ট্রিপল এ
হাঁটুর ভেতর থেকে লম্বা পিনটা খুলে ফেলার সময় স্পষ্ট বুঝতে পারলাম, সশব্দে হাঁফাচ্ছি আমি।
মুখ থেকে লালা ঝড়ছে তীব্র ব্যাথা সহ্য করে নেওয়ার বৃথা চেষ্টা করার ফলে। তবুও টানতে থাকি পিনটা ধরে। অবশেষে! সড়াৎ জাতীয় একটা শব্দ করে হাঁটু থেকে খুলে গেল যন্ত্রণাদায়ক জিনিসটা।
চিৎ হয়ে শুয়ে পড়তেই টের পেলাম বাম কাঁধে বসে থাকা দ্বিতীয় পিনটার অস্তিত্ব। ওহ খোদা – চোখ থেকে পানি বের হয়ে আসে আমার। একই সাথে ডান হাতে চেপে ধরেছি ওটাকে।
হাতে খুব একটা জোর পাচ্ছি না। পিনগুলো এমনিতেও সুবিধের নয়। চার ইঞ্চির মত হবে একেকটা লম্বায়। এসব দিয়ে আস্ত গরুকেও বসিয়ে দেওয়া যাবে। সেখানে আমার মত একজন মানবসন্তান মোচড়ামুচড়ি করছে, পিনের সাথে লড়াইয়ের চেষ্টা করছে। লড়াইটা একতরফা হতে চলেছে এখন।
এক হাত দিয়ে জোর-ই পাচ্ছি না। হাঁটুর পিন বের করার সময় বাম হাতের সাহায্য কিছুটা পেয়েছিলাম, এখন আর পাচ্ছি কোথায়?
তবুও ডান হাত দিয়ে টানাটানি করতে থাকি। এগুলোকে বের করতেই হবে।
হাঁটুর দিকে তাকাচ্ছি না ভুলেও।
রক্তগঙ্গা এখন আমার তালিকার শেষ বস্তু – যেটা দেখতে চাবো এই স্নায়বিক দুর্বলতার সময়। তবুও একবার চোখ পড়ে গেল।
রক্তে ভেসে যাচ্ছে হাঁটুটা।
আমার হাঁটু।
আমার ডান হাঁটু!
জ্ঞান ফেরার পর প্রবৃত্তি থেকে দুটো চিন্তা মাথায় একেবারে স্বয়ংক্রিয়ভাবে এসেছিল –
১. প্রথমে হাঁটু থেকে পিন খুলে ফেলো
২. এবার কাঁধের পিনটা বের করো
তৃতীয় চিন্তাটা মাথাতে আসতেই আমার হাত পা ঠাণ্ডা হয়ে আসে!
শহর জুড়ে তাণ্ডব চালিয়ে বেড়ানো সিরিয়াল কিলার ট্রিপল-এ কি এবার আমাকেই তার পঞ্চম ভিক্টিম হিসেবে বেছে নিয়েছে?
১.
কুল কুল করে ঘামছি।
ছোট একটা ঘরে বসে আছি এই মুহূর্তে। চারপাশে এক নজর দেখেই বুঝে গেছি, ঘরটা মাটির নিচে। স্রেফ কোন জানালা দেখছি না বলে এই সিদ্ধান্তে চলে এলাম এমন নয়। বাতাসটা বদ্ধ।
টলে উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা করলাম। এখানে কিভাবে এসেছি মনে নেই। সম্ভবতঃ ট্রিপল-এ ভিক্টিমদের সেটা মনেও থাকে না। তবে যে করেই হোক এখনই এখান থেকে বের হতে হবে!
তারপর হাত-পা জমে গেল আরেকটা বিষয় মনে আসতে। বের হয়ে যেতে পারলে সম্ভবতঃ আমিই ট্রিপল-এর প্রথম ভিক্টিম, যে বেঁচে ফিরতে পারবে!
নিরাশ হলাম। এখনও দাঁড়াতে পারিনি। হাঁটুর যন্ত্রণা প্রচণ্ড কষ্ট দিচ্ছে আমাকে। দাঁড়াবার মতো যথেষ্ট পেশি কি অক্ষত আছে? জানি না। চিকিৎসাবিজ্ঞানে বিদ্যাদিগগজ ছিলাম না কখনও। সেই সাথে গোদের ওপর বিষফোঁড়া হিসেবে আছে কাঁধের ক্ষতটা।
তাছাড়া খুনি আশেপাশেই কোথাও আছে হয়ত। একটু খেয়াল হতেই ফিরে আসবে ও। এবং তার বাকি থাকা কাজটুকু শেষ করে দেবে। বেঁচে যাচ্ছি বা যাবো – এমন কিছু মনে করার কারণ দেখলাম না।
চকিতে মনে পড়ে যায়, প্রথম আঘাত যখন এই খুনি হেনেছিল, তখন বন্ধু-বান্ধব নিয়ে মৃতের প্রতি কি টিটকিরিই না মেরেছিলাম আমরা!
