আমেরিকায় উচ্চশিক্ষা | অধ্যায় ০১ – রেকমেন্ডেশন Posted on August 1, 2021February 6, 2023 প্লেনে ওঠার পর থেকে দারুণ সুন্দর একজোড়া চোখ আমাকে দেখছিলো। অথচ আমি তখন গুম হয়ে বসে আছি নিজের সিটে। রাগে কান লাল হয়ে আছে। এক দৃষ্টে তাকিয়ে থাকলাম সামনের দেয়ালের দিকে। ওখান একটা স্ক্রিন ঝুলছে। সেখানে কাতার এয়ারওয়েজের একটি ভিডিয়ো চলছে। অসাধারণ সৃজনশীলতার ছাপ সেই ভিডিয়োতে, ফুটবল ও ফুটবলারদের দিয়ে প্লেনের সাধারণ নিয়মনীতি ব্যাখ্যা করা হচ্ছে তাতে। পাশে বসে থাকা আকর্ষণীয় তরুণীর মতোই, দেয়ালের ঐ স্ক্রিনের সৃজনশীলতাও আমার মনোযোগ সরিয়ে নিতে পারলো না। সুতীব্র একটা নিঃশ্বাস ছাড়লাম। ফোঁস করে শব্দ হলো একটা। সুন্দর চোখজোড়া আমাকে কেন দেখছিল তাও বুঝতে পারলাম। আমার হাবেভাবেই একটা ক্ষ্যাপা জন্তুর অভিব্যক্তি। নির্ঘাত ভাবছে, যে কোনও সময় তাকে ঘ্যাক করে কামড়ে দেবো কি না। তবে আমাকে এখানে একতরফা দোষারোপ করলে চলবে না। প্যান্টের বেল্ট ছিঁড়ে যাওয়ার পর পকেটের ভারী ফোন, মানিব্যাগ, পাওয়ারব্যাংকের চাপে তার নিচে নেমে যাওয়ার অনভূতি হয়েছে কখনো? তাহলেই বুঝতে পারবেন আমার রাগের উৎসটিকে। ভাবছেনে মেটাফোর দিচ্ছি? চমৎকার কোনও রূপক বলে যাচ্ছি একটি পয়েন্ট মেক করার আশায়? না হে। ঘটনা ঠিক তা-ই ঘটেছিলো। দেশের বাইরে আমার প্রথম ফ্লাইটটিকে ঠিক সময়ে ধরে ফেলার কথা ছিলো, আমিও এসেছিলাম সময়মতোই, তবে দেখা গেল আমি যখন এসেছি তখনই এসেছে বাকি যাত্রীরাও। পঁয়তাল্লিশ মিনিট সময় মোটেও যথেষ্ট হলো না, বিশেষ করে বোর্ডিংয়ের আগে যে নিদারুণ চেকিংটি হয়ে থাকে, তাতেই সময় শেষ হয়ে পেরিয়ে গেল আরো ৪টি মিনিট। যারা জানেন না তাদের জন্য বলে রাখি, এই পর্যায়ে এসে আপনার ব্যাগে থাকা যে কোনও ইলেকট্রিক ডিভাইস – যেমন আমার ক্ষেত্রে, দুটো পাওয়ারব্যাংক, দুটো মোবাইলফোন, একটি ব্লু-টুথ এয়ারফোন, একটি ভেপিং ডিভাইস, একটি ক্যামেরা, এক গিম্বলের ব্যাটারি ও চার্জার, ইত্যাদি আলাদা আলাদা করে ট্রে-র ওপর রাখতে গিয়েই দেখলাম দুটো ট্রে ভরে গেছে। (ব্যাটারি সম্বলিত কোনো ডিভাইস লাগেজে দেয়া নিষেধ, তাই এই হ্যাপা) তার ওপর ওখানে আপনাকে বেল্ট আর জুতো খুলে ট্রে-তে রাখতে হবে। এসেছেন ন্যাংটো, যাবেন ন্যাংটো – এয়ারলাইনসের হিসাব পরিষ্কার। এত রঙঢঙ যে আমি একাই করছি তা তো নয়। উপস্থিত আপামর জনতাও তা করছে। এবং সব মিলিয়ে দেরি হয়ে গেল। গেট দিয়ে ঢুকে দেখলাম, সাড়ে চারটা বেজে গেছে প্রায়, অথচ ৪.