অর্থ যে কোন সময় ছেড়ে দেবে জ্যাম ওদের।

ঝট করে মাথা আবার ভেতরে ঢুকিয়ে নেয় ও পরক্ষণেই।

বিড় বিড় করে একটা  শব্দই উচ্চারণ করে ও, ‘ক্র্যাপ!’

কারণটা জানতে চেয়ে মাথা সরাচ্ছিল রায়হান, থেমে যায় মাঝপথেই। দেখতে পেয়েছে কারণটা। কালো রঙের একটা গাড়ি পাশে থেমেছে ওদের।

গাড়িটা র‍্যাবের।

এতটুকু হলেই যথেষ্ট হত। ড্রাইভিং সীটের পাশে বসে থাকা র‍্যাবটি একটা টর্চ জ্বালিয়ে ওদের মুখের ওপর ফেলে।

‘কোথায় যাবে এই গাড়ি?’

মিথ্যা বললে এমনভাবে বলতে হয় – যাতে সেটা সত্যের কাছাকাছি পড়ে। আর সেই সাথে হতে হয় তাৎক্ষণিক। চট করে জবাব দিতে না পারলে অবশ্যই কেউ মিথ্যাটাকে সত্য হিসেবে ধরে নেবে না।

কাজেই উত্তরটা সাথে সাথেই দেয় শাওন, ‘পল্লবী।’

র‍্যাব মানুষটার মুখ উজ্জ্বল হয়ে ওঠে কিছুটা।

এবার সে গলা নামিয়ে আবদারটা জুড়েই দিলো, ‘একজন প্যাসেঞ্জার নিয়ে যেতে পারবেন? আমাদের টহল লাইনের বাইরে চলে যাচ্ছে তো জায়গাটা। আসলে, একজন ভিআইপি যাচ্ছিল আমাদের সাথে। অসুবিধে?’

একে অন্যের দিকে তাকায় ওরা, গলা শুকিয়ে গেছে। এটা কি গাড়ির মডেল দেখে র‍্যাবের সন্দেহ থেকে বলা হচ্ছে, নাকি আসলেই প্যাসেঞ্জার যাবে ওদের সাথে?

এই সময় পেছন থেকে একটা অদ্ভুত শব্দ ভেসে এলো। ট্রাঙ্কের ভেতর কে যেন ধুপ ধুপ করে শব্দ করছে। মেয়েটা মরেনি নাকি?

ওরা দেখেছিল রক্তে ভিজে আছে তার সারা শরীর। এরকম একটা ধাক্কা খাওয়ার পরও হারামজাদী বেঁচে গেল কি করে?

এখন প্রাণের সুখে লাথি মারছে। বের হতে চাইছে আধমরা প্রাণিটা ট্রাংক থেকে!

অপ্রতিভ ভঙ্গীটা সরিয়ে র‍্যাবের দিকে তাকায় শাওন। মুখে চওড়া একটা হাসি ধরে রেখেছে। লোকটার মনোযোগ ট্রাংকের দিকে যাওয়ার আগেই রাজি হয়ে যাওয়া উচিত। সামনে জ্যাম ছুটে যাচ্ছে বলে মনে হচ্ছে।

‘পাঠিয়ে দেন আপনার প্যাসেঞ্জারকে। আমরা নামিয়ে দেবো।’ ভাঙ্গা গলাতে বলে ও।

৩.

উঠে বসে হাঁফায় শাওন। চারপাশে অসংখ্য মনিটরের দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারে আবারও ব্যর্থ হয়েছে ও।

পরিচিত জায়গাতেই পাওয়া গেল পানির বোতলটা। এক ঢোকে অর্ধেকের বেশি শেষ করে দিয়ে আবার শুয়ে পড়ল। তারপর একটু ফিরে তাকায় একপাশে। রায়হান শুয়ে আছে এখনও। চোখ দুটো বন্ধ।

মাথার পেছনে হাত দিয়ে যন্ত্রাংশগুলো খুলে ফেলে হেঁটে বের হয়ে আসে শাওন ঘরটা থেকে। বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা সাদা পোশাক পড়ে থাকা মেয়েটা ইঙ্গিতে বোঝায় তিনটা ঘর পরে চলে যেতে।