ভার্সিটি থেকে মাত্র বের হয়ে মনের সুখে সিগারেট খাচ্ছিলাম আমরা চারজন।
ছোট সার্কেল। সুখী সার্কেল।
প্রীতি আমাদের মাঝে নতুন সিগারেট খেতে শিখেছে। মেয়েটা দুই টান দেয় আর তিনবার করে কাশে।
একটা সময় বেশ বিরক্ত হয়ে সোহান বলে ফেলল, ‘বারবি ডল হয়ে সিগারেট টানতে কে বলেছিলো তোকে? জুস চুষতি, ওটাই ঠিক ছিল।’
প্রীতি একবার হাল্কা ‘ইয়াক’ শব্দ করে নাক মুখ কুঁচকে আরেকটা টান দেয়।
তারপর নীতি মেনে কেশে ফেলেছিল, আমি বললাম, ‘ধারাটা দেখো। খক খক, খক খক খক।’
রাগ করে প্রীতি সিগারেটই ছুঁড়ে মেরেছিল। এভাবে খেয়ে ওর পোষাবে না, বেশ বুঝতে পারি।
ওর কানের কাছে মুখ নিয়ে বললাম, ‘লুকিয়ে টানিস। বাসাতে প্যাকেট নিয়ে যা। অভ্যাস হলে পাবলিকলি, ওকে?’
মেয়েটা আমার দিকে একটা কৃতজ্ঞ দৃষ্টি দিয়েছিলো শুধু। তখনই কাপ পিরিচ ভাঙ্গার শব্দে চোখ ফেরাতে হয় আমাদের।
যে ছেলেটা এই মাত্র টঙের সাধারণ টেবিলটার ওপর থেকে কোমরের ধাক্কায় একটা গ্লাস আর একটা পিরিচ ফেলে দিয়ে ভেঙ্গে ফেলেছে– সে আমাদের দিকে তাকিয়ে একটা ভদ্রতার হাসি হাসে। তারপর দ্রুত ভাঙ্গা গ্লাসের দেহাবশেষ তুলতে গিয়ে পাছার ধাক্কায় পেছনের কাস্টোমারের হাতের চায়ের কাপও দেয় ছলকে।
ছটফটে ছেলেটার কাণ্ড দেখে আমরা হাসলাম। এই মানুষটা আমাদের মাঝে সবচেয়ে ব্রিলিয়ান্ট।
তারেক।
হন্তদন্ত হয়ে সব সময় ছোটাছুটি সে করে না। তবে উত্তেজিত হয়ে গেলে এমনটা সে করবেই। এতদিনে আমরা তাকে যথেষ্ট চিনেছি।
কাজেই সোহান হাল্কা ভ্রু নাচালো, বাড়িয়ে দিয়েছে সিগারেট, ‘নিতম্ব সামলাও, বৎস। টান মেরে গান গাইতে শুরু করো। কিসের জন্য উত্তেজনা এত? নতুন কোন ডাউনলোড?’
বাতাসে অজ্ঞাত কাওকে খামচিয়েছিল তারেক, ‘আরে না! লিতিসার বয়ফ্রেন্ড গন!’
আমরা সবাই লাফিয়ে উঠলাম এ কথাতে।
তারেক আজকে থেকে লিতিসাকে ভালোবাসে না। সেই ক্লাস সেভেন থেকে সে এই মেয়ের প্রতি দুর্বল। এখন একেবারেই ‘অথর্ব’ হয়ে গেছে সে এই মেয়ের প্রেমে। কিন্তু সমস্যা আর সব ‘প্রেমের টান’-এর মত এখানেও ছিল।
লিতিসার একজন বয়ফ্রেন্ড আছে।
নাম জিহান , লোক খারাপ। চরিত্র একেবারেই পবিত্র।
যতটা হলে আমাদের নাক কুঁচকাতে পারতো, ঠিক ততটাই।
এবার প্রীতির গলা থেকে গদ গদ কথা বের হয়ে আসে, ‘লিতিসার ব্রেক আপ? তোর রাস্তা ক্লিয়ার?”
আমার মুখ থেকে বের হয়ে গেল, “এখনই লাফ দিসনে। দুই দিন পর এসবের প্রেম আবার উথলে ওঠে। দেখা যাবে, প্যাচ আপ করে আবার ঘুরে বেড়াচ্ছে কপোত-কপোতী। শালা ফেরত আসলে?’
শার্টের হাতা গোটাতে গিয়ে সোহান ছিঁড়েই ফেলল, ‘আসুক, এবার শালার পুতকে দুই টুকরো করে দেব না?’