২৫ এ ফ্লাইট! জুতো পরার কিংবা বেল্ট পরার ন্যুনতম চেষ্টা না করে ছুটলাম। বোর্ডিং পাসটি পাঞ্চ করলেন এক ভদ্রলোক, এবং তা কাজ করলো না। অতি স্বাভাবিক একটি ঘটনা, একে বলার হয় মার্ফির সূত্র। যখন একটি কিছু ভুল হবে, সবই ভুল হবে। পাশের টেবিলে বোর্ডিং পাস চালান করে দিলেন অগত্যা, সময় এখানেও লাগবে। অযথা। আমি তার সামনে দাঁড়িয়ে দেখলাম, এটাই সুযোগ, দ্রুত বেল্টটা পরে ফেলা যাক! পাবলিকলি বেল্ট পরার চেষ্টা করেছেন কখনো? আমি বলবো, না করে থাকলে, করতে যাবে না। বাড়তি প্রেশার কিংবা হিউমিলিয়েটির কারণে জোরেই টান দিয়েছিলাম বোধহয়, যতটা দরকার তার বেশি, পটাং করে ছিঁড়ে গেল! একটু পেছনে বসে থাকা স্থুলকায় এক আফ্রিকান-আমেরিকান তরুণী হাসি হাসি চোখে আমার কাণ্ড দেখে যাচ্ছে, মনে মনে হাসছে বোধহয়। কটমট করে তাকাতেই দেখলাম দ্রুত চোখ সরিয়ে নিজের ফোন দেখছে। ওদিকে পিসির সামনে বসে থাকা ভদ্রলোক বোর্ডিং পাস ফেরত দিয়ে বলছেন, “ক্লিয়ার। উঠে পড়ুন, উঠে পড়ুন।” তখনও আমি খালি পায়ে আছি, উঠে আর পড়বো কোথায়। কাছের এক বেঞ্চে বসতে গিয়ে বুঝলাম, আজ নেংটু না হয়ে প্লেনে ওঠা সম্ভব হবে না। উঁহু। সরসর করে নেমে যাচ্ছে প্যান্ট-ব্যাটা। পকেটে লাখো জিনিস। তাদের বের করার উপায় নেই। চেকিংয়ের সময় বের করবেন কিছু? হয়ে গেল। ওদের বাড়ি থেকে গুছিয়ে ঢুকিয়ে এনেছেন, ব্যাগে পর্যাপ্ত জায়গা ছিলো বলে তখন মনে হয়েছে। অথচ প্লেন ছেড়ে দেবে – এমন চাপে যখন তাদের পুনরায় ঢোকাবেন, ব্যাগে অর্ধেক ঢুকিয়েই দেখবেন বাকিদের আর জায়গা নেই। চিন্তা না করে জুতো দুটো পায়ে গলালাম। একটা ফিঁতেও বাঁধলাম। তবে তারপর বুঝতে পারলাম আমি হচ্ছি শেষ যাত্রী। আর সব উঠে যাচ্ছে। স্থুলকায় তরুণীও লাইনের ভেতরে। অন্য ফিতেটাকে সরি বলতে বলতে এক হাত পকেটে রেখে (পড়ুন, এক হাত দিয়ে প্যান্ট খুলে যাওয়ায় নয়া কোনও ক্রাইসিস যেন না আসে তা সামলানোর চেষ্টা করতে করতে) দ্রুত লাইনে দাঁড়িয়ে পড়লাম। উঠে পড়লাম প্লেনে, সর্বশেষ ৩ যাত্রীর একজন হিসেবে। নিজের সিটটা খুঁজে যাচ্ছি, চোখ পড়লো দারুণ মায়াবী একজোড়া চোখের ওপর। প্লেনে উঠে প্যান্ট নিয়ে গবেষণা শুরুর যে ইচ্ছেটি ছিলো তাকে গলা টিপে মারতে হলো। ছেলেদের ঐ এক দুর্বলতা। সুন্দর মেয়েদের সামনে তারা নিজেদের পাছা বেরিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে এমন কোনও গবেষণা করবে না। ধপ করে বসলাম তো বটেই। গরম চোখে তাকিয়ে থাকলাম সামনের দেয়ালের দিকে। এমনটি হওয়ার কথা ছিলো না। আজকের দিনটার জন্য আমি গত দেড়টি বছর ধরে প্রস্তুতি নিচ্ছি। আজ এমন হওয়া একেবারেই অনুচিত। উচ্চশিক্ষার জন্য আমার প্রথম পছন্দ ছিলো যুক্তরাষ্ট্র। প্রথম কারণ, এখানে দুনিয়ার অনেকগুলো ভালো ভালো বিশ্ববিদ্যালয় আছে এবং তারা আর যে কারো থেকে সহজে চড়াই পাখির মতো এক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আরেক বিশ্ববিদ্যালয়ে উড়াউড়ি করতে দেয় বলে জনশ্রুতিও আছে। অর্থাৎ আপনি যদি মনে করেন আপনার জন্য ‘অমুক পথ’টি সঠিক নয়, তবে সেখানে