তার দিকে ভ্রু কুঁচকে একবার তাকিয়ে হেঁটে যায় ও।

দরজা দিয়ে ঢোকার সময় তার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলেন ড. রাশেদ। ইঙ্গিতে দেখালেন চেয়ারে বসে পড়ার জন্য। কাঁধ ঝাঁকিয়ে তার পাশের চেয়ারে বসে পড়ে শাওন। মনিটরে চোখ রাখতে দেখতে পায় সেখানে অভাবনীয় নাটকের জন্ম দিয়েছে রায়হান।

*

দুইপা-তে যতটা শক্তি আছে সব ঝেড়ে দিয়ে দৌড়াচ্ছে রায়হান এখন।

র‍্যাব তুলে দিয়েছে যাকে সে পুলিশের এক্স-কমিশনার। তাঁকে ডেকে আনা হয়েছিল একটা কাজে সাহায্যের জন্য আর সেকারণেই ফিরিয়ে দেওয়াটা র‍্যাবের দায়িত্বের মাঝেই পড়ে গেছে – এটা ওরা বুঝতে পারে। একই সাথে ওরা বুঝতে পারে, পুলিশের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাও চাকরি থেকে অবসর নেয়ার পর কেমন ঢোড়া সাপ হয়ে পড়েন। এই লোকটা যদি এখনো চাকরিতে থাকতো, তাকে একজন সিভিলিয়ানের গাড়িতে তুলে দিয়ে জ্যাম ঠেঙানোর কষ্ট এড়াবার চেষ্টা র‍্যাব কখনোই করতো না। স্যার ডাকতো এবং বাড়ির গেটে নামিয়ে দিয়ে আসতো। অবসরের পর সবাই বাতিল মাল।

তবে, আমজাদ সাহেবের মৃত্যুর সাথে কোন সম্পর্ক ছিল না পুরো ঘটনাটার।

পল্লবীতে লোকটাকে নামিয়ে দেওয়ার পর পরই বিকট লাথি মেরে ট্রাংক কাঁপিয়ে দিয়েছিল হতচ্ছাড়া মেয়েটা।

আরোহী লোকটা পুলিশ কমিশনার ঘাস খেয়ে হননি। তিনি এক লাফে বের হয়ে এসেছিলেন গাড়ি থেকে। চিৎকার করে জানতে চেয়েছিলেন, ‘ট্রাংকে কি নিয়ে যাচ্ছেন, অ্যাঁ? খুলুন এখনই!’

অন্যদরজা খুলে নেমে এসেছিল রায়হান। ট্রাংক খোলার চেয়ে লোকটার গলা খুলে দেওয়াই সহজ কাজ মনে হচ্ছিল তখন ওর, কাজেই একটানে চিড়ে দিয়েছে ওটা। ঝর ঝর করে রক্ত গড়িয়ে পড়ার সময় প্রথমবারের মত খেয়াল করে ও – কাছের চায়ের দোকানের প্রতিটা মানুষ ড্যাব ড্যাব করে তার দিকে তাকিয়ে আছে!

বিন্দুমাত্র সময়ক্ষেপণ না করে ছুটে আসে ওরা। রায়হান আর শাওনকে নিয়ে তাদের কি পরিকল্পনা সেটা বোঝার জন্য মাইন্ড রীডার হওয়ার কোন প্রয়োজন নেই। খুনি পেটাবে। এদেশের মানুষ ছিনতাইকারী পেলেই যে মারটা দেয়, আজকে ওদের কীভাবে মারবে তা বুঝতে দেরি হয়নি কারোই। বনেটের ওপর দিয়ে পিছলে গাড়ির অন্যপাশে চলে যায় রায়হান। ছুরিটা শক্ত করে ধরে আছে এখনও। প্রাণপনে ছোটে অন্য পাশের গলিটা ধরে।

ঘাড়ের ওপর দিয়ে তাকিয়ে বুঝতে পারে ওদিকে শাওনকে চেপে ধরেছে চারজন মানুষ। ড্রাইভিং সীটে বসে ছিল ও। সময়ই পায় নি বের হওয়ার। ছেলেটার নাক মুখ এরই মাঝে ফাটিয়ে দিয়েছে ওরা।

তীরের মত ছোটে রায়হান। মাথাতে বার বার একটা প্রশ্নই আসছে ঘুরে ফিরে।

বার বার!