বসতে গিয়ে পেছনের টেবিল কাঁপিয়ে ফেলল তারেক, তবে বড় কোন কেলেঙ্কারী না ঘটিয়েই বসতে পারলো এবার। এতক্ষণে বোমাটা ফাটালো সে।
‘শালার পুত একরকম দুই টুকরোই হয়ে গেছে। মরে পড়ে ছিলো ওদের বাগানে। কে যেন দুই হাঁটুতে আর দুই কাঁধে পিন পুঁতে দিয়েছিল। তারপর বুক ফেঁড়ে দিয়েছে। ব্যাঙদের মতো। একেবারে শেষ।’
আমাদের চা খাওয়া বন্ধ হয়ে গেল।
আমরা তিনজনই একবার করে প্রশ্নটা করি, ‘তুই শিওর?’
আমাদের প্রত্যেককে নিশ্চিত করে তারেক, ‘শতভাগ।’
প্রীতি চট করে আরেকটা সিগারেট ধরিয়ে ফেলে এই আনন্দে, ‘আজকে সিগারেট পার্টি হবে, ব্রাদার!’
সোহান এবার উত্তেজনাতে নিজের পিরিচেই ফাটল ধরিয়ে দেয়। চায়ের কাপ নামানোর সময় হাতের কোন নিয়ন্ত্রণ ছিলো না বোকাটার।
তারপর ওদিকে তাকিয়েই বলে ফেলে, ‘একেবারে ঠিক হয়েছে। লুচ্চামির শাস্তি। কেউ না কেউ জেনে গেছিলো হয়ত চরিত্রটা কেমন ছিলো ওর।’
আমিও সায় দিলাম, ‘ঠিকই আছে, লুচ্চামির কারণে ওকে আরও ভালো শাস্তি দেওয়া তো দরকার। ফাঁসী দিতে হবে। তবে গলাতে বেঁধে নয়। লাশটা ঝোলানো যাবে এখন?’ জবাবের আশাতে তারেকের দিকে তাকালাম।
চায়ের দোকানদার মামা আমাদের দিকে তেরছা দৃষ্টি দেয়। কারও মৃত্যুতে এমন আনন্দিত মানুষ সে আগে দেখেনি মনে হয়! সে তো আর জিহানকে চেনে না!
মাথা নেড়ে আস্তে করে বলেছিলো তারেক, ‘খুশি হওয়ার কিছু নাই। লিতিসাকে খুনের সন্দেহে ধরে নিয়ে গেছে পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য।’
২.
তৃতীয়বারের মত হুড়মুড় করে পড়ে গেলাম।
এবার একটা চেয়ারসহ পড়েছি। সিঁড়ি বেয়ে উঠে এসেছিলাম ঠিক মতই। তারপর দাঁড়ানোর অযথা চেষ্টা করতে করতে একবার মাটিতে গড়িয়ে এসেছি। চারপাশটা অন্ধকার ছিল। সুস্থ স্বাভাবিক লোকের জন্যই উষ্ঠা খাওয়া স্বাভাবিক। সেখানে আমি একজন সিরিয়াল কিলারের ভিক্টিম!
দ্বিতীয়বার মাটিতে পড়িনি। একটা বাক্সের ওপর ডিগবাজি খাচ্ছিলাম বলা চলে। রক্তমাখা হাতটা দিয়ে ডালা তুলে দেখেছি, ভেতরে বিভিন্ন মাপের পিন আছে।
সাইজে তারা এমনই – এদের ঠিক গজাল বলা চলে না। পিন বললে আবার বেশি ছোট মনে হয়। ওগুলো কোন মহৎ উদ্দেশ্য সিদ্ধ করতে ব্যবহার করা হয় সেটা বোঝার জন্য আমার কোন সুপারন্যাচারাল ক্ষমতার দরকার ছিলো না।
কাজেই, আরেকবার নিজেকে তুলে ধরে নিয়ে যাচ্ছিলাম। বাইরে যেতে হবে। পুলিশে জানাতে হবে। বাঁচাতে হবে প্রাণ।
হলঘরটার মাঝে এসেই ব্যালান্স হারিয়ে হুড়মুড় করে তৃতীয়বারের মত মাটিতে ছিটকে পড়ে গেলাম। এবার সাথে একটা চেয়ার নিয়ে।
বার দুয়েক ওঠার বৃথা চেষ্টা করে পারলাম না। শুয়ে শুয়ে ছাদের কাছে পুরোনো আমলের ঝাড়বাতি দেখতে থাকি। খুনি সিরিয়াল কিলার হোক আর যাই হোক, নবাব পরিবারের বংশধর বলেই মনে হচ্ছে। হারামজাদার দাদা জমিদার ছিলো নাকি?
অত্যাধিক রক্তক্ষরণের কারণেই হয়তো, একটু বিশ্রাম পেলেই আমার মাথায় এসব হাবিজাবি চিন্তা চলে আসছে। জোর করে খুনির সাথে নবাব পরিবারের সম্পর্ক খোঁজার চেষ্টা বাদ দিলাম।
মাথা খাটানোর চেষ্টা করছি, এখানে আমি এলাম কিভাবে? স্মৃতি সব মুছে গেছে। পরিচিত কেউ কি নিয়ে এসেছিলো? নাকি অজ্ঞান করে ট্রিপল-এ এনেছে আমাকে?