দেড়টি বছর দিয়ে ফেলেছেন, সম্ভাবনা আছে দ্রুতই তা সংশোধন করে নিজের পছন্দের বিষয়ে সরে আসতে পারবেন, কোনওরকম হ্যাসল ছাড়াই, যেহেতু প্রচুর অপশন আছে এবং কম-বেশি একই সিস্টেম বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ফলো করছে। দ্বিতীয় কারণটি একান্তই ব্যক্তিগত, এবং আমার লেখক ক্যারিয়ারের সাথে এর সম্পর্ক আছে। যেহেতু উপন্যাস আমার শক্তির জায়গা, কালচারাল ডাইভার্সিটি দেখতে পারা ও অনুভব করা আমার জন্য অপরিহার্য একটি দায়িত্ব। অধিকাংশ গ্রেট রাইটারই নিজের কুয়ো থেকে বেরিয়ে বাইরে উঁকি দিয়ে এসেছেন, সেটা তাদের একটি আলাদা এজ দিয়েছে। আর আমেরিকার থেকে ভালো জায়গা আর কোথায় আছে দুনিয়াতে, যেখানে সব সংস্কৃতির মানুষের মিশেল আমরা দেখতে পারবো? কাজেই, ২০১৮য় গ্র্যাজুয়েশনটা শেষ করার পরই ইচ্ছে ছিলো উচ্চশিক্ষার জন্য চেষ্টা করলে তা হবে যুক্তরাষ্ট্র। নিজেকে গুছিয়ে অ্যাপ্লাই করতে করতে ২০১৯ সাল হয়ে যায় অবশ্য, এবং ডেডলাইনগুলো তখন প্রায় শেষদিকে। ২০১৯ সালে আমি একটিমাত্র বিশ্ববিদ্যালয়ে অ্যাপ্লাই করার চেষ্টা করেছিলাম, আর সেটি ছিলো ডার্টমাউথ। আইভি লীগ রিসার্চ ইউনিভার্সিটি। অ্যাপ্লাই করলেও ওখান থেকে ডাক আসতো বলে আমার মনে হয় না, তবে আমি সেটাও করতে পারিনি। প্রফেসরদের রেফারেন্স নেয়ার ক্ষেত্রেও দেরি করে ফেলেছিলাম। ওটা ছিলো আমার পয়লা ভুল। 🇺🇸 নির্দেশনা 🇺🇸 প্রথম পরামর্শ – সবার আগে রেকমেন্ডেশন কাদের থেকে নেয়া হবে তা ঠিক করতে হবে। তখনও হয়তো বিশ্ববিদ্যালয়ও ঠিক করা হয়নি, কীভাবে অ্যাপ্লাই করতে হয় তাও জানা হয়নি, এ নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটিও হয়নি কিছু, তবে সেসব পরে। সবার আগে আন্ডারগ্র্যাডের প্রফেসরদের ইমেইল/সরাসরি সাক্ষাত করে জানান যে আপনি এবার অ্যাপ্লাই করতে চলেছেন। খেজুরে আলাপ করুন বা না করুন, ভদ্রভাবে জেনে নিন তারা আপনাকে রেকমেন্ড করতে চায় কি না। পরের অধ্যায় পড়তে এখানে ক্লিক করুন – অধ্যায় ০২ – জিআরই এবং IELTS/TOEFL উচ্চশিক্ষা নন-ফিকশন
আইরিশ ‘সাইকিক’ ও ভূতেদের দর্শন Posted on February 5, 2023 টেক্সাস এমনই আনপ্রেডিক্টেবল। এই ফেব্রুয়ারি এসে এমন শীত আমরা কেউ আশা করিনি। Read More
অধ্যায় ০২. ০১ ⌛ বি আ রিজনেবল ম্যান Posted on July 7, 2021July 7, 2022 রিজনেবল ম্যান, আল্লাহর অবাধ্য নয়। বরং সবকিছু ঠিক থাকলে সে সৃষ্টিকর্তার বেস্ট অফ ইন্টারেস্টই চিন্তা করে দেখতে পায়, অনুভব করতে পারে, তার হয়ে কাজ করে। Read More
অটোগ্রাফ সমাচার Posted on October 10, 2022 দেশের প্রখ্যাত ও সক্রিয় একজন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব প্রায়ই টিভির সামনে কিংবা মঞ্চ থেকে বলে উঠেন, “জনগণ এদের চায় না!” Read More