একটু পর যখন মরেই যাবে – তখন কেন নিজেকে বাঁচানোর এত প্রচেষ্টা?

জবাবটা পাওয়ার আগেই সামনে মোটা লোকটাকে দেখতে পায় ও। দাঁড়িয়ে আছে ওকে বাঁধা দেওয়ার জন্য। পেছনে ছুটন্ত জনতা আর সামনে ছুটতে থাকা এক তরুণকে বাঁধা দিতে চিকণ লোকরাও দাঁড়িয়ে যায় – সেখানে ইনার স্বাস্থ্য মাশাআল্লাহ।

ছুটতে ছুটতেই একবার ছুরি চালায় রায়হান। রক্তমাখা হাত নিয়ে ককিয়ে উঠে বসে পড়ে বাধার বিন্ধ্যাচল। জবাবটাও পেয়ে গেল ও।

পেছনের ওরা ধরে ফেললে ওকে মেরে ফেললে তো বেশ, তবে সম্ভাবনা আছে এক পর্যায়ে থানায় নিয়ে যাবে ওকে। ঠিক যে কারণে ও সুইসাইড করতে সিদ্ধান্ত নিয়েছে – জীবনটা অবশ্যই ও কাটাতে চায় নি একটা বদ্ধ জায়গাতে। বিশ লাখ টাকা হারানোর পর ওখানেই থাকা লাগত ওকে। বিশ বছরের জেল কোন মানুষের জীবন হতে পারে না। কাজেই জীবন থেকে পালাতে চেয়েছিল।

খুনের অপরাধে যদি ফাঁসীও দেওয়া হয় ওকে – সেই বোরিং জেল লাইফ তাকে পার করা লাগবে। সেটি আসলেই রায়হানের সহ্য হবে না।

কাজেই – ছুটতে হবে ওকে। পালিয়ে যেতে হবে যে করেই হোক!

*

‘ব্যাপার কি?  আত্মহত্যা করতে চাইছে না কেন সাবজেক্ট?’ বিড় বিড় করে জানতে চায় শাওন। জনতার ধোলাইয়ে ঘুম ভেঙ্গে গেছে ওর। রায়হানের পথ আলাদা হয়ে যাওয়ায় তার স্বপ্নে ব্যাঘাত ঘটেনি।

‘জানি না। আমাকে তো বেশ একটা চরিত্র দিয়েছেন আপনারা স্বপ্নে। বন্ধু রাশেদ! হাহ!’ তিক্ত হাসি দিয়ে বলেন ডক্টর।

‘কতক্ষণ ঘুমিয়েছি?’ জানতে চায় শাওন।

‘দুই ঘন্টা। স্বপ্নের ডিউরেশন ত্রিশ মিনিট।’

‘অনেক সময়। কয়েক দিন পার হয়ে গেছে। তাও আমরা কেউ আত্মহত্যা করি নি এখনও। কেন, ডক্টর?’

ডক্টর রাশেদ প্রশ্নটার উত্তর সাথে সাথে দেন না।

ড্রীম সিমুলেটর নামক নিওরোলজিক্যাল মেশিনটা বেশ কাজের। কাজের – সমাজের ঋণাত্মক মানসিক কারণগুলোর চিকিৎসা করতে। রেপিস্টদের নিয়ে একটা টেস্ট আগে করা হয়েছে। রেপ সিমুলেটরে সাধারণ মানুষদের পাঠিয়ে দেখা গেছে তারা অনায়াসে স্বপ্নের মাঝে ধর্ষণ লীলাতে মেতে উঠেছে।