খুনিটার চেহারা মনে করার আপ্রাণ চেষ্টা আমি করতে থাকি।
মানুষটা দেখতে কেমন? আমার পরিচিত?
দূরে কারও পায়ের শব্দ শুনতে পাই এ সময়।
নাকি, পেলাম না?
আমার কাছে তো মনে হয়েছে কেউ শব্দ করেছে। বুটজুতো?
নড়তে গিয়ে ডান হাঁটুতে বেশি চাপ ফেলেছি বোধহয়। আবারও কুল কুল করে রক্ত বের হওয়া শুরু করেছে ওখান থেকে। দাঁতে দাঁতে চেপে গোঙ্গানিটা আটকালাম।
আরেকটুক হলেই মুখের ফাঁক দিয়ে বের হয়ে যাচ্ছিল ওটা।
আর এখানে, খুব কাছে দেশের সবচেয়ে ভয়ংকর খুনিটা লুকিয়ে আছে। তার জুতোর শব্দও পাচ্ছি আমি! যখন পালাবার জন্য হামাগুড়ি দিচ্ছেন, গোঙ্গানির জন্য খুব দারুণ সময় এটা নয়।
পায়ের শব্দ আরও এগিয়ে আসছে। উঠে বসার চেষ্টা করলাম। বাম কাঁধটা চির চির করে ওঠে। যেন বেশ কয়েকটা হাড় ওখানে এই মাত্র কুচি কুচি হয়ে গেল!
অনুভূতিটা আমার চেনা আছে। ফুটবল খেলতে গিয়ে একবার ডান পায়ের বুড়ো আঙ্গুলের হাড় ফাটিয়েছিলাম। অর্থাৎ আমার ডান কাঁধের হাড় ভাঙ্গে নি।
ফেটেছে।
আর প্রথমবারের মত হাল্কা গুঙ্গিয়ে ফেলেছি আমি!
সাথে সাথে ঘরের দরজাটার দিকে এগিয়ে আসতে শুরু করে পায়ের শব্দ।
নিজের অবস্থা দেখে চোখে পানি আসার জোগাড় হয় আমার।
এক কাঁধ আর এক হাঁটু নড়াতে পারছি না, একেবারেই বাজে অবস্থা আমার। এর মাঝে দৌড়াদৌড়ি করার চেষ্টা করা উচিতই হয়নি।
তাছাড়া আরেকটা ব্যাপার মনে হতে আমার হাত পা ঠাণ্ডা হয়ে যায়! আমি কোনভাবেই ট্রিপল-এর হাত থেকে বেঁচে যাওয়া প্রথম ভিক্টিম নই!
এই উন্মাদ সিরিয়াল কিলারের কাছ থেকে আজ পর্যন্ত কেউ বাঁচে নি।
আর সমীকরণের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত আমার বাঁচার কোন সম্ভাবনাও দেখি না।
তার মোডাস অপারেন্ডি বা এম.ও. এক্ষেত্রে তাকে সাহায্য করেছে সন্দেহাতীতভাবে। দুই কাঁধে আর দুই হাঁটুতে পিন ঢুকিয়ে ধীরে ধীরে হত্যা করে ট্রিপল-এ! আমার জন্য তার ‘স্পেশাল গেস্ট লিস্ট’ খুলে দেওয়া হয়েছে তা তো না।
এর অর্থ একটাই। আমার ক্ষেত্রে কাজে(!)র মাঝখানে উঠে যেতে হয়েছে বেচারাকে। এক হাঁটু আর এক কাঁধে গাঁথানোর পরই তাকে কোন দরকারে উঠে পড়তে হয়েছে। তাই এখন পর্যন্ত এখানে টিকে গেছি।
লিতিসার কথা মনে পড়ে আমার এই পর্যায়ে। মেয়েটাকে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করতে নিয়ে গেছিলো ঠিকই। তারপর সে বাসাতে ফিরে আসেনি আর।
ট্রিপল-এর দ্বিতীয় শিকার ছিলো লিতিসা।
খুনি কে হতে পারে, সে প্রশ্নটা নিজেকে আর করা লাগে না এবার আমার।
মনের পর্দায় কেঁপে ওঠে একটা চেহারা। মানুষটা না লিতিসাকে সেদিন থানা থেকে উদ্ধার করে আনতে গেছিলো?
তারেক?
৩.
‘জাহান্নামে যাক সবাই!’, গর্জে ওঠে সোহান।
জবাবে বিকট লাথিটা মেরে দেই আমি, টি-টেবিলের ওপরের গ্লাসটা ঘরের অন্য কোণে গিয়ে পড়ে ভেঙ্গে চুর চুর হয়ে যায়!
‘লিতিসার লাশ?’ প্রীতি আরও একবার জানতে চাইলো।
মাত্রই সোহান এসে খবরটা দিয়েছে। এখনো আমরা কেউ হজম করতে পারিনি।
গর্জে ওঠে সোহান জবাবে, ‘ডেফিনিটলি! মেয়েটার শরীরে ছিলো চারটা পিন, কাঁধে দুটো এবং হাঁটুতে দুটো! এবার বোঝ!’
‘এটা কি? সিরিয়াল কিলার? একদিনে দুইজনকে …’ ফিস ফিস করে শুরু করা বাক্যটা শেষ করতে পারলো না প্রীতি।
বিকেলে আড্ডা দিতে এসেছিলাম আমরা। সোহান খবরটা নিয়ে ঢুকেছে একটু আগে। আমাদের মুড নষ্ট হয়ে গেল। প্রীতির দিকে তো একেবারেই তাকানো যাচ্ছে না। কাগজের মতো সাদা হয়ে গেছে তার মুখ।
সোহান আরও বাজে একটা খবর আমাদের জন্য তুলে রেখেছিল, ‘তারেককে ওরা গ্রেপ্তার করেছে। লিতিসাকে প্রচণ্ড ভালোবাসে সে, বিষয়টা জানতে তো আর কারো বাকি নেই। প্রথমে বয়ফ্রেন্ড তারপর লিতিসা – পুলিশ কানেকশনটা এভাবেই দেখছে।’
‘তারমানে, তাদের ধারণা, তারেক প্রথমে বয়ফ্রেন্ডকে সরিয়ে দিয়েছে, তারপর লিতিসাকে প্রপোজ করেছে বা এজাতীয় কিছু? মেয়েটা না রাজি হওয়ায় তাকেও খুন করে ফেলেছে?’ অবিশ্বাসের দৃষ্টিতে তাকাই আমি।
‘তাদের তাই ধারণা।’ স্থির হয়ে যায় সোহান।
দুই হাতে মুখ ঢাকে প্রীতি, ‘এটা তো সম্ভব না! তারেকের মত একটা ছেলে – কিভাবে সম্ভব? ওহ গড!’
কাঁধ ঝাকালাম আমি আর সোহান। বিষয়টা প্রীতির মত ‘ওহ গডে’ সীমাবদ্ধ রাখার মত অবস্থাতে নেই।
খতিয়ে দেখতে হবে সব ধরণের সম্ভাবনা।
মুখে কেবল বললাম, “পুলিশ সন্দেহভাজনের তালিকায় রাখার মানেই তো আর অপরাধী নয়। হতে পারে কালই তাকে ছেড়ে দেবে। সত্যিকারের খুনি ধরা পড়লেই সবটা স্পষ্ট হয়ে যাবে।”
গাড়িতে করে যখন থানার দিকে যাচ্ছিলাম, সোহান জানতে চেয়েছিল, ‘পুলিশ শালারা ঘাঘু আছে। দেখা করতে না দিলে কিভাবে কথা বলবি?’
জবাবটা সরাসরি না দিয়ে আমি একটু করে মানিব্যাগটা দেখিয়ে দেই।
তারপর দুইজনে শুকনো হাসলাম। বাংলাদেশ।
সোহানের কাছে জানতে চাই, ‘তারেক কাজটা করেছে বলে কি তোর মনে হয়? মোটিভ দেখ, মেলে। এই দুইজন মারা গেলে তার লাভ আছে।’
মাথা নাড়ে অবশ্য সোহান, ‘এই এক মেয়েকে ভালোবাসার জন্য দুটো খুন করবে না তারেক। খুন করা কি মুড়ি-মুড়কি খাওয়ার মতো ব্যাপার? আমার কথা ভুলে যাচ্ছিস? লিতিসাকে আমিও তো ভালোবাসতাম? আমি কি তাই বলে খুন করে বেড়াবো এখন?’
কাঁধ ঝাঁকিয়ে হেসে ফেলি, ‘আরে তুই তো আর অল্পে মাথা গরম টাইপ না।’
কথাটা বলেই গাড়ির মাঝে থমকে গেলাম।
সোহান স্থিরদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে রাস্তার দিকে। শরীর একেবারে শক্ত হয়ে থাকে ওর, যখন ড্রাইভ করে। সতর্ক শয়তান। এই মুহূর্তে ওকে দেখে একটু উদ্বিগ্ন না হয়ে পারলাম না। ছেলেটা ঠাণ্ডা মাথাতে একবার দুই বছরের সিনিয়র এক ছেলের পা ভেঙ্গে দিয়েছিল।
কেন জানি দৃশ্যগুলো চোখের সামনে ভেসে উঠতে থাকে বার বার। লিতিসাকে সোহানও ভালোবাসতো!
আমি কি করে ভুলে গেলাম?
থানার সামনে থেমে যেতে আমার মনে প্রথম যে প্রশ্নটা আসে, ‘সোহান দৌড়াদৌড়ি করে থানাতে কেন আসছে? তৃতীয় শিকার তারেককে সরিয়ে দিতে? না তাকে সাহায্য করতে?’