ফলাফলস্বরুপ একদম নিখুঁত একটা পরিবেশে সাবজেক্টকে পেয়েছেন ডক্টর।

ঠিক কোন কোন পরিবেশ উদ্ভূত হলে রেপ কেসে সাবজেক্ট লেগে যাচ্ছে তা এ থেকে বোঝা গেছিল। সেই সাথে পরিবেশের সাথে তাল মিলিয়ে স্নায়ুগুলোর পরিবর্তন দেখে অনায়াসে বোঝা গেছিল এর প্রতিকার কি হতে পারে। রাষ্ট্রব্যাপী কৃত্রিম মেঘ জরো করে নিউরন-উদ্দেপক মেডিসিনের বৃষ্টি ফেলার পর থেকে রেপ কেসের  সমাপ্তি ঘটেছে বাংলাদেশে। রাস্তায় বের হলে আর কেউ মেয়েদের বুকের দিকে তাকিয়ে থাকে না আজ।

২০৭৮ সালে এটা কঠিন কিছু নয়।

কিন্তু প্রযুক্তির সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছিল আত্মহত্যার হার। এই সমস্যা ঠেকাতে নিউরো-রিসার্চার ডক্টর রাশেদের সাহায্যপ্রার্থী হয়েছে সরকার আরও একবার। এক্ষেত্রে ডক্টর ছয় মাস লাগিয়েও কোন সমাধান বের করতে পারেননি। এমনটা ডক্টর রাশেদের প্রসঙ্গে বিরল ও আশ্চর্যজনক।

প্রধান দুই সাবজেক্ট শাওন আর রায়হান ছিল শ্রেষ্ঠ সিলেকশন। সাড়ে তিন লাখ মেজর ডিপ্রেশন ডিজঅর্ডারের রোগির ভেতর থেকে এদের দু’জনকে বাছাই করা হয়েছে। কিন্তু এদের সুইসাইড সিমুলেটরে ঢুকিয়ে দেওয়া হলেও তারা আত্মহত্যা করছে না।

শাওনের দিকে ফিরে তাকালেন ডক্টর, ‘আপনারা যে কাজটি করছেন – বার বার নতুন নতুন ঘটনা ঘটিয়ে পিছিয়ে দিচ্ছেন আত্মহত্যার ঘটনাটা। এতে দেরী হচ্ছে। এবং আত্মহত্যা করা থেকে বিরত থাকার নতুন নতুন উপায় আপনারা পাচ্ছেন। যেমন ধরুন, প্রথমেই আপনাদের আত্মহত্যার পদ্ধতি খুঁজে বের করার কথা – সেখানে আপনারা দিন ঠিক করছেন। শুভদিনের সিলেকশন করতে গিয়ে আসলে স্রেফ পেছাচ্ছেন ব্যাপারটা।’

‘এবং তারপর আমি প্রতিশোধ নিতে ব্যস্ত হয়ে আরও পেছালাম আত্মহত্যা। তারপর অযথাই কল্পনা করে ফেললাম কাওকে গাড়ি চাপার ঘটনা। এতে আরও পেছালো। এরপর র‍্যাবের গাড়ি এবং ডেসটিনেশনের পরিবর্তন।’ মাথা দোলায় শাওন। বুঝেছে।

‘ধ্যাত!’

ডক্টর রাশেদের মুখ থেকে শব্দটা বের হতে না হতেই দেখতে পায় শাওন বীভৎস দৃশ্যটা। কোথা থেকে লম্বা কুড়াল নিয়ে এক লোক ছুটে এসেছে। বসিয়ে দিয়েছে রায়হানের পেটে।

ছেলেটার চোখ দিয়েই ওরা দেখছে মনিটরে। এই মুহূর্তে ওটা নিচের দিকে তাকিয়ে আছে। পেটে গেঁথে যাওয়া লম্বা ফলাটা আঁকড়ে ধরে বের করার চেষ্টা করছে। দুই হাত মাখামাখি হয়ে আছে রক্তে। টান দিয়ে কুড়াল বের করা ফেলে আক্রমণকারী লোকটা।

তারপরের কোপ দেওয়ার সাথে সাথে ওরা দেখে রায়হানের মাথাটা আলাদা হয়ে পড়ে যায়।

‘স্বপ্নের এরকম অংশগুলোতে ড্রীমার নিজের মাথা নিজেই দেখে থাকে তাই হয়তো দেখা সম্ভব হয়েছে বিষয়টা।’ মন্তব্য করে শাওন।

‘রায়হান কুড়ালধারীকে ইমাজিন করে এনেছে। ওটা স্বাভাবিক প্যাটার্ন না। রাস্তাঘাটে কুড়াল নিয়ে মানুষ দৌড়ায় না।’ বিড় বিড় করেন ডক্টর, ‘ছেলেটা আত্মহত্যা না করে অন্যের হাতে মৃত্যুকে কেন বেছে নিলো?’