উত্তরটা নিশ্চিত করে পাইনি।
এবং আমরা সেরাতে থানাতে পাই নি তারেককেও।
তার মামা এসে হাজত থেকে জামিনে ছাড়িয়ে নিয়ে গেছেন। প্রথমে ব্যাটার মোবাইলে, এবং তারপর বাসায় ফোন দিয়ে তাকে পেলাম না।
সোহান আমাকে বলল, ‘তুই বাসায় যাবি?’
মাথা নাড়লাম।
‘তাহলে প্রীতির বাসায় একবার যা পারলে। লিতিসার খবরটা শোনার পর কী অবস্থা হয়েছিল ওর মনে আছে? একা থাকতে দেয়া উচিত হবে না এখন ওকে।’
সোহানের কথায় যুক্তি আছে। তবে আমার মনটা খচ খচ করতে থাকে। জানতে চাইলাম, ‘তুই কী করবি?’
স্টিয়ারিংটা ধরলো সোহান, ‘গাড়িটা আছে যখন, আমি দেখি তারেককে খুঁজে পাওয়া যায় কি না!’
আমার বুক ধক ধক করছিল।
যদি তারেক খুনি হয়ে থাকে, তাহলে তার লিস্টে নিশ্চয় আছে সোহান। বন্ধুকে ‘সাবধানে থাকিস’ বলতে গিয়েও বলতে পারলাম না।
কারণ, যদি সোহান খুনি হয়ে থাকে, তাহলে তার লিস্টে নিশ্চয় আছে তারেক!
প্রিয় দুই বন্ধুকেই সন্দেহের তালিকায় দেখতে ভালো লাগছিল না আমার। তবে উপায় কী? মানুষের মন তো এভাবেই কাজ করে!
প্রীতিকে অবশ্য রাতে স্বান্তনা ভালো মতই দিয়েছিলাম। ওকে সব কিছু ভোলাতে এবং নিজের মাথা থেকেও আজকের স্মৃতিগুলো দূর করার জন্য প্রথমবারের বিছানাতে উঠে এসেছিলাম আমরা।
গতকাল সারারাত ও আর আমি ছিলাম আবেশে। প্রীতি মেয়েটা এরকম তৃপ্তিদায়ক হবে জানলে আরও আগেই ওকে গার্লফ্রেন্ডের কাতারে টেনে নিতাম। বোকার মত বন্ধুত্ব করেছি এতদিন ধরে!
পরের চিন্তাটা আমাকে থমকে দেয়!
এবার সবটা মনে পড়েছে।
সবকিছুই।
প্রীতির সাথে উদ্দাম রাতের পরই আমি এখানে জেগে উঠেছি!
দুটো পিন শরীরে নিয়ে!
এখন আমি জানি ট্রিপল-এ নামের সিরিয়াল কিলারটি আসলে কে!
৪.
দরজার কাছে দাঁড়িয়ে পড়ে মানুষটা। আর সেই সাথে থেমে যায় তার পদশব্দ।
চৌকাঠে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা ছেলেটাকে দেখেই চিনতে পারলাম।
শুকনো গলায় বলি, ‘হাই, দোস্ত!’
কাঁধ ঝাঁকাল সোহান, কিছু বলে না।
আমাকে পড়ে থাকতে দেখে তার চেহারার বিন্দুমাত্র পরিবর্তন আসেনি। যেন এমনটাই হওয়ার কথা!
সোহানের হাতের হাতুড়িটা তখনই চোখে পড়ে আমার। চকিতে ঘরের একপ্রান্তের বড় বাক্সটার দিকে তাকাই , হাতুড়ির সাথে লম্বা পিনের সম্পর্ক সবাই জানে।
শুয়ে থেকেই বিস্ময়ে চেঁচিয়ে উঠি আমি, ‘শুরু থেকেই তাহলে তুই আর প্রীতি একসাথে কাজ করেছিস? ওহ মাই … আমি ভেবেছিলাম ট্রিপল-এ একজন মানুষ! লোন উলফ!’
কোন মন্তব্য করে না সোহান এবারও। ঠান্ডা দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে দরজা থেকে।
‘ওহ গড! তারেক … তারেক কোথায়?’
মুখ বাঁকায় সোহান, ‘রাস্তায় পড়ে থাকতে দেখা গেছে তাকে গতকাল রাতে। গেস হোয়াট? শরীরে চারটা পিন ছিলো ছেলেটার।’
মুখ ফ্যাকাসে হয়ে যায় আমার, ‘তারমানে, তারমানে যখন আমি প্রীতির বাসাতে – আর তুই খোঁজ করার নাম করে বের হয়ে গেলি … তারেককে ঠিকই খুঁজে বের করেছিস তুই!’
একটু হাসে সোহান, ‘খুঁজে বের করতে আমি দক্ষ। দেখ, সময়মত কাওকে পাওয়া যায় না!’
ঢোক গিলি আমি, ‘কেন? লিতিসা আর জিহানের ব্যাপারটা বুঝলাম। ওদের রিলেশন ছিল। ওদের খুন করেছিস সেটাই যথেষ্ট ছিল। আবার তারেককে কেন মারতে হলো তোর? লিতিসাকে ভালোবাসে বলে?’
‘কাউকে খুন করার কথা তো মনে করতে পারি না। হয়তো করেছি, অজান্তে। তবে জানি না আসলেই করেছি কি না!’ বিড় বিড় করে বলে সোহান।
ফিস ফিস করলাম , ‘তুই … পাগল হয়ে গেছিস!’
মুচকি হাসে সোহান, ‘কথাটা আমার না। কেনেথ এরকসাইনের। তাকে মানুষ চিনতো স্টকওয়েল স্ট্র্যাংগ্লার নামে।’
আমি এবার আর কিছু বললাম না, শুনছি।
‘বেচারা এখন জেলখানায়। ৭ থেকে ১১ জনকে খুন করেছিলো এই সিরিয়াল কিলার। সবাই ছিল প্রাপ্তবয়স্ক। অ্যান্টি-সোশিয়াল পার্সোনালিটি ডিজঅর্ডারে ভুগছিলো লোকটা। সেই সাথে ছিলো সিজোফ্রেনিয়া।’
মাথা নাড়ি আমি, চোখ বেয়ে এক ফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়ে।
‘হাহ!’ অবাক হয় সোহান। তোকে আরেকটা উক্তি শোনাই, ‘ “দানবটা আমার মাথাতে যখন ঢুকে গেল, আমি জানি এটা থাকতেই এসেছে! নিজেকে কিভাবে চিকিৎসা করব আমি? আমি তাকে থামাতে পারি না। দানবটা তার কাজ করেই যায়! আমাকেও কষ্ট দেয়, সমাজকেও। হয়তো তোমরা একে থামাতে পারো। আমি পারবো না!” বলেছিলো ডেনিস রেডার। একে অনেকে দ্য বিটিকে কিলার বলে থাকেন। ’
‘আই জাস্ট ক্যান্ট বিলিভ দিস! চার চারটা খুন হয়ে গেছে আর তুই আমাকে এখানে বসে বসে সাইকো কিলারদের ইতিহাস শোনাচ্ছিস? নট দ্য টাইম নর দ্য প্লেস, সোহান!’
চোখ সরু হয়ে যায় সোহানের, ‘চারটা?’
গর্জে উঠি আমি, ‘ন্যাকা আর কি? জানিস না ট্রিপল-এ চারবার হিট নিয়েছে এখন পর্যন্ত!’
‘আর কাকে মেরেছিস, রাতুল? প্রীতিকে? ওহ গড!’, হাতুড়িতে হাত শক্ত করে চেপে ধরে সোহান, ‘প্রতিটা খুন তুই করেছিস, গর্দভ! আর তোর প্রতিবারই মনে হয়েছে আর কেউ খুনগুলো করছে! ঠিক ডেনিস রেডার অথবা কেনেথ এর্কসাইনের মত!’
চোখ বাষ্পারুদ্ধ হয়ে আসে আমার, ‘না। এসব আমি করিনি।‘
সোহান কিছুই বলল না। তীব্র দৃষ্টিতে আমাকে দেখছে।
‘মারবি তো আমাকে, মার। কিন্তু এসব বাজে কথা শোনাতে আসিস না।’
ধীরে ধীরে এগিয়ে আসতে থাকে সোহান, দুই চোয়াল শক্ত হয়ে আছে।
‘শহরের সবাই জানে তিনটা খুন হয়েছে। কিন্তু কেউ জানে না সিরিয়াল কিলারটি কে, অথবা তার নাম কি। এই মাত্র জানলাম আমাদের খুনি নিজেকে ট্রিপল-এ বলে ডাকতে পছন্দ করছে।’
চট করে নিজের হাঁটুর দিকে তাকাই। এক ফোঁটা রক্ত নেই ওখানে এখন।
নেই কোন ক্ষতও।
কাঁধের কাছটাও ঠিক হয়ে গেছে।
‘তিনজন ভিক্টিম – লিতিসা, জিহান আর তারেক। তোর মুখেই শুনলাম সিরিয়াল কিলার মহাত্মা চতুর্থ কাওকে খুন করেছে। চারটা শিকার, না?’
সোহান আমার কাছে থেকে কাছে চলে আসছে।
ডান হাতে ধরে থাকা পিন দুটো দেখলাম একবার। রক্তে মাখামাখি হয়ে আছে ওরা। একটু আগেই আমার কাঁধ আর হাঁটু থেকে টেনে তুলেছি। রক্ত থাকবেই।
খুনিটার হাত থেকে বাঁচতে হবে! মাথাতে আর কিছু কাজ করে না এই মুহূর্তে!
সোহান সতর্ক পায়ে আরেকটু এগিয়ে এসেছে। হাতে তার প্রস্তুত হাতুড়ি।
চোখের পলক ফেলার আগে উঠে আসলাম আমি। একটা পিন সজোরে গাঁথিয়ে দিয়েছি সোহানের ডান কাঁধে। অপর পিনটা বুকের পাঁজর ভেদ করে ভরে দিলাম হৃৎপিণ্ড বরাবর। নিজের দ্রুতগতি দেখে এবার আমি নিজেই অবাক হয়ে যাই!