_ পরিশিষ্ট  _

‘স্যার – আর তিনমাস সময় দরকার। কেসটা আসলেই জটিল।’ বিজ্ঞানকেন্দ্রের প্রধানকে বোঝানোর চেষ্টা করেন ডক্টর রাশেদ।

গুরুগম্ভীর কণ্ঠটা ভেসে আসে ওপাশ থেকে, ‘এই প্রজেক্ট তো এরই মধ্যে দুই মাস এক্সটেন্ড করা হয়েছিল। কোন রিপোর্ট তো দেখলাম না। চারমাসের প্রজেক্টে আপনার জন্য মাস দুয়েক সময় বাড়ানো হয় নি?’

‘ইটস কমপ্লিকেটেড। প্লিজ, ট্রাই টু আন্ডারস্ট্যান্ড।’ দ্রুত আওড়ান ডক্টর।

‘এটাই তো সমস্যা, ডক্টর রাশেদ। আমি আসলেই বুঝতে পারছি না। আসলে আমরা কি ঠিক মানুষটার হাতে দায়িত্বটা দিয়েছিলাম? আমার তো এখন মনে হচ্ছে দেইনি। তরুণ কাওকে সামলাতে দিলেই হয়ত ভাল করতাম।’

‘স্যার – প্লিজ, অন্তত আর দুটো মাস -’

‘সাত দিন।’ বিজ্ঞানকেন্দ্রের প্রধান সোজাসাপ্টা জানিয়ে দেন, ‘এর মাঝে একটা রিপোর্ট না পেলে আপনার ফান্ড বন্ধ করে দেওয়া ছাড়া আমার উপায় থাকবে না আর। পাইপলাইনে অসংখ্য নতুন নিউরো-সায়েন্টিস্ট আছে, ওদের কারো হাতে প্রজেক্ট ছেড়ে দিলেই বরং ভালো হবে। ইয়াং ব্লাড কাজ দেখাবার জন্য মুখিয়ে থাকে। আমাকে হতাশ করবেন না এবার।’

ফোনের ওপাশে লাইনটা কেটে গেছে। কিছুক্ষণ ওটার দিকে বিহ্বলের মত তাকিয়ে থাকেন ডক্টর ।

সাতদিনে কিচ্ছু হবে না। অন্তত আরও দুটো মাস তাঁর দরকার ছিল। সুইসাইড প্যাটার্ন বোঝা সম্ভব নয় যদি সাবজেক্ট সেটাকে ডিনাই করে। আর এখানে সাবজেক্টকে যতই হতাশার আর সুইসাইডাল সিমুলেশনের মাঝ দিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে – তারা সুইসাইড করছে না।

বেঁচে থাকার প্রবৃত্তি সবার আগে কাজ করছে মানুষগুলোর।

নতুন কোন স্যাম্পল নিয়ে এলে তার এই ড্রিম-সিমুলেশনে মানিয়ে নিতেই লাগবে মাস দেড়েক। অর্থাৎ রায়হান আর শাওনকে দিয়েই প্রজেক্টটা সফল করতে হবে। কিন্তু এরা সুইসাইড করবে বলে মনে হচ্ছে না। ফলাফলটা সহজ, ফান্ডের অভাবে বন্ধ হয়ে যাবে গবেষণা। ডক্টর রাশেদ আর কিছু ভাবতে পারেন না। পুরোটা জীবন ড্রিম-রিসার্চার হয়ে থাকার জন্য দিয়েছেন তিনি। টাকার জন্য নয়, প্যাশনের জন্য কাজ করছেন। ইচ্ছে নেই এর বাইরে আর কিছু করার। গত পঞ্চাশটা বছর ধরে তিনি এই একটা বিষয়কেই ধ্যান-জ্ঞান মেনেছেন। এ ছাড়া বেঁচে থাকার মানে তিনি খুঁজে পেলেন না।