সোহানের দুই চোখে ফুটে উঠেছে অবিশ্বাস। আমার দিকে বার কয়েক চোখের পাতা ফেলে দড়াম করে মাটিতে পড়ে যায় ও।
হাত থেকে ছিটকে পড়ে গেছে হাতুড়ি। আমার সখের ফ্লাওয়ার ভাসটা তিন টুকরো হয়ে যায় সেই সাথে।
চারপাশে তাকিয়ে জায়গাটা আর অচেনা লাগে না। আমার বাসারই নিচের দিকে এই ঘরটা।
বিষয়টা বুঝতেই আমার ভয় কেটে গেছে। প্রাণপণে ছুটলাম বেজমেন্টের দিকে।
ছোট একটা ঘর তো ওখানে ছিলো?
এক ধাক্কাতে দরজাটা খুলে ফেলেই প্রীতিকে দেখতে পেলাম।
বড় বড় সুন্দর চোখগুলো খোলা। সোজাসুজি তাকিয়ে আছে ওগুলো ছাদের দিকে।
বাম হাঁটু আর ডান কাঁধে রক্ত ভরে আছে। তার ওপর দাঁড়িয়ে আছে পিন দুটো। বড় একটা হাতুড়ি তার পাশেই পড়ে আছে।
বাম কাঁধ আর ডান হাঁটু অবশ্য পিনমুক্ত। পিনদুটো আমার হাতে ছিল।
একটু আগেই টেনে বের করি নি আমি?
পৃথিবীটা অন্ধকার হয়ে আসছে আমার।
প্রাণপনে আমি চেষ্টা করতে থাকি ঘোলা হয়ে আসা চোখগুলো খুলে রাখতে।
পরিশিষ্ট
বুকের ভেতর থেকে লম্বা পিনটা খুলে ফেলার সময় স্পষ্ট বুঝতে পারলাম, সশব্দে হাঁফাচ্ছি আমি।
তীব্র ব্যাথা সহ্য করে নেওয়ার বৃথা চেষ্টা করার ফলাফল হিসেবে মুখ থেকে লালা ঝড়ছে। তবুও টানতে থাকি পিনটা।
সড়াৎ জাতীয় একটা শব্দ করে হাঁটু থেকে খুলে গেল যন্ত্রণাদায়ক বস্তুটি। হৃৎপিণ্ডের খুব কাছে গেঁথেছিলো! এখনও বেঁচে আছি ভেবেই আশ্চর্য লাগলো।
চিৎ হয়ে শুয়ে পড়তেই টের পেলাম ডান কাঁধে বসে আছে আরেকটি পিন।
ওহ খোদা – চোখ থেকে পানি বের হয়ে আসে আমার। বাম হাতে একই সাথে চেপে ধরেছি ওটাকে।
হাতে খুব একটা জোর পাচ্ছি না। পিন জিনিসটা এমনিতেই সুবিধের নয়। চার ইঞ্চির মত হবে একেকটা লম্বায়। এসব দিয়ে আস্ত গরুকেও বসিয়ে দেওয়া যাবে। সেখানে আমার মত একজন মানবসন্তান মোচড়ামুচড়ি করছে, পিনের সাথে লড়াইয়ের চেষ্টা করছে।
লড়াইটা একতরফা হতে চলেছে এখন।
এক হাত দিয়ে জোর খাটাতেই পাচ্ছি না। বুকের পিন বের করার সময় ডান হাতের সাহায্য কিছুটা পেয়েছিলাম, এখন আর পাচ্ছি কোথায়?
তবুও বাম হাত দিয়ে টানাটানি করতে থাকি। পিনগুলো বের করতেই হবে।
বুকের দিকে তাকাচ্ছি না ভুলেও।
রক্তগঙ্গা এখন আমার তালিকায় শেষ বস্তু – যেটা দেখতে চাবো এই স্নায়বিক দুর্বলতার সময়।
তবুও একবার চোখ পড়ে গেল।
রক্তে ভেসে যাচ্ছে বুক।
আমার বুক!
জ্ঞান ফেরার পর ইন্সটিংক্ট প্রথম দুটো চিন্তা মাথাতে একেবারে স্বয়ংক্রিয়ভাবে এনে দিয়েছিল –
১. প্রথমে বুক থেকে পিন খুলে ফেলো
২. এবার কাঁধের পিনটা বের করো
তৃতীয় চিন্তাটা মাথাতে আসতেই আমার হাত পা ঠাণ্ডা হয়ে আসে!
শহর জুড়ে তাণ্ডব চালিয়ে বেড়ানো সিরিয়াল কিলার ট্রিপল-এ কি এবার আমাকেই তার ষষ্ঠ ভিক্টিম হিসেবে বেছে নিয়েছে?
— ০ —
রচনাকাল : ১৫ই সেপ্টেম্বর ২০১৪
Leave a Reply