স্ক্যালপেলটা নিজের গলায় চালিয়ে দেওয়ার সময় ডক্টর বুঝতে পারলেন, সিমুলেশন দিয়ে একজনকে আত্মহত্যা করানো আসলেই সম্ভব না।

আত্মহত্যার মত পরিস্থিতি উদ্ভব হওয়ার জন্য প্রয়োজন বাস্তব এক পরিস্থিতি।

নিওরনের সাথে দেহের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার আগে ডক্টরের মাথাতে শেষ চিন্তা যেটা খেলে যায় – রায়হান বা শাওনের জায়গাতে নিজেকে সিমুলেট করলে কি একটা রেজাল্ট পাওয়া যেত না?

শেষবারের মত নড়ে ওঠে ডক্টর রাশেদের দেহটি।

আর নড়বে না।

গল্প সাইকোলজিক্যাল

Post navigation

Previous post
Next post

কিশোর পাশা ইমন

১২টি ক্রাইম থৃলারের লেখক কিশোর পাশা ইমন রুয়েটের মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ছাত্র ছিলেন, এখন টেক্সাস ষ্টেট ইউনিভার্সিটি থেকে মাস্টার্স করেছেন মেকানিক্যাল অ্যান্ড ম্যানুফ্যাকচারিং ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে। বর্তমানে টেক্সাসের স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয় ইউটি ডালাসে মেকানিকাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পিএইচডির ছাত্র। ছোটগল্প, চিত্রনাট্য, ও উপন্যাস লিখে পাঠকপ্রিয়তা পেয়েছেন। তার লেখা প্রকাশিত হয় বাংলাদেশ ও ভারতের স্বনামধন্য প্রকাশনা সংস্থা থেকে। তার বইগুলো নিয়ে জানতে "প্রকাশিত বইসমূহ" মেনু ভিজিট করুন।

Related Posts

আমি আবার তোমার আঙুল…

Posted on February 20, 2023

“আরে শোন। পরেরদিন এক হাত কাটা আংকেল বারান্দাতে আবারও বসেছেন। বিকালে ছাদে আবারও উঠলেন দুই হাত কাটা ভদ্রলোক। কি হাসি তাঁর। আর কি আনন্দ, খুশিতে লাফাচ্ছেন রীতিমত!”
“শালা পাগল শিওর!” বললাম আমি, “দুই হাত কাটার পর হাসে যে বাইনসূদ, তার ব্যাপারে আমার আর কোন মন্তব্য নাই।”

Read More

ইরোনিয়াস

Posted on May 23, 2023

আড়াল থেকে একজন মানুষের দিকে তার অনুমতি ছাড়া তাকিয়ে থাকার চেয়ে অসভ্য কাজ আর নেই। আর যদি সেটা কোন মেয়ের দিকে তাকানো হয় – মানসিক রোগী হোক আর যাই হোক – সেটি আরও বিতৃষ্ণার। তার ওপর সে তাকাচ্ছে একজন মেয়ে-শিশুর দিকে। এগারো বছর বয়স যার। এর থেকে খারাপ আর কিছু হতে পারে না।

Read More

সন্তান

Posted on May 25, 2023

কান চুলকানি পুলিশ উঠে দাঁড়ায় আমার ব্যাগের ওপর থেকে। বলে, ‘বাচ্চা দেখলাম না, স্যার।’
স্যার মাথা দোলালেন, ‘টাকাটা রেখে দাও। শিওর তো?’
দাঁত কেলায় সোহরাব, ‘ওই কাজে আমরা কোনকালে শিওর ছিলাম না, স্যার?’

Read More

Leave a Reply Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

সর্বশেষ লেখাগুলো

  • The Son of Bangladesh: KP’s Voice for the Marginalized
  • ওয়ান ফর মাই সৌল
  • আমার যত প্রকাশক
  • কেপির সেরা লেখা কোনটি – জরিপ ২০২২
  • আন্ডারএইজের বই পড়া

Analytics

010207
Total Users : 10207
Total views : 25327
Who's Online : 0
Powered By WPS Visitor Counter
©2025 KP Imon | WordPress Theme by SuperbThemes